আপনাতেই আমি পর্ব ৭০

আপনাতেই আমি পর্ব ৭০
ইশিকা ইসলাম ইশা

“তোমরা নাস্তা খাবে নাকি দুপুরের খাবার খাবে?
তীরের কথায় অসহায় চোখে একবার তীর কে দেখে মাথা নিচু করে বসল রিদি।তীর রিদিকে লজ্জা পেতে দেখে আবারো বলে,
বুঝলে শালিকা!!আজ আমার ভাই ও বেশ ঘুমিয়েছে!!এই তোমরা কি রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলে!!
না!!(তীব্রর সোজা উত্তর)
রিদি কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে বলে,
আসলে কাল রাতে তীব্রর অনেক জ্বর……
রিদি কিছু বলার আগেই তীব্র বলল,

” বৌ ছিল তাই জ্বর ভালো হয়ে গেছে!! বৌ শুধু জড়িয়ে ধরলেই সব ভালো হয়ে যায়!!
রিদি লজ্জায় লাল হয়ে কটমট করে তাকালো তীব্রর দিকে। কিন্তু তীব্র সেসবে কোন তোয়াক্কা করছে না সে নিজের মতো খাচ্ছে!!রিদি তীব্রর দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে” অসভ্য “বলতে ভুলল না!!
তীর হা হয়ে ভাইয়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে চুপ হয়ে গেল।ভাই তার নির্লজ্জ তাতে কোন সন্দেহ নেই!
নীর তীব্রর কথায় হেসে বলে,
আজ কারো বৌ না বলে!!!আফসোস!!
তীব্র রিদির দিকে তাকিয়ে বলল,
নীর!!আমাদের সালা বাবু কিন্তু এখনো সিঙ্গেল!!ট্রায় করতে থাকো!!
নীর তীব্রর কথায় কিছুটা অবাক হয়ে তাকাল তীব্রর দিকে ‌। কিন্তু তীব্রর দৃষ্টি রিদিতে আবদ্ধ।তীর ভূ কুঁচকে তাকাল ওদের দিকে,
কাহিনী কি নীর!!!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নীর হচকচিয়ে তাকাল তীরের দিকে।তীর ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে নীরের দিকে।নীর আমতা আমতা করে কিছু বলার আগেই তৃপ্তি কে কোলে করে এগিয়ে আসে রায়ান! এতোক্ষণ সে রোজ আর তৃপ্তি কে নিয়ে বাইরে গার্ডেন এ ছিল! রোজ এখন দাদার কোলে বসে ফুল দেখছে! রায়ান টেবিলে রিদি কে বসে থাকতে দেখে বলে,
তুই কি এখানে থাকবি???
রিদি মুখ খোলার আগেই তীব্র বলল,
তোমার বোনের বিয়ে হয়েছে!!একটা ভাগ্নি ও আছে।সাথে তো ওয়ান এন্ড ওনলি হ্যাজবেন্ড তো আছেই!তাহলে এখানে থাকবে না তো কোথায় থাকবে!!
রায়ান বিরক্ত হয়ে তাকাল তীব্রর দিকে। রায়ান বিরক্ত তীব্রর ব্যাবহারে।তীব্র ব্যবহার এমন যেন এতো মাস কিছু হয়নি!!খুব স্বাভাবিক সব কিছু!!

রায়ান তীব্রর কথায় বিরক্ত হয়ে রিদিকে বলল,
তাহলে তুই এখানেই থাকবি?আমি চলে যাচ্ছি! তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম!!
রিদি রায়ানের মনের ভাব বুঝল।সেম প্রশ্ন তার মনে আসলেও রিদি তীব্রর থেকে দূরে থাকতে চাই না!সে তীব্র কে যতটুকু বুঝে সে এমনি কিছু করবে না।রোজের উপর এট্যাক হওয়ার পর রিদির মনে মেয়েকে হারানোর ভয় ঢুকেছে।রোজ কে সে রিস্ক এ রাখতে চাই না। তাছাড়া তীব্রর কাছে না থাকার মধ্যে একটা কারন ছিল মোনা আর তীব্রর সম্পর্ক।যেটা একটা নাটক ছিল মাত্র!!
ভাইয়া রোজ………..
রায়ান রিদিকে কিছু বলতে না দিয়ে বলে,

আমি আসছি তাহলে!!বাইরে রুপ আছে ওকে বলে আমি চলে যাব!! রায়ান চলে যেতে চাইলে তীর বলে,
রায়ান আজ থেকে যাও!!কতোদিন পর সবাই একসাথে বলতো!!থাকো প্লিজ!তাছাড়া নীর ও তো আছে!!
তীরের কথায় রায়ান আরচোখে তাকাল নীরের দিকে!নীর আজকাল বড্ড জালাচ্ছে তাকে!মেয়েটা সেই পার্টির পর থেকে তার সাথে আগের মতো কথা বলছে না!দূরে সরে থাকছে! কিন্তু কেন?মেয়েটা কি অবুঝ?? নাকি রায়ানের তরফ থেকে ই একতরফা অনূভুতি!কি জানি!!তবে কি নীর কে হারাতে হবে!!হারাবেই যখন তখন কেন এলো??
রায়ানের ভাবনার মাঝেই তীব্র বলল,

এভাবে খাবার নিয়ে বসে থাকলে পেট ভরবে!!আসেন খাইয়ে দিচ্ছি!!
রিদি হচকচিয়ে রাগী চোখে তাকাল তীব্রর দিকে।তীব্র সেদিকে তোয়াক্কা না করে বলল,
আমাকে জরিয়ে ধরলে তো আর সকালের খিদে মিটে যাবে না!খেয়ে আবার জরিয়ে ধরেন!!আসেন খাইয়ে দিচ্ছি!!
রিদি লজ্জায় আর মাথা তুলতে পারল না। রায়ান তীব্রর কথা না শুনলেও শেষের কথা শুনে দাড়াল না!!
এদিকে রিদি মানা করার পরেও তীব্র জোর করে রিদিকে খাইয়ে দিল।
তীর আফসোস করে বলল,

তোর সিস্টেমে লজ্জা নাই!! তোকে লজ্জা দিতে গিয়ে এখন আমারি লজ্জা লাগছে!!অসভ্য!!
তীব্র তীর কে শুধরে দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
উঁহু…চরম অসভ্য!!ঔ আর কি বৌ বলে!!তবে সব বর ই বৌয়ের কাছে অসভ্য!!
তীর আর কথা বাড়াল না। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে উঠে পড়ল।একে লজ্জায় ফেলা সম্ভব না।যে লজ্জায় ফেলবে সে! নিজেই পড়বে লজ্জায়! তীর যাওয়ার সময় বির বির করে আওয়ালো “নির্লজ্জ!!!
তীর যেতেই তীব্র বাঁকা হাসল।রিদিকে খাইয়ে দিতে দিতে বলল,
বেশি বেশি খাবেন জান!! একটু বেসামাল হলে সামলাতে হবে তো!!

রিদি এবার চট করেই উঠে পানি খেয়ে আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না!এখানে থাকলে তাকে লজ্জায় মেরে ফেলবে!! অসভ্য পুরুষ!!তীব্র রিদির যাবার দিকে তাকিয়ে আবারো বাঁকা হাসল।রিদির খাওয়া এটো খাবার টা নিজের মুখে পুরে খেয়ে নিল। তীব্র খাবার খেতে খেতে একবার তাকাল নীরের দিকে।নীর তখনও কিছু একটা ভাবছে!!নীর কে ভাবনায় দেখে তীব্র আর কিছু বলল না! খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়াল!

রাত প্রায় বাজে ১:১০,
এখনো বাসায় ফিরে নি তীব্র।সেই যে বের হয়েছে অথচ বাসায় ফেরার নাম নেই।রোজ কে ঘুম দিয়ে চিন্তিত মুখে ঘড়ির দিকে বারবার তাকাচ্ছে রিদি।পড়নের শাড়ির আঁচলটা মেঝেই পড়ে আছে অবহেলায়।হাতের ফোনটা নিয়ে তীব্র কে কল করতে গিয়েও করল না রিদি! অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে সব স্বাভাবিক হয়নি এখনো!!এতোদিনের নিখোঁজ দূরত্বের পর কিছুটা অস্বস্তি বোধ হচ্ছে!এমনটা না যে তীব্র কে মানতে পারছে না। কিন্তু কোথাও তো চিনচিনে ক্ষুদ্র ব্যাথা অনুভব করছে রিদি।হয়তো অভিমান, অভিযোগ তার এখনো আছে।তীব্রর জন্য চিন্তা হলেও ফোন করছে না রিদি।এই একটা নাম্বার এ সে কতো কল করেছে আননোন নাম্বার থেকে শুধু তীব্রর কন্ঠটা শোনার জন্য। কারন শুরু আর শেষ তীব্রর মাঝেই হতো তার! আর এই অভ্যাস তাকে ভীষণ পিরা দিয়েছে।হারে হারে বুঝিয়েছে তীব্র ছাড়া সে অচল! নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসত!খুব করে চাইত তীব্রকে তার পাশে!তীব্রর বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমাতে ইচ্ছে হতো!
সব ভেবে তীব্র দীর্ঘশ্বাস ফেলল।অনেক ভেবে কল করল তীব্র কে! দুবার রিং হতেই তীব্র কল রিসিভ করলেও ওপাশ থেকে কোন কথা নেই।রিদি একটু থেমে বলল,

কোথায় আছেন??
তীব্র উল্টা প্রশ্ন করল,
আপনি কোথায় আছেন?
রিদি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
বাসায়!অনেক রাত হয়েছে!বা…..
‘আমিও বাসায় ই আছি!
রিদি কিছু বলার আগেই হুট করে শাড়ি ভেদ করে একটা তপ্ত হাত রিদির পেটে স্লাইড করে শক্ত করে চেপে ধরে কানে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
‘এখানে কি করছেন? আমাদের রুম না এটা।
রিদি চমকে উঠে তীব্রর তপ্ত স্পর্শে।তীব্র এক হাতে রিদির কোমর জড়িয়ে ধরে ঘুরিয়ে মুখোমুখি দাড় করালো। অন্যহাতে রিদির চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরে রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
‘আমার ধৈর্য পরিক্ষা নিচ্ছেন “জান”!

রিদির চোখ ছলছল করে উঠল। তীব্রর শরীরে এখানো জ্বর আছে।তবে তুলনামূলকভাবে কম!তীব্র চোয়াল ছেড়ে মুখ নামিয়ে আনলো রিদির কাঁধে।সেখানে ছোট ছোট চুমু দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে আসল রিদির কানের কাছে।রিদি ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে কেঁপে উঠে তীব্রর পেটের দিকের শার্ট মুঠো করে ধরলো! তীব্র কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,
‘আপনার অস্বস্তি বোধ লাগলেও আপনাকে আমার কাছেই থাকতে হবে, অভিযোগ থাকলেও আমার কাছেই আসতে হবে।আপনাতে আমি আসক্ত জান। ভীষণ ভাবে আসক্ত!!

“তীব্র চৌধুরীকে জটিল নেশায় জরিয়ে এভাবে দূরে সরে থাকা! উঁহু!!!নট এলাও!! “ইউ হ্যাভ টু পে ফর দিস!
কথাটা বলেই রিদিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মূহূর্তেই মুখ বন্ধ করে দিল।রিদি তীব্র কে ছাড়াতে চাইলে তীব্র দেওয়ালে ঠেসে ধরে নিজের ভর কিছুটা ছেড়ে দিল রিদির দিকে।রিদি নড়চর করতে না পেরে পড়ে রইলো সেভাবে!! অনেকক্ষণ পর রিদিকে ছাড়তেই রিদি ঢলে পড়ল তীব্রর বুকে।ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে।কথা বলার শক্তি ও নেই!আর একটু হলেই দমবন্ধ হয়ে মারা যেত। রিদির ঘন কালো রেশমি চুল ঝট করেই খুলে দিল তীব্র।

আপনাতেই আমি পর্ব ৬৯

ঝরঝর করে ঝড়ে পড়ল তা কোমরের নিচে পর্যন্ত। তীব্র তাকালো রিদির দিকে।চোখের পানি মুছিয়ে কপালে শব্দ করে চুমু খেল।হলদে মায়াবী মুখে একরাশ মায়া!! মায়াবতীর চোখের মায়া!! হাঁপিয়ে উঠা মায়াবী মুখটা দেখে তীব্রর লোভ হলো!রিদির অবস্থা দেখেও তীব্রর আজ মায়া হলো না।ঝট করে কোলে তুলে এগিয়ে গেল রুমের দিকে। তীব্র আজ নেশায় আসক্ত!এই নেশায় জরিয়ে আছে তার পুরো সত্বা!তার পৃথিবী!!এই নেশা কখনো তার যাবে না!!

আপনাতেই আমি পর্ব ৭১