মি মাফিয়া পর্ব ৪৭
সুমাইয়া সাবিহা
প্রেমা দৌড়ে এসে প্রথমে আরিয়া কে জড়িয়ে ধরে বললো ,এমন মারবো না আবার দ্বিতীয় বার যাওয়ার কথা মনে হলেই শরীরে লোম কাটা দিয়ে উঠবে ।
আরিয়া: এতো দেখছি ভাইয়ার মতো ডায়লগ দিচ্ছে সামু ।
সামিরা : ও ,এখন বুজলাম ভাইয়া কেনো এই ধরনের হুমকি দেয় তোকে ।
আরিয়া: একদম বাজে কথা বলবি না ।
প্রেমা: ঠিকই তো বলেছে । ভাইয়া তোকে শুধু শুধু যে বকা দেয়না এটার প্রমাণ আবারো হয়ে গেলো দেখলি।
সামিরা: সে যাই হোক প্রেমা একটা জিনিস খেয়াল করেছিস ? বলেই সামিরা হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।
প্রেমা: কি হলো এভাবে হাসছিস কেনো?
সামিরা: আরু এসেই ভাইয়ার রুম দখলে নিয়েছে তার উপর ভাইয়ার টিশার্ট পেন্ট পরেছে ,,
প্রেমাও মাত্র বিষয় টা খেয়াল করে নিজের পেটেই চেপে ধরে হাসতে হাসতে বললো ,স্ট্রেন্জ ইয়ার ,আরু ভাইয়ার পেন্ট তুই কি করে পরলি,কিভাবে ? হাউ ফানি ,তোকে তো পীরাই জোকার লাগছে রে,এই টিশার্ট এর ভেতরে তোর সাথে আমরাও ঢুকতে পারবো আর পেন্ট তো তোর … কি আর বলবো ..
আরিয়া: আআআহ থামবি তোরা,আমার জামা নেই কি করবো আমি ।
সামিরা আরুকে আরেকটু রাগানোর জন্য বললো এসকে ইন্ড্রাস্ট্রির সিইউ এর নাকি জামা নেই ভাবা যায় প্রেমা কম্পানি কতোটা লো ।
প্রেমাও সামিরার সাথে তাল মিলায় ।
আরিয়া আর দেরী না করে ধপাস করে পা ফেলে নিচের ড্রয়িং রুমে গিয়ে ল্যান্ড লাইন থেকে নাম্বার ডায়াল করে মায়াকে কল দিলো ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বিকেলের রক্তিম সূর্য টা ঠিক পশ্চিমাকাশে হয়তো এখনি ঢলে পরে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পরবে পৃথিবী টা। ঠিক সেই সময়ে বাড়ি ঢুকলো আয়শ আর জাফর একসাথে ।
প্রেমা সামিরা আরিয়া তিনজনই ড্রয়িং রুমেই ছিলো ।
আফর সাহেব এসেই আরিয়ার কাছে গিয়ে একটা হাসি দেয় ।
আরিয়া সঙ্গে সঙ্গে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরে ।
-আমি খুব সরি চাচাজান । বিশ্বাস করো আমি যেতে চাইনি তোমাদের কে ছেড়ে ,আমার ভুল হয়ে গেছে চাচাজান।
জাফর সাহেবের শরীর টা মনে হচ্ছে অনেক টা ক্লান্ত, মৃদু হেসে নিজের চোখ মুছে বললো ,এই চাচাজান টা কে এভাবে ছেড়ে চলে গেলি আমার বুঝি কষ্ট হয়নি ।
আরিয়া ভেজা গলায় বললো ,কান ধরবো বলো ,আমি সত্যি বলছি একদম যেতে চাইনি । আমি এতো সব জানতাম না চাচাজান বিশ্বাস করো।
আয়শ তাদের আলিঙ্গনের মাঝেই বললো ,হয়েছে এখন আমার বাবা কে ছাড় আবার চলে যা ।তুই একটা আস্ত ইডিয়ট। মানুষ এভাবে না বলে কয়ে কিভাবে যেতে পারে ফ্যামিলি ছেড়ে ,আবার নাকি উনি এটিটিউডের মাস্টার ,যাহ তো সামনে থেকে সর আরু তুই ।
জাফর হাসলো ।
আরিয়া : যতো ইচ্ছে বকা দাও আর যাচ্ছি না কোথাও ,এখানে থাকছি সারাজিবনের জন্য বলে দিলাম ।
জাফর আরিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো ,খলিল , ভাবি আসেনি এখনো?
আরিয়া: নাহ ,সামিরা তো বলেছিলো আজ নাকি আসার কথা ছিলো ।
জাফর : সে তো সকালেই বলেছিলো আসবে । আচ্ছা আমি দেখছি ।
আয়শ: আগামি কাল আসবে বাড়িতে নাকি একটু সমস্যা হয়েছে ।
জাফর: ভেবেছিলাম তাই হবে বোধয় নয়তো এতো বছর পর মেয়ে ফিরেছে শুনলে তো দৌড়ে আসার কথা ছিলো ।
আরিয়া: আমাকে একটু ফোন টা দিবে কথা বলবো ।
আয়শ: একেবারে কালকেই বলিস ,এখন লাগবেনা ডিরেক্ট সামনে থেকে বলিস।
আরিয়া: আচ্ছা,, কিন্তু আমার খুব আম্মু আব্বু কে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে ভাইয়া ।
আয়শ আরিয়ার কথা টা রিপিট করে ভেঙচি কেটে বলতে লাগলো ,এএএহ আসছে আমার ইচ্ছা দেখাইতে । তা এই তিন বছর কি ইচ্ছে হয়নি ।নেকামো করার জায়গা পাস না দেখছি।
আরিয়া এবার চুপসে যায় ।
জাফর: আহ ওর পিছনে কেনো লাগছিস তোরা । গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসো আয়শ ,রাতেও ঘুমাতে পারোনি ।বিশ্রাম করো ।
আয়শ : ঠিক আছে বাবা ,এমনিতেও খুব ক্লান্ত লাগছে ।কথা শেষ করে আয়শ উপরে যেতে যেতে একটু আওয়াজ করে বললো , সামু একটু উপরে আস তো কাজ আছে ।
জাফর সাহেব কপাল কুঁচকালেন ,আয়শ কে সব দিকে পারফেক্ট মনে হলেও সামিরার বিষয় টা নিয়ে উনি আয়েশের উপর একদম নারাজ আছে । বউ মানবে না কেনো? বিয়ে হয়েছে এখন সংসার করতেই হবে ডিভোর্স নামক কোনো পজিসন এই বাড়িতে হবেনা । আর মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যবহার ও এখানে করা চলবেনা ।
– বউমা কে দিয়ে কি করবে? যাকে মানবে না তাকে দিয়ে কাজ করাতেও বুঝলে ।নিজের কাজ নিজে করো ।
– আয়শ : তাহলে কাজের মহিলা রেখে দাও ।আমার রুম টা মেয়েদের দিয়ে না গুছালে অগুছালোই মনে হয় ।
– জাফর: তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছো আয়শ ।
– আয়শ: সামু তুই আসবি কিনা নয়তো এখনি বেড়িয়ে যা বাড়ি থেকে।
– সামিরার ভেতরে আবার আগের মতো ভয় কাজ করতে লাগলো ,কথা গুলো যদিও ফানি টাইপ ছিলো বাট তবুও সামিরার কাছে সেরিয়াসই মনে হয়েছে । আবার আগের মতো আয়শের রুপ দেখার বিন্দু পরিমাণ ইচ্ছে নেই সামিরার ।
– তাই ভেবে নিয়েছে চলে যাবে ,কথা টা ভাবতে একটু দেরী হলেও উপরের রুম থেকে আওয়াজ আসলো ,একবার বেড়িয়ে গেলে যেনো আর এই বাড়িতে না দেখি । ভালো চাইলে কথা শুন।
– জাফর কিছু বলতে যাবে তখনি সামিরা বললো ,বাবা সমস্যা নেই আমি যাচ্ছি,হয়তো কোনো প্রয়োজন আছে নয়তো এভাবে বলতো না তাইনা ।
– জাফর সাহেব স্মীত হেসে বললো : ঠিক আছে যেটা বুঝো তুমি সেটাই করো ।
– সামিরাও আর দাঁড়িয়ে না থেকে উপরে যেতে লাগলো ।
– জাফর সাহেব আলিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো , কিছু খেয়েছিস? শরীর কেমন আছে এখন? হাতে ব্যাথা কমেছে?
– আরিয়া ব্যান্ডেজ বাঁধা হাত দেখিয়ে হেসে বললো ,প্রেমা বেঁধে দিয়েছে । আর আমি ঠিক আছি । তুমি যাও রেষ্ট নাও । কিন্তু চাচা আসলে বলতে চাচ্ছিলাম ভাইয়া কেমন আছে এখন?
– জাফর সাহেবের মুখ টা একটু মলিন হয়ে যায় , ডঃ বলেছে জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে আপাতত বিপদ মুক্ত।
– আরিয়া কিছু বললো না ।
আয়শ ফ্রেশ হয়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হয় ,পরনে শুধু টাওয়াল জড়ানো । ফর্সা শরীরে বুকের উপর ছোট লোমশ গুলো দৃশ্যমান চিবুকের নিচ থেকে ফুটা ফুটা পানি গুলো গড়িয়ে পড়ছে ।
সামিরা এতোক্ষণ এখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো শুধু মনে মনে দোয়া করছিলো যেনো আগের সেই রুপ টা না দেখতে হয় । কিন্তু আয়শ কে এমন ভাবে বের হতে দেখে চেঁচিয়ে উঠতে যেয়েও নিজের মুখের উপর হাত রেখে পেছন ঘুরে দাঁড়ালো।
আয়শ কপাল কুঁচকে বললো ,কি হয়েছে ? এমন করে আছিস কেনো?
সামিরা মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো ,আপনি চেন্জ করে নিন তারপর আসছি আমি ,বলে সামিরা যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় ।
আয়শ উপরের দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে চটজলদি গিয়ে সামিরার সামনে দাঁড়িয়ে বললো , আচ্ছা তোর ভেতরে এতো লজ্জা আছে জানা ছিলো না তো ।
সামিরার চোখ দুটো ডাগর ডাগর হয়ে আছে , লজ্জা আছে এই লোকটার? ছিটে ফুটাও তো দেখছি না ।
আয়শ: এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? আমার রুপ দেখে বুঝি কিছু ফিল নিচ্ছিস আই মিন তোর ভেতরে ….
এটুকু বলতেই সামিরা বললো ,ছি কি সব বলছেন আপনার দেখছি লজ্জা শরম কিছু নেই । সামনে থেকে সরুন আমি যাবো ।
আয়শ সামিরার আরেকটু কাছে আসে , আচ্ছা! কোথায় যাবি?
সামিরা : আপনার কাজ করে দেবো তো বললাম আগে চেন্জ করুন তারপর ।
আয়শ এবার একটু সামিরার দিকে মাথা ঝুঁকে চোখে চোখ রেখে বললো , আমার কাজ করে দিবি রিয়েলি? পারবি তো ?
সামিরার চোখ জোড়া কাঁপছে,হৃদপিন্ডের আওয়াজ টা স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে।
– আ..আমি মিথ্যে কেনো বলবো ? আর আমি তো এমন কোনো কাজ দেখছি না ,পুরো রুম তো গুছানো আছে ।
– আয়শ এবার আরেকটু ঝুঁকে,এক কিঞ্চিত পরিমান হয়তো বাকি তার কপাল সামিরার কপাল স্পর্শ করতে।
– সামিরা একবার ঢুক গিলে বললো ,দেখুন আমি কিন্তু আপনার কোনো রাগের কারন হতে চাইনা তাই চলে গিয়েছি কিন্তু যদি মাঝে মাঝে আসলেও আপনার এতো প্রবলেম হয় তাহলে বিষয় টা আমাকে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে……
– সামিরা কথাটা শেষ করতে পারলো না তার আগেই আয়শ সামিরার হাত ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো ,আমার থেকে দুই লাইন বেশি বুঝিস দেখছি । এতো কথা বলার সাহস কিভাবে হয় তোর ।
– সামিরা এবার ভয়ে পুরো খই ,মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না ।কিছু বলতে চেয়েও গলা দিয়ে আসছেনা ।
– আয়শ বুজতে পেরে সামিরার সামনে থেকে সরে গিয়ে টিশার্ট টা হাতে নিয়ে পরতে পরতে চেহারা টা একটু নাখোশ করে বললো , এমন ভাবে ভয় পাওয়ার কি আছে? আমি কি তোর উপর এতোটাই অন্যায় করে ফেলেছি সামু ?
– সামিরা যেনো স্বস্তির পেলো ,- আপনি আমাকে সামু কেনো বলছেন এটা তো আরু প্রেমা আমাকে বলে ।
– আয়শ: কোনো সমস্যা?
– সামিরা: সমস্যা কেনো হবে ।
– আয়শ : আচ্ছা , চাইলে যেতে পারিস এখন ।
– সামিরা: ডেকেছিলেন কেনো কি করতে হবে বলুন।
– আয়শ: কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই ।
– আয়শের ডিরেক্ট কথায় সামিরা কাচুমাচু শুরু করে ।
– আয়শ : এমন করছিস কেনো? জোড় করছি না । এমন ভয় পেলে আর ডাকবো না ।
আয়শের শেষের কথা টা কেমন যেনো অভিযোগ কিংবা অভিমান মনে হলো সামিরার কাছে । কিন্তু কিছু বললো না ।
আয়শ: চেন্জ করবো ইচ্ছে হলে থাকতে পারিস।
সামিরা মনে মনে ,কি আজব মানুষ ইনি এইতো ভাবলাম রাগ করেছে এখন আবার আগের মতো কথা বলছে , আশ্চর্য নিজের তো লজ্জা বলতে ল টাও নেই আমার টাও….
আয়শ: হয়েছে বকা দেওয়া? তাহলে আস্তে পারিস এবার ।
সামিরা: আপনাকে কে বললো বকা দিচ্ছি আমি আজব তো।
আয়শ: পেঁচার মতো এমন মুখ করে থাকলে সবাই বুঝে যাবে আসলে কি পকপক করছিস মনে মনে ।
সামিরা এবার দুরুম দুরুম পা ফেলে নিজে নিজে বকবক করতে করতে রুম ছাড়ে।
আয়শ মুচকি হাসে কিন্তু সামিরা তাকে ভয় পায় বিষয় টা মোটেও তার পছন্দ হয়নি ।
সকাল বেলা ঠিক দশ টা কি সাড়ে দশটা বাজে আলিয়ার মা বাবা বোন চৌধুরী বাড়িতে এসে পৌঁছায় । আরিয়া তখনও ঘুমেই নিবদ্ধ ছিলো ছায়া এসে আরিয়ার কানের কাছে আপুউউউউউউ বলে এক চিৎকার দিতেই আরিয়া এক লাফে উঠে বুকের উপর থু থু দিয়ে কিছু বলবে তার আগেই বোনের চেহারা দেখে চমকায় ,খুশিতে চাকচিক্য হয়ে উঠে মুহুর্তেই চেহারা । কিন্তু এতো বড় কবে হয়ে গেলো এই পিচ্চি টা ?
ছায়া আরিয়া কে জড়িয়ে ধরে বললো ,কতো দিন দেখিনা তোকে আপু ,কোথায় ছিলি হ্যাঁ ? আমাদের সবাইকে ভুলে গিয়েছিস আপু ।একটুও কি আমাদের কথা মনে পড়েনি তোর ।
আরিয়া ও ছায়া কে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু বসায় প্রথমে তারপর বলে , তাইতো চলে এসেছি নাহলে আসতাম নাকি আপু । কেমন আছিস তুই ,আর এতো বড় হয়ে গেলি কবে হ্যাঁ ?
মা বাবা কোথায় ?
ছায়া: তুমি ঘুমিয়ে ছিলেন তাই আসেনি । নিচে আছে ।
আরিয়া এবার ছায়া কে ছেড়ে দিয়ে বললো ,চল মা বাবার কাছে যাই ।
ছায়া ও সম্মতি জানালো ।
রহিমা বেগম আর খলিল কে দেখে আলিয়ার চোখ জোড়া ছল ছল করে উঠলো মুহুর্তেই। দৌড়ে এসে রহিমা বেগম কে জড়িয়ে ধরলো আরু। রহিমা বেগম এতো বছর পর মেয়ের ছোঁয়া পেয়ে একের পর এক স্নেহের পরশ একে দিচ্ছে পুরো চেহারায় চোখেও খানিক টা অশ্রু হয়তো সেটা আনন্দের ,হারিয়ে যাওয়া কিছু ফিরে পাওয়ার দরুন ।
মায়ের কাছে একটু আদর দিয়ে আবার বাবার কাছে গিয়েও স্নেহ নিয়ে আসে আরিয়া , কিন্তু জাফর সাহেবের কাছ থেকে শুনতে হয়েছে অনেক কথা ,,এই তোর ভালোবাসা ছিলো ,এতো মায়া মমতা ফেলে চলে গিয়েছিলি অজানা কারনে সবাইকে ফেলে ।
এগুলো যে অভিযোগের লিস্ট আরিয়া বেশ বুজতে পারছে তাই চুপচাপ সব টা হজম করে নিয়েছে ।
আরিয়া কে এমন করে চুপ করে থাকতে দেখে সামিরা আর প্রেমার সেই আগের হাসি মুখে ফুটে উঠে । আরিয়া বেশ বুজতেছে ঐ দুইটা মজা নিচ্ছে তাও আপাতত চুপ থাকলো পরে তো এদুটোকে দেখা যাবে সময় হোক । মনে মনে ভেংচি কেটে হাজার টা বকা শুনালো সামিরা আর প্রেমা কে ।
আয়শ ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে গিয়েছে হসপিটালের উদ্দেশ্য। তারপর লাষ্ট কদিন যাবত অফিস যাওয়া হয়না তাই হসপিটাল কাজ শেষে অফিসে যাওয়া উদ্দেশ্য।
সকাল থেকে নিয়ে এই বিকেল পর্যন্ত আরিয়ার কাছে থেকে প্রায় অনেক কথাই জানা হয়ে গিয়েছে সবার ,অল্প স্বল্প করে অনেক টাই বলেছে কিন্তু আরিয়ার জন্য যে গুলিটা লেগেছে সেটা শুধাল জন্য সবাই অপ্রস্তুত ছিলো ,আফরান নামক হৃদয়হীন মানুষের ও হ্যদয়ের দেখা মিলেছে তবে একটু হলেও সেটা ভাবতেই কেমন যেনো লাগছে তবে রহিমা বেগম আর খলিল সাহেব একটু আফরানের বিষয় টা ভালো ভাবেই ঘাঁটাঘাঁটি করছেন ,কিভাবে ভুলে যাবে সেই তিন বছর আগের কথা ? ঐ মাহিন খানের অত্যাচার এর হাত থেকে আফরান এই তো বাঁচিয়েছে তাদের কে । হ্যাঁ তানভীর তো সেই অন্ধকার রুমে থেকে ছেলেপুলে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে বাঁচিয়ে দিলো সেদিন নয়তো মেরেই ফেলতো । তানভীরের কাছে থেকে তো সবটা আর শুনেছে সব কিছু আফরানের কথায় করেছে এটা কি কৃতজ্ঞতা নয়? আজ এই জায়গায় আছেই তো আফরানের কারনে সে যতই মাফিয়া সাইকো কিলার হোক না কেনো তার হৃদয় যে আরু বলতে অন্য এক বিশালতা কাজ করে সেটা তো তানভীরের কথা দ্বারাই বুঝা গিয়েছে । নয়তো ওর মতো ছেলে আমাদের মারা যাওয়া বা বেঁচে থাকা এসব দিয়ে কি করতো?
রহিমা বেগম: ভাইজান আফরান কেমন আছে এখন?
জাফর: এইতো অনেক টাই সুস্থ তবে ডঃ বলেছে কিছুদিন ওখানেই থাকতে ।
রহিমা: আচ্ছা , আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া যেনো ছেলেটা জলদি ভালো হয়ে যায় ।
মায়ের মুখে আফরানের নামে এমন ভালো ভালো কথা শুনে আরিয়া একটু চমকায় ,এখন মনে হচ্ছে সামিরার কথা গুলো একটাও মিথ্যা নয় সব টাই সত্য।
খলিল সাহেব : হা রে মা ,একটু ক্লিয়ার করে বলবি কি হয়েছিলো যে এমন করতে হলো তোর ,বাড়ি ছাড়তে হলো ,পরিবারের মায়া উঠে গেলো ।
আরিয়া কি বলবে তার জানা নেই তাই কথা কাটিয়ে বললো , বাবা এসব বলে লাভ কি এখন আছি এটাই ওকে ,এসব নিয়ে কথা বলতে চাইনা ।
জাফর: তুমি যে এসকে গ্রুপের সিইউ তুমি কি জানতে না একাজ টা ঠিক না ,ভালো কাজ শবনম করেনা ।
আরিয়া: জানি ,তখন ঠিক ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়াটা আমার পজিশনে ছিলো না । আমি মনে করি আমার জায়গায় যে কেউ থাকলে হয়তো এমন টাই বেঁছে নিতো ।
জাফর: তার জন্য তো জিজ্ঞেস করেছি কি হয়েছিলো সেদিন বলো আমাদের । যেটার চাপ সহ্য করতে পারোনি ।
আরিয়া কিছু বলে না ,চুপ করে জায়গা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে , চাচাজান আমি একটু আসছি ।
সবাই বুঝলো আরিয়া এই নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছে না তাই আর জোড় করলো না কেউ ।
সামিরার মা বাবা সবাই এসেছে ,আরিয়ার থেকে পেছনে ফেলে আসা তিন বছরের সব কাহিনিই শুনেছেন সবাই অল্প অল্প করে তবে আরিয়া চলে যাওয়ার কারন টা বরাবরের মতোই এড়িয়ে উত্তর দিয়েছে । তবে সবার ধারনা আফরানের অতিরিক্ত বাজে ব্যাবহারের কারনেই আরিয়া চলে গিয়েছিলো।
নাবিল জেল থেকে কিভাবে বের হয়েছিলো সেটাও কারো জানা নেই ,তবে তার বন্ধু মহলের কেউ ছাড়িয়েছে এটা তো বুঝাই যায় কারন আজমল সাহেব তো তাকে ত্যাজ্য পুত্র বলে আখ্যায়িত দিয়েছে । অবশ্য এমন পুত্র কে ই বা চাইবে? নাবিলের কোনো রকম খবর রাখা নিষিদ্ধ সিকদার বাড়ির সকলের জন্য। অবশ্য রাবেয়া বেগম নাবিলের ব্যাপারে আরিয়ার কাছে অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করে নিয়েছেন এই পর্যন্ত,শত হোক মায়ের মন তো মানা যায় কি এতো সহজে পুত্র থেকেও নেই শুধু মাত্র তার মনুষ্যত্বের কারনে ।
কিন্তু যখন থেকে জেনেছে আফরানের লোকেরা নাবিল কে আটকিয়েছে রাবেয়া বেগম সেই থেকে আজমল সাহেব কে নাবিলের কথা শুনিয়ে যাচ্ছেন,আফরান তাকে ছারবেনা কিছু করো তুমি, যতো কিছু করুক আমাদের ছেলে নাবিল ,চোখের সামনে মরে যেতে তো দেখতে পারিনা ,কেঁদে কুটে বুক ভাসাচ্ছেন গত রাত থেকে কিন্তু আজমল সাহেব তার কথার কোনো তোয়াক্কা করলেন না উল্টো বললেন ,এমন ছেলে বেচে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো ,এক তো মানুষ খুন করে জেলে গিয়েছে তার পর আবার বের হয়েও আরিয়া মামণির পিছে লেগেছে ,তোমার কি মনে হয় এতে তোমার ছেলের হাত নেই? আমি বেশ বুঝতে পারছি সব তোমার ঐ ছেলের কোনো প্লেন করেই করেছে মিলিয়ে নিও ।নয়তো আরিয়া মামনি চলে যাওয়ার পর তোমার ঐ বজ্জাত ছেলের কাছেই জায়গা পেলো? আর জায়গা ছিলো না তার?
মি মাফিয়া পর্ব ৪৬
আজমলের কথার যুক্তির উপর রাবেয়া বেগম কিছুই বলতে পারলেন না অবশ্য কিন্তু তার ভেতরের সব টা জুড়ে হাহাকার করে যাচ্ছে ছেলে হারানোর ভয়ে। আফরান একবার সুস্থ হয়ে গেলে কি হবে রাবেয়া বেগম বুজতে পারছে বেশ । তারপর ……