মি মাফিয়া পর্ব ৪৯
সুমাইয়া সাবিহা
সন্ধ্যা থেকে বাড়ির রান্না বান্না আজ সামিরা আর রহিমা বেগম মিলেই করেছে । বাহিরের খাবারে রহিমা খলিল অভ্যস্ত নয় ,জাফর সাহেব কয়েকবার বলেছিলো বাহির থেকে নিয়ে আসবে কিন্তু রহিমা বেগম তার কথায় অটল । হঠাৎ করেই যে বাড়িটা আবার আগের মতো ভরে উঠবে এটা যদি জাফর সাহেব আগে থেক জানতো তবে তো আগে থেকেই কাজের মহিলা নিয়ে নিতো ।
রাত প্রায় সাড়ে নয়টার কাছাকাছি সময়ে সামিরা আর রহিমা খাবার গুছিয়ে টেবিলে পরিবেশন করছে । এক এক করে সবাই এসেছে কিন্তু আরিয়াই মনে হয় সবার শেষে উপস্থিত হয়েছে ।
রহিমা: অসময়ে ঘুম টা কি এখনো পরিবর্তন করিসনি, সন্ধ্যা বেলা কি ঘুমোনোর সময় হলো কোনো?
আরিয়ার দুর্বল কন্ঠ : ওহ- মা ,এমন করছো কেনো বসে বসে কি করবো তাইতো ঘুমিয়েছি।
রহিমা: সামিরা যে আমার সাথে হাতে হাতে কাজ করলো তুই থাকলে কি ক্ষতি হয়ে যেতো সেখানে ।
জাফর: আহ রহিমা এভাবে কেনো বলছো ,আমার মামনি এসবে অভ্যস্ত নয় আর এগুলো কেনো করতে হবে ,আর তোমাদেরকে ও আমি নিষেধ করেছিলাম কিন্তু।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরিয়া বিরক্ততা নিয়ে ভ্রূ কুঁচকে খাবারে হাত রাখলো ।
সামিরা রহিমা বেগমের উদ্দেশ্য বললো ,কাকীমা আপনিও বসে পড়ুন না আমি আছি তো দেখছি ।
রহিমা: ওমা কি বলছো , তুমি বসো চটজলদি হুম ।
সামিরা রহিমা বেগমের হাত ধরে টেনে খলিল সাহেবের পাশের চেয়ার টায় বসিয়ে বললো ,আর কোনো কথা নয় ,আপনি বসুন আমি আছি ।
রহিমা বেগম কিছু বলতে গিয়েও চুপ রইলেন।
একটু পর আবার বললেন,আয়শ কখন আসবে ?
সামিরার জানা নেই উত্তর,কি বলবে এই মুহূর্তে সে ? উনি তো আর জানেন না তাদের ব্যাপার টা নিয়ে ,আরিয়ার অনুপস্থিতে বাড়িতে যে কয়বার এসেছে ততবারই সামিরা কে না দেখে জিজ্ঞেস করেছে জাফর কে উনিও কথা কাটিয়ে উত্তর দিয়েছে ভার্সিটি তো ওদের বাড়ি থেকে কাছে তাই আপাতত এখানেই থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।
সামিরা কে কাচুমাচু করতে দেখে জাফর বললেন ,আসলে রহিমা হয়েছে কি ,অফিসে ভিষন কাজ পরে গেছে এ কদিনে তাই একটু লেট…..
কথা টা বলার সাথে সাথে দরজার সামনে থেকে কেউ বলে উঠলো কাজ শেষ বাবা ।
সবাই সেদিকেই দৃষ্টি ফেলে । আয়শ টিশার্ট এর উপরের শার্ট টা খুলে নিয়ে হাতে ধরে আছে । পাশেই সাদেক সহ আছে ।
সামিরা সাদেক কে দেখতে পেয়ে বললো ,এমা ভাইয়া কখন আসলেন ।
আয়শ সাদেক কে নিয়ে এগিয়ে এসে বললো,এসেছিলো কাজেই কিন্তু এই বজ্জাত টা আমাকে বলেনি তাই উপরওয়ালাই রাস্তায় দেখা করিয়ে দিয়েছে তাইতো ধরে নিয়ে আসলাম ।
আয়শের কথায় জাফর হেসে বললো ,একদম ঠিক করেছো, দু’জন ফ্রেস হয়ে খাবার খেতে আসো ।
সাদেক চারদিকে একবার চোখ বুলালো এতো মানুষ দেখেই বুঝলো আরিয়া এসেছে তাই হয়তো …
হেসে বললো , আঙ্কেল কেমন আছেন?
জাফর নিজেকে স্ট্রং করে বুক ফুলিয়ে বললো : একদম বেটার ।
জাফরের এহেনো কির্তিতে সবার মুখেই হালকা হাসি দেখা গেলো ।
আয়শ: বাবা তুমিও না …
সামিরা: আপনারা ফ্রেস হয়ে আসুন ।
আজ আমরা সবাই একসাথে হয়েছি আমার তো ভিষন ভালো লাগছে ।
আরিয়া: প্রেমা কেও জানিয়ে দিস ওর হাসব্যান্ড এসেছে। আমার মাথায় আসেনা আমার আশে পাশের প্রত্যেক টা ছেলে মানুষ বউদের প্রতি এতোটা কেয়ারলেস কিভাবে হতে পারে ।
আরিয়ার কথাটা বোধয় আয়শ আর সাদেকের গায়ে লাগলো । কিন্তু আপাতত তারা চুপ আছে ।
সাদেক একটু হাসি টেনে আরিয়া কে কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েই আটকে যায় সেই রাতের কথা মনে করে ।পার্টিতে তো আরিয়ার ভালোর জন্যই সেদিন সেখান থেকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলো নয়তো ভালোভাবে তো সজ্ঞেনে ছিলোনা আরিয়া কিন্তু সামান্য হাত ধরাতে যে আফরান ব্রো এভাবে তাকে ডেকে পাঠিয়ে হাত টা মচকে দেবে কে জানতো ? টানা একমাস ব্যাথায় কাতর ছিলাম অথচ কাউকে কিছু বলতে পারিনি ,কথাটা ভাবতেই শরীর কেঁপে উঠে সাদেকের ।
কথা না বলার চেয়ে চুপ থাকাই ভালো ,দেখা গেলো এটাও আফরান ব্রোর কান অবদী গিয়েছে তারপর আবারো আমাকে .. ওহ গড এসব ভেবে কাজ নেই ,ঠিক ভাবে আছে সেটা দেখতে পাচ্ছি এটাই অনেক । বলে ভ্রূ দুটো উপরে উঠিয়ে মুখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ।
আয়শ: তোর আবার কি হলো?
সাদেক : কিছু না উপরে চল । বলে দুকদম ফেলতেই জাফর সাহেব বলে উঠলো ,বারবার নিষেধ করেছিলাম তোমাকে আজ বের হতে তবুও গেলে এতো রাতে করে ফিরেছো কেনো ? যদি কিছু হয়ে যায় কি হবে তখন? আমাদের কথা কি তুমি বুজছো না আফরান।
সাদেক আয়শ পেছনে ফেরে আফরান কে দেখে ।
আয়শ আফরানের কাছে দৌড়ে গিয়ে একহাতে আফরানের পিঠ থেকে পেট অব্দি জড়িয়ে ধরে আফরানের একহাত নিজের কাঁধে তুলে বললো ,পাগল হয়েছিস? এমনাবস্থায় কেউ বের হয়? বাবা আমাকে কেনো বলো নি ও বের হয়েছে ।
আফরান বিরক্ততা নিয়ে নাক কপাল বললো ,ছেহ! ছেলে হয়ে আরেকজন ছেলেকে দুর্বল ভাবতে তোর লজ্জা করলোনা আয়শ ,হাত সরা বলছি ।
আয়শ : একদম কথা বলবি না,সব সময় নিজের পার্সোনালিটিতেই কেনো থাকতে হবে? সবাই তো মানুষ নাকি সবারই দুর্বলতা ব্যাথা বলে কিছু আছে সেটা তুই যতই ঢেকে রাখিস না কেনো লাভ নেই।
আফরান এবার আয়শের কাঁধ থেকে নিজের হাত নামিয়ে বললো , আফরান চৌধুরীর ডিকশনারি তে ইম্পসিবল বলতে কোনো ওয়ার্ড নাই । ছাড়তে বলেছি নয়তো মেরে দেবো একদম আয়শ ।
আয়শ আরো শক্ত করে ধরে বললো : যা ইচ্ছা করিস , এখন আপাতত চুপচাপ রুমে চল ।
আফরান বিরক্ত হয়ে বললো,বাবা এটাকে কিছু বলো নয়তো কিছু করে দেবো মাথা গরম করোনা কেউ ।
আয়শ : বাবাকে কেনো বলছিস ? ছোট বেলার অভ্যাস এখনো যায়নি দেখছি । আর তোর যদি এতোই নিজেকে স্ট্রং মনে হয় তাহলে আজ কেনো নিজেকে আমার থেকে ছাড়িয়ে নিতে পারছিস না?
আফরান ভ্রূকুচকায় কিন্তু কিছু বলেনা ।
আয়শ: কি হলো এখন বল চুপ কেনো ?
আফরান: চুপ করবি ? নয়তো মুখ কিভাবে বন্ধ করতে হয় আমার জানা আছে ।
আয়শ এবার বিরক্ত নিয়েই আফরান কে ধরে হাঁটতে লাগলো ।
আফরান চেয়েও পারলো না নিজেকে স্ট্রংলি প্রেজেন্ট করার ।
রহিমা: আয়শ আফরান কে টেবিলে বসাও,সবার সাথেই নাহয় আজকের খাবার টা …
আফরান: একদম আমার পার্সোনাল বিষয় নিয়ে কেউ কথা বলবেনা।
রহিমা বেগম টাস্কি খায় একপ্রাকার ,তিন বছর আগে নিজেই তো বাঁচিয়ে ছিলো তাদের কে ঐ মাহিনের হাত থেকে তার জন্য কতোটা কৃতজ্ঞতা আদায় করেছিলো তার উপর সেদিন আমার মেয়েকেই তো বাঁচাতে গিয়ে নিজের এই অবস্থা বানিয়েছে তবে এসব কিছুর উপর এমন করে ব্যাবহার করে পানি ঢেলে দেওয়ার কোনো মানে আছে?
আয়শ: খেয়েছিলি কিছু বাহিরে?
আফরান: আজব তো ,আমাকে দেখছি কেউ ভয় পাচ্ছে না ।মুখের উপর একেকজন কথা বলেই যাচ্ছে, ভয়ঙ্কর কিছু ঘটানোর আগে সবাই চুপ থাকো বলে দিলাম ।
আফরান এর শেষের কথা টায় সবাই একটু ভীত হয় । আসলে এই ছেলে যে পৃথিবী উল্টে গেলেও চেন্জ হওয়ার নয় বুজতে বাকি নেই কারো ।
আফরান এবার একটু শক্তি খরচ করেই আয়শের হাত থেকে নিজেকে ছাড়ায় ।
ওদিকে আরিয়া শুধু একমনে তাকিয়ে আছে এই লোকটার দিকে কতোটা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে তবুও দুর্বলতা সিকার করছেই না ।
কিন্তু যতোটা কষ্ট হচ্ছে তার চেয়েও বেশি ভেতরে ভয় ঢুকে আছে আরিয়ার,বারবার ঢুকে গিলছে। নিশ্চয়ই সব কিছুর জন্য শাস্তি বরাদ্দ আছে তার জন্য। আচ্ছা সেটা কি মৃত্যু? নাহ উনি আমাকে মারতে পারবেনা তো তবে? তবে কি ধরনের শাস্তি দেবেন আমাকে?
হার্টবিট উঠানামা করছে এসব ভাবতেই ।
কিন্তু উনি আমার দিকে একবারও তাকাচ্ছে না কেনো? আমি এখানে আছি এটা কি উনি দেখেননি?
আফরান আর চুপচাপ কোনো দিকে না তাকিয়ে ড্রয়িং রুম ছাড়ে।
আয়শ সাদেক ও আর দেরী না করে উপরে চলে যায় ।
জাফর হতাশা হয়ে বলে, মানুষ করতে পারলাম না ছেলে দুটোকে ।
আরিয়ার চোখ দুটো ছলছল করছে , কিন্তু এর কারন তার অজানা । সবার সামনেও তার এই দৃষ্টি দেখাতে চায়না তাই কোনো রকম নিজেকে সামলে নিয়ে খাবারে মনোনয়ন করে কিন্তু এক লোকমা মুখে দিতেই যেনো মনে হচ্ছে এই বুঝি গলায় আটকে মারা যাবো । আরিয়া কে এরকম মুখে ভাত নিয়ে তখন থেকে বসে থাকতে দেখে সামিরা একবার সবাইকে পরখ করে নিয়ে আরিয়া কে ইশারা করলো ।
আরিয়া বুজতে পেরে মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো , আমার খাবার শেষ আমি আসি।
জাফর: কি বলছিস সব তো প্লেটেই আছে ,শেষ করো মামনি।
আরিয়া: আসলে চাচা ঘুম থেকে উঠেছি তো এখন খেতে ইচ্ছা করছেনা ক্ষুধা লাগলে পরে খেয়ে নিবো ।
রহিমা: তাই বলে এতো গুলো ভাত নষ্ট করবি?
আরিয়া মায়ের কথার কোনো জবাব না দিয়ে চেয়ার ছাড়ে ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সবার খাবারই শেষ হয়ে যায় ।
আয়শ এসে ডিরেক্ট গোসলে গিয়েছে প্রায় আধা ঘন্টার ও বেশি হবে কিন্তু বের হওয়ার নাম গন্ধ নেই , তাই সাদেককে আয়েশের জন্য অপেক্ষা না করতে বলে সবার সাথেই বসিয়েছে।
সব শেষে সামিরা টেবিলে বসে অবশ্য অনেকবার বলেছে সামিরা কে খেতে কিন্তু সামিরা বলেছে সবার শেষ হোক সমস্যা নেই ওর ।
কিন্তু বসতেই মনে হলো আয়শ এখনো বাকি কথাটা ভেবেই খাবার টা জায়গায় রেখে সোফায় বসে টিভি টা ছেড়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো । প্রায় এক ঘন্টা হয়ে যায় আয়েশের আসার নাম নেই ।
সামিরার চোখে ঘুম চলে আসে তাই বসা থেকে উঠে ভাবলো আয়শ কি করছে সেটা একবার দেখে আসবে ।
যেই ভাবা সেই কাজ সিঁড়ি বেয়ে উপরে গিয়ে আয়শের রুমে উকি দিলো দরজা খোলাই ছিলো ।
কিন্তু কাউকে দেখতে পেলোনা , আচ্ছা এতোক্ষণ ধরে কি গোসল দিচ্ছেন উনি? ছেলে মানুষের এতো সময় লাগে গোসলে উনাকে না দেখলে জানতামই না।
সামিরার ভাবার মাঝেই ওয়াশ রুমের দরজা খুলে আয়শ বের হয়ে আসে ।
আয়শ কে দেখে সামিরা আবার নিজেকে লুকিয়ে নেয় । উদ্দেশ্য চেন্জ শেষ হলে জিজ্ঞেস করবে খাবার খাবে নাকি খাবেনা।
কিন্তু হঠাৎ আরিয়ার কথা মনে আসতেই মন টা খারাপ হয়ে গেলো ।
আয়শের ড্রেস চেন্জ শেষ করে রুম থেকে হঠাৎ বের হয়েই সামিরা কে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রথমে একটু অপ্রস্তুত হয়ে ।-কিন্তু মাথায় সাথে সাথেই উদ্ভট একটা দুষ্টু চিন্তা চলে আসে , ঠোঁটের কোনে হাসি লুকিয়ে সুযোগে সদ্ব্যবহার করা যাক তাহলে ভেবেই এতো আনন্দ হলো আয়শের তাই মনে মনেই হাসতে লাগলো
– তুই এখানে ? কখন আসলি সত্যি করে বল ,আমার চেন্জ করা দেখছিলি তাইনা ।
– সামিরা খেয়ালই তো করেনি কখন বের হলো উনি? ওহ গড কোন ভাবনায় হারিয়ে গিয়েছিলাম আমি ।(মনে মনে)
– আয়শ : কি হলো বলছিস না কেনো ,আমার ইজ্জত নিয়ে দেখছি ছিনিমিনি খেলছিস তুই ।
– সামিরা কপাল কুচকায় ,এসব আবার কোন ধরনের কথা বলছেন? আপনার ইজ্জত নিয়ে আমি কি করলাম আবার?
– আয়শ : এইতো লুকিয়ে লুকিয়ে আমার চেন্জ করা দেখছিলি তাইনা একদম মিথ্যা বলবিনা বলে দিলাম ।
– সামিরা : আজব তো আমি তো আপনাকে ডাকতে এসেছিলাম ।
– আয়শ: তা দরজার চিপায় দাঁড়িয়ে ডাকছিলি বুঝি? আর আমার কানেও সমস্যা তাই শুনিনি এটাই বলতে চাচ্ছিস?
– সামিরা : আশ্চর্য তো আপনি কি সব বলছেন? যা ইচ্ছে বলবেন আর হয়ে গেলো?
– আয়শ: একদম উল্টা পাল্টা বলছি না আমি । তুই কথা ঘুরাচ্ছিস।
– সামিরা বিরক্ত হয়ে ভাবলো ,কথায় নিশ্চয়ই পারবোনা যা বলবো এটার বিপক্ষে বলবেনই বুঝে গিয়েছি কখনো কি ভালো ভাবে কথা বলেছেন নাকি ,সব সময় হেনস্ত করেছে আজ কিভাবে ভালো কিছু আশা করছি ,যাই হোক এসব ভেবে কাজ নেই ।(মনে মনে)
– আয়শ:আবারো বকছিস তাইনা ।যা বলবি একদম জোড়ে জোড়ে বল ।
– সামিরা কথা না বাড়িয়ে সোজা ভাবেই বললো ,খাবার খাবেন কি? সবার শেষ । ঘুমোবো তো নাকি ।
– আয়শ:তোর ঘুমাতে ইচ্ছে হলে ঘুমা আমি কি করবো?
– সামিরা: আশ্চর্য তো ,সব কিছু কে এনে দেবে আপনার সামনে?
আপাতত আমি ছাড়া কেউ নেই ,কাজের মহিলা নেই নিশ্চয়ই এটা তো জানেন তাইনা ।
আয়শ এবার কি যেনো ভেবে কথা না ঘুরিয়ে বললো ,নিচে যেতে পারবোনা রুমে দিয়ে যা ,বলে আয়শ ভেতরে ঢুকে গেলো ।
সামিরা: আজব তো এখানে কেনো….
আয়শ: একদম কথা ঘুরাবি না ,যা বললাম তাই কর নয়তো খাবো না।
সামিরা : আমার সাথেই পারে শুধু ঝগড়া করতে সবার সাথে তো ভালো ভাবেই কথা বলে আমার সাথে কেনো এমন ঝগড়া করে ,আমার পিছনে কেনো পরে থাকে যতো সব ,এসব কিছু নিজে নিজে বকবক করতে সামিরা নিচে যায় ।
আয়শ শব্দহীন হাসে ।
মিনিট কয়েক বাদে সামিরা ট্রে তে করে খাবার নিয়ে উপস্থিত হয় । দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বললো ,আসতে পারি ?
আয়শ লেপটপ নিয়ে কিছু কাজ করছিলো সামিরার কথায় স্মীত হেসে বললো: দাঁড়িয়ে থাকলে বললে কি দাঁড়িয়েই থাকবি?
সামিরা : সব সময় পাঁচটা শব্দ বেশি না বললে উনার কথার পুর্নতা হয়না হয়তো ।
আয়শ:ভেতরে আস।
সামিরা ভেতরে এসে খাবার টা কাঁচের ছজট টেবিল টার উপরে রেখে চলে যেতে নিলে আয়শ বললো ,যেতে বলেছি?
সামিরা: আশ্চর্য তো ,বলতে হবে কেনো?কাজ শেষ করে কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো?
আয়শ লেপটপ টা বন্ধ করে খাটে থেকে নেমে গিয়ে দরজা টা লাগিয়ে সামিরার দিকে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তাকিয়ে ডান হাত টা ধরে টেনে খাটের একপার্শ্বে বসালো ।
সামিরা হঠাৎ আয়েশের মুখে স্বাভাবিকতা দেখে কিছু বলতে যাবে কিন্তু কিছু বলতে ইচ্ছে করছেনা এই মুহূর্তে,কেমন যেনো লোকটার প্রতি যতোটা ক্ষোভ ছিলো সব টা কমে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।
আয়শ সামিরা কে ছেড়ে গিয়ে খাবার টা নিয়ে এসে সামিরার সামনে এনে বললো ,খেয়েছিস?
সামিরা ভাবনা থেকে বের হয়ে বললো ,কি.. কিছু বলেছেন?
আয়শ : খেয়েছিস কিছু?
সামিরা: এইতো এখান থেকে গিয়েই খাবো ।
আয়শ সামিরার কাছে এসে খাবার টা নিয়ে প্রথম লোকমা টা সামিরার দিকে ধরে বললো ,হুম ।
সামিরা যেনো আকাশ থেকে পড়লো,এটা কি আসলেই?
আয়শ: কি হলো তাকিয়ে আছিস কেনো?
সামিরা কিছু বলতে যায় কিন্তু তার আগেই আয়শ খাবার টা সামিরার মুখে দিয়ে দেয় ।
সামিরা চটজলদি মুখের সামনে ডান হাত টা দিয়ে ঢেকে শেষ করে আয়শ কে বললো ,কি হয়েছে আপনার বলবেন? দুদিন ধরে দেখছি কেমন করছেন ।(কথাগুলো সামিরা একটু মেজাজ দেখিয়ে বললো)
আয়শ উত্তর না দিয়ে নিজেও খাবার খেতে শুরু করে ।
সামিরা: কিছু তো বলুন
আয়শ মুখের খাবার শেষ করে সামিরার দিকে আরেক লোকমা ধরে বললো ,আগে শেষ করে পরে বলবো নয়তো এভাবেই বসে থাক।
সামিরা এবার আয়েশের হাত থেকে খাবার টা ফটাফট মুখে তুলে বললো,জলদি শেষ করুন তারপর আমার উত্তর…
আয়শ: খাবার মুখে নিয়েও তোর কথা শেষ হয়না ,ভেরি ফানি উফস
সামিরা যেনো কথাটায় অপমান বোধ করলো ,তাই চুপসে যায় ।
খাবার শেষ করে হাত ধুয়া শেষ হলে আয়শ বললো ,এখন যা আমার কাজ আছে।
সামিরা : আপনি তো বলেছিলেন খাবার শেষে বলবেন ।
আয়শ সামিরা চোখে চোখ রাখে ।
সামিরা সেকেন্ড কয়েক তাকিয়ে আবার অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে বললো ,কি হলো ? বলুন না এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? আবারো বকবেন?
আয়শ সামিরার চিবুক ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে আরেকটু কাছে গিয়ে বসে আবারো দৃষ্টি যে দৃষ্টি মিলিয়ে একদম শান্ত গলায় মিহি স্বরে বললো , সত্য করে বল তো ,এখনো কি এটাই মনে হয়? নাকি ইচ্ছে করে এমন বলছিস শুনার জন্য।
সামিরা চোখ জোড়া কাঁপছে ,এতো কাছ থেকে কখনো আয়শ কে দেখা হয়নি তাও এভাবে আয়েশের স্পর্শে চোখে চোখ রেখে ।
আয়শ সামিরার দিকে আরেকটু ঝুঁকে বললো ,বল ।
সামিরার শরীর কাঁপছে অনাগত ভাবে ।
আয়শ স্মীত হেসে সামিরা কে ছেড়ে দিয়ে একটু পেছনে গিয়ে একহাত নাড়িয়ে চেহারায় বাতাস দিচ্ছে এমন অভিনয় করে চঞ্চল গলায় বলল: উফ সামু কি গরম ,তোর তো দেখছি আমার চেয়েও বেশি গরম লাগছে পুরো শরীর থেকে কেমন করে ঘাম ঝড়ছে ।
সামিরার শরীর এখনো কাঁপছে , কিন্তু আয়শ কে বুঝতে দেবে না এই ভেবে খাট থেকে এক লাফে নেমে বললো ,আ..আমি আসছি ।
আয়শ এবার খিলখিলিয়ে হেসে সামিরার বা হাত টা ধরে হেঁচকা টানে একদম নিজের কাছে আনে ,আয়শের মাথাটা সামিরার ঠিক বুকের কাছে ,দুহাতে সামিরার কোমর জড়িয়ে ধরে ,সামিরার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো , আমি ইচ্ছে করে তোকে বিকিনি,তখন জানিনা কেনো শুধু রাগ হতো তোর উপর , কিন্তু ঐ রাগের মাঝেই কিছু ছিলো যেটা বুঝাতে পারতাম না ।
সামিরার শরীরের কাপাকাপী যেনো আরো বেড়ে গেলো , গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না ।
এবার আয়শ ও আনকম্পোটেবল করতে শুরু করে ,অথচ তার উদ্দেশ্য ছিলো সামিরা কে স্বাভাবিক বানানো ,নিজের প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সামিরা কে ছেড়ে দিয়ে বললো ,ঠিক আছে , যতোদিন না তুই ইচ্ছে করে আমার কাছে আসবি আমিও জোড় করবো না । তবে শুন ডিভোর্স দিচ্ছি না সে তুই প্যাপার রেডি করলেও ।
সামিরা কিছু বলতে চায় কিন্তু তার গলা যে শুকিয়ে কাঠ কাঠ হয়ে আছে ,এটা কিসের অনুভূতি তার জানা নেই তবে আয়শ কে ছি মুহূর্তে ভিষন করে বলতে ইচ্ছে করছে অনেক কিছু যেগুলো মুখে আসছেনা ।
আয়শ: কিছু বলবি আর? বলার থাকলে বলতে পারিস শুনছি আমি ।
সামিরা মাথা দুদিকে দুলিয়ে উত্তর বুঝায় ,না কিছু বলার নেই ।
আয়শ: ঠিক আছে যেতে পারিস ,তাইলে থাকতেও পারিস যদি কিছু মনে না করিস ।
সামিরা আর কিছু না বলে এক দৌড়ে দরজা খুলে কন দিকে গেলো বুঝার উপায় নেই ।
আয়শ শুধু দরজার দিকে তাকিয়ে রইলো ।
রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজবে হয়তো ,সেই খাবার ছেড়ে রুমে এসে দরজা আটকিয়ে কান্না শুরু করেছে এখনো পর্যন্ত এই কান্না থামছেনা ,হেঁচকি তুলে কাঁদছে আরিয়া ,চোখ ফুলে আছে পুরো চেহারা লাল হয়ে আছে । কিসের কারনে এমন হচ্ছে জানেনা নিজেও তবে বারবার নিজের ভুল গুলো নিয়ে ভাবছে আর চোখের জল ফেলছে ,
হঠাৎ দরজায় আওয়াজ পেয়ে বুকের নিচে থেকে বালিশ সরিয়ে উঠে বসে ,কে হবে এই সময় ? হঠাৎ মাথায় আফরানের কথা আসতেই চোখের জল মুছে নিজে নিজে বললো , উনি এসেছেন? বকে দিবে? মারবে? তারপর আদর করবে আবার তাইনা ? জানি আমি । যতোই মারুক আমি সব সহ্য করে নেবো এবার ,আমারই তো ভুল হয়েছে ,আমিই তো ভুল বুঝেছি উনাকে ।কথাটা ভেবেই খাট থেকে নেমে দ্রুত গিয়ে দরজা টা খুলে দেয় দেয় , কিন্তু মুহূর্তেই সব আশা পানি হয়ে যায় আফরানের জায়গায় সামিরা কে দেখে ।মুখ টা সাথে সাথে মলিন হয়ে যায় আরিয়া্র।
সামিরা ভেতরে এসে বললো,কি হয়েছে ? কাদছিলি তাইনা? কি হয়েছে দেখেছিস একবারও নিজের দিকে । মুখ ধুয়ে আস যাহ তো ।
আরিয়া :ভালো লাগছেনা এখন ,কেনো এসেছিস সেটা বল ।
সামিরা: এই কারনেই এসেছিলাম । কথাটা বলে সামিরা আলিয়ার হাত ধরে টেনে ওয়াশ রুমে দিয়ে আসে ।
আরিয়া ও দরজা আটকিয়ে ফ্রেস হয়ে আসে মিনিটের মাথায় ।
সামিরা: এভাবে কাঁদছিল কেনো এটা বল ,ভাইয়ার জন্য? দেখ আরু আমার মনে হয় এখন তোর উচিত ভাইয়ার সাথে গিয়ে কথা বলা ।
আরিয়া: আমি কথা বললেই উনি বলবেন?
সামিরা: আশ্চর্য কেনো বলবেনা? তোর জন্যই তো এতো কিছু করেছে ,তোকে বাঁচিয়েছে,তোর জন্য দুরের থেকেছে ,আই মিন ওনার সব টাই তোর জন্য তাহলে কথা কেনো বলবেন না? যদি তোর উপর জিদ করতো তাহলে কি সেদিন রাতে তোকে বাঁচাতে যেতো? আর তোকে এই বাড়িতে এভাবে আটকে রাখতো?
আরিয়া কি যেনো ভেবে বললো ,সত্যি তো?
সামিরা: আরে সত্যি বলছি । তোর কি মনে হয় ভাইয়া তোর সাথে কথা বলবে না?
আরিয়া: তাহলে কেনো বললো না ? রাতেও তো এসেছিলো সকালেও ছিলো । আগে তো সবার সামনেই ডেকে আনতো।
সামিরা: আরে পরিস্থিতি টা এমন ছিলো ,এখন উনি অসুস্থ সময় তো পায়নি কথা বলবে কিভাবে ?
আরিয়া : ওকে । কিন্তু কখন বলবো?
সামিরা : যখন ইচ্ছা তোর তখন ,ভাইয়া তোর জন্য সব সময় ফ্রি এটা আমার মনে হয় তাই বললাম।
আরিয়া : জানিনা কিছু ভালো লাগছেনা ।
সামিরা : আর কান্না করিস না ওকে ,ঘুমিয়ে পর এখন।
আরিয়া: ওকে ।
সামিরা একটা হাসি দিয়ে আরিয়া কে জড়িয়ে ধরে ।
সামিরা যাওয়ার প্রায় ১০-১৫ মিনিট ধরে আরিয়া ভেবেই যাচ্ছে গিয়ে কি বলবে? প্রথমে কি থেকে শুরু করবে? আচ্ছা উনি কি সত্যি রাগ করে নেই আমার উপর? আচ্ছা রাগ করলে কি হবে ? সব মানিয়ে নিবো । সব চেয়ে বড় কথা উনি এখন আমার হাসব…. এটুকু বলেই আরিয়া লজ্জায় লাল হয়। আচ্ছা উনি আমাকে এই কথাটা আগে কেনো বলেননি ?
আচ্ছা এখন কি উনি ঘুমাচ্ছে? এখন গেলে কিছু হবে? হয়তো ঘুমোচ্ছে,থাক আজ না যাই । বলে বিছানার উপর হুমড়ি খেয়ে পরে ।
একবার এদিকে একবার ওদিকে পাশ ফিরছে আরিয়া ,ফোন টাও নেই যে সময় দেখবে । কাল মায়া কে বলে সব কিছু আনিয়ে নিবো ।
কিন্তু আমার যে বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে উনার সাথে কথা বলতে ।
অনেকক্ষণ ধরে ভেবে আরিয়া ফাইনাল ডিসিশন নিলো একটু গিয়ে দেখেই আসি উনি তো ঘুমের থাকবে ।
আরিয়া ঝট করে শুয়া থেকে উঠে দরজা খুলে আগে সবটা বাড়ি একনজর দেখে নেয় ডিম লাইটের আলোতে।সবাই ঘুমিয়ে গেছে নিশ্চিত ।
মি মাফিয়া পর্ব ৪৮
ধীরপায়ে এগিয়ে যায় আফরানের দরজার কাছে কিন্তু গিয়েই মন টা আরেক দফা ভেঙে চুরমার হয়ে যায় , দরজা আটকানো। আরিয়ার জানা মতে আফরান দরজা খুলেই ঘুমায় কারন যতোদিন গিয়েছে চুপিচুপি ততদিন দরজা খোলাই পেয়েছে কিন্তু আজ ? আজ কেনো উনি দরজা টা লাগিয়েছে? তবে কি সত্যিই উনি আমার সাথে রাগ করে কথা বলবেন না? কথাটা ভাবতেই গড়গড়িয়ে চোখ বেয়ে অশ্রু গড়ায় ।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগলো আরিয়া । ঠিক এক থেকে দেড় ঘন্টা এখানেই এভাবেই দাঁড়িয়ে কাদছিলো ,শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়ার পর আর যখন দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না তখন আরিয়া আবার নিজের রুমে ফিরে গেলো । তারপর…..