আপনাতেই আমি পর্ব ৭৩
ইশিকা ইসলাম ইশা
সময় চলছে তার মতো।এর মাঝে কেটে গেছে ১টা মাস।সময়ের সাথে বড় হচ্ছে রোজ!সাথে রাগ জেদ দুটাই বাড়ছে!
কেউ এক ঝলকে বলতে পারবে রোজ তীব্রর মেয়ে। আমির তো ছেলেকে খোঁচা মারতে ছাড়ে না।”যেমন বাপ তেমন মেয়ে, পারফেক্ট” আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছে দেখ এবার কেমন লাগে!! কথাটা বলেই থাকে প্রায়!!
আজো তার ব্যতিক্রম হয়নি।তীব্রর বুকে শান্ত হয়ে বসে আছে রোজ! এদিকে তীব্রর অফিসের সময় পার হয়েছে আরো ঘন্টাখানেক আগে।
আমির ছেলের ব্যাপারে সব জানে! অফিসে আসতে লেট হবার ব্যাপারেও জানে।কেন লেট হচ্ছে??রোজ বাবাকে ছাড়তে নারাজ!তাই লেট হচ্ছে!এই সুযোগে তিনি ও কল করে ছেলেকে খোঁচা দিতে ভুলেন নি।আগে আমিরের মনে হত আমির তীব্রর বাবা না, তীব্র ই আমিরের বাবা।আমির সর্বদা ছেলের ভাবভঙ্গি, কর্মকাণ্ড নিয়ে ভয় ,হতাশায় থাকত। তীব্র রাগী, জেদি স্বভাব নিয়ে তিনি চিন্তায় থাকতেন।এখন নিজে বাবা হয়ে বুঝক সন্তানের জেদ কি ভয়ানক ব্যাপার!
আমির অফিসে বসে কথাগুলো ভাবছিল।মনে মনে তিনি ভীষণ খুশি ছেলেকে জব্দ করতে পেরেছেন তাই।রোজ কে সে এমনি এমনি ভালোবাসে না।কলিজা বাচ্চা একটা।দাদুর জান সে।
তীর সেই কখন থেকে বাবাকে দেখে চলছে!আমিরের সেদিকে কোন দিকে কান নেই।সে তো গভীর ভাবনায় ছেলেকে জব্দ করা নিয়ে ব্যস্ত!তীর বেশ কিছুক্ষন পর্যবেক্ষণ করেএবার বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কি ভাবছো বাবা???
আমির চমকে উঠে বলে,
তীর!!কখন এলে!!
তীর ভু কুঁচকে বলে,
এসেছি তো অনেকক্ষণ!কি ভাবছো তুমি বাবা!!
আমির বিজয়ী হেসে বলে,
তোমার ভাই কে বেশ জব্দ করতে পেরেছি!বুঝলে!!!
তীর অবাক হয়ে বলে,
কি???
আমির সব বলতেই তীর হো হো করে হেসে উঠলো। আমির বিজয়ী হেসে বলল,
তাহলে বলো বাপ কে??
তীর আমিরের বিজয়ী হাসিতে এক পাতিল পানি ঢেলে বলে,
আঙ্গে আব্বাজান!! তীব্র অফিসে এসেছে!! মিটিং ও শুরু করে দিয়েছে।
আমিরের মুখ ফাঁটা বেলুনের মতো চুপসে গেল।অবাক হয়ে বলল,
মানে!!!
তীর বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললো,
সো স্যাড বাবা!!
আমির কটমট করে তাকালো তীরের দিকে।রোজ কে রেখে তো তীব্র আসবে না!তবে!!! ব্যাপার টা তো দেখতে হচ্ছে!!
তীব্র কোথায়???
তীর মুখ টিপে হেসে বলে,
ওর কেবিনে!!
আমির তীরের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে তীব্রর রুমের দিকে যেতে লাগল!!তীব্র রেগুলার অফিসে বসে না।তবে জরুরি মিটিং এটেন্ড করতে আসে। হসপিটালের ক্ষেত্রেও তাই রোজ হসপিটালে যায় না। জরুরী ভিত্তিতে যায়।আমির ছেলের ট্যালেন্ট দেখে গর্বিত হলেও আপাতত তিনি ছেলেকে হারাতে চান!!তাই তো রোজ কে হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়েছে!!!
আমির তীব্রর রুমে গিয়ে হা হয়ে গেল।বিশাল টেবিলের একপাশে সুয়িয়ে রেখেছে রোজ কে!!রোজের পা বরাবর চেয়ারে বসে ল্যাপটপ থেকে পাশের রুমে বসা ক্লাইন্টের সাথে কনফারেন্স এ মিটিং সারছে তীব্র।দক্ষ হাতে ল্যাপটপ চালিয়ে যাচ্ছে।
সবাই তাদের প্রেজেন্টেশন প্রেজেন্ট করছে তীব্র মনোযোগ সহকারে তা দেখছে।রোজ বাবার একহাত ধরে আছে। তীব্র হাতের সাথে লাল টুকটুকে বেলুন বেধে রেখেছে।রোজ আপাতত বাবার হাত থেকে বেলুন নেওয়াই ব্যাস্ত হয়ে উঠেছে।তার ভাষায় অ উ অ তা কি সব বলেই যাচ্ছে যদিও রোজ পাপা, মা দুটো ডাক ডাকে তবে খুব স্পষ্ট না।রোজ আপাতত ব্যস্ত হয়ে বেলুন ধরতে চাইছে।
তীব্র মাঝে মাঝে মেয়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে পুরুনায় গম্ভীর মুখে ল্যাপটপের দিকে দেখছে।রোজ চেষ্টা করে যখন পারছে না তখন ঠোঁট ফুলাতেই তীব্র মিটিং পোস করে মেয়েকে বুকে জরিয়ে ধরছে। বাবার বুকে শান্ত হয়ে কিছুক্ষণ পর আবার তার খেলায় মত্ত হচ্ছে।কখনো কখনো তীব্র রোজ কে বুকে নিয়েই মিটিং এটেন্ড করছে। যেহেতু পার্টিতে সবাই রোজ কে দেখেছে প্রায় তাই অনেকে হয়তো চিনেছে। কেউ কেউ ভীষণ অবাক ,আবার কেউ কেউ বাকরুদ্ধ ,আবার কারো কারো মনে হাজারো প্রশ্ন যদিও এসব নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন করার সাহস করবে না।
তাছাড়া তাই তীব্র চাই না রোজ আপাতত বাইরের কারো সংস্পর্শে আসুক। মেয়ে কে নিয়ে কোন রিস্ক নিতে রাজি না সে।
এদিকে আমির ছেলের কান্ডে বাকরুদ্ধ!তীব্র যা করছে তা একটা মাও করতে হিমশিম খায়।আমিরের মনে হচ্ছে এটা তার ছেলে না। নিশ্চয় কোন ভুত প্রেত আছর করেছে!!তীব্র এভাবে হ্যান্ডেল করবে এটা ইহজন্মে কল্পনা করে নি আমির। আমির তীব্রর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো!সে যেন হেরে গিয়েও জিতে গেছে।নিজেকে গর্বিত পিতার ট্যাগ দিলেও ভুল হবে না।
রিদির আজ পরপর দুইটা অপারেশন ছিল।তাই বাধ্য হয়েই রিদিকে যেতে হয়েছে হসপিটালে।রিদি রোজ কে সাথে নিতে চাইলে তীব্র মানা করে দেয়।মেয়ে নিয়ে কোন রিস্ক নিতে নারাজ সে।যদিও রিদির সাথে গাড এর ব্যবস্থা করেছে তীব্র। তবুও!! রিদি ব্যস্ত থাকবে!! অপারেশন এ তো আর রোজ কে নিয়ে যেতে পারবেনা।তাই রোজ কে নিজের কাছেই রেখেছে তীব্র!ভেবেছিল রোজ ঘুমালে মিটিং শেষ করে ফিরে আসবে। কিন্তু রোজ তো ঘুমানোর জায়গায় তীব্রর সাথে খেলতে চাই! তাছাড়া মা ছাড়া খুব সহজে ঘুমাই না রোজ! তীব্র ছাড়া আবার কারো কাছে যাচ্ছেও না।গেলে কেঁদে কেঁদে একাকার করে ফেলছে।তীব্র মেয়ের কান্না সহ্য করতে পারে না।তাই ঘন্টা দুই লেট করেই মিটিং শুরু করেছে।
মিটিংয়ের প্রায় শেষের দিকে রিদি হতদন্ত হয়ে কেবিনে ঢুকে! তীব্র তখন মেয়েকে বুকে নিয়ে কাউচে শুয়ে আছে। বাকিটুকু লাবিব দেখছে।
রিদিকে দেখে রোজ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।হয়ত মাকে এতোক্ষণ খুজেছে।রোজ চটজলদি মেয়ের কাছে এসে কাউচের মাথায় বসে কোলে তুলে নেয়।আদুরে গলায় বলে,
এই এই তো মামনি আমি!!এই যে!!
রোজ বাবার দিকে একবার তাকিয়ে মায়ের বুকে মিশে গেল।রিদি মেয়েকে এটা ওটা বলছে।এর মাঝেই তীব্র রিদির কোলে মাথা রেখে পেটের দিকে মুখ গুঁজে দিল।রিদি কেঁপে উঠে তীব্রর দিকে তাকিয়ে বলল,
কি করছেন???
তীব্র উওর না করে কামিজ তুলে উন্মুক্ত পেটে নাক মুখ গুঁজে দিল।রিদি বিরক্ত কন্ঠে বলল,
ছাড়ুন!!! বাইরে লাবিব ভাইয়া আছে!!
এই রুম থেকে সব দেখা গেলেও বাইরে থেকে এই রুমে কিছু দেখা যায় না জান।তাই এখন আমার আরামে ডিস্টার্ব করবেন না।
রিদি কটমট করে বলে,
এটা কি ধরনের আরাম!! ছাড়ুন!!
উঁহু!!!!
রোজ ঘুমাবে হয়তো!! আমিও ঘুমাবো!!ডোন্ট ডিস্টার্ব আস!
রিদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে রোজের দিকে তাকিয়ে অবাক হল। সত্যিই রোজ ঘুমে নিভু নিভু চোখে চেয়ে আছে।রিদি মেয়ে পরম স্নেহে বুকে নিতেই কিছুক্ষণে ঘুমিয়ে যায় রোজ।তীব্র একটু পর কোল থেকে মাথা তুলে রিদিকে শুইয়ে দিল।মেয়েকে রিদির এক বাহুতে শুইয়ে নিজের জন্য জায়গা করে রিদির গলায় মুখ গুঁজে মেয়ে সহ এক হাতে জরিয়ে ধরলো।
আপনাতেই আমি পর্ব ৭২
রিদি অবাক হলেও মুচকি হাসল।হাতটা তুলে তীব্রর সেট করা চুল এলোমেলো করে দিল। তীব্র কিছু বলল না আরো একটু সিটিয়ে গেল রিদির মাঝে।রিদি তীব্রর এই কাজে কখনো বাঁধা দেয় না।ভালো লাগে তার দুই পৃথিবী তার সাথে, তার পাশে!এর বেশি কিছু চাইনা তার!!রিদি মেয়ে একটু ভালো করে ধরে নিজেও চোখ বুজল!!