আপনাতেই আমি পর্ব ৭৪
ইশিকা ইসলাম ইশা
রবীঠাকুর বলেছিলেন,”ভালবাসাকে বর্ননা করা অসম্ভব,ইহা একটি অফুরন্ত রহস্য।
তীব্রর মতো মানুষ যখন এই ভালবাসা নামক জালে আটকা পড়তে পারে।তাহলে রবী ঠাকুরের কথা ১০০ ভাগ সত্য।আসলেও ভালবাসা একটি অফুরন্ত রহস্য!কে, কোথায়,কিভাবে কারো ভালবাসায় সিক্ত হয় তা রহস্যের মতোই।এই রহস্য ভেদ করা সম্ভব নয়।
কথাগুলো ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলল আমির। আজকাল তার তীব্র কে নিয়ে ভাবতে ভালোলাগে। শান্তি পায়।ছেলে পাক্কা সংসারি হয়েছে।এখন সে আরামে চোখ বন্ধ করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারবে।
আজকাল বৌটাকে ভীষণ মিস করে আমির।তিশা তার জীবনে একফালি সুখ। যদিও বিয়ের প্রথমে মেনে নিয়েছিল না আমির।আমির ছিল সাদা আর তিশা ছিল শ্যামকন্যা। কিন্তু সেই শ্যামকন্যা মেয়েটি ধীরে ধীরে তার ভালবাসা দিয়ে তাকে বদলে দিল।তীব্র আর তার কাহীনির মাঝে শ্যামকন্যা হলেও দুইজনের টা ভিন্ন রিতীতে গাঁথা।
তিশার কথা মনে পড়তেই আমির বহুত পুরানো অডিও প্লেয়ার চালু করে।তিশা ছিল পুরানো জিনিসের সৌখিন।আর এই অডিও প্লেয়ার টা তার প্রিয়।এতো আধুনিক জিনিস ছেড়ে তার খুব পছন্দ ছিল এটা।মাঝে মাঝে দুইজনে বসে গানের সুরে চন্দ্র বিলাস করত!! অডিও প্লেয়ার চালু করতেই সেখানে বেজে উঠল অনেক পুরানো বাংলা গান,
তুমি এসেছিলে পরশু…
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কাল কেন আসোনি!!(২)
তুমি কি আমায় বন্ধু…..
কাল ভালোবাসো নি …..
আমির নিজেও গুনগুনিয়ে উঠল।রিদি মিষ্টি হেসে দরজা ভিড়িয়ে দিল।থাক বাবার একান্ত সময়ে আর ডিস্টার্ব করল না!!
রিদি রোজ কে নিয়ে আমিরের রুম থেকে বের হয়ে নিচে যেতেই আমেনার রুমের সামনে দাঁড়ায়!!আমেনা কারো সাথে ফোনে কথা বলছে!
আমি পারি নি!!!
……………..
আমার কাছে আসে না। ঘৃনা করে আমাকে হয়তো!!
………….
তীব্র জানতে পারলে আস্ত রাখবে না!!
…………..
আমি……আমেনা কিছু বলার আগেই রোজ কেঁদে ওঠে।রিদি হচকচিয়ে রোজ কে সামলানোর ভঙ্গিতে কিচেনের দিকে যেতে যেতে বলে,
আব্বু আসবে তো আম্মু!! কাঁদে না তো সোনা!!তুমি আমার লক্ষী মেয়ে যে!!আম্মু আজ তোমার জন্য ইয়ামি ইয়ামি খিচুড়ি রান্না করেছে!! আমার জানটা খাবে তো!!
রিদি নিজেকে সামলে রোজ কে নিয়ে মহা ব্যস্ত হবার নাটক টা বেশ ভালোই করে!! অবশ্য আড়চোখে আমেনার রুমের দিকেও তাকিয়ে দেখে রুম আগের মতো হালকা ভেড়ানো না লাগানো!!রিদির মনে সন্দেহ জাগে!!আমেনা আবার নতুন কি পরিকল্পনা করছে??আর তখন কি বলল!!
তীব্র জানতে পারলে আস্ত রাখবে না…
মানে কি?? তীব্র কে কি বলবে রিদি!!নাকি নিজে হাতিয়ে দেখবে ব্যাপারটা!!যাই হয়ে যাক এবার আর আমেনা বেগমকে পরিবারের কোন ক্ষতি করতে দিবে না!!মা -মেয়ে সম্পর্ক আগেই শেষ!! নতুন করে আর বলার কিছুই নাই!!
ভোর সকালে হাঁটতে বের হয় আমেনা বেগম।এই সুযোগে রিদি চুপচাপ আমেনার রুমে ঢুকে সব খুঁজেও কিছু পায় না।হতাশ হয়ে চলে আসতে নিলে নজরে পড়ে আমেনার ফোনের দিকে!!এই ফোনেই তো কারো সাথে কথা বলছিল।রিদি চটপট ফোনে নাম্বার দেখতে চেয়েও পারল না।আমেনার ফোন লক করা!!রিদির সন্দেহ আরো বাড়ল!!তবে কি সত্যিই আমেনা তার আবারো ক্ষতি করতে চায়!!রিদি কিছু একটা ভেবে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে আসে।রুমে এসেই প্রথমে নজরে আসে তার পৃথিবী। ঘুমন্ত বাবা মেয়ের দিকে এগিয়ে এসে মেয়েকে আদর করে তীব্রর সাইডে বসল। ঘুমন্ত তীব্রর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
আমাদের মধ্যে আর কাউকে আসতে দিব না তীব্র!! এবার যাই হোক আমি আমার পৃথিবী ভিন্ন হতে দিব না।রোজ বা আপনার কোন ক্ষতি হতে দিব না!
রিদি ধীরে হাত ছুয়াল তীব্রর গালে। সুন্দর করে তীব্রর হাতটা একটু টেনে কম্বল উচু করে ওরনা সাইডে রেখে একদম বুকে মিশে গেল। তীব্র একটু নড়েচড়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
ভোর সকালে আপনার রোমান্টিক হতে হচ্ছে!!রাতে একটু রোমান্টিক হলেও তো পারেন!!
তীব্রর কথায় রিদির গাল লজ্জায় লাল হয়ে গেল।বিরবির করে আওয়ালো,
অসভ্য!!!
তীব্র রিদিকে একটু চেপে ধরে বলে,
আপনার কাছে চরম অসভ্য হতে চাই!!
রিদি মুচকি হেসে তীব্রর বুকে ঠোঁট ছোয়াতেই তীব্র বলে,
সিডিউস করছেন এই ভোর সকালে!!
রিদি মুখটা একটু উঁচু করে তীব্রর দিকে তাকালো।মনে মনে কোথাও তো আবারো হারানোর ভয়টা ঘিরে ধরছে।আমেনা নতুন কি চাল চালবে!রিদির ভাবনার মাঝেই রিদি বুঝতে পারে তার ঠোঁট জোড়া অন্যর দখলে।রিদি তীব্রর ছোঁয়া টুকু সাদরে গ্রহন করল। ভালবাসা কি??যদি প্রশ্ন করা হয় তবে রিদির উওর হবে তীব্র!! ভালবাসা বলতে তীব্র কেই বুঝে রিদি।তার ভালবাসার চিহ্ন হিসেবে নতুন একটা ভালবাসা রোজ। দুইজনের জান যার মধ্যে রয়েছে।
তীব্র রিদিকে ছেড়ে দিল।হাফাচ্ছে দুইজন!! তীব্র রিদিকে লজ্জা দিতে বলে খেয়ে ফেলি আপনাকে!!রিদি তীব্র কথায় চুপচাপ আবারো মাথা রাখল তীব্রর বুকে। তীব্র দুহাতে জড়িয়ে ধরল বুকে।যদিও রিদির মুখটা দেখে কিছুটা চিন্তিত মনে হচ্ছে!তবে কারনটা এখন আর জানতে ইচ্ছে হলো না। তীব্র আলতো করে চুমু খেল রিদির মাথায়। একপাশে সুয়ে থাকা মেয়ের ঘুমন্ত মুখটা দেখে চোখ বুজে নিল।
ধরনীতে এখনো তপ্ত গরম।এই গরমের মাঝে কলেজ থেকে বাসায় ফেরা নীরের কাছে অসহ্য কর!বাস এসে নির্দিষ্ট জায়গায় থামতেই নেমে পড়ে নীর। বাসস্টপ থেকে বাড়ির দূরত্ব আরো বেশ দূরে।নীর হেটে কিছুদূর গিয়ে একটা রিক্সা ডাক দিতেই পাশ থেকে কেউ ডাক দেয়,
নীলল!!!
নীর পিছনে ফিরে চমকে উঠে। মৃদু স্বরে বলে,
নীলয়!!!!
নীলয় নীর কে দেখে এগিয়ে আসে।নীর নিজেকে সামলে বলে,
তুমি??
নীলয় ও একই সুরে বলে,
তুমি এখানে!!!
নীর স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
আমার বাসা এখানে তাই!!তুমি এখানে??
নীলয় মৃদু হেসে বলে,
ফুফাতো ভাইয়ের বিয়েতে এসেছি!! মনসুর আলীর বড় ছেলে আমার কাজিন!!
নীর স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
ওহহ আচ্ছা!!
নীলয় একটু ইতস্তত করে বলে,
কেমন আছো??
নীর বিস্তর হেসে বলে,
খুব ভালো!!তুমি??
নীলয় নীরের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়।এইতো কয়েকমাস আগেও সে শুনেছে নীর নাকি ঘরবন্দি করে রেখেছে নিজেকে। তাঁদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যকোথাও চলে এসেছে।তবে নীর কে তো দেখে তো মনে হচ্ছে না সে নিজেকে ঘরবন্দি রেখেছে। হাস্যোজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। কাঁধে ব্যাগ,হাতে বই।
তুমি কি পড়াশুনা করছ???
নীর নীলয়ের প্রতি বিরক্ত হলেও বলে,
হ্যা পড়ছি!! অনার্স এ।আর কিছু বলবে!!না মানে টায়ার্ড লাগছে বাসায় যেতাম!!
বদলে গেছ!!!
উচিত নয় কি!!
কোথাও বসে কথা বলি!!
বসে কথা বলার মতো ইম্পর্ট্যান্ট কিছু মনে করছি না।আ……
নীর কিছু বলার আগেই ওর ফোন বেজে উঠে।রায়ানের কল!!নীর নীলয় কে বাই বলে ফোন রিসিভ করে রিক্সায় উঠে বসে। নীলয় নীরের যাওয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
নীর ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রায়ান বলে,
তুমি এখনো বাসায় পৌছাও নি??
নীর মুচকি হেসে বলে,
গাড়িতে!!
৫ মিনিট আগে পৌঁছানোর কথা!!!
আপনি কি ঘড়ি হিসাব করেন নাকি??
জি ম্যাম!!আপনার সব কিছুর হিসাব তো রাখতেই হবে!!
আসলে কিছুক্ষণ আগে!!!
কিছুক্ষণ আগে কি???
নীর ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
নীলয়ের সাথে দেখা হয়েছিল!!!
হু ইজ হি???
মানে নীলয় হলো আগে…….
আপনাতেই আমি পর্ব ৭৩
বুঝেছি!! বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হন।আমি পরে কল দিচ্ছি!!বলে ফোনটা কেটে দিলো। এদিকে নীর হতভম্ব হয়ে গেল ফোন কাটায়।রায়ান কি রাগ করল। কিন্তু সে তো ইচ্ছে করে কথা বলে নি! রায়ান কি তাকে ভুল বুঝছে!!নীরের চোখে পানি টলমল করে উঠল।