আপনাতেই আমি পর্ব ৭৬
ইশিকা ইসলাম ইশা
আমেনা রিদির দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রিদির হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয়।
এদিকে রিদি প্রতিক্রিয়া বিহীন চেয়ে আছে আমেনার দিকে।মুখ দিয়ে তার শব্দ বের হচ্ছে না। গলা যেন কেউ চেপে ধরেছে!!আমেনা রিদির অবস্থা দেখে ফোন কেটে দেয়।ধীর গতিতে বসে বিছানায়।রিদি অনেক কষ্টে একটু শব্দ বের করে বলে,
বা বা!!!
আমেনা তিক্ত দৃষ্টিতে তাকালো রিদির দিকে।যেন রিদির মুখে বাবা শব্দটাই তিনি বিরক্ত!!আমেনা চরচরে মেজাজ দেখিয়ে বলে,
কোন মুখ দিয়ে বা বা বের হচ্ছে তোর!!
রিদি ধপ করে বসে পড়ল মেঝেতে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ওর। খুব কষ্টে বলল,
আমাকে কেন মারতে চায়???আমি কি ঠিক শুনলাম??
আমেনা কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকল। রিদি অশ্রুসিক্ত নয়নে আমেনার দিকে অধীর আগ্রহে চেয়ে আছে। আমেনা রিদির চেয়ে থাকা দেখে বলল,
নিজে ডক্টর হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছিস?
রিদি আমেনার ত্যাড়া কথায় কিছু বলল না।খুব কষ্টে উঠে দাঁড়ালো।আমেনা রিদির বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে তপ্ত এক নিঃশ্বাস ফেলল!আজ এই মুহূর্তে রিদি সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে তা আমেনা রিদির অবস্থা দেখে বুকের ভেতর অস্থিরতা টের পেল আমেনা।তবে সে না কোন সহানুভূতি দেখাল না শান্তনা দিল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এদিকে রিদি দেওয়াল ধরে কয়েক কদম ফেলতেই বুঝল তার শরীর ভারি হয়ে আসছে।তবুও জোর করে আরো দু কদম এগিয়ে ধপ করে বসে পড়ল মেঝেতে।আর কতো কিছু তার আজানা!আরো কতো রহস্য উদঘাটন করতে হয়!!
হুট করেই কোথা থেকে ছুটে এলো তীব্র।অফিস থেকে ফিরে রুমের দিকে অগ্রসর হতেই আমেনার রুমের সামনে রিদিকে এভাবে বসে থাকতে দেখে ছুটে এলো!!
কি!!কি হয়েছে জান??আপনি এভাবে বসে আছেন কেন??রিদি কি হয়েছে??
রিদি কম্পিত হাত দিয়ে তীব্র কে জরিয়ে ধরলো। ধীর কন্ঠে বলল,
আমাকে কেন মারতে চাইবে তীব্র!!
তীব্র রিদির দিকে তাকিয়ে বলল,
কে??কে মারতে চায়!!
রিদি আগে কিছু বলতে তার আগেই ঢলে পড়ল তীব্রর বুকে।তীব্র চিন্তিত হয়ে বলল,
সীট!!!এই জান!!
লাবিব!!!
এই জান!!জান!!!
তীব্রর ভয়ংকর এক ডাকে লাবিব সহ ছুটে এলো সবাই। ততক্ষণে তীব্র রিদিকে সাবধানে কোলে তুলে রুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। ড্রয়ার থেকে একটা ইনজেকশন বের করে পুশ করে দেয় রিদির হাতে।রিদিকে চেক করে গায়ে কম্বল টেনে দেয়।
ঘুমন্ত মেয়েকে বুকে নিয়ে রিদির মাথার কাছে বসে আছে তীব্র। প্রায় এক ঘন্টা হয়েছে রিদির এখনো ঙ্গান ফিরে নি।তীব্র ঘুমন্ত মেয়েকে দেখে চাইল ঘড়ির দিকে!আরো ঘন্টা খানেক পর রিদির ঙ্গান ফিরবে।তীব্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়েকে রিদির পাশে শুইয়ে দিল।অনেক কষ্টে কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়েছে রোজ। তীব্র মেয়েকে শুইয়ে ওয়াস রুমে ঢুকে। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে সোজা চলে যায় আমেনার রুমের দিকে!!
সামনাসামনি বসে আমেনা আর তীব্র!!তীব্র খুব শান্ত কন্ঠে বলে,
রিদি কিভাবে জানল???
আমেনা চিন্তিত হয়ে বলল,
রুপেস এর সাথে ফোনে কথা বলার সময় শুনেছিল মনে হয়।পুরোটা বুঝতে পারে নি!মনে করেছে আমি ওর ক্ষতি করতে চাইছি।তাই আমাকে এসে জিজ্ঞেস করার মাঝেই রুপেস এর ফোন আসে।ফোন রিসিভ করে রুপেস এর বলা কথা শুনে ফেলে।
তীব্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে শরীর চেয়ারে একটু এলিয়ে দিয়ে বলল,
আমি ছাড় দেই!ছেড়ে দেয় না!!ঐ যে একটা কথা আছে পিপিলিকার পাখা গজে মরিবার তরে!!রুপেস মিজার সময় ঘনিয়ে এসেছে!!
আমেনা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো তীব্রর দিকে। তীব্র ক্ষমতা সম্পর্কে ধারনা আছে তার!নিহাত এখন শান্ত পর্যায়ে আছে!আমেনা ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
তুমি বলেছিলে তুমি রুপেসকে কিছু করবে না!!
তীব্রর শীতল দৃষ্টি মূহূর্তে বদলে গেল। ভয়ংকর ঠান্ডা কন্ঠে বলল,
আমার কলিজায় হাত দিবে আর সেই হাত কি আমি সাজিয়ে রেখে চুম্মা খাবো!ছ্যা….
বালের জীবন!!ঐ দুটাকার মিজা আমার কলিজায় হাত দিয়ে রেহাই পেত!!নিহাত!!বৌয়ের জন্মদাতা পিতা!নয়তো তীব্র চৌধুরী তার শত্রু কে তার ক্ষতি করার জন্য বাঁচিয়ে রাখে না!!
আমেনা তীব্রর কথায় ফুঁপিয়ে উঠলো,
ওর কোন ক্ষতি করো না তীব্র!!আমি খুব ভালোবাসি ওকে!!!
তীব্র বিরক্তকর কন্ঠে কটমট করে বলে,
আপনার ভালবাসা বাঁচিয়ে আমি আমার বৌ কে কি কব্বরে ঢুকাবো!!রিডিউকিলাস!!আপনার মনে হয় আমি! তীব্র চৌধুরী এতো ভালো!!
আমেনা তীব্রর দিকে তাকালো!!তীব্র পাশের চেয়ার লাথি মেরে বলে,
ছ্য্য্য্য্যা….……বালের ভালোবাসা!!বাল!!নিজের সন্তানের মা তো হতে পারেন নি কিন্ত প্রেমিকের জন্য প্রেম উতলে উতলে পড়ছে!!!
আর কি বললেন আপনি অনেক ভালোবাসেন ঐ নোংরা ন্যারো মাইন্ড লোককে!! থুথু ফেলি আপনার ভালবাসায়!!
আমেনা বেগম ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো এবার তীব্রর দিকে!! তীব্র শান্ত কন্ঠের হুমকিতে আবার বলে,
বৌ আর বাচ্চা নিয়ে আমি ওভার পসেসিভ!!সো ডোন্ট ট্রাস্ট মি!!আমি যদি তাদের জন্য বদলাতে পারি তাহলে বুঝেন!!আমি ঠিক কতোটা বদলাতে পারি!!আই রিপিট!ডোন্ট ট্রাস্ট মি!!কথাটা বলেই বসে থাকা চেয়ারে এক লাথি দিয়ে বেরিয়ে যায়।
টগবগে করতে থাকা রাগটা মাথাচাড়া দিতে উঠেছে তীব্রর।লাবিব দুরু দুরু বুক নিয়ে একবার তীব্রর রুমের বেলকনির দিকে।আবার তাকালো তীব্রর দিকে!!বেলকনিতে তাকানোর কারন হলো যদি ম্যাজিকের মতো তীব্রর এই রাগটা শান্ত করার মানুষ জেগে থাকত।তবে বসের রাগ নিয়ে সে কনফিউজড!!
তীব্র চৌধুরী রাগ হলে তো মানুষ খুন করে।তবে আজ গাছ কে ছিন্নভিন্ন করছে!! এটা কি বসের নতুন রাগ ঝাড়ার পদ্ধতি!!বড় একটা গাছের গুঁড়িতে কুড়াল দিয়ে কুপিয়েই চলছে গত ৩০ মিনিট যাবৎ। ইতিমধ্যে দুটো কুড়াল ই শেষ।এটা তিন নাম্বার!! রাগ কি গাছের উপর ঝারছে নাকি!!! বসের মাইন্ডে অন্য কিছু চলছে!!!
এদিকে আমির,তীর সহ বাকিরা অসহায় চোখে সবটা দেখছে।এই ভর সন্ধ্যায় ছেলের এমন গাছ কাটার অভিযানে চরম বিরক্ত হলেও এখন ছেলেকে কিছু বলা মানেই বিপদ!আপাতত চেয়ে দেখা ছাড়া তার কিছু করার নেই!!
রোজের কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় রিদির।মাথা ভার হয়ে আছে তার!রোজের কান্নার শব্দ জোরালো হতেই রিদি উঠে বসল।এদিক ওদিক না চেয়ে কোলে তুলে নিল মেয়েকে!!উঠে লাইট অন করে তীব্রতার খাবার তৈরি করতে লাগল। তীব্রতার খাবার ওকে খাইয়ে দিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখল তীব্র নেই।তবে বাইরে থেকে খটখট শব্দ কানে আসতেই বেলকনিতে যাই রিদি। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাগান বরাবর তাকাতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল! একটা মোটা গাছের গোড়া কেটে কমপ্লিট করে ফেলেছ প্রায়।আর একটু হলেই বিশাল বড় গাছটা ধপাস করে পড়বে! রিদি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে!!
গার্ডরা গাছ পড়ার আশংকায় আশেপাশের সব সরিয়ে ফেলেছে!তীব্রর উদাম শরীরে মাংসপেশী ফুলে উঠেছে!!যা রাগের বহিঃপ্রকাশ!
রিদি কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে থেকে ছুটল নিচে!রিদিকে নিচে আসতে দেখে সবাই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো!আমির হতাশ কন্ঠে বলল,
থামা গিয়ে!!!
রিদি ছুটে তীব্রর কাছে গেলেও দূরত্ব বজায় রাখল।কারন তার কোলে তীব্রতা আছে!তীব্রতা বাবাকে পেছন থেকে দেখেই তার ভাষায় আ তা তা করে হয়তো ডাকল বাবাকে!! অদ্ভুত না তবে সত্যি তীব্রতার ডাকে কুড়ালের শেষ বারি গাছে দিয়ে থামে তীব্র!!রাগে গজগজ করতে থাকা মস্তিষ্ক যেন শান্ত হল। ঝট করে তীব্রতা ও রিদির দিকে ঘুরে তাকালো! কিন্তু এখানে ঘটল আরেক বিপত্তি!!!
সাদা ফর্সা চেহেরা লাল রক্তবর্ণ হয়ে আছে।সিল্কি চুল গুলো ঘামে ভিজে কপালে পড়ে আছে!!ঘেমে একাকার অবস্থা। তীব্রতা বাবার ভয়ংকর রুপের সাথে পরিচিত না!তাই তীব্রকে দেখা মাত্রই কেঁদে উঠলো!!তীব্রর রাগ মূহূর্তে পানি হয়ে গেল।হাতের কুড়াল টা ফেলে দিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো মেয়ের দিকে!!মেয়ে যে তাকে দেখে কাদছে এটা বেশ বুঝতে পেরেছে তীব্র।
তীব্র এক ছুটে সুইমিং পুলে ঝাঁপ দেয়!!এদিকে তীব্র ঝাপ দিতেই বিশাল বড় গাছটা হেলে পড়ে মাটিতে!!রিদি সব রেখে মেয়ে কে চুপ করানোর চেষ্টা করছে। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক করে রোজ শান্ত হলে রিদি তীব্রর দিকে তাকালো।রোজ কে শান্ত দেখে তীব্র আদুরে গলায় বলল,
মামনি!!!
আপনাতেই আমি পর্ব ৭৫
রোজ পানিতে বাবাকে দেখে চাইল বাবার দিকে।তীব্রর শান্ত স্নিগ্ধ মুখ দেখে রোজ হাত বাড়িয়ে বাবার কাছে যেতে চাইলে তীব্র বিস্তর হাসল।মেয়ের সাথে পানিতে থেকেই বিভিন্ন খুনসুটি করে উঠে আসল পানি থেকে। এদিকে সবটা নীরব দর্শকের মতো দেখা মানুষ গুলোও যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল!!