মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৮
সাদিয়া
“এসো মা তোমার শ্বশুরের কাছে একটু বসো।”
বিষণ্ণ মলিন মুখে বললেন শায়লা বেগম। চেহারাটা উনার স্বামীর শোকে শুকিয়ে গিয়েছে। এক ধ্যানে খুব মনোযোগ দিয়ে তাকাল মায়রা। স্বামী অসুস্থ আর ভেতর থেকে শেষ হয়ে যাচ্ছেন বোধহয় স্ত্রী নিজেই। আচ্ছা স্বামীস্ত্রীর সম্পর্কটা কি এতই গভীর আর মায়া মহব্বতের? এই গভীর সম্পর্কটায় ঠিক কতটা মধু নিহিত আছে? আচমকা অযাচিত ভাবে মনস্পটে ভেসে এলো শক্তপোক্ত সুঠাম দেহের কঠিন আবরণে আচ্ছাদিত ইহামের গম্ভীর মুখখানা। শরীরটায় রোমাঞ্চকর শিহরন বয়ে গেল স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই। শুকনো মড়মড় পাতায় বৃষ্টি পড়ার মতো গলা ভিজানোর চেষ্টা করল মায়রা। এক শীর্ণ কৃশ কন্ঠ কানে লাগতেই চকিতে তাকাল সেদিক।
“মায়রা মা আমার পাশে বসো একটু।”
দৃষ্টিতে বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকাল মায়রা ইসহাক চৌধুরীর দিকে। উনার কথা মতো নিভৃতে বসল বিছানার ধারে রাখা টুলটার মাঝে। শান্ত দৃষ্টিতে স্নিগ্ধতা বিরাজ করে মায়রা তাকাল উনার দিকে। এক সময়ে ঢাকা শহরের বিখ্যাত আইনজীবী ইসহাক চৌধুরী আজ বয়সের চাপে পড়ে দিনদিন কেমন নুয়ে যাচ্ছেন। এই তো হঠাৎ অসুস্থতায় শরীরটাও যেন ভেঙ্গে এসেছে উনার। ইসহাক চৌধুরী হাত বাড়িয়ে দিতেই মায়রা আগ বাড়িয়ে সেটা ধরল। তিনি মলিন হেসে নিজের হাতটা উঠিয়ে দিলেন মায়রার মাথার দিকে। আলতো করে বুলিয়ে দিয়ে মৃদু সরু কন্ঠে বললেন,
“আমার ঘরের লক্ষ্মী একটা মেয়ে। কিছুদিন পর আমার শিফুও চলে গেলে এই ঘর আলোকিত করবে আমার এই মেয়েটা। জানি না সেটা দেখবার ভাগ্য হবে কি না আমার।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
খেয়াল করল, শায়লা বেগম মুখ চেঁপে ফুঁপিয়ে উঠলেন। মায়রার খুব খারাপ লাগল। সে নিজের শ্বশুরের হাতটা ধরে নরম গলাতে বলল,
“বাবা এসব কথা বলবেন না। আপনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন। শুধু শুধু চিন্তা করে শরীরটা আরো খারাপ করবেন না।”
মায়রার এত সুন্দর কথার পিঠে ম্লান হাসলেন ইসহাক চৌধুরী। ফাতেমা বেগম অভিভূত হলেন মেয়ের কথায়। যাক মেয়েটার সুবুদ্ধি হয়েছে তাহলে শ্বশুর বাড়ি আসায়। ছটফট করা মেয়েটাও কেমন নীরবে শ্বশুর শাশুড়ির সামনে ভদ্র সাবলীল হয়ে আছে, ভারস্থিরে কথাও বলছে। তিনি এগিয়ে এলেন। মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে অভয় দিয়ে বললেন,
“হ্যাঁ ভাইজান শুধুশুধু চিন্তা করবেন না। আপনি একদম ঠিক হয়ে যাবেন।”
পাশ থেকে শায়লা বেগম কাঁদো গলায় বললেন,
“দেখুন না বেয়ান সারাক্ষণ মুখে শুধু অলুক্ষণে কথা লেগেই থাকে। এত করে বলি শুনতেই চায়না আমার কথা।”
বিছানায় শয্যা ইসহাক চৌধুরী মলিন হেসে রয়েসয়ে জবাব দিলেন,
“এই নশ্বর দুনিয়াতে কি আমরা সবসময় থাকব শায়লা? একদিন তো আল্লাহর নিকট যেতেই হবে আমাদের। এটা যত তাড়াতাড়ি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে আল্লাহর পথে ধাবিত হওয়া যায় ততই মঙ্গল।”
মায়রা মুচকি হাসল। সুরেলা কন্ঠেই জবাব দিল,
“এমন কথা মুটেও বলবেন না বাবা। আমি আমার আব্বু কে খুব ভালোবাসি। আপনার ঘর আলো করতে যখন এখানে আসব তখন আপনাকে না পেলে কি করে হবে বাবা? আমি আবার বাবা নামক ছায়া ছাড়া শান্তি পাই না।”
ছলছল নয়নে ফাতেমা বেগম মুচকি হাসলেন। সেই সাথে মায়রার শ্বশুর শাশুড়িও হেসে উঠলেন। শায়লা বেগম হাক ছেড়ে ডাকলেন শিফুকে। মেয়েটা বুঝি ডাকের সাথেসাথে বিরক্ত মুখশ্রী তে এগিয়ে এলো। থমথমে মুখে মাকে শুধালো,
“কিছু দরকার আম্মু?”
“হ্যাঁ মা তুই একটু তোর বাবার পাশে বোস। আমি একটু ড্রয়িংরুমে যাই।”
শিফু ঘাড় বাঁকিয়ে একবার দরজার দিকে তাকাল। এমনিতে বাসায় একটা বাঁদর এসেই তার ঘাড়ে বসার চেষ্টা করছে। এর চেয়ে বাবার এখানে চুপচাপ ফেসবুকে ঘুরাই ভালো। কি এক শান্তি। ঘরের বসেই সারা দেশ ঘুরা যায়।
ফাতেমা বেগম আগে আগে ড্রয়িংরুমে চলে গেলে শায়লা বেগম পিছন থেকে মায়রার হাত ধরলেন। আচমকা হাত টানায় কিছুটা ভড়কে গেল মায়রা। চকিতে বিস্ময় নিয়ে তাকাল সে নিজের শাশুড়ির দিকে। হঠাৎ উনার মুখটা আরো বিবশ হতে দেখা গেল। তিনি শঙ্কিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
“মায়রা আম্মা তোমার আর ইহামের মাঝে কিছু কি হয়েছে?”
ধক করে উঠল মায়রার বুকটা। আশ্চর্য উনি হঠাৎ করে এসব কেন জিজ্ঞেস করছেন? কিছু কি জানেন উনি? কিন্তু কিভাবেই বা জানবে? তাদের মধ্যকার বিপরীত সম্পর্কের কথা তো কেবল সে আর ওই পাষাণ মানুষটাই জানে। তবে কি ওই বদ ক্যাপ্টেন টাই কিছু বলেছে? ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল মায়রা। কি জবাব দিবে চিন্তায় মেয়েটার মুখ ম্লান হয়ে আসতে চাইছে। সে তবুও নিজেকে ধীরো করে এক টুকরো হাসার চেষ্টা করল। কম্পিত কন্ঠে আমতাআমতা করে জানতে চাইল,
“কেন মা? এসব কেন জিজ্ঞেস করছেন?”
“কি জানি ছেলেটার কি হলো। যাবার আগে কি কি যে বলে গেল কিছুই মাথায় ঢুকল না। তবে তার কথার মানে স্পষ্ট বুঝা গিয়েছে সে তোমার উপর রেগে। কিছু ঝামেলা হয়েছে কিনা তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম।”
অকস্মাৎ রাতে দাঁত কটমট করে উঠল মায়রার। চিবুক শক্ত হয়ে এলো তার। ইহামের উপর ভীষণ রেগে স্ফীত অবস্থা। তবুও শাশুড়িকে অভয় দেখিয়ে বুদ্ধিমত্তার সাথে জানাল,
“তেমন কিছু না মা। আপনি চিন্তা করবেন না। সব ঠিক আছে আমাদের মাঝে।”
আনমনে শায়লা বেগম বিড়বিড় করে বললেন,
“ঠিক থাকলেই ভালো আম্মা। ছেলেকে এত বছর পর বিয়ে করিয়েছি যাতে ছেলে সুখে থাকে, শান্তিতে থাকে।”
শায়লা বেগম আগে আগে চলে গেলে রাগে কিড়মিড় করতে থাকে মায়রা নীরবে নিভৃতে। ওই মানুষটার সাথে অবশ্যই দফারফায় আসতেই হবে তাকে।
“আপনার ছেলের শান্তি কোথায় আছে দেখি আমি।”
বাবার রুম থেকে ফোন স্কল করতে করতে আসার পথে একদম অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে অতর্কিত কেউ যেন হামলে পড়েছে শিফুর উপর। আকস্মিক ঘটনাটায় ঠিক কি হলো সে নিজেও যে বুঝতে পারছে না। কিংকর্তব্যবিমূঢ় মস্তিষ্ক টা ফাঁকা প্রায়। বিস্ময় বিমূঢ় হয়ে সামনে তাকাতেই দেখতে পেল তুহিন দুষ্টু হাসিতে ঠিক তার মুখের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে। হতবিহ্বলের কপাল কুঁচকে খুব মনোযোগ দিয়ে তাকাল তুহিনের পানে। ফর্শা ক্লিন শেপ করা গালের কমলা আভার ঠোঁট গুলিতে নজর আটকালো তার। তুহিন শিফুর ওমন চাউনি দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসল। অভিভূত হয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো সে তুহিনের ওই মুগ্ধকর হাসির পানে তাকিয়ে রয়েছে। ধীরে ধীরে তার ভ্রম কাটলে মস্তিষ্ক সজাগ হলো। কপালে ঈষৎ ভাঁজ ফেলে সে সবটা অনুমান করার চেষ্টা করল। বাবার ঘরে থেকে আসার পথে আচমকা এই বজ্জাৎ টা কি তার হাত চেঁপে এই রুমে নিয়ে আসেনি? বিষয়টা সবটা আন্দাজে এনে ফুঁসে উঠল মেয়েটা। নিজের দিক ঝুঁকে থাকা তুহিন কে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করেও সে পারল না। অগত্যা দেয়ালের সাথে আরো সেঁটে রইল সে। ভেতরের সদ্য জন্মানো আকুলিবিকুলি অনুভূতি গুলি তাকে বেসামাল করে দিচ্ছে। ছোট্ট হৃদয়টা দ্বন্দ্ব নিয়ে সেটা সামলে আগুন ঝরা চোখ মুখে তাকাল তুহিনের পানে। দাঁত কামড়ে বলল,
“এসব কোন ধরনের অসভ্যতা?”
তুহিন মৃদু হাসল। দারুন মন মাতানো কন্ঠে জবাব দিল,
“কালনাগিনী কে বন্দি করতে সাপুড়ের একটুখানি কৌশল।”
ওই ভীষণ গভীর কথার মানে টা শিফু বুঝল কিনা জানা নেই তার। তবে মেয়েটার ভেতরে এই কথা আন্দোলনে নেমেছে। ষোড়শী মেয়েটার পিছলে যাওয়া হৃদয় প্রথম দেখাতেই তুহিন কে বড্ড মনে ধরেছে। আর এই মুহূর্তে এমন ধরনের কথা সত্যি তার শ্বাস ঘন করে তুলছে। এত অদ্ভুত অনুভূতিতে তার ভেতর কেন ফেঁপে উঠছে? শুকনো ঢোক গিলে চেহারায় রাগ প্রকাশ করার চেষ্টা করে বলল সে,
“অসভ্য বাঁদর একটা। এখনি সরুন। এতই সাপুড়ে হবার ইচ্ছা থাকলে সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে বেলচার সী (Belcher Sea) ধরুন গিয়ে। যার এক ফোঁটা বিষ এক হাজার জনের মৃত্যুর দিতে পারবে।”
তুহিন শিফুর ধাক্কাতে একটুও সরল না। নিয়মিত জীমে যাওয়া ছেলেটার শরীর হেলাফেলা করে ফেলে দেওয়ার মতো একদমই নয়। সে সেখানে অটল দাঁড়িয়ে থেকেই দেয়ালে ঠেকানো হাতটা আরো দৃঢ় করে। আরেকটু এগিয়ে গেল শিফুর কোমল মুখের দিকে। মেয়েটা যেন অস্বস্তিতে কুঁচকে নিয়েছে মুখ। ফিসফিস করে সে বলল,
“সাপ নিয়ে বুঝি তোমার খুব ভালো ধারণা আছে। হবেই তো কালনাগিনী বলে কথা।”
কালনাগিনী শব্দটা শুনতেই শিফু তেড়ে উঠল। দাঁত কটমট করে তুহিনের পায়ে পারা দিয়ে উঠল সে। আচমকা ব্যথায় মনে হয় তুহিন দেয়ালে ঠেকানো হাতটা ঢিলে করতেই শিফু হাতের ফাঁক দিয়ে খানিক দূরে সরে গেল। দ্রুত দরজার কাছে গিয়ে থেমেই আবার পিছু ঘুরল। তেজ নিয়ে বিড়বিড় করে জানাল,
“শুধু যে কালনাগিনী বলেন একদিন দেখবেন সত্যি কামড়ে দিয়েছি। অসভ্য বাঁদর একটা।”
তুহিন মুচকি হাসল। চমৎকার হাসি মুখেই বলল,
“এই কালনাগিনীর বিষে আমি আক্রান্ত হতে রাজি আছি। তোমার সমস্ত বিষটুক আমি স্বেচ্ছায় আস্বাদন করতে রাজি কালনাগিনী।”
রাগে গজগজ করতে করতে মায়রা বাসার কোনো একটা রুমের দরজা খুলে ঢুকে এলো। কোথায় এসেছে কার রুমে এসেছে সেদিকে বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা নেই তার। ফাঁকা রুমটায় এসে ফোঁসফোঁস করে দম নিল সে। তার ভেতরে টগবগ করছে ক্যাপ্টেন ফাহাদ ইহাম চৌধুরীর জন্যে জমানো জেদ। ফোনের লকটা খুলে আগে হোয়াটসএ্যাপে ঢুকল। ইহামের নাম্বারটা “পাষাণ ক্যাপ্টেন” দিয়ে সেভ করা। হন্তদন্ত হয়ে সেটায় ভিডিও কল দিল। একবার রিং হয়ে কেটে গেলেও ওপাশ থেকে রিসিভ হলো না তা। ক্রোধে হিসপিস করতে করতে আবারও কল দিল। একবার দুবার রিং পারার পর কল রিসিভ হলে স্কিনে ভেসে উঠল কঠিন আদলে ভরপুর একটা গম্ভীর মুখাবয়ব। মায়রা একপল সেদিকে তাকিয়েই নিজের বেসামাল ক্রোধ উগলে দিল,
“এই যে অসভ্য বদ ক্যাপ্টেন। কি মনে করেন কি আপনি নিজেকে? নিজেকে কি মহান ভাবেন? কোন দেশের রাজা বাদশা আপনি? যে সবাই কে আপনি গোলাম ভাববেন? কারো কোনো দাম নেই আপনার কাছে? এক বিন্দু কি দাম দেন আমাকে? মানুষ ভাবেন আমাকে? এতই যখন আমাকে আপনার ভালো লাগে না। অপছন্দ করেন তবে বিয়েটা কেন করতে গেলেন? বিয়ের আগে দেখেন নি? তখন না করতেন। বিয়ে হবার পর এমন করার কি কারণ?”
ইহাম শান্ত ভঙ্গিতে স্থির বসে রইল কেবল। মায়রার এত এত কথা তার কানে ঢুকল কি না তা তার মুখ দেখে এক অণুও বুঝার জো নেই। বরঞ্চ কপাল কুঁচকে সে যেন খুঁটিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণে আবিষ্ট। মায়রা সেদিকটা খেয়াল না করে গলা উঁচিয়ে আরো কিছু বলবে তার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে গম্ভীর মুখের মানুষটা সরু ধারালো কন্ঠে শুধালো,
“এই মেয়ে তুমি আমার রুমে কি করছো?”
মায়রা স্তম্ভিত হলো। নীরবে কপাল কুঁচকে সেও তাকাল ইহামের দিকে। মানুষটা ফোনের স্কিনে তীক্ষ্ণ নজরে চোখ বুলাচ্ছে। বিস্ময়ে সে একবার ইহামের দিকে তাকিয়ে আবার ঘাড় বাঁকিয়ে আশপাশ টা দেখল। সুন্দর পরিপাটি ভাবে গুছানো এই ঘরটা কি ওই গম্ভীর মানুষটার? আর কোনো ঘর পেল না সে? ঘুরেফিরে এই বজ্জাৎ মানুষটার ঘরেই আসতে হলো তার? পরক্ষণে তার অনুরাগী মন আওড়ালো তাতে কি হয়েছে? ঘরটা কি লোকটার একার নাকি? এক সময় তো এটা তারও ঘর হবে। মুখ বাঁকিয়ে মায়রা তাকাল ইহামের দিকে।
“কি হলো? আমার রুমে কি করো তুমি?”
“তো কি হয়েছে? রুমটা কি আপনার নামে কাওলা করা নাকি? এটা এক সময় আমারও রুম হবে আমিও এর অংশীদার।”
ইহাম বোধহয় একটুক্ষণ চুপ রইল। সরুসরু চোখে তাকিয়েই রইল তার দিকে। নীরবে ওমন শাণিত নজর দেখে মায়রা ভড়কালো খানিক। নিজের কথার গভীরতা বুঝে বিব্রত বোধও করল। যেখানে তাদের মাঝে নৈসর্গিক কোনো সম্পর্কই নেই সেখানে এভাবে এতটা আবলিল অকপটে বলা কথাটা ঠিক যুক্তিসংগত হলো না। ইতস্তত বোধ করে মায়রা ক্ষীণ গলায় বলল,
“আপনি আপনার মা কে কি বলেছেন?”
“আগে বলো তুমি আমার রুমে কি করছো? তুমি কি আমাদের বাসায় গিয়েছো মায়রা?”
“না আমি আপনার রুমটা তুলে আমাদের বাসায় নিয়ে এসেছি।”
মায়রার ত্যাড়ামি কথায় ইহামের মেজাজের খেই হারালো। শান্ত মেজাজটা মুহূর্তে এই অভদ্র মেয়েটা উত্তপ্ত করে দিতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং এ যাবে এখনি তার মাঝে মেজাজ চড়িয়ে অপারেশনের খামতি সে কিছুতেই করতে পারে না। এমনিতেই মজিদ পাহাড়ি ওত পেতে আছে। এই মিশনে এক চুল এদিক ওদিক হওয়া মানে তার নিজের সাথে তার টিমের ১৪ জন সৈনিকের জীবন নাশ। নিজেকে ধাতস্থ করে শান্ত হীম গলায় সে বলল,
“তুমি আমায় কল কেন করেছো মায়রা? তোমাকে না বলেছিলাম আমায় কল দিবে না।”
“দিবো। একশো এক বার কল দিব আপনায়। আমি আপনার স্ত্রী হই। বিয়ে করে সব কিছু থেকে এড়িয়ে যেতে পারেন না আপনি।”
মায়রার কি হলো আজ কে জানে। নিজের সাহসের বেশি কথা হয়তো ইহাম কে বলে দিচ্ছে নির্বিঘ্নে। তবুও দমে যাচ্ছে না একচুল।
“কি বলতে চাইছো তুমি? দেখো মায়রা আমার এখন গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। তোমার বাজে বকবক শুনার মতো সময় আমার একটুও নেই।”
“সময় নেই মানে? সময় কেন থাকবে না আপনার? বউ কে সময় দিতে পারবেন না তো বিয়ে কেন করলেন? সারাজীবন অনূঢ় থাকতেন।”
মেজাজ খানিক টা তিরিক্কি করে ইহাম মৃদু চাঁপা স্বরে জবাব দিল,
“এই মুহূর্তে আমি বিয়ে করতে চাইনি। শুধুমাত্র বাবা মার কথায় রাজি হয়েছি। বিয়ের আগে যদি জানতাম তুমি এতটা অভদ্র বেয়াদব তাহলে কখনোই সেদিকে আমার ছায়া কেও নিতাম না।”
মায়রার অন্তর ব্যথিত হলো সেই কথার আঘাতে। চোখ ছলছল করে উঠলেও নিজেকে দৃঢ় করে নিল। কাঠ গলায় বলল,
“আপনি তো খুব ভদ্র আদবকায়দা জানেন তাহলে নিজের মাকে কি বলেছেন আপনি? স্বামী স্ত্রীর মাঝের কথা কোন ভদ্র মানুষ মাকে জানায় শুনি?”
ইহাম কয়েক সেকেন্ড নীরব রইল। পরক্ষণে রাশভারী গলায় বলল,
“স্বামী স্ত্রী মায়রা? তুমি আমায় সত্যি স্বামী বলে মানো কি? আগে স্বামীর সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হয়, কথা বলতে হয় তা শিখে আসো। তুমি ওবাসায় কেন গিয়েছো তা জিজ্ঞেস করতাম কিন্তু তোমার অভদ্র আচারণ আর এক মিনিটও সহ্য করতে পারব না বলে তাও করলাম না। আমার সময়ের দাম আছে। তোমার মতো বেয়াদবের সাথে ফালতু কথা বলে সময় নষ্ট করার মতো সময় নেই আমার।”
মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৭
গট করে কলটা কাটার শব্দ হলো। মায়রা কিয়ৎ পল নির্বাক বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার স্তম্ভিত ফিরতেই আচমকা জর্জরিত হৃদয় নিয়ে একলা ঘরে ফুঁপিয়ে উঠল মেয়েটা।