ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ৬

ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ৬
অবন্তিকা তৃপ্তি

কুহু ভেবেছে, আলগোছে কাব্য ভাই আসার আগে ছাদে পা টিপে টিপে ঢুকে হেডফোন এনে ফেলবে ওইপাশ থেকে; ওরা হয়তো দেখবেও না। কিন্তু তার আগেই কাব্য নিচে থেকে ছাদের সিড়িতে এসে ডেকে উঠলো;
— কুহু!
কুহু চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকাল। কাব্য দুহাত আড়াআড়ি ভাঁজ করে ওর দিকে সন্দেহের চোখে চেয়ে আছে। কাব্যকে দেখে কুহু ভ্যাবলার মতো হাসার চেষ্টা করলো; আমতা-আমতা করে বরাবরের ন্যায় মিথ্যা কথাটাও ঠিকঠাক বলতে পারলো না;

— কাব্য ভাই; হেডফোন নেই তো ছাদে! আমি খুঁজে এলাম মাত্রই।
কাব্য ওইভাবেই সিঁড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। একবার উকি দিয়ে অন্ধকার ছাদটা দেখে নিয়ে আবার কুহুর দিকে তাকালো। গম্ভীর কণ্ঠে; ভ্রু নাচিয়ে বললো;
— অন্ধকারে ছাদ ঢুকলি কিভাবে?
কুহু সঙ্গেসঙ্গে জিহ্বা কামড়ে ধরলো। আরে. . এই ব্যাপারটা ভুলেই গেছিল ও। কাব্যকে আগ-বাড়িয়ে কিছু বলতে যাবে. . কাব্য শুনলো না। সোজা হয়ে দাড়িয়ে; সোজা কুহুকে পাশ কাটিয়ে হাটা ধরলো ছাদের দিকে। কুহুর আত্মা যেন এতেই ধরাধম বেরিয়ে আসতে চাইলো। কায়াদের কি এখনো চুমু খাওয়া শেষ হয়নি? এই মেয়ে আজ কুহুকে সাথে নিয়ে মরবে! ওদের একসাথে দেখলে কাব্য ভাই আজকে কেয়ামত করে ফেলবেন! এই কায়ারে কে বলেছে, এই মাঝরাতে খোল্লাম-খোল্লাম চুমু খেতে. . বেহায়া কোথাকার!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কাব্য এগুচ্ছিলো! কুহু কায়াকে দুবার ভয়াবহ গালি দিয়ে কাব্যের পিছু পিছু এগুতে এগুতে এক শ্বাসে বলে যায়;
— ছাদে হেডফোন নেই তো। আপনি এক কাজ করুন. আমার হেডফোন নিন আজকের জন্যে। আমার হেডফোন আমি ২ হাজার দিয়ে কিনেছি। অনেক ভালো; সাউন্ড একদম ফকফকা। আর. .
বাকি কথা বলার আগে কাব্য হুট করে পা থামিয়ে পেছন ফিরে। কুহু একদম কাব্যের পিঠের পেছনে ছুঁইছুঁই হয়ে দাড়িয়ে ছিলো। কাব্য এমন আচমকা তাকাতেই; গায়ে গা ছোয়ার আগেই ও থতমত খেয়ে পিছিয়ে গেল। কাব্যের দিকে বড়বড় চোখে তাকাতেই; কাব্য ভ্রু কুচকে বললো;

— কি হয়েছে তোর আজ? অদ্ভুত বিহেইভ করছিস কেন?
কুহু থতমত ভঙ্গিতে তাকালো। ও কি আসলেই অদ্ভুত ব্যবহার করছে? কুহু কি বলবে? বোকার মতো হেসে নড়েচড়ে বলে ফেললো;
— আমি. .আমি কখন অদ্ভুত বিহেইভ করছি? আপনি..আপনার চোখে বোধহয় সমস্যা। আমি তো ফিটফাট বিহেইভ করছিলাম।
কাব্য ভ্রু কুচকে তখনই দেখে কুহুকে। কুহু কাব্যের ওই তাকানো দেখে থামে; মিনমিন করে মাথাটা নামিয়ে স্রেফ বলল;

— স. .সরি!
এইবার কাব্য দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কুহুকে তেমন পাত্তা না দিয়ে আবার পেছন ফিরে ছাদের দিকে এগুতেই; এইবার কুহুর মাথায় কিছু একটা চড়ে। ও আচমকা পায়ের নিচ থেকে একটা ছোট ইটের টুকরো এনে ছুড়ে সিঁড়ির মধ্যে থাকা লাইট ফাটিয়ে দিল।
কাব্য সবেই ছাদের দরজা পেরুতে যাচ্ছিলো; কাচ ভাঙার আওয়াজ ও চমকে পেছন ফিরে তাকালো। কুহু তাড়াহুড়ো ভঙ্গিতে ঠিকতাক হয়ে সিঁড়ির লাইটের দিকে ইচ্ছাকৃত অবাক চোখে তাকিয়ে বললো;
— লাইট ফেটে গেল. . কাব্য ভাই!
কুহু চোখেমুখে ব্যথা; অবাক ভাব ফুটিয়ে কাব্যকে দেখাচ্ছে। কাব্য অবাক; ও তরতর করে কয়েক সিঁড়ি নেমে উকি দিয়ে তিনতলার সিঁড়ির লাইটের দিকে তাকাল। তিনতলার লাইটটা ভাঙা; যেটা একটু আগেই কাব্য লাগিয়ে দিয়েছে— কুহুর ফোবিয়া আছে বলে।
কাব্য অবাক; কুহুর দিকে সন্দেহ নিয়ে তাকালো তক্ষুণি;

— লাইটটা ফাটালো কে?
কুহু ঢোক গিলে দেখে লাইটটা। পরপর চুড়ান্ত আত্মবিশ্বাস বুকে চেপে;নিজেকে চোরের মায়ের বড় গলা সাজিয়ে বললো;
— আমি কি জানি? আমাকে ক্যান জিজ্ঞেস করছেন?আমিও তো মাত্র দেখলাম।
কাব্য সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে; তিনতলার সিঁড়ির জানালার দিকে মুখ বাড়িয়ে তাকালো। বাইরে থেকে কেউ কি কিছু ছুড়েছে? আজ এদের একটাকে ধরতে পেলে কাব্য মেরে পিঠের ছাল তুলে দিবে? কদিন ধরে অঞ্জ গলির কিছু পোলাপান এইখানে ক্রিকেট খেলতে আসে। মাঝরাতেও এরা ঘুড়ি উড়ায়, ফাঁকা গলির রাস্তায় ক্রিকেট খেলে। এদের কেউ হলে. .কাব্য ধরে ধরে একেকটারে পেটাবে।
কাব্য রেগে রেগে খুজে যাচ্ছে কাউকে যদি পাওয়া যায়। এইবার জানালা দিয়ে দেখতে দেখতে কাব্য সেভাবেই কবিরকে কল লাগালো। ওপাশে কবির কল ধরতেই কাব্য জানালার এদিক-ওদিক দেখতে দেখতে রাগী গলায় বললো;

— কবির, কেচি গেইট খোলা নাকি?
ঘুমন্ত কবির কাব্যের এই কথা শুনে ধড়ফড়িয়ে এবার উঠে দাড়িয়ে গেল;
— আমি তো লাগাইসিলাম ভাই।
কাব্য ভীষণ অতিষ্ট গলায় বললো এইবার;
— দেখ তো বাইরে পোলাপান আছে কি না। তিনতলার সিঁড়ির লাইট ফাটিয়ে দিয়েছে কেউ।
— কি কন? একটু আগে না আপনার ট্যাকা দিয়ে লাগায় আইলাম আমি?
— গিয়ে দেখ! যদি কাউকে পাস, আমারে জাস্ট ধরে আনবি আমার সামনে। বাকিটা আমি দেখছি।
কুহু অন্যসময় হলে. .কাব্যের এমন হম্বিতম্বি, শাসানোর আকর্ষণীয় ধরন দেখে ফিদা হয়ে যেত। কিন্তু এখন তেমন কিছুই ওর মধ্যে দেখা গেল না। বরং কাব্যের এত রাগ দেখে ও ভয়েই নীল হয়ে যাচ্ছে।
কবির দেখে এলো; রাস্তায় কিছু ছেলে আসলেই এই খেলছিল। কবির বললো;

— ভাই আছে কয়টা।
— ধর ওদের, আমি আসছি নিচে।
কবির ধরতে যেতেই; ছেলেগুলো তার আগেই দৌড়ে পালিয়ে গেলো। কবির ধাওয়া করল ওদের কিছুপথ; কিন্তু শেষপর্যন্ত ধরতে পারলোই না। কবির আফসোস নিয়ে কানের কাছে ফোন ধরে বলল;
— কাব্য ভা. .
কাব্য কথা থামিয়ে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল;
— ধরতে পারিস নি?
কবির আফসোস নিয়ে বললো;
— হ; ভাইগ্গা গেলো গা সব।
কাব্য চোখ বুজে বিড়বিড় করে গালি দিয়ে কল কেটে দিল!

লাইট ভাঙার আওয়াজ স্নিগ্ধ-কায়ার কানেও গেছে। স্নিগ্ধ তখন চুমুপর্ব শেষে কায়াকে নিজের বুকে জড়িয়ে রেলিংয়ের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। কায়া লজ্জা পাচ্ছিলো; স্নিগ্ধও মজা লুটছিল কায়ার লজ্জার। কায়া তাই শেষঅব্দি লজ্জা ঢাকতে স্নিগ্ধের বুকে মুখ লুকিয়ে থেমেছে।
কিন্তু হঠাৎ কাব্যের ধমকা-ধমকি শোনে ওদের তো রূহ উড়ে যাবার জোগাড়। দুজন ছিটকে সরে দাঁড়িয়েছে একে ওপরের থেকে। কায়া এক মুহূর্তে না দাড়িয়ে স্নিগ্ধকে বললো;
—সর্বনাশ! কাব্য ভাই! আমি আগে যাচ্ছি। তুমি পরে আসবে!
বলে কায়া দৌড়ে বেরিয়ে গেল ছাদ থেকে। নিচে নেমে দেখে কাব্য ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে লাইট চেক করছে; পাশেই কুহু দাঁড়ানো। কুহু কায়াকে দেখেই দাতে-দাঁত পিষে কিছু বললো। কায়া ইশারায় বলা কথা ওসব বুঝল না; ও ভয়ার্ত চোখে কাব্যকে দেখছে।

কাব্য ভাঙা লাইট দেখতে দেখতে বিড়বিড় করে বললো:
— ‘দুশো টাকা জলে গেল। কাল আবার আনানো লাগবে লাইট আরেকটা।
বলে ফ্ল্যাশ সরিয়ে, এবার ফ্লাশলাইট সরাসরি কায়ার দিকে ধরে কায়াকে দেখে ভ্রু কুচকে বললো;
— তুই কই থেকে আসলি এখন?
কায়া ফরফর করে বললো;
— ন. .নিচ থেকে এলাম কাব্য ভাইয়া।
কাব্য বিশ্বাস করলো কি না কে জানে? পরপর ছাদ থেকে স্নিগ্ধকে নামতে দেখে কাব্য ওর দিকে ইনার ফ্লাশ তাক করে দেখে। স্নিগ্ধ আরাম করে দুহাত পকেটে ঢুকিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে কাব্যের সামনে এসে থেমেছে। কাব্য ভ্রু নাচিয়ে বললো;

— আর আপনি? আপনি কই থেকে আসছেন? নিচ থেকে?
কায়া জিহ্বা কামড়ে ধরলো! কাব্য ভাই বুঝেছেন কিছু হলেও! এই স্নিগ্ধ একটু পর নিচে আসতে পারেনি? এক্ষুনি কাব্য ভাই ফ্ল্যাট চলে যেতেন। কাব্যের প্রশ্নে স্নিগ্ধ ভ্যাবলার মতো হেসে বললো;
— আমি? আমি তো ছাদে ছিলাম; বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম কলে।
কাব্য কায়ার দিকে একবার চেয়ে; স্নিগ্ধের দিকে আরও একবার তাকালো। কি বুঝলো কে জানে; গম্ভীর গলায় বললো,

— রুমে যাও সবকটা। নেক্সট টাইম রাতে এভাবে বাইরে থাকলে ঠ্যাং ভেঙ্গে রেখে দিব সবটার। গো; এন্ড স্লিপ!
কাব্যের ধমক শোনে কুহু-কায়া-স্নিগ্ধ তরতর করে নিচে নেমে গেল। কাব্য ফোনের ফ্লাশ অন করে আরেকবার লাইট ভাঙার কারণ উদঘাটন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হতেই; নিচে দেখল একটা ইটের টুকরো! কাব্য ভ্রু কুচকে ইটের টুকরা হাতে তুলল। পরমুহূর্তে সেটা দেখে মনে পড়ল— ছাদের মধ্যে নতুন টিনের একটা ছোট ঘর বানানোর জন্যে যে ইট আনানো হয়েছিল; এই ইটের টুকরো ওই ঘরের ইটেরই! তার মানে; ইটটা বাইরে থেকে নয়. .ভেতর থেকেই ছুড়েছে— ইচ্ছে করেই লাইটটা ভেঙ্গেছে! কে ? কুহু? কেন করবে এমন? ও যা ভাবছে. .তার জন্যে?

আজ কুহুর ফিজিক্স এক্সাম। শুধুমাত্র কাব্যের সেদিনের ধমক-গুশিয়ারির জন্যেই এই এক্সামে আবার বসতে হয়েছে কুহুকে। কত কষ্ট করে সারারাত জেগে নকল বানিয়েছিল। কি হাতটাই না ব্যথা করেছিলো কুহুর সেদিন! এত কষ্ট করে শেষ অব্দি লাভটা কি হলো? কাব্য ভাই ওকে আবার ধরেবেধে এক্সাম দেওয়াচ্ছেন।
কুহু আজ; এই মুহূর্তে কলমের টিপ্ চিবুতে চিবুতে একটা মহা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলো- বিয়ের পর কাব্য ভাইকে কুহু টানা ছয় মাস ওকে টাচ করতে দেবে না। ক্ষুধার্ত কাব্য ভাই বারবার হাতজোড় করলেও; কুহু গম্ভীর স্বরে সে যেভাবে সবসময় ধমকায় কুহুকে; ওইভাবে বলবে;

— স্যাটআপ কাব্য ভাই। বিয়ের আগে আমাকে ধমকে-ধামকে রাখার সময় এসব কথা মনে ছিলো না? কুহু এখন রিভেঞ্জ নিচ্ছে; কনসেন্ট্রেট করতে দিন আমাকে।
কুহু মনেমনে নিজের ওই গম্ভীর রূপের কথা ভেবেই ফিক কই হেসে ফেলল। কুহুর হাসি দেখে ম্যাডাম ওর দিকে বাকা চোখে তাকাতেই; কুহু হাসি থামিয়ে আবার খাতায় লেখায় মন দিল।
অলস ভঙ্গিতে কুহু খাতায় কলম চলিয়ে; কোনরকম খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে এলো।তারপর শার্লিনকে নিয়ে পা চালাল কাব্য ভাইয়ের ভার্সিটির দিকে। কাব্য চাই আজ ব্যাডমিন্টন খেলবেন ভার্সিটির মাঠে। তাই কুহু নিজের সাথে শার্লিনকেও টেনে এনেছে কাব্য ভাইয়ের খেলা দেখবে বলে।
ভার্সিটির সামনে আসতেই; কুহু তখন শুনতে পেলো;ওপাশ থেকে কেউ ডাকলো;

— এই কাব্য; ব্যাডটা এইদিকে পাস কর।
কাব্যের নাম শোনেছে; আর কুহু তাকাবে না? এও হয় নাকি? কুহু আশপাশ খুঁজে কাব্যকে দেখেই দাড়িয়ে গেলো। কাব্য ওইদিকে; ব্যাড ছুড়ে ফেলেছে একজনের দিকে. . অপরজন ব্যাড ক্যাচ করে নিয়েছে. . কাব্য রোদের মধ্যে ঘামে ভিজে কপাল কুচকে তাকে কিছু বলছে. . শোনা যাচ্ছে না ওর কথা দূর থেকে।
কুহুর তারপর. . কাব্য ভাইকে দেখে বুকের ভেতর যেন কেউ খামছে ধরল।ঘামে ভেজা কাব্য মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলছে; পাশেই কোচ একজন ওকে গাইড দিচ্ছেন। কাব্যে পরনে একটা ব্লু জার্সি; আর হাঁটু অব্দি ট্রাউজার! আবারও পায়ের ঘন লোম দেখা গেল ওর; কুহু সেদিকে বেহায়ার ন্যায় চেয়েই রইল।

আচ্ছা— কাব্য ভাই কি কখনো জানবেন; তার এই লোমগুলোর প্রতি কুহুর কত জনমের লোভ? কুহু যেদিন বউ হবে কাব্য ভাইয়ের; কুহু সব বলবে। এও বলবে— কাব্য ভাইয়ের মধ্যে কি কি দিক দেখে কুহু এতদিন. . এতটা বছর ক্রাশ খেয়ে এসেছে।
বাসর রাতে কুহু কাব্য ভাইয়ের কোলে মাথা রাখবে। কাব্য ভাই ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কুহুর সকল জমানো কথা মনোযোগী শ্রোতার ন্যায় শুনবেন। কুহু যেসব কথা বলবে;
এই যেমন;

১- কাব্য ভাইর ডেনিম জ্যাকেট পরার ধরন দেখে কুহু কিভাবে ক্রাশ খেয়েছিল।
২- কাব্য ভাই যখন একহাতে মানিব্যাগ; অপরহাতে ফোন পকেটে ঢোকান; সেই মুহুর্তটা কুহুর কাছে কতটা মারাত্মক দেখায়।
৩- তার পায়ের লোম; হাটু অব্দি ট্রাউজার পরলে সেই লোম কতটা আকর্ষণীয় দেখায়।
সেই সাথে একটা লজ্জার কথাও বলবে. .বাসর রাতে কুহু কাব্য ভাইকে শার্ট-শেরওয়ানি থাকলে সেটা খুলে খালি গায়ে থাকতে বলবে। কুহু কাব্য ভাইয়ের বুকের লোম হাত দিয়ে ছুয়ে ছুয়ে দেখতে চাইবে সেদিন। বাকিটা এখন ভাবতে পারছে না ও. .ভীষণ লজ্জা লাগছে!
৪- এরপর কাব্য ভাইয়ের গায়ের পারফিউম; ওগুলো কোন দেশ থেকে ইমপোর্ট করে আনেন কুহু সেই দেশের নাম জানতে চাইবে।

৫- কাব্য ভাইয়ের চুলের হেয়ার কাটিং; ঘন ঝাকরা; হালকা বাদামি রঙের চুল; রোদের আলোয় এই যে এখন লাল লাল দেখাচ্ছে— এই চুল মারাত্মক লাগে কুহুর কাছে।
৬…আজ; এটুকুই বলবে বাসর রাতে। বাকি কথা ওদের দুজনের চড়ুইপাখির সংসারে ধীরে ধীরে বলবে. .একটু একটু করে জমানো কথা জানাবে শখের পুরুষকে!
তারপর নিজেও জানতে চাইবে. কুহুর কি কি দিক কাব্য ভাইয়ের ভালো লাগে? কি জবাব দিবেন উনি? কুহুর মধ্যে কি আদৌ কিছু ভালো লাগার ব্যাপার আছে? নেই তো! কিন্তু কুহু জানে. .তার মধ্যে ভালোলাগার সব ব্যাপার আছে; মারাত্মক একেকটা ব্যাপার।
কুহু যখন কাব্যের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো; তখন শার্লিন কিছু বলতে চাইছিল! কুহু ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো ;

— চুপ; কাব্য ভাই খেলছেন। কনসেনট্রেট করতে দে।
শার্লিনকে তখন মহা হতাশ হতে দেখা গেল! কি করবে আর. .বন্ধু আধা পাগল; তাই সহ‍্য করে চুপ করে পাশে দাড়িয়ে খেলা দেখতে লাগলো। কাব্য ভালো খেলছে; পরিশ্রম করছে ভীষণ। তারপর পাঁচ পয়েন্টস পেয়ে কাব্য জিতে যেতেই ওর বন্ধুরা দৌড়ে এসে কাব্যকে জড়িয়ে ধরে ওর উপর ঝাপিয়ে পড়ল। সবাই মাটিতেই শুইয়ে দিল কাব্যকে! কাব্যও চুপচাপ ওদের জ্বালাতন সহ‍্য করছে. .ওদেরকে লাই দিচ্ছে। তামিম পাশ থেকে বললো;
— শালা ট্রিট দিবি আজ। সিলেক্টেড তুই ব্যাডা!
কাব্য ওদেরকে ঠেলছে নিজের উপর থেকে; বললো;
— দিব। গায়ের উপর থেকে নাম আগে ভাই। ভর্তা করে দিচ্ছিস।

ওরা আরও কিছুক্ষণ কাব্যকে জ্বলিয়ে সরে বসল। কাব্যও উঠে মাঠে বসলো হাটুগেরে; হাপিয়ে উঠে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে ফেলতে হঠাৎ মাথাটা হাঁটুর মধ্যে ডুবিয়ে হেসে ফেলল! ওর বন্ধুরাও পাশে বসে হাসছে কাব্যের জয়ে। কাব্য এইবার নিজেই ঠোঁট ভর্তি হেসে দুহাতে বন্ধুদের জড়িয়ে ধরলো! তামিম; সোহাগ কাব্যকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে করে উল্লাস করছে। আজ গম্ভীর কোচও হাসছে ওদের জয়ের উল্লাস দেখে।
কুহুর ভালো লাগছে ভীষণ. .কাব্যের খুশিতে ও নিজেই কাঁপছে। শার্লিনের হাতটা শক্ত করে ধরে মুগ্ধ চোখে কাব্যের উল্লাস দেখছে! ওর ইচ্ছে হলো— জয়ী কাব্য ভাইকে নিজেও অভিনন্দন জানাবে; কিন্তু জানানো গেল না. . লজ্জায়!
কাব্য এইবার; গা থেকে বালি ঝেড়ে-ঝেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হঠাৎই দূরে দেখতে পেল কুহু দাড়িয়ে আছে;: ওর দিকেই চেয়ে রয়েছে। কাব্য দুহাতে বালু ঝাড়তে ঝাড়তে ওকেই দেখল দূর থেকে। বন্ধুরা যে যার মতো চলে যেতেই একসময় কাব্য আঙ্গুলের ইশারায় ডাকলো কুহুকে নিজের কাছে।
কুহু মৃদু হেসে এগিয়ে গেল! কাব্যের সামনে দাড়িয়ে যেতেই কাব্য গম্ভীর কণ্ঠে শুরুতেই সাতপাচ না বলে; জিজ্ঞেস করলো;

— এক্সাম ভালো হয়েছে?
এইবার কুহুর মনটাই ভেঙ্গে গেল। কাব্য ভাইয়ের সঙ্গে এই এক্সাম নিয়ে কথা বলতে ওর একটুও ভালো লাগে না; সবসময় বিচ্ছিরি লাগে।কাব্য ভাইয়ের মুখে এই পড়াশোনা ছাড়া আর কোনো কথা কেন থাকে না? ওর সঙ্গে কি তার শুধুই এসবের সম্পর্ক? ভদ্র কুহু তবুও নিজের বিরক্তি চেপে বলল;
— হু; সব কমন পড়েছে।’
— নকল করিস নি?
কাব্যর ঠোঁটে চাপা হাসি! কুহু বুঝে না সেই হাসি! ও মুখটা বাংলার পাঁচের ন্যায় করে মিনমিন করে বললো;
— নাহ!
—- গুড!
কাব্য সন্তুষ্টি নিয়ে মাথা দুলিয়ে তখনো গা থেকে বালি ঝাড়ছে; তো আরেকবার চোখ-মুখ কুচকে মুখের ঘাম পুরুষালি হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে মুছছে।
সেভাবেই ঘাম মুছতে মুছতে কুহুর দিকে চেয়ে বললো;

— আমার স্পোর্টস ব্যাগটা নিয়ে আয়; ওইপাশে রাখা আছে।
কুহু শোনল ও কথা; দৌড়ে ব্যাগ আনতে গেল। ব্যাগ হাতেই ওপাশ ফিরতেই দেখে কাব্যের হাতে পানির বোতল! সামনে ঊর্মি আপু; পুরো নাম ঊর্মি শিকদার। কাব্য পানি খেয়ে খেয়ে কথা বলছে ঊর্মির সাথে; কথা বলতে বলতেই বোতলে বাকি যা পানি ছিলো সেটুকু মাথায় ঢেলে দিয়ে ভিজতে লাগল। প্রচব্দ গরম লাগছিল; সম্ভবত সেজন্যে।
কাব্যের মুখ-চোখ বেয়ে তরল পানি গড়িয়ে পড়ছে বুকের উপর। ওর ব্লু জার্সি ভিজে যাচ্ছে; ঊর্মি আপু মুগ্ধ চোখে কাব্যকে দেখছে। কুহু ভ্রু কুচকে ওদের দেখতে দেখতে ব্যাগ হাতে এগুচ্ছে কাব্যের দিকে। কাব্য কুহুকে দেখে খালি বোতল ছুড়ে ফেলে ওর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে শুকনো কাপড় বের করছে। ঊর্মি তখন কুহুর সঙ্গে কথা বললো;

— হ্যালো. . কুহু! ভালো আছো বাচ্চা?
ঊর্মি আপু ওভাবে হেসে হেসে কথা বললেন দেখে কুহু জোর করে মনের ওসব জেলাসি চিন্তা দূরদূর করে তাড়িয়ে দিয়ে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে বললো;
— ভালো আছি আপু। তুমি?
ঊর্মি একবার কাব্যকে দেখল। ঊর্মি আপুর চোখ দেখে কুহুও ভ্রু কুচকে কাব্য ভাইকে দেখলো। কাব্য তখন শুধু সেন্ডো গেঞ্জি পড়া; তার উপরে টিশার্ট গলা দিয়ে নামাচ্ছে।
কুহুর জবাবে ঊর্মি কুহুর দিকে চেয়ে বললো;
— এইতো ভালো। এক্সাম কেমন হলো তোমার?
কুহু এইবার লজ্জা পেয়ে গেল. .তার নকল করার কথা ঊর্মি আপু অব্দি চলে গেছে? মিনমিন করে কুহু জবাব দিল;
— ভালো হয়েছে আপু।
কুহু কথাটা বলে কাব্যের দিকে অভিমান নিয়ে তাকালো! কাব্য ভাই কেন বললেন ঊর্মি আপুকে কুহুর নকল করার কথা? কুহু কষ্ট পেল!
কাব্য টিশার্ট বদলে স্পোর্ট ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়েছে। স্বাভাবিক কণ্ঠে কুহুর দিকে চেয়ে বললো;

— যাবি বাসায়?
কুহু জবাবে বললো;
— আমার প্রাকটিকাল ক্লাস আছে!
কাব্য ঘড়ি দেখল এইবার; সময়টা দেখে নিয়ে কুহুর দিকে ফিরে বললো;
— আমার টিউশন আছে; যাওয়ার সময় কল দিবি; পিক করে নেব।
কুহু মাথা নাড়ালো! তার এটুকু যত্নেই কুহুর মনে ফুল ফুটতে লাগলো হাজারটা; প্রজাপতি উড়তে লাগলো তলপেটে। কাব্য চলে যাবার প্রস্তুতি নিতেই; আগ বাড়িয়ে এইবার ঊর্মি বলল;

— আমারও ক্লাস আছে। বাই কুহু; বাই কাব্য!
বলে ঊর্মি উল্টো দিকে ফিরে হাটা ধরলো! কুহু এখনো সেভাবেই জেলাসি চোখে-মুখে ফুটিয়ে ঊর্মির চলে যাওয়া দেখছিল। কোকে ওইভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কাব্য শীতল গলায় বলল;
— এখনো দাড়িয়ে কেন? যা ক্লাসে!
কুহু চুপচাপ হাটা ধরলো কলেজের দিকে। শার্লিন আসলো কুহুর দিকে। কুহু ঠোঁট উল্টে ওর দিকে তাকালো! শার্লিন কুহুর তাকানো দেখে কিছু বুঝলো হয়তো; বললো;

— এই ঊর্মি আপুকে আমার সুবিধার মনে হচ্ছে না। তুই যেতেই কাব্য ভাইকে পানি দিল; কেমন হাসছিল ওরা। আমার ওদের স্বভাব ভালো লাগছে না; বলে দিলাম কুহু।
কুহু হাসার চেষ্টা করে বললো;
— ঊর্মি আপু কাব্য ভাইয়ের ফ্রেন্ড; ব্যাচমেট ওরা। হয়তো ওইজন্যে হাসছিল।
শার্লিন তবুও ভাবুক স্বরে বললো;
— আমার তেমন মনে হচ্ছে না কেন যেন; কুহু। তুই শিউর কাব্য ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড নাই?
কুহু শার্লিনের হাত চেপে হেলেদুলে হাঁটতে হাঁটতে হাসিখুশি গলায় বলল;

ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ৫

— কাব্য ভাইয়ের রিলেশন থাকলে আমিই জানতাম সবার আগে। ঊর্মি আপুর সাথে যদি রিলেশন থেকে থাকে সেটা আজকে রাতেই বের হয়ে যাবে; ওয়েট এন্ড সি বেইবি!
শার্লিন অবাক হয়ে কুহুর দিকে তাকিয়ে রইল! কুহুকে ভীষণ নিশ্চিন্ত দেখাচ্ছিল! কিছু একটা তো এই বাঁদর মেয়ে পাকাচ্ছে মাথায়!

ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ৭