তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৮
তানিশা সুলতানা
মেয়েরা বাবা ভক্ত হয়। বাবার প্রতি তাদের আলাদা একটা টান থাকে। হাজার অপরাধ করলেও মেয়েরা কখনোই তাদের বাবাকে ভুল বুঝতে পারে না বা ঘৃণা করতে পারে না।
আদ্রিতার মা যখন মরে যায় তখন আদ্রিতা কেঁদেছিলো। খুব কেঁদেছিলো। কষ্টও হয়েছিলো খুব। কিন্তু আজকে বাবার অসহায় মুখ খানা দেখে তার থেকেও বেশি কষ্ট হচ্ছে। নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। পৃথিবীর সব কিছুর বিনিময়ে হলেও বাবার হাসিমুখটা দেখতে ইচ্ছে করছে।
আদ্রিতা নিজে চোখে দেখেছে বাবা ঠিক কতেটা ভালোবাসতো ইমাকে। কিভাবে যত্নে আগলে রাখতো।
আজকে সেই ভালোবাসার মানুষটি অন্য কারো হয়ে গেলো ঠিক কতোটা কষ্ট হচ্ছে তার?
বাবা কাঁদছে নিশ্চয়?
আচ্ছা মা মারা যাওয়ার সময় কেঁদেছিলো? কষ্ট হয়েছিলো তার?
হয়ত না। কারণ আদ্রিতাকে তাকে কাঁদতে দেখে নি৷ বরং চোখ মুখ উজ্জ্বল ছিলো।
অপছন্দের মানুষ মারা গেলে কান্না পায় না।
“আদ্রিতা খাবি আয়।
আতিয়া বেগম ডাকছে উচ্চস্বরে। অন্য সময় হলে দৌড়ে চলে যেতো সে। কিন্তু এখন যেতে ইচ্ছে করছে না।
আতিয়া বেগম খাবার টেবিলে সাজানো শেষ করতেই আবরার বাড়িতে ঢোকে। হাতে কয়েকটা শপিং ব্যাগ। আতিয়া বেগম আঁচলে হাত মুছতে মুছতে আবরারের দিকে এগিয়ে যায়।
ছেলের চোখে চোখ রেখে বলে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” আবরার তুই এমনটা কেনো করলি?
আবরার কপাল কুঁচকে বলে
“এমনি
” আমার তার সাথে সম্পর্ক আছে এমনটা ভেবেছিস?
আবরার মায়ের মুখ পানে তাকিয়ে থাকে কিছু মুহুর্ত। অনেকদিন পরে এতোটা মনোযোগ দিয়ে দেখছে সে মাকে।
ইচ্ছে করছে অনেক কথা শুনিয়ে দিতে কিন্তু বিবেগ বাঁধা দিচ্ছে। চিল্লিয়ে বলছে “আবরার মাকে অসম্মান করিস না। সে তোকে জন্ম দিয়েছে”
ফোঁস করে শ্বাস টানে আবরার। মাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয়। আতিয়া পূণরায় বলে
“আদ্রিতাকে নিয়ে কি ভেবেছিস? কি করবি?
আমি কিন্তু ওকে তোর সাথে যেতে দিবো না। এক ফোঁটাও ভরসা করি না তোকে।
” আদ্রিতা না তাব্রিতা চিনি না তাকে।
বলেই চলে যায় আবরার। আতিয়া বেগম কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে ছেলের যাওয়ার পানে। চিনেই না আদ্রিতাকে? এ কেমন কথা? এই ছেলেকে জন্ম দিলেও এখন পর্যন্ত মনোভাব বুঝতে পারলো না। কি বলে কি করে আল্লাহ জানে।
আদ্রিতাও আবরারের বলা কথা খানা শুনতে পায়। দুঃখ হয় না বরং রাগ হয়। চিনেই না তাকে? বাহহহ
ভালোই।
আদ্রিতাও এবার থেকে চিনবে না আবরার না তাবরার। কে এই আবরার তাসনিন?
কোথাকার কোন বাল?
সিয়াম আমান আহাদ বাসর ঘর সাজিয়ে ফেলেছে। টনিকে হাত পা বেঁধে বসিয়ে রেখেছে রুমের এক কোণায়। বাঁধার কারণও আছে। টনি এখানে থাকতে চাচ্ছে না। সে এখনই সুইজারল্যান্ড ফিরে যাবে। কিন্তু বাসর না করিয়ে টনিকে ছাড়া ঠিক হবে? কখনোই না। তাই তো সিয়াম আমান মিলে হাত পা বেঁধে নিয়ে এসেছে আবরারের কেনা ফ্ল্যাট এ। আর দুটো মহিলা এনে ইমাকে তাদের সাথে পাঠিয়েছে পার্লারে। বাসর করবে আর একটু সাজবে না? তা কি করে হয়?
খাটের মাঝখানে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে “টনি+ইমা” লিখা শেষ করতেই আমান গেয়ে ওঠে।
“সোনা বন্ধু তুই আমারে
ভোঁতা দা দে কাইট্টা লা
পিরিতের কাঁথা দিয়ে জাইত্তা
ধইরা মাইরাল্লা
সিয়াম তাল মিলিয়ে বলে
“ইমার কোচি গাছে দুই লাউ ধইরা ছে
এতোদিন যত্নে রেখেছিলো টনি খাবে বলে”
ইভান বলে
“ভাই তোরা ভুলে যাচ্ছিস ওনারা আমাদের মায়ের বয়সী। এমনটা করা ঠিক হচ্ছে না।
সিয়াম হামি তুলে বলে
” বাল আমার বাল কয়
চুপ কর শালা
ইমা আমার আফার বয়সী। আর টনি দুলাভাই এর।
টনি বলে
“তোরা ভালো করছিস না আমার সাথে। এর মাসুল দিতে হবে। ছাড়বো না তোদের।
আমান বলে
” ছাড়িয়েন না। ধরে রাখবেন শক্ত করে। আপনার পাখির চরিত্র ভালা না। আপনি না ধরলে আবার নতুন নাগর খুঁজবে।
এক রাশ মন খারাপ নিয়ে রাস্তার এক কোণা দিয়ে হাঁটছে আদ্রিতা। কোথায় যাচ্ছে জানা নেই তার। তবে এই গোধূলি লগ্নে একা একা হাঁটতে ভালোই লাগছে।
হাঁটতে হাঁটতে কখন যে কোর্টের কাছে চলে এসেছে বুঝতেই পারে নি।
হঠাৎ আদ্রিতার নজর পরে আবরারের পানে। এডভোকেট আব্দুল মান্নান এর চেম্বার থেকে বের হচ্ছে। আব্দুল মান্নান ডিভোর্স এর জন্য উপযুক্ত এডভোকেট। এই পর্যন্ত ১২৩ টা ডিভোর্স করিয়েছে নিজে হাতে।
এই তো বছর খানেক আগে আদ্রিতার বান্ধবী সাইমার ডিভোর্স করিয়ে দিলো।
আবরার তার কাছে কেনো গিয়েছে? তাদের ডিভোর্সের জন্য?
সত্যি সত্যিই আদ্রিতাকে ছেড়ে দিবে সে? সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলবে?
বুকের ভেতরটা অসম্ভব কাঁপতে থাকে আদ্রিতার। চোখের কোণে অশ্রু কণা জমা হয়। এখুনি চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
এভাবে সবটা শেষ হয়ে যাবে? না না এটা হতে পারে না। কিছুতেই না।
হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছতে মুছতে আবরারের দিকে এগিয়ে যায় আদ্রিতা।
সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বলে
“ডিভোর্স দিতে চাচ্ছেন আমায়?
আবরার ভ্রু কুচকায়। চোখে থাকা রোদ চশমা মাথার ওপরে তুলে বিরক্তির স্বরে বলে
“ডিভোর্স বানান করতে পারো?
এটা কি নাউন বলো দেখি।
আদ্রিতা রেগে চিল্লায়ে বলতে যায়
“আমার জীবন নিয়ে ছিন
আবরার তাকে থামিয়ে বলে
“সিনক্রিয়েট করবি না।
চাপকে গাল লাল করে দিবো।
ইডিয়েট
চুপচাপ গাড়িতে বসো
শেষের কথাটা শান্ত স্বরেই বলে। এবং গাড়ির দরজা খুলে বসার ইশারা করে। আদ্রিতা চুপচাপ বসে পড়ে।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। আবরার স্টারিং শক্ত করে চেপে ধরে অপর হাতে একটা সিগারেট মুখে পুরে নেয়। লাইটারের সাহায্যে তাতে আগুন জ্বালিয়ে মনের সুখে টানতে থাকে।
আদ্রিতা মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে আবরারকে। উনি সিগারেট খায়?
কই আগে তো দেখে নি। অবশ্য দেখবেই না কিভাবে? আবরার তাসনিন কি আর সর্বক্ষণ তার সঙ্গে থাকতো? তাকে কি আর সব কথা বলতো? বলতো না।
আবরার তাসনিন সম্পর্কে আদ্রিতা ঠিক ততটাই জানে যতটা আর পাঁচটা মানুষ জানে। কাছের মানুষরা যতটা জানে ততটা জানার অধিকার হয়ত তার নেই। এসব ভাবনার মাঝে একটা কথা মাথায় আসে আদ্রিতার। আচ্ছা “আবরার কি তাকে কখনোই ভালোবাসে নি? কখনোই কি আপন ভাবে নি? সব শেষে কখনোই কি মনে হয় নি আদ্রিতা নামক অসহায় মেয়েটিকে নিজের কাছে রেখে দেই। আমি ছাড়া তার কেউ নেই”
“আমায় কখনো ভালোবেসেছিলেন আবরার?
আদ্রিতার এহেম প্রশ্নে বিরক্ত হয় আবরার তাসনিন। কপাল কুঁচকে ঠোঁটের ভাজে সিগারেটে টান দেয়। নাক মুখ দিয়ে ধোঁয়া ওড়াতে ওড়াতে বলে
” হোয়াট ইজ লাভ?
কিভাবে ভালোবাসতে হয়?
আই থিংক হাজব্যান্ড ওয়াইফ এর রোমাঞ্চ করাকেই ভালোবাসা বলে।
সো তোমায় কতোটা ভালোবাসি বুঝে নাও।
সোজা প্রশ্নের সোজা উত্তর আবরার দিবে না এটা জানতো আদ্রিতা। তবে এতোটা বাঁকা উত্তরও আশা করে নি।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আদ্রিতা।
গাড়ির সিটে মাথা ঠেকিয়ে বলে
“আমাদের ডিভোর্স হওয়াই দরকার। এমন অসুস্থ সম্পর্ক বয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না। ভালোই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আপনি।
আবরার তাসনিন বড়ই মায়া মেশানো সুরে বলে
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৫৭
“পাখি ডিভোর্স ভীষণ বাজে একটা শব্দ।
পরকীয়া ডিভোর্স ধোঁকা এসব পছন্দ নয় আমার।
নেক্সট টাইম কখনো মুখে আনবে না।
ওকেহহ?