ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ৯

ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ৯
অবন্তিকা তৃপ্তি

জানালার ওপাশে মৃদুমন্দ যেমন বাতাস বইছিল; কুহুর ছোটোমোটো মনটায়ও তখন বইছে ঝড়ো প্রেমের বৈরী বাতাস। ঘুমন্ত কাব্যকে চুমু খেয়ে কুহুর নরম-কোমল প্রাণ ওষ্ঠাগতপ্রায়! বুকে হাত চেপে; কোনরকমে এক-দৌড়ে এসে শামিমার রুমের বিছানায় একদম উপুড় হয়ে শুয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে লাগলো।
পা দুটো বিছানার বাইরে ঝুলিয়ে ক্রমাগত অস্থিরভঙ্গিতে নাড়াচ্ছে. . . বুকের কাপুনি থামানো যে একেবারেই সম্ভব হচ্ছিল না। কাব্য..কুহু আজ জীবনের প্রথম কাব্য ভাইকে চুমু খেয়েছে! বিশ্বাস হচ্ছে ওর নিজেরই! কুহুর ঠোঁট কাব্য ভাইকে ছুয়েছে…খোদা!

কুহুর আপাতত মনে হচ্ছে- ধুকপুক করতে করতে ওর হৃদয়টাই বুঝি এই বেরিয়ে এলো। অতিষ্ট; অস্থির কুহু মুখটাই এবার পিষে ধরল বালিশে; অস্ফুটে আর্তনাদ করে থেমে থেমে বলতে চাইলো কিছু———-—-‘চু…চুমু..আমি মাত্র খেলাম! খোদা; আমার হাত-পা এতো কাপছে কেন? আল্লাহ! থাম ভাই তোরা!’
বলে কুহু একহাতে নিজের কাপতে থাকা দুহাত চেপে ধরে বালিশে চেপে রাখলো কিছুসময়। হাতের কাপুনি থামানো গেলেও বুকের কাপুনি যে থামানো যাচ্ছেই না। কুহু এইপর্যায়ে জোরেজোরে শ্বাস ফেলতে শুরু করলো।
কুহুর যখন হরমোনের জ্বালাতনে একেবারেই নাস্তানাবুদ অবস্থা; তখন শামিমার বাথরুমের দরজা খোলার আওয়াজ শোনা গেলো। কুহু সেটা শুনেওনি তখনও। শামিমা গোসল থেকে বেরিয়ে আসেন; হাতে বালতিতে ভেজা শাড়ি; লম্বা-ঘন চুল অর্ধেকটা গামছায় প্যাঁচানো। বেরিয়ে এসে কুহুকে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখেন! তখনো কুহুকে অস্থির হতে দেখে শামিমা চিন্তিত ভঙ্গিতে বিছানায় কুহুর পাশটায় বসে ওর গায়ে হাত রাখেন——-— ‘কি রে? রেডি-টেডি হয়ে এখন শুয়ে পড়লি কেন কুহু? শরীর খারাপ করছে?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কুহু শামিমার গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠে বসে গেল সোজা হয়ে। অপ্রস্তুত ভাবে নিজের মুখটা আয়নায় একবার দেখে নিলো; ওর মুখে কি কিছু বোঝা যাচ্ছে? বড়মা কি কোনোভাবে বুঝে যাবেন—কুহু মাত্রই তার গুণধর; অতি ভদ্র ছেলেটার ইজ্জত লুট করে এসেছে? এসব বোঝা যাচ্ছে না তো আবার?
কুহুকে মুখ লুকাতে দেখে শামিমা ভ্রু বাঁকান; কুহুর কপালে হাত রেখে জ্বর ‍মেপে বললেন; —— ‘জ্বর তো নেই। তাহলে এমন অদ্ভুত আচরণ কেন করছিস সকাল সকাল?’
কুহু হাসার চেষ্টা করলো। বড়মার দুহাত চেপে নিজের কপাল-গাল থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো; ——-‘ঠিক আছি আমি। ভয়..হ্যা ভয় পেয়েছিলাম আরকি।’

‘ভয়? এই সকাল সকাল কিসের ভয় পাচ্ছিলি?’ —- শামিমার অবাক গলা।
কুহু বিপাকে পরে গেল। এই মুহূর্তে ভয় নামক অনুভূতি নিয়ে কি মিথ্যা বলা যায়? ভাবতে ভাবতে কুহুর চোখ গেল ওর ফোনটার দিকে। পরমুহূর্তে ফোনটা খোপ করে ধরে শামিমাকে দেখিয়ে একশ্বাসে বলে গেল একের পর এক মিথ্যা———‘ফোনে; রিলস দেখে ভয় পেয়েছি। ছাড়ো না ওসব বড়মা। ঠিক আছি আমি।’
কুহু শেষের কথাটা অতিষ্ট গলায় বলাতে শামিমা আর কোনো প্রশ্ন করলেন না!
‘পাগল মেয়ে।’ — বলে কুহুর দিকে চেয়ে হালকা হেসে মাথায় চাপড় দিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে হাতে-পায়ে লোশন দিতে লাগলেন।

কুহু বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে নখ কামড়াতে কামড়াতে আবার চুমুর কথা ভেবে যাচ্ছিল। হঠাৎ শুনতে পেল; শামিমা বললেন,—————‘নখ কামড়াচ্ছিস কেন? বদ অভ্যাস এখন থেকেই ছাড়তে হবে কুহু। কতদিন বললাম তোকে।’
কুহু সঙ্গেসঙ্গে সতর্ক হয়ে নখ কামড়ানো বাদ দিয়ে সোজাভাবে ভদ্র হয়ে বসে থাকলো। শামিমা চোখে কাজল দিতে দিতে আয়নায় সম্পূর্ণ মনোযোগ তাক করে বললেন;———-‘কিছু বলবি বলে এলি না? বলে ফেল!
কুহু কাজল দেওয়া দেখে শামিমার। সুন্দর করে রুমিন ফারহানার ন্যায় কাজল দেন বড়মা। কুহু এইমুহূর্তে একটা সুন্দর কথা ভেবেছে; ওর বিয়ে হলে বিয়ের পর সবসময় কাব্য ভাইয়ের সামনে এই ধরনের কাজল দিবে।বড়মার ন্যায় ওকেও ভীষণ সুন্দর দেখাবে নিশ্চয়ই!
শামিমার কাজল দেওয়া শেষ করে কুহুর দিকে ভ্রু উঁচিয়ে তাকাতেই; কুহু ধ্যান ভাঙে। গড়গড় করে বলে যায়;

————-‘উহুম; যেটা বলতে এসেছিলাম।তোমার কাছে আম্মুর নাকি সোনার একটা চেইন আছে? ওটা দিতে বলেছে আম্মু। সাজেক পরে যাবে বললো।’
—-‘ওই চেইন? দিচ্ছি দাঁড়া; আলমারিতে খুঁজতে হবে।’
শামিমা কথাটা বলে কাজল জায়গায় রেখে চুল থেকে গামছা খুলে রাখেন! গামছা খুলতেই তার সুন্দর ভেজা কোকরানো চুল ঝরঝর করে পিঠময় ছড়িয়ে গেল সঙ্গেসঙ্গে। কুহু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো এত সুন্দর চুলের গোছার দিকে। কাব্য ভাই; স্নিগ্ধ ভাইয়া সম্ভবত বড়মার চুলটাই জিনগতভাবে পেয়েছেন; ওদের চুলও এত ঘন; আর সামান্য কুকড়ানোও।

কুহু মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় শামিমার চুলের দিকে চেয়ে ডাকলো;— ‘বড় মা?’
শামিমা আলমারিতে সোনার চেইন খুঁজতে ব্যস্ত; জবাব দিলেন কুহুর ডাকে———‘হু?’
কুহু একদম অদ্ভুত প্রশ্ন করে বসলো———-‘তোমার চুলের উপর বড় চাচ্চু কি ক্রাশড?’
শামিমার গাল-দুটোতে লাল আভা খেলে গেল। বক্সে সোনার চেইন খুঁজতে থাকা হাতটা থেমে গেল পরপর। পরপর কুহুর সামনে লজ্জা পাওয়া ঠিক নয় বলে অযথাই বক্সে ঘাটাঘাটি করতে নিজেকে ব্যস্ত রেখে বললেন; ———‘জানিনা ঠিকঠাক। তবে আমাকে পাত্রী হিসেবে উনার শুরুতে নাকি এই চুল দেখেই পছন্দ হয়েছিল। তোর চাচ্চু আমাকে এখনো হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করে দেননা। চুলের আগা কাটা ছাড়া আজ অব্দি চুল ছোটও করিনি: তোর চাচ্চুর পছন্দ না।’

কুহু অপলক চেয়ে রইলো শামিমার লাজুক; সুখী-সুখী গাল-দুটোর দিকে। বড় চাচ্চুর এই বয়সেই স্ত্রীর চুলের প্রতি কতটা দরদ; মায়া জন্মানো। কুহু তারপর আয়নায় নিজের খুলে মেলে রাখা চুল দেখল। ওরও তো কোমর সমান চুল আছে। কাব্য ভাইয়ের কি ওর চুল পছন্দ হয়? কি জানি! কুহু একবার শুনেছিল কাব্য বড় চুল পছন্দ করে। তারপরেই কুহু বিভিন্ন রেমেডি ফলো করে নিজের চুল বড়; কোমর সমান বানিয়েছে। কাব্য ভাই কি সেসব খেয়ালে রাখেন? কি জানি! কুহু এসবের উত্তর পায়নি এখনো।

কাব্য বরাবরেই তেমন কথা বলে না, কথা ভেতরে চেপে রাখতেই বেশি ভালোবাসে। তবে কুহু জানে; কুহুর প্রতি কাব্য ভাই একটু অন্যরকম সবসময়। কুহু অনুভব করে; কাব্য ভাই ওকে একটু অন্যরকম ট্রিট করেন। টুকটাক যত্ন; কুহুর প্রিয় জিনিসটা এনে দেওয়া; কুহুকে রাস্তার পাশে যত্ন নিয়ে আগলে রাখা— এস কি কাব্য ভাই বোন হিসেবেই করেন শুধু? কুহুর তো মনে হচ্ছে না। এসব বোন হিসেবে নয়। কুহুর মনে হচ্ছে; তার থেকেও বেশি কিছু এসব!
কুহু মৃদু হেসে উঠে দাঁড়াল বিছানা থেকে! শামিমা তখন আলমাররির দরজা লাগাচ্ছেন। কুহু তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। শামিমা কুহুর হাতটা একহাতে চেপে ধরে; হালকা হেসে চাবি দিচ্ছেন দরজায়। কুহু বললো————-‘আচ্ছা, বড়মা! আমার চুল কি তোমার মতো ক্রাশ খাওয়ার মতো? একটু ভালো করে দেখে বলো না প্লিজ।’
শামিমা কুহুকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলেন। কুহু তাকে ভালো করে দেখানোর জন্যে পিঠের চুল সব বুকের কাছে এনে ফেললো। শামিমা কুহুর চুল দেখেন। তারপর হালকা হেসে সোনার চেইন কুহুর হাতের মুঠোতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন; ———-‘হু; তোর চুলও ভীষন সুন্দর. তোর বর ভীষণ পছন্দ করবে। জানা হয়ে গেছে? এবার যা;তোর মা অপেক্ষা করছে।
কুহু লজ্জা পেয়ে গেল। ও তো এভাবে জানতে চায়নি; বড়মা কি করে বুঝে গেলেন?

‘ভাইকুঞ্জ’ পরিবারের সদস্যরা ঢাকা টু খাগড়াছড়ির বাসে উঠে বসেছেন সবেই। মহু ও মুবিন বসেছে একসাথে! মূলত মহুর সিট ছিলো কায়ার সঙ্গে। কিন্তু কায়া আদৌ জানে না, মহুকে স্নিগ্ধ কি আবুল-তাবুল বুঝিয়েছে। এখন মহু বায়না ধরে বসে আছে; সে ভাইয়ের পাশে বসবেই; বসবে। এদিকে মুবিন চায় তার জীবনের একমাত্র আদর্শ ম্যান প্রিয় কাব্য ভাইয়ের পাশে বসবে। অথচ বোনকে ভালোবাসে বিধায় ছোট বোনের আবদার ফেলতেও পারছে না। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই; চোখ-মুখ কুচকে মহুর পাশে গিয়ে বসেছে। মহু ভাইকে কেদে কেদে কিছু বলে যাচ্ছে। মুবিন টিস‍্যু নিয়ে মহুর চোখের পানি মুছে দিতে দিতে শুনছে সেসব।

কাব্যকে তাই কুহুর পাশেই এসে বসা লাগল। কাব্য লিপস্টিক স্টেইন গোসলে চলে গেলেও; কুহুর মজার ধুকপুকানি কাব্যকে দেখে তো আর কমে যেতে পারে না এত সহজে? ওটা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছেই। কাব্য কুহুর পাশটায় বসতেই; কুহু চুড়ান্ত লজ্জায় ডুবে দ্রুত জানলার দিকে মুখটা ফিরিয়ে নিলো। কাব্য ওর পাশে বসে সিট ঠিক করছে। নিজের সিট ঠিক করে কুহুর দিকে চেয়ে বললো——-‘তুই সিট পেছাবি?’

কুহুর মনে হলো; সিট পেছালে ভালোই হবে। ও মাথা নাড়ালো। কাব্য খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কুহুর দিকে এগিয়ে সিট ঠিক করে দিতে লাগলো। কুহুর চোখ গেল তখন কাব্যের সামান্য কোকড়ানো, ঘন চুলের দিকে। কুহুর আজ মনটা বেপরোয়া হয়ে উঠল; একটু কি চুলটা ছুয়ে দেখবে? হাতটা নিশপিশ করতে লাগল একপ্রকার। দোনামোনা করতে করতেই দেখা গেল কাব্য সরে যাওয়ার জন্যে পিছু হটতেই কুহুর ঠোঁট সোজা কাব্যের চুল স্পর্শ করল!
কাব্য চমকে উঠে মুখ তুলে কুহুর দিকে তাকালো;, কুহু নিজেও তব্দা খেয়ে গেছে। এমন একটা মুহূর্ত দুজনের কেউই একটুও আশা করেনি; স্বয়ং কুহুও না। কাব্য জেগে থাকা অবস্থায় এমন চুমু; কদাচিৎ নহে।

অস্বস্তি নিয়ে দেখা গেল কাব্য দু সেকেন্ডের মাথায় দ্রুত সরে এসে সিটে সোজা হয়ে বসে গেছে। কুহু হা করে তাকিয়ে আছে সেভাবেই। কুহুকে ওভাবে হ্যাং মেরে বসে থাকতে দেখে কাব্য নিজেও চুপ করে রইলো। এটা নিয়ে জলঘোলা করার আগেই কুহু দ্রুত অন্যপাশে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে রোবটের মতো বসে থাকল। কাব্য তাই আর কিছু শোনাল না।
রোবটের মতো বসে থাকা কুহুর থেকে চোখ সরিয়ে কাব্য নিজের হাতের দিকে তাকাল। কাব্যর হাতে কুহুর ওড়নাআর একপ্রান্ত লেগেছিলো। কাব্য কুহুর দিকে ওভাবেই চেয়ে; হালকা হাতে ওড়না হাত থেকে সরিয়ে কুহুর কোলে রেখে দিল; সেটা তখন কুহু মোটেও অনুভব করতে পারেনি! কুহু সেভাবেই চুপচাপ জানালার দিকে চেয়ে বসে রইল।

স্নিগ্ধ কায়ার পাশে বসেছে। মাথায় দেওয়া একটা আর্মি ক্যাপ; চোখে সানগ্লাসও লাগিয়েছে দেখা গেল। কায়া ওকে দেখেই মেজাজ দেখাতে শুরু করল; ———‘কি দরকার ছিলো মহুকে হাবিজাবি বোঝানোর? আমরা একসঙ্গে বসেছি; আল্লাহ জানে ফুপু-ফুপা কি ভাবেন। সবসময় ত্যাড়ামি না করলে কি আপনার পেটের ভাত হজম হয়না, স্নিগ্ধ?’
স্নিগ্ধ ডোন্ট কেয়ার ভাব করে রাগে মুহূর্তেই ঝাঁসি কি রানী হয়ে যাওয়া কায়ার মাথায় নিজের মাথা থেকে খুলে আর্মি ক্যাপ ওর মাথায় লাগিয়ে দিল। কায়া ভ্রু কুচকালো; স্নিগ্ধ ওর রাগের লাভ পয়সার মূল্য না দিয়েই বলল———-‘চুপ করে বসে থাক। আছি মাত্র পাঁচদিন। এবার গেলে তিন মাসের আগে এই প্রেমিকরে কিন্তু পাবি না। আগেরবারের মতো এইবার কেদেকুটেও কিন্তু লাভ হবে না। সময় দিচ্ছি; এনজয় কর। আর আমারেও তোকে ফিল করতে দে।’

কায়া ভেতরটা হাহাকার করে উঠল! স্নিগ্ধ চলে যাবে আবার? আবার সেই দুরুত্ব? দিনে দু মিনিট কথা বলার সময় হবে না ওর! কায়া যখন-তখন এই মানুষের পাগলামি দেখতে পারবে না? কায়ার চোখটায় জলে ভরে গেল। আজ স্নিগ্ধের জন্যে চোখে কাজল পড়েছিল; সেটাও নষ্ট হবার পথে। স্নিগ্ধ কায়ার চোখের জল দেখার আগেই কায়া জানালার পাশে মুখ ফিরিয়ে নিলো। স্নিগ্ধ বুঝতে পারলো সম্ভবত সেটা। ও আলগোছে সামনে কয়েকসিট আগে বসা বড়দের একবার সতর্ক চোখে দেখে মাথাটা নামিয়ে আনলো কায়ার কাঁধে। কায়া কেপে উঠল খানিক! স্মিগ্ধ কায়ার কাঁধে মাথা রেখে ওর হাতটা নিজের হাতে মুষ্ঠি করে ধরে রাখলো। কায়ার শরীর কালচে কান্নার তালে। স্নিগ্ধ কাঁদতে দিল। চুপ করে সেভাবেই কায়ার কাঁধে মাথা রেখে মোবাইল বের করে নিজেদের একটা ছবি তুলে নিলো। কায়ার মুখ দেখা যাচ্ছিল না দেখে; স্নিগ্ধ গোঁতা দিল; ——‘ক্যামেরার দিকে তাকা।’

কায়া তাকালো; ওর চোখে-মুখে জল। স্নিগ্ধ ওইভাবেই ছবি ক্লিক করলো। কায়া চোখের জল মুছে বলল; ——‘এত ভারি মাথা রাখলেন, কাঁধ ব্যথা করবে আমার।’
স্নিগ্ধ জবাবে ফোনে গেইমস খেলতে খেলতে জবাব দিল———-‘অভ্যাস করাচ্ছি। বিয়ের পর মাথা কেন আরও অনেক কিছুর ভার স‍হ‍্য করা লাগবে। সো ট্রাই ইট ফ্রম নাও।’
‘ধুর! খালি উল্টোপাল্টা কথা!’ —— কায়া লজ্জা ঢাকতে স্নিগ্ধের হাতে থাপ্পড় বসালো!

কুহু ঘুমিয়েই গেছে। সিটের পাশটায় বারবার মাথা হেলে পরে যাচ্ছিলো দেখে কাব্য ওকে ঠিক করে শোয়ালো। দেখা গেল; কুহু ওটুকু জায়গার মধ্যে কেমন গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে গেল। কাব্য অবাক হলো হয়তোবা, কেউ একটা বাসের সিটের মধ্যে এভাবে ঘুমাতে পারে আদৌ? এটা কুহু বলেই হয়তবা সম্বব হয়েছে। কুহুর বোধহয় ঠান্ডা লাগছে। কাব্য ওর ব্যাগ টেনে একটা জ্যাকেট বের করে কুহুর উপর দিয়ে দিল। দেখা গেল; কুহু ওই জ্যাকেটটাই হাতের মুষ্টিতে খামচে ধরে আরামের ঘুমে তলিয়ে গেল। কাব্য ঠোঁট টিপে হাসলো সম্ভবত! যেভাবে কুহু খাবলে ধরে আছে জ্যাকেটটা..যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে; নাহলে কেউ ছিনিয়ে নিবে। পাগল একটা!

ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ৮

এত লম্বা জার্নিতে; একসময় কাব্যও সিটে মাথা হেলিয়ে ঘুম লাগালো। কুহুও কখন যেন সরতে সরতে কাব্যের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেল! অবচেতন মনে কখন যে কাব্য তার হাতটা,সিট থেকে পরে যাবে সেজন্যে কুহুকে একপাশে করে ধরে রেখেছে — সেটা ও নিজেও জানলো না। কুহুর হাতটা কাব্যর ওই হাতটা ছুয়ে রেখেছে নিজের হাতে! দুজন ছেলে-মেয়ে নিজের অজান্তেই কখন যে এতটা কাছাকাছি এসেছে একে অপরের; সেটা ওরা টের পেল না একবিন্দুও!

ডেনিম জ্যাকেট পর্ব ১০