মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৭
মির্জা সূচনা
রাহির জন্মদিনের পর কেটে গেছে দু’দিন । চুমকি টাও চলে গেছো ওর বাড়িতে । আর এদিকে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বা’দিয়ে বসে আছে মেহরিন। মালিহা মির্জা জলপট্টি দিয়ে দিছে সারারাত ডক্টরকে দেখানো হয়েছে । মারিয়া মির্জা খাবার খাইয়ে গেল মাত্র। মেহরিনের মনটা খুব খারাপ আজকে, চুমকি টার কথা খুব মনে পড়ছে।
চুমকি কিছুদিন মেহরিনদের বাসায় ছিল, কারণ ওর বাবা-মা দাদুবাড়ি গিয়েছিল।
এই কয়দিনে ওরা একসাথে হাসাহাসি, খাওয়া, আড্ডা—সব মিলিয়ে কত স্মৃতি হয়ে গেছে…
আর এখন, বাবা-মা ফিরে এসেছে, তাই চুমকি চলে গেছে নিজের বাসায়।
ঘরটা হঠাৎ করে একদম খালি লাগছে মেহরিনের।
তাছাড়া সেদিন বৃষ্টিতে ভিজে জ্বরও এসে গেছে…প্রতিবারের মতো এবারেও বৃষ্টিতে ভিজেছে দুইজন কিন্তু সেই রোজকার মত জ্বর মেহরিনের’ই এসেছে ।
চুপচাপ বিছানায় শুয়ে থাকা মেহরিন হয়তো বারবার তাকাচ্ছে সেই দিকটায়, যেখানে চুমকির বালিশ থাকত।
জ্বরের ঘোরে মেহরিন শুয়ে ছিল, চোখ আধা বন্ধ।
হঠাৎ কল—“Chumki Incoming Video Call”
মেহরিন: হ্যালো…
চুমকি স্ক্রিনে এসে বলে:
ওহ হ্যালো মেহরিনা রানী! শুনেছি আপনি বৃষ্টিতে প্রেম খুঁজতে গিয়ে জ্বর নামক বর পেয়ে গেছেন?
মেহরিন চোখ ঘুরিয়ে: তুই থামবি?
চুমকি তো থামার মেয়ে না—
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তুই জানিস, তুই জ্বরে পড়তেই কবি সাহেব মনে মনে স্ট্যাটাস দিয়েছে—
‘আমার আরিওনা আজ নিস্তব্ধ,
শুধু কাশি আর হাঁচির শব্দ!’
আমি মনে মনে লাইক দিলাম, আর কমেন্টে লিখলাম—
‘জ্বর যখন আসে’
মেহরিন বলে হাসাস না পাগলি, আমার কাশি ।
চুমকি আবার বলে:
জানিস সেই রিদ ভাইয়া—কাল লাইব্রেরিতে আমাকে দেখে বলল, আপনি কি বই খুঁজছেন?
আমি বললাম, হ্যাঁ—হাসতে শেখা।গম্ভীরদের জন্য…
মেহরিন খিলখিল করে হেসে বলে—তুই ওই বেটারেও ছাড়লি না শেষমেষ ।
চুমকি নাটক করে মুখ কালো করে:
ওইডা কিছু না, রাহি বলছিল—তুই হাসপাতালে ভর্তি হইলে ও কবিতা ছাপাবে:
‘মেহরিনের জ্বর নামক রাজ্যে
হাসি ছিল বন্দী শয্যায়’
আর আমি বললাম, ‘নাম দে: হাসতে মানা, কাশতে বাধ্য!’
মেহরিন এখন বিছানায় গড়াগড়ি করে হাসে।
চোখে জল, মুখে হাত, গলার শব্দ রীতিমতো ভ্যাঁ করে ওঠে হাসতে হাসতে।
মেহবুবা এসেছিলো মেহরিনকে কফি দিতে এসে চুমকির কথা শুনে হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ প্রায়।
শেষমেশ চুমকি বলে:
তোদের দু’বোনের হাসাহাসি বন্ধ হলে, খেয়ে দেয়ে শুয়ে পর ।
মেহবুবা বসলো মেহরিনের পাশে বলল জানিস তোকে অনেক মিস করছি চুমকি আপু । তারপর চলে যাই , এরপর আরো নানান কথা হতে থাকে …
চুমকি বলে,
শোন রে, তোর বাসার সামনে দিয়ে একটা সাইকেল মিছিল করবো—
পিছনে প্ল্যাকার্ড থাকবে:
মেহরিনের জ্বর রিকভারি মিছিল।
মেহরিন সাথে সাথে বলে:
ভালো আইডিয়া! আমি জানালায় দাঁড়িয়ে একটা ছোট্ট প্ল্যাকার্ড ধরবো—
‘চা চাই, প্রেম নয়
(দু’জন এমন হাসতে লাগলো, যেন পৃথিবীতে এর চেয়ে মজার কিছু নেই।)
তারপর চুমকি বলে:
আর একটা কাজ করবি? চল, লাইভে গিয়ে বলি—
‘জ্বর কাটানোর বেস্ট টিপস: বৃষ্টিতে ভিজে চা খাও, আর পাগলের মতো হাসো।
মেহরিন হেসে বলল:
তাহলে তো হাসপাতাল থেকে ডাক আসবে,
‘দয়া করে এই দুই রোগীকে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আগেই ভর্তি করুন..
চুমকি হঠাৎ মাথায় দস্তানা পরে এলো, বলল:
তয় আমি তোর নার্স হয়েছি, এখন থেকে ওষুধ খাওয়া লাগবে নিয়ম করে।
প্রথম ডোজ: রোজ অন্তত ১০ বার হাসা…
মেহরিন চোখ বড় করে বলে:
আরে দোস্ত, ১০ বার না হাসলে কি ফাইন লাগবে নাকি?
চুমকি গম্ভীর হয়ে নাটক করে:
হ, ফাইন ৫ চুমু—নিজেকেই দিতে হবে আয়নায়..
(মেহরিন এবার একেবারে ছিটকে পড়ে বিছানায়!)
তারপর তারা প্ল্যান করলো—
আগামীবার দেখা হলে দু’জনে বালিশ নিয়ে যুদ্ধ করবে—
হারবে যে, তাকে ভিডিও কলে নাটক করতে হবে:
“আমি চায়ের পাতার প্রেমে পড়ে গেছি!”
(আরেক রাউন্ড হাসির তুফান বয়ে গেল ঘরজুড়ে!)
দুজনার হাসির শব্দ এমনই ছিল, যেন জ্বর-কাশি-উদাসি সব পালিয়ে গেছে, আর ফিরে এসেছে সেই পুরনো, পাগলামি ভরা দিনগুলো।
মেহরিনের মা মালিহা মির্জা মেয়েকে এত হাসতে দেখে নিজেও হেসে ফেলেন। তার ছেলে মেয়ে গুলো খুব হাসি খুশি তাই কেউ মন মরা হয়ে থাকলে খুব কষ্ট হয়। মেহবুবা আর মাহির ও মেহরিন কে অনেক সঙ্গ দেয়। মনে মনে বলে মেহবুবা মাহির আর চুমকি থাকতে মেহরিন মন মরা হয়ে থাকবে এটা যেনো অসম্ভব।
মেহরিন আর চুমকির ভিডিও কলে হাসাহাসি যখন তুঙ্গে, তখন ঘরের দরজায় টুকটুক শব্দ।
মেহরিন ক্লান্ত হয়ে বলে,
চুমকি, কেউ দরজায় কড়া নাড়তেছে, দাঁড়া দেখি…
মেহরিন দরজা খুলতেই সামনে মাহির—হাতে একগাদা চকোলেট, চিপসের প্যাকেট, আর একটা ছোট্ট ঠোঙা ভর্তি টফি।
মাহির ভুরু কুঁচকে, মুখ গম্ভীর করে বলল,
তুই আমায় রাগাইস কেন? তুই তো জানিস বৃষ্টিতে ভিজলে তোর জ্বর আসে, তাহলে বুঝতে গেলি কেন, তুই অসুস্থ থাকলে আমি ভালা থাকি না, বুঝলি?
মেহরিন অবাক হয়ে ছোট ভাইটার মুখের দিকে তাকায়। মাহির আবার বলে,
আমার কাছে তুই হিরোইন, হিরোদের জ্বর থাকা মানায় নাকি?
(পাশ থেকে চুমকি ভিডিও কলে কান পেতে সব শুনছে, হিহিহি করে হাসতেও লাগলো।)
মাহির চকোলেটগুলো মেহরিনের হাতে দিয়ে বলল,
এইগুলা খা, শক্ত হ, প্লিজ।
আমার বড় আপু কষ্ট থাকলে অসুস্থ হলে আমার মনে হয় পুরা পৃথিবী অন্ধকার হইয়া যায়।
মেহরিনের গলা ভিজে আসে। ছোট ভাইটার এমন কেয়ারিং কথায় চোখে জল এসে যায়।
চোখ লুকাতে চেষ্টা করে, কিন্তু মাহির বলে ফেলে,
তোর চোখ লাল কেন, কাঁদলি নাকি? আমি কইছি না, তুই চিন্তা করিস না খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হবি, আবার আমাদের সেই পুরানো হাসা হাসি মারামারি আড্ডা শুরু করবো।
মেহরিন হেসে চোখ মুছে। একটা মাথায় টোকা মারে ভাইয়ের—
পাগল ভাইটা আমার, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাব আমার কিচ্ছু হবে না।
মাহির মুচকি হেসে বলে,
হুম, নইলে আমিও তোর মাথার উপর পাহারা বসাবো
এদিকে চুমকি আবার ভিডিও কলে নাটক শুরু করে—
ওমাইগড, ভাই-বোন মোমেন্ট! প্লিজ কেউ মাইক আনো…
(দু’জনেই আবার হেসে ফেলে)
মেহরিনের তখন জ্বরের কষ্ট আর নেই মন টা শান্ত হয়ে গেছে মনে শান্তি থাকলে অসুস্থতা কাবু করতে পারে না —
এখন মন জুড়ে মিশে আছে ভালোবাসার উষ্ণতা—ভাইয়ের কেয়ারিং , বন্ধুর ভালোবাসা পাশে থাকা , আর চকলেটের মিষ্টি স্বাদে।
কেটে গেছে আরো কিছুদিন। ইউনিভার্সিটি বাড়িতে ভাই বোনদের সাথে আড্ডা কবি সাহেবের কবিতা আর চুমকির বকবকানি ভালোই কেটছে দিন।
দেখতে দেখতে ওদের নবীন বরণ চলে এসেছে।
আজ মেহরিন আর চুমকিরের নবীন বরণ—বিশেষ দিন, বিশেষ সাজ।
তাই ঠিক করা হয়েছে—আজ শাড়ি পরবে দু’জনেই।
সকালবেলা মেহরিনের ঘরের ঘড়ি তখনও ঠিক ৮টা বাজার আগেই —
টিংটং!
দরজায় বেল বাজতেই মেহরিন গিয়ে খুললো।
সামনে দাঁড়িয়ে আছে চুমকি — একদম ঝলমলে..
হালকা সোনালি রঙের শাড়ি, কানে ছোট্ট ঝুমকা, চুলটা সুন্দর করে খোঁপা করা, আর ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক কি সুন্দর এই মেয়েটা ওর মুখে লেগে আছে মিষ্টি হাসি।
চুমকি দরজা দিয়েই ঢুকে চিৎকার করে বলল:
তোর কি মনে আছে আজ নবীন বরণ। আর তুই এমন কাজের বেটি ভেজে বসে আছিস কেন ? যাক গে আই আমি নিজে হাতে তোকে শাড়ি পরাবো।
মেহরিন হেসে বলল:
ওমা,এখন সবে আটটা বাজে ভার্সিটি যাব ১১ টায় এখনই সেজেগুজে বসে থাকবো নাকি?
চুমকি নাটক করে বলে:
এত বেশি বকিস কেন তুই সাজুগুজু করতে টাইম লাগবে না বুঝি ? আজ আমি তোকে এমন ভাবে সাজিয়ে দেবে না সবাই শুধু জিজ্ঞেস করবে কোন পার্লার এসেছো কে সেই কারিগর যে তোমাকে এত সুন্দর করে উপস্থাপন করলো । তুই বলবি দা গ্রেট চুমকি সরকার। আর এই কথা শুনে সব ছাত্রছাত্রী আমাকে বাহবার সাথে সেলাম দেবে।
মেহরিনার কিছু বলে না জানে এখন কিছু বলে লাভ নেই ও একবার যেহেতু বলেছে সাজাবে তার মানে সাজাবেই ।
তারপর শুরু হলো সাজনো।
মেহরিন পরবে হালকা অফ-হোয়াইট রঙের শাড়ি, যার পাড়ে নীলচে সূক্ষ্ম কাজ করা।
চুমকি খুব যত্ন করে শাড়ি পরিয়ে দিল, মেহরিন এমনি অনেক সুন্দর কোন প্রসাধনি মাখলো না শুধু একটু ফেস পাউডার, একটু কাজল, ঠোঁটে নোট লিপস্টিক আর একটা ছোট টিপ ব্যাস সাজিয়ে দিল মনের মত করে। আর মেহরিনের চুলে একটা গোলাপ গুঁজে দিলো
আর নিজের হাতে একফোঁটা কাজল দিয়ে দিল মেহরিনের কানের নিচে —ইস আমার জান্টুসটা কি কি সুন্দর কারণ নজর যেন না লাগে ।
মেহরিন আয়নায় তাকিয়ে অবাক — নিজেরও বিশ্বাস হচ্ছিল না, এত সুন্দর লাগছে..
চুমকি পাশে দাঁড়িয়ে বলে:
এইবার নবীন বরণ কাঁপাবি রে! আজ তোই নবীনদের রাণী…
দু’জন মিলে ঘরজুড়ে ঘুরে ঘুরে খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
মাঝে মাঝে দুজনেই আয়নায় পোজ দিয়ে নিজেদের দেখে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে।
তারপর মালিহা মির্জা এলো ঘরে,আদুরে গলায় বললেন:
বাহ্ আমার মেয়েরা তো আজ একেকজন সিনেমার নায়িকা হয়ে গেছে।
চুমকি মজা করে বলল:
নায়িকা তেমন কিছু না, আমরা হচ্ছি নবীন বরণের স্পেশাল ফ্লাওয়ার গার্ল…বুঝলেন মা জননী
(আরেক দফা হাসির ঢেউ)
তখনই মেহবুবা এলো আর বলল : বলতো তোরা কি নবীন বরণ হয়ে যাচ্ছিস নাকি বিয়ে করতে ? মেহরিন আর চুমকি দুজনে একসাথে বলে উঠলো :তুই যেটা ভেবে খুশি।
এরপর ওরা সবার কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে …
মেহরিন আর চুমকি রিকশা থেকে নামতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল।
এই যেন সেই পরিচিত ক্যাম্পাস না—আজ সবকিছু এক নতুন রূপে সাজানো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটটা সাজানো হয়েছে রঙিন ফেস্টুনে, ফুলে আর বেলুনে।
একটা বড় ব্যানারে লেখা—
“স্বাগতম নবীন শিক্ষার্থী!”
চারপাশে টেন্ট করে সাজানো হয়েছে স্টল, যেখানে একেকটা বিভাগের পরিচিতি, সিনিয়রদের ক্লাব, সাংস্কৃতিক সংগঠন—সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে মঞ্চ!
রঙিন ব্যাকড্রপ, ঝলমলে আলো আর মাইকে ভেসে আসা সাউন্ডচেক—সব মিলে এক উচ্ছ্বসিত পরিবেশ।চুমকি আর মেহরিন এতক্ষণ এগুলোই দেখছিলো এরপরও আর সামনে আগায় যেখানে নবীনদের বরণ করছিল সিনিয়ররা ।
ভার্সিটির বিশাল মাঠের মাঝে বিশাল স্টেজ তৈরি করা হয়েছে।
স্টেজের চারপাশে লাল কার্পেট, সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে, আর ফুল হাতে দাঁড়িয়ে সিনিয়ররা।
যারা প্রথম দিন মেহরিন আর চুমকিকে র্যাগ দিয়েছিল—ছেলেরা সাদা পাঞ্জাবি আর মেয়েরা সাদা শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে নবীনদের বরণ করতে।
রাকিব, শান্ত, মৌ আর সাথি—ওরা সবাই আজ সিরিয়াস কিন্তু চোখে এক অদ্ভুত স্নেহ!
রাকিব মেহেরিনদের দিকে তাকিয়ে বলল:
আজ আমরা তোমাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, কারণ প্রথম দিন তোমাদের একটু বেশি ভয় দেখিয়েছিলাম! কিন্তু এই ক্যাম্পাসে সত্যিকার বন্ধুত্ব সেখানেই শুরু হয়, ভয় আর হাসির মাঝামাঝি।
সবাই হেসে উঠলো।
মেহরিনও মাথা নিচু করে মুচকি হাসল। তারপর বলল যারা নিজের কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয় তাদের আর কিছু বলার থাকে না । আপনারা মজা করেছেন তার জন্য ক্ষমা চাইছেন আমাদেরও উচিত আপনাদের ক্ষমা করে দেওয়া।
সাথী বললো : হাউ সুইট । তোমার মেয়েটা আসলেই খুব বুদ্ধিমতী আর খুব মজার । আই লাইক ইট ডিয়ার । বাই দা ওয়ে আজকে কিন্তু তোমাদের মারাত্মক সুন্দর লাগছে । সত্যি বলছি আমি মেয়ে হয়েও ক্রাশ খেলাম ।
চুমকি পাশে দাঁড়িয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল:
দেখছিস, আমরাই ক্যাম্পাসের দামি ভিআইপি।
তারপর শুরু হলো ফরমাল বরণ।
হাতে ফুল, মুখে হাসি— সাথী আর মৌ একটা করে ছোট্ট লাল গোলাপ নবীন মেয়েদের হাতে তুলে দিচ্ছে, আর ছেলেরা ছেলেদের ফুল দিচ্ছে।
কিন্তু মেহেরিনদের ক্ষেত্রে ভিন্ন মেহরিন আর চুমকিকে সবাই একটা করে গোলাপ দিল ।
মেহরিনরা যখন স্টেজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, শান্ত তার দিকে তাকিয়ে হালকা মাথা নুইয়ে হাসল।
কিন্তু সাথের ঘটনা অন্য!
চুমকি যখন ফুল নিতে সামনে এগিয়ে গেল, শান্ত কেমন যেন থমকে গেল।
তার চোখ বড় হয়ে গেল, মনে হলো যেন আশপাশের সব শব্দ থেমে গেছে!
চুমকির খোপা করা চুল, হালকা গোলাপি রঙের শাড়ির পাড় দুলছে হাওয়ায়, চোখে কাজল আর কপালে ছোট্ট টিপ আর সেই দুষ্টু হাসি—
শান্ত মনে মনে বলল,
ভাইরে ভাই, এই মেয়েটা তো একেবারে গেম ওভার করে দিল!”
রাকিব পাশে হালকা কাশি দিয়ে ফিসফিস করে বলল:
শান্ত, ভাই আমার পরে লাইন মারিস, আগে বরণ শেষ কর
শান্ত হুঁশ ফিরিয়ে তাড়াতাড়ি কাজে মন দেয় ।
চুমকি যেতে যেতে মেহরিনের দিকে তাকিয়ে চুপিচুপি বলল:
আজ থেকে একটা ফ্যান পাইলাম মনে হয়।
মেহরিন গোপনে হাসে।
বরণ শেষে সবাই ধীরে ধীরে চেয়ার টেনে বসে।
মেহরিন আর চুমকি সামনের সারির একটু পাশেই বসে পড়ল। দু’জনের চোখে মুখে উত্তেজনা।
তখনই স্টেজের পিছন থেকে দেখা গেল — ম্যানেজমেন্ট টিম আসছে।
আর সামনে এগিয়ে আসছে রিদ তালুকদার।
পরনে নীল রঙের ঝকঝকে পাঞ্জাবি, আর সাদামাটা কিন্তু দারুণ একটা আচরণ।
হাঁটার স্টাইলে একটা অদ্ভুত গাম্ভীর্য—চোখের ওপর ভুরু সামান্য কুঁচকে থাকা, যেন সে চারপাশের কোনো উচ্ছ্বাস টেরই পাচ্ছে না।
কিন্তু মেয়েরা টের পেয়েছে…
এত সুন্দর নীল পাঞ্জাবিতে রিদকে দেখে ক্লাসরুম, করিডর—সব জায়গা থেকে চিৎকার, ফিসফাস, চাপা উল্লাস শুরু হয়ে গেছে।
একজন বলল:
উফ, রিদ ভাই তো আজ একদম ফিল্মি হিরো লাগছে!”
আরেকজন লাজুকভাবে ফিসফিস করে:
ওমাইগড, নীল পাঞ্জাবিতে কার এত প্রাণনাশী লাগতে পারে ভাবতেই পারিনি।
আরেকটু দূর থেকে কারও আওয়াজ:
বিয়ের পাত্র রেডি।
চুমকি ফিসফিস করে বলে:
দেখ দেখ, এর জন্যেই মেয়েরা মরে যায়।
আর মেহরিন?
সে মুখ ভেংচিয়ে বলল:
আহা! হিরো উফফ! প্লিজ ওদের থামা ওদের এত ঢং আমার আর ভালো লাগছে এমন গোমড়া মুখো একটা ব্যাটাকে নিয়ে এত মাতামাতি জাস্ট নেওয়া যায় না।
তারপর মেহরিন আর চুমকি দু’জনেই মুখ বাঁকিয়ে এমন একটা এক্সপ্রেশন দিল, যেন এই উল্লাস তাদের জীবন-মরণ প্রশ্ন হয়ে গেছে।
দুজনের হাসি আটকাতে না পেরে হাইফাই করে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে ।
মেহরিন বলল:
এদের দেখতে এসেছি নাকি নবীন বরণে এসেছি বুঝতে পারছি না।
চুমকি তাড়াতাড়ি মোবাইলটা বের করে ছবি তুলতে লাগলো আর ফিসফিস করে বলল:
পরেরবার দেখাবো কিভাবে নবীনদের বরণ করতে আসে।
মেহরিন হাসতে হাসতে মনে মনে।
মেহরিন আর চুমকি তখনও হেসে হেসে নিজেদের মধ্যে ফিসফাস করছে।
এদিকে মাইকে ঘোষণা এল,
এবার নবীন বরণ অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হবে রিদ তালুকদারের পরিবেশিত গানের মাধ্যমে।
চারপাশ হঠাৎ করেই আাবর হইচই হয়ে গেল।
সবাই নিঃশ্বাস চেপে অপেক্ষা করছে।
রিদ মঞ্চের মাঝখানে এসে মাইক ধরলো— হাতে একটা গিটার, সাদা আলো তার নীল পাঞ্জাবিতে পড়তেই যেন চারপাশ আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
গলা খাকারি দিয়ে সে গান শুরু করল —
একটা নরম, মিষ্টি বাংলা গান, যেখানে নতুন স্বপ্ন, নতুন পথের কথা বলা হয়েছে।
রিদ গিটারের টুংটাং সুর তুলে তারপর গায়..
বলতে চেয়ে মনে হয়
বলতে তবু দেয়না হৃদয়,
কতটা তোমায় ভালবাসি।
চলতে গিয়ে মনে হয়
দুরত্ব কিছু নয়,
তোমারি কাছেই ফিরে আসি।
তুমি তুমি তুমি শুধু এই মনের
আনাচে কানাচে……
সত্যি বলনা কেউ কি প্রেমহীনা
কখনো বাঁচে…
তুমি তুমি তুমি শুধু এই মনের
আনাচে কানাচে……
সত্যি বলনা কেউ কি প্রেমহীনা
কখনো বাঁচে…
বলতে চেয়ে মনে হয়
বলতে তবু দেয়না হৃদয়,
কতটা তোমায় ভালবাসি।
🎸 🎻 🎶 🎶 🎶 🎶 🎶 🎶 🎻 🎸
মেঘের খামে আজ তোমার নামে
উড়ো চিঠি পাঠিয়ে দিলাম,
পড়ে নিও তুমি মিলিয়ে নিও
খুব যতনে তা লিখে ছিলাম।।
মেঘের খামে আজ তোমার নামে
উড়ো চিঠি পাঠিয়ে দিলাম,
পড়ে নিও তুমি মিলিয়ে নিও
খুব যতনে তা লিখে ছিলাম।।
ও চাই পেতে আরও মন
পেয়েও এত কাছে,
বলতে চেয়ে মনে হয়
বলতে তবু দেয়না হৃদয়,
কতটা তোমায় ভালবাসি।
🎸 🎻 🎶 🎶 🎶 🎶 🎶🎶 🎻 🎸
মন অল্পতে প্রিয় গল্পতে
কল্পনায় স্বপ্ন আঁকে,
ভুল ত্রুটি আবেগী খুঁনসুটি
সারাক্ষণ তোমায় ছুয়ে রাখে
মন অল্পতে প্রিয় গল্পতে
কল্পনায় স্বপ্ন আঁকে,
ভুল ত্রুটি আবেগী খুঁনসুটি
সারাক্ষণ তোমায় ছুয়ে রাখে
ও চাই পেতে আরও মন
পেয়েও এত কাছে,
বলতে চেয়ে মনে হয়
বলতে তবু দেয়না হৃদয়,
কতটা তোমায় ভালবাসি।
তার কণ্ঠ গভীর, মোলায়েম আর একদম মন ছুঁয়ে যাওয়া।
চারপাশের হৈচৈ থেমে গেছে।
সবাই যেন মন্ত্রমুগ্ধ।
চুমকি তো বলেই ফেলল,
আরে, এই গোমড়া মুখো রাগী রিদ ভাইয়ের এমন মিষ্টি গলা..লাইফ টাইম সারপ্রাইজ!
মেহরিন সম্মতি দিল অবাক সেও ।
গান শেষ হতে না হতেই হাততালির ঝড়।
অনেক সিনিয়র আপু-ভাইয়েরা দাঁড়িয়ে তালি দিচ্ছে।
আর মেয়েরা তো চিৎকার করে বলছে,
“আরেকটা গান, আরেকটা গান!”
রিদ মাইক্রোফোনে হালকা হেসে বলল,
“আজ নবীনদের দিন, তোমরা এগিয়ে আসো, তোমাদের গান শোনা যাবে!
তার গম্ভীর কণ্ঠে হালকা একটা মিষ্টি রসিকতা সবাইকে আরো আপন করে দিল।
আর মেহরিন?
সে একদম চুপচাপ বসে রিদকে দেখছে, ভেতরটা না বুঝতেই একটু নরম হয়ে যাচ্ছে।
চুমকি কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৬
“কী রে? তুই এমন স্ট্যাচু হয়ে গেলি কেন বাশ টাশ খেলে নাকি?
মেহরিন সাথে সাথে গালে হাত দিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলল,
তুই চুপ কর চুমকি! ও আমার টিচারদের মতো গম্ভীর। আর তার থেকে বড় কথা আমার কবি সাহেব আছে ।