এলিজা পর্ব ১০

এলিজা পর্ব ১০
Dayna

এলিজা চৌকির এক কোনেতে বসে আছে।
চারদিক কেমন জানি, নিস্তব্ধ , সবকিছু ধোঁয়াশা হয়ে যাচ্ছে।”আমার সাথে ই এমন হয়। যখন মা বাবার সাথে থাকার কথা – পরিবারের সাথে হাসিখুশি থাকার কথা, তখন থেকেই আমি একা। মা কে হারালাম ।বাবাকে হারালাম।- হারালাম বড় ভাইকে। মা বাবার মত পেয়েছি মামা মামী কে ।
র’ক্তের বলতে আছে শুধু ছোট বোন। বান্ধবীর মতো ছিল, নিরা ভাবি – সেও আজ নেই। চোখ দিয়ে অঝরে পানি পরছে এলিজার।

চারদিক থেকে একাকিত্ব ধেয়ে আসছে।
আজ বড্ড একা লাগছে।
পাখি: তুমি কাঁদছ কেন আপু?
ভাবির জন্য মন খারাপ বুঝি। বলেই এলিজার চোখ মুছে দিলো।
রমজান বারান্দায় এসে বসে বললো,লাশ দাফন করে আসলাম। একটা গামছা দাও।গোসল করে ঘরে ঠুকি।
জয়তুন :এলিজা মা এভাবে মন খারাপ করছিস কেন!,হাত মুখ ধুয়ে আয়। আমি রান্না বসাই বেলা গড়াচ্ছে।তোর ছোট চাচিকেও আমগো ঘরে নিয়ে আয়।
এলিজা মামির বাধ্য মেয়ে। হাত মুখ ধুয়ে ছোট চাচির ঘরে যায়।
জয়তুন অনেক কিছু ভেবে রমজান কে উদ্দেশ্য করে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

, জয়তুন:আমাগো এখন এলিজা কে নিয়ে ভাবা উচিত।, জোয়ান মেয়ে, চারদিকে যা হইতেছে।
রমজান ;তুমি ওর বিয়ের কথা কইতেছো?
জয়তুন :তা নয়তো কি- নিরার যেভাবে মৃত্যু হলো। এলিজা কে কারো হাতে তুলে দিতে পারলে আমি মরেও শান্তি পামু।
রমজান : হঠাৎ করে তো হয়না দেখি কি করা যায়।
চৌধুরী বাড়ি——
মনোরা : চাঁদনী ম্যাডাম আপনারে অপূর্ব দাদা ছাঁদে ডাকছে।
চাঁদনী ভাবতে থাকলো ,হয়তো বিয়ের জন্য অপূর্ব খুব খুশি। না জানি কি বলবে আমাকে। মুখে মৃদু হাসি নিয়ে চলে যায় অপূর্বর কাছে।
অপূর্ব ছাদের রেলিং ধরে উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।
চাঁদনী : ডেকেছিস?

অপূর্ব উৎফুল্ল হয়ে বললো,হ্যা- আমি জানি চাঁদনী, তুই আমাকে ভালোবাসিস না, আর আমিও না। তাও তুই জানিস।কিন্তু তোর বাবা মা- আমার মা বাবা তারা সে-ই ছোটবেলার ওয়াদা নিয়ে পরে আছে।
চাঁদনী অশ্রু চোঁখে তাকিয়ে আছে।
কি বলছে এসব অপূর্ব ”ওকে নিয়ে যে আমি সেই ছোটবেলা থেকেই একটু একটু করে স্বপ্ন দেখেছি।
চাঁদনীর ইচ্ছা করছে এখনই ছাঁদ থেকে লাফ দিতে।
, অপূর্ব, : তুই মামা মামী কে সবটা বুঝিয়ে বলিস।আর হ্যাঁ,, তোকে তো বলাই হয়নি, আমি একজনকে ভালোবাসি‌ ।-তার নাম এলিজা । সেদিন অন্ধকার রাতে যেন জোছনার মত আলো নিয়ে এসেছিলো।
অপূর্ব চাঁদনীর দিকে দৃষ্টি স্থাপন না করেই ছাদ থেকে চলে যায়।

– নিজের প্রিয় মানুষ টির মুখে – তার প্রিয় মানুষ এর কথা শোনা যে কতটা বেদনাদায়ক সেটা আজ বুঝতে পারছি।
, কতটা ভালোবাসি আমি ওকে, আর আজ যাকে ভালোবাসি তার মুখে অন্য কারো নাম।
চাঁদনী মনে মনে নিজের মৃত্যু কামনা করতে থাকে। অঝরে কান্না শুরু করে।
জাহাঙ্গীর জয়া তারা মনস্থির করলো। ছেলের যাকে পছন্দ তাকেই বউ করে আনবে। একমাত্র ছেলে তার আবদার কখনো অপূর্ন রাখে না।
জাহাঙ্গীর হতাশার ছাপ নিয়ে বললো,জয়া তুমি তো সবকিছু জানো ।
জয়া:অতিতের কথা এখন মনে করে কি লাব!ছেলেকে খুশি রাখতে হলে আমাদের যেতে হবে। ওকেই বউ করে আনতে হবে যে।
আগামীকাল আমরা তিলকনগর যাবো।বললো জয়া অপূর্ব কে।
অপূর্ব মহাখুশি।
তার প্রিয় এলিজাকে সে নিজের করতে চলেছে যে।
পরদিন‌ সকাল বেলা
তিলকনগর———–

কি তালুকদার সাহেব, শুনলাম তোমার ছেরায় নাকি ঐ রমজান আলির ভাগিনার পেছনে ঘোরে- শুনলাম তাদের রাশলিলা চলতেছে** আপনার মানইজ্জত আর থাকলো কই,( বললো একজন সবজিওয়ালা)
ফরিদ তালুকদার* এলাকার প্রতাবশালী ব্যাক্তি।শায়ান তার একমাত্র ছেলে। ফরিদ তালুকদার প্রচুর রাগী মানুষ। রাগ উঠলে সে কি করে নিজেই জানে না।
বাজারে এসে , একজন সবজি বিক্রেতার কাছ থেকে এরকম কথা শুনবে আশাই করেনি। মাথায় রক্ত উঠে যায় ।
ফরিদ তালুকদার,, মনস্থির করলো।
এলাকা থেকে রমজান দের তারিয়ে দেবে।
যেই চিন্তা সেই কাজ ।
সেদিন ই কিছু ছেলে ফেলে নিয়ে , রমজান দের বাড়ি উপস্থিত হয়।
কর্কট মেজাজে ডাকতে থাকে,রমজান আলি , বাড়িতে আছো!

, রমজান বেড়িয়ে আসে ।
রমজান কাপা কন্ঠে বলে উঠলো,ফরিদ সাহেব আপনি!আমারে কইলেই তো আমি আপনার কাছে জাইতাম।
ফরিদ :তোমার মিষ্টি কথা শুনতে আসি নাই। তোমার ভাগ্নিকে নিয়ে আজকেই গ্রাম ছারবে।
ঘর থেকে এলিজা বেড়িয়ে আসে। উচ্চ স্বরে বললো,কেন আমরা কি করেছি ? কি অপরাধ যে গ্রাম ছাড়তে হবে।
ফরিদ : আমার ছেলের সঙ্গে রাশলিলা করবা আর আমি কিছু বলবো না।
পেছন থেকে ফরিদের একজন চালা বলে উঠলো , এত কথা বলার কি দরকার টেনে বাড়ি থেকে বের করো।
এলিজা :মুখ সামলে কথা বলুন!কোন অধিকার নেই এভাবে বিনা দোষে দোষারুপ করার।আপনার ছেলের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।

আঙুল দেখিয়ে এলিজা ফরিদ কে কথা গুলো বলতেই,ফরিদের চালা থেকে একজন এসে এলিজার চুলের মুঠি ধরে,বললো,বে”’শ্যা তেজ তোর বের করছি– বলেই বাহিরের দিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।এলিজা ছুটে মাটিতে পরতেই, ধরে ফেলে একজন, সবাই থমকে যায়।
ফরিদ তার লোক জন সবাই হা করে থাকে। এটা আবার কে।
এলিজা আচেনা মানুষটির দিকে পরোখ করতেই দেখে,সে আর কেউ নয় অপূর্ব।
অপূর্ব রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো,
এই অবস্থা কেন কারা এরা।কি হয়েছে??
ফরিদ রাগান্বিত ভঙ্গিতে বলে উঠলো,

ওহহ হহ , এইখানে ও দেখছি নাগর , এটা আবার কোথাকার নাগর, নাকি দেহরক্ষী তা!
অপূর্বর চোখ গুলো লাল টকটকে হয়ে যায়।কর্কট কন্ঠে বললো ,
হ্যা- আমি ওর দেহরক্ষী তা।- আর কোন শিক্ষায় একটা মেয়ের গায় হাত দিলেন।
এত বড় সাহস, বলেই যে এলিজা-কে যে ধাক্কা দেয় তাকে এক ঘুষিতে মাটিতে ফেলে দেয়।সবাই অপূর্বর তেজ দেখে দেখে চাপসে যায়।
অপূর্ব:আর যদি কোনদিন, আমার হবু স্ত্রীর,, গায় হাত তো দূরের কথা যদি চোখ তুলে তাকাও, তো চোখ উপরে ফেলবো।

ফরিদ চালাদের নিয়ে চলে যায়। ( এরে দেখে নিবো মনে মনে বলতে থাকলো)
জয়তুন : এলিজা কে ঘরে নিয়ে যায়।
রমজান: তুমি সেই না, যে পাখির জন্য ঠিকানা দিছিলা, চিকিৎসা করানোর জন্য?
অপূর্ব: হ্যা চাঁচা।
আজকে তুমি তো সময়মত এসে ……
কথা মাঝ পথে থামিয়ে চোখ মুছে রমজান।
অপূর্ব ইতস্তত বোধ করে বলে উঠলো,,
চাঁচা আমি একা আসিনি। আমার মা বাবাও এসেছে তারা গাড়িতে বসে আছে।
রমজান দ্রুত স্বরে বলল ,ভেতরে নিয়ে আসো ভেতরে নিয়ে আসো।
জাহাঙ্গীর জয়া আসলে অপূর্ব পরিচয় করিয়ে দেয়।
তাদের বুঝতে বাকি রইলো না যে,তারা কেন এসেছে।
সেদিন অপূর্বর হাবভাব ই বলে দিয়েছিলো।

এলিজা পর্ব ৮+৯

জাহাঙ্গীর বিয়ের প্রস্তাব দিলে, রমজান, জয়তুন না করলো না। তারা রাজি হয়।
এত বড় ঘরের ছেলে। তাছাড়া, অপূর্ব ভদ্রতা জানে। দেখতেও মানানসই।
জাহাঙ্গীর: আমরা বিয়ের বেশি দেরী করতে চাইনা। এই সপ্তাহের মধ্যে ই হোক।
রমজান:- আমাদের কোন আপত্তি নেই।
অপূর্ব জয়তুন কে বললো,
আমি একবার এলিজার সাথে কথা বলতে পারি আন্টি?
জয়তুন: হ্যাঁ – কেন না।

এলিজা পর্ব ১১