চেকমেট পর্ব ৩০

চেকমেট পর্ব ৩০
সারিকা হোসাইন

সারফরাজ এর মুখ পানে অগ্নি দৃষ্টিতে পলক হীন তাকিয়ে রয়েছে রুদ্ররাজ।যেনো তার চোখের নীল শিখা ওয়ালা আগুন দিয়ে ঝলসিয়ে দিচ্ছে সারফরাজ কে।কিন্তু সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে সারফরাজ ডাকলো
“অভি!
সারফরাজ এর ডাক পেয়ে হন্তদন্ত করে ভেতরে প্রবেশ করলো অভি।পেছনে লাগেজ সমেত লুইস আর ইয়ং।কৃষ্ণ বর্ণের লুইস এবং ব্রিটিশ যুবক ইয়ং বুক ফুলিয়ে সারফরাজ এর সামনে দাঁড়িয়ে জবাব দিলো
“বস।

সারফরাজ নিজের গাম্ভীর্য বজায় রেখে রুদ্রকে একবার পরখ করে সাফিন হায়দার কে নির্দেশ করে বলে উঠলো
“গিভ হীম দ্যা লাগেজ।
সারফরাজ এর আদেশ পেতেই দুজনে বড় বড় পা ফেলে লাগেজ গুলো নিয়ে সাফিন হায়দার এর সামনে দাঁড়ালো।চকচকে চোখে লাগেজ গুলো রিসিভ করে সাফিন হায়দার বলে উঠলো
“ওপেন দ্যা লাগেজ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বাধ্য অনুগত্যের ন্যয় লাগেজ এর চেইন খুলে মেলে ধরলো দুজনে।অডিটোরিয়ামের ফকফকে আলোয় বাংলাদেশি নতুন কচকচে বান্ডেল গুলো চকচক করে উঠলো।বান্ডেল ভর্তি নোটের সাথে সাথে চকচকে হলো সাফিন হায়দার এর চোখ জোড়াও।সে একবার সুদর্শন পুরুষ সারফরাজ এর আকাশি চোখে নজর মেলালো।সারফরাজ সাফিন হায়দার এর মনোভাব বুঝতে পেরে মাথা দোলালো।হাসি ফুটলো সাফিন হায়দার এর মুখে।পুরো দৃশ্য নজর এড়ালো না রুদ্ররাজ এর।সে ঠিক বুঝলো সাফিন হায়দার ই সেই কালপ্রীট এবং তার কারসাজিতেই নিজের তিল তিল করে গড়ে তোলা ড্রিম প্রোপার্টি সারফরাজ এর হাতের মুঠোয় চলে গিয়েছে।।রুদ্র সাফিন হায়দার এর মুখ পানে তীক্ষ্ণ নজর বুলালো।কিন্তু সাফিন হায়দার নিরুত্তাপ রইলো।এই মুহূর্তে রুদ্রকে যেনো কোনো মানুষ ই মনে হচ্ছে তার কাছে।কিছুক্ষন আগেই যেই সাফিন হায়দার রুদ্ররাজ কে স্যার স্যার করতে করতে মুখের ফেনা তুলে ফেলেছিলো এখন সেই সাফিন হায়দার যেনো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে ভুলছে না তাকে।গিরগিটির মতো সাফিন হায়দার এর রঙ পাল্টানো দেখে রুদ্র বিড়বিড় করে বলে উঠলো

“ইউ উইল ডাই সাফিন হায়দার।আ উইল গিভ ইউ অ্যা ডেথ সো ব্রুটাল ,ইউ কুড নট ইভেন ইমাজিন ইট!
নিজের স্বপ্নের পতন দু চোখে সহ্য করতে পারলো না রুদ্র।দাঁতে দাঁত পিষে হাত মুঠি বদ্ধ করে সারফরাজকে হিংস্র গলায় বলে উঠলো
“এর ফল কতটা হৃদয়বিদারক হবে তা দুঃস্বপ্নেও তুই ভাবতে পারবি না সারফরাজ।সেদিন দুটো অপশন খোলা থাকবে তোর সামনে ডু ওর ডাই।
আর দাঁড়ালো না রুদ্ররাজ।হনহন করে বেরিয়ে এলো।রুদ্ররাজ এর হুমকিতে কিছুক্ষন স্তব্ধ রইলো সারফরাজ।এরপর মনে মনে ভাবলো
“হারানোর মতো কিছু কি আর অবশিষ্ট আছে আমার?ডু ওর ডাই অপশন থেকে আমি ডু ই বেছে নেবো।এন্ড দ্যা ফাইনাল চেকমেট উইল বি মাইন।
রুদ্ররাজ এর প্রস্থান নেবার পর মুখে প্রশস্ত হাসি ঝুলিয়ে সারফরাজ এর পানে দৌড়ে এলো সাফিন হায়দার।পারলে সারফরাজ কে মাথায় তুলে নাচতো এই মুহূর্তে সে।কিন্তু এতবড় লম্বা চওড়া মানুষকে এক চুল শূন্যে তোলার তাকত নেই তার।

সারফরাজ এর সামনে এসে সাফিন হাত কচলে চোখের ইশারায় বলে উঠলো
“আমার এনাম?
সাফিন হায়দার এর লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রহস্যময় হাসলো সারফরাজ।এরপর ওয়ালেট থেকে একটা ঠিকানা বের করে ভারি গলায় বলল
“আগামী সপ্তাহে এসো।সব কিছুতে ভরিয়ে দেবো।
ঘচখচ করে কোম্পানির শেয়ার সারফরাজ এর হাতে তুলে দিয়ে সাফিন হায়দার বলে উঠলো
“কাজটা করতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে।যা ডিল হয়েছে তার থেকে দ্বিগুন এমাউন্ট চাই আমার।
সারফরাজ মাথা ঝাকিয়ে প্রত্যুত্তর করলো
“শিউর।
এরপর হাতের কড়কড়ে পেপার গুলোতে নজর বুলিয়ে প্রাপ্তির হাসি হাসলো সারফরাজ।অভিরুপ টাকার লাগেজ সাফিন হায়দার কে বুঝিয়ে সারফরাজ কে বলে উঠলো
‘ভিড় বাড়ছে।আমাদের যাওয়া উচিত।

প্লেটে এক কাপ সম ভাত আর অল্প সবজি ডাল নিয়ে কেবলই রাতের খাবার খেতে বসেছে মায়া।সারফরাজ এসব দিয়ে ভাত খেতে চাচ্ছে না।ছেলেটা আজকাল খাবার নিয়ে বড্ড জ্বালায় তাকে।সারফরাজ এর সাথে কথা বলতে বলতে ঝটপট হাতে এক লোকমা ভাত মুখে তুলতেই একজন নার্স এসে খবর দিয়ে গেলো
“তোমার ছেলে এসেছে।যদি রাতের বেলা একটুও চিৎকার চেঁচামেচি করেছো না?তাহলে কিন্তু ইলেকট্রিক শক আর ইনজেকশন দুটোই দেবো।ঠিক আছে?

নার্সের কথায় মুখের ভাত পরে গেলো মায়ার।প্লেটে হাত ঝাড়া দিয়ে লুকাবার জায়গা খুঁজতে ব্যস্ত হলো।সাহায্য প্রার্থনার জন্য চারপাশে সোহানা কে খুঁজলো।সোহানা নেই।আজ দিনে ডিউটি করেছে সে।রাতে আসবে না।তবে উপায়?কে বাঁচাবে তাকে ওই রাক্ষসের হাত থেকে?
উপায় না পেয়ে বিছানার উপর কাঁথার নীচে গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলো মায়া।কিন্তু কান দৃষ্টি দুই ই সজাগ রইলো।অল্প সময়ে গড়াতেই ক্যাচ ক্যাচ শব্দে খুলে গেলো দরজা।টাইলসে জুতার খট খট আওয়াজ।কেউ হিমশীতল ঠান্ডা ভয়ানক গলায় বলে উঠলো

“এখানে কেউ যাতে ডিস্টার্ব করতে না আসে।মুখ বন্ধ রাখতে জতো টাকা দরকার ততোই গেলান।কিন্তু একটুও গড়বড় হলে সেটা আমি মানবো না বুঝেছেন?
এপাশের ব্যক্তি ভয় মিশ্রিত কন্ঠে উত্তর করলো
“আধ ঘন্টা সময় পাবেন।যা করার করুন।বাকিটা আমি সামলে নেবো।
বলেই প্রস্থান নিলো।মায়া পুরো কথা গুলো শুনলো।কিন্তু তার অবোধ মস্তিষ্কে কিছুই ঢুকলো না।
ধীরে ধীরে পায়ের আওয়াজ ভারী হলো।মায়া স্পষ্ট টের পেলো কেউ তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।মুহূর্তেই ভাতের থালা ঝনঝন শব্দে মেঝেতে ঝংকার তুলে নাচতে লাগলো।অধিক ক্রোধে কেউ ছুড়ে মেরেছে তা।মায়া তবুও এক বিন্দু নড়লো না ।সে ঘাপটি মেরেই রইলো।মায়ার এহেন আচরণ মনঃপুত হলো না উপস্থিত মানুষটার।মুখে কপট হাসি ঝুলিয়ে কাঁথা সমেত মায়ার চুলের মুঠি ধরে তুলে বসালো।ব্যথায় কোকিয়ে উঠতে চাইলো মায়া।কিন্তু ইলেকট্রিক শক আর ইনজেকশন এর ভয়ে ঠোঁট টিপে সহ্য করলো।

বিছানা থেকে মায়াকে তুলে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারলো হৃদয়হীন মানুষটা।মেঝেতে হুমড়ি খেয়ে পরে দাঁতের আঘাতে ঠোঁট কেটে ফালি হলো মায়ার।অবুঝ মায়া মুখ চেপে ধরে চিৎকার করে উঠলো
“বাবা সারফরাজ!তোর মাকে মেরে ফেললো এই শয়তান টা।তুই আমায় বাঁচাবি না?
বলেই ছোট বাচ্চার ন্যয় কেঁদে ফেললো মায়া।
মায়ার কান্নায় ক্রোধের পাল্লা তরতর করে বাড়লো হিংস্র ব্যক্তির।সে হাটু মুড়ে মায়ার সামনে বসে শক্ত হাতে মায়ার চিবুক চেপে ধরে হিসহিস করে বলে উঠলো

“তোর ছেলে আমার কতবড় ক্ষতি করেছে জানিস?তোর ছেলে আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে গুঁড়ো গুঁড়ো করে দিয়েছে।কি ভেবেছে তোর ছেলে?আমার সব কিছু কেড়ে নিয়ে চলে যাবে আর আমি বসে বসে আঙ্গুল চুষবো?শোন বুড়ি!এই রুদ্ররাজ কখনো কারো কাছে হারতে শিখেনি।সুবহান চৌধুরীর নাতি আমি।আমার গায়ে কার রক্ত বইছে জানিস তো নাকি?চাইলে এখনই তোকে মেরে টুকরো টুকরো করে তোর ছেলের কাছে পাঠাতে পারি।কিন্তু নো, নেভার।এতো তাড়াতাড়ি তোকে আমি মারবো না।খেলা যে আরো অনেক বাকী।তোর ছেলের সব কিছু আমি কেড়ে নেবো তোকে কব্জা করে।তুই যে আমার তুরুপের তাস মায়া চৌধুরী।উপস সরি,ফুপু মণি।
কথাগুলো বলে কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো রুদ্ররাজ।রুদ্রের ভয়ানক হাসি পাগলা গারদের প্রত্যেকটি দেয়ালে দেয়ালে বাড়ি খেয়ে ভয়ানক গা ছমছমে অনুভূতির সৃষ্টি করলো।রুদ্রের হাসিতে মায়া ভয়ে কুঁকড়ে গেলো।এরপর করুন গলায় বলল

“আমার ছেলেকে মেরো না।ও ছোট,ব্যথা পাবে আমার ছেলেটা।
রুদ্র হাসি থামিয়ে চোয়াল শক্ত করে মায়ার চিবুক আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে উত্তর করলো
“ব্যথা দিবো বলেই তো এতো এতো আয়োজন ডিয়ার ফুপু মনি।নয়তো এতগুলো বছর কেনো বাঁচিয়ে রেখেছি তোমাদের?
রুদ্রের এসব কথায় হিংস্র হয়ে অবুঝ মায়া নিজের হাত দিয়ে চট করে আঘাত করতে চাইলো রুদ্রকে।তার মতে রুদ্র পৃথিবীর সব চাইতে বাজে আর পঁচা লোক।তাই মায়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে রুদ্ররাজ কে সে মেরে ফেলবে।কিন্তু মায়ার হাত রুদ্রের শরীর স্পর্শ করবার আগেই শক্ত করে চেপে ধরে কট করে মায়ার হাতের কব্জি ভেঙে দিলো রুদ্র।অসহনীয় ব্যথায় চিৎকার করে উঠলো মায়া।প্রশস্ত হাতে মায়ার নাক মুখ চেপে ধরে রুদ্র বাঁকা হেসে বলে উঠলো
“হুশ ডোন্ট সাউন্ড,এখনো তো কিছুই করিনি।এখনই এতো কান্না?যেদিন একটু একটু করে গায়ের চামড়া ছাড়িয়ে মরিচ লবন মাখবো তখন?

মায়ার অসহায় নীরব কান্নায় রুদ্রের হাত ভিজে গেলো।তবুও এক ফোটা দরদের সঞ্চার হলো না নির্দয় মনে।ছলছল চোখে ভাঙা কব্জি একবার পরখ করলো মায়া।ফর্সা শীর্ণ হাত খানা মুহূর্তেই ফুলে লাল হয়ে উঠেছে।
নিজের সময় ফুরিয়ে যেতেই উঠে দাঁড়ালো রুদ্র।মায়া আর এক বিন্দু শব্দ করলো না।সে শক্ত চোখে কেমন তাকিয়ে রইলো রুদ্রের পানে।এরপর ক্ষিপ্ত গলায় বলল

“তোকে অভিশাপ দিলাম। সারফরাজ তোকে কুকুরের মতো মারবে।মৃত্যু পূর্বে এক ফোটা জলের আশায় চিৎকার করে আমার ছেলের পা ধরে কাঁদবি।কিন্তু তার বদলে তোর মুখে উষ্ণ রক্ত ভরে দেবে আমার সে।সেদিন তোর এই অহংকার, জেদ, আর হিংস্রতা সবকিছুর পতন ঘটবে।আর তোর এই পতন না দেখা অব্দি আমি মরবো না।
সাধারণ এক বুদ্ধি হীন পাগল মানবীর মুখে এতবড় ধৃষ্টতা মূলক কথা সহ্য হলো না রুদ্রের।শক্ত এক চড় বসিয়ে দিলো মায়ার গালে তৎক্ষণাৎ।চড়ের তোড়ে মেঝেতে পরে জ্ঞান হারালো মায়া।চোখ বন্ধ করার আগে বিড়বিড় করলো
“আমাকে এভাবে অসহায় ফেলে তোমরা কোথায় গেলে কর্নেল সাহেব?

নিথর মায়াকে পায়ে পিষে মাড়িয়ে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বেরিয়ে এলো রুদ্র।গেটে দাঁড়ানো মেন্টাল হসপিটাল ডিরেক্টর কে একটা চেক ছুড়ে মেরে বলে উঠলো
“এমাউন্ট বসিয়ে নিন যতখুশি তত।শুধু মায়া চৌধুরী কে আমার সাথে ক্যালিফোর্নিয়া পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।দু এক দিন এর মধ্যেই সকল ফর্মালিটিস পূরণ করে রিলিজ এর ব্যবস্থা করুন।
ডিরেক্টর মাথা কাত করতেই রাতের আধারে মিলিয়ে গেলো রুদ্র।তার পরের গন্তব্য কোথায় কে জানে?

সারা রাত সারফরাজ এর সাথে প্রেমালাপ করে খুব দেরিতে ঘুম ভাঙলো রূপকথার।সূর্যের তেজী ঝকঝকে কিরনে ঘুম ভাঙতেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো সে।এরপর কাঁথা মুড়ি দিয়ে গত রাতের ভালোবাসা জড়ানো কথা মনে পড়তেই লজ্জায় বালিশে মুখ গুঁজে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বিড়বিড় করলো
“সেইমলেস।

হঠাৎ সময় দেখার তাগিদে কাঁথার ভেতর থেকে হাত বের করে বিছানাময় ফোন খুঁজলো।বালিশের তলা থেকে ফোন বের করে সময় পরখ করে চোখ কপালে উঠলো রূপকথার।শোয়া ছেড়ে কাঁথা ফেলে সে উঠে বসলো ঝটপট।সময় প্রায় দুপুরের কাছাকাছি।আজ ইম্পরট্যান্ট একটা ক্লাস আছে।এটেন্ড না করলে পুরো সপ্তাহের ক্লাস করাই ঘেঁটে যাবে।ফিজিওলজির কঠিন এক অধ্যায় চলছে।হাতে সময় মাত্র এক ঘন্টা।এতো দ্রুত রেডি হয়ে কলেজে যেতে পারবে কি না তা রূপকথা জানে না।কিন্তু তাকে যেতেই হবে।এদিকে নেলির উপর ও চরম রাগ হলো তার।মেয়েটা কি তাকে একটা বার ডাকতে পারলো না?আর শিউলি?সে বা কোথায়?কেউ কেনো আজ ডাকেনি তাকে?বাড়িতে কি মানুষ মরেছে?নাকি বাকী সবাই ও তার মতো বেঘোরে ঘুমুচ্ছে?

মনে নানাবিধ ভেবে ঝটপট ফ্রেশ হয়ে একটা সুতি স্যালোয়ার কামিজ গায়ে জড়িয়ে নীচে নেমে এলো রূপকথা।ড্রয়িং রুমে এসে নেলির নাম ধরে ডাকতেই সামনে বসা সুফিয়ান চৌধুরী কে চোখে লাগলো।আকস্মিক সুফিয়ান চৌধুরী কে দেখে উচ্ছাসের বদলে অবাক ভীত গলায় রূপকথা ডাকলো
“পাপা!
সুফিয়ান স্বাভাবিক গলায় বলল
“আজই শিফট হয়েছি।তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো বলে না বলে চলে এলাম।কিন্তু মনে হচ্ছে খুশি হওনি পাপা কে দেখে।তাইনা?
ক্লাস ভুলে রূপকথা ধীর পায়ে এগিয়ে নিচু গলায় বলে উঠলো
“খুশি হবো না কেনো?এভাবে বলছো কেনো?হুট করে অসময়ে দেখে জাস্ট শকড হয়েছি।আর কিছুই নয়।
কথা বাড়ালো না সুফিয়ান।শুধু কঠিন গলায় বলল

“বাসায় চলো।তোমার মা অপেক্ষা করছে।ব্যাগ পত্র তোমার ফুপা বিকেলে গিয়ে দিয়ে আসবে।
এ বাড়ি ছেড়ে যাবার কথা শুনেই রূপকথার চোখ ছলছল করে উঠলো।ওখানে চাইলেও সারফরাজ এর সাথে প্রতিদিন দেখা করতে পারবে না সে।পুলিশের গার্ড ডিঙিয়ে বাংলোর পাঁচিল ডিঙাতে পারবে না সারফরাজ।আর সারফরাজ কে না দেখে দম বন্ধ। হয়ে মারা যাবে রূপকথা।এই যন্ত্রণার পরিত্রাণ কিভাবে হবে তবে?
ভেতরে ভেতরে জন্ত্রনয় দগ্ধ হয়ে অসহায় চোখে শিউলি, আমজাদ হায়দার, সব শেষে নেলির পানে নজর স্থির করলো রূপকথা।কিন্তু কেউ সেরকম ভাবে তাকে আটকালো না।প্রত্যেকের চোখ মুখ থমথমে।রূপকথার ভয় আরেক ধাপ বাড়লো এবার।সে বুঝলো সারফরাজ এর বিষয়ে নিশ্চিত তার বাবা কিছু জেনেছে।রূপকথা নিভু গলায় বলল
“উপরে আমার ঘর থেকে আমি একটু আসছি বাবা।নেলির সাথে আমার ইম্পরট্যান্ট একটা কথা আছে।
সুফিয়ান কড়া গলায় বললেন
“হাতে সময় কম রূপকথা।অন্যদিন আলাপ করো।বাসায় চলো।
রূপকথা মাথা নিচু করে ঘাড় কাত করে সায় জানিয়ে সুফিয়ান চৌধুরী কে উত্তর করলো
“ঠিক আছে চলো।

প্রায় দুই ঘন্টা ধরে রূপকথার অপেক্ষায় মেডিকেল কলেজ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে সারফরাজ।ভেবে ছিলো রূপকথাকে সারপ্রাইজ দেবে।কিন্তু কুম্ভকর্ণ মেয়েটা আজ কলেজেই আসেনি।আশেপাশে পাগলী সম্বোধন করা নেলি মেয়েটাকেও দেখা যাচ্ছে না।ঠোঁটে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে সারফরাজ মনে মনে বললো
“আজ আসেনি নাকি?কিন্তু কেনো?রাতে তো বলেছিলো ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে।
রূপকথাকে না দেখে আর স্থির থাকতে পারলো না সারফরাজ।পকেট হাতড়ে ফোন বের করে ডায়াল করলো রূপকথার নম্বর।রিং বেজে কল কেটে গেলো।একবার, দু বার, দশ বার।কল তুললো না রূপকথা।
অজানা ভয়,দুশ্চিন্তা সব শেষে রূপকথার কিছু হলো কিনা সেই চিন্তায় সব কিছু ভুলে আমজাদ হায়দার এর বাড়ী অভিমুখে ছুটলো সারফরাজ।স্বচক্ষে দেখা চাই কি হয়েছে রূপকথার।

রাস্তার জ্যাম ঠেলে চল্লিশ মিনিটের ব্যবধানে আমজাদ হায়দার এর প্রকান্ড বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো সারফরাজ।গাড়ি থেকে নামতেই নেলিকে চোখে পরলো।মনে হলো কাউকে বিদায় দেবার জন্য রাস্তা অব্দি এসেছিলো।পিছন মুড়ে নেলি হাঁটা ধরতেই সারফরাজ ডাকলো
“শালী সাহেবা।
সারফরাজ এর অদ্ভুত ডাকে কপাল কুঁচকে পেছনে তাকালো নেলি।আকস্মিক সারফরাজ কে দেখে ভয়ে বুক কেঁপে উঠলো তার।সারফরাজ কে পাত্তা না দিয়ে নেলি আবার প্রস্থান নিতে পা বাড়ালো।সারফরাজ বাঁকা হেসে বলে উঠলো
“যদি পা ই না থাকে কি দিয়ে এমন ঢ্যাঙ ঢ্যাঙ করে হাটবে শালী সাহেবা?
সারফরাজ এর ভয়ানক হুমকিতে পা থেমে গেলো নেলির।সারফরাজ এগিয়ে নেলির সামনে গিয়ে শুধালো
“আমার বাচ্চা জান টা কই?সে ফোন ধরছে না কেনো?বুকের ভেতর তীব্র দহন হচ্ছে সাময়িক বিরহে।
নেলি মাথা নিচু করে ইতস্ততঃ গলায় জবাব দিলো

“মামা ওকে নিয়ে গেছে ভাইয়া।
রূপকথা চলে গেছে শুনে সারফরাজ এর কেমন শূন্যতা কাজ করলো হৃদয় জুড়ে।কিছুটা কম্পিত গলায় শুধালো
“ঠিকানা বলো।
নেলি নিরুপায় হয়ে বলে উঠলো
“মেয়েটার বিপদ বাড়াচ্ছেন কেনো ভাইয়া?মামা সব জেনে গেছে।আমার কাছে কিছুই ভালো ঠেকছে না।আপনি ফিরে যান।

চেকমেট পর্ব ২৯

নেলির কথায় মুহূর্তেই সারফরাজ এর কোমল মুখশ্রী শক্ত হয়ে উঠলো।কপালের নীল শিরা ফুলে চোখ দুটো শিকারি জন্তুর ন্যয় জ্বলে উঠলো।নেলি তা খেয়াল করে বেশ ভীত হলো।সারফরাজ ঠান্ডা গলায় জবাব দিলো
“ফেরার সমস্ত পথ বন্ধ শালী সাহেবা।তোমার মামা চূড়ান্ত ভুল করছেন।আমি বড্ড নির্দয়।শুধুমাত্র রূপকথা ছাড়া সকলের জন্যই আমি পশুতুল্য।মুখোশ পরে থাকতে দাও।আসল রূপ বেরিয়ে এলে কেউ সইতে পারবে না।

চেকমেট পর্ব ৩১