প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২২
অলকানন্দা ঐন্দ্রি
রাহার শরীরটা ভিজে চুপসে গেছে। শরীরের ভাজ স্পষ্ট ঠেকে জামার উপরেই৷ এতক্ষন আঁধারে তা সুস্পষ্ট বুঝা না গেলেও যখনই বাসার আলোতে রাহার শরীরে চোখ পড়ল তখনই এক মুহুর্তে রোহান কোল ছেড়ে নামাল রাহাকে। অতঃপর দ্রুত পা চালিয়ে চলে গেল নিজ রুমে। রাহা এই আচরণের আগা-মাথা কিছুই বুঝে উঠল না। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে সর্বপ্রথম গেল রোহানের মায়ের কাছে।
সে ভেজা শরীরেই! বেশ কিছুটা সময় গল্পগুজব করে ফিরে এল রুমে। আজ এক মাস পর এই রুমটাতে এসেই সে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। রুমে এককোণায় পড়ে থাকা সোফাটা নেই শুধু। বাকিসব ঠিক আছে। রাহা ভ্রু কুঁচকে যখনই জিজ্ঞেস করবে ঠিক তখনই রোহানকে চোখে পড়ল খালি শরীরে। পরনে কেবল একটা তোয়ালে। বুঝা যাচ্ছে মাত্রই শাওয়ার নিয়েছে। পুরুষটার লোমবিহীন বক্ষে ফোঁটাফোঁটা পানি।ভেজা চুলগুলো যখন নুঁইয়ে কপালে পড়েছে তখন এই ছেলেটার প্রতি আকর্ষণ বহুগুণ বাড়ে যেন আরো। রাহা মুহুর্তেই উঁশখুঁশ করতে করতে নজর সরাল। কি বলবে আর মাথাতেই এল না। রোহান ততক্ষনে টিশার্ট জড়িয়ে নিয়েছে শরীরে। হাতে টাউজার নিতে নিতে রাহাকে উদ্দেশ্য করে গমগমে স্বরে বলে উঠল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ এতক্ষন ভেজা শরীরে কি করছিলে? পরে জ্বর বাঁধালে? ”
রাহা ফ্যালফ্যাল আবারও তাকায় রোহানের দিকে। মনে মনে বলে উঠে, সুন্দর দেখাচ্ছে পুরুষটাকে।পরমুহুর্তেই উচ্ছাস নিয়ে হাসে। বলে উঠে,
“ আম্মুকে বলছিলাম কাল সকালে আবার চলে যাব। কয়েকমাস থেকে আবার আসব আপনাদের বাড়িতে। অবশ্য মাঝে মধ্যে একদিন একদিন এসে আম্মুকে দেখে চলে যাব, কি বলুন? আজকে আমার বাচ্চাটাকে রেখে চলে এসেছি আপনার জন্য। কত্ত মন খারাপ করবে আমার বাচ্চাটা। ”
রোহানের মেজাজ খারাপ লাগে। কয়েক মাস থেকে যাবে বলাতেউ তো এই মেয়েকে সে ধরেবেঁধে নিয়ে আসল। রোজ রোজ জ্বালাতন করে নিজেকে রোহানের অভ্যাসে পরিণত করল আর এখন পালিয়ে পালিয়ে বেড়াবে? রোহানের যে অস্থিরতা কাজ করে তা কাকে বুঝাবে? রোহান ছোট শ্বাস টানে। ভ্রু উঁচু করে শুধায়,
“ তোমার বাচ্চা? ”
রাহা উত্তর করল,
“ মানে বায়োলজিক্যালি নয়। বায়োলজিক্যালি মা হতে তো আপনি মত দিলেন না মিঃ রোহান ফারাবী। তবে বায়োলজিক্যলি না হলেও মন থেকে স্নিগ্ধ আমার বাচ্চাই। কি কিউট!। ”
রোহানের মাথা ডুকল সর্বপ্রথম এই কথাটাই যে সে রাহাকে মা হতে সাহায্য করেনি বলেই, বা বাচ্চা পায়নি বলেই এখন হয়তো একটা বাচ্চাকে আদর করার জন্য ঐ বাড়িতে থাকতে চাইছে। রোহান শুধাল,
“ তুমি বাচ্চার জন্য ও বাড়িতে পড়ে আছো?”
পড়ে আছে? পড়ে থাকবে কেন সে? রাহা মুহুর্তেই বলে উঠল,
“ কি আশ্চর্য! আপনি বিষয়টাকে এভাবে দেখছেন কেন। পড়ে থাকব কেন আমি।আমি তো এর আগেও ও বিল্ডিংয়েই থাকতাম আপুর সাথে। ”
“ জানি আমি। ”
“ তো? ”
“ কিছু নয়। ”
রাহা এই পর্যায়ে চুপ থেকে যায়। রোহানও আর উত্তর করে না। তারপর একটা সময় পর রাহার হঠাৎই মনে পড়ে যে সোফাটার বিষয়ে তো জিজ্ঞেস করা হয়নি। রাহা আর প্রশ্নটা দমিয়ে রাখতে পারল না। মুহুর্তে বলে উঠল,
“সোফাটা নেই কেন? কি করেছেন ওটাকে?”
রোহান জবাব দেয় গম্ভীর গলায়,
“ফেলে দিয়েছি।”
“ কেন?”
এবারেও গম্ভীর স্বরে উত্তর আসে,
“ প্রয়োজন দেখছি না ওটার। ”
রাহা এই কথাটা মানতে পারল না। মুহুর্তেই বলে উঠল,
” প্রয়োজন দেখছেন না মানে কি? ওটা কতোটা প্রয়োজনীয় ধারণা আছে আপনার?বিশেষ করে আপনার জন্য। একটা মেয়ের সাথে তো আপনি একই খাটে মানাতে পারবেন না। কি আশ্চর্য! ”
“ সেটা আমি বুঝে নিব। ”
“ তার মানে আপনার এখন একই খাটে ঘুমাতে অসুবিধা হবে না?”
রোহানের মুখ তখনও গম্ভীর! এই মেয়ে এত প্রশ্ন করে কেন? কেন? সে সেভাবে গম্ভীর থেকেই বলল,
“ হওয়ার তো কথা নয়। ”
রাহা মুহুর্তেই প্রতিবাদ স্বরূপ বলে উঠল,
“ কেন কথা নয়? আপনি আপুকে ভালোবাসেন। আমি এটা মানব না। কোনকালেই না৷”
“ না মানলে কিছু করার নেই। ”
রাহা এই পর্যায়েও প্রতিবাদ স্বরূপ জানাল,
“ আপনার কথা যে আমি মেনে নিই? আর আমার বেলায় না মানলে কিছু করার নেই?এসব কি ধরণের অন্যায়? আশ্চর্য! বিয়ের রাতে কত বড়বড় কথা৷ বিয়ের আগে এত শক্তপোক্ত চুক্তি!সব এখন কোথায় হুহ? ”
রোহানের এই পর্যায়ে এই বাচাল মেয়েটির মুখ আঠা দিয়ে বন্ধ করে দিতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু পারল না।গম্ভীর মুখেই বলল,
“ বোধহয় মিসিং। খুঁজে পাচ্ছি না কোথায় চুক্তিগুলো। ”
গম্ভীর মুখে এমনভাবে কথাগুলো বলল যেন কোন সিরিয়াস কথা সে বলে ফেলেছে৷ রাহা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে,
“ মশকারা করছেন? ”
রোহান এবারেও হাসে না। মুখ গম্ভীর রেখে আগের মতোই বলে,
“ একদম নয়। মশকারা করে আমার লাভ কি ? ”
রাহা এই পর্যায়ে ছোটশ্বাস ফেলে। চকচকে চাহনিতে তাকিয়ে বলে,
“ আপনি কি কোন ভাবে সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন মিঃ রোহান ফারাবী? অবশ্য এমন হলে আমি সত্যিই চুক্তি ভেঙ্গে দেখতে পারি। ”
রোহান এই পর্যায়ে বিরক্তি নিয়ে তাকাল। কে বলেছিল তাকে শর্ত স্থির করে বিয়ে করতে? এই মেয়ে যে এভাবে সারাজীবন চুক্তি চুক্তি করবে না তার কি নিশ্চায়তা? রোহান বিরক্ত নিয়েই বলল,
“ সবসময় চুক্তি চুক্তি করো কেন? চুক্তিতে তো এটাও ছিল না তুমি মা হতে চাও। তোমার বাচ্চা লাগবে। বাচ্চার জন্য তুমি অন্যের বাড়িতে মাসের পর মাস থাকবে। তাই না? ”
“ স্নিগ্ধকে আমার মায়া লাগে। তাই থাকব। সমস্যা কি?”
“ আমারও লেগেছিল, তাই বলে কি আমি থেকে গেছি ওখানে মাস কয়েক? ”
রাহা উত্তর দেয়,
“ মাস কয়েক তো থাকিনি। শুধু একমাস। ”
রোহান আচমকাই প্রশ্ন ছুড়ল,
“ একটা বাচ্চা থাকলে তো আর যাবে না তাই না? ”
“ জ্বী ? ”
নিজের মুখ দিয়ে এই প্রশ্নটা যে এভাবে বেরিয়ে যাবে তা বোধহয় রোহান নিজেই বুঝে উঠে নি। রোহান এবার নিজেই প্রসঙ্গ বদলাতে বলর উঠল,
“ নাথিং! ফ্রেশ হয়ে কাপড় বদলে এসো। ”
স্বচ্ছর কোলে তার ছোট্ট বাচ্চাটা। ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে তার দিকে। কিছুটা সময় আগেই সুহার কাছে ছিল। তারপর সিয়ার কোলে! এবং অবশেষে স্বচ্ছর কোলে এসে সে একদম শান্ত বাচ্চার মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। স্বচ্ছ হাসে ছেলের এমন চাহনি দেখে। শ্যামলা মুখটা কি মায়াবী! স্বচ্ছ মুখটা নামিয়ে স্নিগ্ধর মুখে চুমু খায়। ফিসফিস স্বরে বলে,
“ তোর আম্মু কি রান্না করছে আব্বু? চল একটু জ্বালিয়ে আসি। ”
স্নিগ্ধ আগের মতোই গম্ভীর গম্ভীর ভাব ধরে তাকিয়ে থাকল বাবার দিকে। অতঃপর হুট করে একহাতে মুঠো করতে চাইল স্বচ্ছর মুখের দাঁড়িগুলো। আলতো আদুরে হাতে যখন মুঠো করতে পারল না তা তখন দুই আঙ্গুলে চিমটির ন্যায় তা ধরতে চাইল। অতঃপর চিমটি বসালও। স্বচ্ছ তখন ছেলের দিকে তাকায় হতাশ চোখে। শুধায়,
“ বললাম তোর মাকে জ্বালাব, আর তুই আমার দাঁড়ি ধরে টানছিস বাপ? মাকে না জ্বালানোর জন্য? একদম মা ভক্ত না? ”
স্নিগ্ধ সেবারেও ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে ঝাপটে বাবার ঘাড় জড়িয়ে ধরে। নরম তুলতুলে হাতজোড়া যখন ঘাড় অব্দি গেল এবং ছোট্ট শরীরটা যখন বুক ঝাপটে বসে থাকে স্বচ্ছ তখন প্রশান্তির শ্বাস ফেলে। হয়তো বিধাতা তার জন্য তার মেয়েকে রাখেননি, তবে এই যে তার ছেলে? একদম শান্ত, গম্ভীর একটা বাচ্চা! তাকে পেলেই তার হৃদয় শান্ত হয়ে যায়। আদুরে অনুভূতিতে মন প্রাণ ভরে উঠে। স্বচ্ছ তা ভেবে হাসে। ছেলেকে সেভাবে কোলে তুলেই হাঁটা ধরে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যর। অতঃপর সেখানে এসেই দেখা মিলে সুহার। চুলায় চা বসিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভাবছে যেন। স্বচ্ছ পরখ করে। কিছুটা সময় যাওয়ার পর ডাকে হঠাৎ,
“ সুহাসিনী? কিছু ভাবছো? ”
সুহার ধ্যান ভাঙ্গে যেন। হুট করে সতর্ক হয়ে চুলার আগুন নেভায়। বলে,
“ তেমন কিছু নয় স্বচ্ছ।”
স্বচ্ছ তবুও বলে,
” ভাবছিলে। ”
সুহা তাকাল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানাল,
“ ভয় হয় স্বচ্ছ। তিহান যদি আবারও কিছু করে আড়াল থেকে? আমার স্নিগ্ধটা আমার খুব আদরের স্বচ্ছ! ”
স্বচ্ছ এবারে হাসে। ছেলেকে নিয়ে সেভাবে এগিয়ে এসেই সুহাকে জড়িয়ে ধরে। বলে,
” আমি আছি তো সুহাসিনী। এটুকু ভরসা কি আমার উপর করা যায় না ? ”
” কে বলল করিনি? ”
“ আমার থেকে আর দূরে সরো না সুহাসিনী।”
সুহা টলমল চোখে তাকায়। এই পুরুষটার প্রতি কতোটা অবহেলা সে দেখিয়েছিল। এই পুরুষটাকে সর্বদা দূরে দূরে রাখত। কতোটা কষ্ট সে দিয়েছিল এই পুরুষটাকে। অথচ এই পুরুষটা তার থেকে এইটুকুও দূরে সরে নি। এইটুকুও অবহেলা করেনি কোনদিন। সুহা শুধায়,
“ দূরে সরার সুযোগ তো মিলে নি। আপনি তো দূরে সরতে দেননি স্বচ্ছ। ”
সুহা কথাটা বলতে দেরি হলো কিন্তু স্নিগ্ধর ছটফট করে স্বচ্ছর বুকে নিজের অতি গুরুত্বপূর্ণ কার্যটা সম্পন্ন করতে। স্বচ্ছ বুক পেটে তরল এবং উষ্ণ কিছু অনুভব করেই তাকায় ফ্যালফ্যাল করে৷ মুহুর্তেই নিজের টিশার্ট টাউজার ভেজা দেখে বুঝে উঠতে পারে কি হয়ে গেল৷ সে একবার ছেলের দিকে তাকিয়ে পরমুহুর্তেই সুহার দিকে চেয়ে বলে উঠল,
“ স্নিগ্ধ এই প্রথম আমার কোলে থেকে আমার জামা কাপড় ভিজিয়ে দিয়েছে সুহাসিনী। ”
সুহা বুঝে উঠে না প্রথমে। পরমুহুর্তেই প্রশ্ন ছুড়ে,
“ ভিজিয়ে দিয়েছে মানে? ”
স্বচ্ছ দেখিয়ে বলে উঠে,
“ দেখে নাও। ”
কথাটা বলেই আবার স্নিগ্ধর দিকে তাকাল। দুই হাত বাড়িয়ে ধরে সে। কপালে কপাল মিলায়। অতঃপর বলে,
“ ভেরি গুড আব্বু। তুমি এতকাল আব্বুকে তেমন জ্বালাওনি।কিন্তু তাই বলে আজ আব্বুকে হি’সু করার জায়গা মনে করে বসবে?এমনটা করতে পারলি বাপ? ”
সুহা ততক্ষনে হেসে ফেলেছে খিলখিল করে। হাসতে হাসতে যেন পেট ফেটে যাবে এমন ভাবেই সে বলে উঠল,
“ যাক! একবার হলেও এই কার্যটা সে সম্পন্ন করল। ”
স্বচ্ছ তখন মুগ্ধ চোখে নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে। আজ কতকাল পর সুহা এভাবে প্রাণ খুলে হাসছে? আজ কতকাল পর সে তার বউকে এভাবে খিলখিলিয়ে হাসতে দেখেছে সে নিজেও জানে না বোধহয়। সব রং তো প্রায় হারিয়েই গিয়েছিল তার জীবন থেকে। এই স্নিগ্ধটা! এই স্নিগ্ধটা না থাকলে সে তার জীবনের রং ফিরেই পেত না হয়তো!
সিয়া সকাল সকাল বের হয়েছে অজানা গন্তব্যে৷ অতঃপর পা চালিয়ে হাঁটতে লাগল নিজের মতো করেই। আজকাল কিছুই ভালো লাগে না তার। কিছুই না। ছটফট লাগে। অস্থির লাগে। তীব্র এক অস্থিরতা তার মনে ঘুরে বেড়ায় সর্বক্ষণ। সিয়ার কান্না পায় মাঝেমাঝে। এমনটা তার সাথেই কেন হলো? এমন এক পুরুষকে সে মন দিয়ে ফেলেছে যে হয়তো তাকে নিয়ে কোনদিনও ভাববে না। সিয়া জানে সাদ কি অসম্ভব রকম ভালোবাসে রাহাকে। সে ভালোবাসার আংশিকও যে তার কপালে জুটবে না তা বেধহয় সিয়া নিশ্চিত৷ তাইতো ভালোবাসা পাবার আশা সে কোনকালেই রাখে নি। কোনকালেই সাদের থেকে পাল্টা অনুভূতি পেতে সে চায়নি। শুধু একটু দেখা, একটু কথন চেয়েছিল। খুব বেশি তো নয়৷ এই পুরুষটার সাথে কথা না বললে যে তার কি অসম্ভব রকম ছটফট ছটফপ লাগে তা যদি সে একটিবার বুঝত। সিয়া ছোটশ্বাস ফেলে।
আধঘন্টা যাবৎ পথে পথে হাঁটতে হাঁটতে হুট করে সিদ্ধান্ত নিল সাদের কাছে যাবে। সাদ একমাস হলো একটা ব্যাচেলর বাসায় উঠেছে নতুন করে। তাও সিয়াদের এখন থেকে বেশ কিছুটা দূরেই বলতে গেলে। এদিকের সব টিউশনি গুলোও ছেড়ে দিয়েছে। চাইলেও আজকাল সাদের দেখা পাওয়া দুর্লভ। সিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। রিক্সা খুঁজে ঠিকানা বলল। অতঃপর রিক্সা চলতে লাগল সে গন্তব্যে। সিয়া মূর্তির ন্যায় বসে থাকে পুরোটা সময়। কেমন যেন গম্ভীর এক ভাবসাব তার মুখেচোখে। রিক্সা যখন গন্তব্যে এসে পৌঁছাল তখন সে নেমে ভাড়া মিটাল। অতঃপর সাদের যে ঠিকানাটা সে সুহাে থেকে পেয়েছিল সে ঠিকানা অনুযায়ী ঐ বিল্ডিংটায় গেল। পা বাড়িয়ে দোতালায় গিয়ে কোন দরজায় কড়া নাড়বে বুঝ উঠে না। তিন তিনটা বাসা৷ এখানে ব্যাচেলরটা কোনটাতে থাকে সে তে জানে না। অনেকক্ষন ভেবে সে বাম দিকে দরজাটাতেই সর্বপ্রথম টোকা দেয়। অতঃপর দরজা খুলে এক হ্যাংলাপাতলা যুবক।গলায় এখনও তোয়ালে ঝুলছে। মুখে এখন ব্রাশ। বোধহয় গোসলে যাচ্ছিল। সিয়া ছোটছোট চোখে তাকিয়ে বলল,
“ এটা ব্যাচেলরদের বাসাটা? ”
ছেলেটা সাতসকালে সুন্দরী যুবতী মেয়ে দেখে উৎসুক হয়ে তাকাল। উচ্ছাস নিয়ে বলল,
“ হ্যাঁ, হ্যাঁ। কেন?”
সিয়া ছেলেটার উৎসাহে আগ্রহ দেখাল না। গম্ভীর গলায় বলল,
“ আপনার রুমমেট কোথায় ভাইয়া? ”
ছেলেটা হতাশ হলো। দাঁতে ব্রাশ চালাতে চালাতে বলল,
“ সোজা ভাইয়া?”
সিয়া যা জানতে চাইল তার উত্তর না দেওয়াতে অসন্তোষ নিয়ে চাইল সে। বলল,
“ আপনার রুমমেইট কি বাসায় আছে? থাকলে একটু ডেকে দিন। ”
ছেলেটা কপাল কুঁচকেই তাকাল। মেয়েটা বড্ড বেরসিক। একটা সুন্দর ছেলে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটু হাসতে টাসতে পারে নাকি?কিন্তু কেমন যেন গম্ভীর গম্ভীর জবাব। ছেলেটা এবার বলল,
“কার কথা বলছো মেয়ে? ”
অপরিচিত একটা মেয়েকে তুমি বলাতে যদি সিয়া একটু বিরক্তই হলো তবুও শুধাল,
“ সাদ ভাই। চিনেন? ”
ছেলেটা গদগদ হয়ে উত্তর করল,
“ হু। কিন্তু ও তো এই সময় বাসায় থাকে না। তুমি বরং রুমে এসে বসো। ”
“ এই সময়ে কোথায় থাকে? ”
“ সে তো আমি জানি না। থাকে কোথাও। বলে তো যায় না। তুমি এসো, বসতে পারো কিছুটা সময়। ”
সিয়া কপাল কুঁচকে তাকায়। একা একটা ব্যাচেলর বাসায় বসাটা কতোটা অযৌক্তিক তা সে জানে। ছেলেটা কি জানে না? শক্তস্বরে বলে,
“ না। ”
ছেলেটা হাসে। সিয়ার দিকে যেন কেমন করে তাকায়। ঠোঁট এলিয়ে হেসে বলে,
“ আচ্ছা। তোমার চোখজোড়া কিন্তু খুব মায়াবী। তোমার নামটা কি জানা যাবে? ”
সিয়ার বিরক্ত লাগে এবার এই ছেলেটা। দৃষ্টিও ভালো লাগে না। শক্ত গলায় বলে,
“ না। ”
ছেলেটা এবারেও হেসে বলে,
“ যায়হোক তোমার নামটাও নিশ্চয় তোমার মতোই সুন্দর হবে। ”
সিয়া চলে যাওয়ার জন্য বলে,
“ আসছি আজ। ”
“ এই না, কিছুক্ষণ থেকে যাও না। সাদ চলে আসবে হয়তো এক্ষুনি। ”
“ আপনাদের বাসার নিচে অপেক্ষা করব, আসলে দেখা হয়ে যাবে ওখানে। ”
এটুকু বলে যখন চলে যাওয়ার জন্য পিছু ঘুরতে নিবে ঠিক তখনই এক পুরুষালি কন্ঠ কানে এল,
“সিয়া? তুমি এখানে? ”
সাদ এসেছে আরেকটু আগেই। এতক্ষন তার রুমম্যাট আর সিয়ার কথোপকোতন শুনছিল। সাথে ছেলেটার চোখের দৃষ্টি। সাদের মেজাজ খারাপ লাগে। কে বলেছিল মেয়েটাকে এখানে আসতে? জানে না ব্যাচেলর বাসায় ছেলেপুলে থাকবে? সিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়৷ সাদকে দেখেই নিরব চাহনি ফেলে। অতঃপর শুধায়,
“ হ্যাঁ, আপনার সাথে দেখা করতে এলাম। কেমন আছেন সাদ ভাই? ”
সাদ উত্তর দিল। শুধু মুখ টানটান করে তাকায় সিয়ার দিকে। ততক্ষনে সাদের রুমম্যাটটা এসে দাঁড়াল তার পাশে। একটা হাসি দিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে সাদকে ইশারা দিয়ে বলল,
“ কে মামা? গার্লফ্রেন্ড নাকি? দেখতে কিন্তু মিষ্টি! ”
সাদ এই কথাটার উত্তর করল না। তাকাল ও না ছেলেটার দিকে। শুধু টানটান স্বরে সিয়াকে বলে,
“তোমার এখানে আসা উচিত হয়নি। বাসায় যাবে এক্ষুনি। ”
সিয়ার যেতে ইচ্ছে হয় না। প্রিয় পুরুষটাকে বহুদিন পর দেখার সুযোগ মিলেছেে।বহুদিন পর!এত তাড়াতাড়ি যেতে ইচ্ছে হয়?বলে,
“আরেকটু থাকি? আপনাকে দেখি না বহুদিন।”
সাদ এই পর্যায়েও রুক্ষ্ম স্বরে জবাব দেয়,
“আমাকে দেখাটা গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় নয়।”
সিয়ার চোখ টলমল করে এবারে। সাদের দিকে অভিমানী দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই তাকায়। বলে,
“ সাদ ভাই? ”
প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২১
সাদ চোখ রাঙ্গিয়ে তাকাল যেন। ধমক স্বরূপ বলে,
“ বললাম না বাসায় যেতে? কথা কি কানে নাও না তুমি? ”
সিয়ার সত্যিই এবার যেন কান্না পেয়ে যাবেে।কিন্তু নিজেকে স্থির করে বলল,
“ যাচ্ছি। ”
এটুকু বলে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নামল সে। মনে মনে শুধু শুধাল, “নিষ্ঠুর! আপনি বড্ড নিষ্ঠুর সাদ ভাই।”