মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ১৮
মির্জা সূচনা
রাত ১ টা। ঘরে নিঃশব্দে বই পড়ছে মেহবুবা, আর পাশে মেহরিন চুপচাপ ফোনে ফেসবুক স্ক্রল করছে। মাঝে মাঝে চোখের কোণে এসে থেমে যাচ্ছে একেকটা কবিতা, একেকটা চেনা ছায়া।
হঠাৎ মেহবুবা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়—
আচ্ছা, মেহু… তুই কি কবি সাহেবকে ভুলে গেছিস?
প্রশ্নটা একেবারে নরম, কিন্তু তীরের মতো এসে বিঁধল মেহরিনের বুকে।
ওর আঙুল থেমে যায় ফোনের স্ক্রিনে, চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।
এক মুহূর্ত চুপ থেকে মেহরিন গলা শক্ত করে বলে ফেলে—
ও আমাকে ভুলে যেতে পারলে, আমি কেন ওকে মনে রাখবো?
মেহবুবা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে বোনের দিকে। মেহরিন চোখ নামিয়ে ফেলে।
অভিমানে, রাগে, কষ্টে মনটা গুমরে ওঠে।
মনে মনে বলে,
ভুলে গেছো তুমি বলেই
আমি ভুলে যেতে চাই
তবু মনের কোণে,
চুপিচুপি তোমার ছায়া এসে দাঁড়ায়…
এই কথাগুলো যেন বাতাসে ভেসে বেড়ায়। মেহরিন মুখ ফিরিয়ে ফেলে পাশের বালিশে মুখ লুকিয়ে ফেলে। বাইরে রাত গভীর, আর ভেতরে এক মেয়ের মনে চলতে থাকে নিঃশব্দ এক যুদ্ধ।
মেহবুবা একটু চুপ থেকে আবার মুখ তোলে, মুচকি হেসে বলে,
— তাহলে কি কবি সাহেবকে ভুলে মনটা রিদ ভাইয়াকে দিয়ে দিলে?
মেহরিন একটু চমকে তাকায় বোনের দিকে, চোখ দুটো ঝাপসা। নিঃশ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে বলে—
— তেমন কিছু না… রিদ ভাইয়াকে আমি সম্মান করি। উনি আমার আশে পাশে আসলে আমার বুকটা কেমন যেন ধুকপুক করে, ভয় লাগে, আবার একটা আশ্রয়ের মতোও লাগে। কিন্তু এটা ভালোবাসা— না, ওরকম ভালোবাসিনি।
একটু থেমে ফিসফিস করে যোগ করে,
— ভালোবাসা তো… কেবল একবারই হয়, তাই না?
মেহবুবা গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেহরিনের দিকে, আর বুঝতে পারে— মেহরিন যতই না বলুক, তার মনের অলিগলিতে আজও একটা কবির ছায়া লুকিয়ে আছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাত প্রায় দুই টা। নিঝুম ঘরে ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে অচেনা এক বেদনায় ডুবে ছিল মেহরিন। মেহবুবা পাশেই গল্পের বই হাতে আধো ঘুম আধো জাগরণে।
হঠাৎ করেই দূর কোথাও থেকে ভেসে এলো গিটার ছেঁড়ার মৃদু সুর… আর সেই সুরের সাথে মিশে এক কণ্ঠ—
একটা চেনা গলা… একটা চেনা অনুভব…
শুধু একটি লাইন—
“তোমাকে ছোঁয়ার নেইতো আমার সাধ্য
দেখতে পাওয়া সেই তো বড় ভাগ্য ”
মেহরিন এক লাফে উঠে বসে, বুক ধকধক করতে থাকে।
— মেহবুবা ***কবি সাহেব…!
মেহবুবা ভয় পেয়ে উঠে বসে, চোখ কচলাতে কচলাতে বলে,
— পাগল হয়েছিস? ওনার তো কোনো খোঁজই নেই সে কতদিন ধরে! কবি আসবে কোথা থেকে?
কিন্তু মেহরিন যেনো শোনে না কিছুই। তার চোখে এক ধরনের উন্মাদনা, আবেগ আর অদ্ভুত এক আলো।
— মেহবুবা, এটা কবি… আমার মন বলছে… কবি সাহেব এখানেই আছে! আমার পাশেই কোথাও…
সে উঠে জানালার দিকে ছুটে যায়, পর্দা সরিয়ে তাকায় দূরে অন্ধকারে ভেসে আসা সেই গানের সুরের দিকে। চোখ ভিজে ওঠে, কিন্তু ঠোঁটে অদ্ভুত এক হাসি।
— তুমি এসেছো, না কবি? আমি জানতাম তুমি ভুলোনি…
মেহরিন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে, সুরটার উৎস বোঝার চেষ্টা করছিল। বুকের ভেতরটা ধুকপুক করছে, হাত কাঁপছে। আবেগে-উত্তেজনায় কখন যেন চোখ ভিজে গেছে। সে ধীরে ধীরে নিজের ফোনটা তোলে, এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে খুঁজে বের করে সেই নাম্বারটা—
“কবি সাহেব”
মেহরিনের এক্সিডেন্ট এর আগে শেষ কথা হয়েছিল, তারপর আর কোনো যোগাযোগ নেই। তবুও নাম্বারটা মোছে না… মন থেকে যেমন মুছে যায়নি সেই মানুষটা।
মেহরিন থমকে থাকে কিছুক্ষণ… তারপর আঙুল কাঁপতে কাঁপতে টাইপ করতে থাকে_
আপনি এতটা পাষাণ কেন কবি সাহেব?
হৃদয়ে ভালোবাসার বীজ গেঁথে দিয়ে কোথায় হারিয়ে গেলেন কবি সাহেব?
এক মুহূর্ত… তারপর “Send” বাটনে ক্লিক করতে গিয়ে থেমে যায় মেহরিন।
মেহরিনের চোখে জল চলে আসে, আঙুলে ভর দিয়ে টাইপ করা সেই আবেগভরা মেসেজটা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
মনে মনে ভাবে—
এতদিন পরও আমি এতটা কাঁপছি কেন? ও তো ভুলেই গেছে আমাকে… আমার ওই কবি সাহেব তো আমায় ফেলে রেখেই চলে গেছেন। আমি কেন লিখছি? কেন অপেক্ষা করছি?এতদিন তো একটা খোঁজ নেয়নি আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি?
আচমকা অভিমান আর রাগে ফোনটা এক ঝটকায় বিছানায় ছুঁড়ে দেয়।
না, আমি কেন SMS পাঠাবো? আমি কি ওর কিচ্ছু ছিলাম? ও যদি ভুলে গিয়ে সুখে থাকে, আমিও ভুলে যাব। — কাঁপা কাঁপা গলায় বলে মেহরিন।
পাশ থেকে মেহবুবা তাকিয়ে থাকে বোনটার দিকে। চোখে কষ্ট, কিন্তু কিছু না বলে চুপ করে বইটা বন্ধ করে পাশে এসে বসে।
একটা নীরবতা ঘিরে ধরে ঘরটা—
একদিকে ভালোবাসার না বলা অভিমান,
আর একদিকে হৃদয়ের গভীরের অপেক্ষা।
ঘরটা তখনো নিস্তব্ধ। মেহরিন কাঁধ নামিয়ে বসে আছে, চোখের কোণে শুকনো অভিমান জমে আছে ঠিক যেনো জমে ওঠা মেঘ।
ঠিক তখনই—
টিং!
ফোনে একটিমাত্র শব্দ, কিন্তু যেন পুরো পৃথিবীটা কেঁপে উঠল মেহরিনের কাছে।
কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা তোলে সে। স্ক্রিনে ভেসে ওঠে সেই নামটা— “কবি সাহেব”।
আবারও সেই চেনা ঝড় বুকের ভিতর।
মেসেজটা খুলে পড়ে:
“খুব অবাক হচ্ছি, তুমি ভাবলে আমি তোমাকে ভুলে গেছি? এটা কীভাবে সম্ভব, আরিওনা?
তুমি তো আমার অস্তিত্বে মিশে আছো।
হ্যাঁ, কিছুটা দূরত্ব রেখেছিলাম নিজেকে… কারণ আমি দেখতে চেয়েছিলাম, আমি হঠাৎ হারিয়ে গেলে তুমি তখনও আমাকে মনে রাখো কি না, নাকি আমার অবর্তমানে কাউকে জায়গা দিয়ে ফেলো আমার জায়গায়।
মেহরিনের বুকের ভিতরটা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে—
চোখ দুটো জলে ভরে উঠেছে, মনে মনে বলছে কবি সাহেব কি করে ভাবলো আমি তাকে ভুলে যাবো, তার জায়গা আমি অন্য কাউকে দিয়ে দিবো?আমার তো মনে হতো কবি সাহেব আমাকে আমার থেকেও বেশি চেনে! এই চিনলো আমাকে কবি সাহেব? কিন্তু মুখে হাসির এক চিলতে রেখা,
যেনো কোনো হারিয়ে যাওয়া প্রিয় শব্দ ঠিক ঠিক ফিরে এসেছে— বহুদিন পর।
মেহবুবা তার দিকে তাকিয়ে বলে,
কে মেসেজ করেছে?
মেহরিন ফিসফিস করে শুধু একটাই কথা বলে—
“কবি সাহেব…”
অন্ধকার ঘর, কেবল ফোনের নরম আলো মেহরিনের মুখটা আলোকিত করছে। চোখে জল, তবুও ঠোঁটে এক গভীর প্রশান্তি।
সে হাতের কাঁপুনি সামলে ধীরে ধীরে টাইপ করে—
আমি তো আপনার জায়গা কাউকে দিইনি, কবি সাহেব…আপনার জায়গায় কেউ কখনও আসতেও পারবে না।”
মেসেজটা পাঠিয়ে দেয় সে।
মাত্র কয়েক সেকেন্ড পেরোয়, আবার ফোনে টিং—
আরও একটা মেসেজ।
নিশব্দ রাতের আঁধারে, চোখে জ্বলে স্মৃতির দীপ্তি,
রাজ মেহেরিনদের পাশের বাড়ির ছাদে আকাশের তারা গুনে গুনে লিখে ফেলে তার অনুভব—
“অপেক্ষা”
তোমায় দেখার আশায় প্রতিদিন সূর্য ডুবে যায়,
অভিমানের গহীনে জ্বলতে থাকে অজস্র কথার ছায়া।
হয়তো তুমি জানো না, তবুও জানোই বোধহয়—
এই হৃদয়ের প্রতিটা স্পন্দনে শুধুই তোমার নামই বাজে।
আমি অপেক্ষা করি,
ঠিক সেই বিকেলের মত
যেদিন তুমি সমুদ্রের ঢেউ ছুঁয়ে হাসতে হাসতে বলেছিলে—
জানো? এই জিনুকটা তোমার মতোই,
নরম, মায়াবি, কিন্তু হারিয়ে যাওয়া সহজ!
তখনই আমি জেনে গেছিলাম—
আমি হারাতে পারি নিজেকে,
কিন্তু তোমায় নয়।
তাই আজও আমি দাঁড়িয়ে আছি,
তোমার দৃষ্টি ফেরানোর অপেক্ষায়—
হয়তো কোনো এক ভোরে তুমি ফিরে তাকাবে,
আর বলবে—
“তুমি তো ছিলে, ঠিক পাশেই…”
রাত গভীর। জানালার ফাঁক গলে চাঁদের আলো এসে পড়েছে বিছানার ওপরে। মেহরিন ফোনটা হাতে নিয়ে বসে আছে—কান্নায় তার চোখ ভিজে গেছে। মনে হচ্ছিল বুকটা যেন চুপচাপ একটা বেদনার বোঝা নিয়ে চেপে বসে আছে। ঠিক তখনই ফোনটা আবার কাঁপে। নতুন এসএমএস।
“কান্না কোরো না পাখি…”
“তোমার কান্না যে তোমার কবির সহ্য হয় না…”
মেহরিনের বুকটা কেঁপে ওঠে।
“যার মন খারাপ থাকলে কবি হাসতে ভুলে যায়, সে যদি কান্না করে—তবে কবি পাগল হয়ে যায় পাখি…
তোমার চোখের জল কারো হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়।
তুমি যদি জানতে… যদি একটু বোঝতে,
তবে কোনোদিন কান্না করতে না…
তুমি জানো না, এই পৃথিবীতে কেউ একজন নিঃশব্দে
তোমার প্রতিটা অশ্রুবিন্দু বুকের মধ্যে জমিয়ে রাখে…”
মেহরিন নিঃশ্বাস ফেলল।
তার চোখ দিয়ে নেমে আসা অশ্রুগুলো হঠাৎ করেই যেনো আর নিজের মনে হলো না।
এ যেনো কারো হৃদয় স্পর্শ করে ফেলা চিঠি,
যার প্রতিটা অক্ষরে ছিল কষ্ট, ভালোবাসা আর একটা না-বলা স্বীকারোক্তি।
সে ফোনটা বুকের ওপর রেখে ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে বলল—
“আপনি জানেন না কবি সাহেন, আমি কখনো আপনাকে ভোলার চেষ্টা করিনি… শুধু বুঝিনি যে আপনি না থেকেও থেকে গেছেন।”
মেহরিনের মনে যেনো কেমন সুখ সুখ লাগছে,কত রাত যে মেহেরিন ঘুমায়নি তাও ছাড়া কেউ জানে না।কাউকে বুঝতে দেয়নি মেহেরিন ও যে প্রতিনিয়ত কবি সাহেবের অপেক্ষা করত। কতবার যে আনমনেই চোখ ভিজে উঠেছে এটা ভেবে যে কবি সাহেব কি সত্যিই ভুলে গেছে আমায়। মেহরিনের মতো একটা শক্ত মানুষ ও গুমরে মরেছে ভিতরে ভিতরে না দেখা এক মানুষের জন্য। যাকে সে চেনে না জানে না দেখেনি পর্যন্ত তাও সে মানুষ তার কবিতা দিয়ে ছুয়ে দিয়েছে মেহরিনের মন। বাড়ির সবাই মেহরিনের মন খারাপ এ কষ্ট পেতো তাই তো সবার সামনে হাসি মুখে থাকতো।কিন্তু ও নিজেই জানে সে কত টা মনের পিড়ার উপর দিয়ে গেছে। মেহরিনের কিশোরী জীবনে কখনো কোন প্রেমের সম্পর্কে জড়াইনি আর না তো কোনো ছেলে বন্ধু বানিয়েছে। মেহরিনের জীবনে বাবা আর ভাই এর পড়ে যে পুরুষ আসেছে যাকে ও অনুভব করে সে কবি সাহেব।
হটাৎ করেই মেহরিনের মনে একটা প্রশ্ন জাগে আর সাথে অভিমান ও হয় যদি কবি সাহেব আবার হারিয়ে যায়। মনের প্রশ্ন মনে চেপে রাখতে না পেরে মেহরিন এসএমএস করে কবি সাহেব কে।
মেহরিনের মেসেজ:
আপনি আবার হারিয়ে যাবেন না তো, কবি সাহেব? ভালোবাসার গল্পে আমি শুধু পাঠিকা থেকে যাবো না তো? আপনি তো শব্দে আবেগ আঁকেন,আমার চোখের ভাষা পড়বেন তো কখনো?
মেসেজটা পাঠিয়ে মেহরিন এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। অভিমান জমে থাকা চোখ দুটোয় জল চিকচিক করে উঠল।
কিছুক্ষণ পরেই কবির জবাব আসে। সেই চিরচেনা গভীরতায় মোড়ানো কবিতার—
রাজের উত্তর:
*”হারিয়ে যাওয়া সাধ্য ঢ়ে আমার নেয়,
আমি তো তোমার চোখের পাতায় গেঁথে থাকা নীরব কবিতা।
যেদিন আমার চোখ বন্ধ হবে চিরতরে, আমি তবেই হারিয়ে যাবো
তুমি পাঠিকা নও—
তুমি সেই পৃষ্ঠা,
যেখানে আমি প্রতিটা লাইন লিখি নিঃশব্দে ভালোবেসে।
তুমি যদি প্রশ্ন হও,
আমি আজীবন উত্তর হয়ে থাকবো—
হারিয়ে নয়,
তোমার হৃদয়ের পাতায় বেঁচে থেকে।
জানালা দিয়ে চাঁদের আলো পড়ছে মেহরিনের মুখে। চোখে জল নেই, শুধু একরাশ প্রশান্তি—যেন এক দীর্ঘ অপেক্ষার উত্তরের আশ্বাস পেয়ে গেছে মনটা। সে ফোনটা বুকে চেপে ধরে ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি।
পাশ থেকে মেহবুবা চুপচাপ তাকিয়ে ছিল বোনটার দিকে। হালকা হেসে উঠে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে—
“আল্লাহ্, আমার বোন তো প্রেমে পড়ে পুরা লাড্ডু হইয়া গেছে! যে ছেলেরে কোনোদিন সামনে দেখে নাই পর্যন্ত । অথচ এই মেয়েটাই উল্টাপাল্টা কোন কিছু বলে ছেলেদের পিটাই। ছেলে পিটাতে পিটাতে এই মেয়ে এক ছেলেকে না দেখেই প্রেমে উল্টে পড়ে গেলো?
তার কণ্ঠে বিরক্তির অভিনয়, কিন্তু চোখে-মুখে একটুখানি আনন্দ আর একটা প্রশ্রয়… কারণ সে জানে—এই প্রেমটা শুধুই আবেগ না, বরং এক নিঃস্বার্থ ভালোবাসা যা না দেখেও হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। মেহবুবা তোর বোনকে খুব ভালোবাসে মেহরিন এর জন্য হাসতে হাসতে জীবনটাও দিয়ে দিতে পারে মেহবুবা।
রাত গভীর। চারপাশ নিস্তব্ধ। মেহরিন ঘুমিয়ে পড়েছে জানালার পাশে মুখ করে ফোনটা বুকের কাছে জড়িয়ে। চোখে অশ্রুর দাগ শুকিয়ে গেছে, মুখে হালকা প্রশান্তির ছায়া। চাঁদের আলো এসে পড়েছে তার ঘুমন্ত মুখে।
আর সেই মুখের দিকেই ছাদের পাশ থেকে দুরবিনে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে রাজ। চোখে এক ধরনের প্রশান্তি, এক ধরনের আবেগ—যেটা শব্দে বলা যায় না।
ঠিক তখনই পাশ থেকে একটা “ঠাস করে!” শব্দ।
“ও মা গো! খা খা আমায় চুশে চুশে খা আমায় গুলে গিলে খা!”—লাবিব চিৎকার করে একটা মশা মারল নিজের গাল আর এই গান বলছে।
রাজ নড়ে না, চোখ এখনও দুরবিনে।
হালকা বাতাসে পর্দা নড়ছে, আর তার বুকের মধ্যে ধুকপুক করছে। মেহরিন ঘুমিয়ে পড়েছে, ফোনটা বুকের ওপর। ঘুমন্ত মুখে এক অদ্ভুত শান্তি, যেনো রাজের সব কবিতা এখন শুধু ওই মুখেই সীমাবদ্ধ।
হঠাৎ পেছন থেকে কচকচ শব্দ।
“আরে মশার ছানারা রে!” — বলে একটা ঝাঁজালো থাপ্পড় নিজের গালে বসায় লাবিব।
আবার কি হলো ? — রাজ নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে।
“কি হবে! ব্রো প্রেম করছো তুমি, আমি তো করিনি! কিন্তু কামড় খাচ্ছি আমি! এইখানে আর একটু থামলে আমার হেমোগ্লোবিন শেষ!
রাজ ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি এনে বলে,
তুই বুঝবি না লাবিব… ওকে এভাবে চুপচাপ দেখার মধ্যেই একরকম শান্তি আছে। সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।
শান্তি! মশা কামড়াচ্ছে আর তুমি শান্তি খুঁজতে বেস্ত বাহ বাহ! আপনার প্রেমের জন্য আমি গিনিপিগ হইছি?” — লাবিব মুখে কষে এক গালি দেয় মনে মনে।
ব্রো, একটা কথা বলি? এই যে দুরবিন নিয়ে চাঁদের মত করে মেয়ে মানুষ দেখছো, তারে যদি কাল দেখি তোমার গালে চড় মারতেছে, আমি কিন্তু হাই ফাইভ দিব!
রাজ মৃদু ধমকে বলে,সেট আপ স্টুপিড চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক নয়তো লাথি দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দিবো।
গলার সর একটু ধীরে করে বলে,
মশা কামড় দিক, কিন্তু সে যেনো কষ্ট না পায়… এইটাই চাই।
সরি ব্রো! তুমি পেইন নিও না, তুমি বরং ভাবিকে দেখো! আর আমি এখানে মশার বারবিকিউ বানাচ্ছি!” — লাবিব গজগজ করতে করতে আবার একখানা মশা মারে।
শেষে মুখ নিচু করে বলে,
ব্রো, প্রেম তুমি করছো, আমি একা কেনো মশার কামড় খাবো মশার কামড়টা সমান ভাগে নাও প্লিজ…”
রাজ হাসে একটু।
লাবিব কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশে হাটে এখন মূলত রাতকে তার বিরক্ত লাগছে। একটা মানুষ প্রেমে পড়লে কি পরিমান পাগল হয়ে যায় তারা আজকে না দেখলে বুঝতেই না।
লাবিব বলে ব্রো , ভাবি তো ঘুমায়ে গেছে। চলো, আমরাও যাই ঘুমাই। কাল তো মিটিং আছে।
রাজ চুপ।
লাবিব হালকা বিরক্তিতে:
“রাজ শিকদার যে মানুষ মারতে দুইবার ভাবে না, সেই কিনা একটা মেয়ের জন্য ***
এটুকু বলতেই দেখে রাগ তার দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে আছে… লাবিব শুকনো ঢোক গিলে কেবলা হাসি দিয়ে বলে
না মানে ভাবি.. ভাবি.. ভাবির জন্য মশার কামড় খাচ্ছে! আর আমাকে খাওয়াচ্ছে! এটা কী জাতি মেনে নিবে ব্রো?
রাজ মাথা নিচু করে একটুকু হাসে।
লাবিব মনে মনে বলে,
মুখটা একটু বন্ধ রাখ লাবিব নয়তো কথা বলার জন্য মুখটা আর থাকবে না। তোর সামনে স্বয়ং যেমন দুধ দাঁড়িয়ে আছে। তুই জানিস না কত ছেলে শুধু ভাবি দিকে তাকিয়েছে বলে ওদের চোখ হারিয়েছে।আর তুই কিনা মেয়ে, মেয়ে করছিলি, জীবনের মায়া থাকলে মুখটা বন্ধ রাখিস।
রাজ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
ভালোবাসা মানে শুধু পাশে থাকা না… কখনও দূর থেকেও আগলে রাখা।
লাবিব মুখ বেঁকিয়ে মনে মনে বলে:
হ, আপনি আগলে রাখেন, আর আমি মশা ঠেকাই। যেদিন মশা কামড়ে আমার ডেঙ্গু হবে, সেদিন আপনার প্রেমের কবিতা ছাপাব ‘চিকিৎসা জার্নালে’।
রাজ এবার এক চোখ তুলে তাকায়।বলে কিছু বললি ?
লাবিব দুদিকে মাথা নাড়ে যার মানে সে কিছু বলেনি।
রাজ হেসে ফেলে।
রাত অনেক। চাঁদের আলো ছাদে যেন রুপোলি ধোঁয়ার মতো ছড়িয়ে আছে। দূরে কোথাও কুকুরের হালকা ডাকে নিস্তব্ধতা খানিকটা চঞ্চল। রাজ এখনও তাকিয়ে আছে মেহরিনের ব্যালকনির দিকে, আর পাশে দাঁড়িয়ে আছে বেচারা লাবিব—প্রেমের সাথী না হয়ে যেন কষ্টের সহযাত্রী!
লাবিব বলে:
ব্রো, একটা কথা জিজ্ঞেস করি? বিয়ে করবা কবে?
রাজ এক চোখ তুলে তাকায়, ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি—
“খুব তাড়াতাড়ি।”
লাবিব তো হাঁ হয়ে যায়:
আল্লাহ! তাহলে এই সুখবর আগে দেও নাই কেন? ভাই বিয়েটা তাড়াতাড়ি করেই ফেলো! তোমার এই প্রেম নামক অত্যাচার আমি আর নিতে পারছি না!
কণ্ঠে যেন হাঁপ ধরা ক্লান্তি,
তিনটা বছর! শুনছো? তিনটা! কখনো বৃষ্টিতে ভিজেছি, কখনো রোদের মধ্যে জ্বলেছি। কখনো মশার কামড়ে কাঁদছি, কখনো ভাবির দিকে তাকানো ছেলেদের মারতে গিয়ে উল্টা আমি নিজেই মার খাইছি! আমি ক্লান্ত ব্রো, ক্লান্ত!
বলতে বলতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। চোখে পানি নেয়,চোখে একটা গুতা দিয়ে পানি আনলো। সাথে একটু থুতুও লাগিয়ে দিল চোখে যেন পানি বেশি মনে হয়।
তারপর হঠাৎ পাশ ফিরেই দেখে, রাজ তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।
লাবিব ঠোঁট কামড়ে:
“মানে… মানে ভাই, আমি তো শুধু বলতেছিলাম… আপনার প্রেমে আমি সহযোদ্ধা ছিলাম, তাই একটু আবেগে বলেই ফেললাম… আপনার রাগী চোখ কিন্তু খুব ভয়ংকর লাগে ভাই… এক্কেবারে ‘ভাবি’-প্রটেকশন মোড অন হয়ে যায়!”
রাজ চুপচাপ তাকিয়ে থাকে, ঠোঁটে হালকা কিন্তু গভীর হাসি।
“ওর মুখে হাসি রাখতে পারলে, সব কিছু মিষ্টি লাগে লাবিব…”
লাবিব মুখ টিপে হাসে।
আপনি প্রেম করেন আর কামড় আমি খাই… এইটাই প্রেমের সংজ্ঞা হলে, আমি ভবিষ্যতে কাউরে ভালোবাসুম না। সারা জীবন সন্ন্যাসীহয়ে বনবাসে ঘুরবো। আমার আত্মা এখনও মশা মারতেছে!
রাজ আর লাবিব বাড়ি ফিরে ফজরের আজানের কিছুক্ষণ আগে।লাবিব রিতীমত ব্ল্যাকমেল করে নিয়ে গেছে বাসায়, বলে ব্রো তুমি কি চাও আমার সন্তানরা বাবার ভালোবাসা না পাক।আমি যদি ডেঙ্গু হয়ে মারা যায়! তাহলে আমার সন্তানদের কি হবে? ওদের কথা চিন্তা করে হলেও এখন বাড়ি চলো।
সূর্যের আলো জানালার পর্দা ছুঁয়ে মেহরিনের ঘরটাকে একটুকু সোনালি রঙে রাঙিয়ে দিলো। আজ সকালটা যেন একটু আলাদা। ঘুম থেকে উঠেই একটা হালকা হাসি খেলে গেলো ওর মুখে। খুব জোরে না, কিন্তু মন থেকে।ফজরের নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে ছিলো মেহরিন।
বালিশের নিচে রাখা ফোনটা হাতে নিয়ে চোখ রাখলো স্ক্রিনে। তারিখটা দেখে হালকা ভাবনাচিন্তা করলো…
“আজ তো ক্লাস আছে… কিন্তু… না, আজ একটু নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে ইচ্ছা করছে।”
চুমকিকে কল দিলো,
“চুমকি… আজ ভার্সিটি যাচ্ছি না। তুই পারলে আমার বাসায় আয়। আজকে আমরা দুজনে মিলে একটা অন্যরকম দিন কাটাবো।
চুমকি অবাক হলেও রাজি হলো,
তোর মন ভালো দেখছি আজ! আমি আসছি… শাড়ি পড়ে আসবো? আজকে কি সেলিব্রেশন?”
“না রে, আজ শুধু আমি আমার মতো করে থাকবো। তুই আয়, বাকিটা তোকে এসে শুনিস।
মেহরিন হালকা লিপ বাম দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়, আর নিজেকে দেখে মনে মনে ভাবে—
“অনেক হয়েছে কান্না, আজ আমি হেসে দেখাবো—ভালোবাসা শুধু কষ্টের জন্য না।
একটা সুন্দর দিনের সূচনা হলো।
চুমকিকে কিছুক্ষণ পরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কল দিলো রাহি কে। ওপাশে রাহির হাসিখুশি গলা—
হ্যালো মেহু ম্যাডাম … কী রে এখন কল দিলি যে মেহু আপু? আজকে তুই ক্লাসে যাসনি?
“না রে, আজ মনটা একটু অন্যরকম করছে। ভাবলাম সবাইকে নিয়ে একটা ছাদ-বিলাস করি। তুই যদি নুপুকে নিয়ে আসিস, তাহলে তো পুরাই জমে যাবে!
রাহি এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বললো,
বাবা আজ দেখি মেহু ম্যাডামের মন খুবই ভালো ব্যাপার কি? প্রেমে প্রেমে পড়লি নাকি ?চলে আসব আমি নুপুর কে নিয়ে।
মেহরিন হেসে বলে,
**”আজকে শুধু মজা আর গল্প—না কবিতা, না কান্না, না কেউ অনুপস্থিত। আজ শুধু আমরা আর ছাদের আকাশ।
ফোন কেটে দিয়ে মেহরিন একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে। যেন নিজেকেই বলছে,
“আজ আমি হারিয়ে যেতে চাই না… আজ আমি ফিরে পেতে চাই সেই আমিটাকে—যে হেসে উঠতে জানে মন থেকে, কাউকে দেখানোর জন্য মিছে মিছে হাসি নয়।
বাড়িটার চারদিকে যেন উৎসবের হাওয়া। ছাদে বাতাসে ওড়ছে মেহরিনের ওড়না, মুখে একরাশ হাসি। রাহি, নুপুর, চুমকি—সবাই এসে গেছে, আর ওদের সঙ্গে আজ আছে মেহবুবাও। কলেজে না গিয়ে আজ একদিন বোনটার পাগলামিতে সঙ্গ দিয়েছে।কেউ জানুক আর না জানুক মেহেবুবা তো জানে মেহেরিন আজ কেন এত খুশি।
নিচ থেকে ভেসে এলো মায়ের ডাক—
“বাচ্চারা, গরম গরম বিরিয়ানি রেডি! সবাই এসে খেয়ে যাও!”
চুমকি এক লাফে উঠে বলে,
উফ মামনি তো পুরা রত্ন! আজ বিরিয়ানি! আহা, এমন দিন যদি রোজ আসতো!
নুপুর গন্ধ শুঁকে চোখ বন্ধ করে বলে,
খালি গন্ধেই প্রেমে পড়ে গেলাম! খাওয়ার পর তো প্রেমে হাবুডুবু খাব!
রাহি হাসতে হাসতে মেহরিনের কানে কানে ফিসফিস করে বলে,
“তুই ঠিক করেছিস রে আজ না গিয়ে। আজকের তোর হাসিটা… পুরনো সেই মেহরিনকে মনে করিয়ে দিল। তোর এক্সিডেন্টের পর থেকে তো তুই কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলি।
মেহরিনের চোখে একটুকরো আলো জ্বলে ওঠে। মৃদু হেসে বলে,
সেই হাসিখুশি দেখানোর জন্যই তো তোদের আসতে বললাম।
মেহবুবা ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে ওদের তাকিয়ে দেখে। হালকা হেসে ভাবে—
আমার বোনকে যে প্রেমের ভুতে ধরেছে রে! সে হারিয়ে গিয়েছিল বলেই তো এমন হয়ে গিয়েছিল, প্রেমিক আবার ফিরে এসেছে তাই তার হাসিখুশিও ফিরে এসেছে।
আর তখনই নিচে থেকে মা আবার চিৎকার করে ডাকে—
আর কতক্ষণ গল্প করবি? খেতে আয়! বিরিয়ানি ঠান্ডা হয়ে যাবে!
বিরিয়ানির থালা গুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। হাসি, আড্ডা, গল্পে ভরে গেছে পুরো বিকেলটা। সবাই এখন মেহরিনের ঘরে জড়ো হয়ে বসে আছে। জানালার পাশ দিয়ে নরম বাতাস ঢুকছে, ছড়িয়ে দিচ্ছে একটুকরো সন্ধ্যেবেলার কোমলতা।
হঠাৎ রাহি চঞ্চল গলায় বলে উঠল,
“তোমরা জানো, চুমকি আপু আর মেহরিন আপু কী সুন্দর নাচে! আজ আবার একটা পারফরম্যান্স হয়ে যাক না!”
নুপুর সঙ্গে সঙ্গে তালি দেয়,
“হ্যাঁ হ্যাঁ! আমি ক্যামেরা অন করে রাখছি, আজকের নাচ রেকর্ড হবেই!”
মেহরিন হেসে চুমকির দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি রে, আবার ফাঁদে পড়লাম বুঝি?”
চুমকি চোখ টিপে বলে,
“ফাঁদ হোক আর যাই হোক, আজকে নাচ হবেই!”
মেহরিন দাঁড়িয়ে পড়ে, দুই হাত কোমড়ে রেখে হাসতে হাসতে বলে—
“তাহলে নিয়মটা শুনে নাও—নাচ হবে, তবে একা একা না! আজ সবাই নাচবে।”
রাহি এক লাফে বলে—
“আমি তো আগেই রেডি! প্লেলিস্ট দাও, সাউন্ড বাড়াও!”
নুপুর মোবাইল স্পিকারে গান ছেড়ে দেয়—একটা বাংলা গান কোমর দুলাইয়া বিছা ঝুলাইয়া *****
উদ্দাম তাল, হাসির ঢেউ।
মেহরিন আর চুমকি শুরু করে দারুণ এক ফোক ফিউশন নাচ। হাসতে হাসতে তাদের সঙ্গে একে একে যোগ দেয় রাহি, নুপুর, এমনকি মেহবুবাও!
মায়ের গলা ভেসে আসে—
“এই মেয়ে, বাসা না সিনেমা শুটিং হচ্ছে?সব নায়িকা দেখে আমার বাড়িতে এসে হাজির। এত এত নায়িকা কে আমি কোথায় রাখবো? কেউ যদি জানে আমার বাড়িতে তো নায়িকার আগমন ঘটেছে! বাড়ির ভিতর যে নায়কদের আনাগোনা বেড়ে যাবে!
সবার হেসে কুটিপাটি অবস্থা, আর সেই হাসির মাঝেই চলতে থাকে তাদের নাচ, যেন কয়েকটা মন আজ সারাদিনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে, ভালোবাসার ছন্দে ভেসে বেড়াচ্ছে।
এক বিকেলের আলোর নিচে, সুর আর নাচে ভরা ছোট্ট একটা উৎসব—মেহরিনের ঘরে, মেহরিনদের হৃদয়ে।
ঘরভর্তি হাসি, মিউজিকে তাল মিলিয়ে চলছে নাচ। মেহরিন, চুমকি, রাহি, নুপুর—সবাই যেন আজ বাঁচতে ভুলে যাওয়া ছেলেমানুষিটাকে আবার ফিরিয়ে এনেছে।
আর ঐ দূরে, পাশের বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে রাজ! একহাতে ড্রোনের রিমোট, আরেক হাতে কফির মগ। ড্রোনটা নিঃশব্দে উড়ে বেড়াচ্ছে মেহরিনের বারান্দার চারপাশে, ক্যামেরা ফোকাস ঠিকঠাক। রাজ চুপচাপ দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছে—মেহরিনের চুল উড়ছে, সে হাসছে, সে নাচছে। সময়টা যেন থেমে গেছে তার জন্য।
রাজ মূলত মিটিং শেষে মেহরিনকে এক নজর দেখতে এসেছিল কারণ জানতে পেরেছে আজ মেহেরিন ভার্সিটি যাইনি তাই মূলত এক নজর দেখতে আসা।
কিন্তু রাজ কল্পনা করতে পারেনি ওরা সবাই মিলে নাচছে।
পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা লাবিব ড্রোনের মনিটরে চোখ রেখে আচমকা বলে উঠল,
“ব্রো, ওরা যে ভাবে কোমর দুলাচ্ছে… আমি তো চিন্তায় আছি, এই বুঝি কোমরের নাট খুলে পড়ে যায়!”
রাজ ধপ করে লাবিবের পিঠে একটা চাপড় দিল, চোখে রাগী কিন্তু চাপা হাসির ঝিলিক—
“তুই যদি আর একবার এরকম কথা বলিস, তোরও কোমর খুলে দেবো আমি”
লাবিব কাঁধ চেপে হেসে বলল,
মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ১৭
“ব্রো, আমি তো ভাবছিলাম আপনি রাজ শিকদার, গম্ভীর, মারকুটে! কিন্তু আপনি যে প্রেমে পড়ে কোমরের চিন্তায় ড্রোন উড়াচ্ছেন, এইটা জাতি জানলে আপনি গেলেন!
রাজ এবার একটুখানি হেসে বলে,
“চুপ কর, ভেতরে চল। না হলে ড্রোনই তোর মাথায় নামিয়ে দিবো বিয়াদপ!”
আর দূরে… বারান্দায় হাসতে হাসতে ঘুরছে মেহরিন, ঠিক তখন ড্রোনটা তার চুলে আলতো বাতাস তুলছে—আর রাজের চোখে সেই দৃশ্যটাই যেন তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কবিতা।