প্রেমঘোর পর্ব ১৯

প্রেমঘোর পর্ব ১৯
নার্গিস সুলতানা রিপা

নৌশিনের বাড়িতে এতো রাতেও মেয়ে আর জামাই কে নিয়ে নানা আয়োজন চলছে’…………..প্রায় সাড়ে বারো টার দিকে ওরা বাসায় পৌছায়……….সাদাদ সবার সাথে কথা বলে….নৌশিন বাসায় ঢুকে সবার সাথে দেখা করে সোজা নিজের রোমে ছুটে যায়-সাদাদকে ড্রয়িং রোমে রেখে একাই চলে যায় রোমে…সাদাদ কিছুটা ইস্ততবোধ করে..কারণ আজ দ্বিতীয় বার সে এ বাড়িতে এসেছে…..এনগেজমেন্টের দিন আর আজকে….নৌশিনের এভাবে ওকে রেখে যাওয়া ঠিক হয় নি……সাদাদকে নৌশিনের বড় ভাই বসতে বলে…..

টুকটাক কথা বলতে থাকে….নৌশিনের বিয়েটা ওদের গ্রামের বাড়ি ভালুকা থেকে হয় তাই এই বাড়িতে মেহমান নেই বললেই চলে…সবাই ভালুকাতেই জয়েন করেছিলো বিয়ের দু-তিন আগে থেকেই…নৌশিনের বাবাও একমাত্র মেয়ের বিয়েতে সব লোক জড়ে করেছিলো….শুধু নৌশিনের মামা মামী আছে এই বাড়িতে আর প্রাপ্তির বয়সী একটা মামাতো ভাই…বোন নিজের রোমে একা ঢুকে পড়েছে তাই নৌশিনের ভাই সাদাদের সাথে কথা বলে কোনো রকম সৌজন্য বোধ বজায় রাখছে আর কি-সে তো আর শালা নয় যে মজা করবে সমন্ধি সর্ম্পকে তাই যত টা সম্ভব কথা বলা যায়…নৌশিনের ভাবী,মা,কাজের মেয়ে,মামী সবাই সাদাদের জন্য ব্যস্ত হয়ে রান্না ঘরে ঢুকে কাজ চালায়…..নৌশিনের ভাবী ড্রয়িং রোমে আসলে ওর ভাই ইশারা করে নৌশিনকে ডেকে দেওয়ার জন্য……
নৌশিনের ভাবী সাথে সাথে নৌশিনের রোমে যায়……..

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নৌশিন আয়নার সামনে বসে চুল খুলছে-ওর ভাবী মাথায় টুকা মেরে বলে….”কি রে গাধী,সাদাদকে একা রেখে এভাবে রোমে পড়লি কেন??ওকে নিয়ে আসবি তো নাকি??”
“ও মা….সাদাদ একা আসতে পারবে না নাকি??যে আমি নিয়ে আসবো..”
“আরে..প্রথম বার শশুড় বাড়িতে এসে কি একা একা কেউ বউয়ের রোমে ডুকে??তুই আনবি তো….বেচারা সবার সামনে আনইজি ফিল করছে বোধহয়……”
“ও কি মেয়ে যে আনইজি লাগবে সবার সামনে…..”
“পাগলী শুধু মেয়েদেরি আনইজি লাগে না ছেলেদেরও লাগে….চল ওকে নিয়ে রোমে আয়…তারপর ফ্রেস হতে বল ওকে..”

“আচ্ছা,দাঁড়াও চুল টা আগে খুলে নিই…কালকেও স্প্রে করা হয়েছিলো আর আজকেও…চুল শেষ আমার এই দুই দিনে……ভাবী একটু হেল্প করো কত ক্লিপ খুলতে পাচ্ছি না..”
“তোর যা চুল নষ্ট হলেও এক গাদা রয়ে যাবে…তাই চিন্তার কোনো কারণ নেই”
…..দুজনে মিলে চুল টা খুলে…..তবুও দশ মিনিটের মতো লেগে যায়….চুল খোলার পর নৌশিনের চুল গুলো একদম হাঁটুর কাছে পড়ে যায়…..
“নে এবার যা…সাদাদকে নিয়ে আয়…”
…নৌশিন তাড়াতাড়ি করে ড্রয়িং রোমে যায়….নৌশিনকে এভাবে দেখে সাদাদ ‘থ’ হয়ে গেছে…চুলে আগে স্প্রে করার জন্য চুল গুলো ফুলে আছে…আর অনেলক্ষণ বাধাঁ ছিলো খুলে ফেলায় এলোমেলো হয়ে আছে…এভাবে কোনো দিন দেখা হয় নি নৌশিনকে সাদাদের…..দেখে মনে হচ্ছে কোনো হুর নেমে এসেছে জান্নাত থেকে…..সাদাদের চোখ আটকে যায় নৌশিনের এই রূপে…..

সাদাদ ভাবছে ‘এতটা অসাধারণ রূপ হতে পারে একটা মেয়ের……কি রে!!’
…সাদাদের ভাবনার অবসান ঘটে নৌশিনের বাবার কথা শোনে…….
“মা যাও জামাই কে নিয়ে তোমার রোমে যাও…..”
“বাবা সাদাদ,অনেক রাত হয়েছে যাও ফ্রেস হয়ে নাও…তারপর হালকা কিছু খেয়ে রেস্ট নাও”
“কি বলছো বাবা??সাদাদ যে পরিমাণ খেয়ে আসলো একটু আগেই তিন দিন না খেলেও চলবে ওর…”
…..সাদাদ আবার বড়দের সামনে ইতস্ত বোধ করলো নৌশিনের কথায়-যতই হোক নতুন শশুড় বাড়ি…আগে এক বার এসেছিলো তখন তো আর বিয়ে টা হয় নি,তাই শশুড় বাড়ি আসাও বলা চলে না সেটাকে……..
“এই থাম….কি বলছিস এই সব”(নৌশিনের বড় ভাই)

“ভাইয়া।।।নৌশিন ঠিকি বলছে আমি প্রচুর খেতে ভালোবাসি আর আজকে প্রচুর পরিমাণ খেয়ে আসলাম…এক ঘন্টাও হয় নি খেয়ে এসেছি….আজ আর কিচ্ছু খেতে পারবো না আমি”(সাদাদ)
“আচ্ছা…খাবে কি খাবে না সেটা পরে দেখা যাবে আগে ফ্রেস হও…. প্রায় একটা বেজে যাচ্ছে….”(নৌশিনের ভাবী)
“কি হলো নৌশিন!সাদাদকে নিয়ে যা,তুই ও ফ্রেস হয়ে নে……..”

….নৌশিন সাদাদ কে নিয়ে রোমে যায়…..যতক্ষণ যায় সাদাদ ততক্ষণ ই নৌশিনের একটু পেছনে থাকে…নৌশিন আগে যেতে বললেও যায় নি…কারণ সামনে থাকলে নৌশিনের এমন চুলগুলো ওর নজর এরিয়ে যাবে…রোমে ঢুকেই সাদাদ দরজা লক করে দেয়….রোম কেমন বা রোমে কি আছে সেটার দিকে একবারও চোখ যায় নি সাদাদের….দরজা লক করেই পেছন থেকে নৌশিনের হাত টা ধরে ফেলে হাঁটু গেরে বসে পড়ে ফ্লোরে….সাদাদ হঠাৎ পেছন থেকে হাত ধরে ফেলায় নৌশিন সাদাদের দিক ফিরে…ঘোরার সময় নৌশিনের চুলগুলো সাদাদের মুখে বারি খায়…শুধু বারি খাওয়ার সময়টাতেই সাদাদ প্রাণ ভরে চুলের গন্ধ নেয় নেশা লাগে যায় সেই গন্ধে…নৌশিন পেছন ফিরে দেখে সাদাদ হাটু গেরে বসে…

“এ মা…কি হলো???”(নৌশিন)
“জানি না কি হলো……”(সাদাদ)
…নৌশিন দ্বিতীয় কোনো প্রশ্ন করার আগেই সাদাদ ওর হাতে আলতো করে কিস করে……নৌশিনের কেন জানি এই ছোঁয়া তে অন্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করে….সাদাদ নৌশিনের মুখের দিকে তাঁকায়…….”আমি কোনো দিন হুর দেখি নি…শুধু জানি জান্নাতবাসী পুরুষরা নাকি হুরের অধিকারী হবে….আমার পরকালে আমি জান্নাত পাবো কি না জানি না তবে আমার এই জীবন টাকে একটা জান্নাতের মতোই মনে হয়…শুধু মনে হয় না আমার ইহকালে আল্লাহ সত্যিই আমাকে জান্নাতের সুখ দিচ্ছেন…আর এই জান্নাতে তুমি আমার প্রাপ্ত হুর…..ইহকাল পরকাল দু কালেই এই হুর চাই আমার……”…….কথা শেষ করে আবারও চুমু আঁকে দেয় হাতে…নৌশিন নির্বাক একদম শুধু সাদাদকে দেখে যাচ্ছে……

“থাকবে তো সারা জীবন আমার হুর হয়ে???নিজের সবটা দিয়ে আগলে রাখবো,ভালোবাসবো হ্যাঁ সাথে একটু জ্বালাবোও…..থাকবে???”(সাদাদ)
…..নৌশিনের এই মুহুর্তে পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে…এতটাই সুখ যার ভাষা স্বরূপ চোখে জল এসে যায়…ঠোঁটের কোণে হাঁসি আর চোখে জলরেখা নিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় থাকবে……সাদাদ উঠে দাঁড়িয়ে এমন ভাবে নৌশিনকে জড়িয়ে ধরে যেন হাজার বছরের পুরনো প্রেম আবার ফিরে পেয়েছে-নৌশিনও জড়িয়ে নেয় সাদাদকে……..নৌশিন এতসুখ আর ধরে রাখতে পারছে না-উপচে পড়ছে চোখের পানি হয়ে…………সাদাদের কোর্ট ভিজে যাচ্ছে…..সাদাদ নৌশিনকে সোজা করে নেয়…দুগালে হাত রাখে নৌশিনের চোখের পানি বাঁধ মানছে না……..সাদাদ আঙুল দিয়ে আলতো করে চোখের পানি মুছে দেয়………”কাঁদছো কেন??”(সাদাদ)
“জানি না….এসে গেছে…..”(নৌশিন)

….নৌশিনের চোখে আবার পানি এসে যায়…সাদাদ আলতো করে নৌশিনের কপালে ভালবাসার পরশ দেয়….”অনেক আগেই কিন্তু আমি কথা দিয়েছিলাম…”
“আমি জানি তো…..”
“তাহলে আজকে আবার কেন জানতে চাইলে???”

প্রেমঘোর পর্ব ১৮

“আজকে যে নতুন রূপে দেখলাম……আমার হুর কে প্রত্যক্ষ করলাম……আগে তো সাধারণ নারীর প্রেমে পেরেছিলাম আজ তো এক হুুরের প্রেমে পড়েছি”
….আবারও আকড়ে নেয় দু জন দুজনকে…..সব সুখেরাও আজ মনে হয় হিংস্বে করছে সাদাদ আর নৌশিনের সুখ দেখে…………..

প্রেমঘোর পর্ব ২০