এলিজা পর্ব ২১+২২
Dayna
প্রিয় মামি,
কেমন আছো,হয়তো ভালো। তোমার চিঠি পেয়েছি আজ ১০ দিন। উত্তর দিতে পারিনি।জানতে চেয়েছো আমি কেমন আছি,।আমি খুব ভালো আছি।ভালো শাশুড়ি পেয়েছি,।শশুর পেয়েছি একজন বাবার মতন।ননদ আমার ভারি মিষ্টি।
সারাদিন বউ মনি বউ মনি বলে মাতিয়ে থাকে, বাকি রইলো
আমার মহারাজা, তার কথা বলতে শুরু করলে, কলমের কালি শেষ হয়ে যাবে, পৃষ্ঠা শেষ হয়ে যাবে, তবুও তার প্রশংসা শেষ হবে না।
সে যে আমার রাজ্যের মহারাজা,
আমি যে, তার রাজ্যের মহারনী, আমি যে তার ম্যাডাম।দেখতে দেখতে কেটে গেলো সংসার জীবনে অনেক দিন, ভালো কাটছে দিনগুলো।
,, তোমাদের কথা অনেক মনে পরছে,
মামি শরীরের যত্ন নিবে মামা,পাখির খেয়াল রাখবে
ইতি তোমার,
আদরের এলিজা,,
প্রিয় দুষ্টু মিষ্টি বোন আমার,,
সেদিন, তোর চিঠি পেয়েছি, চিঠিতে তোর একটা কথা আমাকে ধুমরে মুছরে দিয়েছে,,
**বাক্যটি ছিল এমন**
বড় বোন হয় মায়ের পরে দ্বিতীয় ছায়া,
আব্দার পূর্বনে হয়,অধুরী,
বড় বোন যে মায়ের পর দ্বিতীয় মা-্আর আজ সেই মা যে গহিনো দূরে খুব একা লাগছে আপু ফিরে এসো তুমি**
তোকে ছাড়াও আমি ভালো নেই,তোর বাহানা,তোর দুষ্টুমি সারাদিন পরোক্ষ করি।
শরীরের যত্ন নিবে, ভালো ভাবে পরিক্ষা দিবে,, আর মাত্র ৩ বছর তারপর মেট্রিক পরীক্ষা।এই সময়টা ভালো ভাবে কাজে লাগাতে হবে।মনোযোগ সহকারে পরাশুনা করতে হবে।
মামি মামার দিকে খেয়াল রাখবে,,
ইতি
তোমার দ্বিতীয় ছায়া**
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ছাদে বসে আছে অপূর্ব, শ্রাবন।
শ্রাবন বললো,
ভাবছি বিদেশে আর যাবো না।
এখানেই তোর সাথে থেকে যাবো।, তুই পুলিশ লাইনে আছিস আমাকেও কোন একটা চাকরীর ব্যবস্থা করে দে। তাছাড়া তুই এস,আই , আমি কনস্টেবল তো হতে পারবো।
অপূর্ব : আমার কোন আপত্তি নেই যা ভালো মনে হয় তাই কর।
শ্রাবন হেসে বললো,
বউমনি কিন্তু হেব্বি।
অপূর্ব :সামলে ,ঠিক আছে সে আমার রানী,একদম নজর দিবী না।
অপূর্ব :আজকে রাতে সূর্য,,ওর বাসাতে দাওয়াত দিয়েছে।ওর আজকে জন্মদিন।
তুই ও চল আমার সাথে ,,পলাশ,হিমেল, সূর্য,মিদুল সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো।
শ্রাবন :এক মিনিট তোর বন্ধু, রায়হান এর কথা বললি না।
রায়হান এর কথা শুনতেই অপূর্ব, অজানা কোন চিন্তায় তলিয়ে যায়,,অজানা কোন বেথা তার হৃদয়ে ঝড় তুলে।
অপূর্ব আকাশের দিকে তাকিয়ে ভারি একটা দ্বির্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
আমার বন্ধু আমার জন্য জান্নাতে অপেক্ষা করছে ।লুকোচুরির খেলায় সে যে জিতে গেছে।
শ্রাবন থমকে যায়,,
শ্রাবন অপূর্বর দিকে পরোখ করে ভাবলো,বন্ধুত্বের মায়াও যে এত স্নিগ্ধ হয় ,, আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টিকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না।
শ্রাবন :চল সূর্যের বাসায় যাই!
অপূর্ব :তার আগে আমার ম্যাডামের অনুমতি নিতে হবে।
অপূর্ব শ্রাবন নিচে চলে আসলো। এলিজা কে এদিকে সেদিন খুঁজলো।মনোরা কে উদ্দেশ্যে করে বললো,
এলিজা, কোথায়? দেখতে পাচ্ছি না।
মনোরা বললো,রান্না ঘরে !
অপূর্ব :বাড়িতে এত মানুষ থাকতেও এলিজা কে ই কেন রান্না করতে হবে।
গোলাপি রঙের শাড়ি পরে, চুল গুলো বেনুনি রত অবস্থায়,উল্টো দিকে ঘুরে ,, রান্না করছে এলিজা।
ওহে ম্যাডাম বলেই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
, সারাদিন কি কাজ করো তুমি হা খুঁটিনাটি খুঁটিনাটি,, করতেই হবে । বাড়িতে এত মানুষ।
এলিজার হাত টা ধরলো।হাতের উল্টো দিকে চুমু খেয়ে,বললো,
দাগহীন অঙ্গে,আগুনের তাপ পরতে দিও না।
এলিজা বললো,
মেয়েদের রান্না করাটাও একটা সুন্দর্য,
অপূর্ব বললো,
ম্যাডাম, সূর্য ওর বাসাতে আমাদের দাওয়াত দিয়েছে ।
আমাদের মানে?
শ্রাবন কে নিয়ে যাবো সাথে,।
এলিজা : আমার অনুমতি নেয়ার কি আছে, গেলেই তো পারতেন।
অপূর্ব : আমি আমার জীবনের, প্রতিটা অক্ষে, পরক্ষে, নিঃশ্বাস এও আপনার অনুমতি চাই কারন আপনি যে আমার ম্যাডাম।
আমি আপনাদের বন্ধুত্ব কে সম্মান করি। সময় কাটিয়ে আসুন ভালো লাগবে।
এলিজার কপালে চুমু খেয়ে বললো,আসি তাহলে। বলেই অপূর্ব বেড়িয়ে যায়।
সূর্যর আজকে ২৭ তম জন্মদিন,
বাসাতে ছোটখাটো আয়োজন।
সকলের সাথে শ্রাবনের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।
কেউ কেক আনছে তো ,কেউ নাচতে,
নিলুফা- বেগম অনেক রকম খাবার তৈরি করছে।
কয়েক,প্রহর কেটে গেলো ।
সবাই নাচ গান করে ক্লান্ত।
সূর্য তৎখানিক বললো,তোরা থাক , আমি তোদের জন্য একটা জিনিস নিয়ে আসছি।
অপূর্বর সূর্যর ভাব ভঙ্গি,মা ভালো লাগেনি।
বলেই বাহিরে চলে যায় সূর্য।
অপূর্বর সন্দেহ হওয়াতে সূর্যর পিছু নিলো।
কালো একটা হুডিযুক্ত জ্যাকেট,,পরনে, কালো বুট।কি অদ্ভুত দেখাচ্ছে সূর্য কে।
আমি কি এটা ঠিক করছি।নিজের বন্ধুকে সন্দেহ করছি।
সূর্য অধির দ্রুত পায়ে হেঁটে যাচ্ছে। কিছুদূর গিয়ে একটা বাইক নিয়ে তিলকনগরের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে। অপূর্বর খটকা লাগলো। সূর্য তিলকনগরের দিকে যাচ্ছে কেন? সূর্য যেদিক যাচ্ছে সেদিক তিলকনগর।
অপূর্ব ভাবনা ছেড়ে একজন বাইকারের কাছ থেকে লীপ নেয়।
বেশ অনেক ক্ষন এর ব্যবধানে পৌঁছে যায় তিলকনগর। ঢাকা থেকে তিলকনগরে দূরত্ব অনেক টা।
সূর্য বাইক থেকে কিছু টা দূরে নেমেছে।
সূর্য বাইক রেখে তিলকনগরের দিকে হাঁটতে শুরু করে।
অপূর্ব দুরত্ব বজায় রেখে অনুসরণ করলো।
সূর্য হেটেই যাচ্ছে হেটেই যাচ্ছে ।কিছুক্ষণ পর পর থমকে দাড়ায়, এদিক সেদিক পরোক্ষ করলো কেউ আছে কিনা।
অপূর্ব লুকিয়ে পরে।
আবার হাঁটতে শুরু করে। সূর্য যে পথে এগোচ্ছে,অপূর্ব তা দেখে ,আদমরা হয়ে যায়। শরীর থেকে ঘাম ঝরতে থাকে। , চারদিকে নির্ঝন হাওয়া বইছে,কালো ধোঁয়া ধেয়ে আসছে।
কিছুদূর হেঁটে থমকে দাড়ায় সূর্য।
অপূর্ব একটা গাছের পিছনে লুকিয়ে পরে।
চারপাশে পাতাবিহীন বড় বড় কাছ। চাঁদনী আলোয় চারদিক টা আলোকিত হলেও, কোন এক অজানা কালো ধোয়ায় চারদিক অন্ধকার হয়ে আছে।
সূর্য কিছুদূর যেতেই ,, পকেট থেকে কিছু একটা বের করে ।বের করে এদিক সেদিক তাকায়।
অপূর্ব,, চোখ গুলো বড় বড় করে দেখছে, এ কোন সূর্য,, কি তার আচরণ, কি লুকিয়ে আছে ওর মধ্যে।
সূর্য কিছুটা সামনে গিয়ে, একটা কব,রের সামনে দাড়ায়।
হাতে যেটা ছিল,সেটা আর কিছু নয় একটি গোলাপফুল ,,
গোলাপ ফুলটি কব,রের পাশে রেখে দিলো —–
কার কব,রে ফুল দিলো,, তাও কেন এত রাতে,,
কেন এই তিলকনগর–এ
কি করছে সূর্য কি লুকাচ্ছে ,,
চারদিক নিশ্চুপ কি যেন কি হবে।অন্ধকার রাত যেন কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
দূর দূরে শেয়াল ডাকছে। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। নিস্তব্ধ পরিবেশ।
সূর্যের অদ্ভুত আচরন অপূর্ব কে ভাবাচ্ছে।কি লুকোচ্ছে সূর্য?গিয়ে কি জিজ্ঞেস করবো এখানে কি করছিস।নাকি আমাকে ভুল বুঝবে আমি ওর পিছু নিয়েছি বলে।
কি করবো আমি কিছু মাথায় আসছে না।
সূর্য কবরের উপর ফুলটা রেখে দিয়ে,তাতে কিছু মাটিও দিলো।মোনাজাত ধরে
বিড়বিড় করে কিছু বললো। অপূর্ব অঝরে ঘামছে। সূর্য কে আজ খুব অজানা লাগছে।
এভাবে এক প্রহর দুই প্রহর কেটে যায় অনেক প্রহর।
রাত প্রাই ১টা নাগাদ।
সূর্য বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করলো।
পরনে কালো জ্যাকেট, হুডি দিয়ে মাথাটা ঢেকে রেখেছে, বার বার চারপাশে চোঁখ বুলিয়ে দেখছে, কেউ আছে কিনা।
অপূর্ব গাছের আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে সূর্যর কর্মকাণ্ড পরোখ করছে। অপূর্ব মনস্থির করলো, সূর্য কি লুকোচ্ছে তা জানতেই হবে।
সুর্য , যেতেই পেছন থেকে সূর্যর বা, কাদের,উপর কেউ হাত দিলো।
সূর্য থমকে দাড়ায়।
জ্যাকেট এর পকেট থেকে পিস্তল টা বের করেই ,পেছনে ঘুরেই তাক করতেই দেখে অপূর্ব।
চট করে সূর্যর হাত থেকে পিস্তল টা পরে যায়।
অপূর্ব ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,কি করছিস তুই ?এখানে এত রাতে, একা একা, কি লুকোচুরি খেলছিস?,কার কব’রে ফুল দিয়েছিস?,,কি হচ্ছে এসব।
সূর্য এদিক সেদিক পরোক্ষ করলো। অপূর্বর উপস্থিতির জন্য সূর্য প্রস্তুত ছিল না।যা সূর্যর মুখের ভাষায় প্রকাশ পাচ্ছে।
সূর্য ভারী কন্ঠস্বর নিয়ে,খিল খিল করে হেসে উঠে।এ এক অদ্ভূত হাঁসি।
এই হাসির পিছনে লুকিয়ে আছে যেন অগনিত রহস্য।
সূর্য কাট গলায় বললো,বাহ বাহ বাহ,, চমৎকার ।আজকে আমাকে এমন দিন দেখতে হচ্ছে,, যে,কিনা, আমার প্রানের চেয়েও প্রিয় বন্ধু সন্দেহ করছে,অনুসরন করছে।
অপূর্ব: কথা না ঘুরিয়ে বল কি হচ্ছে এখানে,, কেন এসেছিস এখানে? বল আমাকে!
সূর্য কিছুক্ষন থম মেরে থেকে বললো,
‘জানতে চাস তো , জানতে চাস এখানে কেন এসেছি? কার কব,রে ফুল দিয়েছি , তোর কাছ থেকে কি লুকিয়েছি তবে শোন–বলেই অপূর্বর হাত টা ধরে নিয়ে যায় কবরের কাছে।
সূর্য হাঁটুঘেরে বসে পরে কবরের কাছে।
কব, রের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলতে শুরু করে,এই যে কবরটি দেখতে পাচ্ছিস, এ আর কেউ নয় এ হচ্ছে,, আমার প্রেয়সী, আমার ভালোবাসা, আমার, আধার রাতের রানী , রঞ্জনা,, রঞ্জনা।বলেই বুক ফাটিয়ে কান্না ,, শুরু করে।,
অপূর্ব সূর্য কে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়।
যে সুর্য ,, অতি আঘাতেও কাঁদে না, যে সূর্য পাথর মনের মানুষ সে আজ অঝোরে কাঁদছে।তার কান্নায় প্রকৃতি থমকে যাচ্ছে।, আকাশ টা ভেঙ্গে পরেছে, সমুদ্র আচরে পরছে, মাটি গুলো যেন পায়ের তলা থেকে সরে যাচ্ছে।
সূর্যের আর্তনাদ দেখে অপূর্বর হৃদয়ের স্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
কে এই রঞ্জনা?কোনদিন তো বলিসনি ।
কি হয়েছিল ওর ? কিভাবে মারা যায় ?
কর্কস কন্ঠে ক্রোধের স্বরে সূর্য বলে উঠলো,মারা যায়নি রঞ্জনা, বেঁচে আছে আমার মাঝে।
অপূর্ব সূর্যর কাঁদে হাত দিয়ে বললো,
সবটা বল আমাকে ,, কি ঘটেছিল,, আর আমি কেন এসব জানি না।
সূর্য,, চোখ মুছে,, উঠে উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে,বলতে শুরু করে,
কারন তখন তুই ,, পরাশুনার জন্য আমেরিকা ছিলিস,, ইচ্ছা হয়নি,, তোকে জানানোর ।আমার জন্য তোর কষ্ট পেতে হবে। কারন আমি জানি,, তুই আমাকে কতটা ভালোবাসিস।
অপূর্ব: তাহলে এখন বল,,
কে এই রঞ্জনা, এর সাথে তোর পরিচয়, কিভাবে আর এর মৃত্যু কিভাবে হয়
সূর্য বলতে শুরু করলো।
আজ থেকে 6 বছর আগের ঘটনা, যখন আমার ২১বছর বয়স,,
— ভরা জ্যামে হাজার ও গাড়ির মাঝে আমিও ছিলাম।কোন এক বাসে
গরমে শরীর পুড়ে যাচ্ছে সবার।অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম জ্যামে বসে থাকতে থাকতে,,
জানালা টা খুলে দেই।
ঠান্ডা হাওয়া বইতে থাকে,,,
তখনই দেখি ,দূর থেকে দাড়িয়ে আছে ,, এক জলজ্যান্ত পরী।বই হাতে দাঁড়িয়ে আছে,,স্বর্বক্ষনী ,মোহমহ, সুন্দরী এক পরী।পরনে সাদা রঙের শাড়ি, মাথা ভর্তি চুল,,মায়াবী তার চাহনি,, এত সুন্দরী নারী আমার চোখে আর কোনদিন পরেনি।
গাড়ির অপেক্ষায় ,,দাড়িয়ে ছিল রঞ্জনা।
সেদিন ই আমি রঞ্জনা কে প্রথম দেখি।
পাথরের মত শক্ত হৃদয়ে সেদিন বসন্তের ফুল ফুটেছিলো।
ভরা জ্যাম থেকে নেমে দৌড়াতে থাকি।
আমি যেতে যেতেই ,,, গ্রিন সিগন্যাল এ জ্যাম ছেড়ে দেয়।আমার প্রেয়সী বাসে উঠে যায়।আমি সেদিন অক্লান্ত ভাবে ছুটতে থাকি বাসের পেছন পেছন ।
শহরের প্রতিটা মানুষ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো সেদিন আমার দিকে,, কেউ কেউ পাগল বলে সম্বোধন করেছিলো।
বাস টি গিয়ে থামে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে।
আমি হাঁপাতে হাঁপাতে বসে পরি কলেজের সামনে,,,
একে একে অনেক এ নামলো ,, ওকে তো দেখছি না,,
যখনি অচেনা মেয়েটা বাস থেকে নামলো,, তখনি,, কলেজের বেস কিছু ছেলে মেয়েরা,, রঞ্জনা রঞ্জনা রঞ্জনা বলতে বলতে ওকে ভেতরে নিয়ে যায়,, তখনই জানতে পারি ,, আমার স্বপ্নের রানি,র নাম রঞ্জনা।,
সবাই হই হুল্লোর দিয়ে উঠলো ,
আমি অবাক হই একজন ছাত্রীর জন্য এত কোলা’হল কিসের, হয়তো সুন্দরী দেখে।
অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকি, চিন্তা করতে থাকি, কিভাবে ওর সাথে কথা বলা যায়,, পায়চারি করতে করতে চিন্তা করতে থাকি,
আশেপাশে অনেক ছেলেরা , ভাবলাম কাউকে জিজ্ঞেস করি,, না না,, ছেলে নয়,, কোন মেয়েকে জিজ্ঞাসা করতে হবে
যেই ভাবনা সেই কাজ।
একটা মেয়ে আমার দিকে আসলো।আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম,আপু,আপনার সাথে একটু কথা বলা যাবে।
মেয়েটা কাট গলায় বললো,
না, রাস্তা ঘাটে মেয়ে দেখলেই কথা বলতে ইচ্ছে করে।
আমি ধৈর্য নিয়ে বললাম,শুনোন না।
মেয়েটি বললো,
যা বলার তারাতাড়ি বলুন।
আমি বললাম,বলছি এক্ষুনি যে মেয়েটা গাড়ি থেকে নামলো,রঞ্জনা ওর কি কিছু তথ্য পেতে পারি ?
এত সাহস রঞ্জনাকে নিয়ে প্রশ্ন করছেন।এর ফল ভালো হবে না।
বলেই মেয়েটা চলে যায়।
,, কোন ভাবে কিছু জানতে পারলাম না।
অনেক দিনের চেষ্টায় জানতে পারি রঞ্জনার সম্পর্কে। জানতে পারি,ওর বাড়ি তিলকনগর।বাবা একজন প্রতাবশালী,
ভাই আছে, ছোট বোনেরা আছে।
রঞ্জনা বড় মেয়ে,, শহরে এসেছে পরাশুনার জন্য।
এবং সব থেকে যেটা শুনে অবাক হই, রঞ্জনা ছিল একজন নৃত্য শিল্পী।
চিন্তা টা তখন আরো বেড়ে যায় একজন নৃত্য শিল্পী কে কিভাবে প্রেমের প্রস্তাব দেবো,, তাছাড়া জানতে পারি,, রঞ্জনা আমার থেকে দুই বছরের,বড়,,
চিন্তায় মাথা ভন ভন করতেছিল ।
সে যেমন ই হোক তাকে যে আমার লাগবেই।
প্রতিদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে বসে থাকতাম, একটা নজর দেখার জন্য।
যেখানে যেখানে তার নাচের প্রোগ্রাম থাকতো সেখানেই ছুটে চলে যেতাম।
হাজার হাজার মানুষ তার , নাচের প্রশংসা করতো ।হাজার হাজার মানুষ তার নাচ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকতো।
দূর থেকে সবসময় রঞ্জনা কে অনুসরণ করতাম, অপলকে তাকিয়ে থাকতাম, হাজার হাজার সুদর্শন পুরুষ তার প্রেমে মশগুল।
সবার মাঝে ছিলাম আমি এক শ্যামবর্নের পুরুষ।মানবে কি আমাকে রঞ্জনা,, গ্রহন করবে কি আমার ভালোবাসা,,
একদিন মনস্থির করলাম যা হবার ,,হবে আজকে একটা গোলাপ নিয়ে নিজের মনের কথাটা ওকে বলতেই হবে।
খুব ভয় হচ্ছে বুক ধরফর করছে,, সকাল ১০ টা নাগাদ,, আমি জাহাঙ্গীরনগর ,, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে,, অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি আমার প্রেয়সীর জন্য।
অপেক্ষার বাধ ভাঙলো।
গাড়ি থেকে, বই হাতে নামলো ,, রঞ্জনা
খুব সাহস করে,,
পেছন থেকে ডাক দিলাম,, কাঁপা কন্ঠে,,
রঞ্জনা ,আমার দিকে তাকালেই আমার মাথা নিচু হয়ে যায়।
খুব ভয় হচ্ছিল,ভয় কে পরোয়া না করে,,
হাঁটুঘেরে বসে বলেই দিলাম,
-যেদিন তোমাকে প্রথম দেখি, দূর থেকে দাড়িয়ে আছো বাস স্টেশনে,, থমকে গিয়েছিল আমার হৃদয়,, আমি জানি হয়তো আমি তোমার যোগ্য নই,,
কিন্তু আমি এ,ও জানি ভালো বাসা যোগ্য -অযোগ্য দিয়ে হয়না।আমি তোমাকে ভালোবাসি।
বলতেই ঠাস ঠাস করে চড় মেরে আমার গাল লাল করে দেয় রঞ্জনা।
সমস্ত ছেলে মেয়েরা আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।তবুও আমি অপমানিত বোধ করিনি।
রঞ্জনা বলতে শুরু করে -তোর এতবড় সাহস, রঞ্জনা কে প্রেমের প্রস্তাব দিস, এবারের মত মাফ করে দিলাম আর কোনদিন চোঁখের সামনে আসবে না।
সবাই আমাকে চেয়ে চেয়ে দেখছিলো।
পদত্যাগ করি সেখান থেকে।
তবুও তার উপর থেকে মোহতা, মুগ্ধতা, ভালোবাসা কাটছেই না বরং বেরেই চলেছে।
তারপর থেকে রঞ্জনা কে, কিছু বলার আর সাহস হতো না। দূর থেকে দেখতাম,
একদিন,, সকালে বাস স্টেশনে রঞ্জনা দাড়িয়ে আছে,আমি দূর থেকে,দেখছি,,
তবে ও হয়তো,বুঝতে পারতো যে আমি ওকে পরোক্ষ করি। দূর থেকে দেখি। ওর পথ চেয়ে বসে থাকি
বাস আসতেই বাসে উঠে পরে।
আমি সেদিনের মতো , আবার বাসের পেছন পেছন ছুটতে থাকি,, একটা বার ,যদি রঞ্জনা পেছন ফিরে তাকায়, তবেই বুঝবো একটু হলেও সে আমাকে বুঝতে পেরেছে,,
জানালা, দিয়ে তার চুল গুলো উড়ছিলো,, হাতের কনুই টা জানালায় উপর রাখা,,
অপেক্ষা করছি কখন সে পেছন ফিরে দেখবে,,
অবশেষে যেন,দৌড়াতে থাকা আমার দিকে নজর পরে রঞ্জনার।
সে তাকিয়েছে।
আমার দিকে দেখেই ,, এক ভ’য়ংকর রকম সুন্দর হাসি দিলো। এই হাসি যে দেখবে সেই পাগল হয়ে যাবে।তার চাহনিতে
সমস্ত শহর জুরে আনন্দে উৎফুল্ল হয়েছিল।
রঞ্জনা,, আমাকে ইশারা করে কিছু একট ছুরে দিলো।
আমার দৌড়ের গতি কমে যায়।
থমকে দাড়িয়ে যাই আমি।
ওটা ছিল একটা চিরকুট,,
কি আছে লেখা, খারাপ কিছু নয়তো ,, ভয় হচ্ছিল খুব, ভাবতে ভাবতে আর চিরকুট টা খুলেনি।
ভাবলাম বাড়িতে এসেই দেখবো।
রাত ঠিক __ ৮ টা নাগাদ
খুব আনন্দ হচ্ছিল রঞ্জনা আমাকে দেখে আজকে হেসেছে।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শুখি মানুষ টা কেমন জানি আমাকেই মনে হচ্ছিল।
চিরকুট টা খুললাম — তাতে লেখা ছিল
প্রিয় –
সূর্য, তোমার নামের মতই তুমি ঝাঁঝালো।
সূর্যের চেয়েও উজ্জ্বল তুমি।
সূর্যের চেয়েও, সুদর্শন তুমি।
সেদিন যখন , আমার গাড়ির পেছন পেছন ছুটছিলে,, সেদিন ই আমি তোমাকে দেখেছিলাম।
অবাক দৃষ্টিতে তোমাকে আমি দেখেছিলাম।কে এই মানুষটি যে গাড়ির পেছন ছুটছে।
গাড়ি থেকে যখন আমি নেমেছিলাম, তখন আমি তোমাকে হাঁপাতে দেখেছিলাম,কার জন্য ছেলেটা দৌড়ালো জানতে ইচ্ছে হলে
তোমার সামনে আমার দুটো মেয়ে বান্দবিকে পাঠাই।
যদি তুমি আমার খোজেই এসো তবে কাউকে তো জিজ্ঞেস করবেই।
ঠিক তখনই দেখলাম, ওদের দাঁড়,করিয়ে তুমি কিছু জিজ্ঞেস করছো
,, জানতে পারি,, তুমি আমার খোজ করছো।
সেদিন আমি আরো অবাক হই ,, আমার জন্য হাজার ও ছেলে পাগল অথচ আমি তোমার মত উধার ,কাউকে দেখেনি।
আমিও তোমার খোজ নিলাম,, খোঁজ নিয়ে জানতে পারি,তুমি আমার থেকে বয়সে ২বছরের ছোট,।
তাতে কি!, ভালোবাসা মানে না জাত-বেজাত, ভালোবাসা মানে না বয়সের পার্থক্য। বয়স তো দুটো সংখ্যা মাত্র,,
সেদিন তুমি ফুল নিয়ে যখন প্রেম নিবেদন করেছিলে,সেদিন তোমাকে আমি মেরেছিলাম। জানতে চাও কেন,, কারন পেছনে উপস্থিত ছিল আমার ভাই,।,
যদি আমি তোমার সাথে ওরকম ব্যবহার না করতাম তবে,, আমার এবং তোমার দু’জনের ক্ষতি হতো।
** আমি চাই একাল-পরকাল,, সারাজীবন জনম জনম ধরে তুমি এভাবেই আমার পিছু নিতে থাকো।
,, সত্যিই যদি আমাকে ভালোবেসে থাকো তাহলে আমার জন্য আগামীকাল অচিন পাহাড় এ অপেক্ষা করবে —-
________ইতি তোমার রঞ্জনা
সেদিন থেকে শুরু হয় আমার প্রেম কাহিনী।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ টা আমাকেই মনে হতো।
একটা প্রহর রঞ্জনা কে ছাড়া থাকতে পারতাম না,,
দেখতে দেখতে কেটে যায় ১টি বছর।
সিদ্ধান্ত নেই আমরা একা একা বিয়ে করবো ,,
রঞ্জনা কে, প্রস্তাব দিলে রাজি হয়।
বিয়ের দিনটা ঠিক করা হয় আমার জন্মদিনের তারিখে । কিন্তু তা রঞ্জনা জানতো না।
জমুনা নদীর পারে বিয়ের ছোটখাটো আয়োজন করি,, আমি পলাশ, মিদুল,হিমেল, এবং রায়হান ,আর রঞ্জনার মেয়ে বান্দবীরা ,
তবে সেদিন রঞ্জনা ভেবেছিল আমার জন্মদিন পালন হবে ,, শুধু,,
তবে আমি ওকে বলেছিলাম,, বিয়ের আগে একবার বউ সাজে দেখতে চাই তোমাকে,,
ও রাজি হয়, রঞ্জনা, এতটুকু বুঝতে পারেনি। ওর জন্য আমরা কতবড় সারপ্রাইজ রেখেছিলাম,,কারন, সেদিন ই যে ওকে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিলাম ।তা রঞ্জনা জানতো না,,,
ঠিক রাত ৮ টায়,, রঞ্জনা ল্যান্থলাইন থেকে কল করে। শহর থেকে কিভাবে আসবে রোড, ঘাট,জ্যামে ভরা।
আমি শেরওয়ানি পরা ছিলাম তাই আমি না গিয়ে,রায়হান , কে বলেছিলাম ওকে নিয়ে আসতে।
তখন রায়হানের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল।
-_______ কিন্তু যা ঘটেছিল
সেই বিষা’ক্ত অতিত আমাকে এখনো, নাড়ায়।
রায়হান ও রঞ্জনা ছিল রাস্তার এপার আর ওপার।
এপারে রায়হান ওপারে রঞ্জনা ।
রঞ্জনা লাল বেনারশী পরা অবস্থায় ছিল।
সূর্য কথা থামিয়ে দেয়। সূর্য হুহু করে কান্নায় ভেসে ওঠে সূর্যর কান্নায় পূরো তিলকনগর-যেন থম হয়ে গেছে।
অপূর্বর চোখ গুলো লাল হয়ে যায়,, কান্নার জোয়ারে।
তারপর কি হয়েছিল?
সূর্য আবারো বলতে শুরু করে ———
এক প্রহর দুই প্রহর অনেক প্রহর কেটে যায় ওদের আমি কোন খোজ পাচ্ছিলাম না,
আমার ও মনের মধ্যে কুহ ডাকা শুরু করে ,,
বেশ অনেকক্ষন পর রায়হান হাজির হয়।
র’ক্ত মাখা শরীর নিয়ে,,
রায়হান কে প্রশ্ন করলে
কাপা কন্ঠে বলতে শুরু করে,,
রঞ্জনা,, আর নেই।
তখন পূরো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে আমার মাথার উপর পড়ে, বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছিল। রায়হান কে দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করলে।
বলে ,, আমি রাস্তার অপর প্রান্তে ছিলাম
রঞ্জনা ,আমাকে ইশারায় বোঝালো ও রাস্তা পার হতে থাকবে।
তোর কথা মতন রঞ্জনা বধু সেজেই এসেছিলো।
রাস্তা পার হবে ঠিক তখনি ।
একটা ট্রাক এসে মেরে দেয় রঞ্জনা কে,,
তখন পূরো পৃথিবী টা আমার অন্ধকার হয়ে গেছিলো।
রায়হান রঞ্জনা কে হাসপাতালে নিয়ে যায় হাসপাতালে রেখে আমার কাছে চলে আসে খবর দিতে।আমিও তখন ছুটে চলে যাই হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। আমি যেতে যেতে ততক্ষণে রঞ্জনা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে। সেদিন থেকে ই আমার পুরো পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে যায় থমকে গিয়েছিল আমার জীবনটা সেখানে ই।
আমার আয়োজন করা সারপ্রাইজ টা আমি আর সেদিন তাকে দিতে পারিনি।
শাহজাহান,এর তৈরি করা তাজমহল সারা দুনিয়া দেখলেও, মমতাজ দেখিনি,
আমার প্রিয় মানুষটির জন্য বিয়ের আয়োজন সবাই দেখলেও ,দেখেনি রঞ্জনা।
— বলেই সূর্য ভারি একটা দ্বির্ঘশ্বাস ফেললো।
সেদিন থেকে আমার প্রতি জন্মদিনে ওর কব,রে ফুল দিয়ে ওর জন্য দোয়া করি।
অপূর্ব পেছন থেকে কান্না জড়িত কাপা কন্ঠে বলে উঠলো
—– সময় থাকতেই ভালোবাসার মানুষটি র চাওয়া পাওয়া পূর্ণ করতে হয়।
পূর্নতা থেকে হয়, উপন্যাস
ব্যার্থ হলে হয় দীর্ঘশ্বাস
এলিজা পর্ব ২০
সূর্য অঝরে কান্না করে অপূর্ব কে জড়িয়ে ধরে।
সূর্য অপূর্বকে জড়িয়ে ধরে ভাঙা গলায় বললো,
আমি দেখতে চেয়েছি তাকে ,বধুসাজে
নিয়তি দেখিয়েছে রক্ত সাজে