হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ২৪

হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ২৪
Tahrim Muntahana

বহু পুরোনো ডায়েরি খুলে দেখার স্বাদ জেগেছে নুরুল আলম সিদ্দিকী’র। বসে আছেন সেনানিবাসের পেছন দিকে। ঝলমলে রোদ, ব‌ইছে উত্তরে হাওয়া। হাওয়ার বেগ বেশ। রোদের তাপ টা ঠিক গাঁয়ে লাগছে না। গাছ-গাছালি, নানান রকম ফুলে ভরা জায়গাটার ঠিক মাঝখানে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাথা থেকে গৌরবের মুকুটটি সযত্নে টেবিলে রাখলেন, ততটুকুই যত্ন পেল বাম হাতে থাকা ডায়েরি টাও। মুখোমুখি দুটি জড়ো বস্তু। একটি পরিচয় বহন করে, আরেকটি পরিচয়ের পেছনে গোপনীয়তা বহন করে।

কাকে উপরে রাখবে? প্রতীয়মান সূর্য টা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতেই নুরুল আলম সিদ্দিকী চেয়ারে হেলান দিয়ে ডায়েরি তে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। বুক চিড়ে বেরিয়ে এলো চাপা শ্বাস। যন্ত্রণা গুলো বিদ্রোহ করে পালাক্রমে বেড়ে চলছে। আফসোস গুলো যুদ্ধ ঘোষণা করে ধেয়ে আসছে বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী কঠোর মনের মালিক কে কাবু করতে। তবে এতটা সহজ কি? নুরুল আলম সিদ্দিকী যে হারার পাত্র নয়, তার রন্দ্রে রন্দ্রে জয়ের উত্তেজনা! পুরো জীবনটাই যে জয়ের সমীক্ষে গড়া। আশপাশ নজর ঘুরিয়ে মাইন্ড ফ্রেশ করার চেষ্টা চালালেন তিনি। সফল ও হলেন। মিনিট খানেক পর ডান হাতটি এগিয়ে ডায়েরির ভাজ খুললেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অনেক দিনের পুরোনো কালি। কাগজের পাতা তামাটে রূপ ধারণ করে বুঝিয়ে দিচ্ছে বহুকাল আগের যত্নে রাখা অনুভূতি গুলো। প্রথম পাতায় লেখা গুলো তে চোখ বুলালেন তিনি,
“সময় টা ১৯৯৫, নভেম্বরের কোনো একটা দিন হবে। দিনটা আমার জন্য‌ খুব খুশির। শুনলাম আপার বিয়ে ঠিক হয়েছে। মস্ত বড় আর্মি অফিসারের সাথে। কিন্তু আপা বিয়ে করবে না। আর্মিরা নাকি ব‌উদের সময় দেয় না, সারাক্ষণ সরকারের চামচামি কর! এটা অবশ্য আপার ভাষ্য। আমি তো তাকে দুলাভাই বানাতে এক পায়ে রাজী ছিলাম। আপার থেকে তিন বছরের ছোট হ‌ওয়ায় বন্ডিং দারুন ছিলো। ভালো ভালো কথা বলে রাজী করালাম। আপা শর্ত দিয়ে বসলো, আমাকে ছাড়া শশুড় বাড়ি যাবে না।

কি আর করার, দুলাভাই অগত্যা পুঁটলি পুঁটলা সহ আমাকেও নিয়ে চললো। যদিও আমি এতে খুশিতে আটখানা। বারবার দুলাভাইয়ের পেশীবহুল শরীরের অংশগুলো ছুঁয়ে দেখছিলাম। আর কল্পনা করছিলাম এক দিন আমারো হবে। দুলাভাই আমার উৎসাহ দেখে হাসতো, আর বলতো, ‘শালাবাবু বড় হ‌ও, তোমাকেও আমার সাথে নিয়ে যাবো!’ কি যে আনন্দ হতো আমার। দিনের বেলাতেও যেন আকাশে ভাসমান চাঁদ তারা দেখতে পেতাম। তখন যেন আপার থেকে অধিক প্রিয় দুলাভাই। আপা তো মাঝে মাঝে গোমড়া মুখে বসে থাকতো, আপা কিন্তু জানতো সে আমার কাছে সবার উপরে। তবুও রং চং করতো। কি ভালো ছিল দিনগুলো।

জীবন একেবারে রঙে ভরা। সময় যেতে যেতে দুটো বছর চলে গেল, একদিন শুনলাম আমি নাকি মামা হবো! আমার উড়নচণ্ডী আপার মাঝে ছোট্ট একটা প্রাণ বেড়ে উঠবে। দুলাভাইয়ের সাথে আমিও সমান তালে বাড়ি মাথায় তুললাম। প্রতিবেশী কি হিংসা করতো আপাকে। হাসি তামাশাই কেটে গেল কয়েকমাস। আপার প্রসব ব্যাথা, দুলাইভাই গিয়েছে সিক্রেট অপারেশনে! আমিই নিয়ে গেলাম হাসপাতালে, দুরুদুরু বুকে পাইচারি করছিলাম ওটির সামনে। লাল বাতিটা নিভে যেতেই ডাক্তার বেরিয়ে আসলো। ছুটে গেলাম, জানতে চাইলাম। ডাক্তার বললো… ”

~ স্যার!
ডাক এসেছে। নুরুল আলম সিদ্দিকী’র পৃষ্ঠা টা সম্পূর্ণ করা হলো না। শান্ত দৃষ্টি ঘুরিয়ে পাশে তাকান। ছেলেটি স্যালুট কার্য শেষ করে বললো,
~ মিটিংয়ের সময় হয়ে এসেছে স্যার!
ঘড়িতে নজর বুলান নুরুল আলম সিদ্দিকী। এতটা সময় হয়ে গেছে! ডায়েরি খুলে বসলে কখন মিনিট পেরিয়ে ঘন্টা চলে যায় টের পান না। দু হাতে জড় বস্তু দুটো হাতে তুলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। মাথা নেড়ে সায় জানাতেই ছেলেটি চলে গেল। নুরুল আলম সিদ্দিকী ডায়েরি টা শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে বড় বড় পা ফেলে হাঁটতে লাগলেন! প্রতিটা কদমে গাম্ভীর্যের ছাপ! একে একে কয়েকটা ঘর পেরিয়ে ঢুকে পড়লেন হল রুমে। দাঁড়িয়ে গেল সকল সেনা! বসলেন চেয়ারে। মিনিট খানেক চুপ র‌ইলেন। নিরবতা ভেঙে গম্ভীর স্বরে বললেন, ‌

~ ফর্মালিটি আজ বাদ রাখলাম। গুরুত্বপূর্ণ এক টপিক নিয়ে কথা বলবো! তবে প্রথমেই শুধাবো, প্রস্তুত তো সবকিছুর জন্য?
সমস্বরে আওয়াজ করে উঠলো সকল সেনা। নুরুল আলম সিদ্দিকী আরো মিনিট খানেক চুপ র‌ইলেন। হুট করে দাঁড়িয়ে গিয়ে প্রজেক্টর অন করলেন, সবুজে ঘেরা প্রকৃতি, সুউচ্চ পাহাড়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জীবন ধারা। একে একে কয়েকটা ছবি দেখিয়ে বললেন,

~ বান্দরবান! শহরটার জনবসতি খুব‌ই কম! প্রকৃতি যেন সব মায়া ঢেলে দিয়েছে এই শহরটাকে। প্রকৃতি যেমন রহস্যময়ী, রূপ বদলে কার্পণ্য করে না; এ‌ই শহরটাও এমন! পাহাড়ের ভাজে ভাজে যেন রহস্য মিশে আছে। আমাদের মোটিভ নেই। শুধু মাত্র কিছুটা সন্দেহ, কিছুটা বিশ্বাসের ভিত্তি তে এগিয়ে যাওয়ার পাইতারা করছি! জেনে রাখা ভালো বান্দরবানের
পূর্বে রয়েছে মায়ানমারের চিন প্রদেশ এবং আরাকান প্রদেশের সীমান্ত, এবংকি ভারতীয় আন্তর্জাতিক সীমানাও বান্দরবানের সাথে সংযুক্ত! আপনাদের নিশ্চয় ই ব্যাখ্যা দিতে হবে না, সীমান্তে কি কি হতে পারে?
মনোযোগ দিয়ে শুনছে সবাই! কথা বলার ভঙ্গিমা এত টা মধুর সারাদিন শুনলেও যেন বিরক্ত লাগবে না। নুরুল আলম সিদ্দিকী এবার চেয়ারে বসলেন। তার সামনে রাখা কিছু কাগজ হাতে তুলে নিয়ে বললেন,

~ চারটি টিমে ভাগ হবে এই সিক্রেট অপারেশনটি! একেক দলের কাজ থাকবে একেক রকম! সবার সামনে লিস্ট রাখা আছে, দেখে নিন কে কে টিমে আছেন, কোন টিমে কে আছেন, কি কাজ!
অতি উৎসাহী হয়ে একেক সেনা নিজেদের নাম খুঁজতে লাগলো। অফিসার হারুণ যখন নিজের নামটা কোথাও খুঁজে পেলো না, অসম্ভব রকমের পরিবর্তন ঘটলো তার মুখশ্রী তে। দাঁতে দাঁত চেপে নিচের দিক তাকিয়ে র‌ইলো। নুরুল আলম সিদ্দিকী একপলক হারুন কে দেখলেন। মুচকি হেসে বললেন,
~ অন্তঃসত্ত্বা ব‌উ রেখে যুদ্ধে যেতে বুক কাঁপবে না মি. হারুন?
হারুন অনিচ্ছা সত্ত্বেও মাথা তুললো। নিম্ন স্বরে বললো,

~ অনিশ্চিত জীবন নিয়েই নিবাসে পা দিয়েছিলাম স্যার! এখন আপনি যদি অন্তঃসত্ত্বা ব‌উয়ের দোহাই দিয়ে আমাকে পিছিয়ে যেতে বলেন, তাহলে বলবো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল আমার স্ত্রী সন্তান!
নুরুল আলম সিদ্দিকী’র চোখে মুখে অবাকতা নেই তবে অদ্ভুত চোখের দৃষ্টি। তার আপা যখন প্রসব বেদনায় ছটফট করছিলো, বারবার দুলাভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করছিলো; সেদিন সে বুঝেছিল এই সময়টাতে একজন মেয়ের নিজের মানুষটাকে খুব দরকার হয়! হাজার টা কষ্ট সহ্য করে নেয় একটু ভরসায়! নিজের গোপন খোলস গোপনেই রাখলেন তিনি। গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

~ মানুষ সামাজিক জীব। একা কখনোই বাঁচতে পারবে না। আপনি দেশের গৌরব ততক্ষণ থাকবেন যতক্ষণ আপনি দেশের জন্য লড়ে যাবেন, লড়ার গতি কমে এলে আপনাকে সম্মাননা দিবে, কিছুটা আফসোস করবে! কিন্তু আপনার পরিবারের মনে আপনি ততক্ষন থাকবেন যতক্ষণ তারা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে! আমরা দেশের জন্য নিঃস্বার্থ খেটে যাই, তেমনি আপনার স্ত্রী আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার পরিবারের দেখাশোনা করে, আপনার অংশ কে নিজের মধ্যে ধারণ করেছে। কতটা কষ্টের দিনগুলো আপনাকে নিশ্চয়ই নতুন করে বলতে হবে না! আমাদের থেকে তাদের যুদ্ধটা কম নয়! স্ত্রী কে কথা দিয়েছেন না, যে করেই হোক প্রসবের সময়টাই তার পাশে থাকবেন? কথা রাখুন মি. হারুন। আপনার নারী যোদ্ধাটাকে পুরস্কার স্বরূপ আপনার উপস্থিতি দিন! যুদ্ধে নাহয় এসে যোগ দিবেন। এ যুদ্ধের সময়সীমা আয়ত্বের বাইরে!

হারুন ভেজা চোখে মুচকি হাসলো। ব‌উটা কতবার যে বলেছে! সেও তো বলেছিলো, এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেল কি করে? সবার প্রথমে দেশ কে রেখেছে বলে? লজ্জিত হলো না হারুন! এ যেন তার জন্য অসীম গৌরবের! নুরুল আলম সিদ্দিকী অদ্ভুত ভঙ্গিমায় বললেন,
~ আপনাদের প্রথম কাজ হলো অপারেশন সিক্রেট সেটা মনে রাখা! রাতের আঁধারে বান্দরবান ঢুকবেন! চার্ট অনুযায়ী থাকার উপযুক্ত ব্যবস্থা আপনাদের‌ই করতে হবে। ভেসে বেড়ানো মেঘের মতোই আপনাদের উড়ে উড়ে একেক জায়গায় বাসস্থান গড়তে হবে!
দ্বিতীয় কাজ হলো অফিসার আফীফ মুনতাসির যেন কোনো ভাবেই মিশন সম্পর্কে টের না পায়! সে ছুটিতে আছে, থাকুক!

তৃতীয় হলো আপনাদের সামনে বান্দরবান জেলার কিছু সম্মানিত লোকের বিবরণ দেওয়া হয়েছে, নজর রাখবেন! আগ বাড়িয়ে কোনো রকম অস্ত্রের ব্যবহার করবেন না। আপনাকে যদি তিনটে চড় ও খেতে হয় হজম করে নিবেন। মনে রাখবেন এতেই আপনার জন্য মঙ্গল।
সর্বশেষ হলো, এই অপারেশন টা বহু পুরোনো! পুরোনো অনেক রহস্য! আপনারা বুদ্ধিমান, একেকটা ধাপ পেরিয়ে যাবেন আপনাদের সামনে সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে! প্রস্তুত তো?

আবার সমস্বরের আওয়াজ। নুরুল আলম সিদ্দিকী ফুস করে শ্বাস ছাড়লেন। তার হাতে বহু দিনের জমানো কিছু হিসেব, কিছু প্রমাণ ছাড়া সত্য! এবার ছেলের পা বাড়ানোয় আবার আলমারির এক কোণায় পড়ে থাকা ফাইল তার হাতে! জার্নিটা যে সুখকর হবে না সে জানে! সত্য গুলো মিথ্যের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসবে! হয়তো তার জীবন টাও পরিবর্তন হবে, হারাবে কিছু আবার নাও হারাতে পারে! সব‌ই সময়ের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। প্রতি‌দিন কার মতো এবার‌ও তিনি উৎসাহ মূলক, অনুপ্রেরণা মূলক কিছু বলার কথা ভাবলেন! ফাইল গোছাতে গোছাতে বললেন,
~ তোমাদের এই যুদ্ধটা আদিবাসী দের জন্য! তাদের রক্ষা’র জন্য! আমাদের মুক্তিযুদ্ধে এমন একজন আদিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন যাকে বীর বিক্রম খেতাব দেওয়া হয়। একমাত্র তার সাহসীকতার জন্য!

ইউ কে চিং! বান্দরবান জেলার লাঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া মারমা সম্প্রদায়ের এই যোদ্ধাটি নিজ দেশের জন্য সংগ্রাম করছিলেন। ছিনিয়ে এনেছিলেন স্বাধীনতা!
এবার যে তাকে সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে! তার জাতিকে রক্ষা করার দায়ভার তোমাদের! পিছিয়ে যাওয়া মানে পরাধীনতার শিকলে আটকে যাওয়া, মিথ্যেকে নিরব সমর্থন জানানো! আমার বিশ্বাস আমার তৈরি করা একেকটা সৈন্য বীর যোদ্ধা!

অনিয়ম করার ইচ্ছে পোষণ হয়েছে! ইচ্ছেরা যেন আজ ডানা মেলে উড়ছে‌। অফিসে যায় নি, ঘুমিয়ে আছে আদিল! হুট করেই মন যে এমন ভাবনা করলো, তার কি কোনো দোষ আছে! তবে আদিল মাহমুদ যে বলে মনের উপর তার নিয়ন্ত্রণ সর্বাধিক! ঘুম ঘুম চোখে ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসলো আদিল। বাবা’র গার্ড কে সাদরে গ্রহণ করতেই তো এত আয়োজন! ঠিক করেছে সারাদিন আজ ঘর থেকে বের হবে না। কিন্তু নিয়তি যে আগে থেকে ঠিক করে রেখেছে। তার ইচ্ছে কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে হেলেদুলে হাজির হলেন মিসেস নুরি! দরজায় পর পর কয়েকবার নক করলেন। সাড়া শব্দ নেই! দীর্ঘশ্বাস গোপন করে দরজা ছেড়ে সোফায় বসলেন। আজ তিনি অপেক্ষা করবেন! কতদিন কাছ থেকে ছেলেকে দেখেন না, তার কি মন পুড়ে না? বেশ বিরক্তি নিয়ে আদিল বিছানা ছাড়লো। সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে দরজা খুলে বের হলো। মিসেস নুরি কে দেখে খানিক অবাক ও হয়েছে, তবে প্রকাশ করলো না। মুখোমুখি বসে গম্ভীর স্বরে বললো,

~ হঠাৎ এখানে?
মিসেস নুরি চমকালেন। ম্যাগাজিন পড়ছিলেন উবু হয়ে। ছেলের কন্ঠস্বর শুনে কিছুক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে র‌ইলেন। ভাবালেশ বললেন,
~ কেন আসতে পারি না?
~ উত্তর জানা আপনার!
ভাবালেশ মুখশ্রী আর ভাবালেশ র‌ইলো না। ফুটে উঠলো অসহায়ত্ব। কুন্ঠিত হলো মন। নিচু স্বরে বললেন,
~ মা হয় আমি তোমার!
কর্ণকুহরে কথাটা পৌঁছা মাত্র‌ই শব্দ করে হেসে উঠলো আদিল। হাসির সময়টা বেশ দীর্ঘ। বিদ্রুপ মিশে আছে, মিসেস নুরির বুকটায় যেন কাঁটার মতো খুচাচ্ছে। নিরব রক্তক্ষরণে হৃদপিন্ড ফ্যাকাশে হয়ে যাবে না? হৃদপিন্ডের সংকোচন প্রসারণ থেমে যাবে না ? মিসেস নুরি দাঁড়িয়ে পড়লেন। হাসি থামালো আদিল। তাচ্ছিল্য স্বরে বললো,

~ মা! শব্দ খুব ছোট মিসেস! আপনার কি বৃহৎ ছাড়া চলে?
~ বেশী বলছো না?
~ বেশী বলছি বুঝি?
মিসেস নুরি তর্কে গেলেন না। শান্ত স্বরে বললেন,
~ মিরা কে বিয়ে করো, সুখের সংসার সাজাও। আফরা তোমার জন্য নয়!
আদিল তবুও শান্ত, স্থির। কিছুটা হেসে বললো,
~ আপনার সাহস দেখছি বেড়েছে। কিন্তু আফসোস সাহস সময় ও ক্ষেত্র বুঝে ফলাতে পারেন নি! আপনার বর জানে এখানে এসেছেন?

পর পর দুবার ঢুক গিললেন তিনি। আদিলের নিকট এগিয়ে গেলেন। নিচে বসে হাত ধরে বললেন,
~ চোখ খোল আদিল, চারপাশ ভালো করে দেখ। তোমার আড়ালে কি হচ্ছে খুঁজে দেখ! এসব ছেড়ে মিরা কে নিয়ে সুখের সংসার সাজাও, ভালো থাকো দুজন একসাথে!
ক্রোধের অনলে শরীর ঝলসে গেল যেন! রক্তিম চোখ নিয়ে তাকাতেই মিসেস নুরি উঠে দাঁড়ালেন, দু কদম পিছিয়ে গেলেন। আদিল দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

~ আপনার প্রস্থান না ঘটলে আমি অনেক কিছু করতে পারি। আপনার শরীরে বুলেট , বুকে ছুরি ঢুকাতে আমার হাত কাঁপবে না। আমি হৃদয়হীন।‌ আদিল মাহমুদ কে ভুল প্রমাণ করতে চাচ্ছেন?
মিসেস নুরি স্থির নয়নে মিনিট খানিক ছেলের দিকে তাকিয়ে র‌ইলেন। মাথায় আলতো করে হাত রেখে বললেন,
~ আমি প্রার্থনা করবো, খুব তাড়াতাড়িই কারো জীবনে নায়ক হ‌ও, নায়িকা’র আগমন শীঘ্রই ঘটুক!
মুচকি হেসে হাঁটা ধরলেন তিনি। গেইট পেরিয়ে বাইরে চলে যেতেই আদিল ক্রোধ সংবরণ করতে পারলো না। সামনে থাকা টিটেবিল উল্টে চিৎকার করে বলে উঠলো,

হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ২৩

~ নায়ক নয়, খলনায়ক আমি। নায়কের হৃদয়ে নায়িকার প্রতি অসীম ভালোবাসা থাকে, আমার হৃদয় পাথর। আমার প্রভাব সর্বত্র। আমার রাজ্যের একমাত্র খলনায়ক আমি! যার কারো প্রয়োজন হয় না! কারো না!

হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ২৫