হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ২৫

হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ২৫
Tahrim Muntahana

চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠছে। খবরের কাগজ হাতে নিয়ে বসে আছে আহিশ। গভীর মনোযোগ ছোট ছোট অক্ষরে।‌ যার প্রথম পাতাতেই দৃশ্যমান ইন্সপেক্টর আতিকুরের হত্যাকাণ্ডের আপডেট। আগের দিন যেখানে ছিলো,’নেই কোনো হদিস, খু*নী দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে গাঁয়ে হাওয়া মেখে’! সেখানে আজ শিরোনামে বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘তদন্তকারী অফিসার ইতিমধ্যেই ক্লু পেয়েছেন, পেয়েছেন কিছু ইঙ্গিত, ক্রমশ শীঘ্রই লোকচক্ষুর সামনে হাজির করবেন’!

কপালে বড় সড় ভাজ পড়ে তার। খানিক বিরক্ত‌ও হয়। এসব সামনে এলেই মেজাজ চটে যায় তার। খবর ভাজ করে চায়ের কাপ হাতে তুলে নেয়। এখনো গরম আছে। হেলায় ফেলায় চুমুক বসাতেই মুখশ্রীতে পরিবর্তন আসে। তৃপ্তিতে চোখ বুজে নেয় আহিশ। জিহ্বা যেন এমন চায়ের স্বাদ আগে পায় নি। বেশ মজা করে চা টা পান করে সে। রান্নাঘরের ভেতর থেকে আহিশের এক্সপ্রেশন পরখ করছিলো মনিরা। বিস্ময় ঘিরে ধরেছে তাকে। সামান্য চা টা মানুষ এত সুন্দর করে খায়? গোমড়া মুখো, চা কে না করা ব্যক্তির‌ও হয়তো লোভ লেগে যাবে!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

উঠে দাঁড়ায় আহিশ, ঘরের দিকে পা বাড়ায়। বেশীটা পথ হাঁটতে পারে না। তীক্ষ্ম চোখের দৃষ্টি গিয়ে পড়ে মনিরা’র অবাক চাহনিতে। মেয়েটা এমন তাকিয়ে আছে কেন? এক পা এগিয়ে যায় সে, মনিরা থতমত খেয়ে কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে নিজের বোকামো এড়িয়ে চলতে চায়। আহিশ যেন এক নিমিষেই ধরে ফেললো। কেন জানি হাসি পেল তার! কয়েক কদম এগিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
~ এই মেয়ে, ভালো আছো?

মনিরা কেঁপে উঠলো, মৃগী রোগীর মতো একঝলক কেঁপে অসাড় হয়ে এলো তার শরীর! ‘ভালো আছো’ শব্দ টাই কি মাখা ছিল? সামান্য প্রশ্ন টা বুকে বিঁধলো কেন? কেন‌ই বা হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিলো? সাবলীল উত্তর দিতে সে সক্ষম হলো না। বাগযন্ত্র থেকে কোনো শব্দ‌ই বের হলো না। চুপচাপ নত দৃষ্টি ফেলে ইতস্তত করতে লাগলো। বেশ খানিকটা সময় আহিশ উত্তরের অপেক্ষা করলো‌। যখন পেল না, ভারী রাগ হলো তার। মেয়ে টা তাকে ইগনোর করছে? কেন? পূর্ণ দৃষ্টিতে মনিরা কে পরখ করতেই বিরক্ত দৃষ্টিটা শান্ত হয়ে এলো। জড়তায় ফেঁসেছে মেয়ে। মুচকি হেসে বললো,
~ এই মেয়ে, জড়তা করছো কেন? ভালো নেই? ভালো থাকতে পয়সা লাগে নাকি? ভালো বাসা তে থেকেও ভালো নেই বলা পাবলিকদের আমার খুব‌ই অপছন্দ। তুমি কি আমার অপছন্দের লিস্টে পড়তে চাইছো নাকি?
মনিরার মনে হয় ছেলেটা তাকে উপহাস করছে, তাকে দুর্বল ভাবছে। নিমিষেই নিজের সকল জড়তা কাটিয়ে দ্বিগুন গম্ভীর স্বরে বললো,

~ আমি না মানলেও সম্পর্কে আমি আপনার ভাবী হ‌ই! আপনি বলে ডাকুন সাথে মেয়ে না বলে ভাবী ডাকুন। শুনতে ভালো দেখায়! আমাকে খারাপ লাগছে বুঝি? আমার তো মনে হচ্ছে আমার মতো ভালো আর কেউ নেই! আপনিও না!
থেমে যায় মনিরা। ঠোঁটের ভাজে অদ্ভুত হাসি। অপর পক্ষকে পাল্টা জবাব দিয়ে হারিয়ে দেওয়ার মাঝে এত আনন্দ মিশে আছে কেন? খানিক চুপ থেকে আবার বললো,
~ আমি আপনার লিস্টেই থাকতে চাই না, সেখানে পছন্দ, অপছন্দ ভাবা বড়লোকি কারবার!
রাগ হ‌ওয়ার কথা থাকলেও আহিশ নিজের মধ্যে এমন কোনো আভাস পায় না। শক্তপোক্ত জবাব বেশ লেগেছে। ঠোঁট এলিয়ে হেসে বলে,

~ বাহ! আই লাইক দিস এটিটিউট! তবে আমার জীবদ্দশায় আজ পর্যন্ত কাউকে ভাইয়ের স্বীকৃতি দিই নি, সেখানে তোমাকে ভাবী স্বীকৃতি দেওয়া বড়লোকি কারবার। আমার থেকে না হলেও তিন-চার বছরের ছোট হবে! আপনি ডেকে আমি নিজেকে অপমান করতে চাইছি না! যাই হোক চা টা তৃপ্তিকর ছিলো! ট্রিট পাওনা র‌ইলে মেয়ে!
গাম্ভীর্য ধরে রেখে হাঁটা ধরে আহিশ। মনিরা’র এত দিনের ভুল ধারণা হুট করেই বদলে গেল। একটা বার‌ও আহিশের চোখ তাকে অন্য ইঙ্গিত দেয়নি। না কোনো অশ্লীলতার ছাপ ছিলো। তাহলে বাবা-ভাইয়ের মতো সে নয়? নাকি খোলস ধরে রেখেছে? কথাগুলো ভেবে মনিরা চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাকে সতর্ক থাকতে হবে। মেয়ে ঘরে একা আছে বলে পা চালিয়ে ঘরের দিকে হাঁটা ধরে। একটুর জন্য মেয়েকে কাছ ছাড়া করলেই অন্তর কেঁপে উঠে তার। ঘরের দৃশ্য তাকে বড়সড় চমকে দেয়। আহিশের পাশে বসে আছে মিহি। চোখে মুখে ভয়। আহিশের ডান হাতে শোভা পাচ্ছে ছোট একটা ছুরি! চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম, ছেলেটা তবে তার মেয়ের ক্ষতি করে দিবে? জড়োসড়ো ভঙ্গিতে ঘরে ঢুকবে পূর্বেই আহিশের গলার স্বর শুনে থেমে যায়,

~ ভয় পাচ্ছো কেন আম্মা? দুর্ভাগ্য বশত আমি তোমার চাচ্চু হ‌ই। তোমার শরীরে যে রক্ত ব‌ইছে আমার শরীরেও এক‌ই! রক্তের টান তো, একটু প্রকট হবেই! যাই হোক তুমি কিন্তু আমাকে চাচ্চু ডাকবে না! এটা শুনলে আমার রাগ হবে। এবার তুমি ঠিক করো তো আমাকে কি ডাকবে?
মিহির জড়তা কাটে না। ভয় ভয় চোখে আহিশ কে পরখ করে সে। ছোট বেলা থেকে অসুস্থ পরিবেশে বড় হ‌ওয়ায় কারো সাথে ভালো মেলামেশা করার সুযোগ মিহির হয়নি। সেখানে মা তো তাকে সতর্ক থাকতে বলেছে। কি করে মিশবে? মিহির নিশ্চুপতা কারণ আহিশ উপলব্ধি করতে পারে। আরেকটু নরম সুরে বলে,
~ আমি তোমাকে বকবো না আম্মা। বন্ধু হবো আমরা। কথা বলো। বলো আমাকে কি বলে ডাকবে! আঙ্কেল টাঙ্কেল কিন্তু শুনবো না, ব্রিটিশ দের মতো আঙ্খেল শুনতে ইচ্ছে করে না!
আহিশের বলার ভঙ্গিমা মিহির মন কাড়ে। অবশেষে তার মুখে হাসি ফুটে। খিল খিল করে হেসে উঠে সে। হাসি থামিয়ে বলে,

~ তুমি ঠিক করে দাও আমি কি ডাকবো?
আহিশ কিছু বলার জন্য মুখ খুলে, তবে বলতে পারে না। তার আগেই সালেহা বেগম মনিরা হাত ধরে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠে,
~ আব্বু ডাকবে! এত বলা বলির কি আছে?
আহিশের মুখ হা হয়েই থাকে। মায়ের মতলব বুঝে উঠতে পারে না। মনিরা খানিক লজ্জা পায় শাশুড়ির আচরণে। মনিরা’র দিক তাকিয়ে হ্যাবলাকান্তের মুখ বন্ধ করে নেয় আহিশ। ব্যাপারটা হজম করে মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে বলে উঠে,
~ সমস্যা কি মা? বিয়ে ছাড়া, ব‌উ ছাড়া, পরিশ্রম ছাড়া মেয়ে পেলাম! একদম সোনাই সোহাগা!
ছেলের লাগাম ছাড়া কথায় সালেহা বেগম হেসে উঠেন। মনিরা চাপা রাগ নিয়ে বাইরে যাওয়া ধরতেই আহিশ ধমকে বলে,

~ এই মেয়ে, দাঁড়াও। শুনো আমি কিন্তু তোমার স্বামীর মতো নয়, তাই অযথা আমার সামনে লাফালাফি করবে না। মেয়েকে সেভেজ শিখাচ্ছো ভালো কথা তাই বলে আব্বুর কাছেও আসতে মানা?
মনিরা কটমট করে তাকায়। সালেহা বেগম , মিহি নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছেন। মিটিমিটি হাসছেনও। দাঁতে দাঁত চেপে মনিরা বলে উঠলেন,
~ এই ছেলে! আপনার সামনে, পেছনে, আশেপাশে কোথাও আমি নেই। সাবধানে কথা বলবেন। আমার ইচ্ছেতে নিজের মতামত ফলাতে আসবেন না, খুব খারাপ হবে!
মনিরা কথাগুলো বলে ঠিক‌ই আহিশ কে জবাব দেয়। তবে কাঠিন্যতা দেখিয়ে ঘর ছাড়তে পারে না। কৌতুহল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আহিশ মুচকি হেসে কিছুক্ষণ মনিরার মুখশ্রীতে তাকিয়ে থাকে, তারপর মিহির দিকে ডান হাতে থাকা ছুরিটা এগিয়ে দিয়ে বলে,

~ তোমার আম্মু ভয় পাচ্ছে আম্মা। ভাবছে কালো হাত বুঝি আমার‌ও। এই যে ছুরিটা দিলাম, আব্বুকে যদি খারাপ মনে হয়, একদম বুকে বসিয়ে দিবে কেমন? ভয় পাবেনা। শুধু আব্বুকে নয়, যে তোমার সাথে খারাপ করতে চাইবে নিজেকে প্রটেক্টশন দিয়ে নিজেই রুখে দাঁড়াবে। বাকি আব্বু আছে তো। সব সামলে নিবে!
কি ভরসা যুক্ত কথা! মিহির চোখ কেমন আকস্মিক প্রাপ্তিতে চকচক করছে। মনিরা’র দৃষ্টিও কিছুটা নরম হয়। তবে দেখাতে চায় না। হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে‌। দৃষ্টিগোচর হতেই আহিশ শব্দ করে হাসে। সালেহা বেগম ছেলের খুশি দেখে ছলছল নয়নে। কতদিন এমন হাসতে দেখেন নি!

বেরোবে না, বেরোবে না করেও আজ বেরোলো আদিল। মেজাজ আজ সকাল থেকেই তুঙ্গে উঠে আছে। দুপুরের খাওয়া টাও রাগের বশে খায়নি। কোনো ভাবেই রাগ নিয়ন্ত্রণ আসছিল না তার, ঝটপট রেডি হয়ে অফিস চলে এসেছে। কাজের মধ্যে থাকলে হয়তো কমে যাবে‌। তবে কমার বদলে বাড়বে আদিল একটু হলেও টের পেয়েছিল। কিন্তু কিভাবে মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে বুঝতে পারেনি। আর এই না বুঝাটাই হয়তো ভুল হলো। অফিসের সামনে গাড়ি দাঁড় করাতেই কয়েক পাল লোক ছুটে এলো গাড়ির দিকে। একজন দরজা খুলে দিলো, আর গুলো আদিল কে কভার করে দাঁড়িয়ে গেল। শত্রুর বুলেট তাদের ভেদ করেও যেন আদিল কে ছুঁতে না পারে। এমন‌ই প্রচেষ্টা। রাগে চোখ মুখ রক্তিম হয়ে এলো আদিলের।রাগটা আকাশ ছুঁলো মেয়েলি অবজ্ঞাসূচক হাসিতে! মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো হাত!
কিছুক্ষণ আগেই অফিসে এসেছে মিরা।

চাকরির আবেদন করতে! তার ইদানিং আদিলের সাথে থাকতে বেশ লাগছে‌। তবে হুট করেই এমন বিনোদন পাবে কল্পনাও করেনি। তার একটা গুলি খেয়ে আদিল মাহমুদের প্রটেকশনের জন্য কয়েক পাল মানুষ লাগবে, এরকমটা ভাবতে গেলেও যেন মাথা ঝনঝন করে উঠে! হাসি গুলো বাঁধন ছাড়া উপচে পড়ছে‌। বেশীক্ষণ সেই হাসি ঠোঁটের ভাজে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হলো না সে, কেউ আকস্মিক তার মুখে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে দিয়েছে! ঘটনাটা সে স্বাভাবিক ই নিতো যদি বন্দুক দিয়ে শরীর স্পর্শ করা লোকটা আদিল হতো! কিন্তু না, কয়েক পাল চামচা’র মধ্যে সুদর্শন ভয়ংকর ধরণের একজন এমন উদ্যত করতে পেরেছে।

মুহুর্তেই ক্রোধ যেন দলা পাকিয়ে মস্তিষ্কে বারি খাচ্ছে। মুখশ্রীতে কঠোরতা এনে তীক্ষ্ম চোখে ছেলেটার দিকে তাকায় মিরা। ছেলেটা মিরাকে নেহাত হেলায় ফেলায় নিয়ে গৌরবের হাসে। মিরা একপলক এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে আদিল কে পরখ করে। স্বাভাবিক! শান্ত চোখে দেখছে সে অথচ কিছু বলছে না। মিরা খুব করে চায়ছে আদিল কিছু বলুক, শার্টের আড়ালে লুকিয়ে রাখা বন্দুক টা বের করে ছেলেটার কপাল বরাবর শুট করুক! এরকম চাওয়ার কোনো মানে সে খুঁজে পেল না, পেল না একরত্তি স্বস্তি। কেমন এক অস্থিরতা তাকে কাবু করে নিচ্ছে! মিরা এক্সপ্রেশন দেখে ছেলেটি আবার বিজয়ী হাসলো। বললো,

~ কে আপনি? হাসছেন কেন? স্যারের সামনে এভাবে হাসার সাহস হলো কি করে? প্রাণের মায়া নাই? এই চেইক কর মেয়েটাকে, দেখ সন্দেহ জনক কিছু আছে কিনা!
মিরার ভীষণ হাসি পায় এবার। তাকে কেউ প্রশ্ন করছে ‘প্রাণের মায়া নেই’! অথচ শ শ জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে তার মায়া কেন সহানুভূতিও হবে না। ছেলেটি কথাটা শেষ করেই বন্দুক সরিয়ে নিয়েছে। দুটো লোক কে এগিয়ে আসতে দেখে মিরা ভ্রু যুগল কুঁচকে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
~ মেয়েদের বডি পার্টস গুলো বেশ ভালো লাগে? শরীর উত্তেজনায় ছটফট করে?
আয়, আয় দেখে যা! তোদের তো চরিত্র গোবরের মতোই পবিত্র! চরিত্রহীন!
মিরা কথাগুলো গার্ডসদের বলছিল ঠিক‌ই তবে তার দৃষ্টি ছিল আদিলের চোখে। মিরা’র কথায় আদিল চোখ বুঝে নেয়।রাগতে সে চায়ছে না এখন‌। কিন্তু মেয়েটা যে পণ করেই এসেছে। গম্ভীর কন্ঠে গার্ড কে কিছু বলবে তার আগেই দুটো গার্ড কে মিরা’র ব্যাগের দিকে হাত বাড়াতে দেখে কুঁচকানো ভ্রু যুগল আরো কুঁচকে যায়। হুংকার দিয়ে বলে উঠলো,

~ স্টপ দিস!
মিরা হাসে, আদিলের রাগী মুখশ্রী দেখে হাসি চ‌ওড়া হয় তার। হুট করেই ছেলেটার হাত থেকে অন্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে রিভলবার ছিনিয়ে নেয়! ছেলেটি চমকে কিছু বলতে চায়, পূর্বের ঘটনা টা রিপিড হয়। ভয়ে থরথর করে কেঁপে উঠলো ছেলেটি। ট্রিগারে একটা চাপ, তার জীবন শুন্যে! মিরা হিসহিসিয়ে বলে,
~ তোর আর আমার মাঝে পার্থক্য এটাই, তুই কাজ অর্ধেক করেই বিজয়ের উল্লাসে মত্ত হস, আমি কাজ সমাপ্তির পর!
কথা গুলো বলে আদিলের দিকে তাকায়। তাচ্ছিল্য করে বলে উঠে,

~ যে নিজের প্রটেকশন দিতে পারে না সে আপনাকে দিবে কেমন করে?
মুখ থেকে বন্দুক বের করে ছুঁড়ে মারে মাটিতে। রাগ নেই এখন। সামান্য প্রতিশোধ নিতে পেরে আনন্দ হচ্ছে। আনন্দ টা কে বাড়িয়ে দিতে ন্যাকামো সুরে বললো,
~ দেখুন না আদিল, আমাকে আপনার কাছে যেতে দিচ্ছে না এরা। ভীষণ পঁচা!
ঠুমকো ন্যাকামো টা একদম পছন্দ হয় না আদিলের। চোখ রাঙিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে যায়। মিরাও আদিল কে অনুকরণ করে পিছু নেয়। গার্ড রা এবার কিছু বলতে পারে না। বলার‌ও কিছু নেই, তবে অপমানিত হ‌ওয়া ছেলেটি সমান ক্রোধে আড়ালে চলে যায়। ফোন বের করে কাউকে ফোন দেয়‌। প্রথম বার কেটে যায়, দ্বিতীয় বার রিসিভ হয়। কোনো রকম ফরমালিটি না করেই ছেলেটি বলে উঠলো,

~ মেয়ের দুর্দান্ত সাহস। ভাল্লাগছে! এরে আমি চাই!
অপর পাশ থেকে হাসির শব্দ। লোকটি হাসতে হাসতে বলে উঠে,
~ ভাল্লাগছে তো আমার‌ও। তেজ দেখে মনে হয় আগুন! যে মেয়ে আদিল মাহমুদের অফিসে ঢুকে তার‌ই কেবিনে দাঁড়িয়ে তার‌ই শরীরে বুলেট নিক্ষেপ করতে পারে, মামলি ভাবছো তাকে? বদমাইশি আলাপ বাদ দাও! আদি বুঝতে পারলে একদম গ* লা কেটে রেখে দিবে! তার শিকারে কারো নজর বরদাস্ত করবে না। সাবধান!
ছেলেটি এবার খেঁকিয়ে উঠলো,

~ মাথা গরম ক‌ইরো না চাচা। তোমার পোলা রে আমি এক চুল পরিমান ও ডরাই না। যেহেতু ভাল্লাগছে, সেহেতু শিকারের মালিক চেন্জ হয়ে গেল!
ফোন কেটে দেয় ছেলেটি। মুখে বাঁকা হাসি ধরে রেখে অফিসের ভেতর ঢুকে পড়ে। অপর পাশে থাকা অনল মাহমুদ বিকট শব্দে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে চোখে পানি আসার যোগাড় তবুও হাসি থামেনা। নতুন এক হিংস্রতর খেলা দেখার আশায় মন আনচান করে উঠে। লাঠি ভাঙলেও তার লাভ, না ভাঙলেও তার লাভ! ভয় কি?

~ আম্মু তাড়াতাড়ি এসো না, সময় নেই একদম!
আফীরের উঁচু কন্ঠস্বর। কামিনী বেগম ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। ছেলেকে দেখে মিষ্টি হেসে এগিয়ে যান। শার্ট ইন করে পড়ায় ফর্মাল লাগছে, গম্ভীরতার ছাপে কতটা সুদর্শন লাগছে তার ছেলে কি জানে? জানলে হয়তো কোনো একটা মেয়ে কে অন্তত পাত্তা দিতো। আর কত একা থাকবে? বয়স তো ঊনত্রিশের কোঠায়। সঙ্গী নির্বাচন করতে হবে না? ঠিক করলেন আজ ঠিক সন্ধ্যা বেলায় কথাটি তুলবেন। প্রকৃতির সৌন্দর্যে নিশ্চয়ই ছেলে হুট হাট রেগে যাবে না? সুযোগটাকেই কাজে লাগাবেন তিনি। মায়ের ভাবনা মিশ্রিত মুখের দিকে তাকিয়ে আফীফ হালকা হাসলো। গলা উঁচিয়ে আবার বললো,

~ এই জিয়া তুমি আসবে? নাকি তোমাকে রেখেই চলে যাবো! টাইম ওয়েস্ট আমি একদম পছন্দ করি না, তোমার জানার কথা!
জিয়া কথা বলে না। আফীফ বিরক্তি নিয়ে হাঁটা ধরবে কামিনী বেগম হাত ধরে আটকে দেন। মায়ের উপর কথা বলতে পারে না সে। তাই একরাশ বিরক্তি নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে র‌ইলো। জিয়াউল বের হলো আরো মিনিট দুই পর। হাতে বড় সড় তিনটে ব্যাগ। দেখে বেশ ভারীই মনে হচ্ছে। আফীফ তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে ব্যাগ গুলো পরখ করে কিছু বলবে তার আগেই জিয়াউল তড়িঘড়ি করে বললো,

~ স্যার, সবগুলো আমার কাপড়। ঘুরতে যাচ্ছি বুঝতেই পারছেন, মিনিটে মিনিটে চেন্জ করবো। একটা আদিবাসী পছন্দ হলে বিয়ে সেরে বাড়ি চলে যাবো। একদম সত্য কথা স্যার, বিশ্বাস না হলে চেইক করুন।
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে জিয়াউল সবগুলো দাঁত বের করে হাসলো। আফীফ আর ঘাঁটালো না। বিরক্তি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হাঁটা ধরলো। জিয়াউল হাফ ছেড়ে বাঁচলো যেন। শার্ট আলগা করে ভয় মিশ্রিত মুখে বুকে থুতু দিয়ে ফুস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। পকেট থেকে ফোন বের করে বললো,

~ প্রথমে সরি স্যার! তারপর, আদিবাসী পছন্দ হলে বাবা-মায়ের সাথে কথা বলার দায়িত্ব আপনার। তারপর, আমার জীবন নিয়ে টানাটানির জন্য আপনার ছেলের নামে জিডি করবো, সাক্ষর করে দিবেন। এখন রাখছি স্যার, বেঁচে থাকলে আবার কথা হবে!
নুরুল আলম সিদ্দিকী’কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দৌড় দিল জিয়াউল। আবার না তাকে রেখে চলে যায়! জিয়াউল গাড়িতে উঠতেই গাড়ি স্টার্ট দিল আফীফ। আঁকা বাঁকা পথ ধরে ছুটে চললো নতুন কোনো সৌন্দর্যের খুঁজে। এবার যাচ্ছে নিলাচল। বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ২০০০ ফুট উচ্চতায় টাইগার পাড়ায় পাহাড়ের উপর অবস্থিত নীলাচল। নীলাচল টাইগার হিল নামেও পরিচিত। নীল-সাদার অপরূপ মেলবন্ধন দেখতেই তো ছুটে যাওয়া! যাত্রা সুখের হোক!

আধা ঘন্টা ধরে নখ কামড়ে যাচ্ছে নাদিয়া। ক্যাফেতে বসে আছে সে। সম্মুখে বসে ভ্রু কুঁচকে নাদিয়া কে দেখে যাচ্ছে আফরা, মিরা। মেয়েটা হুট করে ডেকে নিয়ে এসেছে। তার উপর এমন অস্থিরতা। নিরবতা ভেঙে আফরা গম্ভীর কন্ঠে শুধালো,
~ এমন করছো কেন তুমি? কি জন্য ডেকেছো বলবে তো!
অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো নাদিয়া। মলিন স্বরে বললো,
~ চলো না, কোথাও ঘুরতে যাই।
~ ক্যাফে এসেও তোমার ঘুরা হয়নি?
মিরা’র সন্দেহী কন্ঠ। থতমত খেয়ে গেল নাদিয়া। মুখটাকে আরেকটু নরম করে বললো,

~ আমি বান্দরবানের বাসিন্দা হয়েও সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি নি। আজ হুট করেই মনে হলো ঘুরতে যাওয়ার কথা। তোমাদের ছাড়া ভরসা যোগ্য কাউকে পেলাম না। যাবে?
~ ইয়াপ, লেট’স গো! আমার‌ও কেমন ইচ্ছে করছে! তবে এই বিকেলে কোথায় যাবে? কাল সকালে যাবো, আমার এখন একটু কাজ‌ও আছে!
আফরা কথায় খুশি হলেও শেষের কথাটা মন খারাপ করে নিলো নাদিয়া। নাদিয়া’র ব্যবহার আজ আফরা ধরতে পারছে না। মেয়েটা তাদের সাথে খেলা খেলছে? নাকি মেয়েটার ব্যবহার এমনি? মিরা’র দিকে আড় চোখে তাকালো সে। মিরা’র দৃষ্টিতেও সন্দেহ। কিছুক্ষণ চুপটি করে ভাবলো আফরা। হেসে বললো,

~ আচ্ছা চলো। তুমি যেখানে নিয়ে যাবে আজ আমরা সেখানেই যাবো! সে হোক পাতালে!
খুশিতে খিলখিল করে হেসে উঠলো নাদিয়া। হয়তো জড়িয়েও ধরতো যদি না মধ্যখানে টেবিল না থাকতো! উল্লাসের সহিত বলে উঠলো,

হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ২৪

~ একদিনের কাপড় গুছিয়ে নাও! আমরা বাইক নিয়ে যাবো। তাড়াতাড়ি চলো, সময় নেই! উফ আমার যে কি খুশি লাগছে!
নাদিয়া তড়িঘড়ি করে বের হয়ে গেল। আফরা মিরা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। হয়তো নাদিয়ার নতুন আচরণের মানে খুঁজছে। তবে এত‌ই কি সহজ? কে জানে আবার কি হয়!

হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ২৬+২৭