হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ২৮+২৯

হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ২৮+২৯
Tahrim Muntahana

সূর্যের আনাগোনা নেই দিগন্তে। সাদা মেঘে ছেয়ে আছে আকাশ। মেঘের বিচরণে আকাশ এক অদ্ভুত মায়াময় রূপ ধারণ করে নিজের সৌন্দর্য জাহির করছে। মেঘ বৃষ্টির সন্ধিক্ষণ! নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে মেঘ ছুঁয়ে দিচ্ছে মিহি, খানিক পর পর লাফিয়ে উঠছে। তার ধারণার বাইরে ছিলো সব। হাত দিয়েও মেঘ ছোঁয়া যায়? কেমন উষ্ণ পানি হয়ে হাতে মিশে থাকে। মেঘের দেখা পেতেই তো খুব ভোরে চলে এসেছে রিসোর্ট থেকে। খুশিতে আটখানা হয়েই মিহি আহিশ কে প্রশ্ন করে,

~ আব্বু মেঘ কি খাওয়া যায়?
হাসে আহিশ। খানিক সময় তাকিয়ে থাকে মিহির মুখের দিকে। প্রকৃতির থেকেও অসীম সৌন্দর্যের খোঁজ পায় আহিশ। এত মায়া কেন চেহারায়? কার সৌন্দর্য পেলো এই মেয়ে? বাবার কোনো কিছু পেয়েছে বলে মনে হয় না, তবে কি মায়ের? কথাটি ভাবতেই আহিশের দৃষ্টি পড়ে বড় বড় পাপড়ি বিশিষ্ট দু নয়নের অধিকারী মেয়েটির দিকে‌। যার চোখে খেলা করছে আকাশ ছোঁয়া বিস্ময়। মুখে মিশে আছে অদ্ভুত মুগ্ধতা। আহিশ হুট করেই আবিষ্কার করলো এই মেয়ের সম্পূর্ণ তার মায়ের মতো হয়েছে। নাক, চোখ, ঠোঁট অবিকল মায়ের মতো! মা-মেয়ের সৌন্দর্য মেলাতে আহিশ এমন ভাবে ডুবে গেছে বাম ভ্রু’র সাথে লাগোয়া লাল তিলটাও আহিশ আবিষ্কার করেছে। এক চিলতে হাসি ফুটে তার ঠোঁটের গহ্বরে। তবে সেটা ঠোঁটে ভাসতে পারে না, পূর্বেই মিহির ডাকে ঘোর থেকে বের হয় সে! কি ভাবছে এসব? মাথা ঝেড়ে জোরে শ্বাস নেয় সে। কৌতুহল ঘিরে ধরেছে তাকে! নিজেকে সহজ করে নিয়ে মিহিকে নিজের পাশে দাঁড় করায়। কোনো রকম বাক্য ব্যয় না করেই মিহির দিকে ইশারা করে হা করে। এইযে তারা পাহাড়ের বুকে দাঁড়িয়ে মেঘের বৃষ্টিতে ভিজছে! আব্বুকে অনুসরণ করে মিহিও হা করে দাঁড়িয়ে থাকে। টের পায় তার ঠোঁট ভিজে আসছে, হয়তো আরো কিছুক্ষণ হা করে থাকলে পানি জমে গড়িয়ে পড়বে গ্রীবাদেশে। সে ধৈর্য তার হলো না, তার আগেই লাফিয়ে জড়িয়ে ধরলো আহিশ কে। আহিশ কিছুটা শব্দ করে হেসে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

~ এবার রিসোর্ট চলো। আরো অনেক কিছু দেখার আছে আম্মা!
মিহি মাথা নাড়লো দু বার। আহিশ মুচকি হেসে শক্ত করে হাত ধরলো। আহিশ ও মেয়ে কে চোখ ছোট ছোট করে দেখছিল মনিরা। তার কেন জানি দুজন কে একসাথে দেখতে ভালো লাগছে। অবচেতন মনে নাড়া দিল, ‘আহিশের পাশে সে দাঁড়ালে তিনজন কে আরো সুন্দর লাগবে বুঝি!’ একপ্রকার মনের বশীভূত হয়েই মনিরা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে আহিশের পাশে দাঁড়ালো। চোখ ঘুরিয়ে দেখলো তিনজন কে একসাথে! মুখ থেকে কেমন অস্পষ্ট স্বরে বেরিয়ে আসলো,

~ পারফেক্ট ফ্যামিলি!
মিহির সাথে কথা বলায় ব্যস্ত থাকায় আহিশ মনিরার মনোভাব সম্পর্কে একটুও টের পেল না। শাশুড়ির হাতের ছোঁয়ায় ঘোর থেকে বের হলো মনিরা। সালেহা বেগম হাসছেন‌। মনিরা লজ্বায় মাথা নিচু করে নিলো। ছি ছি কি ভাবছে? দু গাল রক্তিম হতেই সালেহা বেগম শব্দ করে হেসে উঠলেন। মনিরা কানে ফিসফিস করে বললেন,
~ মন কে আটকিয়ে লাভ নেই! যা হচ্ছে হতে দাও!

নীলাচলের বাইরের দিকটা ছিন্নভিন্ন, খন্ড, অখন্ড পাহাড় দ্বারা সজ্জিত হলেও ভেতরটা খুব প্রশান্ত। বাহ্যিক দৃশ্য দেখে নাক ছিটকালে, অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হতে হবে। নীলাচল হয়তো মনুষ্য জাতির এক অদ্ভুত রহস্যের প্রতীক। এই যে মানুষের বাহ্যিক দিক দেখে বিচার করে অনেকেই ভুল মানুষকে নিজের সাথে জড়িয়ে ফেলে, আবার অনেকেই সঠিক মানুষের কদর করতে পারে না। নীলাচল ছিন্নভিন্ন পাহাড়ের অভ্যন্তরে মানুষের সুশ্রী, সরল মনের মতোই প্রশান্ত ধরে রেখেছে। কোথাও বিস্তীর্ণ দিগন্তের ঢালে ঘোরাঘুরির আঁকাবাকা রাস্তা। কোথাও পাহাড়ি পাড়া, উপজাতিদের সরল বসবাস! আর তার সঙ্গে রয়েছে রুপালি নদী। শিল্পীর আঁকা ছবির মতোই জীবন্ত বাসভূমি! রূপকথার রাজ্যে যেমন প্রকৃতি মায়া উপচে দেয়, এই পাহাড়ি পাড়া গুলোতেও যেন একরাশ মায়া উপচে দিয়েছেন বিধাতা। ভোরের মেঘেরা যখন খেলতে খেলতে লুকিয়ে পড়ে সূর্যের আগমনে, মেঘহীন পরিষ্কার আকাশ তখন নীলাচল থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়। খোলা চোখে অনায়েসেই উপলব্ধি করা যায় সমুদ্রের উচাটন, বারংবার তীরের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়া, বিশাল বড় নারিকেল গাছ গুলোর হাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে নেচে উঠা।

পাখি যেমন আকাশে ডানা মেলে পুরো বিশ্ব ঘুরে বেড়ায়, সৌন্দর্য উপভোগ করে, সঙ্গী খুঁজে, খাবারের খোঁজ করে। তেমনি পাখির চোখে পুরো বান্দরবান শহরকে দেখে নিচ্ছে আফীফ। সৌন্দর্যের খোঁজে, মুগ্ধতার খোঁজে চোখ ঘুরাচ্ছে বার বার। বরাবরের মতোই হাতে রয়েছে ছবি তোলার কৃত্রিম যন্ত্রটি। কামিনী বেগম আফীফের মতো উন্মাদ হয় নি। সরল চোখে প্রকৃতির দুর্বোধ্য রহস্য খোঁজ করছেন। বেলা বেশ বাড়তেই আফীফ মা কে তাগাদা দিয়ে বলে,
~ আম্মু চলো, আরো অনেক কিছু দেখার বাকি আজ।

কামিনী বেগম হ্যা না কিছু বলেন না। ছেলের পিছু পিছু হাঁটতে থাকেন। বসের ইশারা পেয়ে জিয়াউল ও পিছু নেয়। মন টা বেশ খারাপ। বড় স্যার ঝেড়েছে ভীষণ। অবশ্য ভুল তার‌ই, সে কেন মেয়েদের সামনে কথা বলতে পারে না? কাল যদি একটা ধমক দিয়ে কয়েকটা কথা শোনাতো তার কি এক্সট্রা টেনশন করতে হতো? হতো না। মনে মনে পণ ও করে নিয়েছে সে, এরপর মেয়েটার সাথে দেখা হলে হিন্দিতে দুটো গালি দিবে। আবার ভাবে হিন্দি বুঝে ফেললে তাকে কেলানি খেতে হবে‌। শেষমেষ ঠিক করেছ কোরিয়ান ভাষায় তিনটে গালি দিবে। দিয়েই ছাড়বে!

নিজের ভাবনায় ব্যস্ত জিয়াউলের ভাবনায় ফাটল ধরলো কারো শক্তপোক্ত পিঠে ধাক্কা খাওয়ায়। থতমত খেয়ে উপরে চাইতেই বসের রক্তচক্ষু দেখে ভড়কে যায় সে। ঢুক গিলে কামিনী বেগমের দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে নেয়। আফীফ রাগ টাকে হজম করতে পারে না।শক্ত হাতে জিয়াউলের বাহুতে চাপট দিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে উঠে,
~ আমি না দাঁড়ালেই পাহাড়ের বুকে তোমার নামটাও খুদায় হয়ে যেত। লিখা থাকতো, ‘ঘুরতে এসে ভাবনায় নিমজ্জিত এক যুবক পাহাড়ের বুকে জীবন বিসর্জন দিয়ে নীলাচল কে করেছে সমৃদ্ধ!’ তখন মানুষ স্পট টাকে নীলাচল নয় জিয়াচল বলেই চিনতো। আহম্মক কোথাকার!
জিয়াউল যেন নিজের মৃত্য কল্পনা করে, মানুষের মুখে মুখে আফসোসের সুর‌ও কল্পনা করে ফেললো। মাথা ধরে চিৎকার করে বলে উঠলো,

~ না.. এ হতে পারে না। আমি বাঁচতে চাই শত বছর। উপজাতি মেয়েকে বিয়ে না করা পর্যন্ত আমার কিছু না হোক। আমিন!
কামিনী বেগম খিলখিল করে হেসে দিলেন। আফীফের রাগ চরমে পৌঁছালেও মায়ের হাসি মুখ দেখে কিছু বললো না। গম্ভীর মুখে হাঁটা ধরলো মায়ের হাত ধরেই। জিয়াউল মাথা চুলকে নিজের গোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে হাঁটছে। প্রথম বারের মতো ভুল এবার করেনি। প্রতিটা ঘাসের সংখ্যাও যেন গুনছে সে! এমন ভাবে পরখ করে হাঁটছে!

ঘুমে বিভোর আফরা-মিরা। দুটো মানুষ এক‌ই বিছানায় ঘুমিয়ছে অথচ কারোর শরীরের সাথে একটু স্পর্শ‌ও লাগে নি। বিছানায় গোছালো এলিয়ে রাখা শরীর। দেখে মনে হচ্ছে মাঝখানে কোনো অদৃশ্য দেয়াল দুজন কে দু দিক আলাদা করে রেখেছে‌‌। মাঝখানে রাখা ফোন মিনিট দুয়েক হবে বেজে চলছে, কারো স্মরণের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে ফোনের মালিক কে। তবে ফোনের মালিক যে ঘুমে! অপর পাশের মানুষ টি বিরতিহীন ফোন দিয়েই যাচ্ছে। ঘুম হালকা হয়ে আসে মিরা’র। চোখ খুলে না, শব্দ অনুসরণ করে হাত বাড়ায় ফোনের দিকে। আন্দাজে আঙুল ছুঁয়ে কানে ধরতেই অপর পাশ থেকে গম্ভীর সুর ভেসে আসে,
~ কেউ যখন লাগাতার ফোন দেয় ধরে নিতে হয় গুরুতর কিছু। মস্তিষ্ক ছোট হয়ে গিয়েছে নাকি?
কন্ঠ চিনতে অসুবিধা হয় না মিরা’র। ফট করে চোখ খুলে, কান থেকে ফোন নামিয়ে দৃষ্টি ফেলতেই কিছুটা অবাক হয়।

পাশে তাকায়, আফরা এখনো ঘুমে। তার ফোন নয় এটি, আফরা’র ফোন। রিংটোন এক হ‌ওয়ায় বরাবরের মতো ভুল করেছে। কিছুটা হাসলো মিরা। নাটকীয় ভঙ্গিমায় বলে উঠলো,
~ দুঃখিত জনাব। আপনি যাহা কে ফোন দিয়া উক্ত কথা টি বলিলেন তিনি ঘুমে বিভোর থাকায় শ্রবণ করিতে পারেননি। অনুগ্রহ করিয়া আমাকে বলিলে আমি কৃতার্থ হ‌ইবো এবং আপনার গুরুত্বর বার্তা টি তাহার কাছে পৌঁছাইয়া দেওয়ার দায়িত্ব পালন করিয়া ধন্য হ‌ইবো!
অন্যসময় হলে হয়তো আদিল তর্কে যেত। তবে সেরকম পরিস্থিতির বা মনোভাব এখন নেই। তবুও কি সে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র? নিজেও নাটকীয়তা বজায় রেখে বললো,

~ আমি আপনার কাছেও ফোন দিয়াছিলাম জনাবা। আপনি আপনার ফোন না তুলিলে পারিলেও আপনার সঙ্গীর ফোন তুলিতে পারিয়াছেন। যাহার জন্য কৃতার্থ আমি। অনুগ্রহ করিয়া নাদিয়ার কোথায়, কি করছে খবর টি আমাকে জানাইবেন। রমনী হয়তো মদ খাইয়া মাতাল হ‌ইয়া এখনো বিছানায় পড়িয়া র‌ইয়াছে। এটি খুব‌ই গুরুত্বপূর্ণ। দায়িত্ব টি যথাযথ পালন করিলে ধন্য হ‌ইবো!
খট করে কল কেটে দিলো আদিল। মিরা শব্দ করে হেসে উঠলো‌। এই হাসি স্বচ্ছতার ইঙ্গিত দেয়। ঘুমঘুম চোখে মিরা’র হাসি উপভোগ করে আফরা। ঘুম থেকে উঠেই নির্ভেজাল সুশ্রী হাসি দেখে হৃদয় তার শক্ত খোলস ছেড়েছে‌। হুট করেই গোছালো বিছানা অগোছালো করে মিরা’র বুকে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ে সে। ভীষণ ভাবে চমকায় মিরা। চোখ তার বৃহৎ গোলাকৃতির হয়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম‌। আফরা চোখ বন্ধ করেও মিরা’র রিয়েকশন বুঝতে পারে। হেসেই এলোমেলো গলায় বলে,

~ চোখ ছোট কর, চোখ ছাড়া তোকে ভীষণ বাজে লাগবে। এত অবাক হ‌ওয়ার কিছুই হয়নি!
থেমে যায় আফরা। লজ্জা লাগছে খানিক। মিরা খুব তাড়াতাড়িই নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। দু হাত প্রসারিত করে আগলে নেয় শক্ত করে। আফরা আবার বলে উঠে,
~ সারা পৃথিবী এক দিকে, তুই অন্যদিকে! আমি তোকেই বেছে নিবো মিরু। হোক না সেটা অন্ধকারে ঠাসা কোনো গহ্বর!

মিরা’র চোখ কেমন ভিজে আসতে চায়। আবার ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছে সে। মেয়েটা আজ প্রথম তাকে খোলামেলা ভালোবাসা দিলো। কতদিন পর সে মেয়েটার আদরমাখা বুলি শুনতে পাচ্ছে। চোখের কার্ণিশে জল লুকোচুরি খেলে। নিঃশ্বাসের ধমকে শরীর কেঁপে উঠে মিরা’র। আফরা বুঝতে পারে, তড়িঘড়ি করে মিরা’র বুকে থেকে উঠে তেজী দৃষ্টিতে মিরা’র চোখের দিকে তাকায়। জল লুকাতে পারে না মিরা। মাথা নত করে নেয়। রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় আফরা’র। মেয়েটাকে কতবার বলেছে কেঁদে নিজেকে দুর্বল প্রমাণ না করতে। অথচ মেয়েটা কি করছে? রাগ প্রকাশ করতে না পেরে আফরা লাথি বসায় মিরা’র কোমরে।

ঠাস করে নিচে পড়ে যায় মিরা। আহম্মকের মতো নিজেকে দেখে যখন বুঝতে পারে কি হয়েছে ততক্ষণে আফরা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়েছে। রাগে বিড়বিড় করে কোমর ধরে উঠে দাঁড়ায় সে। এই টুকু ব্যাথায় কিছু না হলেও চরম অপমানিত হয়েছে সে। শোধ‌ না তোলা পর্যন্ত ক্ষান্ত হবে না। দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। পাশের ঘর টাই নাদিয়ার। কয়েকবার নক করে সাড়া পায় না। নিচে চলে যায় এক্সট্রা চাবির জন্য। হাই তুলে হাত প্রসারিত করে আড়মোড়া ভাঙ্গে সে। পরনে ঢিলা ট্রাউজার, টিশার্ট। এলোমেলো চুলে সে আনকমফোর্ট ফিল করে না। এই যুগে সব‌ই স্টাইল। ম্যানেজার ভোরেই বসে পড়ে নিজ জায়গায়। মিরা কে দেখে আড়চোখে তাকালো সে, আবার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কারণ ছাড়া তাকে কিছু মেয়েদের ইভটিজিংয়ের স্বীকার হতে হয়। কারণ ছাড়া বললে ভুল হবে, বেশ সুদর্শন যুবক হ‌ওয়ায় এমন টা ফেইচ করতে হয়। তবে সে হয়তো ভুলে গেছে সব মেয়ে এমন নয়। ম্যানেজারের এমন ব্যবহার দেখে ভ্রু কুঁচকালো মিরা। তীক্ষ্ম কন্ঠে বললো,

~ আমাকে দেখতে পেয়েছেন?
ছেলেটি থতমত খেয়ে যায়। হাতের কলম ডায়েরির উপর রেখে আমতা আমতা করে বললো,
~ জি!
~ তাহলে না দেখার ভান করে বসে আছেন কেন? দরকার ছাড়া আপনাকে দর্শন দিতে এসেছি? না কি আপনি ভাবছেন খানিক সুন্দর বলে অন্যান্য মেয়েদের মতো আমিও আপনার ফোন নম্বর চাইতে চলে এসেছি?
কাল রাতে এই লোকের কষ্টের মুহূর্ত গুলো মিরা’র চোখে পড়েছে‌‌। একটা গ্যাংয়ের মেয়েগুলো হয়তো মজা করেই ম্যানেজারের পিছু পিছু ঘুরছিল। ম্যানেজার চোরা চোখে চারপাশ দেখে। নাহ কেউ নেই। বিনীত সুরে বলে উঠে,
~ আ’ম সরি ম্যাম। আমি ভেবেছিলাম.. যাই হোক আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?

কথা পেচায় না মিরা। নাদিয়া রুমের চাবীটা নিয়ে হাঁটা ধরে। চারপাশ দেখলে হয়তো কিছুটা বিব্রত হতো সে‌‌। কামিনী বেগম অবাক চোখে মিরা’র যাওয়ার দিক তাকিয়ে থাকে। মেয়েগুলো যে এই রিসোর্টেই উঠেছে সে ভাবতেও পারে নি। খুশিতে আটখানা হয়ে ছেলের দিকে তাকালো সে। আফীফের এদিকে মন নেই। সে কথাগুলো শুনলেও না শোনার ভান করেই অদূরে তাকিয়ে আছে‌। হতাশ নিঃশ্বাস ফেললেন কামিনী বেগম। ছেলেটার বিয়ে, প্রেমে কি সমস্যা সেটাই তিনি বুঝতে পারেন না। বিরক্তি দৃষ্টি তে ছেলের দিকে তাকিয়ে হনহন করে নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরলেন। আফীফ বুঝেও ভাবালেশ! কিছুক্ষণ থেকে নিজেও চলে গেল।

দরজা খুলে ঘরে ঢুকেছে মিরা! ভেতরে যেতেই কপালে বড়সড় ভাজ পড়ে তার। এলোমেলো ঘর, চারপাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জিনিস গুলো‌। মদের খালি বোতল তিনটি পড়ে আছে ফ্লোরে। বিছানার এক কোণে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে নাদিয়া। পা জোড়া মাটিতে এসে ঠেকেছে। ভাঙাচোরা জিনিস ডিঙিয়ে নাদিয়া’র পাশে বসে মিরা। চুল গুলো এলোমেলো মুখের উপর বিচরণ করছে। হাত বাড়িয়ে চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে আস্তে আস্তে বলে উঠে,
~ কষ্ট হচ্ছে নাদু? খুব কষ্ট হচ্ছে? জানো আমার‌‌ও কষ্ট হয়! ঠিক বুকের বাম পাশ‌টা অনবরত আত্মচিৎকারে ফেটে পড়ে, দগ্ধ হয়। আমি কিন্তু মারা যায় নি! তুমি কেন মারা যাচ্ছো? এটা ঠিক না, আমাদের আরো কতদিন একসাথে বাঁচার কথা!
ক্ষীণ শব্দে হাসে মিরা। নাদিয়া’র গালে হাত রেখে ডাকে। কয়েকবার ক্রমান্বয়ে ডাকার পর পিটপিট করে চোখ খুলে নাদিয়া। মিরা কে নিজের ঘরে দেখে খানিক অবাক‌ও হয়‌। মাথা ধরে উঠে বসে। কিছু মুহূর্ত চুপ থেকে মিরা কে উদ্দেশ্য করে বলে,

~ তুমি, এখানে?
~ তোমার ভাইয়া ফোন দিয়েছিল, ব্যাক করো ফাস্ট! ঘুরতে এসেছো ভুলে গেছো? মাতলামি এখানেও ছাড়ছো না! মাঝে মাঝে মদের উপর‌ই মায়া হয় আমার!
মদ নিয়ে কটুক্তি একমাত্র আহিশের মুখেই সহ্য করতে পারে নাদিয়া। মিরা’র কথাগুলো কাঁটা’র মতো মস্তিষ্কে বিঁধছে যেন। চেঁচিয়ে কিছু বলবে তার আগেই মিরা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
~ আমার উপর চেঁচাবে না। ওয়াশ রুম থেকে মানুষ হয়ে এসে ভাই কে ফোন দাও। দেখা যাবে ফোন না ধরার অপরাধে এখনি এসে তোমার গলা চে* পে ধরলো!

মুচকি হেসে বেরিয়ে যায় মিরা। নাদিয়া আর ভাবে না। ভুল বলেনি, দৌড়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন খুঁজতে থাকে‌‌। খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে বিছানার এক কোণে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে। রাগে ভাঙচুর করেছে সে। খেয়াল ছিলো না‌। আদিলের ফোন থেকে বাইশ মিসড কল দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় তার। বড় সড় ঢুক গিলে কল ব্যাক করে। রিং হওয়ার আগেই যেন ধরে নিতো, এমন ভাবেই ফোন রিসিভ করে আদিল। অহেতুক কথা বলে সময় নষ্ট করতে চায় না। গম্ভীর কন্ঠে আদেশ করে,
~ নীলাচল আছো! আজ সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরবে। নীলাচলের বাইরে এদিকে এক পা ও বাড়াবে না। আমার অর্ডার! জেদ ধরে থানচি’র দিকে পা বাড়ালে নিজ হাতে তোমার পা কাটবো আমি!

সেনা নিবাসে বসে আছেন নুরুল আলম সিদ্দিকী। গম্ভীর মুখে কিছু একটা ভাবছেন। সামনে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে কতগুলো ফাইল, কতগুলো ছবি। এতক্ষণ এগুলোই মনোযোগ সহকারে দেখছিলেন। রহস্যের মাঝপথে থেমে যাচ্ছেন বারংবার। না সামনে এগোতে পারছেন, না পিছিয়ে আসতে পারছেন। ফুস করে নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ান তিনি। চায়ের প্রয়োজন বোধ করছেন খুব করে‌‌। কয়েক পা এগিয়ে উত্তর‌দিকের জানালা টা খুলে দিতেই সাঁই সাঁই করে উত্তরে হাওয়া ঢুকে এলো, নাকে মুখে বারি খায়, কাগজ গুলোকে উড়িয়ে দেওয়ার বাহানায় নাচিয়ে তুলে। হাওয়ার বেগ পর্যাপ্ত নয় বলেই হয়তো রক্ষা।

আবার ফিরে এসে চেয়ারে বসেন তিনি। ইতিমধ্যে চায়ের অর্ডার দিয়েছেন। এলো বলে। চিন্তিত দৃষ্টি মেলে একটি ফটো হাতে তুলে নেন। ছেলে-মেয়ে দুজন দাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি। দুজনের ঠোঁটের ভাজেই হাসি। হয়তো প্রথম দেখাই যে কেউ ই বলে দিবে ‘নাইস কাপল’। কিন্তু নুরুল আলম সিদ্দিকী বলতে পারছেন না। খটকা লাগছে ভীষণ। গভীর চিন্তায় ফাটল ধরলো কারো অনুমতির শব্দে‌। চা নিয়ে এসেছে, চিন্তিত মুখ নিয়েই চায়ের কাপে চুমুক দেন তিনি‌। সফিক আলী দাঁড়িয়ে থাকেন, ইতস্তত বোধ করছে‌ন। নুরুল আলম সিদ্দিকী একপলক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে নজর ফিরিয়ে নিলেন। সফিক আলী একটি খাম নুরুল আলম সিদ্দিকী’র দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন,
~ স্যার দীর্ঘদিন ধরে আপনাদের সাথে আছি। কিছুটা বিচক্ষণতা আমার মাঝেও আছে। সাহস করে কিছু বলতে এলাম।

দীর্ঘদিন হলো সফিক আলী ঢাকা নিবাসে আছেন। টুকিটাকি কাজ করে দেন। ছোট এক খুপরির মতো বাসা নিয়ে থাকেন‌। স্ত্রী মারা গেছেন বেশ কয়েকটা বছর হলো‌। মেয়ে একটা বিয়ে দিয়েছেন, ছেলে চাকরি করে ব‌উ নিয়ে আলাদা হয়ে গেছে। সংসারের চাপে মেয়েও তেমন খোঁজ খবর নিতে পারে না। নুরুল আলম সিদ্দিকী’‌ই নিয়ে এসেছিলেন তাকে‌। সেই যে প্রথম দিন বলেছিলেন ‘বিশ্বাসের মর্যাদা জীবন দিয়ে হলেও রাখবে’! আজ পর্যন্ত চোখ তুলে কথা বলেন নি নুরুল আলম সিদ্দিকী’র সামনে। তাদের সাথে থাকতে থাকতে নিজের মস্তিষ্ক কে চতুর করে নিয়েছেন, সাথে শুদ্ধ বাসাটাও কি সুন্দর আয়ত্ব করেছেন‌। শুদ্ধ ভাষার মধ্যে অশুদ্ধ ভাষায় কথা বললে নাকি তার লজ্জা করে‌।

নুরুল আলম সিদ্দিকী ভ্রু কুঁচকে খামের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। সফিক আলীর কথায় মাথা নেড়ে সায় দিলেন। দরকার ছাড়া খুব একটা কথা বলা পছন্দ করেন না তিনি। সফিক আলী অনুমতি পেয়েই বললেন,
~ এক সপ্তাহ আগের কথা স্যার। বাড়িতে ফিরছিলাম আমি, সন্ধ্যা বেলা। একটা মেয়ে সামনে দাঁড়িয়ে এই খাম টা দিলো। আর বললো এই খাম সৎ কোনো বড় অফিসারের হাতে দিতে। প্রথমে রাজী হয়নি আমি। মেয়েটি তখন এমন ভাবে বললো, আপনাদের সাহায্য হতে পারে। আমি আর না করতে পারি নি। পরের দিন এসে আপনাকে না পেয়ে ছোট স্যার কে দিয়েছিলাম। তিনদিন পর খামটা ফেরত দিয়ে বললো, কথাটা যেন কেউ না জানতে পারে। খামটা পুড়িয়ে ফেলতে। আমার আর মনে ছিলো না। তার পরেই দেখি ছোট স্যার ছুটিতে চলে গেল আর আপনি সবসময় চিন্তিত মুখে থাকেন। তাই ভাবলাম খামটা আপনাকে দেখাই।

মনের ভেতর যেন গরম হাওয়া ব‌ইয়ে গেল। খামটা এক টানে নিজের হাতের মুঠোয় নেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও তেমন কিছুই করলেন না নুরুল আলম সিদ্দিকী। গম্ভীর মুখে অবাকতাও ফুটলো না। ধীরে সুস্থেই নিজের হাতে নিলেন। সফিক আলী অনুমতি নিয়ে চলে গেলেন। নুরুল আলম সিদ্দিকী খামটা খুললেন যত্ন নিয়ে। পরিষ্কার হাতের গুটিগুটি অক্ষরে লেখা,
“শ্রদ্ধেয় লেফটেন্যান্ট নুরুল আলম সিদ্দিকী,

অবাক হচ্ছেন না? দিতে বললাম সৎ কোনো অফিসার কে অথচ লিখছি আপনাকে। সিক্রেট নয় বিষয় টা তবুও খোলাসা করছি না। কুশলেও যাচ্ছি না। এসব আমার সাথে যায় না। আসি মূল কথায়। জেলাটা বান্দরবান। নান্দনিক সৌন্দর্যে ঘেরা শহর। যেদিক চোখ যায় মুগ্ধতা ঘিরে ধরে। কিন্তু রাত? অন্ধকারে বিশাল পাহাড় গুলো যে দানবের আকার ধারণ করে। আড়াল করে নেয় মানুষ খেকো দৈত্যদের। ভাজে ভাজে রহস্য রেখে দিনের আলোয় ছড়িয়ে দেয় রূপের বাহার।
রহস্য ভেদ করতে যে আপনাকে দরকার। শুনেছি বান্দরবান শহরের প্রতি আপনার দুর্বলতা প্রকট। আপনার অপেক্ষায় রইলাম। আমাকে খোঁজ করে লাভ নেই। কোথাও হাতড়ে আমাকে পাবেন না। আপনার ক্ষমতা বিশাল থাকলেও অন্ধকারে মিশে থাকা রহস্যময়ীকে চিনতে পারবেন না। অযথা সময় নষ্ট! শুভকামনা রইল সিক্রেট অপারেশনের জন্য। স্বাগতম পুরোনো সেই রহস্যের শহরে!

আমি
বহুরূপী ধোঁয়া, কুয়াশার আড়ালে লুকিয়ে থাকা তীর্যক রশ্মি, অন্ধকারে মিশে থাকা নিশাচর!”
পরপর তিনবার চিরকুট টি পড়লেন নুরুল আলম সিদ্দিকী। ঘামছেন তিনি। মস্তিষ্কের মধ্যে কিলবিল করছে বহু পুরোনো দাগ কাটা অনুভূতি। ক্রমশ উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন। শুধু মাত্র সন্দেহের বসে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ঢের বুঝেছেন। তার কাছে থাকা কুড়ানো কিছু ফাইলে কিছুই প্রমাণ করবে না। লাগবে উপযুক্ত প্রমাণ, সাক্ষী। এখন মনে হচ্ছে তার ধারণার বাইরে রহস্যের খেলা চলছে। যেখানে চরিত্রের শেষ নেই! সবগুলোই উড়ো ধোঁয়ার মতো। কিছুটা সময় নিয়ে বসে থাকেন নুরুল আলম সিদ্দিকী। টেবিলের উপর রাখা পানির গ্লাস তুলে নিয়ে এক চুমুকে পুরোটা শেষ করেন। পকেট থেকে নিজের সিক্রেট ফোন বের করে ঝটপট ফোন লাগালেন। রিসিভ হতেই আদেশ কন্ঠে বললেন,

~ লেফটেন্যান্ট নুরুল আলম সিদ্দিকী স্পিকিং। টিম-১ শুনতে পাচ্ছেন? টিম-২ শুনতে পাচ্ছেন? টিম-৩ শুনতে পাচ্ছেন? নুরুল আলম সিদ্দিকী বলছি। সিক্রেট মিশন এখানেই সমাপ্তি। ফিরে আসুন নিজেদের স্থানে। শুনতে পাচ্ছেন? ইমিডিয়েট সেনানিবাসে ফিরে আসুন।
যন্ত্র মানবের মতোই কথাগুলো বললেন নুরুল আলম সিদ্দিকী। নেটওয়ার্ক আপ-ডাউন করছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সমস্বরের আওয়াজ ভেসে আসলো। ফিরে আসছে তারা। নুরুল আলম সিদ্দিকী ফোন কেটে নির্জীব হয়ে বসে পড়েন। অসুস্থ মন হয়ে উঠছে উতলা। কূল কোথায় এই রহস্যের? আর কত হারাবে সে? হারানোর বলতে আছেই তো দুটো মানুষ! তারাই যে এখন রহস্যের বেড়াজালে আবদ্ধ! ফিরবে তো তার কাছে? একদম সহিসালামতে!
আরো কিছুটা সময় ভেবে তিনি কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিলেন। ছেলের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ফোন দিলেন ছেলের ফোনে।

পাহাড়ের ভাজের মধ্যে নীলাচলে রয়েছে একাধিক সৌন্দর্য। পর্যটক দের সুবিধার্থে নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় কাচের টাওয়ার, দৃষ্টি নন্দন সিঁড়ি, গোলঘর এবং চাইনিজ রেস্টুরেন্ট। কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতের বিপরীতে এখানে সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ি সমুদ্রের। যেদিকে চোখ যায় পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ের এই সমুদ্র প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের মনকে হার মানাতে বাধ্য। কঠোর হৃদয়কেও মুগ্ধ হতে বাধ্য করেছে। বাধ্য করেছে চোখ মেলে দেখতে। কাচের টাওয়ার দেখতে এসেছে আফীফ রা। কামিনী বেগম ভিতু চোখে দেখছেন। ভয় করছে কাচ ফেটে না পড়ে যান তিনি। ‘কাচ গুলো উন্নত, দৌড়ালেও ভাঙবে না’ বারংবার বুঝিয়েও আফীফের কোনো লাভ পায় নি। তাই আশা ছেড়ে উপরের উঠার চিন্তা বাদ দিয়েছে‌। নিচ থেকেই ক্যাপচার নিচ্ছিল সে। পকেটে থাকা ফোন বেজে উঠে। দরকারি ফোন সে খুব করে বুঝতে পারে, হয়তো ফোন কে দিয়েছে সেটিও বুঝে ফেলেছে। বিরক্ত হয় খুব। বলেছিল একা থাকতে চায়। বিরক্তি নিয়েই ফোন রিসিভ করে। অপর পাশ থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী বলে উঠেন,

~ লেফটেন্যান্ট নুরুল আলম সিদ্দিকী বলছি। আফীফ মুনতাসির শুনতে পাচ্ছেন আপনি?
কপালে বড় সড় ভাজ পড়ে আফীফের। ফর্মাল কথাবার্তা মানে আব্বু হিসেবে নয় লোকটা অফিসার হিসেবে ফোন দিয়েছে। কর্ম কে সম্মান দিয়ে নিজেও বললো,
~ আফীফ মুনতাসির স্পিকিং‌, স্যার।
~আমরা খুবই দুঃখিত আপনার তিনমাসের ছুটির আপিল গ্রহণ হয়েও বর্তমানে নাকচ করা হচ্ছে‌। ইমিডিয়েট আপনাকে ডিউটিতে ফিরতে হবে!
মুহুর্তেই আফীফের চেহারার রঙ পাল্টে যায়। বিরক্তির বদলে একরাশ রাগ এসে হানা দেয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,

~ আমি কেন মানবো তা? কাজে জয়েন হ‌ওয়ার পর একবারো ছুটি নিইনি, সরকার যদি আমাকে আমার প্রাপ্য ছুটি দিতে গড়িমসি করে আমি সরকার কে কেন মানবো? ঠিক সময়ে অব্যাহতির আবেদন পৌঁছে যাবে!
পাশে দাঁড়ানো কামিনী বেগম ভীষণ চমকালেন। ছেলের মুখে এসব শুনছেন তার বিশ্বাস হচ্ছে না। অপর পাশ থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী নিঃশব্দ হাসলেন। ছেলের তেজ তার বরাবর‌ই পছন্দের। এই যে প্রচন্ড রাগেও নিজেকে কেমন শান্ত করে রেখেছে। নুরুল আলম সিদ্দিকী বললেন,

~ আপনাকে ছুটি দেওয়ার সময় জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যখনতখন মেইল যেতে পারে। আপনি একজন সুযোগ্য অফিসার হয়েও এমন কথা বলছেন। বর্তমানে আমরা আপনার ছুটি নেওয়ার পেছনে কারণ উদঘাটন করতে পেরেছি। তার জন্য‌ই সরকার আপনাকে সম্মান জানিয়ে ছুটির আবেদন ক্যান্সেল করে সিক্রেট মিশনে পুরোপুরি কনসেনট্রেট করতে বলেছে‌। তার একমাত্র কারণ আপনার মা! যার লাইফ রিস্ক থাকতে পারে। আপনি নিশ্চয়ই এবার বুঝতে পেরেছেন‌। যেকোনো প্রয়োজনে ফোন দিবেন, টিম আপনার জন্য রেডি!
আফীফ শান্ত হলো! বাবা যে তার সাথে চরম লেভেলের নাটক করছে ধরতে পেরে বললো,
~ তা লেফটেন্যান্ট নুরুল আলম সিদ্দিকী নিজের পার্সোনাল ফোন দিয়ে সরকারের গুণগান করছে কেন বুঝতে পারলাম না। সরকার কি এর জন্য ‌ও আপনাকে পদবী বেশী দিবে নাকি?
নুরুল আলম সিদ্দিকী জিভেতে কামড় বসালেন। কটমট করে নিজের হাতে থাকা ফোনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
~ এখন মনে হচ্ছে তোমাকে আমার মতো বানিয়ে আমি চরম ভুল করেছি!

হো হো করে হেসে দেয় আফীফ। গর্ব হচ্ছে নুরুল আলম সিদ্দিকী’র। তার শিক্ষা তার ছেলে ঠিক সময়ে ঠিক কাজে খাটাচ্ছে। এর থেকে পরম পাওয়া আর কি হতে পারে? আফীফ হাসতে হাসতেই বললো,
~ ধরতে যখন পেরেছো আশা রাখছি বাঁধা দিবে না। তোমার ব‌উ কে খুব শীঘ্রই তোমার কাছে পাঠিয়ে দিবো। ব‌উয়ের চিন্তাতেই তো ঘুম হারাম!
নুরুল আলম সিদ্দিকী লজ্জা পেলেন না। ছেলের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তার। কত কথা হয়। নিজেও রসিকতা করে বললেন,
~ বিয়ে করো, তখন তুমিও ব‌উ ছাড়া কিছু বুঝবে না। ডিউটিতে মন বসবে না, মিশনে যেতে ইচ্ছে করবে না!
কথাটা শুনেই আফীফ সিরিয়াস হয়ে গেল। গম্ভীর কন্ঠে বললো,
~ তার জন্য‌ই আমার জীবনে আম্মু ব্যতিত আর কোনো মেয়ের স্থান হবে না। রাখছি!

নাদিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল আফরা – মিরা। খিদে পেয়েছে, পেটে কিছু না পড়লে হয়তো রাগটাও মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। নাদিয়া এলো মিনিট তিনেক পর। মুখ গোমড়া, সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে সে। ভাইয়ের হুমকি, মনের উচাটন, ভালোবাসা থেকে পাওয়া আঘাত; কিছুটা সময়ের মধ্যেই বিধ্বস্ত করে তুলেছে তাকে। খানিক ক্ষণের জন্য মনে হয়েছিল মরে যাবে। পরে যখন ভাবলো, সে মরে গেলে আহিশ কে পাবে? পাবে না তো! তাহলে মরবে কেন? নিঃশ্বাস নিয়েই নাহয় বিশ্বাস নিয়ে খেলবে। তার যে দৃঢ় বিশ্বাস আহিশ ও একদিন তাকে ভালোবাসবে। ভাবনায় নিমজ্জিত থেকে আফরা’র পাশে এসে দাঁড়ায় নাদিয়া। মিরা বিরক্ত দৃষ্টি ফেলে এগিয়ে যায়। আফরা কিছুক্ষণ নাদিয়া’র মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

~ হোয়াট হেপেন্ড?
নাদিয়া চোখ তুলে দেখলো আফরা কে। নরম সুরে বললো,
~ এসেছিলাম একদিনের জন্য। আমরা যদি আরো কটা দিন ঘুরেফিরে কাটিয়ে দিই, তোমাদের প্রবলেম হবে?
পেছন ফিরলো মিরা, মুখে বাঁকা হাসি। আফরা কিছু বলার আগেই বললো,
~ কিসের প্রবলেম? আমি তো এটাই বলতে চেয়েছি‌। ব্যস্ত জীবনে ফিরে যাওয়ার আগে কিছুদিন নাহয় পাহাড়ের ভাজে ভাজে রহস্য খুঁজি!
মিরা’র কথার অর্থ নাদিয়ার বোধগম্য হলো না। আফরা মুচকি হাসলো। মেয়ের প্রেমে পড়ে মস্তিষ্ক বিকল হয়ে গিয়েছে। উন্মাদের মতো আচরণ করছে। অন্যসময় হলে মেয়েটা পাহাড়ের রহস্য খোঁজার কারণ জিজ্ঞেস করতো। এখন যে মনে আহিশ ঘুরে‌। এগিয়ে এসে মিরার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
~ প্রেমে পড়ার ভুল দেখতে পাচ্ছিস? এজন্য‌ই হয়তো প্রেমে আমার এলার্জি। তুই কেন ভুল করছিস?
মিরা কিছুটা চমকালেও‌ হাসলো‌। আফরার চোখে চোখ রেখে বললো,
~ আমার প্রেমে মধু নয়, বিষ রয়েছে। গলাধঃকরণের অযোগ্য!

নীলাচল থেকে খোলা চোখে দেখা যায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী। রাতের বেলা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে মনে হয় একেকটি গ্রহ-নক্ষত্র। ভূমি থেকে আকাশের তারাকে যে রূপে দেখা যায়, চাঁদ কে ঘিরে তাদের অবস্থান‌। কর্ণফুলীতে অবস্থানরত জাহাজগুলোও রাতের বেলা নীলাচল থেকে তেমনি মনে হয়, শত হাজার ফুট দূর থেকেও জমিনে ক্ষুদ্র তারা’র দেখা মিলে। কি অপরূপ তাহার দৃশ্যস্পট।
দিন আর রাতের এই বৈশিষ্ট্যের জন্য‌ই নীলাচল পর্যটকদের কাছে আরও বেশি প্রিয় হয়ে উঠেছে।
থানচির পথে র‌ওনা হওয়ার কথা থাকলেও মনিরা’র ইচ্ছে কে প্রাধান্য দিয়ে নীলাচলেই থেকে গেল আহিশ। মেয়েটা যখন বললো,’এই রাত টা থেকে যায় না!’ আহিশ না করতেও যেন যুদ্ধে নেমেছিল। পরিশেষে সুন্দরী রমনীর কাছে গো হারান হেরে সমস্ত ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতে হয়েছে। মেয়েটার প্রতি আলাদা এক মায়া খুঁজে পায় সে, কিন্তু সেটা যে ভালোবাসা নয় তা ঢের বুঝতে পারে। তার মনে যে অন্যকারোর বসবাস! কেউ একদম ঝুঁকে বসে আছে। এতটা বছর পার হয়ে গেল, তবুও রয়েই গেছে।

মিহির হাত ধরে কর্ণফুলী নামক চাঁদ কে ঘিরে তারারূপী জাহাজের খেলা দেখছে আহিশ‌। শাশুড়ি ব‌উমা কিছুটা দূরে নিরিবিলি সময় কাটাচ্ছে। মিহি একটু পর পর এটা ওটা দেখিয়ে দিচ্ছে, আর প্রশ্ন করছে। আহিশ‌ হাসিমুখে সব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে। পকেটের ফোন বেজে চলছে। আহিশ ফোন বের করে নম্বর টা দেখে নিলো। মুহুর্তেই তার চোখ মুখে দুশ্চিন্তার গাঢ় ছাপ ফুটে উঠলো। একপলক মিহি কে দেখে নিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই অপর পাশ থেকে চাপা স্বর ভেসে আসলো,
~ এই বাড়ির মানুষ গুলো খুব অদ্ভুত আঙ্কেল।
বিরক্তির শ্বাস ফেললো আহিশ। আঙ্কেল! তাকে দেখে আঙ্কেল মনে হয়? দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
~ তোকে যে বলছি নাম ধরে ডাকবি। আবার তুই আঙ্কেল ডাকিস, এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দিবো অবাধ্য বেয়া* দব!
অবাধ্য বেয়া* দব? বেয়া*দব তো অবাধ্য‌ হবেই! সেটা আবার নাম দাগিয়ে বলতে হয়। অপর পাশ থেকে রাগী সুরে বললো,

~ বেয়া* দব নিশ্চয়ই বাধ্য হবে না? বয়স কত তোমার? আমি তোমার থেকে কত ছোট জানো? চুপচাপ আমার কথা শোন। বেশী সময় আমার হাতে নেই, মিসেস নুরি চলে আসবে!
আহিশ চুপ র‌ইলো বাকি কথা শোনার আশায়। অপর পাশ থেকে আসমানী বলে উঠলো,
~ আমার মনে হচ্ছে মিসেস নুরি নির্দোষ। সে শুধুমাত্র অনল মাহমুদের হাতের খেলনা। যেভাবে খেলছে সে সেভাবেই ঘুরছে। এই যে এত ভালোবাসা দেখায় দুজন, অনল মাহমুদের চোখে আমি কোনো ভালোবাসায় দেখি নি। বদমাইশ শাড়ি ভেদ করে ফর্সা পেটে নজর দিতে ভুলে না!
হাত মুঠো করে নিলো আহিশ। মেয়ের বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পেয়েছে। রাগী কন্ঠে কিছু বলবে তার আগেই আসমানী বললো,

~ দেখ, বয়সে আমি তোমার ছোট হলেও সম্পর্কে আমি তোমার‌ বড়। সেটা হোক মিথ্যে। সম্মান দিয়ে কথা বলবে। আর এটা বলো না এত ছোট বয়সে ভালোবাসা বুঝি না। আমি যে পরিস্থিতির মাঝে এসেছি বাস্তবতার চরম কোনগুলো সব‌ই আমার নখদর্পণে।
আহিশের রাগ কমে এলো। ভুল বলে নি মেয়েটা। যদি নাই বুঝতো আদিল মাহমুদ কে বোকা বানিয়ে তার‌ই বোন কে ভুলিয়েভালিয়ে মাহমুদ বাড়িতে ঢুকতে পারতো না। আর না পারতো বাড়ির ছোট ছেলের খোঁজ করতে, না পারতো পাগল টাকে বশে আনতে। আহিশ নাটকীয় ভঙ্গিমায় বললো,

~ জি জনাবা, এখন কিসের জন্য ফোন টা দেওয়া হয়েছে যদি একটু বলতেন!
~ ঢং করো না। শুনো তুমি ইমিডিয়েট অনিক কে এই বাড়ি থেকে বের করো। নাহয় ছেলেটা কে বাঁচানো যাবে না। অনল মাহমুদ প্রতিদিন রাতে কিসের ইনজেকশন দেয় অনিক নাকি কোথায় চলে যায় নিজেই বুঝতে পারে না। ও নিজের মুখে আমাকে বলেছে। মিসেস নুরি কে আমি ছেলের জন্য লুকিয়ে কাঁদতে দেখেছি। ভেজাল ছিলো না, তার চোখে সত্যিকারের ভালোবাসা দেখেছি অনিকের জন্য।‌ তবে আমি এটাই বুঝতে পারছি না সে চুপচাপ কেন সহ্য করছে, কেন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না?
ভীষণ অবাক হয় আহিশ। মেয়ে কি বলছে এসব? তার জানার বাইরে আরো কিছু আছে নাকি? অপর পাশ থেকে আসমানী তাড়া দিচ্ছে। আহিশ ঝটপট বলে উঠে,

~ মধ্যবয়স্ক দারোয়ানটা আমার লোক, লুকিয়ে কথা বলে নিবি তার সাথে। অনিক কে বাড়ি থেকে বের করে সেইফ জায়গায় রেখে আসার দায়িত্ব তার। তবে নিজেকে বাঁচানোর দায়িত্ব তোর নিজের‌ই। সাবধানে থাকিস! খুব তাড়াতাড়িই তোকে আমার কাছে নিয়ে আসবো!
আসমানী দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আহিশ দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনতে পায়। মনটা ভার হয়ে আসে তার। অনুশোচনা ঘিরে ধরে। ঠিক তখন‌ই আসমানী বলে উঠে,
~ আইচ্ছা আঙ্খুল এহন রাখতাছি, তোমার সাথে পরে কথা বলমু‌। এইখান নিয়ে চিন্তা করার দরকার নাই, আমি আছি তো সব সামলাইয়া নিমু!
কথাটা বলেই ফিক করে হেসে দেয় আসমানী। না চাইতেও হেসে উঠে আহিশ‌ও। ফোন কেটে দেয়। আহিশ হেসেই মিহির হাত ধরে সামনে এগোয়। রিসোর্টে ফিরে যাবে।

সন্ধ্যায় নীলাচল থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখে, রাতে চাঁদের আলোয় সময় কাটাচ্ছে ব‌উ-শাশুড়ি। পরিবেশ অতি রোমাঞ্চকর। কাপল দের জন্য হয়তো পরিবেশ টা খাপেখাপ। তবে মনিরা-সালেহা বেগমের জন্য‌ও খারাপ না। কালকের অসমাপ্ত জীবন্ত গল্প নিয়ে বসছেন সালেহা বেগম। মনিরার দিকে তাকিয়ে বললেন,
~ রমিজ’দা চলে যাওয়ার পর একাই থাকছিলাম আমার বাড়িতে। তবে হয়তো সেটা কিছু মানুষের‌ সহ্য হয়নি। যুবতি বয়সে সুন্দরী হ‌ওয়ায় গ্রামে ডিমান্ড ভালো ছিলো‌। দেখতাম কিছু ছেলেরা রোজ ঘুরাঘুরি করতো। গ্রামের মানুষ তো আর বাছ-বিচার করবে না। তারা মেয়েদের উপর দোষ চাপালেই বাঁচে। চলে গেলাম বাবার বাড়ি‌। সেখানে কোনো অসুবিধাই আমার‌ হয়নি। আমার‌ সুখের সংসার, আমার প্রতি রমিজ’দার ভালোবাসা সব‌ই দেখেছেন তারা। নিয়তি যদি ফাঁকি না দিতো আমার জীবন টা অন্যরকম হতো। আমার ছোট্ট ছেলেটাকে তারা মাথায় তুলে রাখতো।

ভালো পরিবেশ, ভালো খাবার, ভালো কাপড়; সব চাহিদাই পূরণ করেছে আমার আব্বা। নানা-নাতিনের ভাব ছিলো জোড়ায় জোড়ায় একদম। এত সুখের মাঝেও ভালো থাকতে পারিনি শুধু আমি। রমিজ’দা শুধু কল্পনায় ভেসে বেড়াতো। ডাকতো, ‘সালু আয় এইখানে আয়, চকলেট আনছি তোর লাইগা’! ছুটে যেতাম! পেতাম না, রমিজ’দা হাওয়ায় মিলিয়ে যেত। ঝাপটে ধরে আগলে রাখতে চাইতাম, পানি হয়ে গড়িয়ে যেত! দিন যেতে লাগলো আমার অবস্থা খারাপ হতে লাগলো। রমিজ’দার কবরের উপর শুয়ে থাকতাম। জানো? রমিজ’দা আমাকে এমন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরতো রাত কেটে ভোর হতো, সকাল গড়িয়ে দুপুর হতো তবুও ছাড়তো না। কত কথা বলতো আমার সাথে। রমিজ’দার বিরহে ভুলেই বসেছিলাম রমিজ’দার স্বপ্নের কথা। আব্বায় বললো কলেজে ভর্তি হতে। রাজী হলাম না, বুঝাতে বুঝাতে রাজি হলাম। সেখানেও শান্তি নেই। ঘটকেরা বাড়ি এসে বসে থাকতো, ছেলের কি হবে না হবে আমার থেকে তাদের‌ ভাবনায় যেন বেশী! আব্বা অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন। একদিন কলেজ থেকে বাড়ি এসে দেখি এলাহী কান্ড। আমার নাকি আজ বি…

~ মা!
ছেলের ডাকে থেমে গেলেন সালেহা বেগম। লুকিয়ে চোখের জল মুছে পিছু ঘুরলেন। বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে নিলো মনিরা। আজ‌ও রহস্য টা উদঘাটন হলো না। বেজায় রাগ হলো আহিশের প্রতি‌। কটমট দৃষ্টি ফেলে আবার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। আহিশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। যাহ বা কি করলো সে? আমতা আমতা করে মা কে বললো,

হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ২৬+২৭

~ রিসোর্টে ফিরতে হবে। বেশ রাত!
সালেহা বেগম মনিরার দিকে একপলক তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। উঠে দাঁড়াতেই মনিরা উঠে দাঁড়ালো। শাশুড়ির হাত ধরে হনহন করে আগে চলে গেল। রাগের কারণ ধরতে না পেরে থতমত মুখ নিয়েই হাঁটতে থাকলো আহিশ!

হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ৩০+৩১