মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ২৬

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ২৬
মির্জা সূচনা

টুট…টুট…
দিকনির্দেশনাহীন অপেক্ষা। তারপর ওপাশ থেকে রিদের গম্ভীর কণ্ঠ —
হ্যালো, মেহরিন?
মেহরিন একটু দ্বিধা নিয়ে বলল,
হ্যাঁ ভাইয়া… একটা ব্যাপারে আপনার সাথে কথা বলতে চাই।
রিদ বুঝে যায় কণ্ঠে সিরিয়াস কিছু আছে,
বলো, কী হয়েছে?
মেহরিন হালকা গলায় বলে —
রিদ ভাইয়া… শান্ত ভাইয়া তো আপনার ফ্রেন্ড না?
রিদ জবাবে বলে —
হ্যাঁ, ছোটবেলার ফ্রেন্ড। তো?
মেহরিন একটু থেমে বলল:
“ভাইয়া, শান্ত ভাইয়া সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।”
রিদ একটু চমকে ওঠে, তারপর হাসতে হাসতে বলে:
সব ঠিক আছে তো? হঠাৎ এমন প্রশ্ন?
মেহরিন এবার একটু গম্ভীর গলায় সবকিছু খুলে বলে—

আসলে রিদ ভাইয়া, চুমকি খুব কষ্টে আছে। এক মেয়ে ওকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করেছে। অনেক ছবি-ভিডিও পাঠিয়েছে যেখানে শান্ত ভাইয়া আর সে একসাথে। মেয়েটা নাকি বলেছে, চুমকি যেনো৷ শান্ত ভাইয়ার জীবন থেকে সরে যায়…
রিদ এবার একটু চিন্তিত গলায় বলে:
আচ্ছা… তুমি , মেয়েটার ছবি বা প্রোফাইল সেন্ড করো তো আমাকে। দেখি কে।
মেহরিন সঙ্গে সঙ্গে চুমকির কাছ থেকে সেই মেয়েটার প্রোফাইল স্ক্রিনশট আর পিক গুলে নিয়ে রিদকে ফরওয়ার্ড করে দেয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রিদ কিছুক্ষণ দেখে, তারপর হালকা হেসে বলে—
ওহহ! এই মেয়েটা তো শান্তর মামার মেয়ে… শান্তর মামাতো বোন। ও অনেক আগে থেকেই শান্তকে পছন্দ করে। কিন্তু শান্ত তো ওকে নিজের ছোট বোনের মতো দেখে। এই ব্যাপারটা মেয়েটা মেনে নিতে পারেনি এখনও।
রিদ আরও যোগ করে:
তুমি চুমকিকে বলো চিন্তা না করতে। শান্ত ওকে ছাড়া কিছু ভাবেই না। আমি আজকেই ওকে বলে দিবো এই ব্যাপারটা, সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
মেহরিনের চোখে তখন একটা স্বস্তির আলো। সে ফোনটা কেটে চুমকির দিকে তাকায়।
চিন্তা করিস না … রিদ ভাইয়া আছেন তো! ভালোবাসা মানে তো বিশ্বাস, তাই না?
চুমকি চোখের পানি মুছে এক চিলতে হাসি দেয়।
চুমকি হঠাৎই মেহরিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তার গলা কাঁপছে, চোখে টলটলে পানি।
“মেহু… আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। আমি শান্তকে অনেক ভালোবাসি। আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না… পারবো না রে!

মেহরিন মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
ভালোবাসলে বিশ্বাস রাখতে হয় সোনা… ভালোবাসা মানেই তো আস্থা। শুন, এবার শান্ত ভাইয়ের সঙ্গে ঠিকঠাক কথা বল। ভরসা রাখ।এমন বোকামো করে নিজেও কষ্ট পাস না আর শান্ত ভাইয়াকেও কষ্ট দিস না। চুমকি মাথা নাড়ে।
ঠিক তখনই পিছন থেকে ভেসে আসে এক পরিচিত কণ্ঠ—
তা মিস চুমকি, ভালোবাসার গভীরে ডুবে গেছেন, অথচ ভালোবাসার মানুষটার উপরই বিশ্বাস নেই?এটা তো ঠিক না হবু শালিকা।
চমকে ওঠে চুমকি। পিছনে তাকিয়ে দেখে রাজ দাঁড়িয়ে, মুখে দুষ্টু একটা হাসি। ওদের কথাগুলো যে সে শুনে ফেলেছে!
চুমকি লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলে, তারপর কপাল ঠেকে বলে—
সরি… আমার হবু দুলাভাই, আমি বুঝতে পারিনি। আজ থেকে বিশ্বাসটাকেই সবচেয়ে আগে রাখবো।
রাজ হেসে মেহরিনের দিকে চোখ টিপে দেয়, আর মেহরিন চুমকির কপালে একটা আদরের চুমু এঁকে দেয়।
একটা ভুল বোঝাবুঝির পর্দা সরে গিয়ে আবার ফিরে আসে ভালোবাসার রঙ।

চুমকি আর মেহরিন একসাথে হাসছে, চোখে মুখে ভালোবাসার আলো। চুমকি শান্তকে নিয়ে আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে সাথে শান্তকে অবিশ্বাস করার জন্য অনুতাপ হচ্ছে —এই মুহূর্তটা যেনো এক রঙিন কবিতা।
রাজ একটু দূরে দাঁড়িয়ে ওদের তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে, তারপর ভীষণ নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে উঠল,
“বাহ বাহ শালিকা! তুমি তো দেখি খুব স্পেশাল তোমার কপাল তো সোনায় বাঁধিয়ে রাখার মত গো! তোমারে তো মানুষ চুমু খায়—আর আমি? আমার কপালে মনে হয় দুর্ভিক্ষের খরা,ফেটে চৌচির তাইতো কেউ চুমু টুমু দেয় না! এই দুঃখ কাকে দেখাই বলো?আমার এই দুঃখের খবর যদি মিডিয়ার লোকেরা পায়! তাহলে ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাবে। ছেহ্ কি কপাল আমার।

এই কথা শুনে মেহরিন চমকে তাকায়, তারপর লজ্জায় মুখ নিচু করে ফেলে।
ছিঃ! শয়তান, অসভ্য, অভদ্র, ঠোটকাটা লোক!— বলেই এক ধমকে মাটির দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
রাজ হাসে, মেহরিনের গালভরা লজ্জা তার চোখে যেনো স্বর্গসুখ এই মেয়েটাকে কিছু বললেই লজ্জায় লাল নীল হয়ে যায় ।
চুমকি মুখে দুষ্টু হাসি এনে বলে,
আরেহ হবু দুলাভাই, মন খারাপ কইরেন না,আর আপনার এই দুঃখের কথা আমি মিডিয়াতেও জানানো হবে না!চিন্তা করবেন না আপনার ম্যাডাম তো আপনারই সময় হলে শুধু কপালে কেন কোথায় কোথায় চুমু খাবে তা আপনি গুনে শেষ করতে পারবেন না! আর আপনি তো মেহু আফাকে পেয়েছেন! এত মিষ্টি আফা, একদম ট্যাঁটাকু ঝাল মিশিয়ে ঝালমুড়ি!

এই কথা শুনে মেহেরিন চুমকির মুখ চেপে ধরে বলে চুপ কর বইন।
রাজ হাত তুলে বুক চাপড়ে বলে,
এমন ঝালমুড়িরে পাইলাম, জীবনই মশলা হয়ে গেলো!উফ কই কই চুমু দেবে ভেবেই যে আমি লজ্জাই মরে যাচ্ছি লাস্টের কথাটা মুখ ঢেকে বলল রাজ।
সারাদিন খুব ভালোই কেটেছে সবার ঘুরা ফিরা খাওয়া-দাওয়া আড্ডা হইহুল্লোড় করে। এই টুর যেনো সবার স্বপ্নের মত।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। রিসোর্টের গার্ডেনে সকলে গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে। কারও হাতে কফির কাপ, কেউবা মোবাইলে ছবি দেখাচ্ছে আগের দিনকার রোমাঞ্চকর মুহূর্তগুলো। হঠাৎ মেহরিনের ফোনটা বেজে ওঠে।
স্ক্রিনে ভেসে ওঠে “Amma Calling”। মেহরিন হেসে ফোনটা ধরে বলে,

— হ্যাঁ মা?
ওপাশ থেকে মালিহা মির্জার গলা ভেসে আসে,
— কেমন আছিস মা? আমরা তোর ফুপুর বাসা থেকে চলে এসেছি। তোরা তাড়াতাড়ি বাসায় আয়। ম্যাডাম কল দিয়েছিল, বলেছে ও খুব তাড়াতাড়ি আসছে।
মেহরিন একটু অবাক হয়,
— ম্যাডাম? মানে উনি এবার বাংলাদেশে পা রেখেছেন তাই তো?
ওপাশ থেকে আম্মা হেসে বলে,
— ম্যাডামই তো ফোন দিয়ে বললো, ও আসছে। তোরা কালই বাসায় চলে আয়।
মেহরিন হেসে ফোন কেটে দেয়। চারপাশে তাকিয়ে সবাইকে বলে,
— গল্পবাজ বন্ধুরা, খবর আছে। কালকে আমাদের ঢাকা ফিরতে হবে।
চুমকি জিজ্ঞেস করে,
— কেন রে? হঠাৎ এমন কী হইলো?
মেহরিন মুচকি হেসে বলে,
— আমার প্রিয় ম্যাডাম নাকি দেশে ফিরেছেন! ভাবো একবার, যিনি বাংলাদেশে আসতে চান না, উনি নিজেই কল দিয়েছেন তাড়াতাড়ি ফেরার জন্য! এর মানে নিশ্চয়ই কিছু ‘বিশেষ’ ঘটতে যাচ্ছে।
রাজ হেসে বলে,

— তাহলে এখন থেকে কাউন্টডাউন শুরু, কে আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসে!
মেহরিন চোখ ঘুরিয়ে বলে,
— আপনি চুপ করুন শয়তান বেডা!
সবাই হেসে ওঠে। হালকা মন খারাপের মাঝেও হাস্যরসে মোড়া সন্ধ্যাটা স্মরণীয় হয়ে থাকে সবার মনে।
রাতটা সবাই অনেক হাসি মজার মাঝে কাটালো, কাল চলে যাবে মানে আজই ওদের সবার একসাথে থাকা শেষ। দুষ্টুমি মজা হাসি ঠাট্টার মাঝে শেষ হয় রাত টা।

সকালবেলা। সাজেকের পাহাড় এখনো কুয়াশার চাদরে মোড়া। সূর্যের নরম আলো ধীরে ধীরে গায়ে মেখে নিচ্ছে রিসোর্টের ছাদ, গাছের পাতা আর সেই ছোট্ট চায়ের দোকানটা। সবকিছুর মধ্যে এক ধরনের শান্ত নিস্তব্ধতা।
মেহরিন রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে শেষবারের মতো চারপাশটা দেখে নিচ্ছিল। তার চোখে একরাশ মুগ্ধতা, একফোঁটা খারাপ লাগা, আর অনেকটা ভালোবাসা। পিছন থেকে রাজ এসে দাঁড়ায় পাশে।
— চলুন ম্যাডাম, গাড়ি রেডি। তবে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো বলি—এই জায়গাটা শুধুই পাহাড় আর প্রকৃতি নয়, এই জায়গা আমার তোমাকে নতুন করে পাওয়ার, নতুন করে ভালোবাসার গল্প।
মেহরিন হেসে তাকায়, চোখ দুটো টলমল করে উঠেছে।
রাজ দুষ্টুমি করে বলে,ম্যাডামের কী খুব খারাপ লাগছে এখান থেকে যেতে? কথা দিচ্ছি ম্যাডাম প্রথম হানিমুনটা সাজেকেই করব। তখন অনেকদিন থাকবেন আপনি। এখন চলুন।
মেহরিন কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই।
চুমকি পেছন থেকে বলে ওঠে,

— ওই! এত সিরিয়াস ক্যানো রে! ঢাকায় গিয়ে আবার দেখা হবে তো, আহা কি প্রেম, কয়েকটা দিনই তো। একা থাকতে পারবি না বিয়ের পর তো একসাথেই থাকবি তাই না।
লাবিব বলে,
— জানি না কেন, আমার মন বলছে, ঢাকায় ফিরেই কোনো না কোনো ব্লাস্ট হবে!
মেহবুবা মেহরিনকে খোঁচা দিয়ে বলে,
— এই যে আমার প্রাণপ্রিয় শ্রদ্ধেয় বড় বোন আর তার হবু বর রাজ-মেহরিন, গাড়িতে বসার সময় অন্তত হাত ছাড়াছাড়ি করে বসবা, প্লিজ! এত প্রেম জমে গেলে ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক বাড়বে!
সবাই হেসে ওঠে, শুধু মেহরিন একটু লজ্জায় পড়ে মাথা নিচু করে। রাজ দুষ্টুমি করে বলে,

— আমি তো ভাবছিলাম, রাস্তাতেই একটা ওয়েডিং ফটোশুট করে ফেলি!
— কবি সাহেব!! মেহরিন হেসে চড় দেয় রাজের হাতে।
গাড়ির দরজা বন্ধ হওয়ার সময় সাজেকের পাহাড় যেনো ফিসফিস করে বলে উঠল—
যাও পাখিরা, তোমাদের এই রূপকথা থেমে যাবে না, এই শুধু একেকটা অধ্যায়ের সমাপ্তি, আরেকটা নতুন সূচনার আগে।আমি তোমাদের অপেক্ষায় থাকবো আবার এসো কিন্তু।
আর মেহরিনের মনে তখনো ঘুরছিল সেই একটাই কথা—
এই রাত… এই সফর… এই পাহাড়… সবকিছু ঠিক আমার স্বপ্নের রঙের মতো…

সবাই আবার সবার গন্তব্যে ফিরে গেছে। সবাই আবার আগের মতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে নিজেদের জীবন নিয়ে । চুমকি আর শান্তর ঝামেলা মিটমাট হয়ে গেছে। অবশ্য মিটমাট করতে অনেক কাটখর পুরাতে হয়েছে চুমকিকে,শান্ত ভয়ংকর রেগে গিয়েছিল চুমকি তাকে অবিশ্বাস করেছে এটা ভেবে।মেহরিন আর রাহি বুদ্ধি করে ওদের দুজনকে মিলিয়ে দিয়েছে। চুমকি আর মেহরিন আবার নিয়মিত ভার্সিটি যাওয়া শুরু করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চেনা সেই রাস্তাটা ধরে হাঁটছে মেহরিন আর চুমকি। গায়ে ঝাপটা দিয়ে আসা হাওয়া যেনো বলে দিচ্ছে—সময় কত দ্রুত চলে যায়। কিছুদিন পর মিলির বিয়ে, সেই নিয়েই কথা বলতে বলতে হেসে উঠছে ওরা।
ঠিক তখনই মেহরিনের ফোন বেজে ওঠে। স্ক্রিনে ভেসে ওঠে—রাহি কলিং।
ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে রাহি বলে,

— মেহু আপু, আমি ভার্সিটির বাইরে দাঁড়িয়ে আছি, তোরা কোথায়? তাড়াতাড়ি আয়!
মেহরিন হেসে চুমকির দিকে তাকায়, চোখে সেই পুরোনো রং ফিরে এসেছে—বন্ধুত্ব, ভালোবাসা আর নতুন করে শুরু করার অনুভব।
মেহরিন আর্জেন্ট কি বের হতেই!
রাহির কণ্ঠে যেনো একরাশ উচ্ছ্বাস ভেসে আসে,
— মেহু আপু ! পরশু তো মিলির গায়ে হলুদ, আর আমি আজ তোমাদের সঙ্গে শপিংয়ে যেতে চাই। প্লিজ না করিস না।
মেহরিন একটু অবাক হয়।

— আজই? এত ক্লাসের চাপ, ভাবছিলাম কিছুক্ষণের মধ্যে লাইব্রেরিতে যাব…
ওপাশ থেকে রাহির হালকা অভিমানী গলা,
—তুই তো সবসময় আমার পাশে থাকিস, আজ যদি না যাস, তাহলে আমার সব প্ল্যানটাই মাটি। প্লিজ!
চুমকি পাশে দাঁড়িয়ে চোখ টিপে বলে,
— চল না! কিছুক্ষণ ঘুরে আবার পড়তেও পারবি। তাছাড়া, রাহির সঙ্গে একটু মজা হবে!
শেষমেশ রাহির জোরাজুরিতে হাল ছাড়ে মেহরিন।
— আচ্ছা, ঠিক আছে। চল তোকে নিয়ে আজ শপিংটা জমিয়ে দিব!
রাহির উচ্ছ্বাস যেনো ছড়িয়ে পড়ে,
— ইয়াই! লেটস গো গার্লস!”

তারপর তারা তিনজন মিলে শুরু করে গায়ে হলুদের শপিং অভিযান।
শপিং মলের একপ্রান্তে রাহি, চুমকি আর মেহরিন তিনজন মিলে এক দোকানে ঢোকে। দোকানজুড়ে রঙবেরঙের গয়না, ব্যাগ আর শাড়ির বাহার। রাহি একটার পর একটা তুলে মেহরিনের গায়েই ধরছে—
—এইটা পরে তোকে একদম সিনেমার নায়িকা লাগবে!
মেহরিন বিরক্ত হয়ে বলে,
— তুই থামবি, না থামাবো? তুই যেমন করঢ়িস মনে হচ্ছে মিলির নয় আমার বিয়ে।
চুমকি হেসে বলে,
— মেহু, দোষটা ওর না ও আসলে একটু বেশিই এক্সসাইটেড কারন ওর সিরিয়াল এগিয়ে আসছে তো বুঝিস না।
রাহি চোখ ছোট করে বলে,
— তুই ভেবে কথা বলবি চুমকি আপু, আমার কাছে তোর দুষ্টুমির লিস্ট আছে, কলেজ লাইফের সবকিছু ফাঁস করে দিব!
চুমকি বলে,

— আমি তো লিস্ট বানাচ্ছিলাম! শোন… রাহি + রাকিব = চুপ!
রাহি লজ্জায় মেহরিনের পেছনে লুকিয়ে পড়ে—
— মেহু! দেখ ও কী বলতেছে!
তার পর হঠাৎ আবার কি একটা ভেবে রেগে বলে, এই শুন ওই অনামুখোর কথা বলবি না, ওই শালা একটা অনামুখো, পুরামুখো,গোমরা মুখো, হত্তছাড়া বলদের বাপ মা চোদ্দ গুষ্টি।
চুমকি ওর বকা শুনে হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে আছে। আর বলছে বেচারা রাকিব ভাইয়া জানেই না কেউ তার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে দিচ্ছে।
মেহরিন হাসতে হাসতে বলে,
— তোরা দুইজন যদি কিছুক্ষণ চুপ না করিস, তাহলে আমি এখনই এখানে বসে কান্না শুরু করবো!
তারপর তিনজনের হেসে কুটিকুটি অবস্থা।
মেহরিন আর চুমকি আবার একসাথে বলতে শুরু করে—

— তুই এখন শাড়ি দেখ। নয়তো দোকান দার আমাদের বেড় করে দিবে।
এইভাবে দুষ্টুমি, হাসি আর বন্ধুত্বে কাটতে থাকে শপিংয়ের পুরো সময়টা—প্রতিটি মুহূর্ত যেন মিলির গায়েহলুদের আগের দিনগুলোকেই আরও রঙিন করে তোলে।
শপিং শেষে সবাই ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
মেহরিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফোনে কবি সাহেবের সাথে কথা বলছে। হালকা ঠান্ডা বাতাসে চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ছে তার গালে। রাজ ফোনে হাসতে হাসতে বলছে,
— আপনি তো আজ খুব ক্লান্ত তাই না ম্যাডাম? আজ তো অনেক দৌড়ঝাঁপ করলে!
মেহরিন হেসে বলে,

— না তেমন না, কাছের মানুষদের জন্য যতই দৌড়াই ততই ভালো লাগে!
রাজ বলে,
— তাই নাকি ম্যাডাম!আচ্ছা বিয়ের পর আপনাকে শুধু দৌড়ের উপর রাখবো। বেড টু ওয়াশরুম।বাই দ্যা ওয়ে, দিনে ২-৩ বার গোসল করতে প্রবলেম নেই তো আপনার ম্যাডাম?
মেহরিন লজ্জা পেয়ে বলে,
— অসভ্য, অভদ্র, শয়তান, বেয়াদব একটা মানুষ এত নিলজ্জ কি করে হতে পারে?
অন্যদিকে, ড্রয়িং ঘরে টিভির সামনে মেহরিনের বাবা বসে খবর দেখছেন, মা রান্নাঘরে ব্যস্ত, মেহবুবা পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করছে। মাহির বাইরে বন্ধুর সাথে আড্ডায়।
এমন সময় কলিং বেল বেজে ওঠে—টিং টং!
মেহবুবা এগিয়ে গিয়ে দরজা খোলে। দরজা খুলতেই সামনে রিদ দাঁড়িয়ে, হাতে চকলেট,আইসক্রিম আর মুখে মিষ্টি হাসি।

— আসতে পারি?
মেহবুবা খানিক অবাক হয়ে তারপর হেসে বলে,
—অবশ্যই আসেন আসেন।
রিদ ভেতরে ঢুকে চকলেট আইসক্রিম মেহবুবার হাতে দিয়ে বলে,
— আগাম শুভেচ্ছা… ভাবলাম তোমার জীবনের নতুন অধ্যায়ের শুরুটা আমি একটু রঙিন করে দিই।সামনে তো এক্সাম প্রিপারেশন কেমন?
মেহবুবা হালকা হাসে আর বলে আলহামদুলিল্লাহ ভালো মোটামুটি। রান্নাঘর থেকে মা বলে ওঠেন,
—মেহবুবা, কে এলো রে?
মেহবুবা হেসে বলে,
— রিদ ভাইয়া এসেছে মা।
মা বলে,
—বসতে বল আমি আসছি ।
রিদ মুচকি হেসে ঘরে ঢোকে—ভরাট, শান্ত, আর আত্মবিশ্বাসী।
মেহরিনের বাবা তখন টিভির শব্দটা একটু কমিয়ে রিদের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— আরে রিদ বাবা যে!
তারপর একটু কৌতুক করে যোগ করলেন,
— কী বাবা, গরিবের ঘর কী মনে করে?
রিদ হেসে মাথা নিচু করে বলল,
— আঙ্কেল, প্লিজ, এমন করে বলবেন না। এই ঘর তো আমার নিজের ঘরের মতোই। আর মিলির বিয়ের আগে আপনাদের সাথে দেখা না করে গেলে আমার রক্ষা নাই!
তারপর লাল-সোনালি প্যাকেট করা একটা “বিয়ের কাটা” বের করে বলল,
— আমার বোন মিলির বিয়ের নিমন্ত্রণ জানাতে এসেছি। আম্মু বলে দিয়েছেন, কোনো অজুহাত চলে না। মেহরিন আর মেহবুবা যেনো আগেভাগেই পাঠিয়ে দেন।
মেহরিনের বাবা মুচকি হেসে বললেন,

— তোমার আম্মুর কথা না শুনে উপায় আছে? নিশ্চিন্ত থাকো, আমরা সবাই যাবো ইনশাআল্লাহ। দাওয়াত কবুল করা প্রত্যেকটা মুসলমানের জন্য সুন্নত।
এদিকে মেহরিনের মা রান্নাঘর থেকে হাতে নাস্তার ট্রে নিয়ে এলেন—কিছু স্ন্যাকস আর ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ।
রিদ বসে চায়ের কাপটা হাতে নিল, তারপর এক চুমুক দিয়ে হালকা চোখ ঘোরাল চারপাশে—চোখ যেনো কাউকে খুঁজছে।
মেহবুবা রান্নাঘরের কোণে দাঁড়িয়ে ছিল, তার চোখে-মুখে একরাশ দ্বিধা। রিদের চোখ তার চোখে আটকে গেল। মুহূর্তটা যেনো আটকে গেল সময়ের ফ্রেমে।
মেহবুবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার পর দুষ্টুমি করে বলল,
— চা-টা কী অনেক বেশি গরম…
রিদ ঠোঁটে মুচকি হাসি এনে বলল,

— হ্যাঁ কিন্তু এই চায়ের স্বাদ একেবারে আলাদা।
রিদ চায়ের কাপ হাতে বসে চারপাশে তাকাচ্ছিল যেনে কাউকে খুঁজছে—চোখের খোঁজাটা খুব সূক্ষ্ম, কিন্তু মেহবুবার চোখ ফাঁকি যায় না।
হঠাৎ মেহবুবা পাশ থেকে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
— কাউকে খুঁজতেছেন, রিদ ভাইয়া?
রিদ হঠাৎ একটু হকচকিয়ে যায়, মুখে একটু জড়তা,
— না মানে… আমি আসলে… মেহরিনরে দেখি নাই তো তাই…
মেহবুবা ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ২৫

—ও তো রুমে, ডেকে দিবো?
রিদ লজ্জা মেশানো হাসি দিয়ে মাথা নাড়ে,
— না না, থাক, বিয়েতে তো দেখা হবেই। আমি বরং আজ আসি আরো অনেকগুলো কার্ড দেওয়া এখনো বাকি..
এই বলে সবার কাছে বিদায় নিয়ে চলে যায় , মেহেরুন এর মা বাবা অবশ্য অনেকবার বলেছে ডিনারটা করে যেতে কিন্তু রিদ রাজি হয়নি এখনো কাট অনেক জন কে দেওয়া বাকি এটা বলে বেড়িয়ে গেছে।

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ২৭