হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ৩৮+৩৯+৪০

হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ৩৮+৩৯+৪০
Tahrim Muntahana

সূর্য টা নিজ অবস্থান পরিবর্তন করেছে। তক্তপোষের উপর নিজের রাজত্ব ধরে রাখতে পারে নি। রোদের ঝিলিক গিয়ে ঠেকেছে ফুল গুলোর উপর। রোদের দেখা পেয়ে তারা যেন খিলখিল করে হাসছে। আফরা’র অপ্রসন্ন দৃষ্টি ফুলের উপর। হাতে করে চকচকে রিভল*বার নিয়ে আসলেও, এর ব্যবহারের কোনো আঁচ আদিল মাহমুদের মাঝে নেই। সে দিব্যি তক্তপোষের উপর বসে মিরা কে দেখছে।
আফরা’র মন চাচ্ছে ছেলেটার গাল বরাবর কয়েকটা চড় ছুড়ে মারতে পারলে! তবে সে প্রতিপক্ষের হামলার দিকে তাকিয়ে থাকে, নতুবা এক পা এগোনো তার পক্ষে সম্ভব নয়! আদিল মিরা’র দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিমায় শরীর দুলিয়ে হাসলো‌। আকস্মিক প্রশ্ন করে বসলো,

~ আপনাদের মনে কোনো প্রশ্ন‌ নেই?
মিরা তক্তপোষে পা তুলে বসে খানিক ঝিমিয়ে নিলো। বড্ড ঘুম পাচ্ছে তার। নরম সুরে শুধালো,
~ মানুষের অঙ্গ নিয়ে কেন খেলছেন?
~ খেলছি? ক‌ই? আমি তো মরা মানুষের অঙ্গ কাজে লাগাচ্ছি!
হেঁয়ালি কথা। আফরা, মিরা’র শরীর যেন জ্বলে উঠলো। দাঁতে দাঁত চেপে আফরা বললো,
~ এসব নাটক অন্যদের সামনে দেখাবেন, নট আস!
একপলক আফরাকে দেখে গাঁ ঝাড়া দেয় আদিল। যেন আফরা’র কথাটিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করলো। বিজ্ঞদের মতো বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

~ একটি মৃতদেহের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে আটজনের জীবন বাঁচানো যেতে পারে।
আমি তো জীবন বাঁচাচ্ছি, দোষের কিছু করছি নাকি?
~ মানুষ মেরে মানুষ বাঁচানো? চুরি করে ধরা না পড়লে কিসের চোর! ব্যাপারটা এমন নয়?
মিরা’র নরম কন্ঠস্বর। আদিল হেসে উঠলো। মেয়েটা চাইছে গলা চড়িয়ে কথা বলতে তবে পারছে না। শুধু মাত্র তার নিকটস্থ উপস্থিতি! এ যে তার জন্য কতটা জয়ের তা কি মেয়েটা জানে? ভাবালেশ কন্ঠে বললো,
~ মৃতদেহের ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, যকৃত, মূত্রগ্রন্থি, অগ্ন্যাশয় ও খাদ্যনালির নিম্নাংশ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। সচেতনতার অভাব এবং মানুষের অনাগ্রহের কারণে বাংলাদেশে এখনও অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়াটি ফলপ্রসূ হয়ে ওঠেনি। এখনো তেমন কার্যকর নয়! এই দেশ সবকিছুর জন্য‌ই অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে আমি মরা মানুষের অঙ্গ গুলো বাহিরে চালান করে তাদের বাঁচাতে সাহায্য করছি, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের কাজে লাগছি। সরকার হয়তো সরাসরি পায় না, তবে হসপিটাল তিনটা চলতে কম টাকা তো লাগে না! গরীব মানুষ অনল মাহমুদের প্রশংসা এমনি এমনি করে? বিনা টাকায় অপদার্থ দের বাঁচাচ্ছি অস্ত্র কি তারা দেয়? নাকি ডক্টর ফি তারা দেয়? চোরাচালান ‌ই দেখলেন অথচ এর পেছনে আমাদের ত্যাগ দেখলেন না। আফসোস!

কৌতুক মিশ্রিত হতাশ কন্ঠে বলে শেষ করলো আদিল। যেন দুজন মেয়েকে বুঝাতে না পেয়ে উদাস হয়ে পড়েছে সে। ফুস করে নিঃশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে র‌ইলো। দুটো মেয়ে যে তার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ আছে আছে সেদিক কোনো খেয়াল নেই। আফরা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
~ গরীব মানুষের অঙ্গ গুলো থেকেই তো এত এত কালো টাকা আয় করছেন! রেট করলে সামলাতে পারবেন? মানুষের ছটফটানি আপনাদের গাঁয়ে লাগে না?
আদিলের কাছে মনে হচ্ছে আফরা অবুঝের মতো তাকে প্রশ্ন‌ করেছে। হো হো করে হেসে ফেললো সে। হাসি থামাতে বেশ কসরত করতে হলো। শরীর দুলিয়ে বললো,

~ মুজুলুম উদ্দিনের দেহটাও কাউকে বাঁচিয়ে নিবে, এরপরেও বলবেন আদিল মাহমুদ দোষী? দিস ইজ নট ফেয়ার!
ঘৃণায় রি রি করে উঠলো মিরা’র শরীর। ফট করে উঠে দাঁড়ালো সে। আদিল নিজেও দাঁড়িয়ে পড়লো। হুট করে মিরা’র হাতটা আঁকড়ে ধরে আশপাশ তাকালো। কিছু খুঁজে চলছে। ফুলগুলো’র দিকে একপলক তাকিয়ে অসহায় দৃষ্টি ফেললো আদিল। হাত ছেড়ে দিলেই মেয়েটি চলে যাবে। আকস্মিক কোমরে গুঁজে রাখা রিভলবার হাতে তুলে হাঁটু ভেঙে বসে পড়লো মিরা’র সামনে! চমকে উঠলো মিরা। এতক্ষণের ঘৃণা টা শক্ত রূপ নিতে পারলো না। কাঁধ পর্যন্ত চুল গুলো মৃদু উড়ছে। আদিল কয়েক মুহূর্ত স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

~ আমাদের তেষ্টা লাগে কেন জানেন?
আমাদের দেহের মোট ওজনের মাত্র ১ শতাংশের সম পরিমাণ পানির ঘাটতি হলেই আমাদের তেষ্টা পায়। মোট ওজনের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ পানি ঘাটতি হলে
আমরা অজ্ঞান হয়ে যাবো। আর ১০ শতাংশের সমান পানি ঘাটতি হলে আমরা পানি শুন্যতায় মারা যাবো। আমার তো পানির ঘাটতি নেই! তাহলে এত তেষ্টা পায় কেন? কেন মনে হয় তৃষ্ণার্ত কাকের মতো ছটফট রোগ আমাকে ঘিরে ধরে? কেন মনে হয় তেষ্টায় বুক আমার ক্রমশও ধড়ফড় করে হুট করেই থেমে যাবে। আর আমি তৃষ্ণার্ত হয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবো! এই কেন’র উত্তর আছে আপনার কাছে? নেই না?
থামলো আদিল। নয়ন যুগল প্রেমরসে মোহিত। এই আদিল সম্পূর্ণ অচেনা, অচেনা তার চোখ, ভঙ্গিমা। মিরা’র শরীর ঈষৎ কেঁপে উঠলো। থমকে তাকিয়ে র‌ইলো সে। নিঃশ্বাস আটকে আসছে তার।

বুকের উপর যেন এক মণ বোঝা কেউ চাপিয়ে দিয়েছে! রিভল*বার দিয়ে কাউকে প্রপোজ করতে এই প্রথম দেখলো সে। অবশ্য আদিল মাহমুদের হাতে ফুলের চেয়ে রিভল*বার বেশী মানাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মিরা কি করবে খুঁজে পেল না। পায়ের তলার শিরশিরানি ক্রমশ‌ও বাড়ছে। আদিল থেমে আবার বললো,
~ আপনি নামক নারী, এই নির্দয় পুরুষের হৃদয় কেড়েছে! কেড়েছে রাতের ঘুম, সকালের প্রশান্তি, দুপুরের অবসাদ! আদিল মাহমুদ সত্তা টাকে এক নিমিষেই ফিকে করে দিলেন! সর্বগ্রাসী হয়ে বুকের আর্তনাদ বাড়িয়ে দিলেন! নিঃশেষ করে তবেই শ্বাস নিবেন, রাজনন্দিনী?

মিরা আর নিতে পারলো না। শরীর অবশ হয়ে আসছে তার‌। এবার নিঃশ্বাস না নিলে মরেই যাবে। এক ঝটকায় আদিলের হাত থেকে রিভল*বার নিজের হাতে তুলে নিলো। মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে আদিল। প্রিয় শত্রুর হাতে মরণ অস্ত্র তার বুকে ভয় সৃষ্টি করছে না। উদগ্রীব হয়ে আছে সে। মিরা কাঁপা কাঁপা হাতে রিভল* বার টা আদিলের বুকে ঠেকালো। ঠিক হৃদপিন্ড বরাবর। একটা বুলেট‌ই যথেষ্ট আদিল মাহমুদ নামক নির্দয় পুরুষ টির অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে। মিরা ট্রিগারে বল প্রয়োগ করতে পারলো না। পারলো না সেই মুচকি হাসির দিকে তাকিয়ে থাকতে। রিভল*বার মাটিতে ছুড়ে ফেলে
দৌঁড় ছুটলো সে। আদিল করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে র‌ইলো তার রাজনন্দিনী’র যাওয়ার দিকে। আফরা তখনো দাঁড়িয়ে আছে। তার মনে হচ্ছে আদিল মাহমুদ নামক লোকটি শুধু আদিল হয়ে গেছে। মিরা কে যতদূর দেখা গেল দেখলো আদিল। অতঃপর আফরা’র দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বললো,

~ নারী বড়‌ই বিচিত্রা! পুরুষের হৃদয়ে ঝড় তুলে লন্ডভন্ড করে দিতে উস্তাদ!
আফরা কিছু বলার খুঁজে পেল না। এলোমেলো পায়ে হাঁটা ধরলো। খানিক হাঁটা’র পরেই আদিল আবার উঁচু গাম্ভীর্য পূর্ণ গলায় বললো,
~ তাকে বলে দিবেন আদিল মাহমুদ ঝড় সামলাতে বড়‌ই পারদর্শী! ঘষে মেজে আজকের আমি! তাকে ভাঙা এতটা সহজ নয়! কামানের অগ্নিগোলার থেকে ভয়ংকর আদিল মাহমুদের ভালোবাসা!

ভোরের আলোয় তান্দুই পাড়া থেকে পা ফেললো সাকাহাফং’য়ের পথে। গাইড হিসেবে সঙ্গে নিয়েছে পাড়ার কারবারি কে। কারবারি তাদের থেকে বেশ দুরত্বে হাঁটছে। আজ‌ও আহিশের হাতের ভাঁজে ছোট্ট হাত। মনিরা নিশ্চুপ হেঁটে চলছে। ক্ষনিক পর পর আহিশের দিকে তাকাচ্ছে। কিছু বলতে চাচ্ছে তবে সাহস পাচ্ছে না।
আহিশ‌ নিজের মতো হাঁটছে বিদেয় মনিরার ভাবাবেগ চোখে পড়ছে না। এই পাড়া থেকে একটানা আট ঘন্টা ট্র্যাকিং করলেই পৌঁছানো যাবে নেপিউ পাড়া। হাঁটার গতিতে বেশ জোর। টুং টুং শব্দ করে ফোন বেজে উঠলো। আহিশ কিছুটা বিরক্ত হয়েই পকেট খুঁজে ফোন বের করলো। তবে অপর ব্যক্তিটা কে যে খুব একটা আশা করেনি, মনিরা বুঝলো। ফোন রিসিভ করেই অপ্রসন্ন কন্ঠে বললো,

~ ফোন করেছো কেন?
~ আমার ভালোবাসা’র মানুষ গুলো বড্ড নিষ্ঠুর হয়। তাদের ভালোবাসা আছে তবে আমার জন্য নয়। আচ্ছা আমি কি সবার তিক্ততার জন্য‌ই জন্মেছি?
নিরাট গম্ভীর কন্ঠস্বর। আহিশ চমকিত দৃষ্টিতে পাশে তাকালো। অপর পাশের নাদিয়ার হতাশ‌ কন্ঠস্বর তার কর্ণকুহরে পৌঁছেছে। নিজেকে বড্ড হেল্পলেস লাগছে‌। মনের উপর যে জোর চলে না! নরম কন্ঠে বললো,
~ মানুষ জন্মায় তার কপাল নিয়েই। নিয়তি হয়তো তোমার জন্য আরো ভালো কিছু রেখেছে!
~ সেটা কি মৃত্যু?
চটজলদি প্রশ্ন শুনে বিব্রত হলো আহিশ। মেয়েটা উন্মাদের মতো আচরণ করছে‌। ফোন কেটে দিবে, তার আগেই নাদিয়ার ভেজা কন্ঠস্বর ভেসে আসলো,

~ আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম, বিনিময়ে নিরাট অবহেলা ছাড়া কিছু পাই নি। তোমার ভালোবাসা আমাকে নিষ্প্রাণ করে দিলো আহিশ। প্রথমত বিবেক কেড়ে নিলো, দ্বিতীয়ত আবেগ, পরিশেষ পুরো জীবন কেড়ে নিলো!
ফোন কেটে গেল। থম মেরে র‌ইলো আহিশ। নাদিয়া কে আজ তার রহস্যময়ী লাগছে। কি বললো মেয়েটা? বিবেক কেড়ে নিয়েছে? কি এমন করেছে মেয়েটা? ঘোরের মধ্যেই হাঁটতে লাগলো সে। ওদিকে মনিরা চোখ মুখ কুঁচকে আহিশের বাক্য বিনিময় শুনলো। তার বুঝতে বাকি র‌ইলো না অপর পাশের মানুষ টি কে। হঠাৎ রাগ টের পেল সে। মেজাজ কেমন খিটখিটে হয়ে এলো। নাদিয়া কে তার চরম শত্রু বলে মনে হচ্ছে। এই যে লোকটার অসহায় মুখশ্রী, ক’দিন পর হয়তো গলেও যাবে! তখন তার কি হবে? সে যে নতুন করে স্বপ্ন দেখেছে এই পুরুষ টিকে নিয়ে। ঘর বাঁধার ইচ্ছে পোষণ করেছে। এত সহজে ছেড়ে দিবে সে? মনে মনে কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বাঁকা হাসলো মনিরা। সে কি এতটাই সহজ নাকি? তার পথের কাটা কে কিভাবে সরাতে হয় সে ঠিক জানে!

বাঁশের ট্রেইল ধরে হাঁটছে আহিশ। পেছনে জিয়াউল ও অনান। পথটা খুব কঠিন। ট্রেইলের পথ বলতে কিছু নেই। বাঁশ আর জঙ্গল কেটে কেটে উঠতে হচ্ছিল উপরের দিকে। গয়ালের ট্রেইল ধরে কোনো রকমে ট্রেক করছে তারা। তার উপর জিয়াউল, অনানের বাক্য যুদ্ধ তো রয়েছেই। কেউ কাউকে যেন সহ্য করতে পারছে না। অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটার ফলে পা ফসকে পড়ে যেতে নিতেই জিয়াউলের হাত আঁকড়ে ধরলো অনান। চোখ মুখ কুঁচকে নখের অত্যাচার সহ্য করলো জিয়াউল। ঠিক করে দাঁড় করিয়ে বিদ্রুপ কন্ঠে বললো,

~ ঠিক ভাবে হাঁটতে পারে না, গাইড হয়ে এসেছে!
~ দুর্ঘটনা বলে কয়ে আসে না। আপনার গোবর মাথায় এটা অন্তত আছে! নাকি তাও নেই মি. খালেদা জিয়া?
ফুঁসে উঠেছে অনান। অপমানে থমথমে হয়ে এলো জিয়াউলের মুখশ্রী। নামের বিকৃতি তার রাগ টা বহুগুণ বাড়িয়ে দিলো,
~ হোয়াট নন* সেন্স! ঠিক করে কথা বলুন। মি. খালেদা জিয়া মানে কি? অ* সভ্য মেয়ে!
দ্বিগুন তেজ নিয়ে অনান বললো,
~ কেন জানেন না? খালেদা জিয়ার মেইল ভার্সন মি. খালেদা জিয়া! আপনি! অ* সভ্য কাকে বলেন, আপনি তো একটা বেয়া* দব!
জিয়াউলের মনে হচ্ছে তার মাথায় কেউ আগুনের সিসা ঢেলে দিয়েছে। তেড়ে এসে কিছু বলবে তার আগেই আফীফ কড়া কন্ঠে বলে উঠলো,
~ আর একটা বাক্য বিনিময় হলে এক ধাক্কায় নিচে ফেলে দিবো!

হুমকি টা কাজে লাগলো। চুপ হয়ে গেল দুজন‌ই। পাহাড়ের অভিশাপ জোঁকের অত্যাচার বেড়ে গেল। জঙ্গলে ঘেরা এই পথে একের পর এক বাঁশে হাত লাগিয়ে ওপরে উঠতে কষ্ট তিনজনের‌ই হচ্ছে। তবে চূড়ায় উঠার যে উত্তেজনা টা কাজ করছে তার থেকে এই কষ্ট বহু কম! আর কোনো কথা হলো না তাদের মাঝে। বাঁশের জঙ্গল পেরিয়ে যেতেই অনেক দিন ধরে আফীফের সাকাহাফং’য়ের চূড়া স্পর্শ করা হাতছানিটা বাস্তবে ধরা দিল।

চূড়া থেকে এই সভ্যতার কোনো কিছুই চোখে পড়ে না। চোখ জুড়ে কেবল পাহাড় আর পাহাড়। রং বদলানো মেঘের দৃশ্যপট, সবুজের অমলিন রূপ, মিয়ানমারের আরও উঁচু উঁচু বিরতিহীন বন্ধন পাহাড়, শরীর ভিজিয়ে দেওয়া মেঘের শিহরণ! চূড়ায় কেবল মনে হচ্ছিল মেঘ বৃষ্টিতে সিক্ত সবোর্চ্চ চূড়ায় ক্যামেরা বন্দি হওয়ার দারুন স্পর্ধা; প্রেরণা হয়ে থাকবে আরও কঠিন পথ চলার! আফীফ হা করে শ্বাস নিলো। এই পথের চেয়েও কঠিন পথ পেরোনোর সাহস যেন সে এক ছুটে পেয়ে গেল। এর পরের পরিকল্পনা যে কতটা দুর্যোগ বয়ে আনতে পারে তার একটু হলেও ধারণা আছে। তবে সে যে পিছিয়ে যেতে শিখে নি। শিখে নি পরাজয় মেনে নিয়ে মাথা নত করতে! শুধু শিখেছে সত্য তে থেকে এগিয়ে যেতে। শিখেছে দেশের মাটির মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে। এই লড়াই সে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত করে যাবে! ডান হাত মুঠো করে আকাশের দিকে তাক করলো আফীফ, ক্ষনিক পরে হাতটি বুকের বাম পাশে রেখে বলে উঠলো,
~ আমার বাবা’র প্রথম ভালোবাসা কে আমি রক্ষা করবো! এই বান্দরবান শহর আমার বাবা কে যা কিছু দিয়ে কেড়ে নিয়েছে সবকিছু ফিরিয়ে দিবো! আমার কাছে সত্য আমার বাবা! আর এই সত্য কে প্রতিষ্ঠা করতে আজ থেকে আফীফ মুনতাসির প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো! আগামী পনেরো দিনের মধ্যে বান্দরবান শহর কে আমি নতুনত্ব দেখাবো! দেখাবো আলোর খুঁজ! শুনছো কালো শহর, কথা দিচ্ছে আফীফ মুনতাসির!

আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়িটি কেমন ভুতুড়ে ভয় জাগাচ্ছে! সজীবতায় ঘেরা গাছগুলো পাতাহীন উলঙ্গ লাগছে। পুড়া ছাইয়ের গন্ধ বাতাসে মিশে অসহনীয় করে তুলছে। আলোকসজ্জায় ঘেরা বাড়িটির এমন হাল যেন কেউ মানতে পারছে না। পুড়ানো বাড়ির বুকে কেউ তীব্র আক্রোশে বোল্ড ডজার চালিয়েছে। কি ধ্বংসাত্মক পরিণতি! অনুভূতি হীন দাঁড়িয়ে আছে অনল মাহমুদ। চোখ মুখ দৃঢ় শান্ত। শখের বাড়ি, নিজ পুত্রের এমন পরিণতি‌ও তাকে ছুঁতে পারেনি যে। আর পাঁচ টা সাধারণ ক্ষতির মতোই ব্যাপার টা নিয়ে অলস ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে‌। সাধারণ মানুষের হা হুতাশের শেষ নেই! চারপাশ গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। অনেকের ভাষ্যমতে দেবতুল্য মানুষের সাথে কোন জালেম এমন করেছে! কেন আগে টের পেল না, এ আফসোসের যেন সীমা নেই। অনেকেই অনল মাহমুদ কে সান্ত্বনা দিচ্ছে। মিসেস নূরি মাটিতে বসে কিছুক্ষণ পর পর চিৎকার করে কান্না করছেন। বিলাপ করছেন, চারপাশের এত গুঞ্জন যে মিসেস নুরির ছেলের জন্য হাহাকার কেউ টের পাচ্ছে না।

কান্নার ধকল কমে এসেছে। মিসেস নুরি অসাড়। একপলক স্বামীর দিকে তাকালেন। রাগ যেন রি রি করে শরীরে হানা দিলো। ছেলের মৃত্যু তে লোকটার কিছু যায় আসে না! এ কেমন বাবা! জেদ টাই তার কাছে বড়? সর্বক্ষণ স্বামীর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা মিসেস নুরি স্বামীর উপর‌ই আক্রমণ করে বসলেন‌। কলার চেপে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললেন,
~ তুমি নিষ্ঠুর তাই বলে তোমার ছেলে আগুনে পুড়ে গেছে তোমার কোনো যায় আসে না অনল? বাবা নামে কলঙ্ক তুমি। আমার ছেলেটাকে মেরে ফেললে। খুনী তুমি, আমার ছেলেকে খুন করেছো‌। আমি তোমাকে ছাড়বো না অনল, তুমি আমার কোল খালি করে দিলে!

চমকে গেল অনল মাহমুদ। চোরা চোখে আশপাশ তাকিয়ে দেখলো কয়েকজন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে‌। স্পষ্ট তারা কথা গুলো শুনেছে এবং পাঁচ কান হতে দেরী লাগবে না ঢের বুঝতে পারছে অনল মাহমুদ। বেজায় রাগ হলো তার। চোয়াল শক্ত হতে হতে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। স্ত্রী কে বুকে জড়িয়ে উদাস গলায় বললো,
~ আমি জানি বাড়িটিকে তুমি নিজের ছেলে বলে জানো! ভালোবাসো! নিজ হাতে সাজিয়েছো‌। হ্যাঁ মানছি আমার জন্য‌ই এমন হয়েছে। আমার গরীবদের সাহায্য করাটা কেউ কেউ মেনে নিতে পারছে না; তাই তো আমাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলতে এই পরিকল্পনা করেছে। হয়তো তারা সফল, আমাকে শেষ করে দিলো। কিন্তু তাই বলে অনল মাহমুদ চুপ থাকবে তা হয়? আমি দরকার পড়লে আইনের আশ্রয় নিবো। দেখি আইন আমাকে কেমন ন্যায় দেয়! তুমি শান্ত হ‌ও নুরি!

চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন অনল মাহমুদ। মিসেস নুরি কান্নার মাঝেই হতবাক হয়ে স্বামীর বুকে পড়ে র‌ইলেন। চাটুকারিতা মানুষ কে কতটা নিচে নামায়! অনল মাহমুদের কথায় লোকগুলোর দৃষ্টি খাদে নেমে এলো। অদ্ভুত করুণতা তাদের ঘিরে ধরলো। যারা বাড়িটিকে নিজের ছেলের মতো করে রেখেছে তাদের সাথে অন্যায় হয়েছে ভেবে সান্ত্বনা দিতেও যেন ভুলে গেল!
অনল মাহমুদ মিসেস নুরি’র হাত শক্ত করে চেপে ধরে হাঁটতে লাগলেন গাড়ির দিকে। এখানে আর থাকা যাচ্ছে না। মিসেস নুরি ঘোরের মধ্যে পায়ে পা মেলাচ্ছেন। সদ্য পূত্রহারা বুকের জ্বালা যদি কেউ বুঝতো! সান্ত্বনা দিতেও কেঁপে উঠতো তারা!

অনল মাহমুদের গাড়ি যখন মাহমুদ বাড়ি ছাড়িয়ে গেল আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো বৃদ্ধ দারোয়ান টি। পাশে ঠোঁটে মুচকি হাসি ধরে রেখে বৃদ্ধ কে সাথ দিচ্ছে আসমানী। আগের মতো আটপৌরে শাড়ি পড়া নেই, আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে যে গড়ে নিয়েছে সে পড়নের ট্রাউজার টিশার্ট দেখেই বুঝা যাচ্ছে ‌। চট করে কেউ সন্দেহ করতে পারবে না। ভাববে হাঁটাহাঁটি করতে করতে এ পর্যন্ত এসে জটলা দেখে থেমে গেছে! কিছুক্ষণ পোড়া বাড়িটি দেখে আসমানী বলে উঠলো,
~ মি. আপনার নামটা বোধহয় কি?
~ আসাদ আশহাব!
শব্দ দুটোই বেশ জোর ছিল! এই জোর কাল নাম বলার সময় পায়নি আসমানী! অবাক করেছে ব্যাপারটা তবে প্রশ্ন করলো না। আসাদ আশহাব আবার বললেন,

~ আসাদ আশহাব অর্থ সিংহ বীর। বাবা খুব গর্ব করে রেখেছিলেন। নাম ধরে কখনোই ডাকতেন না। ‘আমার সিংহ বীর’ ঘরে হোক বাইরে হোক এভাবেই ডাকতেন। খুব করে চাইতেন তাদের দলে যোগ দিই। কিন্তু রাজনীতি টা আমাকে টানতো না। কাদের জন্য লড়াই করবো বলোতো? কাদের জন্য রক্ত ঝরাবো, পা ক্ষয় করবো? দিন শেষে দেখা যায় একশ তে এক না পেলেই তারা দোষ দিতে ভুলে না! নিজের বাবা কে দেখে শিক্ষা পেয়েছি। এগোতে চাইনি। বাবাও মেনে নিয়েছিলেন। সবটা সময় সন্তানের মতামতের গুরুত্ব তাঁর কাছে ছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়েছি, নিজের টাকায় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার শপথ নিয়েছিলাম। তার আগেই বাবা চলে গেলেন!

শেষের কথাটা কেমন কান্না হয়ে বেরোলো। আসমানী চোখ মুখ কুঁচকে নিলো। কান্নাটা ঠিক তার পোষায় না। সৎ মা যখন একটা বুড়োর সাথে বিয়ে দিয়ে বলেছিল, “চলে যা আসমানী। এই গ্রামে থাকলে তোর ঠিকানা নিষিদ্ধ পল্লীতেই হবে, এর থেকে জায়েজ সম্পর্ক নিয়ে কিছুদিন থাক। বুড়ো মরে গেলে তার সম্পত্তি গুলোও পেয়ে যাবি। তখন নিজের মতো বাঁচবি!” তখন আসমানীর মনে হয়েছিল নিকৃষ্টের ঊর্ধ্বে তার সৎ মা। কিন্তু আস্তে আস্তে যখন বুঝতে শিখলো, বাস্তবতা ধরতে শিখলো তখন সৎ মা কে তার জড়িয়ে ধরার স্বাদ জেগেছিল। ওই মহিলা যদি তাকে রাতের আঁধারে বুড়োটার সাথে গ্রাম থেকে বের হতে সাহায্য না করতো তাহলে আজ সে নরক যন্ত্রণায় ছটফট করতো! হয়তো মহিলার স্বার্থ ছিলো, ব্যাগ ভর্তি টাকা নিয়েছে নিজের ছেলের ভবিষ্যতের জন্য। স্বার্থ দেখেছিল বলেই তো সে এভাবে খোলা আকাশের নিচে শ্বাস নিতে পাচ্ছে। না হলে যে বদ্ধ ঘরে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকতো না! বিরক্ত গলায় বললো,

~ কাঁদবেন না।‌ আপনার চোখের জল দেখে লোকে মিটমিটে হাসবে! যুগ‌ই এমন!
বৃদ্ধটি আসমানী’র কথায় হাসলো। দৃঢ় কন্ঠে বললো,
~ হাসার লোক যেমন রয়েছে, কাঁদার লোক‌ও রয়েছে। না হয় সান্ত্বনা দেওয়ার লোক রয়েছে। পৃথিবীটাই এমন! ভালো মানুষ যদি বিলুপ্ত‌ই হতো দেশ আর এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতো না। গোপনীয়তা কিছুই থাকতো না। চারদিক অশ্লীলতায় ভেসে যেত, মারামারি হানাহানিতে রক্তাক্ত হতো প্রতিনিয়ত। এখন‌ও দু চারটে বাংলার সিংহ বেঁচে আছে! নাহলে আজ বৃদ্ধ বয়সে বাবাহারা হাহাকার করা সন্তান প্রতিশোধ নিতে পারতো না! চলো, যাওয়া যাক!
হাত দুটো পেছনে জোট করে হাঁটতে লাগলো বৃদ্ধ! লোকটি পরোক্ষভাবে আহিশ আর তাকেই যে ইঙ্গিত দিলো সে সাথে সাথেই বুঝতে না পারলেও কিছুক্ষণ পর বেশ বুঝেছে। আসমানী দেখলো বৃদ্ধটির সাথে কথা বললে তার মন খারাপ হয় না। মুগ্ধতার সাথে সময় টা কাটায়। আসমানী প্রসঙ্গ পালটে বললো,

~ আপনি এখন বাড়ি যাবেন?
~ ছেলের বাড়িতে থাকতে ইচ্ছে করে না। ইদানিং বুঝতে পারছি ছেলের ব‌উয়ের কাছে চক্ষুশূল হয়ে গেছি। বড় কলেজের প্রফেসরের শশুড় দারোয়ানের চাকরি করে ভাবতেই পারে না তারা। আমারো ঠিক পোষাচ্ছে না! যদিও ছেলে রা বাবা বলতে পাগল তবে কি দরকার বলো? ছেলের সংসারে অশান্তি হোক চাই না। কয়েকদিন পর হয়তো ছেলের‌ও মত পাল্টে যাবে, তখন দেখা যাবে বৃদ্ধাশ্রমের নাম বলে ফেললো। ওই সময় দেখার শখ নেই! আগে ভাগেই কেটে পড়া ভালো! সন্তান দুধে ভাতে থাকুক!

প্রত্যেক বাবার চাওয়া তার সন্তান দুধে ভাতে থাকুক! বাবা কে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা ছেলেটাও হয়তো তার সন্তানের জন্য এই দোয়ায় করে! অথচ তাদের ব্যক্তিত্ব হীনতা তাদের ভবিষ্যৎ দুর্বল করে দেয় বুঝতে পারে না! আসমানী বলতে চাইলো তার সাথে থাকতে । তবে কি মনে করে যেন বললো না। যে লোক দুটো কথা হবে ভেবে ছেলের সংসার ছেড়ে দিচ্ছে তাকে নিজের সাথে থাকতে বলে অসম্মান করতে চাইলো না। চুপচাপ দুটো মানুষ হেঁটে যেতে থাকলো। জীবন কত বিচিত্র ময়‌‌। কত মানুষের বিচিত্র মনোভাব! কেউ বাবা-মা হীন কেঁদে বুক ভাসায়, কেউ অবহেলায় ফেলে রাখে! আসমানীর মনে উদয় হলো, পৃথিবীতে সবার যদি এক‌ই মনোভাব থাকতো‌। সৎ থাকতো সবাই। তাহলে কতটা ভালো হতো! বিশৃঙ্খলা, দুঃখ বলে কিছু থাকতো না! হাসি পেয়ে গেল আসমানীর। ধরতে পারলো তাকে আরো একটু বড় হতে হবে। কি সব ছেলেমানুষী ভাবনা ভাবছে! আদ‌ও সম্ভব?

আকাশ আজ গম্ভীরতার ছাপ ফেলেছে। মনে হচ্ছে সন্ধ্যা নেমে যাবে এখন‌ই। তবে বাজে কেবল পাঁচ টা! আরো ঢের বাকি। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। তবে আদিল মানলো না। বৃষ্টি হলেও যে বেশি চাপ দিতে পারবে না সে জানে। বর্ষাকাল অথচ বৃষ্টির বালাই নেই, আবহাওয়া সবসময় উত্তপ্ত’‌ই থাকে। কেটে গেছে বেশ কয়েকটা দিন। দিনগুলো কেমন শান্ত ভাবে জীবন থেকে চলে গেল। না কোনো ঝামেলা, বাক্যযুদ্ধ, না কোনো রোমাঞ্চকর আলাপ! নেপিউ পাড়া থেকে ফিরে এসে নিজেকে বেশ পরিবর্তন করে নিয়েছে সে! অফিস, বাড়ি এই দুই ঠিকানায় তার জন্য বরাদ্দ। মাহমুদ বাড়ির পরিণতি তাকে স্পর্শ করেনি। যদিও অনল মাহমুদ তার সাথে কিছু দিন হম্বিতম্বি করছিল, সে সুক্ষ্ম ভাবে বাবা কে অসম্মান না করে এড়িয়ে গেছে। ওই বাড়ি থেকে বের হ‌ওয়ার দিন সে বলেছিল অনল মাহমুদ তার কাছে সবসময় উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো। তবে মাহমুদ বাড়ি এর পর তাকে আর স্পর্শ করবে না! না কখনো মাহমুদ বাড়িতে অধিকার নিয়ে ফিরে যাবে। কথা রেখেছে সে। এত ঝড় ঝঞ্ঝাটেও সামান্য তম আগ্রহ দেখায় নি!

আলস্য তাকে ঘিরে ধরেছে। অফিসের সময় টুকু কেমন অসহ্য লেগেছিল। তবে এখন কেটে গেছে সেই অস্বস্তি। ঠিক করেছে আজ একা থাকবে নিজ ঘরে। সকাল পেরিয়ে দুপুর হলো, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো ঘর থেকে বের হয় নি! সেই সকালে একটু খেয়েছিল! চোখে মুখে কেমন বিষাদের ছোঁয়া। রকিং চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো আদিল। ছোট ছোট পা ফেলে আলমারির সামনে দাঁড়ালো। অলস ভঙ্গিমায় আলমারি খুলতেই মাঝারি সাইজের এক বক্স চোখে পড়লো। রং টা সিটিয়ে গেছে। আদিল টের পেল সে হাত বাড়িয়ে বক্সটা ধরতে পারছে না। তার হাতে কাঁপছে। আদিল মাহমুদ নিজের ব্যক্তিত্ব হারাচ্ছে। জোরে শ্বাস নিয়ে বুকের কাঁপুনি টা থামানোর চেষ্টা করলো। জোর করে হাত এগিয়ে বক্স টা হাতে তুলতেই আকস্মিক কাঁপুনি টা কোথায় পালালো বুঝে উঠতে পারলো না আদিল। কেমন শান্ত হয়ে গেল সে! একরাশ প্রশান্তি খেলে গেল শরীর জুড়ে। বিছানায় পা তুলে বসে বক্সটা যত্ন সহকারে খুললো। ছোট ছোট অনেকগুলো কাগজ। একদম সাদা, তার মধ্যে কালো কালির ছোট ছোট অক্ষরে কিছু লিখা! একটা চিরকুট হাতে তুলে নিয়ে এমন ভঙ্গিমায় ভাঁজ খুললো, যেন একটু টান লেগেই ছিঁড়ে যাবে! কিছুক্ষণ থম মেরে লেখা গুলো বিড়বিড় করলো সে,

~ আমার শাহজাদা,
শীত জরাজীর্ণ প্রকৃতি কে যেমন কোনঠাসা করে রাখে, বসন্ত এসে শীতের জীর্ণতা কে তেমন ফিঁকে করে সৌন্দর্যে মুডিয়ে রাখে। আপনি নামক মানুষ টি আমার সকল অবসাদকে ফিঁকে করে বসন্তের মতোই জেঁকে বসেছেন। নাহ, পরিত্রাণ পাচ্ছি না! কেমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছি! আমি তো চাই নি এমন! ভালোবাসতে চাইনি আপনাকে! শুনেছি বড়লোকের ভালোবাসার জ্বালা অনেক! এমন জ্বালা সহ্য করা দায়! এই জ্বালায় কি আমার শেষ নিঃশ্বাস হবে?
আদিলের কি হলো, তড়িঘড়ি করে চিরকুট বক্সে তুলে রাখলো। আলমারিতে বক্সটা রেখে একপ্রকার দৌড়েই বের হলো বাড়ি থেকে! যে জ্বালা সে দুটো বছর ধরে সহ্য করছে তার পরিত্রাণ মিলবে কি করে? জবাব তো তাকে দিতে হবে! কেন সে হারিয়ে গেল? বুকের ক্ষত তে ঘা দিতে আবার কেন‌ই বা ফিরে এলো? জবাব যে তাকে দিতে হবে! দিতেই হবে!

ছোট খাটো বাড়িটা খুব সুন্দর ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে। চারপাশে নানান জাতের ফুলের টব। এক অদ্ভুত সৌন্দর্যে ফুল গুলো বাড়িটিকে ঘিরে রেখেছে। তিনটে রুম, ছোট‌ও নয় বড়‌ও নয়। রান্নাঘর টাও বেশ ছোট। তবে একজন অনায়েসেই পঞ্চভোজ তৈরি করতে পারবে। রান্না ঘরের পাশেই ছোট মতন জায়গায় কয়েকটা চেয়ার একটা টেবিল রাখা। একপাশে দুজন বসার সোফাও রয়েছে‌। সাজানো গোছানো বাড়িটা বেশ পছন্দ হয়েছে অনানের। রান্না ঘরে মৃদু শব্দ করে রান্না করছেন কামিনী বেগম। ছেলে দুপুরে জানালো কোনো এক মেয়ে আসবে, তিনি খুশিতে গদগদ হয়ে পঞ্চভোজ সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তার একমাত্র লক্ষ্য‌ই যেন ছেলেকে বিয়ে করানো! তাই চট করে ছেলের মুখে কোনো মেয়ের নাম শুনলে তার থেকে খুশী বোধহয় কেউ হয় না।

অনান কে বসতে বলে চেয়ার টেনে বসলো আফীফ। জিয়াউল টা কে দেখা যাচ্ছে না। হয়তো অনানের আসার খবর শুনেই পালিয়েছে। এই ছেলে যে কেন মেয়েটিকে দেখতে পারে না কে জানে! তার অবশ্য তেমন খারাপ লাগে না! সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে ফুস করে নিঃশ্বাস ফেললো অনান। যেন বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে। বিরক্ত কন্ঠে বললো,
~ একা একা লং জার্নির মতো প্যারাদায়ক আর কিছু নেই! বসে থাকতে থাকতে কোমর ধরে যায়, চুপ থাকতে থাকতে নিজেকে বোবা মনে হয় অথচ পরিত্রাণ সম্ভব নয়! ঠিক করেছি, বিয়ের পর জার্নির কথা ভাববো! দরকার পড়লে হেঁটে যাবো তবুও কোনো যানবাহন নয়!

কথা গুলো বলার সময়‌ মুখ ভঙ্গিমা এমন করলো আফীফ না হেসে পারলো না। সরল কন্ঠে বললো,
~ আমাদের সাথেই আসতে বলেছিলাম! অথচ তুমি জেদ ধরে বসে র‌ইলে!
কয়েকদিনে অনানের জোরেই তুমিতে নেমে এসেছে আফীফ। আগে একটু সংকোচ হতো তবে এখন হয় না। রান্নাঘর থেকে ছেলে-মেয়ে দুটোর কথপোকথন শুনছেন কামিনী বেগম। তুমি সম্বোধন শুনে চোখ কেমন চিকচিক করে উঠলো! অনান এবার সিরিয়াস ভঙ্গিমায় বললো,

~ তোমাকে একটা সত্য কথা বলি! তোমাকে চোখে চোখে রাখতে কেউ আমাকে বলেনি। না কেউ তোমাকে সন্দেহ করেছিল‌। আমি চেয়েছিলাম তুমি পাহাড়ের আড়ালে কি কি হয়, হতে পারে সবটা দেখ। আর ব্যবস্থা নাও! তাই মিথ্যে গুলো বলে তোমার মনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছি!
আফীফ ব্যাপারটা এতটা স্বাভাবিক নিলো অনান নিজেই অবাক হলো‌। সে ভেবেছিল চমকে যাবে ছেলেটা। আফীফ শান্ত কন্ঠেই বললো,

~ তুমি কি ভেবেছো? আফীফ মুনতাসিরের সাথে একটা মেয়ে আছে, গাইড হয়ে হোক তার নাম পরিচয় আমি জানবো না? ব্যাপার টা আগেই সন্দেহ করেছিলাম। চট করে বিশ্বাস করা আমার ধাতে নেই! তবে আমি অপেক্ষা করছি তোমার স্বার্থটা কি শোনার জন্য! আমাকেই কেন গুটি বানালে? নিশ্চয় ‌ চিঠি তুমি দাওনি? হাতের লেখা দেখে চিনে ফেলার ক্ষমতা আমার আছে। হোটেলের রেজিস্ট্রেশন খাতা থেকেই ধরে ফেলেছি অজানা চিঠিদাতা কে!
~ সে কে?
অনানের প্রশ্নে হাসলো আফীফ। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

~ তুমি আমার সন্দেহের বাইরে ন‌ও, ভাবছো কি করে বলবো?
~ আই সি! ভেবেছিলাম আফীফ মুনতাসির লোকটা বেশ ধূর্ত তবে এখন মনে হচ্ছে লেভেল ছাড়িয়ে গেছ! আমার উদ্দেশ্য একটাই অনল মাহমুদের মৃত্যু! তা ছাড়া বর্তমানে কিছু চাইছি না! ভবিষ্যৎ কি বলে কে জানে, চাইতেও পারি!
কেমন ভঙ্গিমায় হাসলো, আফীফের ঠিক সুবিধা’র লাগলো না। কিছু বলবে ঠিক তখনি ঝনঝন শব্দ ভেসে এলো। পাশে তাকালো আফীফ। কামিনী বেগম শরবত নিয়ে এসেছিলেন, তা এখন মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। হাঁপানি রোগীর মতো ছটফট করছেন তিনি। আফীফ বিচলিত হয়ে দৌড়ে এগিয়ে গেল। ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বিচলিত কন্ঠে বললো,

~ মা কি হয়েছে? এমন করছো কেন? খারাপ লাগছে? মাথা ঘুরাচ্ছে? কিছু তো বলো আম্মা!
কামিনী বেগম কিছু বলতে পারছেন না। গলা দিয়ে কেবল অস্পষ্ট হিসহিস কন্ঠ বের হলো,
~ অ ন ল মাহ মুদ?
মায়ের কথা বুঝতে পেরেই অনানের আশায় বসে থাকা চমৎকার টা ঘটে গেল। চমকে উঠলো আফীফ! মায়ের মুখে অনল মাহমুদের নাম শুনে তার খানিক দিশেহারা লাগছে। স্মৃতি যে আনন্দঘন নয়, মায়ের রিয়েকশন‌ই বলে দিচ্ছে। তাহলে কি ঘটেছে মায়ের সাথে? অনল মাহমুদ কি করে জড়িত? এর উত্তর যে শুধু কামিনী বেগম ই দিতে পারবে!

সন্ধ্যা প্রকৃতিতে রক্তিম আভা ছড়িয়েছে। লজ্জারাঙা প্রকৃতি অদ্ভুত মোহনীয়তা নিয়ে ধরা দিয়েছে প্রকৃতি প্রেমীদের চোখে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে উপভোগ করছে তারা। কিন্তু প্রকৃতি যে তাকে টানে না! প্রকৃতি উপভোগ করার মতো দুটো শব্দ যে রয়েছে; তার জীবনে শব্দ দুটোর প্রভাব শূণ্যের কোঠায়। কিছুটা বিতৃষ্ণা নিয়ে সরু গলি ধরে হাঁটছে আদিল। ইচ্ছে করেই গাড়ি নিয়ে আসে নি। নিজের গন্তব্যে এসে আকস্মিক দাঁড়িয়ে পড়লো আদিল! দুটো ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে! একটা তে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র। ভ্রু কুঁচকে এলো তার, বড় বড় পা ফেলে বাড়ির ভেতর ঢুকতেই কুঁচকানো ভ্রু যুগল সোজা হয়ে এলো, চোখে মুখে ভর করলো অবাকতা। ব্যস্ত পায়ে জিনিসপত্র গোছাচ্ছে মিরা! কোথাও যাবে হয়তো। আদিল ঘোরের মাঝেই এগিয়ে গেল। মিরা প্রথমে খানিক অবাক হলেও কিছুক্ষণ তাকিয়ে কাজে মনোযোগ দিল। দু পক্ষ‌ই যেন অপর জনের কথা বলার অপেক্ষা করছে। মিরা’র সাড়া না পেয়ে আদিল চাপা শ্বাস ফেললো। যে তেজ নিয়ে সে এসেছিল সে তেজ আর নিজের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছে না, প্রশ্নগুলোও কেমন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। সে শুধু নিজের মধ্যে এককেন্দ্রিক ভালোবাসা, আবেগ খুঁজে পাচ্ছে। গলা ঝেড়ে প্রশ্ন করেই বসলো,

~ কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
~ জবাব দেওয়ার চুক্তি করিনি!
~ কিছুটা হলেও বাধ্যতা থাকা উচিত ছিল!
~ প্রয়োজন মনে করছি না!
একটু আগের নিভে যাওয়া রাগ টা হঠাৎ ই যেন ফিরে এলো। মিরা বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরালো আদিল। অগ্নি দৃষ্টি বর্ষণ করে তাকিয়ে র‌ইলো গভীর চোখে। হঠাৎ করেই ব্যাপারটা ঘটে গেল। আফরা একনজর দুজন কে দেখে ফোন নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। এসব নাটক তার পোষায় না! অনেক দিন মিহির সাথে দেখা হয় না! মেয়েটা হয়তো রাগ করে আছে!

মিরা নিজেকে ছাড়ানোর কোনো চেষ্টাই করলো না। বরং যতটা কঠোর চোখ আদিল মাহমুদের দৃষ্টিকে টক্কর দিতে পারে ততটা কঠোর করে সমান তালে তাকিয়ে র‌ইলো‌। আদিল কিছুটা গর্জে উঠলো,
~ আমি শান্ত আছি বলে ভাববেন না পাল্টে গেছি! আদিল মাহমুদের ভয়ংকরতা দেখেন নি মিরা। আমার ভালোবাসা কে দুর্বলতা ভেবে ভুল করবেন না। প্রিয় মানুষ বলে তার একের পর এক ভুল ক্ষমা করে দিবে, এমন চুক্তি কখনোই আদিল মাহমুদ করে নি।
মিরা নিজের ভুল হাতড়ে হাতড়েও খুঁজে পেল না। যত ভুল যত পাপ সব আদিল মাহমুদের নামের পাশেই যেন জ্বলজ্বল করছে। কিন্তু তবুও সে চট করে আদিল মাহমুদের ভালোবাসা কে মিথ্যে বলতে পারছে না। যে চোখ সে কিছুদিন আগেও পড়তে পারতো না, চোখের ভাষা বুঝতে পারতো না ; সে চোখের ভাষা আজ তার সামনে খোলামেলা উপস্থিত। শান্ত কন্ঠে বললো,

~ আমি আপনাকে ভালোবাসতে বাধ্য করেনি!
এ যেন কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা! পানি পিপাসায় কাতর লোকের মুখ থেকে পানি সরিয়ে নিলে যেমন কাতর কন্ঠে ছটফট করে, আদিল তেমন ছটফটে ভঙ্গিমায় বলে উঠলো,
~ বাধ্য করেছেন আপনি! ভালোবাসতে বাধ্য করেছেন। আগে আমি এগোয় নি! আপনি কাছে এসেছিলেন। নির্দয় আদিল মাহমুদের বুকে বসন্তের ফুল আপনি ফুটিয়েছিলেন। অচেনা থেকেও আপনার কাতর ভালোবাসার ডাক আমি প্রত্যাখ্যান করতে পারিনি। পারিনি কাগজে লিখা ভালোবাসা গুলোকে ছিঁড়ে ফেলতে, পুড়িয়ে ফেলতে। আপনার দেওয়া শতশত চিঠি আজ‌ও আমার মনের ভেতর আঁকা।

কি করে পারলেন কাছে ডেকে দূরে সরে যেতে? কি করে পারলেন শুরুতেই প্রতারণার মতো নির্মম কিছুতে আদিল মাহমুদের নাম ফেলে দিতে। আমি তো ভালোবাসতে চাইনি! যে আদিল মাহমুদের জীবনে নিজের মা বিলং করে না, যে আদিল মাহমুদের জীবনে বাবা ব্যতিত কেউ বিচরণ করতে পারে না; সে আদিল মাহমুদ আপনাকে ভালোবেসেছে। না দেখে, না চিনে ভালোবেসেছিল। একটা চিরকুটের আশায় বুকে মেঘ জমিয়ে বসে থাকতো! সেই আপনি হারিয়ে গেলেন। একটু একটু করে সুখ পাওয়া মন টাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলেন। কেন করলেন মিরা? জেনেশুনেই এসেছিলেন, কঠোর আদিল কে চিনেই এসেছিলেন। তাহলে কেন এই পরিণতি? কেন আদিল মাহমুদ আজ ছটফট করে? কেন আদিল মাহমুদ আজ ভালোবাসা না পেয়ে জর্জরিত। এই কেন’র উত্তর আপনার কাছে আছে? আজ যে আমার উত্তর চাই মিরা!

রক্তিম টলমলে চোখ। না, রাগী নয়; কেমন একটা ব্যাথার ছাপ ফুটে উঠেছে মিরা’র তাকিয়ে থাকার সাধ্য হলো না। অন্য কেউ হলে হয়তো কথাগুলো শুনেই বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তো, সবকিছু ভুলে আগলে নিতো ছটফটে পুরুষ টাকে। অন্য কেউ কেন, আগের মিরা থাকলে হয়তো ফ্যাচফ্যাচে কেঁদে আদিলের বুক‌ও ভাসিয়ে দিতো। মিরা সেসব কিছুই করলো না। বরং নিজেকে আদিলের হাতের মুঠোয় থেকে ছাড়িয়ে আরেকটু কাছে এসে দাঁড়ালো। শান্ত দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠলো,
~ আমাকে বিয়ে করবেন ডাক্তার?

তাল সামলাতে পারলো না আদিল। দু পা পিছিয়ে গিয়ে ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো। তার প্রশ্নের জবাবে যে এমন জবাব পাবে সে কি জানতো? আকস্মিক খুশিতে গলা শুকিয়ে আসছে তার। খরা’র মতো চৌচির করছে বুক। হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক নেই, অস্বাভাবিক ভাবে স্পন্দন দিয়ে যাচ্ছে। সারা শরীরে যেন অদ্ভুত আনন্দের আলোড়ন বয়ে চলছে। আদিল মিরা’র চোখে চোখ রাখলো। মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটি। হয়তো জবাবের আশা করছে। আদিল টের পাচ্ছে তার পেছনের বিরাট ষড়যন্ত্রের কথা। সামনের মেয়েটির মাঝে নিজের ধ্বংস দেখতে পাচ্ছে। এগোলেই বিপদ! তবুও সে চুপচাপ নিজেকে ঠিক করে উঠে দাঁড়ালো। আজ নিজেকে বড্ড লোভী মনে হচ্ছে। ভালোবাসার লোভ তার মন কে অশান্ত করে দিচ্ছে। নিজের বাম হাত এগিয়ে মিরা’র ডান হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো আদিল। হাত টা কেমন ঈষৎ কেঁপে শান্ত হয়ে গেল। আদিল শান্ত ভঙ্গিতে মুচকি হেসে বলে উঠলো,
~ আপনার ভালোবাসা নামক মৃত্যুতে আদিল মাহমুদ পা বাড়ালো! এমন মৃত্যু সহস্র বার হোক! আমি সহস্র বার জন্মাবো আপনার ভালোবাসায়!

রিকশা ডেকে কেবল‌ই চেপে বসেছে আফরা। প্যাডেল ঘুরাতে ঘুরাতেই আকস্মিক কাউকে দ্রুতবেগে বসতে দেখে মৃদু চমকালো সে। অপরিচিত ভেবে গর্জে উঠতে নিয়ে থেমে গেল। এক জোড়া চোখ হেসে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নরম দৃষ্টি, অদ্ভুত আবেগ মেশানো। আফরা নিজেকে ধাতস্থ করতে সময় নিলো না। গম্ভীর কন্ঠে শুধালো,
~ মি. নোমান এটা কেমন ভদ্রতা?
~ আমাকে ডিপার্টমেন্টের সবাই অভদ্র বলেই চিনে!
সরল জবাব মানতে পারলো না আফরা। কটমট চোখে তাকাতেই নোমান বোকা হাসলো। সাফাই গেয়ে বলে উঠলো,
~ আপনাকে বিব্রত করতে চাইনি মিস। এতদিন পর হঠাৎ দেখা হয়ে গেল, নিজেকে থামাতে পারিনি!
~ থামাতে পারেননি কেন? আপনার সাথে আমার কোনো রসের সম্পর্ক রয়েছে?
পুরো কথা শেষ করতে না পেরেও রাগলো‌ না নোমান। বরং হাসি চ‌ওড়া করে সামনে তাকালো। হেঁয়ালি করে বলে উঠলো,

~ আপনার আপত্তি না থাকলে রসের সম্পর্ক হতেও পারে। আপাতত আমার কোনো আপত্তি নেই!
আফরা’র রাগ তরতর করে বাড়ছে। বেশ ফুরফুরে ছিলো আজ, এই লোকটা এসে নষ্ট করে দিলো। নোমান এবার সিরিয়াস ভঙ্গিমায় বললো,
~ দু’বার এসেছিলাম আপনার কাছে! কোথায় ছিলেন এতদিন? শহর ছাড়তে না করা হয়েছিল!
আফরা মাথা ঘুরিয়ে নোমানের দিকে তাকালো। কেমন চোরা দৃষ্টি নোমানের। গম্ভীর গলায় বললো,
~ জেনেও না জানার ভান করা গিরগিটি দের আফরা একদম পছন্দ করে না মি. নোমান!

হতাশ নিঃশ্বাস ফেললো নোমান। আফরা মুচকি হেসে প্রকৃতি দেখায় মন দিতেই ঔষধের দোকানের সামনে দাঁড়ানো মানুষ টাকে চোখে পড়লো। কেমন গম্ভীর দৃষ্টিতে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। দৃষ্টিটায় কি ছিলো, আফরা চোখ মেলাতে পারলো না। ছটফটে দৃষ্টি নামিয়ে ঈষৎ কেঁপে উঠলো। আরেক পলক দেখার স্বাদ জাগলো, আফীফ মুনতাসির কি এখনো তাকিয়ে আছে? কিন্তু ওই দৃষ্টির মুখোমুখি হ‌ওয়ার দুঃসাহস আফরা করলো না। রিকশা টা আড়াল হতেই আফীফ ঔষধের প্যাকেট টি শক্ত করে চেপে ধরে হাঁটতে লাগলো। মুখ দেখে বুঝার উপায় নেই একটু আগেই এই ছেলে প্রচন্ড রেগেছিল।

মোডের কাছাকাছি আসতেই নোমান রিকশা থামাতে বললো। নেমে যাবে! আফরা কিছুই বললো না। ভাড়া মিটিয়ে কয়েক পা এগোতেই আফরা ডেকে উঠলো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেয়েটা কেমন তাকিয়ে আছে। কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই কয়েকটা খুচরো টাকা সামনে মেলে ধরলো। বললো,
~ টাকা গুলো ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখুন। রিকশায় উঠলেই ভাড়া পুরুষ দিবে ভাবাও বন্ধ করুন। আপনার ভাড়া কেটে নেওয়া হয়েছে। অযহত টাকা নষ্ট করতে নারাজ আমি! আসুন এবার!
নোমান কিছুটা অপমানিত হয়তো হয়েছে। মুখটা থমথমে হয়ে এলো। টাকা টা হাতে গুঁজে ফের হেসে বললো,
~ কয়েকদিন আগেও মিস আফরা’র পছন্দ অপছন্দের গুরুত্ব আমার কাছে ছিলো না। তবে এখন মনে হচ্ছে আপনার পছন্দ অপছন্দের থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছুই নেই! খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে!

হনহন করে চলে গেল নোমান। আফরা কথাগুলো আবর্জনা ভেবেই নাক কুঁচকে নিলো। বিতৃষ্ণা ঘিরে ধরলো যেন। রিকশা চালক কে ইশারা করতেই আবার চলতে শুরু করলো চাকা গুলো। আগের মতো আমেজ ফিরে পেল না।
অন্ধকার নেমে আসছে ধরণীতে। লজ্জা রাঙ্গা নতুন ব‌উ রূপী প্রকৃতি মুখ লুকিয়েছে রাতের বুকে। অন্ধকার গ্রাস করে নিয়ে সকল লজ্জা। কিছুটা সময় পরেই আফরা গন্তব্যে পৌঁছাবে। রিকশা চালক একটু পর পর আড়চোখে তাকে দেখছে। শহরের রিকশাচালকের আড়ালে যে ছিনতাইকারী লুকিয়ে থাকে আফরা’র জানা। লোকটার মাঝে এখন তাদের‌ই বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। অথচ সে ভয় পাচ্ছে না। তার কাছে ফোন ব্যতিত মাত্র দুশো টাকা রয়েছে। খুব বেশি লাভ ছিনতাইকারীর হবে না। বড়জোর ব্যাগে চকচকে অস্ত্র টা দেখে কাপড় নষ্ট হতে পারে‌। কিছুটা শব্দ করেই হাসলো আফরা! রিকশা চালক চমকে গেল। পাগল‌ও ভাবতে পারে। আফরা না তাকিয়েই বিষয়টা বুঝতে পারছিলো। এদিকে দোকানপাট মানুষ জন নেই। আফরা ভরাট গলায় জিজ্ঞেস করলো,

~ এখন নিশ্চয়ই বলবেন আপনার এক নম্বর পেয়েছে? দূরে গিয়ে সাথীদের ফোন দিবেন। তারা আসবে। আর আমাকে বলবে,” এই কি কি আছে বের কর। প্রাণে বাঁচতে চাইলে তাড়াতাড়ি দে!” আর আমি ভয় পেয়ে সবকিছু দিয়ে দিবো! কিন্তু মামা আমি তো ভয় পাচ্ছি না। এই দেখেন আমার কথায় আপনি ভয় পেয়ে গেলেন। আপনি তো দলের কলঙ্ক। একটা মেয়ের কথা কে ফেইস করতে পারছেন না। ছিহ ছিহ, বড় লজ্জার!
ভঙ্গিমা টা এমন যে রিকশা চালক গাড়ি থামিয়ে দিয়েছে‌। আফরা হেসে নেমে দাঁড়ালো। ব্যাগ থেকে ভাড়াটা বের করে হাত বাড়িয়ে দিলো। চালক নিবে কি নিবে না দোটানায় পড়ে হাত বাড়াতে ভুলে গেছে। আফরা টাকা টা বসার জায়গায় রেখে বললো,

~ সাধারণ গরিব দের না ধরে বড়লোক দের ধরবেন। এই ধরেন শখের বশে রিকশায় ঘুরতে বেরিয়েছে, তাদের ধরলে টাকায় টাকা! মিডল ক্লাস দের ধরে কাঁচকলা ছাড়া কিছুই পাবেন না। আসি!
আফরা আবছা আলোয় হাঁটতে লাগলো। রিকশা চালক এখনো অবাক চোখে তাকে দেখছে‌। পাত্তা দিলো না সে। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কল দিলো। প্রথম বার রিং হতেই রিসিভ হলো। আফরা হেসে বললো,
~ তুমি তো ঠকে যাচ্ছো নাদিয়া। নিজের ভাইয়ের লাইফ সাজাতে নিজের লাইফ নিয়ে ভাবছো না। তোমার প্রেমিক তো ভালোয় মজেছে ভাবী নিয়ে! শুনতে খারাপ লাগলেও সম্পর্ক তো পাল্টানো যায় না, না? কিছুই করার নেই তোমার? কষ্ট হয় আমার তোমার জন্য! এই তো একটু আগে দেখলাম মিহি আব্বু, আম্মু নিয়ে ঘুরছে! ব্যাড লাক তোমার!

আফরা ফোনের এপাশ থেকে ঝনঝন শব্দ পেল। রাগ যে মাথায় উঠেছে বেশ বুঝতে পারলো। তার কাজ হয়ে গেছে বিদেয় ফোন কেটে দিলো। অযহত টাকা নষ্টের মানেই হয় না। মিহির বাড়ি যাওয়ার ভাবনা সে মাঝপথেই বাদ দিয়েছে। যখন দেখলো মিহি আব্বু আম্মুর গেইট ধরে বের হচ্ছে, তখন‌ই সে রিকশা ঘুরিয়ে চলে এসেছে। তার কাজ কত সহজেই না হয়ে গেল। এখন শুধু মিনিট দেখে পরের কাজ টা করতে হবে!

সাজানো গোছানো ঘরটার একপাশে সিঙ্গেল বেড রাখা। ভাজহীন রঙিন চাদর, গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছেন কামিনী বেগম। কিছুক্ষণ হলো ডক্টর চলে গিয়েছেন। যদিও ডক্টরের থাকার কোনো দরকার ছিলো না, ইনজেকশন পুশ করেই চলে যেতে পারতেন। তবে আফীফের জেদের জন্য যেতে পারেননি। তার ভাষ্য জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত যেতে পারবে না। যদি সমস্যা হয়? জ্ঞান ফিরতেই ডক্টর চেকাপ করে, ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে চলে গেছেন। নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন কামিনী বেগম। এতক্ষণ বিছানার এক কোণে বসে ছিলো অনান। আফীফ কে বাইরে যেতে দেখেই এসেছে। সৌজন্যতার খাতিরেই। আফীফ কে দেখে উঠে দাঁড়ালো। অতিরিক্ত দুরত্ব টা খানিক ঘুচিয়ে বললো,

~ আমি আজ এই ঘরে থাকি, তোমার বিশ্রামের প্রয়োজন!
আফীফ মুচকি হাসলো। দীর্ঘসময় জার্নি করা মেয়েটা তাকে বিশ্রামের কথা বলছে। কিছুটা গর্ব করেই বললো,
~ এমন‌ও দিন গিয়েছে দু দিন না খেয়ে আটচল্লিশ ঘন্টা দৌড়ের উপর থেকেছি। এত সহজে ভেঙে পড়ার শরীর আমার নয়! বিশ্রাম টা তোমার প্রয়োজন, জার্নি করে এসেছো। আর এ নতুন না। হঠাৎ করে মা অসুস্থ হলে বাপ ছেলে এভাবেই পাহারা দিতাম। কেউ কাউকে বলেও টলাতে পারতো না।
খানিক থেমে গলা উঁচিয়ে ডেকে উঠলো আফীফ,
~ জিয়া, জিয়া! এদিকে এসো।
হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকলো জিয়া। কিছুটা হাঁপাচ্ছে। আফীফ একপলক তাকিয়ে বললো,
~ অনান কে ঘরটা দেখিয়ে ওর খাওয়ার ব্যবস্থা করো। মা রেঁধেই রেখেছে, তুমিও খেয়ে নিও। আমি মায়ের সাথে খাবো!

খাওয়ার কথা উঠতেই জিয়াউল টের পেল তার ভীষণ খিদে পেয়ে। দৌড়াদৌড়ির জন্য‌ই হয়তো। নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই অনান পিছু নিলো। আগের মতো চঞ্চলতা নেই কারোর মাঝে। হঠাৎ করেই যেন ফুরিয়ে গেল। অনান কে ঘর দেখিয়ে ফ্রেশ হতে বলে জিয়াউল চলে গেল রান্না ঘরে‌। ঠান্ডা খাবার তো আর অতিথি কে দেওয়া যায় না। রান্নার ট্রেনিং তাদের আগ থেকেই নেওয়া। কোনো রকম সমস্যা হলো না। খাবার গরম করতে করতেই অনান এসে টেবিলে বসলো। নিঃশব্দে খাবার বেড়ে দাঁড়িয়ে র‌ইলো জিয়াউল। জিয়াউল কে বসতে না দেখে এক লোকমা খাবার মুখে তুলে অনান বললো,

~ আপনি খাবেন না?
~ আপনি খান, স্যার কে রেখে আমি খেতে পারবো না।
বিস্মিত হলো অনান। তবে প্রশ্ন করলো না। কতটা ভালোবাসা মিশ্রিত কথাটা। কেউ যে তার জন্য খাবার না খেয়ে অপেক্ষা করছে আফীফ মুনতাসির কি জানে? অনানের মনে হলো আফীফ মানুষ টা বড্ড ভাগ্যবান। ক‌ই তার জন্য তো কেউ অপেক্ষা করে না। দু বেলা না খেলেও কেউ বলে না খায় নি কেন! সে মানুষ যে তার নেই! মন খারাপ নিয়েই খাবার শেষ করলো অনান। একপলক জিয়াউল কে দেখে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরে চলে গেল। জিয়াউল সবকিছু ঠিকঠাক করে কামিনী বেগমের ঘরে গেল। আফীফ কারো সাথে কথা বলছে। কিছুটা শুনে বুঝতে পারলো তাদের দলের ডক্টরের সাথেই কথা বলছে। কথা শেষ করে ঘুরতেই জিয়াউল প্রশ্ন করলো,

~ কি বললো স্যার?
~ কি আর বলবে জিয়া! সেই অ্যাফাসিয়ার কথায় বললো!
কথাটা শেষ করেই উদাস ভঙ্গিমায় বসলো আফীফ। জিয়াউলের মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল। স্যারের এমন সুর তাকে কষ্ট দেয়। ছোট স্বরে শুধালো,
~ এটা কি ভালো হবে না স্যার?
~ চিকিৎসা চললে হয়তো ভালো হয়ে যেত! কিন্তু মা যে কোনো থেরাপি নিতে চায় না জিয়া‌। কেন নিতে চায় না সেটাই বুঝতে পারি না। কে না কথা বলতে চায়? কে না মনের ভাব প্রকাশ করার ইচ্ছে পোষণ করে? মা কেন এমন করে, আমি আজ‌ও ধরতে পারি না জিয়া। আমার কি ইচ্ছে করে না মায়ের মুখে আদুরে স্বরের ডাক শুনতে?
কি করুণ কন্ঠস্বর ‌। জিয়ার বুকটা হু হু করে উঠলো‌। আবার প্রশ্ন করলো,

~ থেরাপি ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যম নেই স্যার ?
মাথা নাড়ালো আফীফ। আছে! কিন্তু তা তাদের হাতে নেই! মাথা নত করেই বললো,
~ অ্যাফাসিয়া বলতে স্ট্রোক বা মস্তিষ্কের কোন আঘাতের ফলে রোগীর বাকশক্তি হারানোকে বোঝায়। এমন দুই ধরণের অ্যাফাসিয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় অ্যাফাসিয়া সংস্থা। তার মধ্যে মা যেটি দ্বারা আক্রান্ত সেটি হলো “ব্রোকাস অ্যাফাসিয়া”। এতে বাকশক্তি পুরোপুরি না হারালেও অনর্গল কথা বলার ক্ষমতা লোপ পায়। রোগীর কথা বলা এতোটাই সীমিত হয়ে পড়ে যে, অনেক প্রচেষ্টার পর চারটি শব্দের চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারেনা। অন্যের কথা বোঝার ক্ষেত্রে বা কোন লেখা পড়ার ক্ষেত্রে রোগীর কোন সমস্যা না থাকলেও নিজে লিখতে গেলে কিছু অসুবিধা হয়।
কিছুটা থেমে আবার বললো,

~ আমার ছোট বেলায় আম্মা হঠাৎ করেই স্ট্রোক করে‌। জ্ঞান ফেরার পর কথা বলতে না পেরে কোনো আফসোস‌ই করে নি। বরং যেন খুশি হয়েছিলো। বাবা এতবার বলতো থেরাপি নিতে, সে আধো আধো বুলিতে কথা বলতে পারে, একসাথে পারে না। হঠাৎ হঠাৎ বলতে পারে। থেরাপি নিলে সমস্যার সমাধান হবে। বাবা জোর করলেই নাকি মা নিজের ক্ষতি করার কথা বলতো। পরে বাবা হাল ছেড়ে দিয়েছে। লিখতে গেলে অসুবিধা’র প্রভাব টা বাবার সাহায্যেই কাটিয়ে তুলতে পেরেছে। কতদিন পর আম্মা কথা বললো। শুধু মাত্র দু শব্দ উচ্চারণ করেই জ্ঞান হারালো। অথচ এখন যদি সে আবার স্ট্রোক করতো, বাকশক্তি ফিরে পাওয়ার চান্স ছিলো। আবার নাও থাকতে পারে! কিন্তু মা অনল মাহমুদের নাম শুনে ভয়ে সিটিয়ে গেল কেন? এই লোকের সাথে আমাদের কোনো অতীত জড়িত নয়তো?
জিয়াউল বুঝলো কামিনী বেগমের পুনরায় কথা বলার উপায় একটাই বেঁচে আছে, সেটি হলো স্ট্রোক। কিছুটা বাচ্চা দের মতোই বললো,

হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ৩৫+৩৬+৩৭

~ স্যার আমরা এমন একটা কাজ করবো আন্টি যেন স্ট্রোক করে। তাহলেই তো হয়ে গেল!
জিয়াউলের বোকা বোকা কথায় আফীফের রাগার কথা থাকলেও হাসি পেল। কিছুটা হেসেই বললো,
~ মস্তিষ্কের স্ট্রোক পাগলা! আমাদের কাজে যদি হার্ট অ্যাটাক করে তখন?
লজ্জা পেল জিয়াউল। তড়িঘড়ি করে বের হয়ে এলো ঘর থেকে। এত বড় অফিসার, তার এমন ছেলেমানুষী কথা মানায়? আফীফ জিয়াউলের যাওয়া দেখে হেসে মায়ের কাছে বসলো। কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন!

হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ৪১+৪২+৪৩