একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫১

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫১
Mousumi Akter

“কি যেন ঐ মেয়ে দুইটার নাম। ছোঁয়া আর সারাহ। আদব কায়দা বলে কিচ্ছুই নেই। ছেলেদের আবার মেয়ে বন্ধু কিরে! ছেলেদের হবে ছেলে বন্ধু আর মেয়েদের হবে মেয়ে বন্ধু। কত গুলা উশৃংখল উগ্র ছেলে মেয়ের সাথে মেলামেশা করে লেখাপড়া উচ্ছন্নে গিয়েছে। যে ছেলে ক্লাসে ফার্স্ট হত সে বছরে বছরে পরীক্ষায় ফেল করছে। বন্ধুই হল যত নষ্টের গোড়া। আমার প্রথমেই ভুল হয়েছে এই আজে বাজে বন্ধুদের সাথে তোমাকে মিশতে দেওয়া। মানুষ যাদের সাথে মিশে তাদের রুচি ও তেমন হয়। রাস্তার ছেলে মেয়ের সাথে মিশে মিশে রাস্তার মেয়ের চেয়েও খারাপ মেয়েকে ঘরের বউ করার রুচি হয়েছে তোমার। এই যে তোমার বন্ধুরা এদের যদি পারিবারিক শিক্ষা থাকত এসব ঘটানোর আগে এটলিস্ট আমাকে জানাত। ওদের কি পরিবার বলে কিছু আছে। ওদের মা -বাবাকে পেলে জিজ্ঞেস করতাম কি শিক্ষা দিয়েছে ওদের। ”

মৃন্ময়ের শরীর রাগে থরথর করে কাঁপছে। ওর বন্ধুরা হল প্রাণের অধিক প্রিয়। সারাজীবন বন্ধুদের কেউ কিছু বললে মৃন্ময় তাদের ছাড়েনি। ধেয়ে গিয়েছে গায়ে হা’ত তো-লা-র জন্য। সে কোনদিন ভাবতেও পারেনি তার বাবার দ্বারা তারা বন্ধুরা এত আঘাত পাবে। মৃন্ময়ের বাবা এতগুলা কথা বললেন অথচ তন্ময় আর দ্বীপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। একটা কথার ও প্রতিবাদ করছে না। এত জঘন্য কথার জন্য ওরা একটা কথার প্রতিবাদ করলেও তো করতে পারত। কিন্তু ওরা তা করছে না। মৃন্ময় রাগে কাঁপতে কাঁপতে তরীর হাত ছাড়ল। ড্রয়িং রুমে থাকা বড় মাটির ফুলদানি তুলে আছাড় মারল। সাথে সাথে তরী এক হাত লাফিয়ে উঠল ভ’য়ে। ভ’য়ে ওর আত্নাটা যেন উড়ে গেল। মৃন্ময় রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না। সে রাগে দুঃচিন্তায় কপালে দুই আঙুল ঠেকালো। তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” দেখো বাবা, দেখো। তুমি কাদের পারিবারিক শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলছো। আজ যদি তোমার জায়গা অন্য কেউ থাকত না ওরা ঠিকই প্রতিবাদ করত। ওরা চুপ আছে দেখে কি ভাবছো ওরা ভীতু? তোমার ভ’য়ে চুপ আছে। তুমি আমার বাবা। সারাজীবন ওরা তোমাকে বাবার মত জেনে এসছে। ওরা তোমাকে ভালবাসে আর সম্মান করে তাই চুপ আছে। সবচেয়ে বড় কথা তুমি আমার বাবা শুধুমাত্র এই সম্পর্কের জন্য ওরা চুপ আছে। তোমাকে কিছু বললে আমি কষ্ট পাবো, আমাকে ওরা ভালবাসে বলে চুপ আছে। আজ তুমি যাদের এত আজেবাজে কথা বলছো না ওরা আমার বন্ধু না শুধু আমার ভাই। আজ আমি বেঁচে আছি ওদের জন্য। বাবারা নাকি সন্তানের হৃদয়ের অনুভূতি বোঝে। তুমি কি আমার অনুভূতি বুঝেছিলে বাবা। তুমি রাতের পর রাত নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছো। আমি মানসিক যন্ত্রণায় ছটফট করে কতবার ছাদ থেকে সুইসাইড করতে গিয়েছি সে আমি ছাড়া আর কেউ জানেনা। আমার সাথে ওরাও সারারাত না ঘুমিয়ে আমাকে সময় দিয়েছে। বাবা হিসাবে এই দায়িত্ব টা তোমার নেওয়া উচিৎ ছিলোনা। তুমি তোমার জেদ নিয়ে পড়ে ছিলে। আমার বন্ধুদের নিয়ে একটা খারাপ কথাও তুমি বলবে না। এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বন্ধুমহল হল আমার। ”
তন্ময় এতক্ষণ চুপ থেকে মৃন্ময়ের ওপর চেতে গিয়ে বলল,

” একদম চুপ মৃন্ময়। আঙ্কেল এর কাছে ক্ষমা চা। আঙ্কেল তোকে জন্ম দিয়েছে, তোকে বড় করেছে,মানুষ করেছে। তোর বিয়ে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিলো। সেটা পূর্ণ হয়নি। কষ্ট পেয়েছেন, তাই চেতে গিয়েছেন। কিন্তু তুই কেন রিয়েক্ট করছিস। আমরা তো কিছু মনে করিনি। এই দ্বীপ তুই কিছু মনে করেছিস।”
দ্বীপ এর মুখ পু’ ড়ে আছে। সে একটা ভারী নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
” হুম।”
তন্ময় আবার ও বলল,

” আঙ্কেল আমাদের মাফ করে দিন। এ ছাড়া আমাদের কিছুই করার ছিলোনা।”
মৃন্ময়ের বাবার মাথা কাজ করছেনা। সে রাগে কি বলতে কি বলছে নিজেও জানেনা। রাগান্বিত হয়ে তন্ময়ের নমনীয়তার বিপরিতে গিয়ে বলল,
” এই বের হও। এখুনি আমার বাসা থেকে বের হও। সাথে ওই বস্তির মেয়েকে নিয়ে যাও। আমার বাসার ত্রিসীমানায় যেন তোমাদের না দেখি। ”
মৃন্ময় দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” আম্মু বাবাকে নিষেধ করো কিন্তু। নিষেধ করো এখনি। আমি কিন্তু সব কিছু শেষ করে দিবো।”
মৃন্ময়ের বাবার জেদ যেন আরো বাড়ছে। রাগে জেদে কাঁপতে কাঁপতে বললেন,
” এই ছেলেগুলোর জন্য আমার ওপরে কথা বলছো। আমার চেয়ে ওরাই তোমার কাছে বড় হয়েছে। ওকে ফাইন তুমি চয়েস করো তুমি কার সাথে থাকবে। আমি নাকি তোমার বন্ধুরা।”
মৃন্ময় তার বাবার এমন প্রশ্নে আশ্চর্য হয়ে বলল,

” এসব কি বলছো বাবা। তুমি তো তুমিই। তোমার সাথে কি পৃথিবীর কারো তুলনা আছে। এখানে তুমি নিজেকে অপশন হিসাবে দেখছো কেন?”
” আমার কথার উত্তর দাও মৃন্ময়। তোমার কাকে লাগবে? আমি নাকি ওদের।”
” আমার সবাইকে লাগবে বাবা।”
” তোমাকে আমার কসম দিচ্ছি যে কোনো এক সাইড বেছে নিতে হবে তোমার।।তুমি যদি আমাকেও চাও বন্ধুদের ও চাও তাহলে আমাকে পাবানা। এ বাড়িতে তোমার জায়গা হবেনা। এখন তুমি ভেবে নাও কাকে লাগবে তোমার।”
মৃন্ময় তার বাবার এমন রুপ আগে পরে কখনো দেখে৷ তার বাবা একটু রাগি। কিন্তু এই জেদি তেজি বাবাকে সে আগে পরে দেখেনি। মৃন্ময় ও কঠিন গলায় বলল,

” তুমি বাবা হয়ে যদি আমাকে এভাবে শর্তে ফেলে দাও। আমার আবেগ অনুভূতি নিয়ে খেলা করো তাহলে লাগবে না আমার এ বাড়ি। আমি ওদের সাথেই থাকব।”
” আর যদি বলি আমাকে চাও নাকি ওই মেয়েটা নাকি এই ছেলে গুলো তাহলে কি করবে?”
” আমি আবার ও বলছি বাবা তুমি আমার হৃদয়ে বসবাস করো। অকারণ নিজেকে অপশন বানাচ্ছো। তুমি যদি নিজেকে অপশন বানাতে পারো আমিও বলতে পারি আমার ওদের লাগবে তোমাকে নয়। তুমি যদি জিদ ধরে থাকতে পারো, আমাকে না বোঝো আমিও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব।”
মৃন্ময়ের বাবা আবার ও বললেন,

” যদি ওই মেয়েটা আর এই ছেলে গুলোর মাঝে কাউকে পছন্দ করতে বলা হয়, কি করবে তুমি?”
“এই পৃথিবীতে যে আমাকে এমন শর্ত আর অপশনে ফেলবে তাকেই ছেড়ে দিবো। ওদের মাঝে যে এমন করবে তাকে ছেড়ে দিবো। কারণ আমার সবাইকে লাগবে।”
” বাহ! তোমার সবাইকে লাগবে শুধু আমাকে লাগবে না। তোমাকে শেষ সুযোগ দিচ্ছি মৃন্ময় ওই মেয়েটাকে যেখান থেকে এনেছো সেখানে ছেড়ে আসো। আর এই ছেলে গুলোর সাথে মেশা বন্ধ করো। তাহলে এ বাড়ির দরজা খোলা থাকবে তোমার জন্য।”
মৃন্ময় এর ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙে গেল। সে চিৎকার দিয়ে বলে উঠল,

” বাহ! অসাধারণ। তুমি পারবে আম্মুকে ছেড়ে দিতে? তুমি যদি আম্মুকে ছেড়ে দিতে পারো আমিও ভেবে দেখব আমার ওয়াইফ কে ছাড়ব কীনা! সরি ভেবে দেখব মানে? প্রশ্নই আসেনা আমার ওয়াইফ কে ছেড়ে দেওয়ার। তুমি স্বামী হিসাবে অমানুষ হতেই পারো তাই বলে কি আমিও অমানুষ হবো। ”
“তার মানে তুমি এই অসভ্য মেয়ে আর ছেলে গুলোকে ছাড়বে না। ”
” প্রশ্নই আসেনা। ”
মৃন্ময়ের বাবা বেশ কড়া ভাবে বললেন,
” তোমাকে যে মানুষ করেছি তার মূল্য কি কিছুই না।”
“হ্যাঁ তার মূল্য আছে। আমিও আমার সন্তান মানুষ করে শোধ করে দিবো।”
তন্ময় বলল,

” আঙ্কেল আমরা চলে যাচ্ছি। আপনি প্লিজ তরী আর মৃন্ময় কে মেনে নিন।” বলেই তন্ময় আর দ্বীপ হাঁটা দিলো।
মৃন্ময় বলল,
” দাঁড়া তন্ময় আমিও যাবো। ” বলেই তরীর হাত ধরল। তরী কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলে ফেলল। সব কিছুর জন্য কেন যেন নিজেকেই দোষী মনে হচ্ছে। মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারছে না।
পিহু কাঁদতে কাঁদতে বলল,
” প্লিজ বাবা ভাইয়াকে যেতে দিওনা। ভাইয়াকে ছাড়া থাকতে পারব না।।”
মৃন্ময়ের আম্মু বলল,
” এত বাড়াবাড়ি না করলেও পারতে।”
মৃন্ময় তরীর হাত ধরে বলল,

” এই তোমার বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছি। আর কোনদিন ফিরব না বাবা। ”
বলেই হাঁটা দিলো। তন্ময় আর দ্বীপ পেছন ফিরে তাকালো। মৃন্ময়ের বাবাকে শেষবারের মত রিকুয়েষ্ট করে বলল,
” আঙ্কেল আপনি তরীকে মেনে নিন। আমরা কোনদিন আর মৃন্ময়ের সাথে মিশব না।”
মৃন্ময়ের বাবা ওদের দিকে না তাকিয়েই বললেন,
” তোমরা ওর সাথে মিশো না না মিশো তা নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমি কোনদিন ওই মেয়েকে মেনে নিবোনা। আমি বেঁচে থাকতে না।”
মৃন্ময় তন্ময় আর দ্বীপ কে বলল,

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫০

” প্লিজ তোরা রিকুয়েষ্ট করিস না। আর আমার সাথে মিশবি না মানে। আমার ফ্যামিলি লাগবে না ভাই। তোদের লাগবে৷ আমার ফ্যামিলির অবস্থা কি দেখছিস তো। কি বলব আর। চল এখান থেকে। আমার স্ত্রীর সম্মান নেই যেখানে সেখানে থাকব না আমি।”
বলেই ওরা হাঁটা দিলো। তখন ই মৃন্ময়ের বাবা পেছন থেকে ডাকল।

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫২