প্রেমঘোর পর্ব ৩৯+৪০+৪১+৪২
নার্গিস সুলতানা রিপা
নৌশিনের নিচে মানতে হলো না,সাদাদ ওর জন্য খাবার নিয়ে এসেছে,
“এ মা,এক প্লেট কেন??”
“এমনি…..”
“তুমি খাবে না?”
“খাবো তো….দু জন এক সাথে…..”
সাদাদ প্লেট থেকে ঢাকনা সরিয়ে নিলে,নৌশিন পুরো হা হয়ে গেলো……
“আমরা দুজনে এতো খাবো???”
“জ্বি খাবো……”
“তুমি খাবে আমি না…..”
“চুপ হা করো……”
“একটু পরে খাই……”
“চুপ,হা করো বলছি…..”
“করছি তো ধমক দেওয়ার কি আছে!…….”
“তাহলে হা করো আর ধমক দিবো না….”
“এই করলাম,দাও…….”
সাদাদ নৌশিনের মুখে এক চামচ ভাত তুলে দিতে যাচ্ছে নৌশিন তখনি মুখ বন্ধ করে ফেলে……
“কি হলো???ওপেন করো মুখ……”
নৌশিন মুখ টা গোমড়া করে বললো,
“না…..তুমি খাও আমি খাবো না……”
“নৌশিন কি বলো তো??এভাবে না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে আরও…..”
“হলে হবো তোমার কি তাতে???…..”
“আমার কি মানে,তুমি জানো তুমি অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমার কতটা কষ্ট হয়ে-এক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিলো আমার জীবন টাই বুজি শেষ…..”
সাদাদের কথা শেষ হওয়ার আগেই নৌশিন হাত দিয়ে সাদাদের মুখ আটকে দেয়,
“প্লিজ,এমন বলো না…….”
সাদাদ নৌশিনের হাত টা সরিয়ে নিয়ে বলছে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ওকে,বলছি না…..এবার তো হা করো।।।।না হলে আবার বলবো কিন্তু…..”
সাদাদ আবারও এক চামচ ভাত তুলে নৌশিনের মুখের সামনে ধরলো,
“ধ্যাত,আমি খাবো ই না…..তুমার ভাত তুমি ই খাও……”
সাদাদ আবার একটু ধমক দিয়ে বলে উঠে…..”নৌশিন…….”
নৌশিন সাদাদের ধমক শুনে কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলে,
“খাবো না আমি,খালি ধমক………”
“আচ্ছা বাবা সরি,প্লিজ জান খেয়ে নাও…….”
“খাবো না…..তুমি একটুও ভালোবাসো না আমায়….”
“সরি তো,,,,কে বলছে বাসি না ভালো……অনেক বেশি ভালোবাসি নিজের থেকেও….”
“ছাই বাসো……ভালোবাসলে হাত দিয়েই খাইয়ে দিতে চামচ দিয়ে নয়……হুমমমম।।।।।”
“ও আচ্ছা!এই ব্যাপার?তা হলে মহারানী এই জন্য রাগ করছিলো……….”
নৌশিন মুখ টা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,
“ভাব……সব বলে দিতে হয়…….”
মুচকি হাঁসে সাদাদ…….
“ওকে,এই যে চামচ রেখে দিলাম…….এখন হাত দিয়ে ই খাইয়ে দিবো…..দেখি এই দিক মুখ করো…. ”
নৌশিন অন্য দিকে ই তাঁকিয়ে…..
সাদাদ নৌশিনের মুখ না ঘুরিয়ে,যে দিকে নৌশিন মুখ করে রেখেছে সে দিকে বসে পড়ে-ভাত মাখিয়ে নৌশিনের মুখের কাছে ধরে,
“এই বার তো খাও……”
নৌশিন মুচকি হেঁসে সাদাদের হাত থেকে ভাতের লোকমা টা মুখে নিয়ে নেয়……….
“বাহ্….গুড গার্ল……”
“হুম…..সবাই বলে……”
“তাই নাকি???”
“হুম…..তবে কেউ কেউ বেড ও বলে….যাক সেট যার যার পার্সোনাল ব্যাপার…..তুমি গুড বললেই হবে আর কারও বলা লাগবে না……..”
“তুমি আমার কাছে শুধু গুড না…..বেস্ট…..”
আবারও সেই পাগল করা ঠোঁট বাঁকানো হাঁসি দেয় নৌশিন………
“প্লিজ,এমন করে হাঁসিস না…..না হলে ভাত ছেড়ে তোকে খেতে ইচ্ছে করবে….”
নৌশিন সাদাদের হাঁটুতে একটা কিল দিলো…..”ধ্যাত……”
“আচ্ছা….হয়েছে….হা করো আবার…..”
“হুম……আ…..
এই কি খাচ্ছি এটা??
এতো মজা লাগছে কেন??”
“চিকেন খাচ্ছো…..বুজো নি??”
“আরে মুরগি খাচ্ছি সেটা বুজলাম বাট কিভাবে কি???মনে হচ্ছে টমেটো ও আছে এতে??”
“আরে,খাওয়ার সময় এতো কথা বলো না তো….খাও আগে….”
“না তুমি আগে বলো এতে টমেটোও আছে তাই না??”
“কেন তুমি টমেটো খাও না??”
“খাই তো……বলো না…কে রান্না করেছে এটা….”
“আরে এটা ভাবী রান্না করেছে,ভাবীর ইনডিয়ান ডিস এটা……আমিও পারি কিন্তু!!”
“কিহ্???তুমি আর রান্না??”
“আরে আমার ভালো লেগেছিলো ভাবীর কিছু রান্না তাই আর কি শিখেছিলাম…..”
“এই বলো না বলো না…কি ভাবে করে এটা?”
“পরে বলছি আগে খেয়ে নাও….”
“প্লিজ আমি তো খাচ্ছি,তুমি বলো আমি শুনবো….প্লিজ……”
“ওকে,ওকে…….বলছি তো…….”
“হুম…….বলো বলো…..”
“প্রথমে তোমার যতটা ইচ্ছা চিকেন ছোট ছোট করে কেটে নিবে,যতটা ছোট করতে পারো….কেউ কেউ আবার বেঁটেও দেয়….বাট বেঁটে দেওয়ার চেয়ে আঙ্গুর ফলের মতো ছোট করে কেঁটে নিলে খেতে বেশ লাগে…….তারপর সেটা ভালো করে ধুয়ে শুধু লবণ পানি দিয়ে দশ মিনিট সিদ্ধ করে নিবে……তারপর পানি টা ঝাড়িয়ে নিবে বাট পানি টা ফেলে দিবে না আলাদা বাটি তে রেখে দিবে…..দেন সিদ্ধ করা গোসতে আবার একটু লবণ,মরিচ গুড়া,হালকা হলুদ,সজ বাটা/গুড়া,চাইলে চিনি দিতেও পারো আবার না ও পারো তোমার স্বাদ মতো…এগুলো দিয়ে ভালো করে গোসত টা মাখিয়ে নিবে-গোসত গুলো অনেকটা ভেঙে যাবে…..তারপর সেটা ও ভাবে ই রেখে দিয়ে,ধরো এক কেজি গোসত নিলে-মুরগি/গরু/খাসি/মহিষ যেটা ই হোক আর কি….এক কেজির জন্য তিন টা বা চার টা টমেটো মিক্সারে দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে……..তারপর একটা কড়াই বসাবে চুলায়-সেটাতে সরিষা তেল দিবে-যে তেল দাও তোমার ইচ্ছা তবে সরিষা তেল সাস্থ্যকর বেশি…..সয়াবিন খেয়ে খেয়ে তো পেটের ভুড়ি বাড়ছেই সাথে হার্টের নালীর ছিদ্রও বন্ধ হচ্ছে….আর কিছু ওয়েল তো আছেই যাদের গায়ে লেখা ‘কোলেস্টেরল বিহীন তেল’ আরে বাপ তেল তো নিজেই একটা কোলেস্টেরল জাতীয় পদার্থ সেটা আবার কোলেস্টেরল বিহীন কি করে হয়!যদি হতো তাহলে তো সেটাতে তেলের কোনো কার্যকারীতা ই থাকলো না,পানি হয়ে গেলো……
যাই হোক,তুমি রান্না করলে সরিষা তেল ইউজ করো সব সময়…..তারপর তেল টা একটু গরম হয়ে আসলে সেটা তে তেজ পাতা,দারুচিনি-গোটা মসলা,পিয়াজ কুচি,রসুন কুচি,গুটা কয়েক কাঁচা মরিচ দিয়ে নাড়তে থাকবে…সব পরিমাণ মতো দিবে আর কি যে যেমন মসলা খায় আর কি…ও হ্যাঁ আবার একটু জাস্ট দু আঙ্গুলের মাঝখানে যতটা লবণ উঠে সে টুকু নিয়ে সেখানে দিবে কারণ গোসতে অলরেডি দুবার লবণ দেওয়া হয়েছে……তারপর পিঁয়াজগুলো হয়ে এলে সেখানে মাখানো মাংস টা দিয়ে দিবে…..একটু ভালো করে নেড়ে দিয়ে হাফ কাপ পানি দিবে… বেশি পানি দিতে হবে না কারণ গোসত একদম ছোট করে কাঁটা তার উপর আবার আগে থেকেই কিছুটা সিদ্ধ করা…..
তারপর ঢাকনা দিয়ে পাঁচ মিনিট ঢেকে রেখে দিলে দেখবে ভাজা ভাজা হয়ে এসেছে…..আর অনেক সুন্দর ফ্লেভার আসবে…….দেন সেটা হয়ে গেলে বাটিতে নামিয়ে রাখো…..তারপর সে কড়াইতেই আরও অল্প একটু তেল দাও….এবার অল্প কাঁচা মরিচ,হলুদ,রসুন,পিঁয়াজ দাও বাট এগুলো সব বেঁটে দিবে বা ব্লেডার করে কুঁচি কুঁচি করে কেঁটে দিয়ো না কেঁটে দিয়েছো গোসত তে তবে হ্যাঁ মুরগি ছাড়া অন্য কিছু হলে সব জায়গায় বেটে দিতে হবে……..তো তারপর একটু লবণ দিবে পরিমাণ মতো টমেটোগুলোর জন্য আর কি…..মসলা টা কসে আসলে ব্লেন্ডার করা টমেটো টুকু দিতে দিবে….অল্প একটু পানি দিবে…..যখন ফুটি ফুটি উঠবে তখন জিরার গুরো চাইলে ফ্লেভারের জন্য আরও একটু গরম মসলা দিতে পারো……তারপর সেটাতে তৈরী করা মাংস টা দিয়ে দাও-একটু নাড়ো-ঢেকে দাও……পাঁচ-ছয় মিনিট পর ঢাকনা খুলো….কি দারুণ গন্ধ আসবে ভাবতেও পারবে না তুমি…একটু নাড়ো….ব্যাস হয়ে গেলো-নামিয়ে নাও……তারপর এভাবে খেয়ে নাও……”
“বাহ্….বেশ তো….আমি তো দেখে ভেবেছিলাম কোনো ভর্তা টর্তা হবে হয়তো….”
“হুম,দেখে বুজা যায় না এটা কিচেন ছোট করে কাঁটা,সিদ্ধ করা,নাড়া,তারপর আবার টমেটোতে দিলে কিচেন টা বেশ গলে যায় আর কি তুমি চাইলে আরও বড় করেও কাটতে পারো।।।যার যেমন ভালো লাগে আরকি তবে বেশি বড় না করাই ভালো টমেটোতে ছোট করে বা মাঝারি করেই বেশ লাগে……”
“আহ্….আসলেই বেশ মজা……”
সাদাদ গল্প করতে করতে নৌশিনকে বেশ অনেক খানি ভাত খাইয়ে ফেলেছে,নৌশিন একা খেলে জীবনেও এতো ভাত খেতো না-গল্পতে মন দিয়ে আন মনেই অনেক টুকু খেয়ে নিয়েছে………….
“এই আমি সেই কখন থেকে খেয়ে যাচ্ছি!!!…
আ…….!!!এতো ভাত খেলাম কখন???”
“কই এতো??হাফ প্লেট ও হয় নি এখনও….তুমি হাফ প্লেট খাবো আর আমি হাফ প্লেট……”
“ইই হাফ প্লেট!পারবো না…..এ টুকু তুমি খাবে….আমার পেট ওভার…..”
“না সোনা প্লিজ আর তিন লোকমা…..জান আমার….আমার মেয়ের মা…আমার প্রাণ-আবার খাও আরও রেসেপী শিখাবো শুধু তিন লোকমা…..”
“উম…..দাও……”
“এই তো…. গুড…..”
“আচ্ছা…ভাবী তো ইন্ডিয়ান, দাদাভাইয়ের সাথে বিয়ে কি করে হলো??”
“আরে ভাবী বাংলাদেশে ফরেনার হয়ে পড়তে এসেছিলো…….”
“এক মিনিট,ভাবী ডাক্টর তুমি আগে তো বলো নি??আর ভাবী এখন জব করে না???”
“আরে জব করে না বলেই বলা হয়ে উঠে নি হয়তো….এখন তো জানলে,ভাবী একজন নিউরোসার্জন…..”
“বলো কি???তবুও গৃহিণী?? ”
“হুম….ভাবী উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বাংলাদেশে কখনও আসে নি….ওনার দাদা কিন্তু একজন মুক্তিযুদ্ধা,তো তিনি পাক বাহিনীর হাতে মারা যাওয়ার পর ভাবীর দাদী ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে অহসহায় হয়ে নিজের বাবার বাড়ি চলে যান-তারপর সেখান থেকে নিজের ভাই দের সাথে সোজা ইন্ডিয়া…..তো সেখানে গিয়ে ভাবীর দাদীর ছোট ছোট দুটো বাচ্চা মারা যায়।।যারা হলো ভাবীর কাকা আর ফুপু….শুধু বেঁচে থাকে ভাবীর বাবা….তখন দশ এগারো বছর ছিলো হয়তো….তো তাঁকে নিয়ে জগত সংসারে নতুন করে চলতে শুরু করেন ভাবীর দাদী….অন্যের বাড়ী কাজ করে ছেলেকে পড়ালেখা শিখিয়েছেন-ভাবীর বাবা উচ্চ মাধ্যমিকে সারা ভারত বর্ষে টপ টেনের মধ্য নবম হয়ে যান আর এই সুযোগে ভারত সরকার এই মেধাবীকে ভারতবাসী করে নেয়….বাংলাদেশী মেধা হয়ে যায় ভারতী….তবু ওনার জন্য ভালো হয়েছিলো সরকার ই সব চলাতো উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব খরচ….তারপর আস্তে আস্তে জব তারপর ব্যাংক ব্যালেন্স হলে ব্যবসায় ডুকে যান…
তারপর ইন্ডিয়ান মেয়েকে ই বিয়ে করেন….মা আর বউ কে নিয়ে চলা শুরু করেন….তারপর ভাবী আসে…..তো ভাবী হওয়ার পরেই বাংলাদেশে বেক করতে চায় বাট রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশী নাগরিক হতে পারেন নি..তাই মেয়েকে বাংলা ভাষায় গড়ে তুলার জন্য কলকাতা তে ই সব করেন…..এন্ড তারপর ভাবীকে বাংলাদেশী ফরেনার ফর্মে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ায় আর আল্লহর রহমতে ভাবী ১৪৭ তম হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায় কিন্তু তার বাবার বন্ধুর সলিমুল্লাহ তে এডমিট করিয়ে নেন কেন না ভাবীর আসতে পারলেও তার বাবা মা বাংলাদেশে বেড়ানোর জন্য তিন মাসের বেশি থাকতে পারে নি আর তাই দেখাশুনার জন্য সল্লিমুল্লাহে এডমিট করা হয় আফটার অল একটা নতুন দেশ বলে কথা….তারপর ভাবীর ইর্ন্টারনী পর্যন্ত ওনার বাবা,মা,দাদী আসা যাওয়া করতো বাংলাদেশে আর ভাবীও পাঁচ বছরে সুযোগ বুজে বাংলাদেশী নাগরিকত্ব নিয়ে নেয়…আর তারপর ওনার বাবা মা ও বাংলাদেশী নাগরিকত্ব পেয়ে যায় ছয় বছরের মাথায়….ভাবী পাঁচ বছরে এতটা ই ঘুরেছে এই দেশে কোনো কিছু আর বাদ রাখে,ওনার বাবার কাছে সব সময় বাংলাদেশের কথ শুনে এক অজানা টান কাজ করেছে সব সময় যতই হোক জন্ম ভারতে গোড়া তো বাংলাদেশেই….
আর ভাবীর মাও একজন বাংলাদেশী…..তো জাতে বাঙালীর টান হলে যা হয় তাই-এমনি এক টুরে পড়ালেখা শেষ ভাবীর তখন সলিমুল্লহ তে সহকারী অধ্যাপক হয়ে যান,তো সেখান থেকেই নতুন ডাক্তার হয়ে টুরে গিয়ে আমার ভাইয়ার মুখ দর্শন করা হয়…..ভাইয়া তো প্রথম দিন দেখেই মাকে ফোন করে জানায় যদি বিয়ে করতে হয় তাহলে এই মেয়ে কেই করবে….দেন মেয়টার সব খবর এনে মাকে দেয় আর মা বিয়ে পর্যন্ত নিয়ে যায় অথচ বিয়ে ঠিক হওয়ার পর ভাবী জানতে পারে এতো কিছু….ভাইয়া ভাবীকে বিয়ে ঠিক করে তারপর প্রোপ্রজ করেছিলো….দেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নেন ভাবী….বিয়েটাও হয়ে যায় এর মাঝে….সল্লিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে রোগী দেখেন,নতুন ডাক্তার তৈরী করেন-আই মিন পড়ান,আর সাথে সাথে ভাইয়াকে জোর করে ভাইয়ার এক ফ্রন্ড ভাবীকে ইব্রাহীম মেডিকেল কলেজে জব করার অনুরোধ জানায়…..ভাবী রাজি না,ভাইয়াও না….বাট সবার জোড়াজোড়িতে জব শুরু করেন…..”
“তহলে??এখন কোথায় নেই কেন??”
“দুর্ঘটনা…..”
“আগে খাও পড়ে বলি….”
“চার লোকমা খেয়ে নিয়েছি তিন লোকমার কথা বলে আর না…..তুমি বলো…..”
“ওকে পানি খাও…..”
সাদাদ নৌশিনকে পানি খাইয়ে দিয়ে-মুখ মুছিয়ে নিজে নৌশিনের রাখা বাত গুলো খেতে শুরু করে,
“এই জানু…..বলো বাকী টা খেতে খেতে……”
“হুম…..ইব্রাহীম মেডিকেল কলেজ তো বেসরকারি জানোই…..”
“হুম।।।আমি না শুধু সবাই জানে…..”
“তো সেখানে এক নিউরো পেসেন্টের অপারেশন করা হয় সব ডাক্টর বিদেশ থেকে এসেছেন-সেখানে ভাবীও ছিলো……ভাবী এর আগেও বেশ কয়টা জটিল অপারেশন করেছেন….বাট কপালে থাকলে যা হয় আর সে দিন সে পেসেন্ট ওটি তে ই মারা যান অপারেশন শেষ হওয়ার পর…..দায়িত্বরত যিনি লাইভ সার্পোটার দেওয়াতে ছিলেন তিনি ভুল করে বসেন……আর রোগী কেবিনে দেওয়ার আগেই মারা যান-রোগী রা ছিলো তেরো বছরের একটা ছেলে…..তার বাবা বিশাল ব্যবসায়ী নওয়াবপুরের….জমি-জমা সব বিক্রি করে অপারেশন থিয়েটারে থাকা ছয় জন ডাক্তারদের নামে কেস করেন…..যেখানে চার জন ই আমেরিকা থেকে আগত….বাকী দুজন বাংলাদেশী….. আমেরিকান যিনি মেইন ছিলেন তিনি রায়ের দিন রাতেই মারা যান……কারণ তিনি প্রথম আসামী হওয়ার সবার আগে তার লাইসেন্স বাদ করে দেয় সরকার…..আর বাকী তিন জনেরর কয়েক বছরের সাজা হয় তবে ওরা পালিয়ে চলে যায়….যদিও সেটা এক্সিডেন্ট ছিলো তবুও ছেলেটার বাবা ছেলেকে হারিয়ে পাগল হয়ে কোটি কোটি টাকা নষ্ট করে কেস চালাচ্ছে আজও…আর এই টাকার জন্য ই রায় এসেছিলো সেদিন….”
“আর বাংলাদেশী ডক্টর দুটোর কি হলো??”
“ভাবীর আর অপর একজনের টার ও লাইসেন্স নিয়ে নেওয়া হয়েছে…….সে দুজনেরও সাজার রায় দেওয়া হয় বাট ভাবীর টা টাকা দিয়ে বাদ মুওকুফ করা হয় আর অন্য জন বয়স্ক হওয়ার ছেড়ে দেওয়া হয় কিন্তু লাইসেন্স দাব হয়ে যায় দু জনের ই…….”
“আল্লাহ্…….!!!”
“হুম….তখন ভাবী তো সারা দিন কান্না কাটি করতো…ভাইয়া,বাবা,ভাবীর বাবা সবাই বলেছিলো লাইসেন্স করে দিবে বাট ভাবী ই রাজি হয় নি কারণ ভাবী আজও সেই অপেক্ষা তে ই আছেন যে ছেলেটার বাবা নিজের ভুল বুজতে পারবেন… স্বীকার করবেন “ডাক্তার রা ডাকাত হয় না…ডাক্তার রা আল্লাহ ও হয় না….” সে দিন অপারেশন ঠিক হয়েছিলো বাট হসপিটালের লাইফ সার্পোটে পর্বলেম যেটা তে ডক্টরদের কোনো হাত ছিলো না….তাই ভাবী আশা করেন ওদের ছয় জনের নামে করা মমলা খুব দ্রুত উঠে যাবে……শুধু সময়ের অপেক্ষা!।।।।…..আর রায়ের পর…. তখনি ভাবী নিজেকে সব কিছু থেকে দূরে রাখার জন্য,জমে থাকা কষ্ট ভুলে থাকার জন্য অরূপকে নিজের মাঝে ধারণ করে নেয়…..ব্যাস আজ সাড়ে পাঁচ বছর হতে চললো ভাবী নিজের পেশা থেকে অনেক দূরে মাঝে মাঝে ইর্মাজেন্সিতে ডাকা হয় লুকিয়ে ওনাকে কারণ সি ইজ এ গুড নিউরোসার্জন ইন বাংলাদেশ…….আজ অরূপেরও পাঁচ বছর হতে চললো…..অরূপ,ভাইয়া আর এই সংসারের সবাই কে নিয়ে দিন পার করছে ভাবী আর বুকে আশা নিয়ে আছে যে “লাইসেন্সস টা আবার পাবে…..”
……”
“হায় আল্লাহ…..আল্লাহ কত কিছু করেন…… দেখো ভাবী ঠিক লাইসেন্স পেয়ে যাবে….”
“তাই যেন হয়….আর নৌশিন ভাবী কে এই সব নিয়ে কিছু বলো না…..সব ই জানলে এখন…..ভাবীকে এইসব নিয়ে কিছু বললে কষ্ট পায় বেচারী!!!নিজের মতো থাকুক তাই ভালো….”
“ওকে বলবো না……”
“হুম….এখন আমার খাওয়া শেষ….আমি প্লেট গুলো রেখে আসছি….তুমি শুয়ে থাকো কেমন…..”
“এই একদম না…দাও আমি যাবো……”
“একটা থাপ্পর দিয়ে না…..চুপচাপ শুয়ে থাকবে বেড থেকে নামলেও খবর আছে……”বলেই সাদাদ রোম থেকে বেরিয়ে যায়….
!
বিকালবেলা……….
নৌশিনকে নিয়ে সাদাদ আর ওর ভাবী ডাক্তারের কাছে যায়……অরূপ আসার জন্য বায়না করছিলো খুব ওর মা ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছে…..
……
“আসবো??”(ভাবী)
“আরে,রাফসা যে আয় আয়…….”(ডাক্তার)(রাফসা=অরূপের ভাবী)(ডাক্তার আর ওনি ভালো বন্ধু)
“সাদাদ…….”
সবাই ভেতরে ডুকে….
“আচ্ছা,কি নিবি বল…..”
“থাম তো,রোগী নিয়ে এসেছি আর তুই নি নিবি বলছিস….পরিচয় করিয়ে দেই এ হচ্ছে আমার দেবড় আর ও দেবরানী……”
“আচ্ছা!!!”
“আর ও হচ্ছে অলোক সাহা…..আমরা এক সাথে ই পড়তাম…. ভালো বন্ধুও বটে……”
“তারপর কি খবর তোর…..জয়েন কেন করিস না এখনও?”
“বাদ দে তো সে সব কথা….ভাল লাগে না….”
“ওকে সরি,অরূপ আর ভাইয়া কেমন আছে?”
“আর কেমন আছে!সে আছে সারা দিন কাজ নিয়ে-ভালোই চলছে,আর অরূপ তো সারাক্ষণ বাসার সবাইকে জ্বালিয়ে শেষ করে দেয়……”
“আরে বাচ্চা না!একটু আধটু করবেই তো….তা নিয়ে আসতি ওকে…”
“দুষ্টুমি করবে তাই আনি নি….এবার আমার পেসেন্ট দেখ…..”
“তোর সামনে আমি পেসেন্ট?”
“আমার অনেক দিন চর্চা নেই।. ….. তুই রির্পোট গুলো দেখ………”
“ওকে….এজ ইউর উইস…..”
!
“ওহ…..আই সি প্রিডিমনেশিয়া……”
“হুম,জন্ম থেকেই…..”
“বলিস কি???”
“হ্যাঁ……”
“আচ্ছা,নৌশিন আপনার লাস্ট কবে হয়েছিলো???মনে আছে??”
“আজ….”
“ও।।।।তার আগে?”
“যখন ক্লাস টেনে ছিলাম….”
“হুম….রাফসা তুই তো জানিস প্রিডিমনেশিয়ান রা অনেক টা ভীতু প্রকৃতির হয়…..আর ওনি তো এখন বাইশ বছরে পা রেখেছেন আর এগুলো তো ভালো হয় শুধু ওনি যেন চাপ আর ভয় না পায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে….
কোনো রকম মানসিক চাপ ওনার জন্য ভালো হবে না মি.সাদাদ….আর বিশেষ করে ওনাকে একা ঘুমাতে দেওয়া উচিত না…আর অন্ধকারে তো নাই ই….”
“আজকে লাইট নিভে যাওয়ার কারণেই এমন টা হয়েছিলো….”
“হুম…..কত মিনিট লাইট অফ ছিলো???”
“হবে ফাইভ মিনিটস এর মতো…..”
“তো…দেখলেন তো পাঁচ মিনিটেই কতটা কষ্ট পেতে হয়…..সাধারণত পনেরো মিনিটের বেশি অন্ধকারে থাকলে এদের স্নায়ুবিক যে কোনো ধরনের সমস্যা হয়ে যেতে পারে….কারণ সাধারণ মানুষের চেয়ে এদের ভয়ের জন্য যে হরমোন দায়ী সেটা বেশি নির্গত হয়,আর অন্ধকারে সেটা অনেকগুন বেড়ে যায় যেটার প্রভাব আমাদের শরীর নিতে পারে না যার কারণে রোগীরা সেন্সলেস হয়ে পড়ে….আর তারপর নানা জনের নানা উপসর্গ দেখা দেয়…কারও মাথা ব্যাথা,বমি…কারও দুটোই….ঐ দিন এক পেসেন্ট এসেছিলো যার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো সেন্স আসার পর….আর ওনার যেহেতু জন্মগত রোগ এটা সো সাবধান ওনি যেন অন্ধকার ফেইস না করেন….করলে তো বুজতেই পারছেন আপনারা কতটা কষ্ট হয় ওনার…..আর বিশেষ কোনো মেডিসিন আমি দিবো না…..এখানে যেগুলো লেখা আছে সেগুলো ই তিন দিন চলুক….পড়ে আর চালানোর দরকার নেই…..
আবার প্রবলেম হলে সেই ইনজেকশন!….দেন ঔষধ তার আগে কিছু না…শুধু সাবধানতা…..”
“সিউর……”
“আচ্ছা….তাহলে আজ উঠি…. আমি ভেবেছিলাম নতুন কোনো মেড দিবি তুই….”
“না না…আর কোনো মেডের দরকার নেই… ওকে ভালো থাকো নৌশিন আর দেখে তো মনে হচ্ছে খায় খুব কম…..”
“আরে আমার ছেলে যতটা খায় ও মনে হয় তার চেয়ে কম খায়…..”
“মিসেস সাদাদ কম খেলে চলবে না…..দেখি প্রেসার টা…..”
…..
“100/50 bp……”
“দেখছিস কি অবস্থা….”
“প্রেসার লো হলে কি চলে নাকি এ বয়সে……বেশি বেশি খাবেন……ঠিক হয়ে যাবে…..তা ছাড়া নতুন বিয়ে করেছেন এর্নাজির খুব দরকার এখন…..”
নৌশিন ডাক্টরের এমন কথা শোনে লজ্জা পেয়ে গেলো…..শালা লুচু বলে কি!……এর্নাজি!….খারাপ বেটা…….সাদাদেরও ডাক্টরের চাহনী ভালো লাগছে না…….
“আচ্ছা তাহলে উঠি আমরা….”
“আর একটু বসুন….গল্প করি…আমার এখন কোনো পেসেন্ট নেই….”
“না রে,ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে এসছি……”
“ওকে…আবার আসিস লাগলে…”
“হুম…বাই।।।।।।আর তোর….”
“কি রে এসব….ফি দিচ্ছিস??”
“না মানে….”
“এটাই বন্ধুতব নাকি?”
“ওকে রে সরি…তোর অনেক টাকা যা দিলাম না টাকা…..ভালো থাকিস…..”
হসপিটাল থেকে বেরিয়ে…..
“সাদাদ তোরা বাসায় চলে যা….আমি একটু মলে ডুকবো….”
“মানে কি তুমি এখন শপিং করবে নাকি??”
“না রে….অরূপের জন্য কিছু নিবো আর কি….”
“তো আমরা কেন বাসায় চলে যাবো…..”
“হুম…আমরাও যাবো….”
“আচ্ছা চল…..আস্তে হাটিস নৌশিন…..বেশি জোরে হাঁটার দরকার নেই……”
“ওকে বাবা….চলো তো…”
! শপিং মলে……..
“আরে আরে কি করছিস…..লিফ্ট না,নৌশিনের জন্য আজকে লিফ্ট মোটেই ভালো না……সিড়িতে চল…”
“আরে ভাবী আমি ঠিক আছি…”
“চুপ করো ভাবী যেটা বলছে সেটা করা হবে….. ”
সারা শপিং মল ঘুরে দেখছে ওরা তিন জনে…রাফসা সাহেবা আবার খুতখুতে স্বভাবের জিনিস সহজে পচ্ছন্দ হয় না……সারা শপিং মল ঘুরে ছেলে জন্য তিন টা টি শার্ট আর কিছু খেলনা কিনলেন…….
“ওহ্ মা গো….পা ব্যাথা করছে আমার….এতো হাঁটে মানুষ….আর কি কিনলে এতো ঘুরে…..”
“হা হা হা ভাবীর সাথে আসলে এমনি হয়….ভাইয়া তো আসতেই চায় না….”
“এই মাইর খাবি তুই……”
“ওকে ওকে আর কিছু বলবো না….”
“আমি দাদাভাই কে বলবো যেন না আসে তোমার সাথে…কিছুই পচ্ছন্দ হয় না তোমার…..”
“তুইও????”
“ওকে ওকে….আমার সোনা ভাবী….আর হবে না…..”
“এই সাদাদ ও দিকে কোথায় যাচ্ছিস আবার??”
“দু মিনিট আসছি…..”
কিছুক্ষণ পর সাদাদ হাতে দুটে শপিং ব্যাগ নিয়ে নৌশিন আর ওর ভাবীর কাছে আসে………
“কি এগুলো..??”
“একটা নৌশিনের আর একটা আমার কিউটি ভাবীর……. ”
“তুই না…..”
“আরে ভালো লেগেছিলো…..”
“আমার তো অলরেডি ষাট টার মতো শাড়ি হয়ে গেছে….আবার নতুন শাড়ি??”
সাদাদ একটু রেগে গিয়ে,
“বলো তো ফেরত দিয়ে আসি?”
“আরে না…রাগের কি হলো!আমি কি বলছি ফেরত দিতে?।।।।।”
“তো বলো কেন…এতো শাড়ি??”
“আর বলবো না…. আপনার যত ইচ্ছা দিয়েন….”
“এই তোরা থাম তো চল…..”
বাসার কাছেই এসেছিলো…শপিং মল আর হসপিটাল দুটোই মিরপুর দশে….এক জায়গা থেকেই করলে সব তারপর সেখান থেকে শ্যামলর বেশি দূর না………কিছু সময় পর বাসায় চলে যায় ওরা……..
ড্রয়িং রোমে ডুকতেই দেখে অরূপ কান্না করছে আর ওর দাদী আর প্রাপ্তি সামলার চেষ্ঠা করছে….
দৌড়ে অরূপের কাছে আসে ওর মা…….
ছেলেকে কোলে তুলে নেয়…
“আব্বু…আব্বু….কাঁদে না তো….এই যে আম্মু এসে গেছে…..”
“আরে ঘুম থেকে উঠলে ও কি তোমাকে ছাড়া থাকে নাকি??”
“না সোনা….কাঁদে না তো…এসে গেছি না….. এই দেখো তোমার কাকাই য়ের হাতে তোমার জন্য কত্ত খেলনা….তোমার জন্যই তো এগুলো আনতে গেছিলাম বাবু………”
“ওপ পোলা কান্না থামা….”
“ওফফ….সাদাদ তুমি না!দেখি বাবু আমার কোলে আয়…….”
নৌশিন কোলে নেওয়ার অনেক চেষ্ঠা করলে তবুও অরূপ ওর মাকে জাপটে ধরে আছে…..আসলে মা যে মা ই হয়….কাকি যত ই আদরে রাখুক মায়ের কোলেই সন্তানের জান্নাত!…………
“রাফসা ওকে ঘরে নিয়ে যাও…আবার ঘুমাবে মনে হয়….অল্পতেই উঠে গেছিলো…..”
“জ্বি মা……”
অরূপের মা অরূপকে ঘরে নিয়ে আবার ঘুম পাড়িয়ে দেয়…….সাদাদ নৌশিনও নিজেদের রোমে…………
“এই তুমি মুখ টা এমন করে রেখেছো কেন??”
সাদাদ কোনো কথা বললো না…….
“এখনও রাগ করে আছো??কি এমন বলেছি আমি……প্লিজ সাদাদ রাগ করে থেকো না…….”
“রাগের কি হলো….”
“তোমার মুখ দেখেই আমি বুজতে পারছি…..প্লিজ….”
“বাদ দাও….”
“না আগে হাঁসো তুমি তারপর……হাঁসো…”
“শুধু শুধু কেন হাসবো?”
“সাদাদ প্লিজ…আমি তো শাড়ি টা নিয়েছি নাকি….”
“হুম জানি,ইচ্ছে করে না….”
“সাদাদ প্লিজ….এমন করো না……”
“আমি কফি খাবো……গেলাম…..”
“সাদাদ শোনো……”
শুনলো না সাদাদ…এই ছেলে টা অল্পতেই রেগে যায়…..নৌশিন মন খারাপ করে খাটে বসে পড়ে।।।।।।
শাড়ির প্যাকেট টা হাতে নিয়ে বলছে,
“তোর জন্যই আমার সাদাদ আমার উপর রাগ করেছে…..”
কিছুক্ষণ পর নৌশিন প্যাকেট টা খুলে দেখে কালো একটা শাড়ি…ভেতরে পুরো কালো আর পাড় টা সাদা রঙের সোটা ফুলে পাপিং করা….
ফুলগুলো সুতার কাজের…
নৌশিনের কালো রঙের শাড়ি খুব পচ্ছন্দ……….
কিছুক্ষণ বসে থেকে নৌশিন কি যেন ভেবে আনমনেই হেঁসে দরজা টা ভেতর থেকে লক করে দেয়………
প্রায় দশ মিনিট পর…….
“নৌশিন ওপেন দা ডোর…..”
“নৌশিন দরজা কেন লক করেছো তুমি???খুলো….”
“নৌশিন……”
“আরে দাঁড়াও না একটু…..”
“পারবো না দরজা লাগিয়েছো কেন তুমি??কি করছো এতক্ষণ…আমার কাজ আছে অনেক….খুলো।।।।”
“সাদাদ প্লিজ আর দু মিনিট…….”
“আজব তো কি করছো তুমি……”
“বললাম না জাস্ট দু মিনিট একটু ওয়েট করো সোনা…..”
সাদাদ আর কু বলবে যে রস মেখে কথা বলছে নৌশিন!কু আর করার দু মিনিট ওয়েট করছে……এ দিকে দু মিনিটের জায়গায় পাঁচ মিনিট হয়ে গেছে….এমন সময় দরজা খুলার আওয়াজ পায় সাদাদ……….
“এই তোমার দু…..”
আর কথা বলতে পারছে না সাদাদ…… সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে!……….
সাদাদের পলক পড়ছে না……..সাদাদের এমন চাহনীতে নৌশিন লজ্জায় রাঙা হয়ে গেছে……………
সাদাদ দরজায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে…..নৌশিন বলতেও পারছে না ভেতরে আসো….
সাদাদ কে রোমে আনতে নৌশিন নিজেই রোমের ভেতরের দিকে চলে যায়…..সাদাদ যেন বুদ্ধিহীন হয়ে গেছে-সাদাদের হাতে কফির মগ ছিলো সেটা রেখে দিয়ে সাদাদ নৌশিনকে অনুসরণ করছে…নৌশিন রোমের যে দিকে যাচ্ছে সাদাদও সে দিকে যাচ্ছে….এক সময় সাদাদ নৌশিনের আঁচলে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।।।।।।
“কি করেছো তুমি এটা??”
“কি করেছো তুমি এটা?”
নৌশিন কোনো কথা বলতে পারছে না!এমনি যে সাজে সেজেছে আজ সে,এমন করে কোনো দিন সাজে নি!
তাতেই সাদাদের সামনে খুব লজ্জা করছে তার উপর সাদাদ যেভাবে তাঁকিয়ে আছে নৌশিনের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে লজ্জায়……………..
সাদাদও আর কিছু বলছে না…..শুধু নৌশিনকে দেখছে,সাদাদের চোখে নেশা লেগে গেছে……..
নৌশিন সাদাদের দেওয়া কালো শাড়ি টা পড়েছে,সবসময় নৌশিন ফুল বা র্থি কর্টার হাতা দিয়ে ব্লাউজ পড়ে আর বেশির ভাগ সময়ই গলাটা ফুল ব্যান করা থাকে…………
অথচ আজ শর্ট হাতার কালো একটা ব্লাউজ পড়েছে গলাটাও সামনে পেছনে দু দিকেই বেশ বড়,
চুলগুলো একটু ফুলিয়ে নিয়ে পেছন দিকে ভাজ দিয়ে সামনের দিকে এক সাইডে এনে রেখেছে,শাড়িটা এমন ভাবে পড়েছে পেট,পিঠ,নাভী সব দেখা যাচ্ছে………………………
শাড়ীটা এতোটাই টেনে পড়েছে শরীরের ক্লিভজগুলো খুব ভালো ভাবে বুজা যাচ্ছে,ঠোঁটে বেগুনী রঙের হালকা লিপস্টিক,চোখে গাঢ় করে কালো কাজল এঁকেছে সাথে কালো আর বেগুনী মেকাপে চোখ দুটো হরণীর মতো বড় সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছে……..
সাদাদের গলা শুকিয়ে আসছে……তবে একজনের লজ্জায় আর অন্য জনের রূপের তেজ দেখে……….
সাদাদ নৌশিনের দিকে আরও এগিয়ে যায়……
নৌশিন অলরেডি কাঁপতে শুরু করেছে…….সাদাদ নেশাতুর দৃষ্টিতে নৌশিনকে উপর থেকে নিচে তো নিচ থেকে উপরে দেখে যাচ্ছে,
সাদাদ নৌশিনের কমড়ে টাচ করে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়…….
নৌশিন চোখ বন্ধ করে ফেলেছে নিচের দিকে মুখ করে আছে…..দু জনের নিশ্বাস ভারী হয়ে এসেছে,
এ যেন শত চেনার মাঝেও অচেনা একটা অনুভূতি….
এমন ঘোর এসেছে কতবার এই দুজনের মাঝে,তবে আজ যেটা এসেছে সেটা অন্য রকম মাতাল করা একটা ঘোর…..সাদাদের এতটাই নেশা লেগে গেছে ও কিছু ভাবতেই পারছে না,
সাদাদ নৌশিনের কমড়ে রাখা হাত টা আস্তে আস্তে পেটের দিকে নিয়ে আসছে,
স্লাইড করছে পেটে,হাত টা নাভীর কাছে নিয়ে জোরে চেপে ধরে………নৌশিন আরও কেঁপে উঠে……
সাদাদ হাত আরও নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আর পিঠে রাখা হাতে সারা পিঠে হাতের রেখা দিয়ে যাচ্ছে।।।
নৌশিন নিজেকে আর সামলাতে পারছে না, সে সাদাদের রাত কমাতে এমন করে সেজেছে ও জানতো সাদাদ এই লোকে ওকে দেখলে নেশায় পড়ে যাবে কিন্তু নিজেই যে এতটা মাতাল হয়ে যাবে সে ভাবে নি…….
নৌশিন সাদাদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌঁড়ে বারান্দার দিকে চলে যায়,
গ্রিলের কাছে দাঁড়িয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে………
ঘড়ির কাঁটায় বোধহয় সাড়ে সাতটা বাজবে তখন,সন্ধ্যার তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলছে,বাগানের গাছের পাতা গুলো মৃদু বাতাসে কেঁপে কেঁপে উঠছে বারবার,নৌশিনও যেন আবার কোনো কিছুর সংর্স্পশে কেঁপে উঠলো,
এতোটাই কেঁপে উঠেছে নিজেকে কন্ট্রোল করতে গ্রিলে শক্ত করে ধরে রেখেছে………………
সংর্স্পশটা কারও হাতের নয় ঠান্ড কোনো কিছুর, আর সেটা হচ্ছে সাদাদের কেল্ড কফির….নৌশিন ছোটে বারান্দায় চলে আসার পর সাদাদ ওপেন করা দরজা টা লক করে দিয়ে নিজের আধ খাওয়া কোল্ড কফি হাতে নিয়ে নৌশিনের পেছনে দাঁড়ায়……………
বাইরে থেকে কেউ ডাকলে যেন শুনতে না পারে তাই বারান্দার দরজাও লাগিয়ে দেয়…..নৌশিন এতোটাই জোরে শ্বাস নিচ্ছিলো যে ওর পিঠ বারবার কম্পিত হচ্ছিলো…….এই দৃশ্য সাদাদের নেশা যেন আরও বাড়িয়ে দেয়।।।সাদাদ কফির ঠান্ডা মগ টা নৌশিনের সারা পিঠে ঘুরাতে শুরু করেছে…
নৌশিনের শ্বাস-প্রশ্বাস থেমে যাওয়ার উপক্রম প্রায়,এমন সময় সাদাদ নৌশিনকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেন…….নৌশিন চোখ বন্ধ করে আছে,
সাদাদ নৌশিনের মুখ টা উচুঁ করে নিয়ে দেখছে,
বন্ধ চোখেই হারিয়ে গেছে সাদাদ…..দু চোখে চুমু এঁকে দিতেই চোখ মেলে নৌশিন-
চোখে চোখ পড়ে যায় দুজনের……এবার আর কেউ চোখ সরিয়ে নিলো না,সন্ধ্যার মিটমিটি আলোতে দুজনে চোখে চোখে কথা বলে চলেছে,
নৌশিন সাদাদের চোখে হারিয়ে যাওয়ার নেশা দেখতে পাচ্ছে,আর সাদাদ নৌশিনের চোখে শুধু মায়া আর লজ্জা দেখতে পাচ্ছে,
কেউ কোনে কথা বলছে না এ যেন অন্য রকম নীরব ভালবাস…..অন্য রকম প্রেমঘোর………..নীরবতা ভেঙে সাদাদ……..
হাতে রাখা কফি টা নৌশিনের মুখের সামনে ধরে বলে,
“আমার কফি টা না এখনও বেশি অর্ধেক বাকী….আমি এটা খাবো….”
সাদাদ কি বললো নৌশিন আগা মাথা কিছুই বুজলো না,
সাদাদ আবার বলে,
“আমি না মগে কফি খেতে পারছি না,আমার সামনে অন্য একটা কাপ দেখতে পাচ্ছি আমি সেটাতে খেতে চাই……”
নৌশিন হাবলার মতো সাদাদের দিকে তাঁকিয়ে আছে,সাদাদের চোখের ভাষা বুজতে পারছে অথচ মুখে বলা কথা বুজতে পারছে না………
সাদাদ এবার ক্লিয়ার করে,
“আমি তোর গভীর নাভীতে করে খাবো বাকী কফি টা………”
নৌশিন চমকে উঠে…কি বলে সাদাদ!নাভীতে আবার কফি খাওয়া যায় নাকি!…….
“খাওয়া যায়….তোমার এতো ভাবতে হবে না…..আমি নিজেই খেয়ে নিবো…….”
নৌশিন কিছু বলতে পারছে না অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সাদাদের দিকে,
সাদাদ এই নীরবতার মাঝে কেমন করে জানি একটা অনুমতি পেয়ে গেলো…..
কোলে তুলে নেয় নিজের ভালোবাসার মানুষ টাকে,
বারান্দায় জলন্ত লাইট টা বন্ধ করতেই নৌশিন ভয়ে চোখ বন্ধ করে সাদাদের বুকে মুখ লুকায়-খামচে ধরে রাখে সাদাদকে…….
সাদাদ নৌশিনকে রোমে নিয়ে গেলো না,বারান্দার সোফায় শুয়িয়ে দিলো….
লাইট জ্বলছে না কিন্তু চাঁদনী রাতের আলোতে সব টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,
সাদাদ কফির মগ টা হাত নিয়ে নৌশিনের মুখের উপর ছুইয়ে দেয়………
সারা মুখে ঘুরাতে থাকে, ফ্লোরে বসে ধীরে ধীরে কফির মগ টা মুখ থেকে গলায়…গলা থেকে বুক…বুক থেকে পেট….আস্তে আস্তে নাভীর কাছে গিয়ে আরও জোরে চেঁপে ধরে,
নৌশিন সোফায় রাখা বালিশ টা নিজের বুকের উপর নিয়ে খামচে ধরলে সাদাদ সেটা ছুড়ে মারে আর নৌশিন তাল সামলে সাদাদের ঘাড়ে খামচে ধরলো।।।।…………….
“ভয় নেই সুন্দরী,চাঁদ তোমায় আলো দিয়ে যাচ্ছে,অন্ধকার নেই…
চাঁদের আলো সব দেখা যাচ্ছে…..”
“সুন্দরী,রূপের এতে তেজ কেন তোমার???ঠান্ডা মগ টাও গরম হয়ে যাচ্ছে,আমারও যে তোমার রূপে মাততে মন চায়……..ইশশ,বেচারী…এতো কাঁপতে হয় না,এই দেখো কি করে কফি খাই,সুখ পাবে তুমি চরম সুখ…….বেশি কাঁপলে কফি টা পড়ে যাবে কেঁপো না সোনা……আমাকে খেতে দিও কফি টা……”
সাদাদ মগ থেকে অল্প একটু কফি নৌশিনের গভীর নাভীতে ঢেলে নিলো,
নৌশিন ঠান্ডা পাওয়ায় আরও শিহড়ণ দিতে শুরু করে,এতোটাই ঘোর লেগে গেছে নৌশিনের যে সাদাদের ঘাড় থেকে ওর হাতের আছড় লেগে রক্ত পড়েছে সে দিকে ওর কোনো খেয়াল নেই…
সাদাদ নাভীতে রাখা কফির দিকে কিছুক্ষণ তাঁকিয়ে থেকে কাপের মতো করেই চুমুক দেয় নৌশিনের নাভীতে……….
নৌশিন এক লাফে উঠে বসে,সাদাদ সাথে সাথে আবার শুইয়ে দেয়,”সুন্দরী আমার কফি অনেক টা বাকী……”
সাদাদ আবারও কফি ঢালে নৌশিনের নাভীতে…………..
বারবার চুমুক দিচ্ছে,স্বাদ নিতে জিহ্বা ডুকিয়ে দিচ্ছে নাভীতে…… আবারও কফি ঢালা হয় নাভীতে,তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে সারা পেটে কফি লেগে যায়-তলপেটের দিকেও কফি চলে গেছে,
সাদাদ লেগে যাওয়া কফি,নৌশিনের সারা পেট থেকে জিহ্বা দিয়ে লেহন দিয়ে শুসে নিচ্ছে…….তলপেটের দিকে জিহ্বা দিতে গেলেই নৌশিন সাদাদের ঘাড় থেকে হাত সরিয়ে মাথার চুল টেনে ধরে,সাদাদের সব চুল ছিড়ে যাওয়ার অবস্থা..
নৌশিন এতো জুড়ে চেপে ধরছে বোধহয় সাদাদের মুখটাই নৌশিনের নরম
পেটে ডুকে যাবে!!!!!!!!
সাদাদের হাত দুটো এতক্ষণ নৌশিনের কমড়ের দু সাইডে ছিলো নৌশিন সাদাদের চুল টেনে ধরায় সাদাদ আরও নৌশিনের মাঝে আরও গভীর ভাবে ডুবে যায়-হাত দুটো কমড় থেকে সরিয়ে এক হাত নৌশিনের বুকে আর অন্য হাত উরুতে রাখে……তলপেটে এমন ভাবে লেহন দিচ্ছে সাদাদ নৌশিন তাল সামলাতে বারবার শিহরণ দিচ্ছে ঘুঙিয়ে উঠছে,হঠাৎ করেই সাদাদ নৌশিনের নরম পেটে কমড়ানো শুরু করে,
ভালবাসার প্রতিটা কামড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে নৌশিন,
একটু উঠতে নিলেই সাদাদ দু হাত দিয়ে চেপে ধরে নৌশিনকে…….এক হাতে নৌশিনের বুকে আর অন্য হাত উরুতে থাকায় শক্ত হাতে আরও বেশি করে চাপ করে দেয়……………
সাদাদ এতটাই জোরে চাপ দেয় যে নৌশিন চিৎকার দিয়ে উঠে-চিৎকার শোনার সাথে সাথে ই সাদাদ ফ্লোর থেকে উঠে একটানে নিজের শার্ট টা ছিড়ে ফেললো,নৌশিন হাপাচ্ছে,
সাদাদ শুয়ে পড়লো নৌশিনের উপর……
সাদাদ শুয়া মাত্রই নৌশুন সোফা থেকে হাত টা সরিয়ে সাদাদকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,
সাদাদ নৌশিনের কম্পনরত ঠোঁটে ডুব দেয়-নৌশিনও মেতে যায় ভালোবাসার মাতলামিতে,
দুজনে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে দুজনে চুমু খেয়ে যাচ্ছে…..তবে সাদাদ তো নৌশিনকে আরও বেশি ভালোবাসতে চায়-হ্যাঁ,নৌশিন ওকে যতটা ভালোবাসে তার চেয়ে বেশি তাই নরম ঠোঁটে একের পর এক বিট দিতে থাকে………..
মুখ,গলা,ঘাড়,কানের লতি সব জায়গায় ভালোবাসায় ছুয়ে দিচ্ছে,বিট করছে তো আর আর একবার লেহন দিচ্ছে….চুমু খাচ্ছে………
সাদাদ মুখ তুলে একবার নৌশিনের মুখের দিকে তাঁকায়,নৌশুনও তার ভালোবাসার পুরুষের চোখের দিকে তাঁকিয়ে,
কিছুক্ষণ আবার সেই নীরবতা,এই নীরবতা ভাঙে নৌশিন তবে কোনো কথা দিয়ে নয়-সাদাদের উন্মুক্ত বুকে চুমু দিতে শুরু করে…
সাদাদ তখনও নৌশিনের দিকেই তাঁকিয়ে ছিলো-নৌশিনের চুলের মাঝে দু হাত ডুকিয়ে খামচে ধরে মুখটা সোফার উপর আনে,
চুলে এভাবে ধরায় ব্যাথা লাগে নৌশিনের………….
“আওওওওও…….”
“ব্যাথা লাগে সুন্দরী?আহা রে…….কি বল তো যত বেশি ব্যাথা পাবে তত বেশি সুখও পাবে……..”
কথাটা শেষ করতেই নৌশিন সাদাদের ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দেয়-আরও গভীর ভাবে ভালোবাসার ছুয়া দিতে থাকে দুজন দুজনকে…………..
আচমকায় নৌশিন সাদাদকে আস্তে করে একটা ধাক্কা দিলে সাদাদ নৌশিনের উপর থেকে ফ্লোরে পড়ে যায়….সাদাদ সরে যাওয়া মাত্রই নৌশিন উঠে রোমের দিকে পা বাড়ায়…..বারান্দার দরজা খুলার সময়টুকুতে সাদাদও ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ায়…..
নৌশিন রোমে একটা পা রাখতেই শাড়ির আচলে টান অনুভব করে,আর একটু এগিয়ে যাবে এমন সময় সাদাদ শাড়ি টা টান দিয়ে খুলতে শুরু করে।।।
কোনো পিন আপ করা নেই শাড়িতে তাই আস্তে আস্তে অল্প টানেই সব খুলে যাচ্ছে,সাদাদ আবারও নৌশিনের কাছে আসে,
শাড়ির আচল টা সরে গেলো,কুচি গুলোও নেই,
কিছুক্ষণ পর শাড়িটাই ফ্লোরে…………..নৌশিন ঘুরে দাঁড়ায় সাদাদের দিক থেকে লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নেয়….সাদাদ নৌশিনের মায়াবী পিঠে নজর দিতে থাকে,পেছন থেকে জড়িয়ে নেয় নৌশিনকে…………ঘাড়ে পাগলের মতে চুমু দিয়ে যাচ্ছে,নৌশিন একটু সামনের দিকে এগিয়ে গলে,হাত ধরে ফেলে সাদাদ,
“কোথায় পালাচ্ছো সেক্সি লেডি??আমাকে পাগল করে পালানোর বুদ্ধু আছে না কি?ছারছি না ম্যাডাম”
বলেই ব্লাউজের ফিতা গুলো খুলতে শুরু করে,
সামনে থাকা জানলার কাঁচে ভেসে উঠে নৌশিনের উন্মুক্ত বুক……নৌশিন সাদাদের এমন কান্ডে নৌশিনও চোখ মেলে তাঁকায়,সামনে থালা কাঁচে নিজেকে দেখা মাত্রই লজ্জায় শেষ হয়ে যায় নৌশিন,না আর দেখতে পাচ্ছে না!সাদাদের দিকে ঘুরে জড়িয়ে ধরে সাদাদকে………..
সাদাদ কোলে করে বেডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,
নেশা কাঁটে না বরং বেড়ে গেছে……..বেডে এক রকম ছুড়েই মারে নৌশিনকে…….
তারপর নিজেও শুয়ে পড়ে নৌশিনের উপর……………..
ভালোবাসায় মেতে উঠে দুজনেই……ঘরের সব লাইট বন্ধ হয়ে যায়-ড্রমি লাইট জ্বলে উঠে,
ভালোবাসার অতল সাগরে হারিয়ে যায় দুটি প্রেমিক-প্রমিকা।।।।……….
সুখের ঘুঙানী শুনা যাচ্ছে রোমটাতে,ভালোবাসা যেন পূর্ণতা টাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে…………♥♥♥
রাত সাড়ে দশটা টা…………
“উম।।।।।উঠো এখন…..”
“উহম হু…..”
“কেন??”
“শুয়ে আছি না??”
“বেডে শুয়…….”
“না…..”
নৌশিন সাদাদ পিঠে কয়েকটা ঘুসি বসিয়ে দিয়ে বলে,”শয়তান,সারা শরীর ব্যাথা করে দিয়েছে…..লুচু বর একটা!রাক্ষস কেমন করে কামড় দেয়…..হুমমমম…”
মুখ তুলে সাদাদ “ওলে বাবু লে,ব্যাথা পেয়েছে আমার জানোটা”
“হুম….খুব……সারা শরীর ব্যাথা করছে”
“আহা রে,আমার জান টার ব্যাথা লেগেছে…উমমমমমম্মা…….তবে কি বলো তো জান,ব্যাথা লাগলে সুখ বেশি পাওয়া যায়……তুমি তো সুখ পেয়েছো অনেক তাই না?”
লজ্জা পেয়ে যায় নৌশিন
“ধ্যাত”বলেই সাদাদের বুকে মুখ লুকায়………..
কিছুক্ষণ পর,
“সাদাদ এবার তো সরো”
“কেন??”
“ফ্রেস হবো….”
“এই ফ্রেস হওয়ার কি দরকার,রাত তো গভীর হচ্ছে কেবল চলো না আবারও………”
“ইশশশ।।।শখ কত??একদিনে অলরেডি দু বার হয়ে গেছে আর না…..”
“কই দুবার??”
“একবার ভোরে,আর এখন…..”
“আচ্ছা!সেটা হোক…..আমার তো আবার সাঁতার কাটতে ইচ্ছে করছে তোমার মাঝে……কি করি বলি তো……”
“কিচ্ছু না…আপাতত উঠো….আমার ক্ষুদা লাগছে খুব…….”
“কিহ্?কত কিছু খেলে তাতেও ক্ষুদা লাগলো কিভাবে??”
“ইশশশশ….সত্যি বলছি খুব ক্ষুদা লাগছে……..উঠো..”
“ওকে উঠলাম……”
নৌশিন উঠে চলে যাবে এমন সময় সাদাদ আবারও হাত ধরে টেনে নিজের বুকের উপর ফেলে দেয়,
“কি হলো???ছাড়ো…… ”
“হুম,ছাড়বো।।।ব্যাস ধরলাম তো এটা বলার জন্য যে “আমায় আরও ভালোবাসা দিতে হবে,কেমন!!”
“ধুর…..আসছে আমার প্রমিক পুরুষ… …”
“হুম আমি প্রমিক পুরুষ….তুমি কি জানো কাকী নজরুল ইসলাম কি বলে গেছেন?”
“কি বলে গেছেন?”
“যে পুরুষ নিজের বউয়ের কাছে প্রেমিক হয়ে উঠতে না পারে সে পুরুষকে কাপুরুষ বলে…….”
“হয়েছে এবার তোমার বলা?”
“আরও অনেক কথা বলার আছে যে…..”
“তাই!সেগুলো পড়ে শুনবো….”
বলেই নিজেকে সাদাদের কাছ থেকে ছাড়িয়ে ওয়াশরোমে চলে যায়…..
সাওয়ার নিয়ে প্রায় আধা ঘন্টা পর নৌশিন রোমে ডুকলো,এসে দেখে সাদাদ ঘুমিয়ে গেছে………..
নৌশিন নিজের চুল টা ভালো করে মুছে সাদাদের পাশে গিয়ে বসে ওকে ডাকতে থাকে,
“সাদাদ…….সাদাদ….উঠো…..”
সাদাদ টা না ঘুমিয়ে গেলে সহজে উঠতে চায় না……আধা ঘন্টায় একবারে ঘুমিয়ে শেষ,
“এই কি হলো….উঠো বলছি…..”
সাদাদের চুলে হাত বুলিয়ে ডাকছে নৌশিন,
“হ্যালো,ঘুম পাগল…..উঠুন…….”
হায় আল্লাহ কোনো সারা দেয় না,নৌশিন এবার সাদাদের চুল ধরে জোরে টান দেয়…..”উঠো……কখন থেকে ডাকছি শুনতে পারছো না……উঠো বলছি….”
“উফফফ…..কি হয়েছে?”(ঘুম ঘুম গলায়)
“কি আবার হবে,।।।।উঠো….”
“কেন??”
“কেন মানে,এভাবে ঘুমাবে তুমি?”
“এভাবে মানে??”
“এভাবে মানে আবার কি!যাও গোসল করে আসো…”
“ওহ জান সকালে করে নিবো।।।।।”
“কিহ্…..পাগল নাকি!সকালে না তুমি এখনি গোসল করবে….উঠো”নৌশিন টেনে সাদাদকে শুয়া থেকে বসিয়ে দিলো…..”এখন যাও গোসল করে আসো…”
“ঘুম পাচ্ছে রে ভাই….সকালে করলে কি হবে??”
“না….তুমি নাপাক শরীরে ঘুমাবে কেন?তাছাড়া শীতের দিন হলেও একটা কথা ছিলো…এপ্রিল মাস এটা…..যাও গোসল করো….”
“এই মেয়ে কিসের কি শুরু করলে তুমি???কিসের নাপাক শরীর??”
“সাদাদ দেখো বেশি হচ্ছে কিন্তু……তুমি জানো না কিসের নাপাক শরীর?সন্ধ্যা থেকে এতক্ষণ কি করছো তুমি আমার সাথে তারপর আবার কি করে বলো এই কথাটা??..”
“ও এই ব্যাপার…..তুমি গোসল করছো??”
“তো?তোমার মতো নাকি আমি…..আমি একদম ফ্রেস আছি এখন…….”
“আচ্ছা!তাহলে তো আবার নাপাক করতে হবে আপনাকে….” কথা টা শেষ করতেই সাদাদ নৌশিনকে বিছানায় ফেলে দিয়ে ওর উপর শুয়ে পড়ে,গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়….”আহা…কি পাগল করা সুবাস……”
নৌশিন সাদাদের পিঠে ঘুষি দিচ্ছে ইচ্ছে মতো….
“উম….সাদাদ….উঠো তুমি……”
মুখ তুলে সাদাদ….”কেন গো??”
“কেন গো তাই না?আমার সারা শরীর কেমন ব্যাথা করছে তুমি জানো!এখন আর না সরো তুমি……..”
“আরে বাপ রে……আমারও কি আর সেসব করার এর্নাজি আছে নাকি??তুমি যা হট তোমাকে নিয়ে ফাইনাল রাউন্ড খেলতে গেলো আমাকে তো তার জন্য কত ম্যাচ পার করতে হয়!না হলে আপনার তো ছয় গুন পূরণ হয় না…….”
“তুমি!!!আসলেই একটা লুচু!কি সব বলো……”
“আমি লুচু তাই না…..তাহলে তুমি লুচি…..”
“উফফ……লুচি আমি???খাওয়ার জিনিস???”
“ঠিক তাই…..”
“সাদাদ!!!!!!”
“আরে বাবু দেখো না আমি তো তোমাকে খাই তাই না!!”(চোখ টিপ মেরে)
“ঠিক হচ্ছে না কিন্তু….আমি কান্না শুরু করবো এখন….ঝগড়ুটে বর কোথাকার…..”
“ওকে ওকে বাবু….কান্না করতে হবে না তোমার আর ঝগড়া করবো না।।।।হয়েছে??”
“হুম….সরো এখন…..”
“সরতেও হবে?একটু শুয়ে থাকি না???প্লিজ….”
“কোনো প্লিজ টিজে কাজ হবে না…..আমি তোমাকে গোসল করা ছাড়া কোনো মতেই ঘুমাতে দিবো না……”
“কি রে ভাই…..মানুষ কি স্বাধে বলে “বউ যার জ্বালা তার”…….”
“হ্যাঁ হয়েছে!এবার উঠো তো আমার উপর থেকে….যাও ফরয গোসল টা সারো…..”
“সকালে করি না…..”
“তাহলে নিচে শুবা…..আমি তোমাকে এই শরীরে আমার সাথে এক বিছানায় থাকতে দিবো না……..”
“কি খুতখুতে স্বভাব ইয়ার…..”
“খুতখুতেই ভালো…..গোসল করে আসলে বেডে থাকতে পারবে না হলে ফ্লোরে ঘুমাবা…..আর তুমি ফ্লোরে না গেলে আমি যাবো…..তবুও একসাথে থাকা চলবে না…….”
“উফফফ…..জিনিস একখান…….যাচ্ছি…..”
মুচকি হাঁসে নৌশিন….”হুম যাও…….”
“ঐ মাইয়া হাঁসবি না একদম…..”
নৌশিন সাদাদের মুখ দেখে জোরে হেঁসে দিলো……
“নৌশিন রে……..”
“সরি সরি….আর হবে না…..”
সাদাদ উঠে গিয়ে সোজা ওয়াশরোমে চলে যায়…..
নৌশিন চাদর চেন্স করে…ওর আর সাদাদের জামা কাপড় গুলো এক সাথে করে নিয়ে ঝুড়িতে রেখে আসে…..বাট সাদাদের দেওয়া নতুন শাড়িটা আলাদা করে রেখে দেয়….আরে সেটাও ওয়াশ করবে বাট ঝুড়িতে রাখলে নতুন শাড়ি টা ভাজ পড়ে নষ্ট হয়ে যাবে না।।।।রাতেই ওয়াশ করতো বাট সাদাদ যা করছে ওর শক্তি শর্ট পড়েছে বোধহয়😛😛
তাই সকালের জন্য জমা করে রাখলো………
চাদর টা ও নিয়ে ঝুড়িতে রাখলো-আলমারি থেকে নতুন চাদর বের করে বিছিয়ে নিলো…………
সারা রোম জাস্ট সুপার লেভেলের পরিপাট এখন.
সাদাদ সাওয়ার নিয়ে টাওয়েল পড়েই বেরিয়ে এলো….
“বাহ….রোম দেখি ফিটফাট….তা ম্যাডাম বিকালেও না চাদর চেন্স করলেন এখন আবার??”
নৌশিন সাদাদের দিকে না ফিরেই বিছানা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,
“তো করবো না……আমার এক চাদরে থাকতে ভালো লাগে না।।।।”
“বিকালে তো করলেই চেন্স….”
“উফফফ……সাদাদ আমার ঐ সব করার পর চাদর চেন্স না করলে খুত খুত লাগে…….”
মুচকি হাঁসে সাদাদ…”বাপ রে বাপ….কি খুতখুতে….. ”
“ভালো হয়েছে…..এখন নিচে চলো….আমি খাবো কিছু খুদা লাগেছে খুব…..”
নৌশিন এই মাত্র সাদাদের দিকে ফিরলো…….ফিরে সাদাদকে দেখে চোখ বড় বড় করে ফেলেছে-দুহাত কমড়ে দিয়ে,একটু রাগী মোড নেওয়ার চেষ্ঠা করলেও বর্থ্য হয়ে হেঁসে ফেললো………..
“তুমি!!!……..আল্লাহ…..”
“হাঁসো কেন??”
“তা কি করবো…..এভাবে তোয়ালে পড়ে দাঁড়িয়েছো কেন……..”
“ভালো লাগে তাই…….”
“আল্লাহ্…..কোথায় তুমি!!”
“আরে শার্ট পেন্ট দিয়েছো নাকি তুমি??”
“আগে মনে হয় আমি এসে দিয়ে যেতাম…….”
“এখন তো আছো তুমি…..আমি আর নিজে কিছু করছি না….এখন দাও টাওজার আর টি শার্ট আনো একটা…….”
নৌশিন ছোট্ট একটা হাঁসি দিয়ে আলমারি থেকে সাদাদের পোশাক টা বের করে এনে সাদাদের হাতে দেয়……..সাদাদের এমন ছোট খাটো বায়না গুলো বেশ লাগে নৌশিনের……
“নাও পরো…..”
“হুম…….”
সাদাদ টাওজার টা পড়ে,টিশার্ট পড়তে যাবে এমন সময় খেয়াল করে নৌশিন এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাঁকিয়ে………..
“কি ম্যাডাম….বডি দেখছো??”
সাদাদের কথায় ঘোর কাটে নৌশিনের……আসলেই নৌশিন সাদাদের উন্মুক্ত দেহে চোখ আটকে নিয়েছিলো……বিশেষ করে বুকে…….ইশশশশ লোমে ভরা একদম সাদাদের বুক টা……নৌশিন বিয়ের দিন রাতেই সাদাদের বুক দেখে পুরো মাতাল হয়ে গেছিলো….কি বডি!আল্লাহ….ছেলে রাও যে এতো নজর কারা হয় নৌশিনের জানা ছিলো না…
সত্যি বলতে সব মেয়েদের যেমন একটা সৌন্দর্য থাকো নরম দেহে….তেমনি ছেলেদের দেহেও আলাদা কঠোর আর মায়াবী সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে…………….
আল্লাহ আসলেই রহস্যের ভান্ডার!কি অসীম কৃপায় দুটি বিপরীত ধর্মী(বৈশিষ্ট্যের কথা বললাম আর কি)মানুষ সৃষ্টি করেন-বিপরীতধর্মী সৌন্দর্য দিয়ে আর তারপর কোন ভালোবাসার বাঁধনে এক করে দেয় দুটি আলাদা মায়াকে……………
সাদাদ নৌশিনের সামনে এসে দাঁড়াতেই নৌশিনের ভাবনার ছেদ পড়ে……….
“কি দেখছিলে??”
আনমনেই নৌশিন জানায়,
“তোমাকে…….”
“মানে???”
“মানে তুমি না খুব সুন্দর……”
“হ্যালো…….(নৌশিনের হাত ধরে ঝাঁকি দিয়ে)।।।।।তুমি ঠিক আছো???”
নৌশিন যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলো…সাদাদ নাড়িয়ে দেওয়া বাস্তবে ফিরে এলো……….
“কি হয়েছে???”
“সেটাও তো আমার প্রশ্ন???কি হয়েছে তোমার….আমি খুব সুন্দর!এটা আবার কি…….”
নৌশিন একটু চুপ করে থাকে….তারপর ওর মনে পড়ে ও একটু আগে কি বলেছিলো……..
“তো?কি হয়েছে…..তুমি কি কুৎসিত নাকি???আসলেই তুমি অনেক হ্যান্ডসাম………”
সাদাদ কিছু বলার আগেই নৌশিন সাদাদের গলার পেছনে দু হাত বেধেঁ দাঁড়িয়ে পড়ে-সাদাদও নৌশিনের কমড় জড়িয়ে নেয়,নৌশিন এক দৃষ্টিতে সাদাদের মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে……….
সাদাদ ভ্রু কুঁচকে জিঙ্গেস করে, “কি???”
“কিছু না…….”
“তাহলে???”
“শুনো না…..”
“বলো না……”
“সরিয়াসলি বলছি…..শোনো…..”
সাদাদ নৌশিনের এমন পাগলামী দেখে না হেঁসে পারছে না কারণ সচারাচর নৌশিন খুব লাজুক টাইপের একটা মেয়ে,
এমন করে না কোনো দিন…
“হ্যাঁ শুনবো তো সব….তুমি বলো……”
নৌশিন এক হাতে সাদাদকে ধরে রেখে অন্য হাতে সাদাদের খোঁচা খোঁচা দাড়ি থেকে শুরু করে বুকের লোম গুলোতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে…………..
“কি হলো???কি বলবে নাকি বলবে……”
“হুম….বলবো তো…..”
“বলো…….”
“তুমি কিন্তু কখনও কোনো মেয়ের সামনে খালি গায়ে যাবে না…..শুধু আমার সামনে……কেমন??”
“কেন???”
“কারণ তোমার ফেস দেখলে যত টা প্রেমে পড়া যায় তোমার খোলা বুক দেখলে তার চেয়ে শত গুণ বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়তে হবে…….যেমন টা আমি আকৃষ্টি হচ্ছি এখন…….”
“তাই???”
“হুম….তাই…..যাবে না কিন্তু….কোনো দিন না….
এই খোলা বুক শুধু আমি দেখবো….লোমে হাত বুলাবো……মাথা রাখবো….আর খুব খুব খুব চুমু দিবো……আদর করবো,খেলবো……..শুধু আমি……ইশ কি ভাগ্যবতী আমি…….জানো তুমি যখন আমায় আদর করো তখন চাঁদ টা মনে হিংসে করে আমায়……দেখো চাঁদ টা কত্ত সুন্দর তবু বেচারীকে কেউ আদর করে না……অথচ আমি একটা সাধারণ মেয়ে তাকে তোমার মতো একটা সুঠাম পুরুষ কত্ত ভালোবাসে,আদরে-সোহাগে সারা শরীর মন মাতিয়ে রাখে-ভালোবেসে সুখের সাগরে নিয়ে যায়……ইশশশ সত্যিই খুব লাকী…..আই লাভ ইউ মাচ……আই কেন নট লিভ উইথ আউ ইউ এন্ড ইউর লাভ………”
সাদাদ কিছু বলার আগেই নৌশিন সাদাদের বুকের বা পাশে চুমু দিতে শুরু করে….বেশ কয়েকটা চুমু দেয় লোমাশ্ন বুকে………..
নৌশিন মনে হয় কোনো অজানা ঘোরে চলে গেছে,
চুমু দিয়ে ওর মনে হয় হোশ টোশ ফিরে এসেছে,আচমকায় সাদাদকে ছেড়ে দেয়-
বেচারী লজ্জায় পুরো লাল হয়ে গেছে,সাদাদের বিপরীতে মুখ দিয়ে নিজেই নিজের জিহ্বায় কামড় বসায়…….”হায় আল্লাহ্।।।।লজ্জা শরম সব শেষ নাকি আমার…..কি বলছিলাম…..আর কি করছিলামও……”
সাদাদ নৌশিনকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,
“হয়েছে ম্যাডাম আর লজ্জা পেতে হবে না….যা ভেতরে ছিলো তাই বলে ফেলেছো………আর আমি তো সুপার লাকী তোমার মতো একটা চাঁদ পেয়ে যার জোসনা শুধু আমার জন্য…….
আই লাভ ইউ টু জান,তোমাকে ছাড়া আমার জীবন আমি ভাবতে পারি না……আর লজ্জা পায় না সোনা,তাহলে আমি তো পাগল হয়ে যাবো……”
নৌশিন ফিরে তাঁকায় সাদাদের দিকে……..
স্বাভাবিক গলায় বলছে,
“শোনো আমি যা বললাম এতক্ষণ সব কিন্তু মনে রাখবে……”
“ওকে মাই ডিয়ার…… শুধু তোমার সামনে খালি গায়ে থাকবো চাইলে বলতে পারো নিচের টাও……..”
নৌশিন সাদাদকে ধাক্কা দেয়,
“ইইইি…….বাজে ছেলে,একদম লজ্জা নেই…….টি শার্ট পরো যাও…..”
“ও আমি কিছু বললেই দোষ……..আর নিজে বললে কিছু না…..তাই না??”
“হয়েছে!টি শার্ট পরো না তাড়াতাড়ি,আমি নিচে যাবো…..”
“ওকে ওকে…..এই তো পরছি………”
!
“এবার চলুন ম্যাডাম……….”
“হুম…..চলো……….”
“দেখছো সবাই যার যার রোমে চলে গেছে,এখন একা একা খেতে হবে…..”
“একা কিসের…???তোমার বর আছে না??”
“তা আছো…..তবুও সবার সাথে মজা টাই আলাদা……”
“আর আমার সাথের টা আরও আলাদা…..”
…….”কি আলাদা রে????”(রাফসা)
“ভাবী???”(নৌশিন)
“জ্বি আমি……বাবু খায় নাই….ওরে খাইয়ে শুইয়ে আসলাম কেবল….”
“আজ ডাকো নাই কেন???”
ভাবী নৌশিন কাছে এসে নৌশিনের দুগাল টেনে আদর করে বললো,
“কারণ….আমার দেবর টা আমার এই ছোট্ট বোন টা কে আদর করছিলো…..সে জন্য কাউকে ডাকতে দিই নি…..বুজলে??”
“ভাবী☺☺☺☺…..”
“হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না….এমনি হয়…..”
দ্বাড়া তোদের খাবার আনছি রান্না ঘর থেকে,এখানে শুধু পড়টাই আছে……..
“☺☺☺…..”
“হেয়।।।ভাবী তুমি কেমনে জানলা গো???”
“মাইর খাবি সাদাদ….”
“বা রে জানতে চাইলাম শুধু….”
“তোর বউ যেমনে জানতেছে আমিও ওমনে……”
“কিহ্……খারাপ রে দুটো।।।।….”(নৌশিন)
ভাবী রান্না ঘর থেকে এসে,
“বদমাইশ খা তোর বউ নিয়ে……আমি থাকলে তোর ডির্স্টাব হবে….”
“আরে বুজি বুজি….কার কোনে কি হয় আমার জানা আছে??”
“এই কেমন করে কথা বলছো তুমি??? ”
“আরে….ভাবী রে জিগাও….ও কি আমার জন্য যায় নাকি ওর জন্য???”
ভাবী সাদাদের কান ধরে টেনে,”ঐ কি বলিস তুই??”
“ওহহহ…..কান ধরে না ভাবী….বিয়ে হয়ে গেছে আমার বড় হয়ে গেছি না…আর তুমি সত্যিই তোমার জন্য তাড়াতাড়ি যাচ্ছো কারণ তোমার জন্য আমার ভাই ওয়েটিং আছে…”
“সাদাদ।।।। থামবি তুই….”
“☺☺☺☺”(নৌশিন)
“ওকে সরি সরি….যাও যাও।।।।।”
“বদের দল।।।।।খা…..”
“হুম…আমরা আছি তুমি তার কাছে যাও……”
“তোরে তো……”
“আরে ঐ যে ডাকে যাও……”
“ধূর।।।শয়তান।।তোর সাথে থাকলে……! মর তুই…..”
“😆😆😆😆😆”
ভাবী চলে যাওয়ার পর,
“কি ব্যাপার খাও……”(সাদাদ)
“এই তো……..”
নৌশিন এক লোকমা ভাত মুখে নিয়ে আবার প্লেটেই ফেলে দিলো……
“আহহ।।।।ও মা গো…….”
“কি হলো???”
নৌশিন তাড়াতাড়ি পানি খেয়ে নেয়……
“কি হলো মানে???এত্ত ঝাল……”
“ওহ😆😃😃 ।।।।।।।”
“এই তুমি হাঁসছো তাই না।।।এর পেছনে তোমার হাত আছে…..বদ একটা।।।।”
“আমি কি করলাম আবার??”
“কি করলাম আবার!!!ইইই কেমন করে কামড় দিছো আমার কেঁটে গেছে তাই এমন ঝাল লাগছে…..হু হু খেতে পারতেছি না…খাবার দিলেই ঠোঁটে ঝাল লাগে….”
“সরি সরি।।।আর হাঁসবো না….তাহলে ভাত খাবা না নাকি???”
“না…..”
“আচ্ছা,বাবু পড়টা খাও প্লিজ…..”
“পড়টা ভাল লাগে না…..”
সাদাদ নৌশিনের কাছে এসে বসে,
“বাবু,ওকে পড়টা খেতে হবে না,আমিই ভাত খাইয়ে দিচ্ছি….”
“ঝাল তো…..”
“আমি খাইয়ে দিচ্ছি তো…..”
“ওকে…..”
“বড় করে হা করো নাহলে ঝাল লাগবে….. ”
“হুম….”
সাদাদ নৌশিনকে এমনভাবে খাইয়ে দিচ্ছি যেন তরকারী ঠোঁটে না লাগে,,,,,,কিন্তু ভুল তো হবেই সাদাদ নৌশিনের চোখের দিকে তাঁকিয়ে থাকতে থাকতে বেশি রমক তরকারী নিয়ে ওর মুখে দিতে গিয়ে ঠোঁটে লেপ্টে দেয়………
“ওহ মা।।।।।ঝাল।। আ হ হু আ হ হু হা…….”
সাদাদ নৌশিনের ঠোঁট দেখে ভালোই বুজতে পারছে কাহিনীটা…….তাই আর এক মুহুর্তও দেরী না করে নৌশুনের ঘাড়ে হাত রেখে নিজের দিকে আরও একটু আগিয়ে নিলো-আরও কাছে গিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়েছে…..ঘটনা টা এতো টাই তাড়াতাড়ি হয়েছে নৌশিনের হয়তো বুঝতে একটু সময় লেগেছে…….
সাদাদ শুষে নিচ্ছে নৌশিনের সমস্ত ঝাল,
দুজনেরই চোখ বন্ধ,
ঝাল-মিষ্টি ভালোবাসায় হারিয়ে গেছে দুজনে,সাদাদ এমন ভাবে নৌশিনের ঠোঁট আর ঠোঁটের আশেপাশে জিহ্বার লেহন দিচ্ছে ঝাল না কমে উপায় নাকি!!!!!এতো মিষ্টির কাছে এই একটু ঝাল যে ঠুনকো একটা ব্যাপার…………
সাদাদ ছেড়ে দেয় নৌশিনকে,অনেকটা সময় পাড় হয়ে গিয়েছিলো,দুজনেই হাপাচ্ছে,নৌশিন সাদাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাঁকাতেই সাদাদ নিজের ঠোঁটে একটা কামড় বসিয়ে নৌশিনকে একটা চোখ মেরে দেয়,,,,
লজ্জা পেয়ে যায় নৌশিন।।
“ধ্যাত…..”মুখে লাজুক একটা হাঁসি টেনে দৌঁড়ে নিজের রোমে চলে যায়।
সাদাদ নিজেও ব্লাশিং হয়ে হাঁসতে থাকে,সে ও আর দেরী না করে রোমে চলে গেলো।……………
সাদাদ গিয়ে দেখে নৌশিন অলরেডি শুয়ে আছে,সে নৌশিনের পাশে শুয়ে পড়ে….এক হাতে মাথা রেখে একটু উঁচু হয়ে নৌশিনের মুখের দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হাঁসছে সে,
“কি ব্যাপার ম্যাডাম,ঘুমিয়ে গেলেন নাকি???”
নৌশিন ফিরে তাঁকায় সাদাদের দিকে,মাথা নেড়ে না জানায়………
“তাহলে???”
“কি???”
এতো লজ্জা পেলে যে,এতো পেলে নিজেকে ধরে রাখতে কষ্ট হয় তো…
নৌশিন একটা ভেঙচি কেঁটে বলে,
“ইশশশশ….ঢং…..”
সাদাদ নৌশিনের কাছে গিয়ে বলে,
“ঢং মানে??”
“কিছু না….সরো আমি ঘুমাবো…..তুমি একটা লুচু,খুব খারাপ,আমার সারা শরীর ব্যাথা করছে,উরুতে কি ব্যাথা দিছো এখন খুব ব্যাথা করছে,আমার কাছে আসবে না একদম…..”
সাদাদ নৌশিনকে জড়িয়ে ধরে বলছে,
“সোনামনি,ব্যাথা যে আমায় ভুলতে দিবে না তোমাকে…….”
“আমি তোমায় এমনিই মনে রাখি আর রাখবো…….”
“তারপরও আমার এতো সুন্দরী বউ টাকে আদর না করলে যে আমার ভালো লাগে না…….”
“হুম হয়েছে….থাক…আর বলতে হবে না……”
“আচ্ছা!থাক আর কিছু বলছি না…..আয় আমার বুকে আয়………”
সাদাদ নৌশিনকে ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিকে শুয়ে পড়ে,
সাদাদের ডাকে নৌশিনও এক মুহুর্ত দেরী না করে সাদাদের বুকে মাথা রাখে,
সাদাদ নৌশিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,
“বেশি ব্যাথা লাগছে?”
“নাহ্……”
“তাহলে চলো নামায টা পড়ে ঘুমাই??..হুম??”
“সত্যিই তো আমার খেয়াল ই ছিলো না যে আমি নামায পড়ি নি…..”
“আচ্ছা!ব্যাপার না ১১.০৪ এখনো পড়া যাবে….চলো দুজনে এক সাথে পড়ি….”
“হুম….সিউর……”
দুজনে উঠে একসাথে উযু করে এশার নামায টা আদায় করে নিলো।
এরপর সাদাদ শুয়ে পড়ে আর নৌশিন আয়নার সামনে বসে কি যেন দেখছে,
“এই রাতের বেলা এখন আয়না সামনে কি করো তুমি??”
“হু…..?”
“বললাম,আয়নার সামনে কি??”
“সাদাদ আমার মুখে ব্রণ উঠবে মে বি….কেমন একটু ফুসকো ফুসকো দেখা যাচ্ছে…….”
“ব্যাপার না হলে হোক……”
“মানে???পঁচা দেখা যাবে তো……”
“আরে লাগুক না…..তোমার তো বিয়ে হয়ে গেছে এখন পঁচা/সুন্দর এগুলো যায় আসে না,আমিই তো দেখবো….”
“কিহ্???পঁচা দেখা গেলে তুমিই আর কাছে আসবে না…….বুজলা?যদিও আমি সুন্দর না তারপরও তোমার মতো ছেলে আমার হাসবেন্ড আর এরপর যদি ব্রণ উঠে মুখ টা নষ্ট হয় তাহলে তো??”
সাদাদ এতক্ষণে উঠে নৌশিনের পাশে গিয়ে বসে,”থাপ্পর চিনো??”
“মানে??আমি আবার কি করলাম??”
“এই যে বললা…পঁচা দেখতে হলে কাছে আসবো না….”
“তাই তো…..”
“মেজাজ টা গরম করবে না একদম…..আমি তোমার রূপে মাতাল না তোমাতে মাতাল….মাইন্ড ইট।।।।আর ব্রণ উঠলে আমারি সুবিধা……সো আমি দোয়া করি ব্রণ উঠুক…….”
“এ মা।।।।।কি বর তুমি???বউয়ের মুখে ব্রণ উঠার জন্য দোয়া করছো!!!”
“আরে ব্রণ উঠলে প্রতিটা ব্রণে আমি কিস করবো….ভাবতে পারছে কি ফিলিং!!”
“ছিঃ…..ব্রণে কিস!!!এই তোমার এগুলো ঘৃণা লাগে না??”
“না…লাগে না…..আর শোনো তোমার এখন সেই রকম কোনো ব্রণ হবে না মুখে কারণ যে বয়সে ব্রণ হয় সেটা পাড় হয়ে গেছে এখন হলেও দু একটা সো টেনশনের কিছু নেই……..
হাহ্(একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে)আফসোস!!”
“আফসোস????তুমি পাগল হয়ে গেছো???”
“ইয়াহ্….আফসোস…..আর আমি অল টাইম তোমার জন্য পাগল……”
“তা বুজলাম….বাট আফসোস টা কিসের জন্য শুনি?”
“এই যে যদি সারা মুখে ছোট ছোট ব্রণ হতো তো আমি প্রতিটা ব্রণে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিতাম….অবশ্য তোমার ব্রণগুলো লজ্জা পেতো খুব…..তা ছাড়া যদি সারা মুখে ব্রণ হয় আমার বউটার দিকে লোকে নজর দিবে কম….আমার জিনিস টাকে আমি ই নজর দিতাম শুধু……কিন্তু সেটা আর সম্ভব না পনেরো গেলো,ষোল গেলো ব্রণ উঠে নি এখন বাইশে এসে হবে না………তাই আফসোস লাগতেছে আমার…….”
নৌশিন হেঁসে ফেলে সাদাদের কথায়!কেমন পাগল ছেলে টা বলে কি না,উঠুক ব্রণ……..!!হায় রে ভালোবাসা…..💜💜….আপনারাও দোয়া করুন যেন সাদাদ এমনি করেই সারা জীবন নৌশিনকে ভালোবেসে যায়।
!
নৌশিন সাদাদের উরুতে একটা ঘুষি দিয়ে বলে,
“সাদাদ!তুমি না পারোও বটে বুজলা……..”
“হয়েছে,চলো এবার আয়নার সামনে থেকে,ব্রণ হয়ে হোক……আমার সুবিধা হবে….চলো….. ”
“আরে দাঁড়াও…..চুল টা ভেজা ঠিক করি একটু….”
“তাড়াতাড়ি করো না রে,আমার ঘুম পাচ্ছে….”
“তো??ঘুমাও গিয়ে…..আমি আসছি।।।।”
“আজাইরা…..”
“মানে কি???কিসব বলো??”
“আরে বুকে মাথা না রাখলে বুকটা খালি খালি লাগে বাল।।।।চল তো…..”
“উফফফ…দু মিনিট দাও…..”
“লাগে না আমার দু মিনিট তুই চল……”
সাদাদ নৌশিনকে আয়নার সামনে থেকে টেনে নিয়ে খাটে নিয়ে জোর করে শুইয়ে দেয়………
“কি হলো এটা???চুল টাও ঠিক করতে দিলা না…..ভাবলাম একটু ক্রিম লাগাবো সেটাও হলো না তোমার জন্য……”
“আরে লাগবে না এতো কিছু।।।চুল তো ভেজাই মেলে দিলেই হলো….আর ক্রমি ট্রিমের দরকার নেই….আমি তো চেয়েছিলাম একটা কালো বউ…..”
“মানে???কালো বউ চেয়েছিলে??তার মানে কি আমাকে পেয়ে হ্যাপী হও নি??আমি তো শ্যামা একটু আবার একটু ফর্সাও…..”
“আরে তা না।।।।।কালো বউয়ের সুবিধা অনেক….”
“যেমন??”
“ফার্স্ট অফ অল….লোকের নজর লাগে কম,আর আমার কাছে কি মনে হয় জানো?”
“কি??”
সাদাদ নৌশিনের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলছে,
“বেশি আদর করলে যে দাগ টা হয় কালো বউয়ের শরীরে সেটা বুজা যায় না…..”
নৌশিন সাদাদের কথায় হাঁসবে নাকি রাগ করবে বুজতে পারছে না।বরাবরের মতোই হাঁসি টাকেই বেছে নিলো।
“সাদাদ তুমি না আসলেই….”
“হুম…..তাই তুমি আর একটু কালো হলে,বেশি বেশি আদর করতাম তাহলে দাগ হলেও কেউ দেখতো না….দেখলে না বউ ভাতের দিন গলায়!মেজাজ টাই চটে গিয়েছিলো,কোথায় বউকে একটু নিজের মতো আদর করবো তার উপর নেই….কারণ বউ সুন্দরী-দাগ হয়ে যায়….লাল,কালো রং লেগে যায়…….. ”
নৌশিনের হাঁসি থামছে না সাদাদের কথা গুলো শুনে….
“ঔ মাইয়া হাঁসবি না…..কালো হইতে পারিস নাই??ফর্সা হইতে কে বলছে তোরে???”
নৌশিনের নিজের হাঁসি থামাতে পারছে,শুয়া থেকে উঠে বসে বেচারী হাঁসতে হাঁসতে…………
“ও…. মা গো…..আর হাঁসিও না প্লিজ।।ওহ….😃😃😃😃পেট ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে হাঁসতে হাঁসতে…….”
সাদাদও উঠে নৌশিনের পাশে বসলো,একটু রাগ দেখিয়ে বলে,
“এখানে হাঁসার কি আছে??আসলেই মাইয়া মানুষ না!!!তাই এই অবস্থা……”
নৌশিন হাঁসি জাস্ট দেখার মতো……..”মাইয়া মানুষ আবার কি করলো তোমাকে??”
“হাঁসতে না বলছি কিন্তু…..”
“ওকে ওকে হাঁসবো না…..”
“গুড….তুমি যদি কালো হতে বলো তো কি সুন্দর লাগতো তোমায়…… ইশশশ জাস্ট কালো পরী…..”
“কি????পরী আবার কালোও হয়??ভাই তোমার পায়ে পড়ি,আর হাঁসির কথা বইলো না…….”
“ঐ আমার কথা হাঁসির মনে হচ্ছে তোমার….???”
“না না,,,তা না তবে তুমিই ভাবো কি বলছো তুমি……”
“আচ্ছা বাদ দাও…..”
“ওকে দিলাম…..”
“না রে জান,তুমি একটু কালো হলেই বেশি সুন্দর হতো-‘কেশবতী কালানী’টাকে বেশ লাগতো…….আর আমি জোরে কিস করলেও লাল,কালো ছাপ পড়তো না এমনি তো আমাকে তোমার মুখে কিস করতে গেলে একটু কন্ট্রোল নিয়ে করতে হয় যদি দাগ হয়ে যায় তাহলে তো আবার লজ্জা পাবে তুমি,অবশ্য আমিও হাঁসির পাত্র হবো…..আর গলাতে কিস করতে গেলেও এই ভয় নিয়েই করতে হয়…….”
নৌশিন সাদাদের দিকে হা করে তাঁকিয়ে আছে,হাঁসি আসছে খুব তবুও আটকে রেখেছে………সাদাদের মাঝ রাতে এই উল্টা পাল্টা বকবক বন্ধ করতে বলে ফেললো,
“আচ্ছা,ঠিক আছে এখন তো আর কালো হওয়া সম্ভব না…..আর আমি তো ফুল ব্যান দিয়েই বেশি জামা পড়ি….তাহলে কাল থেকে না হয় সব জামা ই ফুল ব্যান গলার পড়বো তোমার যত খুশি আদর করো তাহলে দাগ পড়লেও কেউ দেখবে না……..হয়েছে এবার????”
“এই সত্যি????”
“সাদাদ এবার কিন্তু খামচি খাবে তুমি….কি শুরু করছো এতো রাতে….এতোই কালো মেয়ের শখ তো আমাকে বিয়ে করলে কেন কালো মেয়ের কি অভাব ছিলো???”
“কালো ই খুঁজতেছিলাম মাঝখানে তুমি এসে মন চুরি করলে…….চুন্নী একটা….”
“কি তুমি…..বাচ্চাদের মতো কিসের চুন্নী চুন্নী শুরু করছো…..আজব!!”
“বেশ করেছি!চুন্নী কোথাকার।।।। ”
“আমি চুন্নী হলে তুমি চুর…..”
“হপপপপ……”
“কি খারাপ রে……”
“এই শোনো না……”
“কি বলো…এই বললা ঘুম পাইছে জোর করে টেনে আনলা এখন কি শুরু করছো…..”
“ওকে বলবো না…..”
“আজব তো…..!!”
“বলো শুনছি তো….”
“না তুমি বিরক্ত হচ্ছো…..”
“না আমি বিরক্ত কেন হবো….তুমি বলো…”
“ওকে,…..”
“হুম…বলো….”
“বলছি যে শুধু ফুল ব্যান গলাই ইউজ করবে কেন,মুখে এটকু কালো মেকাপ করো আমি দেখতাম আর কি আমার ‘কেশবতী কালানী’কে কতটা মিষ্টি লাগে……যদিও এমনিতেও দেখতে হুর পরী।।।।।আমি একটু কালো হুর দেখবো….. ”
নৌশিন একটু বিরক্ত হয়ে পড়ে….কি শুরু করছে কখন থেকে আপনারাই বলুন,বিরক্ত হওয়ার ই তো কথা???।।।।।।।।
“সাদাদ……!!!তুমি না…..আসলেই….”
“এই বিরক্ত হয় না জান……শুনো না প্রতিদিন কালো সাজতে হবে না,কাল সেজো,দেখবো জাস্ট…….”
“কি????মানুষ মেকাপ করে সুন্দর হওয়ার জন্য আর আমি কালো সাজবো???”
“ভুল বললে তুমি…..মানুষ সুন্দর হওয়ার জন্য মেকাপ করে না,করে ফর্সা হওয়ার জন্য…….ফর্সা হলেই সুন্দর হয় না…….কালো ও সুন্দর…..আর সত্য মহা সুন্দর-হোক সে সত্য কালো বা সাদাদ….এই যে তুমি ফর্সা রং এর তোমাকে সবচেয়ে এভাবেই সুন্দর লাগে কারণ এটা তোমার সত্যরূপ,সাজলে সেটা অন্য রকম বাট নেচারাল টা বেশি সুন্দর।।।।তেমনি কালো যাদের গায়ের রং বা বেশি সাদা প্রাপ্তির মতো ওরাও ঔভাবেই সুন্দর।।।।কিন্তু আমি আমার বউ টাকে কালো করে দেখতে চাই….তাতে আমার বউকে অনেক টা মিষ্টি লাগবে আমি কল্পনা করতে পারছি…..”
“কালোও সুন্দর হয় আমি জানি……বাট কালো সাজবো কি করে আমি?…”
“কেন মানুষ ফর্সা সাজে যে ভাবে…..”
“ওফপ,,সাদাদ নরমাল মেকাপগুলোতে সাদা ফ্যাস প্যাক থাকে,কালো যে রং টা থাকে সেটা চোখে দেওয়ার জন্য সেটা মুখে কি করে মাখবো আমি…..”
“ওকে,আমি কাল ই এক্সটা একটা মেকাপ এনে দিবো যেখানে কালো ফ্যাস প্যাক থাকবে……তাহলে সাজবে তো??”
“কি বাচ্চামি শুরু করছো এতো রাতে??”
“ও তারমানে সাজবে না তাই তো??ওকে বাদ দাও সাজতে হবে না….”
“আরে রাগ করার কি হলো!আমি কখন না করলাম য সাজবো না??”
“সাজতে হবে না……”
“আমি সাজবো……”
“না বললাম না…….”
নৌশিন সাদাদের দিকে ফিরে বুকে আস্তে করে দুটো কিল দিয়ে বলে,
“আমি বললাম না আমি সাজবো…….”
“কি বেয়াদপ বউ……”
“আমি বেয়াদপ????এটা বলতে পারলে তুমি??”
“ইয়েস লেডি…..হাসবেন্ডের গায়ে হাত দিলে তাকে বেয়াদপ ই বলা হয়……”
“আচ্ছা!তাই না…..তাহলে আমি বেয়াদপ ই থাকবো সারা জীবন……..” আবারও সাদাদকে ঘুষি দিতে থাকে………..
“আরে থামো….বুক টা কি সরকারী নাকি???মাথা রাখবে,শুবে আবার যখন খুশি মারবে???”
“আমার হাসবেন্ডের বুকে আমি যা খুশি করবো আমার ইচ্ছা…..দরকার পরলে সারা দিন ঘুষি দিবো….”
সাদাদ নৌশিনের হাত দুটো ধরে কাছে এনে বলে,
“আচ্ছা!তাহলে তো আমিও আমার বউয়ের বুকে যা খুশি করতে পারি……..”
নৌশিন এক ঝাটকায় সাদাদের থেকে হাত ছাড়িয়ে একটু দূরে গিয়ে বসে,
“উম হু উম হু…….আমি এমনিই ব্যাথা পাই…….আর তোমার যা লোহার মতো হাত এক ঘুষি দিলে আমার হার্ট বিট বন্ধ হয়ে যাবে-আর আমি তো ডিরেক্ট আমার দাদুর কাছে চলে যাবো…..”
সাদাদ নৌশিনের গায়ে হেলান দিয়ে বসে,
“জান,আমি ঘুষি দিবো না তো……আমি তো….”
“চুপপ,,,খারাপ…..লজ্জা নাই একদম তোমার কও সব করো তুমি….ছিঃ……”
“তাই???কি সব করি আমি??”
“যাও….তো…..বেশি বেশি…..”
“এই প্লিজ লজ্জা পেও না তাহলে আাবর কিন্তু…….”
“ইশশশশ,আবার কিন্তু….হবে না কিছু ঘুমাও তো……”
“জান রিয়েলি বলছি ইউ আর সো সফ্ট আর তোমার সে জায়গার কথা তো বাদ ই দিলাম।।।।।তোমার যৌবন জ্বলে পুড়ে মরছে এই যুবক টা।।।।।”
নৌশিন ভ্রু কুঁচকে বলে,
“সে জায়গা মানে??”
“সব বলতে হয় নাকি??”
“বলো শুনি….”
“মহারানী আমার বাচ্চারা যা খাবে…….হা হা হা হা”
নৌশিন সাদাদের হাতে জোরে একটা খামচি দিয়ে,
“কি খারাপ…..বেশরম একটা……”
“ঠিক তাই……”
“ছিঃ…….সরো তো……”
নৌশিন উঠে যেতে নিলে সাদাদ ওকে টান দিয়ে বুকে নিয়ে সাথে সাথে শুয়ে পরে,
নৌশিনের মাথা বুকে চেপে ধরে গান শুরু করে,
“যৌবন জ্বালা বাড়াইয়ো না শখী,বাইধা রাখতে পারবা না……….”
“কিহ…..সাদাদ কি সব খারাপ গান এগুলো??”
“আরে আমি আমার বউকে বলছি…….আমার বউয়ের সব সৌন্দর্যের প্রশংসা করার অধিকার আছে আমার…….”
“হুম…..ছাই আছে……”
“আছেই তো…….আমার ছুয়াতে যেমন তোমার সবকিছুতে আগুন ধরে যায় আবার আমার কারণেই সব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়…….”
“ওফফ….কার পাল্লায় পরলাম আমি???পাগল না অন্য কিছু…..কখন থেকে কি বকবল করছো..???এখনি এতো উল্টা পাল্টা পেঁচাল তোমার না জানি বুড়ো হলে কি হাল করো আমার কানের।।”
“আরে টেনশন নিও না…..বুড়ো আর হবো না আমি দাদার মতো পঁয়ত্রিশেই পরপারে…….”
কথা টা শেষ করতে দিলো না নৌশিন সাথে সাথে সাদাদের মুখে হাত চেঁপে ধরে,নৌশিনের চোখ দুটো ছলছল করছে,মনে হয় পলক পড়লেই নোনা জল গড়িয়ে পড়বে……………
“চুপ,অনেকক্ষণ ধরে সহ্য করছি……তাই বলে সব কথা সহ্য করবো না কিন্তু……”
সাদাদ নৌশিনের হাত টা মুখ থেকে সরিয়ে দিয়ে,নৌশিনকে ভালোভাবে আকড়ে নিয়ে বলছে,
“শোনো গল্পটা,দাদা মারা গেছে পঁচত্রিশে আমারও মনে হয় আমি সে সময়ে…..”
নৌশিন এমনভাবে কান্না শুরু করে দিলো সাদাদ আর ঐ অলক্ষ্মী মার্কা কথাটা বলতে পারলো না…………নৌশিন সাদাদের বুকে শুয়ে থেকে ওকে এমনভাবে আকড়ে ধরেছে মন হয় ছেড়ে দিলেই পালাবে এমন একটা ভাব………….
“সাদাদ প্লিজ,,,,আই কান্ট টোলারেট দিস………”
সাদাদ আসলে একটু মজা নেওয়ার জন্যই বলছিলো এসব কথা,কিন্তু ভালোবাসার মানুষগুলোর যে সব মজা সহ্য হলেও এগুলো সহ্য হয় না…….
সাদাদ নৌশিনের কান্না থামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে,
“আমি মজা করছিলাম জান…….দেখি মুখ তুলো দেখি……এই পাগলী আমি কি সত্যিই মারা গেছি নাকি যে এভাবে কান্না করতেছো??….”
নৌশিন সাদাদের বুক থেকে মাথা তুলে সাদাদের দিকে কান্না মিশ্রিত চোখে তাঁকিয়ে বলে,
“কি ভেবেছো কি তুমি???না করছি না আমি……কানে যায় না আমার কথা???মরার খুব শখ তোমার তাই না???ও হবেই না কেন আমি তো খুব খারাপ মেয়ে তাই আমাকে যেন সহ্য করতে না হয় তাই এইসব চিন্তা আসে তোমার মাথায়…..”কাঁন্নার চোটে হিঁচকি পাড়তে পাড়তে এলটানে শুনিয়ে দিলো সাদাদকে………….
সাদাদ নৌশিনকে আবারও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,
“জান,উমমম্মা…..সরি,আর হবে না…….”
নৌশিন সাদাদের বুকে মুখ রেখে যেন কান্নার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিলো….
“সরি তো….আর বলবো না…..আর কি বল তো বুড়ো টা তো কলেরায় মারা গেছে আমাকে কি তুমি নরমাল কলেরায় মরতে দিবে নাকি!!তা ছাড়া বাবার বয়স এখন সত্তরের কাছাকাছি বাবা এখনও দিব্বি ঘুরে বেড়ায়…..আমি মনে হয় আশিতেও তোমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবো……”
“মজা তাই না খুব মজা তোমার???কাঁদাতে ভালো লাগে তো আমায়……”
“একদম না জান…….তা ছাড়া আমি মরলে আমার জান টাকে আদর করবে কে??আর এভাবে জ্বালাবেই বা কে???”
“সাদাদ আবার এক কথা???”(কান্না করতে করতে)
“ওকে,আর বলছি না……কান্না থামাও প্লিজ…..”
“খুব খারাপ তুমি।।।।।সত্যিই খুব খারাপ…….”
সাদাদ নৌশিনের চোখের পানি মুছে দিয়ে-অরূপের মতো করে নৌশিনের গাল দুটো জোরে টেনে টেনে বলে,
“আসলেই সত্যিই তুমি এই খারাপটার কিউট,মিষ্টি,অনেক ভালো একটা বউ…….আই লাভ ইউ সোনা বউ…..”
সাদাদ বাচ্চাদের মতো গাল টানাতে নৌশুন চোখে পানি রেখেই মুখে একটা হাঁসি ফুটিয়ে তুলে,”বদমাইশ…”
সাদাদও হেঁসে দিয়ে নৌশিনকে নিজের বুকের উপর নিয়ে জড়িয়ে ধরে কপালে ভালবাসার পর এঁকে দেয়……”বদমাইশের বউ”
দুজনেই জোরে হাঁসি দিয়ে একে অপরকে শক্ত আকড়ে নিয়ে কখন ঘুমিয়ে গেলো ওরাও মনে হয় বলতে পারবে না।
এতটাই শান্তির ঘুম হয়েছে ওদের এক ঘুমেই ভোর।
নৌশিনের রোজ মাঝ রাতে ঘুম ভাঙলেও আজ একবারও ভাঙে নি,আর নৌশিন তো রাতে ঘুমের মধ্যে সেই রকম নাচানাচি করে কিন্তু আজ ও নিজেকে সে ভাবেই পেয়েছে যে ভাবে রাতে সাদাদের বুকের উপর শুয়ে ছিলো………….সাদাদের ঘুম তখনও ভাঙে নি,নৌশিন আযানের শব্দে জেগে গেছে অবশ্য মুখ তুলে দেখে সাদাদ ওকে খুব শক্ত করে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে মূলত সাদাদের এমনভাবে জড়িয়ে ধরাতেই নৌশিন ঘুমের মধ্যে নাচানাচি করতে পারে নি আজ….
সাদাদের মুখের দিকে তাঁকিয়ে নৌশিন মিষ্টি একটা হাঁসি দিয়ে…সাদাদ উপর থেকে ওর এলোমলো সব চুল সরিয়ে নিলো……..
তারপর সাদাদ চুলগুলো আতলো করে ছুয়ে দিলো,
দাঁড়িগুলোতে স্লাডিং করে মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে একপাশে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে উঠে পড়তে চাইলে পারে না,সাদাদ ঘুমের মাঝেও ওকে শক্ত দু হাতে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে………..
“এই…….ঘুম পাগল…..”
সাদাদ ঘুমে…..ফজরের নামায পড়ার জন্য কত এলার্ম দিয়ে রাখতো বেচারা তবুও সকাল বেলা উঠতে পারতো না আর সেই মানুষ কি না এই একটু ডাকে ভোর পাঁচটায় উঠে যাবে??।।।।।।।!!!!!নৌশিন আবার ডাকে,
“সাদাদ উঠো,আযান দিয়ে দিয়েছে….নামায পড়বে না?”
সাদাদ বিভোরে ঘুমাচ্ছে এখনও……..
নৌশিন জানে এতো সকালে সাদাদের ঘুম ভাঙানো একটু খাটাখাটনির ব্যাপার তাই কি করার ডাকতে থাকে সাদাদকে……..এট লিস্ট নামাযের জন্য তো উঠাতে হবে না হলে বরাবরের মতো সাড়ে সাত টায় ই ওর ঘুম ভাঙবে………..”সাদাদ,আর কত ঘুমাবে???উঠো……”
নৌশিন সাদাদের গালে হাত দিয়ে নাড়িয়ে ওকে বারবার,তবুও উঠার নাম নেই….আর উঠবেই বা কি করে নৌশিন যেভাবে গালে নাড়া দিচ্ছে মনে হয় জোরে দিলে ওর সাদাদ ব্যাথা পাবে……….
!হু এভাবে দিলে ঘুম আরও গভীর হবে আরও জোরে ডাকতে হবে গো….জোরে ধাক্কা দিতে হবে……!
নৌশিন নিজের গলার সাউন্ড টা আর একটু বাড়িয়ে ডাক দিলো,
“সাহেব,শুনছেন????….উঠুন……ওরে….বুজেছি এভাবে ডাকলে হবে না……”
নৌশিন একটু শক্তি খাটিয়ে জোরে সোরে নড়ে উঠতে চাইলো সাদাদের থেকে,
সাদাদ এবার নড়ে উঠে নৌশিনকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,ঘুমেরর মাঝেই বলে,”কোথায় যাবে এতো রাতে??ঘুমাও…..”
এই সুযোগে নৌশিন সাদাদকে উঠাতে জোরে জোরে কথা বলতে শুরু করে,ঘুমন্ত মানুষকে আসলে এতো জোরে ডাকতেও হয় না তাই নৌশিন আস্তে করেই ডাকছিলো….অনেকে ঘুম ভাঙানোর জন্য চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ডাকে এটা ঠিক না এতে মস্তিকের ক্ষতি হয়….
যেহেতু সাদাদ কথা বলেছে তার মানে ওর ঘুম একটু হলেও ভেঙেছে তাই এখন জোরে আওয়াজ করাই যায়…..”সাদাদ রাত না,সকাল এটা….কখন থেকে ডাকছি তোমায়…….”
“উহমমমম…..”
“কি বলো বুজছি না তো…..”
“কত বাজে????”……ঘুমস্বরে বলায় নৌশিন সাদাদের এই কথাটাও বুজতে পারলো না……..
“কি বলো??ভালোভাবে বলো…….”
সাদাদ চোখ মেলে তাঁকায়,
একটু গলা টা ঠিক করে বলে, “কত বাজে???”
“ও…….পাঁচটার বেশি হয়তো….আযান তো পাঁচটার দিকেই দেয় এখন…..”
“ও……”
“হুম….উঠো….নামাযে যাবে না??”
“যাই……”
“তাহলে উঠো……..”
“উমমমমম”বলেই সাদাদ নৌশিনকে চেপে ধরে নিজের বুকে আর একটুর জন্য নৌশিন সাদাদের ভেতরে যাওয়া বাকী…..
“ওহু…এতো জোরে ধরে নাকি মানুষ???দম আটকে যাবে তো আমার…..”
“তাই!আর আমি যে সারা রাত বুকের উপর রাখলাম তার বেলা??রাতে তো ফুটবল খেলো তুমি!কোনো রকমে ঠিক ঠাক করে বুকে আটকে রেখেছিলাম আর কি…..”
“আচ্ছা,সারা রাত এভাবে বুকের উপর ছিলাম ভার লাগে নি তোমার?আই মিন কষ্ট হয় নি….?”
“ভালোবাসার মানুষকে বুকে রাখতে কষ্ট হয় না জান…….তাছাড়া তুমি খুব হলে চল্লিশ কেজি হবে তাই মনে হয়েছে এক টুকরা তুলো পড়ে আছে আমার উপর…….বাট লাফালাফি করছো সেই লেভেলের…..হা হা হা আমার কিউট বউটা রাতের বেলার ফুটবলার হয়ে যায়……”
নৌশিন কিছু না বলে হঠাৎ সাদাদের গায়ে হাত দিয়ে সালাম করে………সাদাদ অবাক হয়ে বলেে,”আরে???”
“লাথি লাগছে নিশ্চয় তোমার গায়ে??তাই সালাম করলাম…..”
“ধুর,লাগতেই পারে,তুমি যদি ভালোবাসতে পারো তাহলে কিছু লাথিও দিতো পারো…..”
“না না আমি আর ঘুমাবো না তোমার উপর,পাশে ঘুমালেই লাথি দিই আর উপরে ঘুমালে মে বি আরও বেশি দিই……..কাল থেকে পাশেই শুবো শুধু ঘুমানোর আগে বুকে মাথা রাখবো…..”
“সোনা বউ আমার,ঘুমের মাঝে লাথি কোনো ব্যাপার না সো আমি চাই তুমি আমার উপর ঘুমাও…..আমার ঘুম টা আজকে বেস্ট হয়েছে কারণ আমার প্রাণপাখিটা আমার বুকে ঘুমিয়েছিলো…..”
“ইশ…।রোজ রোজ বুকে এভাবে ঘুমালে তোমার কষ্ট হবে….তার চেয়ে আমি বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো তাই ভালো…..”
“আচ্ছা!সেটা পরে দেখা যাবে…….”
“হুম এখন উঠো….তা না হলে মসজিদে জামায়াত পাবে না……..”
“হুম….উঠছি…..তার আগে একটু আদর করে নিই……”
নৌশিনকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সাদাদ উল্টো হয়ে যায় যার ফলে নৌশিন নিচে আর সাদাদ উপরে……….
“ও মা গো……কি তুমি???এভাবে কেউ হঠাৎ করে……”
কথাটা শেষ না হতেই সাদাদ নৌশিনের ঠোঁটে আতলো করে একটা চুমু খায়……ভালোই লাগে নৌশিনের…….সাদাদ নৌশিনের দুগালে,কপালে আতলো করে চুমু দিয়ে দিলো…….নৌশিনের মুখের দিকে তাঁকাতেই মুচকি হাঁসে সে…………
“জান,শুধু হাঁসলে চলবে আমাকেও একটা কিছু দাও…….!!”
নৌশিন একবারও আপত্তি জানালে না,জানানোর প্রয়োজনও মনে করে না সে……তার ভালো লাগে নিজের স্বামীকে ভালোবাসতে তাই সাদাদের গালে একটু স্লাইড করে গভীর ভাবে একটা চুমু দিয়ে দেয়………
“আহহহ…..সো সোইট….আচ্ছা!তুমি এতো সফ্ট কেন???”
“তুমি এতো হার্ড তাই……”
“আচ্ছা???”
“হুম….”
“তা সফ্ট কুইন….এই হার্ড মানুষের এখানে(ঠোঁটে)একটু ছুঁয়া দিন না……দিলে দিন টা ভালো যেতে বোধহয়…..আ কষ্ট করতে হবে না জাস্ট ছুঁইয়ে দিলেই হতো!!যদি মহারাণীর একটু মায়া হয়….তাহলে…..”
নৌশিন চুমু বসিয়ে দিয়েছে সাদাদের ঠোঁটে,আলতো করে একটা দিয়ে দিতেই আবার নিজেই গভীর ভাবে একটা চুমু খেলো………
“ও আল্লাহ্……অনেক শুকরিয়া তোমার দরবারে…আমার গোলাপীপাপড়ী দুটো চুমু দিলো লিপে……রোজ যেন দেয়……”
“ধ্যাত উঠো এখন…..”
“হুম…এবার উঠতেই হবে…..”
……দুজনেই উঠে হাত মুখ ধুয়ে নিলো…..নৌশিন সাদাদকে নামাযের জন্য পাঠিয়ে দিয়ে ওযু করে নিজেও নামায টা পড়ে নেয়……অভ্যাসবসত ই নামাযের পর গভীর ঘুম আসে মেয়েটার চোখে আজও তার ব্যতিক্রম হলো না……তাই নামায পড়ে সাদাদের জন্য দরজা টা খুলা রেখে ঘুমিয়ে যায় সে………………………..!
!
সাদাদ মসজিদ থেকে ফিরে এসে দেখে নৌশিন ঘুমাচ্ছে। নৌশিনকে না ডেকে সাদাদ ওর পাশে শুয়ে পড়ে,আবার কি ভেবে উঠে যায়……………..
লেপটপ আর কিছু ফাইল নিয়ে নৌশিনের পাশে বসে,
একা একাই বলছে,”উঠেই পড়েছি যখন না ঘুমানোই বেটার,অলরেডি ছয়টার কাছাকাছি সো কাজ করলে অনেক এগুনো যাবে……”…..লেপটপ খুলে কাজে মন দেয়……………….
!
সকাল আট টা…………
সাদাদ ফাইল চেক করছে আর নৌশিন পাশে শুয়েই এখনো ঘুমাচ্ছে সাধারণ ফজরের নামায পড়ে নৌশিন যে ঘুমটা দেয় সেটা খগব গভীর ভাবেই ঘুমায়,আর দশটার আগে উঠে না সহজে…………….
এমন সময় প্রাপ্তি আসে নৌশিনকে ডাকতে,দরজা খুলা দেখে ভেতরে ডুকে।
“গুড মর্নিং ভাইয়া…….”
সাদাদ লেপটপে চোখ রেখেই বলে,”গুড মর্নিং মাই লিটল সিস্টার……”
“আরে ভাইয়া,তুমি উঠেছো আর ভাবী এখনো ঘুমাচ্ছে??ডাকো নি কেন??”
সাদাদ কাজে ব্যস্ত……তাই এবারও প্রাপ্তির দিকে না তাঁকিয়েই বলে,”উঠেছিলো তো,নামায পড়ে আবার শুয়ে পড়ছে……”
“ও….তুমি এই সময় তো জিমে থাকো আজ কি কাজ করছো.?”
“কিছু কাজ পেন্ডিং আছে তাই…….”
“ও…..”
সাদাদকে আর কিছু না বলে নৌশিনের গায়ে হাত দিয়ে ডাকতে থাকে,
“ভাবী,ও ভাবী……উঠো…..”
সাদাদ এবার ফিরে তাঁকায় প্রাপ্তির দিকে……..
“কি রে বোন……???ডাকেছে ওকে কেউ??”
“নাহ….বাট বড় ভাবী বললো ডেকে দিতে……কি খাবে জানতে?ভাবী তো পড়টা খুব একটা খায় না তাই…….”
“ওহ্…..তাহলে থাক ওকে ডাকিস না আর একটু পড়ে আমি ডেকে দিবো….আর ভাবীকে বলিস ওর জন্য রুটি করে দিতে যেন তেলে না ভাজে………..”
“ওকে……..তাহলে তুমিই ডেকো……..”
“আচ্ছা তুই যা,কথাটা বলে এসে পড়তে বস আর কাকি কে বলিস কাউকে দিয়ে আমার জন্য চা পাঠাতে…..”
“ওকে ব্রো…….বাই…..”
“বাই মাই মিষ্টি বোনো……”
প্রাপ্তি নিজের সব অর্ডারি কাজ করে পড়তে বসে যায়।বাসার ছোট হলে যা হয় আর কি!যদিও কোনো কাজ হাতে করতে হয় না প্রাপ্তির তবে ওর পা টার সারাদিন খুব কষ্ট হয়……
ক্লাস টা করে এসে বেচারী একটু বসার ঘরে বসলেই ওর মা বলবে,
“আম্মু,তোর বাবাকে বল তোর জেঠা কল করতে বললো বা তোর আব্বুকে নিচে আসতে বল…..”
অসহায়ের মতো বসা থেকে বাবার রোম থেকে বাবাকে ডাকতে যেতে হয়……ফিরে এসে একটু বসলে,অরূপের মা ডাক দিয়ে বলে,
“প্রাপ্তি বোনো আমার অরূপকে একটু বাগান থেকে ডেকে নিয়ায় সেই কখন থেকে খেলছে….”
আবারও পা টা কে কষ্ট করতে হয়……কাজটা করে এসে একটু খেয়ে পড়তে বসে…..পড়া শেষ করে রাতে ডিনার করতে যাবে…
বেচারীরর আবার ক্ষুদা পায় বেশি তাই পাঁচ দশ মিনিট আগেই যায়…..খাবার দেওয়ার আগে বাটি থেকে একটু একটু করে খাওয়া শুরু করে,তখন জেঠি বলে,
“সোনা মা,মাছ ভাজা টা খেতে খেতে যাও আর তোমার রিদি আপুকে খাওয়ার জন্য আসতে বলো……”
কি আর করার হাতে একটা মাছ ভাজা/বেগুন ভাজা/এক টকুরা গোস্ত নিয়ে খেতে খেতে যায় যারা আসে নি তাদের ডাকতে…..
তারপর খেয়ে আবার সবাই বলে,”প্রাপ্তি ফোন চালাবে না গিয়ে একটা পর্যন্ত পড়ে ঘুমাবে রাতে এফ বি ডুকে সময় নষ্ট করবে না।……”
সারা দিন পড়া,ক্লাস আর সবার এমন অর্ডারী কাজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে মেয়েটা তবে অর্ডার যেমন বেশী খায় সবার ছোট হওয়ায় আদরের ভাগ টাও বেশি পায়……………
নয়টায় সাদাদ কাজ এক পর্যায়ে থামিয়ে নিয়ে নৌশিনকে ডাকতে শুরু করে,যদিও নৌশিন উঠতে চায় নি পরক্ষণেই ওর মায়ের বলা কথা মনে পড়ে যায়………তাই এক লাফে উঠে পড়ে…..”আগে ডাকে নি কেন??”
“নয়টা বাজে তাই উঠো না….আরও আহে ডাকলে তো….”
“ডেকে দিলেই উঠতাম….ইশশশশ সবাই কি ভাববে বলো তো নতুন বউ বেলা নয়টা অবদি ঘুমায়……মা আমাকে বার বার বলে দিয়েছিলো সকালে না ঘুমাতে!ভাবী আর কাকীকে হেল্প করতে বলে দিয়েছিলো বারবার করে,দরকার পড়লে বিকালে ঘুমাতে বলছিলো…..এখন একটু পড়েই মা ফোন দিয়ে যদি শোনে আমি নয়টায় উঠলাম,মা আমাকে খুব বকবে……”
“কাহিনী!তোমাকে আসছিলো প্রাপ্তি ডাকতে আমিই না করেছি…..আর মা কি বলেছে?ভাবী আর কাকিকে হেল্প করতে??”
“হুম….বউরা তো তাই করে…..”
“একটা চড় দিয়ে না দাঁত সব ফেলে দিবো….আমি কাল ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বলছি তোমার সব বই দিয়ে আরফানকে পাঠিয়ে দিতে আজ থেকে স্টাডি শুরু করবে কাজের জন্য বাসায় অনেক সার্ভেন্ট আছে,তোমাকে আমি কাজ করার জন্য নিয়ে আসি নাই…..আর সকাল বেলা তো কখনই রান্না ঘরে যাবা না তুমি,ভাবী আছে কাকি আছে ওরা দেখবে……..মন চাইলে ঘুমাবা না চাইলে পড়বে……”
“কি বলো??তাই বলে একটু হাতে হাতে সাহায্য করবো না???”
“না করবে না……প্রাপ্তি,রিদি যেমন থাকে তুমিও তেমন থাকবে……বাড়তি কিছুর চাপ মাথায় নিবে না…….জাস্ট স্টাডি নিয়ে থাকবে যেমন তোমার সেই বাড়িতে থাকতে তেমন…..”
“আচ্ছা দেখা যাবে সেটা…..”
“দেখা যাবে না…..আমি যেমন তোমাকে তোমার ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট গার্ল দেখেছি এই লাস্ট সেমিস্টারেও তাই দেখতে চাই…..বিয়ে হয়ে গেছে বলে রেজাল্টের কোনো নড়চড় যেন না হয়…….মাথায় রাখবে??”
“ওকে ওকে……হইছে……সকাল বেলাই শুরু হইছে ওনার…..”
“সকাল বেলাই শুরু হয়…….এখন খাবে চলো…..”
খাওয়ার টেবিলে,
“কি রে মা,কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো??? ”
“না বাবা……”
“গুড….নিজের বাড়ি এটা বুজচ্ছো???শশুড় শাশড়ি আছে বলে কোনো রকম ফর্মালিটির দরকার নেই……পিচ্চি মেয়ে পিচ্চির মতোই থাকবে,সারা বাড়ি হেঁসে খেলে বেড়াবে…….জাস্ট লাইকস আওয়ার প্রাপ্তিমণি…….”
“জ্বি বাবা…..”
নৌশিন শশুড়ের কথা শোনে খুব খুশি হয় আবার মনে মনে ভাবে “বাইশ বছরেী একটা মেয়ে নাকি পিচ্চি!!!যদিও বাবা মায়ের কাছে চল্লিশ হলেও পিচ্চি…..আল্লাহ তোমার কাছে অনেক শুকরিয়া এমন মা বাবার মতে শশুড় শাশড়ি দেওয়ার জন্য….নিজের লোকের মতো আপন লোক দেওয়াী জন্য……..”
এ বাড়িতে তিন বেলায় সবাই এক সাথে খাবার খায়…..আসলে এটাই করা উচিত এতে পরিবারের সবার মধ্যকার বাঁধন টা আরও জোরালো হয়।।
হঠাৎ রিদি নৌশিনের নাম ধরে ডাকে,”নৌশিন….”
নৌশিনও সাথে সাথে সারা দেয়…..”জ্বি আপু…..”
নৌশিনের অপজিট সাইডে বসেছে রিদি…..যদিও একবারের জন্যও নৌশিনের দিকে তাঁকায় নি এমন কি ডাকার সময়ও না কিন্তু নৌশিন ডাকার সাথে সাথে সারা দিয়েছে আর তাঁকিয়েছেও………….
“বলছি হানিমুনে যাবে না তুমি??”
নৌশিন একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়……শশুড়,চাচা শশুড়দের সামনে হঠাৎ হানিমুনের কথা শুনলে যে কারও ই এমন অবস্থা হবে…তারপর আবার রিদির প্রশ্ন করার কি ধরণ……..!”তুমি যাবে না???”….যদি সবার সামনে বলার ই ছিলো তাহলে এট লিস্ট এটা বলতো….”তোমরা যাবে না” ‘তুমি’ বলাটা আমার কাছে একটু না বেশ খানিক টা অন্য রকম লাগছে………
নৌশিন খেয়াল করলো বড়রা সবাই চুপচাপ খাচ্ছে,এই বাড়িতে সবাই ফ্রি কিন্তু তাই বলে শশুড় শাশুড়ির সম্মুখে নতুন বর-বউয়ের হানিমুনের কথা বলা চলে না কারণ এটা স্টার জলসার কোনো নাটকীয় পরিবার না যেখানে কাকি শাশড়ি ভাতিজার বাসর রাত জাগে!!এটা বাংলাদেশী ভদ্র আর শালীন একটা পরিবার….তার উপর মুসলিম……..
এখানে ননদ/ভাবী বাসর রাত জাগে কাকি/শাশড়ি না…….নৌশিন কি বলবে বুজতে পারছে না………
সাদাদ ভালো করেই বুজতে পারে রিদি প্রশ্নটা নৌশিনকে কেন করেছে,
তাই নৌশিনের হয়ে সে ই উত্তর টা দেয়……………..
“না এখন কোথায় যাচ্ছি না আমরা…..ওর ক্লাস চালু হবে নেক্সট উইকে আর দেড় মাস পর সেমিস্টার ফাইনাল সো ও পড়ায় ব্যস্ত থাকবে এই কয়েকদিন,এমনিতেই বিয়ের ঝামেলায় তিন চার দিন যাবত পড়তেই পারছে না…..যদি যাওয়ার হয় ওর সেমিস্টার এক্সামের পর…..”
অরূপের মাও তাল মিলিয়ে বলেন, “হ্যাঁ,সেটাই বেটার…..”
রিদি আর কিছু বললো না চুপচাপ খেয়ে চলে গেলো…
সবার খাওয়া শেষ হলে যে যার রোমে চলে যায়………..
রিদি অফিসে যাওয়ার রেডি হয়ে বের হচ্ছে,এমন সময় সাদাদও রেডি হয়ে বের হয় সাথে অবশ্য নৌশিনও আছে…….
সাদাদ রিদিকে দেখেই নৌশিনের হাত ধরে রিদির আগে সিরি দিয়ে নামতে থাকে………….সাদাদের সব কিছু সহ্য হলেও মেয়েদের ছেলেধারী পোশাক আর ছেলেদের মেয়েধারী পোশাক জাস্ট অসহ্য লাগে!….আর রিদি ঠিক সেই টাইপ একটা মেয়ে উনত্রিশ বছরের একটা মেয়ে টাইট পেন্ট আর শার্ট পড়ে অফিসে যায় সাদাদের ঠিক সহ্য হয় না,যদিও এ বাড়ির সবাই প্রথম প্রথম না বলতো রিদিকে কিন্তু না শোনায় কেউ আর বলে নি কিছু!ও তো আর ছোট না যে ওকে শাসন করতে হবে!যথেষ্ঠ মেচিউর সে……. সো নিজের ভালো বুজার ক্ষমতাটা ওর আছে।
সাদাদ বাসার সবাইকে বলে বেরিয়ে যায়…..আবার কি ভেবে ফিরে আসে……………রিদি তখন ড্রয়িং রোমে বসে কিছু ফাইল চেক করছিলো,
এই মেয়ের যত দোষ ই থাক না কেন!এর সব চেয়ে বড় একটা গুণ হচ্ছে ওর ‘কাজ’ যাই হোক না কেন ওর সাথে,কাজের সাথে কোনো সর্ম্পকও টানবে না সে…..তার কাছে নিজের কাজ টা ই সবার আগে আর সব থেকে বড় কথা সাদাদ নৌশিনের সাথে যেমন আচরণ করুক,যতই খারাপ ড্রেস পড়ুক কাজে একশ ভাগ সৎ….. বড় একটা মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানিতে জব করে অল্প সময়েই বসের মন জয় করে নিয়েছে কাজ দিয়ে,
নিজের টাকার গাড়িও করে নিয়েছে একটা শুধু মনের সুখ টাই খুজে পাচ্ছে না।
কারণ মনে যারে ধরেছে সে যে অন্য খাঁচায় বন্ধি……..!!!
যাই হোক আল্লাহ ভালো জানেন কার কপালে কি আছে!!!অথবা কারও কর্ম ফল।।।।।।রিদি সাদাদের মনের মতো না কোনো দিনও,নৌশিন আর রিদির অনেক মিল থাকলেও দুজনের চিন্তা ভাবনা আর চলাফেরায় বিশাল তফাত যে তফাতের ফাঁকে সাদাদ নৌশিনের তফাতগুলোতে মিশে গেছে…………..
বাদ দেই সব…..নৌশিন আর সাদাদ ই পারফেক্ট….
সাদাদ ভেতরে এসে দেখে নৌশিন ভাবীর সাথে বসে আছে…..সাদাদ নৌশিনকে বলে,”নৌশিন দরকার আছে একটা….একটু উপরপ চল……”
“যা…..দেখ কি বলে….”(ভাবী)
“হম…..আসছি……”
“তাড়াতাড়ি পা চালা…..লেট হচ্ছে আমার…….”
সাদাদ উপরে গেলে নৌশিনও যায় ওর পিছু পিছু,
“কি কিছু ফেলে গেছো???”
“না রে….একটা কাজ করতে ভুলে গেছিলাম….”
“কি???”
সাদাদ নৌশিনের কাছে এসে নৌশিনের দুগালে হাত রেখে বলে,
“আমার জান পাখি টাকে তো বলা হয় নি আলাদা ভাবে তাই এসেছি……..”
নৌশিন মুঁচকি হেঁসে বলে,
“সাদাদ!!!তুমি এরজন্য আবার এসেছো????তুমি যে কি না…..!একটা ফোন করলেই তো হতো…….”
“আরে ম্যাম তোমার ফোন তো আমার কাছে……”
“ও সরি,খেয়াল ছিলো না……”
“তাছাড়া ফোনে কি তোর কপালে চুমু দিতে পারতাম আমি??”
নৌশিন ঠোঁটের কোণে হাঁসি এনে বলে “পাগল একটা!”
“উমমমমমমমমম্মা…..”সাদাদ নৌশিনের কপালে একটা চুমু এঁকে দিলো….
“এবার আসছি…..কেমন???”
“ওকে।।।।।।।আল্লাহ হাফেজ……”
“হুম….ঠিক টাইমে গোসল করে নিও আর আমি তো লান্সে আসবোই এল সাথে করে নিবো……”
“ওকে…….”
সাদাদ বাইরের দিকে বেরুতেই নৌশিন পেছন ডাকতে চেয়েও চাইলো না,
সরাসরি সাদাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়…….সাদাদ ভ্রু কুঁচকে জানতে চায় “কি??”
নৌশিন কিছু না বলে সাদাদের সো য়ের পা রেখে বুড়ো আঙুলে ভর করে উঁচু হয়ে সাদাদের গালে আলতে করে একটা চুমু খায়।……”এবারও যাও…”
সাদাদ নৌশিনের মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বললো,”সো সুইট একটা বউ…….”
“তোমারর বউ তো তাই….!!!!”
“আচ্ছা????”(মুঁচকি হেঁসে)
“হুম…..শোনো আস্তে ড্রাইভ করবে…..”
“যো হুকুম মহারানী…….আসি আসসালামু আলাইকুম…..”
নৌশিন ছোট্ট একটা হাঁসি দিলো………..বললো,
“জ্বি মেরী মহারাজ….ওয়ালাইকুম আসসালাম…..”
সাদাদ চলে গেলো অফিসে……………
নৌশিন আবারও নিচে গিয়ে অরূপের মায়ের সাথে বসে গল্প করে…..বাসার সবাই কেমন!কে কি করে না করে,কার কি ভালো লাগে না লাগে এইসব নিয়েই গল্প চলছে দু জা য়ের মাঝে…………………
এগারো বাজলে অরূপ স্কুল থেকে বাসায় আসে,
নৌশিন অরূপকে ফ্রেস করিয়ে নিজের হাতে খাইয়ে দিলো……………
খাবার পর,অরূপ বলছে,
“নতুন বউ খেলবে আমাল সাথে??”
“কি খেলা বাবু???”
“উমমম….চলো কাল কে যে বল বাস টা দিলো আম্মু সেটা দিয়ে খেলি…….”
“বাস দিয়ে কি করে খেলবেো বাবু??”
“দাঁলাও আমি শিখিয়ে দিবো……আগে নিয়ে আসি…….”
“নতুন বউ,নতুন বউ…..এই যে……..”
“এখন কিভাবে খেলবো এটা দিয়ে?”
“আমি এখানে বসে এমনি কলে ধাক্কা দিবো তুমি ঐখানে বসে জোলে ধাক্কা দিবে…….পালবা তো???জোলে দিতে????”
“হ্যাঁ বাবু পারবো……”
নৌশিন আর অরূপ খেলছে,এক বার অরূপ বাস টাকে ঢেলে নৌশিনের কাছে পাঠাচ্ছে তো আরেকবার নৌশিন ঢেলছে অরূপের কাছে পাঠানোর জন্য…………….
প্রেমঘোর পর্ব ৩৬+৩৭+৩৮
ওদের খেলা দেখে নৌশিনের শাশুড়ি মনে মনে হেঁসে চলেছেন।হাঁসার ই তো নতন বউ ড্রয়িং রোমে বসে একটা বাচ্চার সাথে খেলছে!!!একটু তো হাঁসি পাবেই,তবে ওনি এতে অনেকক খুশি হয়েছেন……
হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠে,নৌশিন ভাবছে ও কি যাবে নাকি অন্য কেউ?ঠিক বুজতে পারছে না কি করবে?নতুন মানুষ হয়ে দরজা খুলতে যাবো!কাকে না কাে চায়?বা এমনও তো হতে পারে পাশের বাড়ির কেউ আমায় দেখতে এলো….থাক আমি আর না যাই…….নৌশিন ভাবতে ভাবতেই একজন সার্ভেন্ট গিয়ে দরজা টা খুলে দিলো।…………………………..