প্রেমঘোর পর্ব ৪৬+৪৭+৪৮+৪৯+৫০

প্রেমঘোর পর্ব ৪৬+৪৭+৪৮+৪৯+৫০
নার্গিস সুলতানা রিপা

সাদাদ নৌশিনের দিকে ফিরে তাঁকানোর জন্য নৌশিন ভাবলো সাদাদের রাগ টা কমে গেছে বোধহয়।কিন্তু না,সাদাদ ওর কথায় নৌশিনের ভাবনা টা ভুল প্রমাণ করে দিলো।
“আমি সারা দিন অফিস করে,এখন খুব টায়ার্ড….
আর তোমার উপর শুধু শুধু রাগ দেখানোর কোনো ইচ্ছে আমার নেই,সো সরে দাঁড়াও আমাকে ফ্রেস হতে দাও……..”
নৌশিন বুজতে পারছে সাদাদের রাগ এখনও কমে নি তবুও আর কথা বাড়ালো না।অফিস থেকে এসেছে আগে ফ্রেস হয়ে খেয়ে নিক তারপর কথা বলা যাবে।নৌশিন চুপচাপ সাদাদের সামনে থেকে সরে আসে।সাদাদ ওয়াশরোমে ডুকে হাত মুখ ধুয়ে রোমে ডুকে দেখে নৌশিন খাটের উপর টি শার্ট আর টাওজার রেখে গেছে।
সাদাদ চেন্স করে একটা ফাইল নিয়ে বসে।
নৌশিন সাদাদ সাদাদকে খাবারের জন্য ডাকতে এসে দেখে সাদাদ ফাইল চেক করছে,সে সাদাদের পাশে বসে বলছে,

“কি করছো তুমি?”
ফাইলে চোখ রেখেই সাদাদ জবাব দিলো,
“দেখতেই পাচ্ছো……”
“তা তো দেখতেই পাচ্ছি,এখন নিচে চলো খাবে…..”
“খেয়ে এসেছি…..”
“মানে???”
“খেয়ে এসেছি মানে খেয়ে এসেছি……”
“সাদাদ তুমি আমার সাথে এমন করবে না……..চলো বলছি……”
“বললাম না……”
আর কিছু বলার আগেই নৌশিন সাদাদের হাত থেকে ফাইল টা নিয়ে নিলো।
“ওয়াট…..??”
“কি??আমি কিচ্ছু করি নি….ফাইল টা আমি চেক করছি…….”
“তোমার করতে হবে না,তুমি বই নিয়ে বসো,একটা ফাইল ই বাকী আছে আমি দেখে নিচ্ছি…”
“না…..আমি দেখবো এটা….”
“নৌশিন মাথা গরম করিও না এমনিতেই মেজাজ ভালো নেই…….”
“কেন ভালো নেই???”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সাদাদের রাগ টা এতক্ষণ চেঁপে থাকালেও,সাদাদ এখন আর চাঁপিয়ে রাখতে পারলো না,নৌশিনের হাত থেকে ফাইল টা কেড়ে নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো,তারপর নৌশিনের কাঁধে দুহাত রেখে ঝাঁকি দিয়ে দাঁড় করিয়ে বললো,
“কেন বুজতে পরছো না তুমি????”
নৌশিন পুরোই হতবাক….অবুঝের মতো সাদাদের মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে।সাদাদ আবারও বলা শুরু করলো,
“বুজতে পারছো না?কেন আমার মেজাজ চটে আছে?তোমার ভাইয়া তোমার হাত খরচের টাকা দিচ্ছে তোমাকে আর সেটা তুমি নিচ্ছো এই দুটোর মাঝখানে আমি কোথায়???বলো কোথায় আমি??তোমাকে হাত খরচ চালানোর মতো টাকা পয়সা দেওয়ার সামর্থ্য আমার নেই???নাকি আমি জব করি বলে তোমার বাবা,ভাই আমাকে তোমার খরচ চালানোর যোগ্য মনে করেন না??কোনটা নৌশিন??আমার তো এখন মনে হচ্ছে তুমিই আমার সাথে এই বিষয়টা নিয়ে খোলামেলা হতে পারছো না…….”
সাদাদ জোরে জোরে কথাগুলো শুনাচ্ছে নৌশিনকে…..নৌশিন কি বলবে বুজতে পারছে না…
চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে তার………

“এই কাঁদবে না একদম……”
“ভা ই য়া এ ম ন কিছু ভে বে টা কা দেয় নি……..”
“নৌশিন আই নো,বাবা আর ভাইয়া এমন কিছু ভাবে না…..আমি রাগে বলে ফেলেছি বাট এটা আমি কি করে সহ্য করবো যে আমার বউয়ের হাত খরচের টাকা তার বাপ,ভাই দিচ্ছে………
হতে পারে তুমি তাঁদের একমাত্র মেয়ে বা বোন বাট নৌশিন এখন তুমি আমার বউ…..” কথাগুলো আস্তে বলে আবারও সাদাদ ধমকের সুরে বলতে থাকে,
“সারা ঢাকা জানে তুমি কার মেয়ে আর কার পুত্রবধু আর এটাও জানে তোমার বাবা মোর রিচ আমাদের চেয়ে……..এখানে আমার কি করার আছে তার মানে কি আমি তোমাকে পাওয়ার যোগ্য নই???আমারর বাবা ভাইয়ের এতটাও কম নেই নৌশিন……হতে পারে তোমার বাবা ভাইয়ের ডিমান্ড টা বেশি তাই বলে আমার বউকে যথেষ্ট ভালো মতো রাখার ক্ষমতা নেই আমার??”

“সাদাদ প্লিজ…..এমন বলো না……..”(কাঁদতে কাঁদতে)
“তো কি বলতে পারি আমি?তোমার ভাইয়ার কাছ থেকে হাত খরচের টাকা নিচ্ছো তুমি…..!!”
“আমি জানতাম না….ভাইয়া আগেও আমাকে এমন করে টাকা দিতো তাই হয়তো অভ্যাস টা বাদ দিতে পারে নি……আমি নেক্স টাইম ভাইয়াকে বলে দিবো প্লিজ……..”
সাদাদ পাশে থাকা একটা টি টেবিলে লাথি মেরে “ডেম ইট……” রোম থেকে বেরিয়ে গেলো।

নৌশিন কি করবে কিচ্ছু বজতে পারছে না।সাদাদ অল্পতেই রেগে যায় বাট আগে কোনো দিন এতো টা রাগ দেখায় নি নৌশিনের সাথে…….নৌশিন কাঁদতে থাকে।সাদাদের ফেলে রেখে যাওয়া ফাইল টা তুলে রেখে,বিছানায় শুয়ে কাঁদতে থাকে……ভাবছে টাকা টা ফেরত দিয়ে দিবে।।কিন্তু কি বলবে??ওর ভাই যে সাদাদের থেকে আরও দশ গুণ বেশী রাগী,বাবাকে বুজানো সহজ কিন্তু ভাইয়া কথাটা শুনলে সাদাদের উপর ক্ষেপে যাবে।নৌশিনের মা যখন রেগে গিয়ে নৌশিনকে বকাবকি করতো তখন নৌশিনের ভাই সারা বাড়ি চিল্লিয়ে মাথায় করে রাখতো “আমার বোন কে বঁকার সাহস কারো নেই…..মা কেন বকবে???”….ওর মায়ের সাথে রাগারাগী করতো….তারপর নিজের হাতে বোনকে খাইয়ে দিতো আর ওর মাকে ওর্য়ারিং দিতো যেন পরের বার ওর বোনকে আর কথা না শোনায়।যদিও নৌশিনের মা নৌশিনকে বছরে একবার বকতো কি ননা সন্দেহ!!!আর সে ভাই যদি শোনে সাদাদ টাকার জন্য রাগারাগী করেছে ওর বোনের সাথে,আমাকে সাথে সাথে বাসায় নিয়ে যাবে।এতো বদমেজাজি!!!
“আমি কি করবো!ভাইয়াকে বলা অসম্ভব….আর সাদাদ ও কিছু বুজতে চাইছে না…..”

নৌশিনের কান্না যেন থামছেই না…..ঐ দিকে সাদাদ ড্রয়িং রোমে গিয়ে বসে আছে….প্রাপ্তি ডিনারের জন্য ডাকলে ওকে একটা ঝাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিলো।প্রাপ্তিকে রাফসা আবার পাঠান নৌশিনকে ডাকতে,
প্রাপ্তি রোমে ডুকে দেখে নৌশিন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে-আর এতোটাই কেঁদে চলেছে যে হিচকিও আসছে।প্রাপ্তি এক রকম দৌঁড়ে গিয়ে নৌশিনের পাশে বসে জানতে চাইলো,
“ভাবী তুমি কাঁদছো কেন??”
নৌশিন আগে বুজতে পারে নি রোমে কেউ এসেছে,তাই তাড়াতাড়ি ওড়না দিয়ে চোখ মুখ টা মুছে নিয়ে বসে পড়লো।
“কই না তো…….”(কথা টা আটকে আটকে যাচ্ছিলো)
“ভাবী,তোমার চোখ মুখ এত লাল হয়ে গেছে….তার মানে তুমি অনেকক্ষণ ধরে কাঁদছিলে তাই না???কেন ভাবী,ভাইয়া বকেছে তাই না??জানো তো ভাইয়া এমনি…অল্পতেই রেগে যায়….প্লিজ ভাই মন খারাপ করো না……খাবে চলো…..”

নৌশিন অনেক কষ্ট করে কান্না চাঁপিয়ে রেখে বললো,
“না সে রকম কিছু না…মাথা ব্যাথা করছিলো তো তাই হয়তো চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে…..”
“হয়েছে,আমাকে আর বুজাতে হবে না…আমি অরূপ নই।কাঁদতে কাঁদতে এখনও হিচকি আসছে আর ওনি বলছেন কাঁদে নি…..ও সোনা ভাবী….চলো খাবে……”
“প্রাপ্তি তোমরা খেয়ে নাও…আমি একটু পরে খাবো….সন্ধ্যার দিকে অরূপের সাথে অনেক টা নুডুলস খেয়ে নিয়েছি খিদে নেই বিশ্বাস করো……..”
“ভাবী,নুডুলস তো অরূপও খেয়েছে….আর ও এখন ভাত খাচ্ছে…..আর তুমি??”
“প্রাপ্তি প্লিজ বোন….আমি একটু পরে খাবো…..তুমি গিয়ে খেয়ে নাও বাবু……”
প্রাপ্তি মন খারাপ করে বলে,”ওকে…..”

প্রাপ্তি যেতে নিলে নৌশিন পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলছে,”প্রাপ্তি,বাইরে কিছু বলো না প্লিজ….”
“হুম….আমি ঠিক বুজতে পেরেছি তুমি কাঁদছিলে…..”
প্রাপ্তি নৌশিনের কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“ও ভাবী,বলো না ভাইয়া বকেছে তাই না???কেন কাঁদছিলে তুমি এভাবে???বলো না…..”
নৌশিনের চোখে আবার পানি এসে গেলো,চোখের পানি মুছে ফেলে মুখে মিথ্যাটা একটা হাঁসি ফুটিয়ে নিলো।প্রাপ্তির গালে হাত রেখে বলছে,

“না রে পাগলী,তেমন কিছ না…..”
“বলবে না তাই তো….আমি কিন্তু বড় হয়ে গেছি হু….ছোট নেই আর….বলা যায় আমাকে……”
“সত্যি বলছি তেমন কিছু না….তুমি খেয়ে নাও…আমি পরে খেয়ে নিবো….কাউকে কিছু বলো না প্লিজ….বলবে যে পড়ে এসে খেয়ে নিবে…..”
“হুম….”(অভিমান করে)
“রাগ করে বোন….দেখো ঠিক খেয়ে নিবো…….আর শোনো তোমার ভাইয়া কি নিচে??”
“হুম…. খেতে ডাকলাম আর একটা বিশাল ঝাড়ি দিয়ে আমাকে তাঁড়িয়ে দিলো……”
“ও….সরি…ওর হয়ে আমি বলে দিলাম….”
“আরে ভাবী না….ভাইয়া এমন ঝাড়ি প্রায় ই দেয় আমাকে….দেখো কাল সকালে এরজন্য গিফ্ট চেয়ে বসবো আমি……যত ঝাড়ি দিবে তত গিফ্টও দিতে হবে না হলে ছাড়বো না….. ”
“আচ্ছা চেয়েও এখন যাও খেয়ে নাও….”
“হুম।।।তোমরা দুজন পড়েই খেয়ে নিও তাহলে…..”
প্রাপ্তি চলে গেলো…নিচে সাদাদ প্রাপ্তিকে দেখে নৌশিনের কথা জানতে চাইলে প্রাপ্তি অনেকটা রাগী মোড নিয়েই বলে,

“এতো রাগ কেন তোমার??নতুন বউ কে মানুষ বঁকে নাকি??কিভাবে কান্না করছে ভাবী….চোখ মুখ সব ফুলে গেছে একদম….
বললো পরে খাবে….আমি জানি নিশ্চয় তুমি ভাবীকে কিছু বলেছো না হলে ভাবী এমন কখনো করতো না….”
“চুপ…..বক বক থামিয়ে ভাবীকে গিয়ে বল হালিমা খালাকে দিয়ে আমাদের দুজনের খাবার উপরে পাঠাতে…….”
“আমি পারবো না……সবাই কে খালি ধমক দেওয়া…..তুমি বলো যাও….”
“মে…..জা…..”(রাগে কথাটাও বলতে পারলো না….)
প্রাপ্তি সাদাদের মুখের অবস্থা দেখেই ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি খাওয়ার জন্য চলে গেলো….না হলে একলা পেলে সাদাদ আবার চড় টর মেরে না বসে।সাদাদ এসে ওর ভাবী কে ওদের খাবার টা উপরে পাঠিয়ে দিতে বলে।কেউ কিছু জানতে চাইলো না আর নতুন দম্পতি আলাদা খেতেই পারে।আর প্রাপ্তিও কাউকে কিছু বললো না।
!
সাদাদ রোমে ডুকে দেখে নৌশিন পাশ ফিরে শুয়ে আছে।মনে মনে ভাবতে থাকে,
“ওর কি দোষ ছিলো,ওকে বঁকার কোনো দরকার ছিলো না……কেন যে াবব রাগ ওর উপর দিয়ে দেই নিজেও জানি না….ধুর একটা সামন্য বিষয় নিয়ে,
ওর ভাই তো আর আমাকে যৌতুক সাধছে না যে আমার এতটা রাগ করতে হতো।।।।যদিও বিষয় টা খারাপ লাগার তাই বলে নৌশিনকে আমি……আমি আসলেই যা তা একদম….”।
সাদাদ নৌশিনের কাছে গিয়ে নৌশিনকে বলছে,
“উঠো……”
“………..”
“উঠো বলছি……”
“…………”
“কি হলো…উঠতে বললাম না??”
“আমার ঘুম পেয়েছে খুব…..”
“ভালো কথা খেয়ে ঘুমাবে….উঠো….”
“আমার ক্ষিদে নেই…..”
“এবার থাপ্পর না খেতে চাইলে ছটপট উঠে খেয়ে নাও…….”
“…………”
নৌশিন কোনো কথা বলছে না দেখে সাদাদ নৌশিনকে ধরে বসিয়ে ওর মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রইলো,
দুগালে হাত রেখে বললো,
“এই মেয়ে কি করেছো তুমি??আল্লাহ্ এভাবে কান্না করে কেউ??চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছো একদম….”
নৌশিন সাদাদকে সামনে পেয়ে আবারও কান্না শুরু করে দেয়।।।এতক্ষণ যেটা আটকে ছিলো সেটা আর বাঁধ মানলো না…………

“দেখি দেখি…..চুপ একদম না।।।।একদম না……”
নিজের বুকে চেঁপে ধরলো……….
“সরি,আর বকবো না…..প্লিজ কেঁদো না….সহ্য হয় না……প্লিজ…..”
“বললাম তো আর হবে না এমন…….সরি…..”
সাদাদের মুখের সরি শব্দটা নৌশিন জাস্ট নিতে পারে না,সাদাদের বুক থেকে মুখ তুলে কান্না জড়িত কন্ঠেই একটা ধমক দিলো,
“কিসের সরি…..???সরি কি জিনিস???বলছি বলতে আমি??”
“ওকে….আর বলবো না…..”
“টাকার জন্যই তো এতো রাগ কালকে এই টাকা রাস্তায় ফিলে দিবো আমি,যার লাগবে সে নিয়ে নিবে।।।মসজিদেও দিবো না এই রাগের টাকা…..”

“না না রাস্তায় ফেলতে হবে না ঘরেই থাক তোমার যেমন ইচ্ছা খরচ করো বাট প্লিজ নৌশিন এরপর আর না,আমি জানি ওরা তোমাকে কতটা ভালোবাসে কিন্তু আমিও যে অনেক টা ভালোবাসি,আমার এই ছোট্ট জান পাখিটার ছোট্ট ছোট্ট জিনিস দেওয়ার মতে রহমত আমায় ওপর ওয়ালা দিয়েছেন….হুম তুমি ওদের টাকা নিবে বাট সেটা খরচের জন্য না আলাদা গিফ্ট হিসেবে,আমার বাচ্চার মামা আর নানু কে বলো “এখন কিছু লাগবে না,আমার যখন দশ বারোটা বেবি আসবে ওদের দিয়ে দিতে…..দেখবো কত গিফ্ট দিতে পারো”।।।।।ওকে??”
বাচ্চার কথা শোনেই নৌশিনের কান্না ওধাও।।এক মুহুর্তেই মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো।সব কিছু ভুলে গেলো নিমিষেই মনে হলো কিচ্ছু হয় নি।অথচ একটু আগেও মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো………..
নৌশিন খুব এক্সাইটেড হয়ে সাদাদের আরও কাছে এসে বসে বললো,
“এই সত্যি,আমরা দশ টা বেবি নিবো???”
সাদাদ মনে মনে ভাবে যে নিজেই একটা বাচ্চার মতো দেখতে সে নিবে বাচ্চা।তাও আবার একটা না দশ টা……
“হুম নেওয়া যেতে পারে,যদি বাচ্চার মা ততটা সহ্য করতে পারে…বাট বাচ্চাদের মা ই তো বাচ্চাদের অপুষ্টিতে মেরে দিবে…..”

“এই না না….আমার বেবীদের খুব খাওয়াবো আমি….ছয় মাস বয়স হলেই বিফ খাওয়ানো শিখাবো।।।।সব খাবে ওরা দেখো….”
“কিহ্….?ছয় মাসে বিফ????”
“জাস্ট বললাম মানে সব খাওয়া শিখাবো ওদের….প্লিজ বেবি নিবো….”
“ওফফ….বেবী পাগলী আমার…..আগে না পেটে থাকাকালীন ওদের ঠিক মতো খাওয়াতে হবে তার জন্য তো তোমাকে খেতে হবে আর তুমি এখনি খাও না পরে তো….”
“খাবো খাবো….চলো……”
“আরে দাঁড়াও…এখনি তো বেবী আসে নি….আর খাবার উপরে আসছে…..”
“ওওও….আচ্ছা,আসুক….শোনা…বেবী কবে নিবো….”
“সেমিস্টার শেষ হোক পড়ে বলবো…..”
নৌশিন মন টা খারাপ করে বললো,
“উম উম….সেমিষ্টার….হুমমম…..”
“আর মুখ বেঁকায় না জান….পরে বাচ্চারা বেঁকুমুখী মা ডাকবে….”

“সাদাদ……!!!”(বুকে আস্তে করে ঘুষি দিয়ে,অবশ্য নৌশিনের সব ঘুষি ই এতটা ই আস্তে হয় যে এতে কোনো পিঁপড়া মরবে কি না সন্দেহ)
“আমি কিন্তু সেমিস্টারের পরে না শুনবো না……”
হালিমা বেগুন তখনি খাবার নিয়ে ঘরে ডুকেন,খাবার দিয়ে চলে গেলে,সাদাদ বলে,
“আচ্ছা,সেটা দেখা যাবে এখন খেয়ে নিবে…..”
“আ কিন্তু……”
“কোনে আওয়াজ না….জাস্ট চুপচাপ খাওয়া…….”(রাগী ভাব নিয়ে)
“ওকে…..বাট খাইয়ে দিতে হবে….আর হাত দিয়ে….চামচ চলবে না….”
“আচ্ছা???”(মুঁচকি হেঁসে)
সাদাদ নৌশিনকে খাইয়ে দিচ্ছে আর নিজেও খাচ্ছে।
অল্প খেয়েও নৌশিন না না করছিলো কিন্তু সাদাদ জোর করে খাওয়াচ্ছে ওকে।খাওয়া শেষে,

“ও মা গো…….পেট ফেটে গেলো….”
“হা হা হা…..”
“আবার হাঁসে দেখো…..এভাবে কেউ মুখে ডুকায়…..ইশশশশ পেট কত বড় হয়ে গেছে….”(পেটে হাত রেখে)
“এমনি স্বাভাবিক ম্যাডাম….”
“ইশশশশ…..”
“হ্যাঁ….এবার ঘুমাও তো অনেক কান্না করেছো আর রাত জাগলে মাথা ব্যথা করবে…….তুমি ঘুমাও আমি ফাইল টা চেক করে শুয়ে পড়বো….”
“এই….. ”
“কি হলো আবার??”
“আমার তো বুকে না শুলে ঘুম আসবে না…….”

“ও তাই বলুন….ওকে ফাইল থাকুক নিজের মতো আমার বউ ই থাকুক বুকে…..”
সাদাদ আর মুহুর্তও দেরী করলো না….শুয়ে পড়লো আর নৌশিন বিছানায় বসে ছিলো তাই এক টানে ওকে নিজের বুকে নিয়ে নিলো।
নৌশিন সাদাদকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে আর সাদাদ এক হাতে নৌশিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর অন্য হাত নৌশিনের পিঠের উপর দিয়ে রেখেছে।
“বউ…….”
“হুম….”
“বলছি যে আজ তো কালে সাজার কথা ছিলো……”
” ও হ….মনেই ছিলো না গো….”
“গো?????”

“হুম….স্বামী কে বলাই যায়…..”
“বেশ কিন্তু শুনতে….আবার বলো তো….”
“ইশশশ….পারবো না….আরে বলো না……”
“হ্যাঁ গো মনে ছিলো না….আর তুমিও তো মেকাপ আনো নি….”
“আহা গো…..সরি গো বউ…কাল আনবো….”
“এই আবার সরি????”
“ওকে ওকে…..আর হবে না গো বউ…..”
দুজনেই হেঁসে উঠে দুজনের ‘গো’ সম্ভোধনে………
“ও গো…শোনছো…..”(নৌশিন)
“হ্যাঁ গো বউ বলো…..”
“আই লাভ ইউ…..”
“আই লাভ ইউ টু,
আই লাভ ইউ টু…..”
“কি দু বার কেন বললে??”

“কারণ বিকেলে আমার বউ টা আমার আই লাভ ইউ বলে ছিলো বাট তার রাগী বর টা রিল্পে না দিয়েই ফোন কেটে দিয়েছিলো….তাই…..”
“হুমমমমম……”
“উমমমমম……”
সাদাদ নৌশিনের চুলে,মাথায় কপালে ভালোবাসার ছোঁয়া দিয়ে বললো,
“জান পাখি,এখন ঘুমাও,সকালে কিন্তু ঘুমাতে দিবো না নামায পড়ে পরতে বসবেন…..”
“এই অত সকালে??”
“হুম….অনেক পড়া মিস হলো কিন্তু…..”
“ওকে,,,ঘুম না আসলে পড়বো….”
“আচ্ছা,তোমার ঐ বদজ্জাত ঘুমটাকে আমি দেখে নিবে বাট শুনো রাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেরী না করে আবারও ঘুমিয়ে পরবে……”
“ওকে ওকে……”
……সাদাদ চুলে বিলি কেটে দেওয়ায় অল্প সময়ের মাঝেই নৌশিন গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো…..সাদাদ আবারও ঘুমন্ত নৌশিনের মায়ায় পড়ে যায়।কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে আকড়ে ধরে নেয় নিজের সঙ্গীনিকে…..পরম সুখে সাদাদও মুহুর্তেই ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়………

রোজকার মতোই একটা নতুন সূর্য উদিত হয়।সাদাদ আর নৌশিনের এই দিনটাও নামায দিয়েই শুরু হয়।সাদাদ মসজিদ থেকে নামায পড়ে এসেছে।এসে দেখে নৌশিন ঘুমাচ্ছে।আজ আর কোনো ডাকাডাকি না,স্টাডি রোম থেকে কিছু নোট আর মেনেজমেন্টের কিছু বই নিয়ে এসে বিছানায় রেখে একটানে নৌশিনকে শুয়া থেকে বসিয়ে দিলো।নৌশিন বেশ ভালো ঘুম দিয়েছিলো।তাই হঠাৎ এভাবে টেনে তুলায় ভয় পেয়ে যায়।বোধহয় চোখ থেকে পানি বের হয়ে যাবে এখনি।সাদাদের মুখের দিকে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে তাঁকিয়ে আছে।
“সরি সোনা,এভাবে তুলার জন্য…..ডাকলে ঘুম ভাঙতো বাট বই নিয়ে বসলে আবার আসতো তাই এভাবে তুললাম….যাতে ঘুম ভয় পায়…………
“সরো তো…….”

“এই প্লিজ প্লিজ জানপাখি সকাল বেলা রাগ করে না,আম সরি না??”
“এভাবে তুলে কেউ???”
“সরি তো……”
“ইশশশ…..সকাল সকাল সরি শুরু করছে…..অসহ্য….”
“ওকে ওকে আর বলবো না…..উমমমম্মা……”
কপালে চুমু এঁকে নৌশিনকে বুকে জড়িয়ে নিলো সাদাদ।
“পড়ার জন্য ডেকেছি তো…..কাল সারা রাত ঘুমিয়েছি তো….এখন পড়বে সামনে ফাইনাল সোনা,আমি চাই না বিয়ে করার পর তোমার সাবেক পজিশন টা খারাপ হয়ে যাক….সো এখন উঠো…চোখে মুখে পানি দিয়ে পড়তে বসো…….”
“ওকে…..হুমমমমমম।।।।”
“এই তো আমার কিউটি….. গো…..”
নৌশিন মিষ্টি একটা হাঁসি দিয়ে ওয়াশরোমে চলে যায়।ফ্রেস হয়ে বের হয়ে সাদাদকে রোমের কোথায় দেখতে পেলো না।

নৌশিন একটু ক্রিম টিম লাগিয়ে,চুল টা বেণুনী করে নিলো কারণ সাদাদ ওকে খোলা চুল আর বেণুনীতেই বেশি পচ্ছন্দ করে।বিশেষ করে সাদাদ চায় নৌশিন বাসায় এক সাইডে বেণুনী করে রাখুক সবসময়….এটা ওর থ্রি-পিজের সাথে বেশ যায়।নৌশিন টেবিলে বসতে চেয়েও বসলো না বিছানায় ই বই মেলে নিয়ে বসে।সামনে রাখা নোটস গুলো দেখে মুঁচকি একটা হাঁসি দেয়।অবশ্য এই হাঁসির একটা কারণও আছে,আর সেটা হচ্ছে নৌশিনের বেশির ভাগ নোটস ই সাদাদের নোটস।নৌশিন ভার্সিটিতে ভর্তির পর পর ই সাদাদের সাথে রিলেশন আর আপনারা সবাই জানেন সাদাদ তখন এমবিএ তে তো,ওর সব নোটস ও নৌশিনকে দিতো আর এতে ভার্সিটি লাইভে নৌশিনের এইটুকু খাটনি কম হতো আর কি।

নৌশিন পড়ছে……..
কিছু সময় পর সাদাদ একটা মগ নিয়ে ঘরে ডুকে।
নৌশিনের পাশে বসে……….
নৌশিন এতক্ষণে সাদাদকে খেয়াল করলো……..
“ও….তুমি!!….একি!!এতো সকালে কে তোমায় কফি করে দিলো??”
“কেন??সবসময় কারো করে দিতে হবে এমন কোনে কথা আছে??”
“মানে!!তুমি করেছো??”
“ইয়েস মিসেস…..এখন এটা খাও…..ঘুম কম হবে কজ তোমার প্রিয় ব্ল্যাক কফি……তাই না??”
“ইয়ো….তুমি আমার জন্য ব্ল্যাক কফি করছো??”
“তো??”
“না সেটা না….মানে তুমি খাবে না??আর এতটা তো আমি খেতেও পারবো না…”
“মিসেস সাদাদ…মির্স্টার সাদাদ ভালো করে জানে ওনার মিসেস কতটা খায়….আর আপনি আমাকে একটা আশা দিয়ে রেখেছিলেন মনে আছে???”
“কি???”
“উহমহু….গেস করো….চার টা বছর ওয়েটিং এ ছিলাম….”

“কি হলো মনে পড়ছে না….?”
“হ্যাঁ,হ্যাঁ মনে পড়েছে….তুমি আমার সাথে পিক তুলতে চাইতে….আমি বলতাম বিয়ের পর….তাই তো??”
“আরে না এখন পিকের কথা আমার মাথায় আসে নি….”
“তাহলে???”
“ওকে কি আর করার….. আমিই বলি…..আমি যখন তুমার সাথে চা বা কফি শেয়ার করতে চাইতাম তুমি কি বলতে??….বলতে…”আমার হাসবেন্ডের সাথেই শেয়ার করবো জীবনে প্রথম আর ও চাইলে সারা জীবন করবো বাট এখন তুমি আমার বিএফ ঠিক আছো,আর আমার বিশ্বাস আছে আল্লাহর উপর,ওনি তোমাকেই আমার জীবনে প্রথম ভালোলাগার পুরুষ করে পাঠিয়েছেন আর এই ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা টা তিনিই করেছেন তো আমি এটাও বিশ্বাস করি আমার জন্য শুধু তুমি তুমি আর তুমি ই….সো যে দিন বর হবে সে দিন পর্যন্ত ওয়েট করো….”..”
সাদাদ কথাগুলো শুনে নৌশিন হেঁসে চেলেছে।

“আচ্ছা!!তো এখন বর হয়ে গেছো…..খাওয়া যেতে পারে…..আমিও ওয়েটিং ছিলাম…..”
সাদাদ একটা টেডি সিমাইল দিয়ে কফির মগ টা নৌশিনের দিকে এগিয়ে দিলো………..
“এ মা সে কি….আগে তুমি খাও…..”
“না ম্যাম….আগে আপনি চুমুক দিন তাতে যদি আমার এই বাজে কফি টার একটু মিষ্টতা বাড়ে।।।।।।”
“ধুর।।।।তুমি না……”
“হুম…..হারি আপ….”
নৌশিন আর কথা না বাড়িয়ে কফির মগে ছোট্ট একটা চুমুক দেয়।এরপর সাদাদ…….”বাহ্,পৃথিবীর সেরা কফি এটা!!!থ্যাস্কস ফর মেইড ইট…….”
“বা রে…আমি কোথায় করলাম তুমিই তো করলে…”
“আমি তো জাস্ট করেছি বার এটার টেস্ট তো তুমি দিয়েছো সোনা…..তোমার ঠোঁটের মুধুতে……….”
“ধ্যাত……”
“ম্যাম আর লজ্জা পাস না রে,না হলে সকাল সকাল তোর পড়াটা নষ্ট হবে কিন্তএ আমি সেটা চাইছি না……”
“ইশশশশশশশ…….”
“হুুু….এবার কফি টা শেষ করে স্টাডি…..ওকে?”
নৌশিন সাদাদকে একটা চোখ মেরে বললো…”ওক্কে।”

দুজনে কফিটা শেষ করে,
নৌশিন পড়ছে আর সাদাদ ওর পাশে বসে লেপটপে কাজ করছে।
সকাল সাতটা পনেরো বাজে,
এমন সময়……..আচমকা নৌশিন সাদাদের কুলে মাথা রাখে।
“কি???স্টাডি চালু করো…..”
“ওফফফ…..সাদাদ শুধু স্টাডি স্টাডি তোমার…..একটু মাথা রাখি কুলে….এক ঘন্টার উপরে পড়লাম এতো সকালে যা জীবনেও পড়ি নি……”
“আচ্ছা!আমার মহারাণী….আপনি কি আর পরতে চাইছেন না??”
নৌশিন একটা লম্বা হামানি দিয়ে সাদাদের কমড় জড়িয়ে ধরে বললো,
“উমহু…..ঘুম পাচ্ছে…..ঘুবামো…..”

সাদাদ লেপটপ অফ করে নৌশিনকে আকড়ে নিয়ে বলছে,
“ম্যাডাম সকাল দশ টা পর্যন্ত ঘুমের অভ্যাসটা বিদায় করতে হবে তো নাকি??”
“উম….আজকে একটু করলাম,কালকে একটু।।।।তো এমনি করেই একটু একটু……. ”
সাদাদ নৌশিনের কথায় ঘর কাঁপিয়ে হাঁসতে হাঁসতে বলছে,
“ওকে সোনাপাখি……তাহলে এখন একটু ঘুমাও বাট এক ঘন্টা…….”
মুঁচকি হেঁসে নৌশিন জানায়,
“আচ্ছা….তাহলে তোমার কোলে ঘুমাবো মাথায় হাত বুলিয়ে দাও তুমি…..”
“কোলে??বাট জিমে যেতে চেয়েছিলাম আমি…….”
“রাখো তো জিম….এমনিতে ফিট তুমি……এখন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না।।।।প্লিজ প্লিজ…..”
“যো হুকুম মেরী মহারাণী………”
“উমমমম…..লাভ ইউ…..”
সাদাদ নৌশিনের মাথায় ভালোবাসার পরশ দিয়ে বললো,”লাভ ইউ টু……”

নৌশিন সাদাদের উরুতে বিভোর হয়ে ঘুমাচ্ছে।সাদাদ নৌশিনের উপর দিয়ে হাত রেখে লেপটপে কাজ করে চলেছে।………
সকাল নয়টা,
সাদাদ নৌশিনকে ডেকে তুলে।দুজনে একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে নিচে গিয়ে দেখে সবাই ওদের জন্য ওয়েট করছে,
“কি রে নৌশিন ঘুম ভাঙলো তোর?”
সবার সামনে নৌশিন একটু লজ্জা পেয়ে যায়,
“আসলে,বাসায় না আমি সকাল বেলা ঘুমাতাম….তাই আর কি অভ্যাসবসত…..বাট আমি আজ সকালে নামায পড়ে প্রায় এক ঘন্টার মতো পড়েছি……..”
“মানে আস্তে আস্তে ট্রাই করছি আর কি…….”(মাথা নিচুঁ করে)
“বউ মা,তুমি এতো জড়তা নিয়ে কেন কথা বলছো?আমরা কেউ কি কিছু বলেছি তোমাকে??তা ছাড়া আমরা সবাই জানি তুমি বাসায় রাত জেগে পড়তে আর সকাল বেলা ঘুমাতে…এখানে এসে তাই করবে এতো ফরমাল হওয়ার কিছু নেই…….”(প্রাপ্তির মা)

নৌশিনের বুকের ভেতর দিয়ে যেন একটা শীতল হওয়া বয়ে গেলো।কেন ই বা হবে না এমনটা?চাচী শাশুড়ির মুখে এমন কথা ভাগ্য না থাকলে শোনা যায় না।আসলেই বলতে হবে নৌশিন ভাগ্যবতী বটে।
“আচ্ছা,বাদ দাও……এখন সবাই খাওয়া শুরু করো….আর নৌশিন তুমি আজ পড়টা খাবে….আলুর পড়টা…..কোনো কথা শোনবো না আমি……”(সাদাদের মা)
নৌশিনের মাথায় বাস,যে তেল দিয়ে রুটি ই খায় না-সে আবার খাবে পড়টা তার উপর আলুর!!!
“মা!!!তেল তো….”
“তো??কি হয়েছে???শরীরের দিকে দেখেছো একবার বাতাস এলে মনে হয়ে উড়িয়ে নিয়ে যাবে,একটু চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া দরকার রোজ……শুধু শর্করা তে কিছু হয় না তার পাশাপাশি ভিটামিন,চর্বি,আমিষ এগুলোও খাওয়া দরকার….”

“বাব্বাহ্,জেঠি মা তুমি তো ডক্টর হয়ে গেছো……”(প্রাপ্তি)
“শোন এগুলোর জন্য ডক্টর হতে হয় না,সব শিক্ষিত মানুষ ই জানে….এখন চুপচাপ খা আর রেডি হয়ে কলেজ যা……”
“ওকে ডিয়ার…..”(প্রাপ্তি)
“রাফসা মা,নৌশিনকে দুটো পড়টা দাও…….”(সাদাদের মা)
“মা!!!……”(কাঁদোকাঁদো গলায়)
“চুপ একদাম……..আলুর পড়টা,আর তোমার জন্য বেগুন ভাজা করা হয়েছে তুমি তো এই সবজির তরকারী খাবে না এতে পেঁপে আছে….তাই তোমার জন্য বেগুন ভাজা করেছি আমি…..খাও এখন…..”
“ওয়াও….বেগুন ভাজা…আই জাস্ট লাইক ইট……লাভ ইউ মা…..”
নৌশিনের এক্সাইটেডমেন্ট দেখে সবাই হাঁসতে শুরু করে।অবশ্য একজন জ্বলতেও থাকে😂😂।
সবাই একসাথে খাচ্ছে,

বেগুন ভাজা হওয়ায় নৌশিন একটু একটু পড়টা নিচ্ছে আর অনেকটা করে বেগুন ভাজা নিয়ে খাচ্ছে।
দেখে মনে হচ্ছে,বেগুন ভাজা দিয়ে পড়টা নয়-বেচারী বেগুন ভাজা খাচ্ছে পড়টা দিয়ে……যাক খেলেই হলো।☺☺
বাট দুটো বেগুন ভাজা আর অর্ধেক পড়টা খেয়েই নৌশিনের পেট ফুলফিল।
তাই মুখে একটা কিউট হাঁসি ফুটিয়ে বলছে,
“আমার হয়ে গেছে…..”
কথা শেষ করার সাথে সাথেই সাদাদ নৌশিনের দিকে রাগী চোখে তাঁকিয়ে আছে।ভয় পেয়ে যায় নৌশিন।মাথা নিচুঁ করে বলে,
“সত্যিই পেট ভরে গেছে….”

“আর একবার বললে,সবার সামনে থাপ্পর খাবে,এক ঘন্টার জায়গায় দু ঘন্টা পর ঘুম থেকে জাগিয়েছি…..এখন যদি আমার কথা না শোনো খারাপ হয়ে যাবে খুব…..
চুপচাপ বাকী খাবার টা শেষ করো……”(সাদাদ)
“ওফফ….ভাবী তুমি না!আমি আলরেডি দুটো খেয়ে ফেলেছি….এটা নিয়ে তিনটা হবে….আর তোমার কিনা অর্ধেক টা খেয়ে ই হয়ে গেলো……খাও খাও…”
নৌশিন সাদাদের দিকে আড় চোখে তাঁকিয়ে দেখে সাদাদ এখনও ওর দিকে রাগী চোখে তাঁকিয়ে আছে।
তাই আর কোনো দিকে না তাঁকিয়ে বাচ্চাদের মতো নিচুঁ হয়ে একটু একটু করে খাওয়া শুরু করেছে।আর সেটা দেখে সাদাদ সহ সবাই মিটমিট করে হাঁসছে।

নৌশিন অনেক কষ্টে আরও একটা বেগুন ভাজা দিয়ে আধ খাওয়া পড়টা শেষ করলো।সবাই যার যার মতো খাচ্ছে।আচমকায় নৌশিন কান্না করে ফেলে।
“এই কি হলো তোর?”
সাদাদও ভ্যাবাচেকা হয়ে যায়।নৌশিনের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাঁকিয়ে থাকে শুধু কিছু বলছে না।
“কি হলো মা??”(সাদাদের বাবা)
নৌশিন ওর শশুড়ের দিকে তাঁকিয়ে মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললো,”আমি আর খাবো না,পেট ভরে গেছে…….”
সাদাদ হাঁসবে না কাঁদবে নাকি রাগ করবে সে নিজেই বুজতে পারছে না।এতো বড়ো একটা মেয়ে শশুড় বাড়িতে এসে একটা পড়টা খেয়ে আর খেতে না পাড়ার জন্য যদি সবার সামনে কেঁদে দেয় তো হাসবেন্ড হিসেবে সাদাদের কি করা উচিত সেটা সত্যিই সাদাদের জানে নেই।
সাদাদ রেগে গিয়ে,নিজের সামনে থাকা মাখনের বাটি থেকে ছুরি টা নিয়ে একটা আপেলে আঘাত করে।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“তুমি!!!!!!।”
নৌশিন সাদাদের রিয়েক্টে আরও ভয় পেয়ে যায়……
আসলে নৌশিন ইচ্ছে করেই কেঁদে দিয়েছে কারণ বেচারী আর খেতে পারছিলো না তো স্বাভাবিক ভাবে বললে সাদাদ ওকে জোর করতো রেগে গিয়ে।তাই সাদাদের ভয়ে ই কান্না শুরু করে দিয়েছিলো।বাট এতে রাগী সাদাদ যে আরও একটু রেগে গেছে।
“এই থাম তো তুই……রাগ দেখাস না সবসময়……আর নৌশিন বাচ্চাদের মতো কাঁদার কিছু নেই….হয়েছে একটা পড়টা আর তিনটা বেগুন ভাজা,আজ তবু অনেক খেয়েছিস….এখন চোখ মুছ…..পানি খেয়ে যা রোমে যা…….”
“যান পানি খেয়ে আমাকে রক্ষা করো….আর বসে থেকো না…….”(সাদাদ)(ধমক দিয়ে)
“সাদাদ,আস্তে…..এতো জোরে বলার কিছু নেই….”(সাদাদের মা)
“ও এটাই পারে,আমার তো মনে হচ্ছে নৌশিন ওর ভয়ে ই কেঁদে দিয়েছে না হলে স্বাভাবিক ভাবে ই বলতো….”(রাফসা)

“হইছে??থাক আর মাথায় তুলো না……”(সাদাদ)
“তোকে বলতে হবে না…খা তুই তোর টা…..নৌশিন যা রোমে যা……”
নৌশিন পানি খেয়ে সবার সামনে থেকে দৌঁড়ে উপরে চলে যায়।আনমনেই সাদাদ একটা হাঁসি দিয়ে দেয়…….
সাদাদের হাঁসি দেখে বাকীরাও না হেঁসে পাড়ে না।
“সত্যিই বাচ্চা একটা…..”(অরূপের বাবা)
“ঠিক বলেছো….”(রাফসা)
“ঠিক বাট সি ইজ সো কিউট……”(সাদাদ)

কথাটা শুনেই সাদাদের কাকা বিষম খায়,আর সাথে সাথে সাদাদের হুশ আসে-যে সাদাদ সবার সামনে নিজের বউকে কিউট বলছে।বিশেষ করে কাকা,বাবার সামনে।বেপারটা আসলেই হাস্যকর😂😂😂😂।
প্রাপ্তির মা প্রাপ্তির বাবাকে পানি এগিয়ে দেয়,বিষয়টাতে সবাই একটু মজা পায়।সাদাদ কোনো রকম তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে চলে গেলো নিজের রোমে।
হাঁসি ঠাট্টার মধ্যে দিয়ে সবাই সকালের খাওয়া শেষ করে যথারীতি যে যার কাজে গেলো।
যদিও সাদাদ এখন বের হয় নি,
“এই যে,দুপরে ঠিক টাইমে গোসল করবে,আর লান্স আমার সাথে,আবার কম খাওয়ার জন্য আমাকে রেখেই করো না…..”

“হুম…..”
“হুম…কিউটি…..”
“এই শোনো শোনো….”
“কি??”(আয়না দিয়ে নৌশিনের দিকে তাঁকিয়ে)
“আমি যে তখন কাঁদলাম তুমি রাগ করেছিলে তাই না??”
“হ্যাঁ করেছিলাম…বার কেন জানি রাগ টা অটোমেটিকলি উবে গেলো…..”
নৌশিন চেয়ার থেকে উঠে এসে,পেছন থেকে সাদাদকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আমি জানি তুমি আমার উপর বেশি রাগ করে থাকতে পারো না……”
“আচ্ছা!!!”
“হুম…..”
“ম্যাডাম….এবার ছাড়ুন…অফিসে লেইট হবে তো……”
“ওহ্….আচ্ছা আচ্ছা…….”
নৌশিন সাদাদকে ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ায়।বারাবরের মতোই সাদাদ নৌশিনের কপালে একটা চুঁমু এঁকে ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

নৌশিন পড়ছে,
এগারোটায় অরূপ নৌশিনের রোমে এসে নৌশিনের চেয়ারের পাশে দাঁড়ায়।কোনো কথা বলে নি,নৌশিনের বইয়ের দিকে তাঁকিয়ে আছে।নৌশিন অরূপের দিকে তাঁকিয়ে,
“এ মা…..আমার বাবু টা এসে গেছে…..”
“হুম…..তুমি পলছো??”
“হ্যাঁ সোনা……”বলেই অরূপকে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়।
“বাবু,তুমি তো স্কুল ড্রেস ও খুলো নি……”
“উম….আম্মু নাকি ছাদে গেছে কাজ কলছে….আমি তো পেন্ট খুলতে পালি না……”
“ওরে বাবু…..এসো আমি তোমাকে চেন্স করিয়ে দিবো……..”

আজকাল অরূপের খাওয়া,দাওয়া,চেন্স করা এই টুকটাক জিনিস গুলো নৌশিন ই করে দেয়।অরূপকে খাইয়ে দিয়ে নৌশিন আবার পড়া শুরু করে।যতই হোক সেমিষ্টার ফাইনালের আর বেশি দিন নেই,সো পড়তে তো হবেই।
কি জানি কি মনে করে কিছুক্ষণ পর নৌশিন দৌঁড়ে অরূপদের রোমে যায়।নৌশিন নিজের বাড়িতে যেমন দৌঁড়াদৌঁড়ি করতো এ বাড়িতে ঠিক সেভাবেই চলাফেরা করে।আর বাড়ীর সবাই এটাকে ভালোভাবেই দেখে।ওরা এমন হাঁসোজ্জল একটা মেয়েকেই সাদাদের জীবনে চেয়েছিলো।
নৌশিন রোমে গিয়ে দেখে,অরূপ ওর মায়ের সাথে শুয়ে শুয়ে স্কুলে কি হয়েছে না হয়েছে সব গলগল করে বলছে।
নৌশিনকে দেখপ একটা চিৎকার দিয়ে বলে,

“ইয়ে…..নতুন বউ…..এসো এসো……..”
নৌশিন ওদের পাশে গিয়ে বসলো,
“কি রে নৌশিন……কিছু বলবি মনে হচ্ছে…….”
“কি বলবে নতুন বউ???খুদা লেগেছে তোমাল?”
“না বাবু…….”
“ওওওওও….”(অরূপ)
“ভাবী,তোমার ফোন টা একটু দাও না…..”
“ও তুমি গেম কলবে??”
“অরূপ চুপ করো তো….বেশি পাকামো করো না……”(অরূপের মা)
“না সোনা,গেম করবো না….একটু কথা বলবো….”
“চাচ্চুল সাথে???”

“অরূপ!!!!!”(চোখ রাঙিয়ে….)(অরূপের মা) নৌশিন মিষ্টি একটা হাঁসি দিয়ে বললো, “হুম,তোমার চাচ্চুর সাথে…..বাট আব্বু তুমি কি করে জানলে?”
অরূপ মুখে আঙুল ডুকিয়ে চুষতে চুষতে ওর মায়ের পেটের ওপর শুয়ে বলছে,
“আব্বু অফিসে গেলে আম্মু যে আব্বুকে ফোন দেয়……..তাই জানলাম….”
রাফসা অরূপের কান হালকা করে মুচুড় দিয়ে বললো,
“ওরে পাঁজি,তুই কবে দেখলি??”
“ওলে,ওলে,আমি তো অনেকদিন দেখেছি….ওলে,ব্যাথা পাই….ছালো আম্মু…..”
“আহ্ ভাবী ছাড়ো……হি হি হি……”
“হি হি হি হি……..”(অরূপ)
“এই তোরা থামবি??অরূপ উঠ এখন পড়তে বসবি…..আর আপনি ঐ যে ফোন নিয়ে যান…….”
নৌশিন মুঁচকি একটা হাঁসি দিয়ে বললো,
“আচ্ছা যাচ্ছি…….”

নৌশিন রাফসার ফোন নিয়ে নিজের রোমে চলে যায়।অরূপ এখনও ওর মায়ের পেটে আগের মতোই শুয়ে আছে।
“অরূপ উঠো,বলছি না পড়তে হবে……..”
“ও আম্মু এখন পলবো না,গল্প কলি আসো……”
“কি গল্প বাবু,অনেক তো করলাম,পড়তে হবে তো…..”
“পলে পলবো আম্মু……একটু আদল কলো…….”
“কি আদর করবো তোমায় আমি??তুমি না বড় হয়ে গেছো??”
“বল হয়ে গেলে আদল কলে তো??আব্বু না তোমায় কলে??”
ছেলের কথা শোনে রাফসার মাথায় বাজ পড়ার অবস্থা………..
“মানে?কি বলছো তুমি??”
“ঐ দিন না আব্বু ছাদে তুমাকে কিসি কললো,তালপল জানো আম্মু লিদি আন্টিও চাচ্চুকে একদিন কিসি কলেছিলো বাগানে……”

কি বললো অরূপ??ওর মায়ের আত্মা কেঁপে উঠেছে বোধহয়।ছেলেকে এক ঝটকায় পেট থেকে নিজের বুকে ঝড়িয়ে নিলো,যেন ভয় না পায় তাই স্বাভাবিক ভাবে ই বললো,
“কি বললে আব্বু?তোমার রিদি আন্টি??”
অবুঝ ছেলে বুজতে পারছে না ওর মা ঠিক কি বলতে চাইছ!!
রাফসা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আবারও জানতে চাইছে,

“আব্বু কি করেছে তোমার রিদি আন্টি??”
রাফসার রিদির হাবভাব মোটেই ভালো লাগে না।আর ওনি এটাও খুব ভালো করে জানেন ওনার ছেলে কোনো কিছু না দেখলে এমন কথা কখনও বলতো না।
অরূপ তার মায়ের প্রশ্নের জবাবে ওর মায়ের বুকে শুয়ে চুল দিয়ে খেলতে খেলতে আবারও বল উঠলো,
“কিসি কলেছে……”
“কাকে?”
“চাচ্চুকে??”
“সত্যি??”
“হুম…..কালকে আগেল দিন কালকে কলেছিলো….”
“বাবু কালকের আগের দিন কালকে,মানে কি বার ছিলে সে দিন??তোমার নতুন বউ কোথায় ছিলো??”
“ঐ যে নতুন বউয়েল ভাই এলো না??”
“হুম….ঐ দিন??”
“না ওল আগের দিন…..”

“তুমি যে দিন বাগানে একা খেলতে গেলে,শরীফ চাচা গেইএ বন্ধ করে দিয়েছিলো সে দিন?”
“হুম হুম….আমাল বল বাগানের দূলে চলে গেছিলো আমি আনতে গেছিলাম…..পলে গালিল কাছে ঘুলছিলাম….আল চাচ্চুকে দেখলাম বাগানে ফোনে কথা বলছে আল তখন লিদি আন্টি চাচ্চুকে জলিয়ে ধরে অনেকগুলো আদল কলেছে……আল চাচ্চু লিদি আন্টিকে না একটা জোলে ধাক্কা মেলেছে……আমাল না খুন কষ্ট হচ্ছিলো লিদি আন্টি কত্ত কিসি কললো আল চাচ্চু একটাও কিসি কললো না…..বলো আম্মু তুমি আমায় কত আদল কলো আমিও তো তোমায় আদল কলি…..কিন্তু একটুও আদল কললো না আন্টিকে…….পলে আমি আল দেখি নি শরীফ দাদু আমাকে পেছন থেকে কোলে কলে বলেল কাছে নিয়ে গেলো……..”
রাফসা কি শুনছে?সব ওর মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছে।কি বলবে ছেলেকে?ছেলে যে আরেক প্রশ্ন করছে….
“ও আম্মু বলো,চাচ্চু টা পঁচা তাই না??আন্টিকে আদল কলে না…..আমি দাদুর কাছে বিচাল দিবো…..”
“না…..”(জোরে)

অরূপ ধমকে কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো।রাফসা আবারও ছেলেকে স্বাভাবিক করার জন্য বললো,
“না বাবু,বিচার দিতে হবে না…..আচ্ছা বাবু শোনো,তুমি কি জানে বড়দের আদর করতে নেই।।মানে আদর বলতে কিসি করতে নেই….”
“তাহলে আব্বু সেদিন যে তোমায় কললো??”
“আমি যে তোমার মতো একটা গুলুগুলো বাচ্চার আম্মু….তাই তোমার আব্বু আমায় কিসি করেছিলো কপালে…..বাট তুমি তো বললে তোমার রিদি আন্টি জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করেছে……”
“হুম তো…. আব্বু তোমাকে কপালে কিসি দিয়েছে…..আল লিদি আন্টি চাচ্চুকে সালা মুখে…..হি হি হি হি….”
ছেলের মুখে জীবনে প্রথম এই ধরনের কথা শুনে রাফসার যে কেমন অনুভতি হচ্ছে সেটা সে নিজেই জানে।কোনো মতে নিজেকে সামলে রেখেছে বাচ্চাটার সামনে…..কারণ এখানে বাচ্চা টার কোনো দোষ নেই….সে যা দেখেছে তাই বলেছে,তবে এই কথাটা নৌশিনকে বলে দিলে,ভয় ডুকে যায় রাফসার ভেতরে,

“আব্বু শোনো এগুলো পঁচা কথা….আমি তোমার আম্মু তাই তোমার আব্বু আমায় সে দিন তোমার জন্য কিসি করেছিলো….আর তোমার নতুন বউও না একদিন তোমার চাচ্চুকে তোমার মতো একটা সুন্দর ছোট্ট বাবু এনে দিবে তাই তোমার আব্বুর মতো তোমার চাচ্চুও তোমার নতুন বউয়ের কপালে কিসি করবে….ব্যাস বড় রা এইটুকু ই করে……তোমার আব্বু তো আর কাউকে কপালে কিসি করে না…”
“হুম….”
“হ্যাঁ….ঠিক তেমন তোমার চাচ্চুও তোমার নতুন বউকে ছাড়া আর কারো কপালে কিসি করবে না…..তাই তোমার চাচ্চু তোমার রিদি আন্টিকে ধাক্কা দিয়ে বেশ করেছে…….কারণ তোমার রিদি আন্টি ভুল করছিলো…”
“ওওওও…..”

“হ্যাঁ…..আচ্ছা সোনা,তুমি কি আর কাউকে বলেছো এটা??”
“না তো….মনেই ছিলো না…..দালাও নতুন বউকে বলে আসি…..”
অরূপ ওর মায়ের বুক থেকে উঠে পড়তে চাইলে ওর মা আটকে দিলো।
“না বাবু,শোনো এই কথাটা তুমি কাউকে বলবে না…….”
“কেন??”
“না সোনা,বলো না…..প্লিজ….”
“আ আ আ….আম্মু তুমি আমায় প্লিজ কেন বলছো??আমি না তোমাল ছেলে…..বাবুদেল প্লিজ বলতে নেই আম্মু……”
এমন মধুর কথা শোনে কোন মা গলবে না!
রাফসা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলছে,
“ওরে আমার বাবা রে,তুমি কত বড় হয়ে গেছো….”
“হুম হুম হুম…..”
“আমার সোনা ছেলে……”

“হ্যাঁ….তুমি আমায় প্লিজ বলবে না….আমাল কেমন জানি লাগে….ভালো লাগে না….তুমি শুধু বলবে আমি কি কলবো….তাহলেই আমি সব কলে দিবো….”
“তাই???”
“হ্যাঁ…..তুমি যা চাইবে আমি তাই দিবো….তুমি জামা চাইলে জামা দিবো,খেলনা দিবো সব দিবো তোমায়….তুমি না আমাল আম্মু…..আমাল মিস. বলেছে “আম্মুল পায়েল নিচে জান্নাত”….আল জান্নাতে নাকি অনেক মজা,সেখানে শুধু মজা আর মজা….সব পাওয়া যায় জান্নাতে…..”
“উমমম্মা….আমার মানিক টা কত কিছু জানে…..”
“হি হি হি হি…..আম্মু একটু ঘুমাই??পলে পলবো……আম্মু??”
“ঠিক আছে সোনা…..আমি ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি….কিন্তু তার আগে বলো আমাকে যা বললে সেটা আর কাউকে বলবে না….”
“আচ্ছা বলবো না….নতুন বউকেও না???”
“না বাবু….নতুন বউকে তো কোনো দিনও বলবে না……”
“আচ্ছা…..এখন আমাকে ঘুম পালিয়ে দাও….. ”
“এই তো দিচ্ছি….চোখ বন্ধ করো তুমি………”

ঐ দিকে নৌশিন সাদাদকে কল করছে।একবার রিং হওয়ার সাথে সাথেই সাদাদ ফোন রিসিভ করে,
“হ্যাঁ ভাবী,বলো…….”
“চুপ,কাকে ভাবী বলছো???”
“ও আচ্ছা…..ভুল হয়ে গেছে…..আমি ভেবেছিলাম ভাবী….এখন দেখছি ভবীটা আমার না প্রাপ্তির…..”
“হ্যাঁ…..এজন্য ফোন ধরার সাথে সাথে ভয়েস না শোনে কাউকে সমোন্ধন করা উচিত না…..”
“জ্বি ম্যাডাম….বুজেছি…..”
“ধন্যবাদ স্যার বুঝার জন্য….”
“ওয়েলকাম…..তা ম্যাডাম কি করা হচ্ছিলো??”
“হুম এইতো পড়েছিলাম….তারপর….”
“তারপর??”
“তারপর আমার স্যার টার কথা মনে পড়লো তাই ভাবীর কাছ থেকে ফোন টা আনলাম……”
দুজনে প্রায় পাঁচ মিনিটের মতো কথা বললো।

“হয়েছে হয়েছে….আর বলতে হবে না তোমার…..লান্সে তো আসছো??”
“হ্যাঁ আসবো…..”
“আচ্ছা,শোনো শোনো……..”
“হুম বলো…..”
“কাজ অনেক তোমার??”
“হুম তা একটু আছে?কেন বলো তো??আরও কথা বলবে বুঝি???”
“আরে তা না…”
“তাহলে???তবে আমি কিন্তু কথা বলতে বলতে কাজ করতে পারবো নো প্রব….”
“আরে না……শোনো আগে….”
“আচ্ছা শুনছি বলো…..”
“………”

“কি হলো ম্যাডাম???কি বলবেন??”
“বলছি যে আমার কালো মেকাপ???”
সাদাদ এক্সাইটেড হয়ে,
“হেয়…..রিয়েলি??”
“হ্যাঁ আমি এটা বলার জন্যই কল করেছিলাম…বাট বলতে পারছিলাম না…..”
“হায় আল্লাহ….নিজের হাজবেন্ডের কাছে এইটুকু বলতে এত সময়!! ”
“আরে আস্তে আস্তে হয়ে যাবে…..”
“হুম…..হলেই আমার উপর বরকত আসবে…..”
“যাও তো….বেশি বেশি…”
“নো ম্যাম….কম কম…..তবে আমার কেশবতীকে কালো সাজে দেখার জন্য তর সইছে না আমার…..”
“এই আমি রাখছি….বাই….”
“বাপরে ফোনেও লজ্জা!!!”
“ধুর….বাই….আসসালামু আলাইকুম….”
সাদাদ ব্লাশিং হয়ে সালামের জাবাব দিলো,
“ওয়ালাইকুম আসসালম……”

“ছোট বউ মা……..ছোট বউ মা…….”
নৌশিনের শাশুড়ি নৌশিনকে ডাকছে,
নৌশিন শাশুড়ির ডাকে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসে।
“হ্যাঁ মা,ডাকছিলে?”
“হ্যাঁ রে মা……মা একটা কাজ করে দিবে?প্রাপ্তি টা বাসায় নেই….বড় বউ মা রান্না ঘরে….”
“মা বলো তুমি কি করবো আমি…..”
“রোম থেকে গরম পানির ব্যাগ টা একটু এনে দাও না মা,কমড় টা বড্ড ধরেছে…..”
নৌশিন আর কিছু না বলে,রোম থেকে গরম পানির ব্যাগ নিয়ে আসে।
“না না মা তোমায় দিয়ে দিতে হবে না,আমায় দাও আমি পারবো…..”
“উফফ মা চুপ করে বসো তো…..একদম নড়বে না,আমি দিয়ে দিচ্ছি…..”
“আচ্ছা,আচ্ছা দাও দাও……”
নৌশিন বেশ খানিকটা সময় ওর শাশুড়ির কমড়ে তাপ দিয়ে দিলো………

“হয়েছে মা…..আর দিও না…..”
“আচ্ছা….আমি রেখে আসি এটা….তুমি বসো…”
“না রোমে রাখতে হবে না….তুমি রান্না ঘরে রাখো পানি টা চেন্স করে দিবে তোমার কাকি…..”
“আচ্ছা মা…..”
নৌশিন রান্না ঘরে গিয়ে ব্যাগ টা রাখে।তখন ওর ভাবী রান্নায় ব্যস্ত।
“ভাবী কি রান্না করো??”
“এই তো রুই মাছ করছি….তুই খাস এটা??”
“হ্যাঁ,তবে ভাজি করলে আর কিছু করলে না……”
“তুই না…..”
“হি হি হি……”
“আচ্ছা,দাঁড়া তোকে একটা টুকরো ভাজি করে দিচ্ছি….”

“আরে না ভাবী করতে হবে না…..তুমি ডাল করেছো না,সেটা দিয়েই খাবো….আর দেখি কি কি করেছো……বাহ!ছোট মাছ…ওয়াও আমার এটা হলে আর রুই মাছ লাগবে না ভাবী……….ডাল সাথে ধনে পাতা দিয়ে ছোট মাছ….ইশশশ দুপুরের খাওয়া টা জাস্ট জমে যাবে আমার…..”
“পাগলী একটা…….তবে রুই মাছও খেতে হবে…..”
“ওকে ওকে খাবো।।।…..”
“হুম….আবার সকালের মতো কান্না করে দিস না….তাহলে সাদাদ থাপ্পর দেওয়ার আগে আমি দিয়ে দিবো……”
“আচ্ছা দিও…..ভাবী সরো না রুই মাছ টা আমি রাঁধি….”
“কিহ??”

“হুম….তুমি তো সব কেঁটে রেখেছো….আমি শুধু মাছ গুলো ভাজবো দেন তরকারী টা বসাবো….প্লিজ প্লিজ……”
“পাগল….কতগুলো মাছ ভাজতে হবে….সর তুই যা পড়তে বস….গোসল করেছিস??”
“উফফ…ভাবী…রাখো তো পড়া।।এতক্ষণ পড়ছিলাম আর গোসল তরকারী টা করে করবো সরো তুমি….”
“মাইর খাবি….এতটা তরকারী তুই করতে পারবি না বোন…..কষ্ট হবে তোর….তুই যা গোসল কর…একটু পরে আযান দিয়ে দিবে…….”
“প্লিজ প্লিজ ভাবী।।।।আমি পাড়বো….বাসায় করতাম মাঝে মাঝে….বেশি মজা হতো না তবে খাওয়া যেতো….আমি তো এই বাড়িতে এসে কিচ্ছুই করি নি এখনও সব তো তুমি আর কাকি ই করো…”
“হ্যাঁ তোমার করতে হবে না….আপনার না এক্সাম….”
“ভাবী….আজ ই।।।। একটু করবো….প্লিজ আর না করো না…..”
“আচ্ছা ঠিক আছে…..শুনবি না তুই জানি…..”
“থ্যাস্কস ভাবী….এখন সরো……”

“সরতে হবে না….আমি মাছে মসলা মেখে দিচ্ছি….তোদের বাসায় তো লোক কম ছিলো এখানে দেখছিস কত লোক….আর তাই কতগুলো মাছ…..তুই লান্সে শুধু বাবা আর তোর দাদা ভাই আসে না তবুও ওদের জন্য করতে হয়… রাতে এটা খাবে ওরা…..”
“আমি পারবো কোনো প্রব হবে না…..”
“আমি জানি তুই পারবি…..তবুও দুটো চুলা জ্বালাই…..দুটোতে দুজনে মাছগুলো ভেজে নিই….তারপর তুই রান্না করিস…….আর তোর খাওয়ার জন্যের টাও আমি আলাদা করে ভেজে দিচ্ছি ভালো করে…..”
“আচ্ছা……….”

“বাহ্,নৌশিন তুই কিন্তু আসলেই রান্না টা বেশ ভালো করিস,সবাই কি প্রশংসা করলো………..”
“একদম না,মোটেই ভালো হয় নি……যেন আমার মন খারাপ না হয় সেজন্য সবাই উপরে উপরে ভালো বললো।”
“বেশি বুঝিস না,পারলে নিজে খেয়ে দেখ……”
“ইইই…..আমি শুধু রুই মাছ ভাজা খাই,সেটা দিয়ে আর কিছু না……….আর শোনো যদি ভালো হতোই তাহলে সাদাদ কেন একবারও বললো না যে ভালো হয়েছে……আগে যখন মাঝে মাঝে ওকে কিছু করে খাওয়াতাম তখন তো কম ভালো হলেও বলতো জোশ হয়েছে……..”
“আরে বোকা মেয়ে,এখন তুই রোমে যা দেখবি ঠিক বলবে ইভেন এতো সুন্দর একটা ডিস খাওয়ানোর জন্য গিফ্ট ও দিতে পারে…..যা যা……”

“ওহ….ভাবী!!!তুমি না……আসলেই…..”
“হয়েছে,এখন যা এগুলো আমি গুছিয়ে রাখছি…….”
“থাক না করি একটু,ও তো এখন আর অফিসে যাবে না……..”
“কেন??”
“কাল জরুরি একটা মিটিং আছে নাকি তাই পুরুনো ফাইল এনেছে বেশ কয়েকটা তো সেগুলো বাসায় ই চেক করবে……”
“ও…..আচ্ছা….ঠিক আছে তুই যা পড়তে বস……..”
“প্লেট গুলো গুছিয়ে রাখি??”
“না সার্ভেন্ট আছে অনেক….ওদের বলে দিচ্ছি ওরা এগুলো ধূয়ে দিবে তারপর আমি জায়গা মতো রেখে দিবো তুই যা পড়তে….”
“আচ্ছা,আচ্ছা……যাচ্ছি……..”

নৌশিন রোমে গিয়ে দেখে সাদাদ সোফায় বসে ফাইল দেখছে………
নৌশিনের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলছে……সে হুট করেই সাদাদের হাত থেকে ফাইল টা নিয়ে বিছানায় ছুড়ে মারে।
“আরে,জান কি করছো??কাজ করছিলাম তো……”
নৌশিন সাদাদের পাশে গা ঘষে বসে বলছে,
“চুপ,শুধু কাজ আর কাজ…….”
সাদাদ নৌশিনের কমড় জড়িয়ে ধরতেই নৌশিন সাদাদের কাঁধে মাথা রাখলো।সাদাদ নৌশিনের মাথায় একটা চুমু খেয়ে বলছে,
“আচ্ছা!!!তাহলে আমার জান টা কে আদর করবো বুঝি??”
“ইশশশশ…..ঢং……এতো কাজ করতে হবে না……এখন বলো আমার মেকাপ এনেছো???”
“ইয়েস মিসেস…..”
নৌশিন খুব খুশি হয়ে সাদাদের কাঁধ থেকে মাথা তুলে জানতে চাইলো,

“কোথায় রেখেছো??”
“এখন সাজবে??”
“হুম হুম দাও…… “্
“না ম্যাম…..”
“কেন???”
সাদাদ আবার নৌশিনকে কমড়ে হাত রেখে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।
“আমি যে তোমার রান্না নিয়ে তখন কোনো কমল্পিমেন্ট করলাম না…..তোমার খারাপ লাগে নি???”
“এটা কোন ধরনের কথা??এখানে খারাপ লাগার কি আছে??আর এমন তো না যে খাওয়া যায় নি ডিস টা।বেশি ভালো না হলেও মিনিমাম খাওয়ার যোগ্য তো হয়েছিলো।আর সবাই তো প্রশংসা ই করছিলো…..
আর তুমি মুখে কিছু না বললেও আমার দিকে তাঁকিয়ে সুন্দর একটা হাঁসি দিলে না তখন??আমি তাতেই বুঝেছি রান্না টা তোমার ভালো লেগেছে…..”
“ওরে আমার সাইকোলজিস্ট রে…..হাঁসি দেখেই মনের কথা বুঝে যায়……”
“হুম….ভালোবাসি যে…….খুব খুব……”
“ভালো তো আমিও বাসি…..তোমার প্রেমঘোরেই তো সারা টা বেলা কাটে…….তবুও আগে যখন খাওয়াতে তখন তো কমল্পিমেন্ট দিতাম আর আজ এই বাড়িতে প্রথম রান্না করলে তার জন্য তো কিছু বলা উচিত ছিলো আমার….তাই না?”

“ঐ আমি কি সবার প্রশংসা পাওয়ার জন্য রান্না করেছি নাকি…..আমি তো আমাদের বাসায়ও মাঝে মাঝে রাঁধতাম….তুমি তো না করতে….আর সে দিকে মা ও বেশি করতে দিতো না…..তবে আমার যখন খুব ইচ্ছা হয় তখম করি…..আমার ভালো লাগা থেকে করি,যেন অন্য জন খেতে পারে…..কিন্তু প্রশংসা পাওয়ার লোভে না……..আর আমি তো তোমার মুখ দেখেই বুজেছিলাম খাওয়া যায় আমার রান্না টা।আর এ বাড়িতে প্রথম করার ক্ষেত্রে যদি বলো এরা সবাই আমার হাতের রান্না আজ প্রথম খাচ্ছে বাট তুমি তো আগে অনেকবার খেয়েছো….তা ছাড়া যদিও আমি আশা করেছিলাম তুমি কিছু বলবে বাট তোমার হাঁসি টা আমার কাছে মুখে বলা সব বাক্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে মনে হয়েছে…….”
সাদাদের ভেতর টা মহা আনন্দে উৎসুক হয়ে উঠে।হবেই বা না কেন??এমন জীবনসঙ্গী কত জনে পায় আজ কাল….!!!

“কি হলো কি ভাবছো??”
সাদাদ নৌশিনের দুগালে হাত রেখে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললো,
“ভাবছিলাম,আমি সত্যিই কত ভাগ্যবান যে কিনা এমন একজন মানুষ পেয়েছি জীবনসঙ্গী হিসেবে……”
নৌশিন মিষ্টি একটা হাঁসি দিয়ে প্রতিত্তুরে জানালো,
“আমিও খুব ভাগ্যবান তোমার মতো একজন স্বামী পেয়ে…….”
সাদাদ নৌশিনকে ছেড়ে দিয়ে,সোফা থেকে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো,
“আমার কিউটি টা যেহেতু এতো কষ্ট করে এতো সুন্দর করে রান্না করেছে,তাহলে কিউটি টাকে একটা ছোট্ট গিফ্ট তো দিতেই হয়…….”

নৌশন কথাটা শোনার সাথে সাথে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়, “সত্যি???”
গিফ্ট পেতে কার না ভালো লাগে!আর সেটা যদি হয় সবচেয়ে প্রিয় মানুষ টার দেওয়া তাহলে তো আর কোনো কথা থাকে না।
“কোথায় আসছো??”
“কেন???তুমি তো আলমারীর দিকেই যাচ্ছো…সেখানে নিশ্চয় আমার জন্য গিফ্ট রাখা?”
“উমহু….আসলে দিবো না…..এখানেই চোখ বন্ধ করে দাঁড়াও……”
“উমমম…..এটা আবার কেমন??”
“এটা বেস্ট জান।।।।।চোখ বন্ধ করো আর এখানে দাঁড়াও চুপচাপ……..”
“ওকে…..বাট তাড়াতাড়ি দিবে কিন্তু…….”
“ওকে জানু…….”

সাদাদ আলমারী থেকে একটা বক্স বের করে আনে,সেটা খুলে নৌশিনের ভেতরের জিনিস টা নৌশিনের হাতে দিতেই নৌশিন হাত দিয়ে বুঝার চেষ্টা করে জিনিস টা কি?।বুজতে এক মুর্হুত সময় লাগলো না নৌশিনের…..
চোখে মুখে রাজ্য জয়ের হাঁসি…..সাদাদ বললো,
“ব্যাস….এবার চোখ খুলো…..”
চোখ খুলে তো নৌশিন আরও খুশি……
“ওয়াও…..এটা আমার??”
“জ্বি মেরী মহারানী……”
“ওয়াও,ওয়াও……কি সুন্দর আই ফোন….বাট আমি তো হাতে নিয়ে ভেবেছিলাম তুমি আমার জন্য এমনি নতুন ফোন এনেছো…..বাট আই ফোন আনেছো সেটা ভাবতেই পারি নি……আমার খুব খুব খুব খুশি লাগছে………”
নৌশিন সাদাদকে জড়িয়ে ধরে সাদাদের গালে একটা কিস দিয়ে বললো,”থ্যাস্ক”
“ওয়েলকাম রানী…..”

“হি হি হি……আচ্ছা….তোমার টা??”
“হুম….সেটাও আছে….একটা স্টাফ কানাডা তে ছিলো….তো ফোন ভাঙার পর ওকে টাকা সেন্ড করলাম সেখান থেকে দুটো আই ফোন সেভেন আনতে……কারণ আমার জানটার তো আগের একটা আই ফোন ছিলো যেটা ভার্সিটি থেকে চুরি হয়ে গেছিলো আর আমার জানটা সেদিন আমার সামনে কেঁদে দিয়েছিলো…….”
“কাঁদতাম না তো কি করতাম…..ভাইয়া গিফ্ট করেছিলো আমায়…..আর সেটা আমার সেকেন্ড আই ফোন ছিলো…..ফার্স্ট টাও চুরি হয়ে গেছিলো…..”
“ইয়াহ….আই নো…..”
“তুমি কি করে জানলে??”
“তুমি ই সে দিন কান্না করতে করতে বলছিলে…..আমি সেদিন ই কিনে দিতাম বাট তখম বাবা আমাকে এতো টাকা দিতো না আর আমিও বাবার কাছে চাইতাম না দরকার ছাড়া……আর কোচিং করিয়ে যা টাকা পেতাম সব তো রাফিন কেই দিতাম বাট শালা যার জন্য এতো করলাম সে ই কুড়াল টা মারলো……”

“ওকে বাদ দাও সে সব মানুষের কথা………”
“তা তো অব্যশই……এখন বলো,কেমন হয়েছে এটা??”
“খুব খুব সুন্দর…..দুটো ফোন হারানোর পর মা তো বাবা আর ভাইয়াকে কড়া করে জানিয়ে দিয়েছিলো “মেয়ে কে আর একটা আই ফোন ও কিনে দেওয়া যেন না হয়…..প্রতিবার ই চুরি হয়ে যায়….এতো টাকার জিনিস দেখে রাখতে পারে না……শুধু শুধু দেওয়ার দরকার নেই…..লেপটপ আছে সেখানে পড়ার জিনিস দেখে নিতে পারবে আর বাজারে অনেক ভালো এনড্রোয়েড আছে সেগুলো একটা কিনে দাও….চুরি হলেও কম টাকা যাবে…..”আর তারপর এনড্রয়েড ই কিনে দিতো….কি করে যে ফোন ব্যাগ থেকে নাই হয়ে যেতো আমি বুজতেই পারতাম না তাও আবার প্রথম টা যেদিন ভার্সিটিতে ভর্তি হতে আসি বাবার সাথে সেদিন,ফুচকা খাচ্ছিলাম মনের সুখে বাবাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে….আর সেকেন্ড টা তো তুমি জানোই ক্লাসে…..আমি তো ভেবেছিলাম তুমিও আমাকে কোনো দিন আই ফোন দিবে না…..বাট দিয়ে দিলে….আম সো সো সো হ্যাপী সাদাদ…..থ্যাস্ক দিবো না কিন্তু আর…”

“ওকে ওকে….ম্যাম নিজের লোককে ধন্যবাদ দেওয়া কিছু নেই…….আর শোনো তোমার পুরানো ফোন টা আমার কাছে থাকবে…..”
“সেটা কি আর কি করবে??তোমার ও তো ফোন আছে….”
সাদাদ নৌশিনের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
“সেই ফোন টা তো আমার নৌশিনের অনেক দিনের ছোঁয়া আছে।তাই যখন অফিসে বা বাইরে থাকবো সেটা আমিও ছোঁয়ে দেখবো….আমার জানের ছোঁয়া বলে কথা…….”
“উমমমমম্মা……..”
“ইটস ভেরী বেড…..”
“কোনটা??”
“এই যে খালি গালে চুমু দিচ্ছো…..এখানটায়(ঠোঁটে হাত দিয়ে)একটু দাও…….”
“ইশশশশ শখ কত!!”
“আচ্ছা তাই না????”
“হুম তাই……”
“দিবে না তো???”
“দিলাম না??”
“সেটা গালে আমি যেখানে চাইছি সেখানে দাও……”
“ইইনন না পারবো না আমি……”

সাদাদ নৌশিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর নৌশিন পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার ফন্দি আটছে…….
“সত্যি তো???”
“হ্যাঁ সত্যি……” বলেই নৌশিন দরজার দিকে দৌঁড় দিতে যাবে তখন সাদাদ নৌশিনের হাত ধরে ফেলে।এক হাতে নৌশিনকে ধরে রেখে অন্য হাতে দরজা টা লক করে দিলো…….।
দুহাতে নৌশিনের কমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলছে,
“আমার টা আমি আদায় করতে জানি সেক্সি……..”
নৌশিন লজ্জায় লাল গোলাপী হয়ে যাচ্ছে একদম।সাদাদ নৌশিনের হাত থেকে ফোন টা নিয়ে সোফায় ছুড়ে মারলো।ওড়না টা এক টানে ফ্লোরে…..চমকে ওঠে নৌশিন বললো,
“সাদাদ কি করছো..???”

সাদাদ নৌশিনের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো,
“হুসসস……কোনো কথা না,কাজ করছিলাম করতে দাও নি…..কাজে পেয়েছিলো সে নেশা কাটিয়ে দিয়েছিস….এখন যে তোর নেশা পেয়েছে আামকে…….সেটা ছাড়াতে দিচ্ছি না আর…….”
নৌশিন নিজেকে ছাড়ানোর জন্য কাঁচুমুচোঁ করছে।কিন্তু পারছে না……”
“প্লিজ এমন করে কেঁপো না…..নরম ছোঁয়ায় আমি যে বদ্ধ পাগল হয়ে যাবো…..শেষ করে দিবো তোমায় জ্বালিয়ে পুরিয়ে…….”
“এ খ ন ত তো বি বি কাল……”

নৌশিনেরও ঘোর লেগে গেছে সাদাদের মতো কথা আটকে আসছে ভেতর থেকে।চির চেনা একটা ঢেউ বয়ে যাচ্ছে ভেতরে তবু নিজেকে সামলাতে পারছে না।
“চুপপপ…..বিকেলে হারাবো তোমায়…..শুধু রাতে হারতে ইচ্ছে করে তাই না সুন্দরী???”
ইশশশ,কি বলে সাদাদ?নৌশিন তো লজ্জায় শেষ……
নৌশিন কোনো কথা বলছে না……সাদাদ আস্তে আস্তে নৌশিনের ঠোঁটের দিকে মুখ এগিয়ে নিচ্ছে…….বেশি সময় লাগালো না-দুজোড়া ঠোঁট এক হয়ে গেলো…..ভালোবাসায় মাতোড়ারা হয়ে গেছে সাদাদ…..নৌশিনও তাল সামলে নিয়েছে সাদাদের সাথে….শার্ট খামছে ধরে নিজেও হারিয়ে যাচ্ছে কোনো এক অজানায়…………..

সাদাদ নৌশিনের ঠোট ছেড়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে নেয়…..নৌশিনকে আকড়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিছানার দিকে……..নৌশিন এবার সাদাদকে আটকাতে চাইছে…..
সাদাদ নৌশিনের গলায় হারিয়ে গেছে-নৌশিনেরও হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করেছে ভালোবাসার মানুষটার সাথে তবুও নৌশিন সাদাদের চুল আকড়ে ধরা অবস্থাতেই অনেকটা কষ্ট করেই বলে ফেললো,”সাদা দ দিনে দিনের বেলা…..।”
কথাগুলো কেমন যেন আটকে আসছিলো নৌশিনের।এতক্ষণে সাদাদ আর নৌশিন বিছানায়…..সাদাদ নৌশিনের উপর শুয়ে নৌশিনকে আদরের ছোঁয়াতে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে….নৌশিনও বাঁধা দিতে পারছে না আর……….ইচ্ছে করছে না বাঁধা দিতে…..কেন দিবে?স্বামীর এমন ভালোবাসায় কে না হারিয়ে যেতে চায়….হোকা সেটা দিনের আলোয় বা রাতের কালীমায়……………….

প্রেমঘোর পর্ব ৪৩+৪৪+৪৫

রোমের দরজাটা লাগানো….বারান্দার দরজাটাও চাপিয়ে দেওয়া…জানালার পর্দাগুলো বিকেলের মৃদু বাতাসে বন্র্ কাঁচের ভেতরে থেকেও উড়ে আসছে……….
এমন সময়ে নৌশিনের পোশাক হয়ে আছে তার প্রিয়তম সাদাদ……..মুহুর্ত টা ভালোবাসার…..হারিয়ে যাওয়ার….ঘোর টা প্রেমের……আর সুখ টা জান্নাতের টকুরো টুকরো সুখের আভাস দিয়ে ঘেরা……..
দুজনাতে মেতে গেছে দুজনেই………ইশশশ!নৌশিনের এমনিতে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী বলে মনে হয়….আর সাদাদ যখন এমন করে ভালোবাসতে থাকে তখন মনে হয় সুখটা বোধহয় শুধু ওর জন্যই……..

প্রেমঘোর পর্ব ৫১+৫২+৫৩+৫৪