এলিজা পর্ব ৫৮+৫৯

এলিজা পর্ব ৫৮+৫৯
Dayna

অপূর্ব দ্রুত ঘুম থেকে উঠে।হাত মুখ কোনভাবে ধুয়ে ল্যাবে চলে যায়। অনেক পুলিশ জড়ো হয়েছে।লা,শ এখনো ছাঁদে।জাকির এর মেয়ে ল্যাবের সামনে বসে অঝরে কাঁদছে। পুলিশ বাহিরের কাউকে ঠুকতে দিচ্ছে না। শ্রাবন অপূর্ব তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয়। চারপাশে অনেক মানুষ।সবাই আতংকি,ত।ল্যাবে ঠুকে কাউকে হ,ত্যা করেছে এটা কোন সাধারণ বিষয় নয়। অপূর্ব শ্রাবন উপরে যায়। চারপাশে পুলিশ।অন্যান্য ফরেন্সিক ডাঃ রা জাকির কে দেখছে।কোন এবিডেন্স যদি অপরাধীরা রেখে যায়। দূরেই পরে আছে জাকির এর মৃ,ত দেহ।কতই না কষ্ট পেয়েছে।বাচার জন্য কত না চেষ্টা করেছে।হায়,না গুলো একেও বাঁচতে দেয়নি।এসব ভাবতে ভাবতে শ্রাবন পাশ থেকে বললো, ভাই, আমার মনে হয় এটা সম্পুর্ন পরিকল্পনা করে করা হয়।, সে জেনে গিয়েছিল,কে কয়েনটা চু,রি করে।আর এরপর সমস্ত এবিডিয়েন্স চু,রি করে ,সাথে তাকেও শেষ করে দেয়।এসব খুব ভেবে চিন্তে করা হয়।

অপূর্ব চিন্তা, ভঙ্গিতে ভ্রু কুঁচকে বললো, সিসিটিভি ক্যামেরা গতকাল বন্ধ ছিল। তারমানে এগুলো আগে থেকেই কেউ পরিকল্পনা করে রেখেছিল। অপূর্ব ধিরে ধিরে জাকির এর লা,শটির কাছে এগোয়।তার ডান হাতের কাছে ছোট করে লেখা দ্যা গোল্ড”অপূর্ব বিষিন্নত হয়।এটার মানে কি হতে পারে।এর দ্বারা কি বুঝবো।এসব ভাবতেই তৎক্ষণাৎ কিছু কনস্টেবল এসে লা,শ নিয়ে যায়। অপূর্ব হতাশায় পরে যায়। শ্রাবন খেয়াল করলো অপূর্বর চোখ মুখে চিন্তার ছাপ। শ্রাবন বলল, ভাই তুই বাড়ি ফিরে যা।আমি এদিক টা সামলে নিচ্ছি। অপূর্ব শ্রাবন এর দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে।ল্যাবের নিচে চলে আসে। অপূর্ব বললো,থানাতে কিছু কাজ আছে,পরে ফিরবো বাড়ি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এলিজা জয়ার জন্য গরম পানি করছে।কমড়ে সেক দিবে।জয়ার শরীর টা ধিরে ধিরে খারাপ হচ্ছে।বুকে ব্যাথা করে। ঔষধ খেয়েও কাজ হয়না।এলিজা গরম পানি নিয়ে উপরে যেতেই বাহির থেকে কাঠ কাটার আওয়াজ আসে।এলিজা দাড়িয়ে যায়।বাহিরের দিকে পরোক্ষ করলেই দেখতে পায় বায়েজিদ কে।এলিজা ভ্রু কুঁচকে দেয়। মনস্থির করলো বায়েজিদ এর সাথে এখনি কথা বলবে। গরম পানি টা টেবিলের উপর রেখে বাহিরে বের হয়। আশেপাশে জাহাঙ্গীর কে পরোখ করে।সে কোথাও আছে কিনা।বাড়ির কাজের লোকদের সাথে কথা বলা জাহাঙ্গীর পছন্দ করে না।এলিজা বায়েজিদ এর দিকে এগোয়, বায়েজিদ বসে বসে লাকরী কাটছে।এলিজা পেছনে দাঁড়িয়ে। বায়েজিদ এলিজার পদর্পন বুঝতে পারে।এলিজা বলল, বায়েজিদ। বায়েজিদ কাঠ কাটা রেখে, ধিরে ধিরে পেছন ঘুরে।এলিজার দিকে তাকিয়ে অমৃদু হাঁসি দেয়।বললো,আপা তুমি এখানে?

এলিজা মৃদু হেসে বললো,তোর কিছু দরকার কিনা জানতে এসেছি। বায়েজিদ মৃদু হাসে। এলিজা আগ্রহ ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলো, তুই সেদিন রাতে ওরকম আচরণ করলি কেন? কিছু হয়েছিল?নির্ভয় বল। বায়েজিদ হঠাৎ মুখের রঙ বদলে ফেলে।এলিজা দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করলো,বল কি হয়েছিল!
তৎকালীন সময় জাহাঙ্গীর পেছন থেকে গলায় কাশি দিয়ে,কর্কট মেজাজে বললো, এই সাত সকাল কাজের লোকের সাথে কি! তোমার শ্বাশুড়ি ডাকছে। ভেতরে যাও।এলিজা জাহাঙ্গীর এর কথা মত চলে যায়।

অপূর্ব বাড়ি ফিরে।কোন কিছুই তার ভালো লাগছে না। চারদিকে যা হচ্ছে।কোন পদক্ষেপ নিতে পারছে না। অপূর্ব বৈঠকখানায় কিছুক্ষণ বসে থাকে। কোনভাবেই ভাবনা থেকে বেরোতে পারছে না। অপূর্ব একা একা বিড়বিড় করে বললো,এলিজাকে দরকার,ওর কন্ঠস্বর পারবে আমার মস্তিষ্কের নিউরন কে সতেজ করে দিতে।হতাশা মুক্তির রাস্তা শুধু মাত্র আমার ম্যাডাম।অপূর্ব এলিজাকে এদিক সেদিক পরোক্ষ করে কোথাও দেখতে না পেয়ে ঘরে যায়। সেখানেও এলিজা নেই।কোথায় যাবে,পাখির ঘরে যায় সেখানেও নেই। তৎক্ষণাৎ ছাঁদে চলে যায়।এলিজা ছাঁদে। অপূর্ব অপলকে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এলিজা উল্টো দিকে ঘুরে, ভেজা চুল ঝাপটাচ্ছে। এলিজার পরনে গোলাপি রঙের শাড়ি। অপূর্ব পেছন থেকে দেখছে।কমড় থেকে আঁচল টা কিছুটা নিচের দিকে রেখে দেয়া।দুপুর বেলার কড়া রোদ।কিছুটা শীতল হাওয়া বইছে।

অপূর্ব এলিজার কাছে এগোয়।এলিজার কাছে গিয়ে কাছ থেকে এলিজার চুল মোছা দেখছে। এলিজা চুল গুলো বা দিকে ঝাপটা দিতেই, অপূর্বর মুখে লাগে সমস্ত চুল।এলিজা পেছন ঘুরে। এলিজা সান্ত স্বরে বলল, আপনি এখানে? কখন এলেন?
অপূর্ব মৃদু হেসে বললো,সেই কখন। তোমার চুলের দর্পন দেখছিলাম। ভালোই লাগছিলো। শেষমেশ চুলের মার ও খেলাম। এলিজা সামনে ঘুরে মৃদু হাসে। অপূর্ব এলিজার পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে, এলিজা এই এই করে ওঠে।বললো, আপনি বাহির থেকে এসে গোসল না করেই আমায় জড়িয়ে ধরলেন।কত ধুলোবালি ।অপূর্ব মৃদু হেসে বললো, আমার বউকে যখন খুশি জড়িয়ে ধরবো। আমার শরীরে বাহিরের ধুলোবালি তো কি হয়েছে।দরকার হলে দু’জনে আবার একসঙ্গে গোসল করবো।এলিজা অপূর্বর হাত সরিয়ে দেয়। মৃদু হেসে বললো,ঘরে চলুন।কাজ আছে।

মায়ের শরীর টা ভালো নেই। দুপুরে তার ঔষধ আছে দিতে হবে।এলিজা ঘরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।অপূর্ব পেছন থেকে এলিজার চুলের দর্পন দেখে।এলিজা জয়ার ঘরে যায়। অপূর্ব গোসল করে সাদা পাঞ্জাবি,সাথে পাজামা পরে। ভেজা চুল। জোড় ভ্রু।ডান ভ্রুর উপরে কালো ছোট একটা তিল।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অপূর্ব নিজেকে দেখছে। এলিজা কে ডাকতে থাকে কোন সাড়া নেই। তৎক্ষণাৎ মনে পরে এলিজা জয়ার ঘরে। অপূর্ব ঘর থেকে বেড়িয়ে জয়ার ঘরের উদ্যেশ্যে আসে। অপূর্ব জয়ার ঘরে আসে।জয়ার শরীর টা ভালো নেই। এলিজা হাত পা টিপে দিচ্ছে। অপূর্ব জয়ার গা ঘেঁষে বসে।জয়ার শরীরের অবস্থা কি অপূর্ব জিজ্ঞেস করে।জয়া আদুরে গলায় উত্তর দেয়।

অপূর্বর মাথায় হাত বুলিয়ে জয়া দোয়া করেন। অপূর্ব মৃদু হাসে। কিছুক্ষণ জয়ার সাথে কথা বলে।ফর্সা গায়ের রং, সাথে সাদা পাঞ্জাবি,জোড় ব্রু , দেখতে অপূর্ব কে খুব মায়াবি লাগছে। এলিজা আর চোখে দেখছে।অপূর্ব জয়ার সাথে কথা শেষ করে স্থান ত্যাগ করে।জয়া উল্টো দিকে ঘুরে সোয়। এলিজা বললো,, আম্মা চুল টা বেঁধে দেই। আপনি সুয়েই থাকুন। উঠতে হবে না। এলিজা জয়ার চুল টা আঁচড়াতে আঁচড়াতে চোখ পরে দরজায় দিকে অপূর্ব দরজার ওপাশ দাড়িয়ে আছে। অপূর্ব ইশারা করে ঘরে যাওয়ার জন্য। এলিজা অপূর্বর কান্ড দেখে মিটিমিটি হাসে। এলিজা না সূচক মাথা নাড়ে।জয়াকে রেখে যাবে না। অপূর্ব মুখ দিয়ে হিস হিস শব্দ করে আবার ও ডাকে।

এলিজা আর চোখে দেখে।তখন জয়া উল্টো দিকে ঘুরেই বললো, অপূর্ব ডাকছে তুই যা।আমি ঘুমাই কিছুক্ষণ।দেখ অপূর্বর কি দরকার। এলিজা হতভম্ব হয়ে যায়। আমতা আমতা করতে থাকে। এলিজা নিজের ঘরে চলে আসে। অপূর্ব এলিজাকে দেখে খাটের উপর কাদ হয়ে শুয়ে পরে। এলিজা ভ্রু কুঁচকে বললো, আপনি মায়ের ঘর থেকে এভাবে ডাকলেন কে?মা কি মনে করলো! সবসময় আপনি আমাকে অন্যর সামনে লজ্জা দিতে পছন্দ করেন। অপূর্ব মৃদু হেসে বললো,ম্যাডাম আপনাকে ছাড়া যে এক মুহুর্ত থাকতে পারি না। একাকিত্ব অনুভব হয়।কখনো আমাকে একা করে যেও না।সহ্য হবে না। সামান্য এইঘর থেকে তুমি ঐঘরে গেলেও আমার ততটুকু সময় থাকতে কষ্ট হয়। এলিজা বললো,আপনাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা,আমি ভুলেও চিন্তা করি না। মৃত্যু ছাড়া আমি কোথাও যাচ্ছি না। অপুর্ব মৃদু হাসে।

এলিজা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,একটা কথা বলার ছিল!
অপূর্ব ভ্রু কুঁচকে বললো, কি কথা?
আমাকে এখান থেকে কিছুদিন এর জন্য চলে যেতে হবে।
কোথায়?
সেই শহরে।
মানে কি বলছো?
এলিজা হাত দিয়ে চুল গুলো খোঁপা করতে করতে বললো, এনজিওর জন্য কিছুদিন বাহিরে থাকতে হবে। বিক্রমপুর কিছু কিছু জায়গায় তারা , কিছু সদস্যদের নিয়ে মিটিং করবে।আমাকেও থাকতে হবে।

অপূর্ব আপত্তি স্বরে বলল, তোমার চাকরী টা করতেই হবে।আমি তোমার মামা মামির…. বলতেই এলিজা অপূর্বর কথা মাঝপথে থামিয়ে বললো, না।আমি থাকতে অন্য কারো সাহায্য কেন নেবো। মানুষ নানান কথা বলবে‌।
অপূর্ব মৃদু হেসে বললো, নানান মানুষ এর নানান, কথা, তাদের এই কথা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বন্ধ করতে পারবে না। এলিজা উপেক্ষা করে বললো,দুদিন পর যাবো। আম্মার শরীর টা সুস্থ হোক‌। অপূর্ব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ম্যাডাম, গতকাল তুমি মায়ের কথা মত জাকির স্যার এর ফোনের কথাটা আমার কাছে বললে না।বললে হয়তো আমি তাকে বাঁচাতে পারতাম। এলিজা লেপ টা ভাঁজ করতে করতে বললো,আমি চেয়েছিলাম আম্মা বারন করে।
তৎক্ষণাৎ ঘরে উপস্থিত হয় মনোরা, বললো,ছোটদাদা বাবু,আপনাকে কেউ ফোন করেছি।সে লাইনেই আছে….

অপূর্ব দ্রুত পায়ে হেঁটে নিচে নামে।ফোনটা তুললে,ওপাশ থেকে সূর্যর মা বললো, অপূর্ব তুমি আমার বাসাতে আসো। অপূর্ব জিজ্ঞেস করলো,কি হয়েছে? সূর্যর মা কাঁপা কন্ঠে বললো, সূর্য গতকাল সকালে বেড়িয়েছে আর বাসায় ফিরেনি। আমার ভিষন চিন্তা হচ্ছে।বলেই ফোনটা কেটে দেয়।ফোন কাটার সাথে সাথে দ্বিতীয় বার ফোন বাজে, অপূর্ব ফোন তুলে হ্যালো বললেই,ওপাশ থেকে শ্রাবন বলে উঠে,থানাতে ডিসি সাহেব তোকে ডেকে পাঠিয়েছে। অপূর্ব সূর্যর চিন্তা উপেক্ষা করে ,থানার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরে।এলিজা জয়ার ঘরে যায়।জয়া এলিজা কে দেখে উঠে বসে। এলিজা মৃদু হেসে বললো, আম্মা শরীরের অবস্থা কি? জয়া পান বানাতে বানাতে বললো, তোর যত্নে যে কেউ সুস্থ হয়ে যাবে।এলিজা বললো,মা আপনার সাথে কথা আছে।

বল।একটা কেন হাজার টা বল।
এলিজা জয়ার দিকে কিছুটা এগিয়ে বললো,মা এনজিওর কাজের জন্য দুদিন পর বিক্রমপুর যেতে হবে।সেখানের গ্রামে ,কিছু কিছু সদস্যদের নিয়ে মিটিং হবে।জয়া পানের পিক ফেলে বললো, যাবি।বারন কে করছে। এলিজা জয়ার হাতে হাত রেখে বললো আম্মা আপনার শরীর টা ভালো না।তাই বললাম।জয়া যাওয়ার জন্য অনুমতি দেয়।এলিজা বললো দুদিন পর যাবো আপনার শরীর টা পুরোপুরি সুস্থ হোক।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়।শীত কিছুটা বেড়েছে। আকাশে তারাদের আনাগোনা বেশি। অর্পা এটা ওটা আঁকছে।পাখি অর্পার কাছেই বসে আছে।অর্পার আকাঝোকা দেখে,পাখির হঠাৎ শ্রাবন এর আকা পেইন্টিং টার কথা মনে পরে।পাখি অর্পার ঘর ত্যাগ করে। নিজের ঘরে চলে আসে। শ্রাবনের আঁকা ছবি টা দেখে।পাখি শ্রাবনের আঁকা দেখে অবাক হয়।পাখি ভেবেছিলো হয়তো ঠিক মত আঁকতে পারবে না। কিন্তু ছবি টা পুরোপুরি পাখির মত।পাখি সেভাবে শুয়ে ছিল ঠিক সেভাবে আঁকা।রঙ থেকে শুরু করে,ছবির ধরন সবকিছু ঠিকঠাক।পাখি ছবিটি ছুয়ে দেখলো। শ্রাবনের পাগলামীর কথা ভাবতেই ঠোঁটের এক কোনে হাঁসি চলে আসে। শ্রাবন সকালে বেড়িয়েছে।পূরো ঘর টা পাখি পরোখ করছে। আলমারি খুলে শ্রাবনের একটা শার্ট বের করে।পাখি শার্টা টা হাতে নিয়ে খাটের এক কোনেতে বসে গন্ধ শুঁকে। আনমনে শ্রাবন কে নিয়ে ভাবতে থাকে ঠিক তখনই হাজির হয় শ্রাবন।পাখি চমকে উঠে।হাত থেকে দ্রুত শার্ট টা খাটের উপর রাখে। শ্রাবন ওয়াকিটকি টা হাত থেকে রাখতে রাখতে বলল, কি পিচ্চি মনে পরছিলো খুব তাইনা?তাই আমার যায়গায় আমার শার্ট কে বসিয়ে দিয়েছো।

পাখি আমতা আমতা করে বলল,কে বলেছে , আপনাকে মনে পরছিলো। আমি তো দেখছিলাম ধুতে হবে কিনা। শ্রাবন হাতে শার্ট টা নিয়ে বললো,এটা পরিষ্কার শার্ট।আমি একজন পুলিশ।আমাকে বোকা বানানো এত সহজ নয়।পাখি উল্টো দিকে ঘুরে যায়। শ্রাবন ইউনিফর্ম টা খুলে পাখিকে পেছন জড়িয়ে ধরে।পাখি মৃদু কন্ঠে বললো,এভাবে চেপে ধরলে একটা হাড় ও থাকবে না।

শ্রাবন কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো, ভেঙে যাক। আমার ভালোবাসা দিয়ে আবার জোড়া লাগিয়ে দিবো।পাখি শ্রাবনের হাত টা সরিয়ে দেয়। আলমারি থেকে নামানো শার্টটা ভাজ করতে করতে বললো,হাত মুখ ধুয়ে আসুন।আমি খেতে দেই। শ্রাবন স্নান ঘরে যেতেই,পাখি বলে উঠলো, দুলাভাই কে রেখে আসলেন যে?
শ্রাবন হাতের ঘরিটা টেবিলের উপর রেখে বললো, থানাতে ওর কাজ আছে। আমাদের একজন ফরেন্সিক ডাঃ মা,রা গেছেন। সেই নিয়ে অপূর্ব ব্যাস্ত।আমি চলে এসেছি। আমার পিচ্চির জন্য। পিচ্চি যদি একা ঘরে কান্না করে।পাখি মৃদু হেসে ভ্রু কুঁচকে দেয়।

রাত অনেক হয়। এলিজা অপূর্বর জন্য অপেক্ষা করছে। অপূর্ব ফিরছে না। কিছুক্ষণ জয়ার ঘরে যায় তো কিছুক্ষণ অর্পার ঘরে। এলিজা খেয়াল করলো জাহাঙ্গীর ঘরে নেই।এই সুযোগে একবার বায়েজিদ এর সাথে কথা বলা যাবে।এলিজা সবার নজর এড়িয়ে বাহিরে বের হয়। বায়েজিদ বাহিরে থাকা একটা চৌকির উপর শুয়ে আছে।মনের খুশিতে গুন গুন করে গান গাইছে।এলিজাকে বাহিরে বের হতে দেখে বায়েজিদ উঠে বসে। অমৃদু হাঁসি দেয়।এলিজা কাছে আসে, বায়েজিদ মৃদু হেসে বললো,আপা তুমি এইহানে, আমারে কিছু খাবার আইনা দাওনা।

এলিজা বললো,তোর খিদে পেয়েছে।আগে বলবি তো।তুই অপেক্ষা কর আমি নিয়ে আসছি।এলিজা ভাবলো বায়েজিদ কে খাবার দিয়ে যদি তোর মুখ থেকে সত্যিটা বের করা যায়।ওদিন কি বলতে চেয়েছিলো।এলিজা খাবারের জন্য রান্না ঘরে যায়।রাত ১১ টা অপূর্ব এখনো ফিরেনি।আজ সবাই তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পরেছে।এলিজার ঘটকা লাগলো।এত দ্রুত সবাই ঘুমিয়ে পরলো,এমন মনে হয় ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছে। এলিজা এসব ভাবনা উপেক্ষা করে। বায়েজিদ এর জন্য কিছু খাবার নিয়ে বায়েজিদ এর কাছে আসে। বায়েজিদ খাবার দেখে অনেক আনন্দিত হয়। এলিজা বায়েজিদ কে সান্ত স্বরে বলল, ওদিন কি হয়েছিল? তুই ওরকম অদ্ভুত আচরন করছিলিস কেন? আবার দারোয়ান চাচা বললো তুই ওদিন বিকেলে গ্রামে গিয়েছিলিস তবে রাতে কে ছিলো? বায়েজিদ খাবার খাওয়া বন্ধ করে।ভাত মাখা ছেরে এলিজার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে। বায়েজিদ চোখ গুলো বড় বড় করে বললো ,শুনবা আপা তুমি।ওদিন কি হয়েছিল?এলিজা আগ্রহ নিয়ে হ্যা সুচক মাথা নাড়ে। বায়েজিদ বলতে শুরু করবে ঠিক তখনই এলিজার মাথায় কেউ আঘাত করে। এলিজা হতভম্ব হয়ে যায়। বায়েজিদ এর হাত থেকে ভাতের থালাটা পরে যায়। এলিজা পেছন ঘুরে দেখে দু’জন কালো মুখোশ,ধারী।এরা সেই দুজন যারা এর আগেও আমাকে খু,ন করতে চেয়েছিল।

। চারদিক নিস্তব্দ।বাড়িতে বাহিরের লোক ঠুকতে পারে না। চারদিকে উঁচু করে দেয়াল করা।বাড়িতে দারোয়ান আছে।সে কোথায়? তাদের চোখ এড়িয়ে এরা ঠুকলো কিভাবে? এলিজা মাথায় খুব একটা আঘাত পায়নি।এলিজা ক্রোধে,আক্রশে প্রশ্ন করলো,তোরা কারা আর কে পাঠিয়েছে,সাহস থাকে তো বল। হঠাৎ দুজন মুখোশ,ধারীর একজন আরেকজনের সাথে ফিস ফিস করে কিছু বললো। একজন বাড়ির মধ্যে থেকে বেড়িয়ে যায়।অন্যজন হাতে, মাঝারি সাইজের রাম,দা নিয়ে এলিজার দিকে এগোতে থাকে। এলিজা ঘরের দিকে দৌড়াতে শুরু করলে অচেনা লোকটি ধরে ফেলে।এলিজার মুখ চেপে রাম,দা দেখিয়ে বললো,ছটপট কম কর নয় একদম শেষ করে দেবো। এলিজা কন্ঠ চিনলো না। এলিজা হুহু করতে থাকে‌।এলিজাকে বাহিরের দিকে নিতেই, এলিজা বুঝতে পারলো অচেনা লোকটি হঠাৎ এলিজাকে ছেড়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে , এলিজা হতভম্ব হয়ে যায়।পেছন ঘুরে দেখতেই দেখে, বায়েজিদ কাঠ কাটার দা দিয়ে লোকটির গলায় কো,প দিয়েছে।লোকটি লুটিয়ে পড়ে যায়। বায়েজিদ সাপের মত ফোঁস ফোস করছে।ক্রোধের স্বরে বললো, আমার আপার গায়ে হাত দিছো।আমি থাকতে আমার আপার কিছু হইবো না। আমার সামনে আমার আপাকে মারবি।বায়েজিদ এর এমন রুপ দেখে এলিজা অবাক হয়। এলিজা এদিক সেদিক পরোক্ষ করে।এলিজা লোকটির নার্ভ পর্যবেক্ষন করে দেখলো লোকটি মারা গেছে। এলিজা কিছুটা ভয় পায়।যদি কেউ দেখে ফেলে তবে বায়েজিদ কে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। কিন্তু এটা ছাড়া আর তো উপায় ও ছিলো না‌। এলিজা বায়েজিদ আচরনে খুশিও হয়, এবং অবাক হয়।,

।রাত বেড়ে চলেছে। এলিজা বার বার এদিক সেদিক দেখছে।লা,শ টা কি করবে বুঝতে পারছে না। বায়েজিদ হাত থেকে র,ক্ত মাখা দা টা ফেলে হাতের উল্টো দিক দিয়ে নাক মুছে।এলিজাকে বললো, আপা তুমি চিন্তা কইরো না।আমি লা,শ টা পুতে রাখছি।এমন ভাবে পুতে রাখবো কেউ কোনদিন খুঁজে পাইবো না। এলিজা অবাক হয়। বায়েজিদ এর কথা বলার ভঙ্গিমা একদম অদ্ভুত রকমের ভয়ানক হয়ে ওঠেছে। এলিজা চোখ বড় করে দেখছে।বায়েজিদ অবাক ভঙ্গিতে এলিজাকে বললো,তুমি ঘরে যাও।আমি সব সামলে নিবো।তোমাকে কেউ দেখলে সমস্যা হইবো‌। এলিজা বায়েজিদ কে বললো,তুই পারবি সব সামলে নিতে? বায়েজিদ হ্যা সুচক মাথা নাড়ে।এলিজা ঘরে চলে যায়।

এলিজা বৈঠকখানায় বসে ভাবছে।বাড়ির মানুষ গুলো ভারি অদ্ভুত।এত কিছু হয়ে গেলো তারা সত্যি ই কিছু টের পায়নি।নাকি টের পেয়েও ঘাপটি মেরে বসে আছে। এলিজা ঘরে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নেয়। এতক্ষণ যা কিছু হয়েছে,তার কোন চিন্হ যেন না থাকে।কারন অপূর্ব জানলে এলিজাকে নিয়ে ভিষন চিন্তা করবে‌।আর এটা এলিজা চায়না , অপূর্ব চিন্তায় থাকুক। রাত প্রাই ১টা। অপূর্ব ফিরছে না এখনো।

এলিজা পর্ব ৫৬+৫৭

এলিজা জয়ার ঘরের পাশে যায়।সেখানের জানালা দিয়ে বাহির টা দেখা যায়। বায়েজিদ লা,শ টা সরিয়েছে কিনা,দেখতে আসে। কিন্তু এলিজা যা দেখে,তাতে অবাক হয়ে যায়। বায়েজিদ বসে বসে কাঠ কাটছে।নিচে কিছু হয়েছিল তার কোন ছিটেফোঁটাও চিন্হ নেই। বায়েজিদ কাঠ কাটা রেখে,পেছন দিকে ঘুরে ,এলিজা যে জানালায় সেদিকে তাকায়। এলিজা বায়েজিদ কে পরোখ করে।

এলিজা পর্ব ৬০+৬১