অন্তঃদহন পর্ব ৬
DRM Shohag
আকাশ তার ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে। রা’গ কমেনি এখনো। অরুণ আকাশের পিছু পিছু আকাশে ঘরে এসে দাঁড়ায়। মৃদুস্বরে বলে,
– সামান্য জুস পড়ায় মেয়েটার সাথে এভাবে কথা বললি কেন?
আকাশ রাগান্বিত স্বরে বলে,
– তো কিভাবে কথা বলব? ও আমাকে জুস দিতে আসবে কেন? বউয়ের দায়িত্ব পালন করতে আসবে কেন? বলেছি আমি?
অরুণ চুপ থাকলো। সে বুঝল, আকাশ মূলত জুস পড়ে যাওয়ায় এতো রে’গে যায়নি। একে তো অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়ে, সাথে বউ হিসেবে ট্রিট করতে আসায় আকাশের এতো রা’গ। মৃদুস্বরে বলে,
– মেয়েটির কি দোষ বল?
আকাশ রে’গে অরুণের বুকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
– একদম কোনো মেয়ের হয়ে সাফাই গাইবি না। তোর এতোগুলো গার্লফ্রেন্ড তো ভালোবাসি ভালোবাসি বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। কিন্তু আসল ঘটনা সব টাকা। টাকা উড়াতে পারিস তাই মেয়েদের লাইন।
অরুণ বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। আকাশের এমন ধারণার পিছনে অরুণের কোথাও যেন নিজেকে দায়ী লাগলো। সে ভার্সিটি লাইফ থেকে এমন মেয়েদের সাথে মিশেছে। আসলে সে লাইফটাকে এভাবে চিল করতে চেয়েছে। কিন্তু আকাশের মনে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আকাশের উদ্দেশ্যে মৃদুস্বরে বলে,
– সব মেয়েরা একরকম হয় না আকাশ। এই মেয়েটা এমন না-ও হতে পারে।
আকাশ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
– এরা সব মেয়েরা-ই এক। এই মেয়েটা আমাকে বিয়ে করেছে এরকম-ই একটা কারণে। বা’লের ভালোবাসা। বা’লের বিয়ে, বা’লের বউ।
– মেয়েটি কথা বলতে পারে না। তুই কথাটা অনেক রূঢ়ভাবে বলেছিস। এভাবে বলা উচিৎ হয়নি তোর।
আকাশ রে’গে বলে,
– যা বলেছি ঠিক বলেছি। আমি ক্লিয়ার করে বলে দিয়েছি, সময়মতো ডিভোর্স দিয়ে দিব। এর অর্থ সে আমার বউ নয়। নয় মানে নয়। তাহলে কেন বউদের মতো রোল প্লে করবে? এসব আমি মানব? নেভার!
অরুণ কিছুক্ষণ পর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
– তুই শিওর, মেয়েটির কথা না বলতে পারা নিয়ে এভাবে বলা ঠিক হয়েছে তোর?
আকাশ অরুণের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়। ঢোক গিলে মৃদুস্বরে বলে,
– রে’গে গিয়েছিলাম।
একটু থেমে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– ও এক্সিডেন্টলি আমার বউ, এটা ভুলে থাকলে মাথা ঠাণ্ডা থাকে। মনে পড়লে মে’জা’জ খারাপ লাগে।
এরপর আকাশ ওয়াশরুমে যেতে যেতে আবারও শক্ত গলায় বলে,
– মেয়েটি আর একবার আমার বউ এর রোল প্লে করতে আসলে ওর দু’গাল থা’প’ড়ে লাল করে দিব আমি, দেখিস।
অরুণ হেসে বলে,
– মেয়েটার চেয়ে তোর গাল লাল হজয়ার জন্য বেশি পার্ফেক্ট মনে হচ্ছে আমার।
আকাশ ঘাড় বাঁকিয়ে রে’গে বলে,
– আর তোর পা’ছা লাল হওয়ার জন্য আরও বেশি পার্ফেক্ট।
অরুণ মুখটা একটুখানি করে বলে,
– তুই আমার ফর্সা পা’ছা দেখে নিলি? এসব আমার বউয়ের হক।
আকাশ বিরক্ত হলো। রে’গে বলে,
– আর একটা ফা’ল’তু কথা বলবি তো থা’প’ড়ে সোজা করব তোকে।
কথাটা বলে আকাশ ওয়াশরুমে চলে যায়। অরুণ অসহায় কণ্ঠে আওড়ায়,
– আজ আমার পা’ছা ফর্সা বলে!
প্রায় মিনিট দশ পর আকাশ শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। কাভার্ড থেকে অ্যাশ কালার এর একটি ব্লেজার বের করে গায়ে জড়িয়ে নেয়। হাতঘড়ি হাতে পরতে পরতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। মাথায় পানি ঢেলে মাথাটা মনে হয় ঠাণ্ডা হয়েছে।
সিঁড়ি বেয়ে নামতে নেমে আসমানী নওয়ান এর ঘরে যায়। ভদ্রমহিলা বিছানায় শুয়ে ছিল। আকাশ এগিয়ে গিয়ে মৃদুস্বরে ডাকে,
– মা?
আসমানী নওয়ান চোখ বুজে রেখে উত্তর দেয়,
– বলো।
আকাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
– কাজে যাচ্ছি। নিজের খেয়াল রেখো।
আসমানী নওয়ান চোখ মেলে বলে,
– আমার মনে হয়, তোমার ভদ্রতা, সভ্যতা সব হারায় গেছে। আমার খোঁজ নিয়া সেসবের কিছু প্রমাণ করার দরকার নাই।
আকাশ চুপ থাকলো। এরপর গম্ভীর গলায় বলে,
– মা হয়ে ছেলের মতমতের ইম্পর্ট্যান্ট না দিলে ছেলের ভদ্রতা, সভ্যতা হারানো দোষের কিছু না। আসছি। বাই।
কথাটা বলে আকাশ তার মায়ের ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
সামনে তাকিয়ে দেখল টেবিলের এক কোণায় সন্ধ্যা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটির সামনে অরুণ দাঁড়িয়ে হাসছে। হাসতে হাসতে বলে,
– শোনো সুইটি! আমি বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি, বুঝলে? তোমার জন্য অনেক কিছু আনবো বুঝেছ? তোমার কি পছন্দ বলে ফেলো তো আমাকে।
কিছু একটা ভেবে পকেট থেকে ফোন বের করে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– এই যে টাইপ করে লেখ। তাহলে আমি বুঝব।
সন্ধ্যা বিব্রতবোধ করে। মাথা নেড়ে জানায়, তার কিছু লাগবে না। অরুণ মন খারাপ করে বলে,
– ওকে ওকে। আমার পছন্দ-ই তোমার পছন্দ হবে। এবার হাসো তো সুইটি!
ডান হাতের দু’আঙুল ইশারায় দেখিয়ে বলে,
– স্মাইল!
সন্ধ্যা না চাইতেও একটু হাসলো। অরুণকে দেখে সৌম্য ভাইয়ের কথা মনে পড়ল। তার সৌম্য ভাইয়া অনেকটা এভাবেই কথা বলতো। তার সাথে খুনশুটি করতো।
আকাশ সন্ধ্যার দিকে গম্ভীর চোখে চেয়েছিল। সন্ধ্যাকে হাসতে দেখে দৃষ্টিতে শীতলতা ভর করল।
অরুণ আবারও বলে,
– হাসো সুইটি! আরেকটু হাসো!
আকাশ চরম বিরক্ত হয়। বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে এসে অরুণের হাত ধরে জোরে টান দেয়। অরুণ বেচারা বুঝতে না পারায় কয়েকপা পিছিয়ে যায় সাথে ঠাস করে পড়ে যায়। সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায়।
আকাশ বা হাতে দাঁড়িতে হাত চালায়, সাথে শক্ত গলায় বলে,
– এই বাসায় কোনো তামাশা চলে না। দ্রুত রেডি হয়ে আয়। আমার লেট হচ্ছে।
অরুণ বহু ক’ষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
– আমি কোথায় যাব? তুই কক্সবাজার কাজে যাচ্ছিস যা। আমি যাব না। ইশ! কোমর টা গেল!
আকাশ শক্ত গলায় বলে,
– তোকে যেতে হবে।
অরুণ অসহায় কণ্ঠে বলে,
– কি জ্বালা! আমার পিছে পড়লি ক্যান?
আকাশ বিরক্তি হয়ে বলে,
– রেডি হয়ে আয়। সময় দুই মিনিট।
অরুণ হতাশ। একটু পর ডান হাত আকাশের বুকে রেখে হেসে বলে,
– বাতাস বাবুটা আমাকে আজকাল একটু বেশিই ভালোবাসছে! আমাকে চোখে হারাচ্ছে। এক মিনিট….
আকাশ ঝাড়া মেরে অরুণের হাত সরিয়ে দিয়ে রে’গে বলে,
– দ্রুত যা।
অরুণ মন খারাপ করে আবার হাসে। কক্সবাজার বোরিং হবে না। ওখানে নিশ্চয়ই কিউট কিউট মেয়ে থাকবে৷ একটু ইনজয়-ও করা যাবে!
আকাশ গম্ভীর চোখে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে আছে। সন্ধ্যা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ দু’পা এগিয়ে আসলে সন্ধ্যা ঢোক গিলে। আকাশ মৃদুস্বরে বলে,
– এতো চোখের পানি আসে কোথা থেকে?
সন্ধ্যা দু’হাতে দু’হাত কোচলায়। আকাশ গম্ভীর গলায় বলে,
– আমার থেকে দূরে থাকবে। তাহলে কাঁদতে হবে না। আমার আশেপাশে আসলে থা’প’ড়ে গাল লাল করব তোমার।
লাস্ট কথাটা ধমকের সুরে বলে। সন্ধ্যা ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। আকাশ গটগট পায়ে গেইটের দিকে যায়। সন্ধ্যা ঝাপসা চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। অরুণ আকাশের পিছু যেতে যেতে সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বলে,
– বাই সুইটি!
আকাশ রে’গে তাকায় অরুণের দিকে। অরুণ সামনে ফিরে আকাশের দৃষ্টি দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,
– যাচ্ছি-ই তো। রা’গ’ছিস কেন?
আকাশ কিছু বলল না। চুপচাপ বেরিয়ে গেল। অরুণ চোখ ছোট ছোট করে আকাশের দিকে তাকিয়ে সেও বেরিয়ে যায়।
সন্ধ্যা মলিন মুখে আকাশের অদৃশ্য হওয়া দেখল। লোকটা তো তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। তারপর সে কোথায় যাবে? সৌম্য ভাইয়া তো আসেনা। যদি তার ডিভোর্সের পর-ও সৌম্য ভাইয়া না আসে, তবে সে কোথায় যাবে? কোথায় থাকবে?
আকাশ আর অরুণ কক্সবাজার পৌঁছেছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। এখানে অরুণদের নিজস্ব একটা রিসোর্ট আছে। সেখানে আকাশ উঠেছে। অরুণ তার রুমে এসেই ঘুমে কাঁদা। আকাশ ফ্রেশ হয়ে কিছু কাজ কমপ্লিট করে মিটিং এর ব্যবস্থা করে। সময় মতো জায়গাটিতে পৌঁছাতে যথাসময়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আকাশ বিভিন্ন কোম্পানির মালিকদের সাথে সমুদ্রের পাড় থেকে কিছুটা দূরে একটি জায়গায় গোল হয়ে বসেছে। আকাশের বয়সের একজন আছে। বাকিরা সবাই বাবার বয়সী লোকজন। আর আছে তাদের দু’জন মেয়ে। একজন মেয়ে আকাশের পাশে বসেছে। যার নাম মিতু।
আকাশ কখনো গম্ভীর স্বরে কথা বলছে, সবাইকে বোঝাচ্ছে, আবার কখনো সকলের কথা শুনছে। মিতু মেয়েটি বার বার আকাশের হাতের উপর হাত রাখে। মেয়েটি আকাশকে চেনে। এর আগেও বহুবার দেখা হয়েছিল। তার বাবাদের সাথে মিটিং এর আয়োজন করলে সে সবসময় আসে আকাশের জন্য। আকাশের সাথে বেশ অনেক কথা বলে। যদিও আকাশ শুধু হু হা করে। তবুও তার ভালো লাগে।
আকাশ কথা বলতে বলতে হঠাৎ থেমে যায়। কথা বলার মাঝে এ পর্যন্ত কম করে হলেও ৫০ বার এই মেয়ের হাত সরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এটা ভালোভাবে কথা শোনার মেয়ে নয় বুঝল আকাশ৷ ডানদিকে ফিরে কিছুটা আওয়াজ করে শক্ত গলায় বলে,
– কোলে উঠবে? কোলে ওঠার ইচ্ছে হলে জানাও, আমি লোক ভাড়া করে দিচ্ছি।
মিতু সহ সকলে থতমত খেয়ে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশ আবারও তার হাতের উপরে রাখা মেয়েটির হাত কিছুটা ঝাড়া মেরে সরিয়ে দেয়। ঠাণ্ডা মে’জা’জ কেউ না কেউ গরম করবে। সবসময় আকাশের সাথে এমন করবে কেউ না কেউ। আকাশ চোখ বুজে নিজেকে সামলে আবার-ও কথা বলতে শুরু করে।
মিতু সকলের সামনে যেমন ল’জ্জা পায়, তেমনি ভীষণ মন খারাপ হয় আকাশের এরকম ব্যবহারে।
অরুণ ঘুম থেকে উঠে আকাশকে খুঁজতে খুঁজতে সমুদ্রের এদিকে এসেছে। আকাশের বলা কথাটা শুনতে পেয়েছে সে। এগিয়ে এসে আকাশের পাশে দাঁড়ায়। ততক্ষণে আকাশদের আলোচনার পর্ব শেষ হয়। সবাই একে একে উঠে যায়। মিতুর বাবা তার মেয়েকে ডাকলে সে বলে, – একটু পর যাবে।
আকাশ চেয়ারে হেলান দিয়ে দু’হাত আড়াআড়িভাবে গুঁজে চোখ বুজে রেখেছে। অরুণ মিতুর পাশে চেয়ার টেনে বেস বলে,
– হাই সুইটি!
মিতু ভ্রু কুঁচকে তাকায় অরুণের দিকে। অরুণ হেসে বলে,
– তুমি কোলে উঠতে চাও? জানো আমার বডিতে অনেক শক্তি! এসো তোমাকে কোলে নিই।
মিতু অবাক হয়, এমন বিদেশি ছেলের মুখ একদম শুদ্ধ বাংলা ভাষা শুনে। অরুণ আকাশের দিলে তাকিয়ে বলে,
– কিরে বাতাস বাবু, তোর গার্লফ্রেন্ড কে কোলে নিলে তোর কোথাও জ্বলবে না তো?
আকাশ চোখ খুলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– ও আমার কেউ না। তবে তুই চাইলে ওকে কোলে নিতে পারিস। মিস মিতুর ইচ্ছে পূরণ হবে।
কথাটা বলে সমুদ্রের পাড়ের দিকে যায় আকাশ। অরুণ হেসে বলে,
– এসো সুইটি! বসো। এতো সুন্দর সুইটিকে কোলে নিলে আমি ধন্য হয়ে যাবো!
মিতু দ্রুত দাঁড়িয়ে যায়। রে’গে বলে,
– বে’য়া’দ’ব!
অরুণ হেসে বলে,
– সে ঠু ইউ সুইটি!
মিতু ধুপধাপ পা ফেলে তার বাবার দিকে যায়। অরুণ গা টানা দিল। ভালোই লাগে মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করতে।
দেখতে দেখতে প্রায় পাঁচদিন পেরিয়েছে। সৌম্য কার্জন হলের সামনে মাঠে বসে আছে। দৃষ্টি আকাশপানে। গত পাঁচদিন আগে তার কাছে সন্ধ্যার একটি ভিডিও এসেছিল, এরপর প্রতিনিয়ত সন্ধ্যার ছোট্ট কোনো ভিডিও অথবা কোনো পিক প্রতিদিন আসে। সৌম্যকল করলে ফোন বন্ধ পায়। কে এমন করছে তার সাথে? কখনো সন্ধ্যার কান্নামাখা মুখ দেখেছে, নয়তো কখনো সন্ধ্যার মলিন মুখ দেখেছে। সৌম্য’র অস্থির লাগে। কোথায় আছে তার বোন? কেন তাকে খোঁজ দিচ্ছে না?
গত সাতদিন আগে যে ইরাকে রেখে আসলো। এরপর আর ইরার হদিস পেল না সৌম্য। কোথায় হারিয়ে গেল ইরা? হারিয়ে গেল প্রশ্নটা আসলো কারণ সৌম্য ইরাকে খুঁজেছে। ইরার ফোনে অসংখ্যবার কল করেছে, কিন্তু একবারের জন্য-ও ইরার ফোন অন পায়নি। পরিচিত সবার কাছে খোঁজ নিয়েছে। কেউ বলতে পারেনা ইরার কথা। ইরা-ও হারিয়ে গেল?
সৌম্য লম্বা শ্বাস টানে। তার জীবনটা অদ্ভুদ! যেন কেউ কোথাও নেই। এতো ছন্নছাড়া জীবন কারো হয়? কার্জন হলের সামনের এই জায়গাটা একসময় ইরা আর সৌম্য’র খুব পছন্দের জায়গা ছিল। এখন কি পছন্দের জায়গা নেই? আছে তো! আগে হাসিখুশির জন্য জায়গাটা পছন্দের ছিল, আর এখন দুঃখবিলাস করতে জায়গাটি পছন্দের তালিকায়।
সৌম্য’র মনে পড়ে সেই পুরনো দিনগুলোর কথা। যখন তারা এইখানে দু’জন বসে কত হাসাহাসি করেছে, ইরা হাসতে হাসতে সৌম্য’র গায়ের উপর ঢলে পড়ড। সৌম্য ধমক দিতো এভাবে গায়ে ঢলে পড়ায়। ইরা সৌম্য’র ধমক খেয়ে আরও বিতরামি করত। আরও সৌম্য’র গা ঘেঁষে বসত। মেকি রা’গ দেখিয়ে বল, – আমি তোর কোলে উঠে বসে থাকব, কি করবি রে তুই?
সৌম্য নিরবে চঞ্চল ইরাকে দেখত৷ আর কিছু বলতো না। যেদিন থেকে ইরার মন পড়তে শুরু করল, সেদিন থেকে সৌম্য হাসতে ভুলে গেল। কারণ ইরা যে আর হাসতো না। সৌম্য’র অবহেলায় ইরার হাসি বিলীন হতে শুরু করল। ধীরে ধীরে ইরা হাসতে ভুলে গেল। এরপর কথায় কথায় চোখের কোণ ভিজত। ইরা কত যত্নে তা লুকিয়ে-ও নিত। কিন্তু সৌম্য’র চোখ ফাঁকি দেয়া বুঝি এতো সহজ? সৌম্য’র চোখ যে ইরার থেকে সরতো না। ইরা সে খবর রাখেনি। সৌম্য নিরব হয়ে গেল। ইরাকে শুধু দেখত, প্রয়োজন পড়লে ইগনোর করত। ইরার মনে অভিমানের পাহাড় জমতো, আর সৌম্য বুক ব্য’থা নিয়ে কি নির্মল চোখে অভিমানী ইরাকে দেখে যেত। অভিমান গলে ইরার চোখ বেয়ে পানি গড়ালে, তখন-ও সৌম্য ইরাকে শুধু দেখে যেত। এই সমাজে সৌম্য’দের কখনো প্রিয় মানুষের চোখের জল মুছে দেয়ার অধিকার নেই।
কথাগুলো ভেবে সৌম্য মলিন হাসলো। ইরা তো কখনো তার সাথে এভাবে যোগাযোগ অফ করে রাখেনি। মেয়েটি তো এমনটা পারেনা। সে চেনে ইরাকে। তবে কি হলো ইরার?
সৌম্য’র কোথাও গিয়ে মন টিকে না। সবকিছু এতো অশান্তি লাগে।
ভাবনার ইতি ঘটালো সৌম্য। সকালে একটা পাউরুটি কিনে খেয়েছিল। এখন বিকাল পেরিয়ে যাচ্ছে। পেটে ক্ষুধা। দোকান থেকে রুটি-কলা কিনে খেতে চাইলো। খেতে ইচ্ছে করল না। দুঃখ দিয়েই পেট ভরা লাগে। পিছিয়ে এসে উল্টো পথে টিউশনের দিকে এগলো। রাস্তার ধার দিয়ে হাঁটে। আশেপাশে অনেক মানুষ। কিন্তু তার মনে হয়, সে একা। ভীষণ একা।
রাত তখন ৮ টার কাছাকাছি। আকাশ সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। দু’পায়ের প্যান্ট হাঁটুর নিচ পর্যন্ত গুটিয়ে গিরার উপর পর্যন্ত পানিতে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে নীল শার্ট, দু’হাতের শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো। হাত দু’টো প্যান্টের পকেটে গুঁজে রাখা। দৃষ্টি দূর অজানায়। মুখাবয়ব গম্ভীর। চোখেমুখে বিরক্তি। তবে কারণ জানা নেই।
অরুণ আকাশের থেকে আরও খানিক সামনে গিয়েছে। তার হাতে ক্যামেরা। যদিও অন্ধকার, তবে চাঁদের মিটিমিটি আলোয় যা পিক উঠছে সেটাই তুলছে।
আকাশের থেকে কিছুটা ডানদিকে, একটু সামনে সকাল আর তার এক বান্ধবী দাঁড়িয়ে আছে। গতকাল দুই বান্ধবী মিলে কক্সবাজার ঘুরতে এসেছে।
সকালের নজর আকাশের দিকে। সকালের বান্ধবী নীরা সকালকে একদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,
– ওদিকে কি দেখিস?
সকাল আকাশের দিকে চেয়ে-ই বলে,
– ছেলেটা অনেক সুন্দর না?
নীরা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। আকাশ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে আকাশকে মোটামুটি ভালোই দেখা যাচ্ছে। সকাল নীরাকে রেখে এগিয়ে যায় আকাশের দিকে। নীরা বিচলিত কণ্ঠে বলে,
– ওদিকে কই যাস?
সকাল পাত্তা দিল না। নীরা আর কিছু না বলে সামনের দিকে এগোতে থাকে।
সকাল মৃদু হাসছে। গায়ে ওড়না নেই মেয়েটার। পরনে একটা টপস্ আর জিন্স। এগিয়ে গিয়ে হঠাৎ-ই একদম আকাশের সামনে ঠাস করে পড়ে যায়।
আকাশের দৃষ্টি সামনের দিকে ছিল। হঠাৎ কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ পেয়ে তার সামনে পড়ে যাওয়া সকালের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
সকাল মৃদু আর্তনাদ করে। ব্য’থাতুর আওয়াজে বলতে থাকে,
– ইশ! ওমাগো! কোমর টা গেল গো!
আকাশ যেভাবে ছিল সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। মুখাবয়ব গম্ভীর, দৃষ্টি সকালের দিকে, তবে চোখেমুখে বিরক্তি।
সকাল আকাশের দিকে চেয়ে আছে। সে মূলত ইচ্ছে করে পড়েছে, যাতে আকাশ এগিয়ে এসে তাকে হেল্প করে। কিন্তু লোকটি একদম রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
নীরা হঠাৎ-ই খেয়াল করে সকাল পড়ে গিয়েছে। দেখতে পেয়েই মেয়েটি দ্রুত সকালের দিকে এগিয়ে এসে বলে,
– কিভাবে পড়লি?
সকালে দৃষ্টি সামনের দিকে দেখে নীরা-ও মাথা তুলে তাকায়। সামনে তাকিয়ে দৃষ্টিতে বিস্ময় ভর করে। আকাশ দু’টো মেয়ের এমন উদ্ভট দৃষ্টি দেখে বিরক্তি কণ্ঠে আওড়ায়, – রা’বি’শ!
কথাটা বলে উল্টো ঘুরে চলে যায়। সকাল মন খারাপ করে বলে,
– লোকটার কি অ্যাটিটিউট! সেই লাগছে। আমি এই লোকটাকে পটিয়েই ছাড়বো।
নীরা বিস্ময় চোখে চেয়ে বিড়বিড় করে,
– সন্ধ্যার বর, আকাশ নওয়ান!
আরও একদিন পেরিয়েছে। সৌম্য টিউশনে যাওয়ার জন্য মেস থেকে বেরিয়েছে। রাস্তার ধার দিয়ে ধীরপায়ে হাঁটছে। পায়ে একজোড়া চামড়ার জুতো। ইরা কিনে দিয়েছিল বছরখানেক আগে। বেশ কয়েকজায়গায় ফুটো হয়ে গিয়েছে। সৌম্য মলিন হাসলো। ইরা টা হারিয়ে গেল। সৌম্য’র কাছে ইরার মায়ের নাম্বার ছিল। ছেলেটা নিজের ছটফটানি কমাতে গতকাল ইরার মায়ের নাম্বারে কল দিয়েছিল। ভদ্রমহিলা সৌম্য’র সাথে খুব সুন্দরভাবে কথা বলতো। যদিও সৌম্য অনেকমাস হলো কথা বলেনি। তবে গতকাল কল দেয়ায় ভদ্রমহিলার কণ্ঠ এতো রূঢ় ছিল, সৌম্য’র নিজেকে ভীষণ ছোট লেগেছে। কিন্তু তবুও কল কাটেনি। অনেকবার ইরার কথা জিজ্ঞেস করেছে। এরপর তিনি জানিয়েছেন, ইরা তার জীবন নিয়ে সুখী আছে। সৌম্য যেন আর ইরার খোঁজ না করে।
কথাগুলো ভেবে সৌম্য দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মন প্রশ্ন করে,
– ইরাবতী তুই সত্যিই ভালো আছিস তো?
উত্তর আসে না। সৌম্য হাঁটতে হাঁটতে মেইন শহরে চলে এসেছে। হঠাৎ-ই মাথা তুলে সামনে তাকালে সৌম্য’র পা থেমে যায়। একটি কালো গাড়ি থেকে বেরিয়ে দাঁড়িয়েছে ইরা। সৌম্য ইরাকে দেখেই দ্রুত পায়ে দু’পা এগোয়, সাথে শব্দ করে ডাকতে নেয়, ই….রা প্রথম অক্ষরটি জোরে বললেও পরের অক্ষরটি একদম আস্তে উচ্চারণ করে। সৌম্য’র পা থেমে যায়।
ইরার পাশে এসে একজন ছেলে দাঁড়িয়েছে, বয়স ২৯-৩০ বছর হবে হয়তো। ইরা লোকটির সাথে হাঁটতে হাঁটতে সামনের শপিং মলের ভেতর গেল। সৌম্য’র বুক চিনচিন করে উঠল। যেভাবে দাঁড়িয়েছিল সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। পাঁচ মিনিট যেতেই ইরা আর লোকটি ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে। লোকটি গাড়ির দরজা খুলে দিলে ইরা ভেতরে উঠে বসে। এরপর লোকটি অপরপাশে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে। সৌম্য চুপচাপ তাকিয়ে রইল। গাড়ি ছেড়ে দেয়, গাড়ি সামনের দিকে এগোয়, সাথে সৌম্য’র বুক ব্য’থা বাড়ে। মলিন হেসে বিড়বিড় করে,
– এতো তাড়াতাড়ি আমাকে ভুলে গেলি ইরাবতী? আরেকটু সময় নিয়ে ভুলতি নাহয়, বারণ করতাম না।
কথাটা বলে ঢোক গিলল। ডান হাতের বুড়ো আঙুল দ্বারা ডান চোখ থেকে একফোঁটা নোনা পানি ছিটকে ফেলে। লম্বা শ্বাস টানে। পায়ের গতি বাড়ায়। টিউশন যেতে হবে। দুনিয়ার আনন্দ তো তার জন্য নয়, তার জন্য যত্ন করে দুঃখ-টুকুই জমা রেখেছে আল্লাহ। মেয়েদের মতো কাঁদলে হবে? বরং প্রতিনিয়ত দুঃখ কে বরণ করতে হবে।
তখন বিকাল,
সন্ধ্যা বেলকনিতে বসে অনেকক্ষণ একা একা বসে কেঁদেছে। ভাইয়ের কথা খুব মনে পড়ে। কতদিন হয়ে গেল তার ভাইকে দেখেনা। কেঁদেকেটে ঘরে এসে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দিয়ে আসে, যদিও চোখমুখ লাল হয়ে আছে। তবে মুখে পানি দিয়ে আগের চেয়ে ভালো লাগছে।
আকাশ রিসোর্টের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। কিছু একটা ভেবে তাদের বাড়ির একটি রুমের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে। স্ক্রিনে সন্ধ্যা ভেসে উঠল। আকাশ নিরব চোখে চেয়ে আছে সন্ধ্যার দিকে।
সন্ধ্যা বিছানায় বসে একটি খাতায় কিছু লিখছে। এই ঘরের টেবিলের উপর খাতা কলম রাখা ছিল। সন্ধ্যা সোখান থেকে একটি খাতা কলম নিয়েছে। খাতার দু’টো পৃষ্ঠায় কিছু লিখে পৃষ্ঠা দু’টো খাতা থেকে ছিঁড়ে তার হাতে নেয়। এরপর বিছানা থেকে নেমে
আঠা দিয়ে কাগজ দু’টো দেয়ালে বসায়।
আকাশ অবাক হয়। মেয়েটি কি করছে এসব? দেয়ালে লাগনো কাগজ দু’টিতে চোখ বুলালে আকাশের চোখে পড়ে দু’টো বাক্য। যার একটি কাগজে লেখা আছে,
– তোমাকে খুব মনে পড়ে ভাইয়া।
অপর কাগজে লেখা –
– তোমাকে অনেক ভালোবাসি ভাইয়া।
আকাশ বাক্য দু’টো পড়ে ভীষণ অবাক হয়। আরেকটি ব্যাপারে অবাক হয়, সন্ধ্যার হাতের লেখা চোখে পড়ার মতো সুন্দর। একদম টাইপ করে লেখার মতো।
ল্যাপটপের স্ক্রিনে দেখল, সন্ধ্যা লাগজ দু’টির উপর ডান হাতের আঙুলগুলো বুলায় আর মৃদু হাসে।
এরপর কিছু একটা ভেবে সন্ধ্যা দেয়াল থেকে পিছিয়ে এসে ঘরের মাঝখানে দাঁড়ায়।
সন্ধ্যা এখানে আসার পর থেকে সবসময় শাড়ি পরতো। তবে আজ আসমানী নওয়ান তাকে একটি থ্রি-পিস পরতে দিয়েছে। শাড়ি পরার অভ্যাস নেই সন্ধ্যার। খুব অসুবিধা হতো। তবুও আসমানী নওয়ান এর কথায় অসম্মতি করেনি। ক’ষ্ট করে শাড়ি-ই সামলেছে। আজ থ্রি-পিস পরে সন্ধ্যার আরাম লাগছে।
সন্ধ্যা তার শরীর থেকে ওড়না খুলে রেখে দিল। আকাশ দৃষ্টি সরিয়ে নেয় সাথে সাথে। ল্যাপটপ বন্ধ করার জন্য ডান হাত ল্যাপটপে রেখেও আর বন্ধ করল না। ভেতর থেকে কেউ বলে ওঠে,
– মেয়েটি তোর বউ। এতো ফর্মালিটির কি আছে?
আবার কেউ বলে,
– কিন্তু তুই তো তোর বউকে ডিভোর্স দিয়ে দিবি। ডিভোর্স পেপার রেডি হচ্ছে।
আকাশ তার মনের ভেতরের এসব চিন্তায় বিরক্ত হয়। সে নিজেকে বোঝায়, আপাতত যেহেতু মেয়েটি তার বউ, সে দেখতেই পারে মেয়েটিকে। ভাবনা রেখে ল্যাপটপে দৃষ্টি দিলে আকাশের চোখেমুখে বিস্ময় ভর করে।
সন্ধ্যা নাচছে। নাহ কোনো গান নেই। তবে এমনি-ই মেয়েটি খুব সুন্দর করে নাচছে। হঠাৎ-ই নাচতে নাচতেই ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে। হাসতেই থাকে।
আকাশ বিস্ময় চোখে সন্ধ্যাকে দেখছে। সন্ধ্যার মুখপানে একধ্যানে চেয়ে আছে। গালে সৃষ্ট নিখুঁত টোলে আকাশের দৃষ্টি থেমে যায়।
সন্ধ্যা শব্দবিহীন মন খুলে হাসে। তার মনে আছে, সে সৌম্য’র সামনে এভাবে নাচতো। এই অভ্যাস সন্ধ্যার ছোট্টবেলা থেকে ছিল। তাই কখনো ল’জ্জা পায়নি ভাইয়ের সামনে। সৌম্য সন্ধ্যাকে বাহবা দিত। বলতো-
– বোনু তুই তো সেরা!
এরপর দুষ্টুমি করে বলত,
– কিন্তু এরকম বগের ঠ্যাং এর মতো নাচ দেখে আমার একটু একটু বমি পায় আর কি! এটাই!
সন্ধ্যা ভাইয়ের দুষ্টুমি ধরতে পেরে তার নাচ থামিয়ে ভাইয়ের বাহুতে কিল দিত। মেকি রা’গ দেখাতো। কিন্তু আজ সন্ধ্যা হাসছে। দু’চোখের পাতা বেয়ে নোনাজল গড়িয়েছে, সে খবর সন্ধ্যার কাছে নেই।
আকাশের চোখেমুখে আগের চেয়ে-ও বিস্ময়। মেয়েটি নাচছে, হাসছে, একই সাথে কাঁদছে। আকাশ চুপচাপ সন্ধ্যার দিকে চেয়ে রইল। একটু পর বিড়বিড়িয়ে বলে,
– আই লাই ইওর অ্যাকটিভিটিস। বাট, আই হেইট অল গার্লস্।
একটু থেমে আবারও বলে,
অন্তঃদহন পর্ব ৫
– তুমি খুব তাড়াতাড়ি আমার থেকে ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবে।
ডিভোর্সের কথাটা বলতেই আকাশের প্রচন্ড পরিমাণে রা’গ হয়। সে বুঝলো না সে কেন রা’গ’লো। তবে রে’গে’মে’গে কোলের উপর রাখা ল্যাপটপ গায়ের জোরে ছুঁড়ে মারে। ল্যাপটপ দু’টো পুরো দু’ভাগ হয়ে যায়। আকাশ চেয়ারে হেলান দিয়ে ডান হাতে মাথার চুল টেনে ধরে।
ওপাশে সন্ধ্যার পায়ের গতি কমে যায়। ধীরে ধীরে সন্ধ্যার পা থেমে যায়। বিছানার কোণায় বসে পড়ে সন্ধ্যা। দু’হাতের উপর চিবুক রেখে ফুঁপিয়ে ওঠে। দু’টো শব্দে মন কেঁদে উঠল,
– সৌম্য ভাইয়া?