প্রেমঘোর পর্ব ৮৫+৮৬
নার্গিস সুলতানা রিপা
“সাদাদ,আমি যাই???”
“না…..”
“কি হবে গেলে??আমি তো সুস্থ।এক মাসের বেশি হয়ে গেছে পা পুরেছে…….”
“না বলছি তো আমি…..”
“ধুর।ভালো লাগে না আমার।অরূপ বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে।আর আমি???”
“নৌশিন!!!!…….”
সাদাদের ধমক শোনে চুপ হয়ে যায় নৌশিন।নভেম্বর মাস সন্ধ্যার দিকে বাইরে ভালো রকমের ঠান্ডা পড়ে।
নৌশিনের একটু ঠান্ডা লাগলেই অনেক ধরনের সমস্যা শুরু হয়।তার উপর ডাক্তার বারণ করেছিলো পা বেশি নড়াচড়া না করতে।তবুও নৌশিন যা লাফালাফি করে!!!!সাদাদ ঠান্ডা আর পায়ের কথা চিন্তা করে ওকে ইয়ারপোর্টে নিয়ে যেতে চাইছে না।
“মন খারাপ করো না।ওরা তো আসছেই।ভাইয়া বাসায় থাকলে আমিও যেতাম না।মেজো কাকা আর ভাইয়াকে ই পাঠাতাম…..”
“আমি গেলে কি এমন হবে আমার???বাইরে তো বেশী ঠান্ডাও পড়ে নি।প্রাপ্তি আর অরূপের সাথে একটু মজাও করা হতো….”
“বাচ্চা বউ আমার।আপুর ফ্লাইট লেন্ড করবে সাড়ে সাত টায়।সেখান থেকে বের হতে আমাদের রাত আট টা বাজবে।আর আট টা সময় বাইরে ভালোই শীত লাগে।আমি চাই না আমার বউ অসুস্থ হোক আর……..”
“ওকে।যাবো না…….”
“আহ্ হা….মন খারাপ করে না জান পাখি…..”
“করি নি তো।বাট তাড়াতাড়ি আসবে সবাইকে নিয়ে।আর শোনো বেশি জোরে ড্রাইভ করবে না…..”
“তাড়াতাড়ি আসতে বলছো আবার ড্রাইভও আস্তে করতে বলছো সে টা কেমন কথা???”
“তাড়াতাড়ি বলতে বাইরে কোথায় দেরী করবে না।..”
“আচ্ছা জানপাখি ঠিক আছে…….”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অরূপ,প্রাপ্তি,রিদি,সাদাদ আর প্রাপ্তির বাবা ইয়ারপোর্টে যাচ্ছে,তুবাদের রিসিভড করতে।
ওরা বের হওয়ার পর বাসায় যেনো অপেক্ষার পালা টা আরও বেরে যাচ্ছে।রিদি আর সাদাদের মা তো নাতনীর জন্য কি ছেড়ে কি করবে গুলিয়ে ফেলছে।
নিপা আর ওয়ালিদ তবুও এসোছিলো সাত মাস আগে সাদাদের বিয়েতে।কিন্তু তুবা দেশে আসে না দেড় বছর হয়ে গেলো।ওয়ালিদের মা-বাবা তো দেখে এসেছে।কিন্তু সাদাদের বাবা-মা তো দেড় বছর আগে দেখেছিলো।তাই ওদের আগ্রহ টা আরও বেশী।
#আট চল্লিশ…….
কলিং বেল বাজতেই,
নৌশিন রকেট গতিতে ছোটে যায় দরজা খোলার জন্য।সবাই হনহনিয়ে নৌশিনের পেছনে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
দরজা খোলা মাত্রই সবার চোখে খুশির ঝিলিক।
নৌশিন তো খুশিতে নিপা কে জড়িয়ে ধরেছে।
“আরে,পাগলী,কেমন আছো তুমি???”
“ভালো,তুমি কেমন আছো??”
“আল্লাহ অনেক ভালো রেখেছে…….”
“মম,এটা কি অরূপের নতুন বউ???”
“হ্যাঁ তুবা মনি আমি ই অরূপের নতুন বউ……”
“আড়ে,কি করছো নৌশিন মা,ভেতরে আসতে দাও ওদের…..”(সাদাদের বাবা)
“ও হ্যাঁ হ্যাঁ…..আসো….”
সাদাদের মা মেয়েকে পেয়ো চোখেরর পানি ছেড়ে দিলো।জড়িয়ে ধরলো নিজের উদরের প্রথম আলোকে।
“আসতে সমস্যা হয় নি তো.?”
“না মা,কাঁদছো কেনো???আমি এসেছি তো…..”
“জামাই কোথায়??”
“ও আর সাদাদ ব্যাগ গুলো আনছে…….আম্মু-আব্বু(ওয়ালিদের মা-বাবা)কোথায়???”
“ওরা উপরে আছে।বেয়ান এতোই খুশি কাজ করতে গিয়ে প্রেসার টা বেড়ে গেছে
তাই বেয়াই ও ওনার সাথে উপরে আছে…..”
“কি বলো???বেশি অসুস্থ??”
“ওহ্….ভাবী,এসেই শশুড়-শাশুড়ী নিয়ে পড়লে।আগে রোমে তো যাও…..”(রিদি)
“হ্যাঁ।আপুনি যাও আগে রোমে যাও…..”(প্রাপ্তি)
নিপা সবার সাথে কৌশল বিনিময় করে ওর শশুড় শাশুড়িকে সালাম করতে যায়।শশুড়-শাশুড়ি ছেলের বউ দেখেছে না যখন আকাশের চাঁদ দেখেছে।
খুশিতে আত্মহারা দুজনে।
ওয়ালিদ ও নিজের শশুড় শাশুড়ির সাথে কুশল বিনিময় করে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছে।
“ওয়ালিদ,বাবা।পড়ে আড্ডা দাও।।।প্রাপ্তি তোমার ভাইয়াকে রেস্ট নিতে দাও।কাল গল্প করো…..”(প্রাপ্তির বাবা)
“ওকে…ভাইয়া আপনি যান…..রোমে যান…..লম্বা রেস্ট নিন…”
“না না। ঠিক আছে।তুবা কোথায়???ওকে তো দেখছি না???”
“পাবে না ওদের।বাচ্চা মানুষ এই বাড়িতে একজনের কাছেই থাকবে….”(রাফসা)
“কার কাছে??”
“কার কাছে আবার নৌশিন।নৌশিন তো দুটো কে নিয়ে নিজের রোমে ডুকে গেছে সবার আগে….”
“হা হা হা হা।।।বাচ্চা পাগলী নাকি??অরূপ তো সারা রাস্তা নতুন বউ এটা সেটা করতে করতেই আসলো…”
“হ্যাঁ।সে রকম ই হয়……দুটো তে সারা দিন…….”
“যাক।শান্তি প্রিয় তাহলে……ওকে আমি আব্বু আম্মুর রোমে যাচ্ছি…..”
সারা বাড়িতে ঈদ।
রাত সাড়ে দশ টা বাজে।
এখনো কারও খাওয়া দাওয়ার খবর নেই।
সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে।
রাফসা আর প্রাপ্তির মা খাওয়ার কথা বলেছে অনেক বার কিন্তু ওয়ালিদ বলেছে পড়ে খাবে।তাই সবাই ওর সাথে পড়েই খাবে।
নৌশিন,অরূপ আর তুবার এতো টাই ভাব জমেছে বলার মতো না।
তুবা সারা রাস্তা অরূপ,রিদি আর সাদাদের সাথে বকবক করতে করতে এসেছে।
এখন নৌশিনের সাথে করছে।
“এই মিষ্টি বউ তোমার নাম কি গো???”
নৌশিন উত্তর দেওয়ার আগেই
অরূপ নৌশিনের গলা ধরে খিলখিলিয়েয়ে বলে,
“আপু,ওর নাম নৌশিন…..নৌশিন……”
“এই পিচ্চি!!!!!তোর তো ভালোই সাহস হয়েছে…হ্যাঁ??নৌশিন,নৌশিন করছিস??”
“নতুন মামী তোমার নাম টা ও তো তোমার মতো সুন্দর….”
“নতুন বউ আমি তো নাম ধরে ডাকি নি,আপুকে বললাম খালি…….”
“ওকে বাবা।ব্যাপার না……..আচ্ছা তোমরা তো কিছু খাও নি।এগারো টা বাজে রে অরূপ।আর মা মনি তুমি তো কত দূর থেকে প্লেনে করে এসেছো ঘুমাবে না??”
দুজনে একসাথে চেঁচিয়ে উঠে,
“আমরা তো লাড্ডু,সেমাই পিঠা,চকলেট,ওরেন্জ জুস খেয়েছি আর কি খাবো??”
নৌশিন বাচ্চাদের চেঁচামেচির চোটে দু হাতে কান ধরে ফেলেছে।”আস্তে বাবা রা……”
“নতুন মামী,আজকে তোমার সাথে থাকবো আমি…..আর আমি তো প্ল্যানে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ই এসেছি”
“নতুন বউ আমিও শুবো তোমার সাথে;আমিও……”
“আচ্ছা তোমরা দুজনেই আমার সাথে থাকবে ওকে???”
“আচ্ছা আচ্ছা….কি মজা,কি মজা….তাই না আপু??”
“হ্যাঁ।গুড জব।।।।নতুন মামী,তোমার জন্যও তো লাড্ডু রেখে গেছে বড় মামী।তুমি তখন ওয়াশ রোমে ছিলে……
এই যে খাও……হা করো…….”
তুবা নৌশিনের মুখে জোর করে নারকেলের লাড্ডু ডুকিয়ে দিলো।আর লাড্ডুতে কেমন একটা দুধ দুধ গন্ধ ছিলো।
নৌশিন তো এমনিতে দুধ খায় না।বাট লাড্ডুর পুর বানানোর সময় তো একটুখানি দুধ ই দিয়েছে।সেটাও যেনো বিশ্রী লাগছে।ভেতর থেকে সব উতলিয়ে বের হয়ে আসার উপক্রম।নৌশিন দ্রুত মুখ চেপে ধরে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরোমে গিয়ে বমি করে দেয়।
কিছুদিন ধরে ই এমন হচ্ছে।
নৌশিন চোখে মুখে পানি দিয়ে আবারও পিচ্চিদের সাথে বসে যায়।একটু আগের বমি যেনো ওর শরীরে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারি নি।অথচ গলা চিরে বমি আসছিলো।
ঐ যে বাচ্চাদের প্রতি টান,মজা করবে ওদের সাথে তাই গুরুত্ব দেয় নি শারীরিক সমস্যা টা কে।
“নতুন মামী???তুমি ইল???”
“না বাবু……তেমন কিছু না….ইটস ওকে…….”
“তাহলে বমি করলে কেনো???তোমার কি জ্বর নতুন বউ….আমার জ্বর হলে বমি আসে আমার…..”
“না বাবা।কিছু না।লাড্ডুতে একটু দুধ আছে তো আর আমি তো দুধ খাই না তাই….”
“ওওওওওওও……”
“হ্যাঁ রে পুঁচকে ছেলে।আচ্ছা চলো এবার আমরা শুয়ে পড়ি….”
“বাট নতুন মামী তুমি তো খাও নি…….”
“আমি সন্ধ্যায় খেয়েছি।আর খেতে হবে না……..”
“আচ্ছা।আপু চলো শুয়ে পড়ি।তুমি একপাশে আর আমি একপাশে……”
“তাহলে ছোট মামা কোথায় থাকবে???”
“উমমমম….কাকাই তোমার ঐ পাশে থাকবে।আমি তো মাঝখানে থাকি না।আমি আর কাকাই দুপাশে। আর কাকাইয়ের পাশে তুমি আর নতুন বউয়ের পাশে আমি।হবে না নতুন বউ???”
“ওরে বুদ্ধিমান।হবে হবে…….”
নৌশিন মুঁচকি হাঁসে।
এটা ভেবে যে এখন ঘুমিয়ে পড়লে,রাতে আর খেতে হবে না।না হলে সাদাদ জোর করে খাওয়াবে।আর নৌশিন এখন আগের চেয়ে আরও খেতে পারে না।বরং বেশি মসলা,দুধ জাতীয় খাদ্য এসবের গন্ধ ই সহ্য হয় না।তাই সাদাদের খাদ্য বিষয়ক অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য দু বাচ্চা কে দু পাশে নিয়ে শুয়ে পড়ে।
খাওয়ার সময় হলে ডাক পড়ে নৌশিনের।
বাচ্চারা খেয়েছে অনেক কিছু তাই ওদের আর ডাকে নি।
সাদাদ নিজেই নৌশিনকে ডাকার জন্য রোমে আসে।
তিন জন জড়াজড়ি করে বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে দেখে মুচকি হাঁসলো সাদাদ।
দুজনের থেকে নৌশিনকে ছাড়িয়ে ভালো করে শুয়িয়ে দিলো তুবা আর অরূপকে।দুজনেই নৌশিনের উপরে শুয়ে ছিলো;হাত-পা ছড়িয়ে।
নৌশিনের ঘুম টা গভীর হয় নি।তাই দু-তিন ডাকে উঠেই চোখ মেলে তাঁকায়।
“কি??”
“খাবে….উঠো….”
“প্লিজ….সাদাদ….খুব ঘুম পাচ্ছে……”
“আগে খাবে।তারপর ঘুম…..”
“প্লিজ…….”
“হেয়…..সো সাউন্ড…..”
নৌশিনের কোনো কথা শোনলো না সাদাদ জোর করে খাওয়ার জন্য নিয়ে গেলো।
নৌশিনকে দেখা মাত্রই ওয়ালিদ প্রশ্ন করে,
“কি ব্যাপার সিস্টার???ঘুমিয়ে গিয়েছিলে নাকি??”
“হুম ভাইয়া…..”
“এখনো ঘুম কাটে নি।জোর করে আনলো??”(নিপা)
“ওর কি ওর তো শুধু খাওয়া…..”
নৌশিনের কথা শোনে হেঁসে দেয় সবাই।
সবাই একসাথে মজা করে খেলেও নৌশিন তিন-চার লোকমার বেশি খেয়ে পারে নি।
ওয়ালিদ,নিপাকে উদ্দশ্য করে আজ বাসায় সব কিছু ই হাই ফুড।নৌশিন এমনিতে ই এসব কম খায়।আর এখন তো এগুলো খেতেই পারে না।
গা গুলিয়ে আসছে খুব।
তবুও সবার সামনে অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে তিন-চার লোকমা মুখে ডুকিয়ে তাড়াতাড়ি রোমে চলে আসে।
সাদাদ আজ আর ধমকাধমকি করে নি ভেবেছে ঘুম পেয়েছে তাই কোনো মতো খেয়ে চলে গেলো।
কিন্তু নৌশিন আসলে আর খাবার সামনে নিয়ে বসে থাকতে পারছিলো না।
খুব অসস্তি লাগছিলো।
রোমে এসেই সোফায় গা মেলিয়ে দেয়।বিছানায় তো অরূপ আর তুবা।সেখানে হাত পা এভাবে ছড়ানো যাবে না।
তাই সোফায় শরীর ছেড়ে দিলো।
সাদাদ যদি এসে দেখে এভাবে শুয়ে আছে তাহলে হাজার টা প্রশ্ন করবে।তাই খুব সাবধানে উঠে গিয়ে তুবা আর অরূপের মাঝখানে শুয়ে পড়ে।
নিপা একবার তুবাকে নিতে এসেছিলো কিন্তু নৌশিন দেয় নি।আর রাফসা তো জানেই আজ কোনো কিছু করেও লাভ হবে না।সব কয়টা এক বেডে থাকবে,সকালে উঠে আবার আলাদা শুয়েছে দেখলে কান্না কাটি শুরু করবে অরূপ।তাই গিয়ে শুধু দেখে এসেছে একবার ডাকাডাকি আর করে নি।
সাদাদ,সাদ আর ওয়ালিদের সাথে গল্প করে ঘুমানোর জন্য রোমে চলে আসে।
দু জনের বেড। ভাগ্যিস বড় মাপের খাট।তাই চার জনের কোনো সমস্যা হবে না।
আর নভেম্বর মাস বেশি গরমও না তাই থাকা যাবে চার জন।
তেমন কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা না।তবে আফসোস একটাই আজ বউকে একটুও আদর করতে পারবে না।
তবুও শান্তি,বউ হাঁসি মুখে ঘুমিয়েছে;এটা ভেবে।
সাদাদ দরজা লাগিয়ে।ঘুমন্ত তিন বাচ্চার কপালে চুমু এঁকে ফাঁকা জায়গায় শুয়ে পড়ে।
এমন ভাবে শুয়েছিলো তিনজন।পারফেক্ট করে রেখেছিলো যে,সেটা খুব ভালো করেই বুঝা যায়।
কম্বল দুটো।একটু শীতও লাগছে।বড় কম্বল টা ওদের তিনজনের উপর দিয়ে,নিজেও একটা কম্বল পেঁচিয়ে শুয়ে পড়ে।
কিন্তু নৌশিন তখনো ঘুমায় নি।
চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো।
খুব অসস্তি লাগছে ওর।
প্রায় সারা রাত এপাশ-ওপাশ করে কাটিয়ে দিয়েছে।তুবা মাঝখানে থাকায় সাদাদ বুঝতে পারে নি সেটা।
না হয় ঠিক ধরতে পারতো।
ফযরের আযানের একটু আগে চোখ লেগে আসে নৌশিনের।
কিন্তু আযানের শব্দে ঘুম টা আর হয় নি।
উঠে সাদাদকে ডেকে তুলে মসজিদে পাঠায়।কোনো রকমে ওযু সেরে নামায পরে আবারও আগের জায়গায় শুয়ে পরে।
শরীর এতোটাই দুর্বল ছিলো তার উপর সারা রাত ঘুম হয় নি।তাই শুয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে যায়।
চোখ খুলে সাদাদের ডাকে।
তবুও চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ।সাদাদ উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করে,
“কি হয়েছে???সারা রাত ঘুম হয় নি???এমন দেখাচ্ছে কেনো???”
নৌশিন উঠাতে চাইলেও পাড়লো না।মাথা টা ভীষণ রকম ঘুরছে।তাই আবার শুয়ে পড়লো।
“সাদাদ,আমি একটু পড়ে উঠি??”
“আচ্ছা।সে না হয় উঠো।বাট তোমার শরীর খারাপ লাগছে নাকি??”
“আরে না।।।।ওরা কোথায়??”
“ওরা দুজন উঠে গেছে।আর নয়টার বেশি বাজে।তোমাকে খাওয়ার জন্য দু বার ডেকেছি আমি বাট তুমি টের পাও নি।আই থিঙ্ক তুমি সিক।না হলে এক দু ডাকে তোমার ঘুম ভাঙার কথা…….”
“না তেমন কিছু না…….বাট নয়টার বেশি বাজে!!!!”
“আস্তে।উঠতে হবে না তোমার।
নিশ্চয় কাল চার জনে কমফরটেবল ফিল করো নি তাই ঘুমাতে পারো নি….আজ এনে দেখো!!!!একটাকেও….;খবর খারাপ করবো তোমার।সারা দিন একসাথে তারপর রাতেও সব এক সাথে।ঘুম না হলে কেমন লাগে???আমি তো ঠিকি ঘুমাই।হয় না তো তোমার…”
“না সাদাদ।চার জনের জন্য না……”
“ওকে মানলাম।এখন শোনো সবাই খেয়ে নিয়েছে,এমন কি আমিও ওয়েট করতে পারি নি আজ।অফিসে একটা দরকারী কাজ পড়ে গেছে যেতেই হবে দশটার মাঝে।তাই তোমার জন্য রোমে খাবার এনেছি…একটু কষ্ট করে উঠে বসো।।এখানেই মুখ টা জাস্ট ধুয়ে নাও আমি খাইয়ে দিচ্ছি।সকালে তো ফ্রেস হয়েছো একবার আর হওয়ার দরকার নেই…..”
নৌশিন ওঠে ওয়াশরোমে যেতে চাইছিলো।কিন্তু সাদাদ বেডে বসিয়েই মুখ ধুয়ে দেয় জোর করে।নিজ হাতে একটা লুচি আর হাফ ডিম ভাজা খাওয়ায়।
আর কিছু ই খাওয়াতে পারে নি,নৌশিন কান্না করে দিবে এমন একটা ভাব দেখে আর জোরও করে নি।
নৌশিনের কাছে তুবা আর অরূপকে বসিয়ে রেখে গেছে যেন নৌশিন না উঠে।
আর ওদের বলছে,ওদের নতুন বউ অসুস্থ তাই যেনো সেবা যত্ন করে আর জোর করে কিছু খাওয়ায়।
বাচ্চারাও তাই করছে।গল্প করলেও লাফালাফি করছে না।হরতোকলে মেতে নেই,একজন নৌশিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তো আর একজন এটা ওটা নিয়ে আসছে খাওয়ানোরর জন্য।
নভেম্বরের দশ তারিখ,পরশের পরিবার আসে নৌশিনদের বাসায়।
সবাই মিলে কথা বলার মাধ্যমে আগামী এক ডিসেম্বর রিদি আর পরশের আনুষ্ঠানিক বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করা হয়।
পরশ বেশ খুশি।তার ভালোবাসার মানুষকে ঘরে আনবে সে।
কিন্তু রিদি!!!!
নিজেকে এখনো ঠিক করতে পারে নি।তবে পরশে এই কয়েক দিনে অনেক আপন হয়ে গেছে।সারা দিন তো জ্বালিয়েছেই।আর রাতেও দুইটো-তিনটা পর্যন্ত ফোনে বকবক করেছে।
আজকাল পরশ বেহায়াপনা করলে রাগ হয় না।হ্যাঁ অস্থিরতা বাড়ে কিন্তু বেহায়াপনা না করলে একদম ভালো না রিদির।
ঝেঁকে বসে গেছে ওর মনে পরশ।যেখানে আজকাল সাদাদের বিচরণ নেই বললেই চলে।
ঐ দিন রাতে ই নৌশিন খুব সুন্দর করে সেজে একদম পটের বিবি হয়ে সাদাদের জন্য রোমে অপেক্ষা করছে।খুব রোমান্স কাজ করছে আজ ওর।
সকালে বের হয়েছিলো কোথায়।সেখান থেকে ফিরার পর ই মুখ থেকে হাঁসি সরছে না।
শরীর ভালো নেই খুব একটা তবু মেয়ের সুখের সীমা নেই।
সাদাদের গিফ্ট করা একটা মেরুন রঙের শাড়ি পড়েছে।
শাড়ি টা বেশি জমকালো না।
সাধারণের মাঝেও বেশ সুন্দর।
নৌশিনের গায়ে মানিয়েছে খুব।একপাশ করে বেনুনী করেছে।এখন তো আর বাইরে যাবে না,তাই বেশি সেজেছে।
নৌশিন টা না এমনি করে।
বাসায় সাদাদের জন্য সাজে শুধু।বাইরে একদম সাজে না।জাস্ট গুছানো আর কি।
বাড়িতেও দিনে পরিপাটি।
তখন তো বাড়ির সবার সামনে বের হতে হয়।
বাট যখন সাজতে ইচ্ছা হয় তখন শুধু রাতে খাওয়ার পর।
তখন তো সাদাদ ছাড়া আর কেউ দেখবে না।তাই খুব সুন্দর করে সাজে।
তবে আজ যে রূপবতী পাগল করা সাজে সেজেছে।
চোখে মোটা করে কাজল।
গলায় সাদাদের দেওয়া প্রিয় হার। অনেক গহনা থাকলেও আজ সাদাদের দেওয়া সব কিছহ পড়েছে।শাশুড়ীর দেওয়া ভারী একটাও পড়ে নি।
সাদাদ বিয়ের পর যা যা গড়িয়ে দিয়েছে সব পড়েছে আজ।সাদাদ কালো সাজতে বলেছিলো একদিন।
বলেছিলো নৌশিন নাকি শ্যামা বা কালো হলে খুব হতো।
আর নৌশিনেরও শ্যামা মেয়েদের খুব ভালো লাগে।
তাই আজ সাদাদের আনা কালো মেকাপ করে শ্যামা বউ সেজেছে।
কি যে অপসরী লাগছে!!!
নিজেকে আয়নায় মুগ্ধ হয়ে দেখছে নৌশিন।
প্রিয় মানুষের প্রিয় রং এ ফুটিয়ে তুলেছে ভালোবেসে দেওয়া সব উপহারগুলো।
ইশশশশশ…!!!!লিপস্টিক টা ও সাদাদ এনেছিলো সিলেট থেকে।লাল টকে টকে,বলেছিলো সে দিন দিতে বাট নৌশিন দেয় নি।বলেছিলো যে দিন সব চেয়ে সুখী লাগবে সে দিন নাকি দিয়ে দেখাবে।আজ নৌশিন খুব সুখী খুব।নিজেকে পৃথিবীর রাণী মনে হচ্ছে তার।
মনে হচ্ছে সমস্ত সুখ ওর পায়ের কাছে জোরো হয়েছে।
আর সেটা সাদাদের জন্য সম্ভব হয়েছে।
হ্যাঁ সাদাদ এর জন্যই সম্ভব হয়েছে।
!!!ইশশশশশশ,সাদাদ কি সামলাতে পারবে নিজেকে???
কি করবে কে জানে;যা করে এমনিতেই….আর আজ!!!!!!
ভেবেই পাচ্ছে না নৌশিন।
আয়নায় নিজেকে দেখতে অন্য রকম লাগছে আজ।
লজ্জা করছে খুব………….
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে নৌশিন দ্রুত বারান্দায় চলে আসে।
সাদাদ রোমে ডুকে নৌশিনকে না পেয়ে ওয়াশরোমে দেখে পায় না বলে বারান্দায় চলে আসে।বারান্দার মৃদু আলোয় কোনো এক অপ্সরী বনলতা গাছের বাকল ধরে বাইরের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাঁকিয়ে আছে।
যার মুখ টা স্ষপ্ট দেখতে পারছে না সাদাদ।তাই অধীর আগ্রহে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে…..
সাদাদ ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে অপ্সরী টার দিকে।
লম্বাচুল গুলো এক সাইড হয়ে আছে।বেনুনীর ভাজ টা পেছন থেকেও দেখা যাচ্ছে বেশ খানিক টা।
না আজ ফুল ব্যান গলার ব্লাউজ না।মিডিল হাতার গোল বড় গলার একটা ব্লাউজ পড়েছে রূপসীটা।
গায়ের রং টা ফর্সা না সেটা একটু কাছে যেতে বুঝতে পারলো সাদাদ।
নিজের পচ্ছন্দ করা হার টা চিনতে খুব বেশি দেরী হলো না।
খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে সাদাদ।সাদাদ যে বড্ড লোভী।
কখনো লোভ সামলাতে পারে না।
জড়িয়ে ধরলো পেছন থেকে নৌশিনকে।
নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আরও স্তব্ধ হয়ে যায়।
শ্যামা গায়ের রং এ কাজল কালো চোখ।পাড় সরু সাদা মাটা মেরুন রঙের শাড়ি।
গলায় পচ্ছন্দের হার।
কানে নিজের গড়িয়ে দেওয়া মাঝারি ঝুমকো।
যার উপর শখ করে কালো ডাইমন্ডের স্টোন বসিয়ে এনেছিলো। সাদাদ দেওয়া সব কিছু পড়ছে আজ নৌশিন।
শ্যামলী রংয়ের অপরূপা দাঁড়িয়ে আছে সাদাদের সামনে। রক্ত জবার মতো লাল রঙের ঠোঁট।
আহ!!!!কি সতেজতা…..
শিশির ভেজা দুর্বা ঘাসের মতো একদম।
সাদাদ নৌশিনের থুমনি ধরে নৌশিনের মুখ টা কিছু উঁচু করে নিয়ে দেখছে।
“তোর রূপে আগুন জ্বালায়…খা করলি মোরে আঙ্গার সই…..তোর শরীরের ভাজে আমায় ডুবায় নে রে যৌবনদ্বয়…
তোর রঙেতে রাঙা আমায়…
মাতাল হওয়ার ভুল….সখী তোর দেহে তে মরবো আমি….বিধাবো তরে প্রমের সুই…..”
কোনো এক বাওলা গানের মাতাল সুরী গান গাইলো সাদাদ।লজ্জায় চোখ বুঝে আছে নৌশিন।
সাদাদ নৌশিনের দু চোখের পাতায়,গভীর ভালোবাসা বিলিয়ে দিলো।
“এই রূপবতী…..কি করিস এসব তুই???তোর রূপের আগুনে দিবানিসি জ্বলি আমি……আমার ভালোবাসার মাতলামো বুঝি তোর এতোই ভালো লাগে…..এমনিতে ডাকলেও তো পারিস…মাতাল হওয়া বইয়ে দিতে পারি তোর শরীর মনে….ইশশশশ নারী জাতি!!!বড়ই কুটলা…..”দেহ সজায় আমার লাগি;ফের বলে ছুইও না নাগর ভয়ে ক্ষয়”….আসলেই কি এতো ভয়???ভয় থাকলে এভাবে সামনে আসে কেনো রে মেয়েরা???
বউ আমি মুগ্ধ।শ্যামলী নারী তোর প্রেমে আবারও হারিয়ে যাবো রে আজ….তোর প্রেমেতে মাতাল হবো আজ…..ভুলিয়ে দিবো আগের সব সুখ……ছাড়িয়ে যাবো সব পূর্ণতা…….”
সাদাদ আর সামলাতে পারছে না।কাঁপা কাঁপা শরীরের দিকে আলোকপাত কর ধরে রাখতে পারে নি নিজেকে।গলার ভাঁঝে মুখ ডুবায় সে……।দু হাতে সাদাদের মাথার পেছনের চুল আকড়ে ধরে।
গলার আরও গভীরে চুমু বিলিয়ে দিচ্ছে সাদাদ।
নৌশিন সাদাদকে সামলে ছাড়িয়ে নিলো নিজেকে……….
মুঁচকি হেঁসে রোমে চলে যায়।
সাদাদের আর কি করার সে ও নৌশিনের পেছন পেছন রোমে ডুকে।
সোফায় গিয়ে বসে নৌশিন।
সাদাদ নৌশিনকে অনুসরণ করছে।সাদাদের এমন বাচ্চামো ভাব দেখে মিটি মিটি হাঁসছে নৌশিন।
“হেয়,নৌশিন……..”
“হুম…….”
“নজর সরাতে পারছি না……”
“আহা রে…….”
সাদাদ নৌশিনকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে,
“এতো দাম?????শেষ করে দিবো সব……ভালোবাসি তো….”
নৌশিন মুখ টা একটু ভেঙিয়ে বললো,
“ইশশশশ,শেষ করে দিবে!!!বললেই হলো।….ছাড়ো তো….”
“হুশশশশশ……..”
সাদাদ বিভোর হয়ে দেখছে নৌশিনকে।
নৌশিন সাদাদের চোখে চোখ রেখে আবেশিত করছে সাদাদকে।
নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সোফা থেকে উঠে আলমারীর দিকে এগিয়ে যায়।
সাদাদ ব্যর্থ একটা ভাব নিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দেয়।
“নৌশিন,ভালো হচ্ছে না কিন্তু…..কত আকর্ষণীয় লাগছে,আর আমি দেখতে পারছি না….”
আলমারী খুলতে খুলতে জবাব দেয় নৌশিন,
“কি এমন লাগছে???যার জন্য এতো??”
“আজব তো!!!কি এমন লাগছে মানে???তুই জানিস শ্যাম রূপী হুর সামনে ঘুরছে আমার।আমার সব শক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে তোকে দেখে।আয় না কাছে,এটলিস্ট দেখি….আমি যদি কাছে যাই তাহলে কিন্তু ভালো হবে না….”
নৌশিন টি টেবিল থেকে একটা বক্স নিয়ে সাদাদের পাশে বসে।
সাদাদ নৌশিনকে দেখে যাচ্ছে শুধু।চোখ সরাতে পারছে না।এতো অপরূপ কেনো এই মেয়ে।শ্যামলা রং এ রূপ যেনো উঁপচে পড়ছে।সোনার গহনা গুলোর সৌন্দর্য যেনো এই গায়ের উপর পড়ে শতগুণ বেড়ে গেছে।লম্বা বেণুনীর পাট আরও ভয়ঙ্কর সুন্দর করে তুলেছে মায়াবতীটাকে।
সাদাদ একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে।
গলার ভাঁজে মুখ গুজার জন্য অনেক টাই এগিয়ে এসেছে।
ঠিক তখনি পিছয়ে যায় নৌশিন।
“উমহু….এতো অধৈর্য কেনো তুমি!!!!….”
“প্লিজ,নৌশিন…….”
নৌশিন আবারও ঠিক হয়ে বসে।বক্স টা হাতে নিয়ে খুলছে আর বলছে,
“আগে অন্য একটা জিনিস…”
“কি???”
নৌশিন বক্স থেকে একটা মিষ্টি নিজের হাতে করে সাদাদের মুখের সামনে ধরে,”এটা…”
“মিষ্টি?????”
“হুম….”
সাদাদ নৌশিনের হাত টা সামনে থেকে সরিয়ে;নৌশিনের কমড়ে হাত দিয়ে নিজের কাছে সাথে মিশিয়ে নেয়…..”আমার ঐ মিষ্টিতে হবে না রে….”
নৌশিন যে হাতে মিষ্টি রেখেছে সেটা আবারও সাদাদের মুখের সামনে এনে বললো,
“সাহেব!!!আপনার বিবি সাহেবা নিজ হাত অনেক কষ্ট করে বানিয়েছে আপনার জন্য….খাবেন না??”
“আচ্ছা!!!!তাই নাকি??তাহলো তো বিবি সাহেবা আর বিবি সাহেবার বানানো মিষ্টি দুটোই……”
“ইশশশশ….তুমি না….আগে এটা খাও তো……”বলেই সাদাদের মুখে মিষ্টি টা ডুকিয়ে দিলো।
“উমমমমমম…..ওয়াও……এনার্জি হবে রে বউ…….”
“ধ্যাত….কেমন হয়েছে এটা বলো??”
“ওয়াও জাস্ট ওয়াও……”
“আর কাউকে দিই নি কিন্তু….তোমাকেই প্রথম।কাল দিবো সবাইকে……”
“বলো কি????”
“হুম…..তুবা আর অরূপকেও না……শুধু আমার পাগল টার জন্য……”
“ইশশশ….বউ এতো কিছু???”
“হুম……”
সাদাদ কিছুক্ষণ কি একটা ভাবলো।নৌশিনকে আরও শক্ত করে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললো,
“নৌশিন????”
“কি???”
“মিষ্টি??”
“হুম….”
“তুমি নিজের হাতে বানিয়েছো??”
“হ্যাঁ……”
“মানে???তুমি কি বলেছিলে,আমাকে তুমি কবে নিজের হাতের মিষ্টি খাওয়াবে???নৌশিন,নৌশিন????তুমি………”
বুঝতে পারছে নৌশিন,সাদাদ কি বলতে চাইছে।
লজ্জা লাগে যে,তাই নিচের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
সাদাদ নৌশিনের থুতনীতে হাত রেখে মুখ উঁচু করে নিয়ে আবারও উৎসুক হয়ে বললো,
“নৌশিন!!!!!তুমি ঐ দিন বাথরোমে বলেছিলে আমাকে নিজের হাতে ঐ দিন মিষ্টি বানিয়ে খাওয়াবে যে দিন আমাদের……”
আর পারছিলো না নৌশিন সাদাদের কথা পুরোটা শেষ না হতেই সাদাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
সাদাদের আর বুঝতে বাকী থাকে না।মহাসুখের অট্ট হাঁসি শুরু করে সাদাদ।সর্বশক্তি দিয়ে আগলে নিলো নৌশিনকে।
সাদাদ নৌশিনকে কোলে নিয়ে সোফা থেকে উঠে যায়।
এতো খুশি কোনো দিন হয় নি সাদাদ।নৌশিন তার জন্য পৃথিবীর সেরা উপহার আনতে চলেছে।সব ছেলের কাছে এটাই সবচেয়ে বড় উপহার।
ঘুরতে থাকে সাদাদ,নৌশিনকে কোলে নিয়ে।
“নৌশিন,নৌশিন আম সো হ্যাপি।লাভ ইউ সো মাচ…….বউ আমরা বাবা-মা হবো…..বউ তোমার কত দিনের আশা পূরণ করতে পেরেছি আমি……”
নৌশিন তো সাদাদের কান্ডে হাঁসতে হাঁসতে শেষ।
নৌশিন ভাবতেই পারে নি সাদাদ এতোটা খুশি হবে।
“সাদাদ,নামাও…..পাগল হয়ে গেলে নাকি????নামাও….. ”
“উফফফ…..এতো বড় সারপ্রাইজ আজ আমার জন্য!!!!ও আল্লাহ্ থ্যাঙ্কস এ লট……”
“সাদাদ,নামাও…..আমার এমনিতেই কিন্তু মাথা ঘুরে।নামাও না হলে মাথা শেষ হয়ে যাবে আমার…….”
সাদাদের হোশ আসে এবার;যে ওর বউ প্রেগনেন্ট।এতো ঘুরালে প্রবলেম হবে ওর।
তাই তাড়াতাড়ি স্থির হয়ে যায়।কিন্তু কোল থেকে নামায় নি এখনো।
“ওফফ,মাথা গেলো গো আমার।এভাবে কেউ ঘুরায়??এমনিতেই মনে হয় হাঁটতে গেলে পড়ে গেলাম….আর তুমি!!!!”
“বউ!!!!যা ডোজ দিলি আজ???এতো কিছু??”
“আরে সব কিছু তো আয়োজন ছিলো জাস্ট আসল খবর টা দেওয়ার জন্য।”
সাদাদ নৌশিনকে একটু উঁচু করে কপালে চুমু এঁকে বললো,
“কবে জেনেছো??”
“সন্দেহ করছিলাম আগে থেকেই…..ঐ যে তোমাকে হসপিটালে একদিন বলছিলাম না???যে আমার কিছু একটা মনে হচ্ছে বাট আমি সিউর নই??”
“হুম…..ডেট আস্ক করেছিলে….সাত অক্টোবর ছিলো ঐ দিন…..রাইট??”
“হুমমমমমম…….”
“আচ্ছা!!!!তা ডেট জেনে আপনার কি কাজ ছিলো??”
নৌশিন সাদাদের বুকে একটা চিমটি দিয়ে লজ্জায় লাল হয়ে বললো,
“ইশশশশ।জানে না যেনো….. ”
“আহা বলো না…..”
“নামাও তো।এতো ঘরা ঘুরিয়েছো মাথা তিনশ ষাট ডিগ্রী এনঙ্গেলে ঘুরছে……নামাও…”
“বউ মনে ছিলো না এখন তোমার মাথা ঘুরে….বেশি খুশি হয়ে গিয়েছিলাম……বাট এখন তো স্বাভাবিক আছি।থাকো না কোলে……আর বলো ডেট জেনে কি কাজ ছিলো??”
“ধ্যাত….যতসব…..খচ্চর কোথাকার…..নামাও তো….”
“উমহু…..এতো লজ্জা কোথায় রাখিস রে রূপবতী???আমাকে বলতে লজ্জা…..”
“সাদাদ!!!!প্লিজ…….”
“বউ প্লিজ!!!!কিসের ডেট ছিলো ঐ টা…..আমি যেটা জানি সেটা তো মে বি দুই তারিখ ছিলো……”
“সাদাদ!!!!!!!!!!”
“আস্তে…..বাচ্চাভাববে ওর আম্মু ঝগড়াটে…..কি গলা!!!”
“ভাবুক…….যা খুশি ভাবুক….”
“আচ্ছা!!তোমার কেনো সন্দেহ হয়েছিলো যে তুমি আম্মু হতে চলেছো??”
“এটা কোনো কথা???আমি বুঝবো না???”
“না তুমি তো আর আগে কখনো প্রেগনেন্ট হও নি….”
“এ ছিঃ…..কি সব কথা!!!!”
“আরে সে ভাবে বলি নি।মানে বলেছি তোমার তো আর অভিঙ্গতা ছিলো না তাহলে কি করে বুঝলে??”
“ওফফফ…..সাদাদ!!!আমি তো মেয়ে নাকি???নিজের শরীরে আরেকটা দেহ বসবাস করতে শুরু করেছে আমি বুঝবো না???আর তা ছাড়া আর কিছুদিন গেলে তো বাড়ির মানুষ ই বুঝে যেতো।
যেমন কাল ভাবী কিছুটা ধরতে আন্দাজ করছিলো আমার শারীরিক অবস্থা দেখে…..ডক্টর বলে কথা….. ”
“আচ্ছা!!!তাহলে কাল আমাকে জানাও নি কেনো??”
“আরে আমি তো কাল সিউর ছিলাম না।তবে আমার নব্বই ভাগ সম্ভাবনা ছিলো আমি আপনার বেবী ধারণ করেছি।
আর এটা আরও এক মাস আগেই আমার মনে হচ্ছিলো মানে ঐ দিন হসপিটালে।কারণ আমার শুরু থেকে কখনো ঐসব ডেট উল্টাপাল্টা হয় নি…..দুই তারিখ তুমি তো জানো ই…..অল টাইম ঠিক টাইমেই হয়…..দু দিনের বেশি হেরফের কোনোদিন হয় নি….বাট সাত তারিখ পার হচ্ছিলো আমার তো সে রকম কোনো ইস্যু হচ্ছিলো না….যেমন ঐসবের আগের দিন পেট ব্যথা হয় খুব….আর শরীরও কেমন জানি লাগছিলো…….তাই তোমাকে বলেছিলাম আমার কিছু একটা মনে হচ্ছে…..আর তুমি তো হাসপাতাল থেকে সরছিলেই না তাহলে তো টেস্ট করতে পারতাম……”
“আচ্ছা!!!এই ব্যাপার।আমি থাকলে টেস্ট করালে কি হতো???তার মানে দু মান্থ নৌশিন…..আর তুমি ফার্স্ট মান্থে আন্দাজ করেও টেস্ট করাও নি……এজন্যই আজ কাল খাবারে এতো বেশি অরুচি……আর আমি তো ভাবছি এটা নরমাল ব্যাপার তোমার……..”
“সাদাদ!!!শুরু হলো তো তোমার টেনশন???আম ওকে….”
“কবে টেস্ট করিয়েছো??”
“আজকে…..”
“বাসায়??”
“না…..”
“তাহলে??”
“তুমি অফিস যাওয়ার পর বাইরে গিয়েছিলাম….”
“ভাবীকে নিয়ে??”
“উমহু…..ভাবীও জানে না যে আমি প্রেগনেন্সি টেস্ট করাতে গিয়েছিলাম।দু তিন ধরে খাওয়ার পর পর ই বমি হচ্ছে….আর কাল ভাবী বমি করার সময় দেখে নিয়েছিলো…তাই জানতে চেয়েছিলো…. আমি বলেছি যে আমি জানি না….তো ভাবী বললো তোমাকে টেস্টবার আনার জন্য বলতে…..বাট আমি তো সিউর হয়ে তোমাকে সবার আগে বলতে চেয়েছিলাম তাই একাই গেলাম…..দেন কালকে ভাবীকে বলবো যে পজিটিভ……”
“নৌশিন!!!!!!!!……..আই লাভ ইউ জান…..আই লাভ ইউ সো মাচ…….”
“নামাও……আর কত…..”
“ওকে ওকে….”
সাদাদ নৌশিনকে বিছানায় বসিয়ে,নিজে ফ্লোরে বসলো।
নৌশিনের উরুতে মাথা রেখে পেট জড়িয়ে ধরলো নৌশিনের।
শাড়ির আচল টা পেট থেকে সরিয়ে,নাভীর আশেপাশে গভীরভাবে চুমু দিচ্ছে।
নৌশিন সাদাদের চুল মুঠি করে রেখেছে শক্ত করে।
সাদাদ উঠে নৌশিনের পাশে বসে।নৌশিন লজ্জায় লাল-শ্যামা হয়ে আছে।
সাদাদ নৌশিনকে টেনে নিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে জানতে চাইলো,
“কষ্ট হয় খুব তাই না???”
নৌশিন মুঁচকি হেঁসে মাথা নাড়িয়ে না জানালো……।
“কাউকে জানাও নি,দুর্বল লাগে নি এতোদিন??”
“লেগেছে তো……বুঝতে দিই নি….যদি কেউ ধরে ফেলে….আমি সিউর হতেও পারছিলাম না……বাসার বাইরে ই তো যাওয়া হয় নি যে একটা বার কিনবো….ঐ দিন ইয়ারপোর্টে নিয়ে গেলে আশপাশের ফার্মেসী থেকে কিনতাম….বাট তুমি তো…”
“এজন্যই যাওয়ার জন্য এতো বায়না করছিলে???”
“তুবাকে আগে দেখা হতো।আর আমাদের বাচ্চারও খবর আগে নেওয়া যেতো………জানো দুই মাস রানিং…….”
সাদাদ নৌশিনের গলায় গভীর ভাবে চুমু খেয়ে জবাব দিলো,
“আমার বউ এতো শক্ত।আমাকে আগে জানালে কি এতো কষ্ট হতো???কাল রাতে তাহলে এই অসত্বির জন্যই ঘুম হয় নি তোমার।আমি তো কালকে বুঝেছি যে রাতে তোমার ঘুম হয় নি….. একবার বলতে তো পারতে???খবর না হয় আজকেই দিতে!!!আমাকে বলতে হবে নৌশিন কখন কেমন লাগছে……”
“সাদাদ!!!এই জন্যই না তোমাকে কিছু বলতে চাই না এতো টেনশন করো!!!…..”
“ভালোবাসি তো……”
নৌশিন সাদাদকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আমিও খুব ভালোবাসি……”
“আচ্ছা……তা ম্যাডাম দুই মাস কি রানিং???নাকি এক মাস চলে দু মাস এলো??”
“উমহু…..বাষট্টি দিন…….”
“কিহ????”ভ্যাবাচেকা হয়ে যায় সাদাদ নৌশিনের কথা শোনে।
“হুম…….পা পোড়ায় সময় থেকেই আমার শরীর কেমন হচ্ছিলো।তার চার পাঁচ দিন পর থেকেই খাবারের গন্ধ নিতে পারতাম না………বাট বুঝতে দিই নি তো কাউকে……আর আমিও সুযোগ পাই নি চেক আপ করানোর।।।।আজ সকালে তুমি অফিস যাওয়ার পর পর ই…….”
“যদি,প্রেগন্যান্ট না হতে না তাহলে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পর বসাতাম………ফাজিল কোথাকার।কতটা কষ্ট হয়েছে….আর একা একা সব সহ্য করেছো……..”
“সাদাদ!!!!!শুরু হলো তোমার শাসন করা………আমি কত কি করে বললাম……”
সাদাদ মুঁচকি হেঁসে নৌশিনকে জড়িয়ে ধরে বলছে,
“বউ রে…..কাল থেকে বুঝবি শাসন কাকে বলে…….”
“এই শোনো সারাদিন আবার খাওয়া খাওয়া করো না…..আমি যতটা পারবো খাওয়ার চেষ্ঠা করবো….”
“এনাফ…..কাল থেকে আমি ভাববো…..”
“উউউ…….ঢং…..”
“এই ওয়েট……..পেটে কি আছে বলতে পারবে…..সেটা কি টেস্টে বলে দিয়েছে??”
“ধুর…..দুই মাসে বলে নাকি???দুই মাসে বোঝা যায়!!!!…..ছয়-সাত এর সময় মে বি…….আর আমি উইথ আউট টেস্ট বলতে পারি;ছেলে আছে এখানে(পেটে হাত দিয়ে)
…….”
“নো মাই কুয়িন…….আমার রাজ্যকন্যার অসিত্ব তোমার মাঝে……”
“ইই….রাজপুত্র…..”
“হুপপপপ……..”
“হুপপপপপ……আমি কিন্তু একা না এখন সো ধমক দিলেও ভয় পাবো না আর…..”
“আচ্ছা!!!!!এই বার;আসতে দাও…..দেখো কি হয়…..”
“বাপ-ছেলেকে তখন একসাথে পিটাবো….উনিশ থেকে বিশ কষলেই দেখাবো মজা…..”
“পাওয়ার!!!!!খুব বেশি??”
“খুব……আপনাদের দুই জনের চেয়ে অবশ্যই বেশি…….”
“দুই জনের চেয়ে বেশি??”
“হুম……”
সাদাদ নৌশিনকে নিজের বুকে চেপে ধরে শুয়ে পরে।
প্রস্থবারাবর শোয়ায় দুজনেরই পায় ই খাটের বাইরে।নিজের বুকের উপর নৌশিনকে শক্ত করে বেঁধে রেখেছে সাদাদ।
“আরে,কি হলো???”
“বউ,এতো সুন্দর লাগছে তোকে……জাস্ট বলে বুঝাতে পারবো না…..”
“ইশশশশ…..ঢং…..”
“সে তুই যাই বলিস,শ্যাম বর্ণের এমন সাজে যে তোকে দেখতে পারবো ভাবি নি।আসুক না আমাদের ভালোবাসার ফসল,দুজনে তোর এমন হাল করবো….তখন দেখবো এত রূপ তখনও থাকে নাকি??”
“কি সব বলো???”
“হুম…..খুব হিংসা হয় তোর এই রূপ দেখে…..সব সময় যদি আদর করতে পারতাম তাহলে বোধহয় হতো না.।।।।কিছুদিন পর তো….”
“কি কিছুদিন পর……”
“আমাদের রাজকন্যার জন্য তোকে তো সব দিয়ে ভালোবাসতে পারবো না….”
“যাহ্……”
“কি লজ্জা!!!কি লজ্জা!!!একা একা মা হওয়ার নিউজ লুকিয়ে রাখে যে মেয়ে তার আবার এতো লজ্জা……”
“সাদাদ!!!!!!উহহহমমমমম…..”
“ওরে পাগলী,বুকে মুখ লোকাস কেনো???বুকের ভেতরে নিয়ে যেতে ইচ্ছা হয়…….”
“হয়েছে,এবার ছাড়ো……বক্স টা খুলা…..মিষ্টি গুলো সবাইকে দিবো তো কাল…..”
“কাল তো মিষ্টির বন্যা বইয়ে দিবো দুই বাড়িতে……সেটা একটু নষ্ট হোক আগো তো তোকে নষ্ট করি আমি……”
বলতে দেরী হয় নি সাদাদ নৌশিনকো নিয়ে,ঠিক হয়ে শুয়ে পড়ে।আর উল্টোও হয়ে যায় সাথে সাথে।
প্রিয়তমার পেট থেকে শুরু করে কমশ্র উপরের দিকে শুকে নিচ্ছে।পাগল করা সুগন্ধ।গলার কাছে এসে থামে সাদাদ।গলায় অনেক হার পরেছে নৌশিন।মখ গুজার জায়গা নেই বললেই চলে।কানে ঝুমকোও আছে,মুচকি হাঁসলো সাদাদ।সাদাদ এমনভাবে তাঁকিয়ে আছে;নৌশিন আবেশিত হতে বাধ্য হলো।
বাঁধা দিতে ইচ্ছা করছে না।
তবুও উঠে আসতে চাইলো,সাদাদকে উপর থেকে সরিয়ে উঠে বসলো খাটে।নেমে যাওয়ার জন্য তৈরী হতেই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে সাদাদ।
ঘাড়ে মুখ গুছে।হারের লকেট গুলো এক এক করে মুখ দিয়ে খুলছে।আর বারবার কেঁপে উঠছে নৌশিন।লিকও করেছে ছেলেটা।চাদর পা দিয়ে আকড়ে ধরেছে নৌশিন।
চোখ এড়ায় না সাদাদের।
বিট বসিয়ে দিলো ঘাড়ে।
“আহ্……….”
আবারও আওয়াজ টা শুনতে চায় সাদাদ।তাই খোলা ঘাড়ে আবারও ভালোবাসার ব্যথা দিলো।
“আউচচচ……”
নৌশিন সাদাদের এমন কামড়ে নিজেকে সামলাতে পারে না।পাগল হয়ে যায় সে।
দ্রুত উঠে যায় বিছানা থেকে।বক্স টা ঢেকে রাখে আগের যায়গাতে।
পেছন ঘুরা আর হয় তার আগেই সাদাদ নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় নৌশিনের পিঠ।
ব্লাউজের গলা বড় হওয়ায় উন্মুক্ত পিঠে মুখ তুবায়।
ভালো বাসতে থাকে।
পেটে স্লাইড করছে অনবরত।নাভীর কাছে হাত নিয়ে দুষ্টু শুরু করছে সাদাদ।
কানের ঝুমকো দুটো কামড় দিয়ে খুলে ফেললো।
তারপর কানের লতিতে লাভ বিট দিচ্ছে একের পর এক।শ্বাস তীব্র হয়ে এসেছে নৌশিনের।সাদাদের থেকে দূরে চলে যায় আরও।
সাদাদ আর কম কিসে!!সে ও আঁচল ধেরে আটকিয়ে নেয় তার বধুয়াকে।
কানের কাছে মুখ নিয়ে বলছে,
“এতো বড় খুশির খবর দিয়েছিস আমাকে।তার উপর মন ভুলানো সাজ….আমি তো শেষ বউ।এবার তোর পালা….”
সাথে সাথে কোলে তুলে নিলো নৌশিনকে।বেডে নয়।বারান্দার ছোট্ট রেস্ট বেড টা তে আস্তে করে ছুড়ে মারে নৌশিনকে।
ঘরের সব লাইটিং অন।বারান্দার টা নিভিয়ে দিলো শুধু।আলো তো আসছেই রোম থেকে।
অবস্থান নিয়ে নিলো নিজের।
ভালোবাসায় মাতাল করে দিচ্ছে নৌশিনকে।গলার হার নেই এখন।আদরের সুযোগ করে নিয়েছে সাদাদ।
বারান্দার পর্দাগুলো রাত একটা সময়েও বড় অশান্ত।
উড়ে আসছে বারবার।
ভাগ্যিস ওয়ান সাইড গ্লাস।
না হলে এই সাদাদ নৌশিনের মান সম্মান সব শেষ করে দিতো।
নৌশিন আজ খুব মাতাল হয়ে গেছে সাদাদের এতো ভালোবাসায়।আরও যে চাই ওর। খুব আদর চাই তার।তাই তো নিজ হাতে শার্টের বোতামগুলো মুখে দিলো।
সাদাদও মাতাল।এক মুহুর্তও দেরী করে নি আঁচল টা কাঁধ থেকে সরিয়ে নিতে।
শুধু ভালোবাসায় কাটছে প্রতিটা মুহুর্ত।দম্পতির টা সুখে বোধহয় হিংসা হচ্ছে বিশাল আকাশটার।নৌশিনকে দেখে চাঁদ টাও আফসোস করছে।সাদাদ,যে খুব ভালোবাসা দিচ্ছে নৌশিনকে;চাঁদ তো তা পায় না…..তাই।খুব হিংসুক দূর আকাশের ঐ চাঁদ টা।
ফযরের আযানে ঘুম ভাঙে নৌশিনের।নিজেকে সাদাদের বুকে পায় সে।কম্বলে আবদ্ধ হয়ে আছে দুজনে।তিনটার দিকে ঘুমিয়ে পাঁচ টায় উঠেও বেশ শান্তি লাগেছে।সাদাদ যে পরিপূর্ণ করেছে তাঁকে;সাদাদের পরিপূর্ণতা পেলে রাতের ঘুম টা না হলেও চলে নৌশিনের।
আস্তে করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো নৌশিন।পেডিকোট টা শরীরে ভালো করে পেঁচিয়ে পাশে থাকা শাড়িটাও কোনো রকম জড়িয়ে নেমে যায় বিছানা থেকে।সাদাদের গাঁয়ে কম্বল ভালো করে দিয়ে চলে আসে বারান্দা থেকে।
ওয়াশরোমে ডুকে,সাওয়ার নিয়ে বের হয় একদম।
টাওয়েল পেঁচিয়েই বের হয়েছে।রোমে এসে সাদা রঙের সালোয়ার-কামিজ পড়ে নিলো।বেশ ঠান্ডা লাগছে,তাই হিটার চালু করে চুল গুলোও শুকাতে শুকাতে শুরু করেছে।
কাজ শেষে রোজকার মতো কাঠখড় পুড়িয়ে সাদাদকে জাগিয়ে সাওয়ারের উদ্দশ্যে।
সাদাদ নামাযে চলে গেলো সেও নামাযে বসে।হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করছে নৌশিন আল্লাহর কাছে তাঁকে এতো সুখী করার জন্য।পরিবার,স্বামী আর নিজের অনাগত সন্তানের জন্য অনেক দোয়া করে কোরআন তেলাওয়াতে বসে।
আগে যুহুরের পর পড়তো।ফযরের পর পরলেই ঘুম ভীর করতো।আজ থেকে সব নামাযের পর পড়বে।ওর সন্তানের জন্য পড়বে।কালও তো ঠিক জানতো না ওর গর্ভে আসলেই কেউ আছে কি না।কিন্তু আজ তো সে জানে তার সাদাদের ভালোবাসার ফসল সে ধারণ করছে।আল্লাহর সব বরকত যেনো তাদের সন্তান পায়,সব রকম বিপদ থেকে আল্লাহর রহমত প্রাপ্তি,আল্লাহ পাগল একটা সুস্থ সন্তানের জন্য যা যা করা দরকার একটা মায়ের সব করবে নৌশিন;সব।এটাই তার মনোবাসনা।
আর এদিকে পরশ সারা রাত ঘুমাতে দেয় নি রিদিকে।ফোনে কথা বলিয়েছে ছেড়ে সারা রাত……।বিশাল বেহায়া এই পরশ টা।খুব জ্বালায় রিদিকে।
এখনি যা সব বলে!!!ওর বাড়িতে নেওয়ার পর কি কি করবে একমাত্র আল্লাহ ই ভালো জানেন।
অবশেষে ফোন রেখেছে পরশ।
শান্তি পেলো রিদি।
কান ব্যথা করছে বেচারীর।
সারা রাতে কি সব বলেছে পরশ,ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।কম্বল মুড়িয়ে তো ছিলোই;এবার শুয়ে নাক মুখ ডেকে শুয়ে পড়লো।
ঘুম আসছে না।বার বার বেহায়ার কথাগুলো কানে বাজে।
রিদি ওর ফোনে পরশের নম্বর টা ‘বেহায়া’ দিয়েই সেভ করে রেখেছে।
চোখ বন্ধ করেও ঘুম আসছে না রিদির।
প্রেমঘোর পর্ব ৮৩+৮৪
আর পরশ তো ঘুমানোর চেষ্ঠায় করছে না।সারা রাত কখনো ছাদে বসে,কখনো সোফায় বা খাটে শুয়ে আর সকালের দিকে ঠান্ডা বাতাসের মাঝেও বারান্দার রকিং এ বসে কথা বলেছিলে।রকিং এ বা এলিয়ে দিয়ে রাতে রিদির কাছ থেকে জোর করে নেওয়া পিকগুলো বারবার দেখছে।বেশ কয়েকটা পিক আগের দিনগুলোর।তবুও পরশ আরও জোরাজোরি করে ততক্ষনাৎ ছবি তুলে দিতে বলেছে তাই দিয়েছে।
পরশ রিদির প্রত্যেকটা ছবিতে ভালোবাসার ছোঁয়া দিয়ে যাচ্ছে।বিছানায় গিয়ে বুকের উপর ফোন রেখে অনুভব করছে তার অর্ধাঙ্গিনীকে।