অন্তঃদহন পর্ব ৭

অন্তঃদহন পর্ব ৭
DRM Shohag

আকাশ তখন মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারে। তার বাবার এক ব্যবসায়ী কলিগ এর মেয়ে আকাশকে পছন্দ করতো। মেয়েটি আকাশকে প্রপোজ করেছিল। একটু ইউনিক ওয়েতে। একটি ছোট্ট চিরকুট লিখে তার অনুভূতি প্রকাশ করেছিল। আকাশ এর ভাবমূর্তি ছিল স্বাভাবিক। মেয়েটি আকাশকে চুপ থাকতে দেখে সামনাসামনি জিজ্ঞেস করে উত্তর চায়। আকাশ খুব স্বাভাবিক ভাবে জানিয়েছিল, আমার তোমাকে ভালো লাগে না।

আকাশ ভেবেছিল, মেয়েটি ভুলে গিয়েছে তাকে। কিন্তু না। মেয়েটি সবসময় আকাশের আশেপাশে থাকতো। বিভিন্ন ভাবে তার ভালোবাসা প্রকাশ করত। আকাশ মাঝে মাঝে প্রচন্ড বিরক্ত হতো। কিন্তু মেয়েটির কাজকর্মে সে অবাক না হয়ে পারতো না। আকাশের মনে হতো, মেয়েটি হয়তো তাকে সত্যি-ই ভালোবাসে। কিন্তু তার মেয়েটির প্রতি তেমন কোনো ফিলিংস-ই আসেনি। মেয়েটি আকাশের থেকে এতো নিরবতা পেয়ে-ও কখনো পিছপা হয়নি। এভাবে প্রায় একবছর পেরিয়ে যায়। আকাশের মাস্টার্স কমপ্লিট হয়ে যায়। সে বিদেশ যাওয়ার জন্য সবকিছু রেডি করে। তার ফ্লাইটের দু’দিন আগে ব্যবসার কাজে একজায়গায় সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে গিয়ে তার পিছে ঘুরঘুর করা মেয়েটির সাথে একটি ছেলের কথপোকথন শুনতে পায়, সাথে ছেলেটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত।
মেয়েটি মূলত আকাশে বাবার, আকাশের এতো টাকা দেখে এই নাটক গুলো করতো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আকাশ সেদিন এতো রে’গে গিয়েছিল! মেয়েটির প্রতি তার অনুভূতি নেই ঠিক আছে, কিন্তু মেয়েটি এতো পা’গ’লা’মি করে তাকে বিরক্ত করতো এর মাসুল দিবে না? আকাশ কারণ ছাড়া কাওকে কিছু বলতো না। যেমন সে কখনো মেয়েটির অনুভূতির জন্য তাকে ছোট করেনি, তার অনুভূতির ঘর শূণ্য হলেও। কিন্তু সেদিন আকাশ মেয়েটির সামনে গিয়ে কোনো কথা ছাড়াই ক’ষি’য়ে দু’টো থা’প্প’ড় মা’রে।
এখানেই শেষ নয়। আকাশের একটি মেয়ে ফ্রেন্ড ছিল, যে আকাশকে ভালোবাসি বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছিল৷ আর তার তো টাকার জন্য পরবর্তীতে পুরো লিংক ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া বন্ধু হিসেবে অরুণ আছেই। প্রতিটি মেয়ে এতো লোভী টাইপ! মেয়েদের উপর থেকে আকাশের মন একদম উঠে গিয়েছে।
পুরনো কথা ভেবে আকাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মেঝেতে দ্বিখণ্ডিত হওয়া ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে নিজের উপর বিরক্ত হলো। এখন তাকে সব গুছানো কাজ আবার করতে হবে। হঠাৎ হঠাৎ রা’গের কারণে নিজেকেই দু’টো থা’প্প’ড় দিতে ইচ্ছে করে তার। কিন্তু রা’গ’লো কেন? মেয়েটিকে ডিভোর্স দিবে ভাবতেই রা’গ হলো। কারণ জানে না। নিজের উপর চরম বিরক্ত সে।

দু’দিন পেরিয়েছে।
সন্ধ্যার পর পর, সন্ধ্যা আসমানী নওয়ান এর পাশে বসে আছে। আসমানী নওয়ান কাঁথা সেলাই করছে। সন্ধ্যা আসমানী নওয়ানকে ঝাঁকিয়ে হাত নেড়ে বোঝায়, – সে সেলাই করতে চায়।
আসমানী নওয়ান অবাক হয়ে বলে,
– তুই পারিস?
সন্ধ্যা মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দেয়। ভদ্রমহিলা সন্ধ্যার হাতে কাঁথা, সুই দিলে সন্ধ্যা খুশি হয়ে আসমানী নওয়ানকে জড়িয়ে ধরে। মৃদু হেসে হাত দিয়ে ইশারায় বোঝায়,
– তুমি অনেক ভালো।
আসমানী নওয়ান সন্ধ্যার থুতনিতে হাত রেখে বলে,

– আমার জান্নাত এর চেয়ে ভালো কেউ নাই, বুঝলি?
সন্ধ্যা ইশারা করে,
– তুমি আমাকে জান্নাত ডাকো কেন?
ভদ্রমহিলা মৃদু হেসে বলে,
– কারণ তোর মুখ দেখলে আমি মেলা শান্তি পাই মা। জান্নাতে যেমন অনেক সুখ-শান্তি। তেমন তোর দিকে তাকাইলে আমি এমন শান্তি পাই। কারণ শুনবি?
সন্ধ্যা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। সে শুনতে চায়। আসমানী নওয়ান কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে যায়। সন্ধ্যার মুখে চুমু খেয়ে বলে,

– কোনো একদিন শুনবি। এখন তোর কাজ কর মা।
আসমানী নওয়ান এর চোখের কোণে পানি। সন্ধ্যার চোখে যা ধরা দেয়। মেয়েটি আসমানী নওয়ান কে ঝাঁকিয়ে বোঝায়, – তোমার চোখে পানি কেন?
আসমানী নওয়ান সন্ধ্যাকে বুকে জড়িয়ে নেয়। সন্ধ্যা মলিন মুখে চেয়ে থাকে। আসমানী নওয়ান কাঁদলে তার ভালো লাগে না। আপাতত এই একটা মানুষ-ই তার একমাত্র আপন। আসামনী নওয়ান নিজেকে সামলে সন্ধ্যাকে ছেড়ে মৃদুস্বরে বলেন,
– নে এই কাজ শুরু কর। দেখি তো কেমন পারিস।
সন্ধ্যা ইশারায় বোঝায়, – আর কাঁদবে না তো?
আসমানী নওয়ান হেসে ফেলল। দেখ কেমন মেয়ের মতো কথা বলে। অবশ্য এটা তো তোর মেয়ে-ই। মাথা নেড়ে বলে,

– আমার জান্নাতের কথা অমান্য করি কি কইরা!
সন্ধ্যা হাসলো।
বেল বেজে উঠলে আসমানী নওয়ান ঘর থোকে বেরিয়ে যায়। সন্ধ্যা সেলাইয়ে মনোযোগ দেয়।
আসমানী নওয়ান এর ছোট বোন, আর তার মেয়ে শিমু তাদের বাড়িতে এসেছে। আসমানী নওয়ান এতোদিন পর বোনকে পেয়ে ভীষণ খুশি হয়। জড়িয়ে ধরে বোনকে। এরপর কথা বলায় ব্যস্ত হয়। শিমু তার খালাকে জিজ্ঞেস করে,
– খালামণি সন্ধ্যা ভাবি কোথায়?
আসমানী নওয়ান তার ঘর দেখিয়ে দিলে চঞ্চল শিমু দৌড় দেয় তার খালার ঘরের দিকে। বিছানার উপর একটি মেয়েকে খুব মনোযোগ দিয়ে সুতার কাজ করতে দেখে শিমু এগিয়ে এসে বলে,
– তুমি-ই আকাশ ভাইয়ার বউ সন্ধ্যা ভাবি?
মেয়ে কণ্ঠে সন্ধ্যা মাথা উঁচু করে অপরিচিত এক মেয়েকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। শিমু এগিয়ে এসে বলে,

– তুমি-ই আমার ভাবি তাই না?
সন্ধ্যা বোকাচোখে চেয়ে ইশারায় বোঝায়,
– হুম।
শিমু এগিয়ে এসে সন্ধ্যাকে জড়িয়ে ধরে হাসে। এরপর সন্ধ্যার সামনে সোজা হয়ে বলে,
– আমি আকাশ ভাইয়ার খালাতো বোন বুঝেছ?
সন্ধ্যা ইশারায় বলে,
– কেমন আছো?

শিমুর বুঝতে একটু প্রবলেম৷ হয়। তবে বুঝতে পেরে উত্তর দেয়, সাথে সন্ধ্যাকে পাল্টা জিজ্ঞেস করলে সন্ধ্যা মাথা নেড়ে জানায় সে-ও ভালো আছে। শিমু গালে হাত দিয়ে বলে,
– ভাবি তুমি খুব সুন্দর করে হাসো। আমি তো ক্রাশ খাচ্ছি। ওয়াহ!
শিমুর কথা শুনে সন্ধ্যা হেসে ফেলে। ইশারায় বোঝায়, – তুমি দেখতেও সুন্দর, তোমার হাসি-ও সুন্দর।
শিমু হেসে তার কোলে রাখা ব্যাগের ভিতর থেকে সন্ধ্যার জন্য আনা সবকিছু বের করল। প্রথমে সন্ধ্যার দিকে পুরো পাঁচটি শাড়ি এগিয়ে দিল। যার মধ্যে দু’টো জামদানি, একটি সুতি আর দু’টি কাতান। এগুলো তার মা এনেছে। শিমু তার ভাবির জন্য আলাদা করে এনেছে,, হাতের চুড়ি, মেচিং করে কিছু জুয়েলারি, মেকাপের একটি সেট, সবশেষে বের করে দু’টি আলতা।
সন্ধ্যা চুপচাপ শিমুর কাজ দেখছিল। আলতা দেখেই মেয়েটির মন ভীষণ পুলকিত হয়। একটি আলতা সন্ধ্যা হাতে নিয়ে শিমুকে ইশারায় বোঝায়,

– আপু একটি আলতা আমাকে দিবে?
সন্ধ্যার কথা বুঝতে পেরে শিমু শব্দ করে হেসে ফেলে। অতঃপর বলে,
– বোকা ভাবি, এসবকিছু তোমার জন্য-ই এনেছি। আলতা আমার ভালো লাগে, তাই তোমার জন্য ভ’য়ে ভ’য়ে এনেছি। সবাই এসব পছন্দ করেনা। ভেবেছি তোমার ভালো লাগবে কি-না।
সন্ধ্যা হাত নেড়ে বোঝায়,
– আলতা তার ভীষণ মানে ভীষণ পছন্দ।
শিমু হেসে সন্ধ্যার জন্য আনা সবকিছু সন্ধ্যার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

– এগুলো তোমার খালা শ্বাশুড়ি আর তোমার ননদিনীর থেকে গিফট বুঝেছ? ফর্মালিটির জন্য ফিরিয়ে দিতে বলার আগেই বলে দিচ্ছি, গিফট ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলা ঘোর অন্যায়।
সন্ধ্যা সত্যি-ই ভেবেছিল কিছু বলবে, তার আগেই শিমুর এহেন কথায় সন্ধ্যা হেসে ফেলে।
শিমুর মা ঘরে আসে। সন্ধ্যা শিমুর মা বুঝতে পেরে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। ভদ্রমহিলা ঝাপসা চোখে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে আছে। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সন্ধ্যার গালে হাত দিয়ে বলে,
– কেমন আছিস মা?
সন্ধ্যা অবাক হয়ে তাকায়। যেন ইনি তার কত আপন। কিন্তু সন্ধ্যা তো এনাকে চেনে না। আজকেই প্রথম দেখল। অবাকের রেশ কাটিয়ে সন্ধ্যা মাথা নেড়ে জানায়, – সে ভালো আছে। উনি কেমন আছেন?
শিমুর মা মৃদু হেসে বলে,

– তোকে দেখে অর্ধেক ভালো হয়ে গেলাম। অসুস্থতার জন্য আসতে পারছিমা না সুস্থ হয়েই ছুটে এসেছি।
সন্ধ্যা কি বলবে বুঝতে পারে না। মেয়েটি চিন্তিত বদনে চেয়ে আছে। এরকম ব্যবহার কাছের মানুষেরা ছাড়া আর কেউ করে? শিমুর মা সন্ধ্যার মুখে তিনটে চুমু এঁকে দেয়। শিমু নিজেও অবাক হয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সন্ধ্যাকে দেখে তার মায়ের এমন রিয়েকশন তাকে কনফিউজড করে দিচ্ছে। আবার ভাবলো সন্ধ্যা কথা বলতে পারেনা, এইজন্য হয়তো তার মা বেশি আবেগি হয়ে গিয়েছে।
শিমুর মা নিজেকে সামলে বলে,
– তোকে নিজ হাতে অনেক কিছু রেঁধে খাওয়াবো। একসাথে খাবো। অনেকদিন থাকবো এইখানে। বুঝেছিস তো?
সন্ধ্যা বিস্ময় মুখে মাথা নাড়ে। আসমানী নওয়ানের ব্যবহার তার প্রথম প্রথম এমন অবাক লাগতো। এখন তার বোনের সেইম বিহেব সন্ধ্যাকে ভাবনায় ফেলে দেয়।
শিমু এগিয়ে এসে বলে,

– আচ্ছা আম্মু এবার আমার ভাবিকে ছেড়ে আমাকে দাও। আমার ভাবির সাথে অনেক গল্প করার আছে।
শিমুর কথায় আসমানী নওয়ান সহ তার মা হেসে ফেলল। সন্ধ্যা-ও মৃদু হাসলো। তার বয়সী এক মেয়ে পেয়ে সন্ধ্যা ভীষণ আনন্দিত হয়েছে।
শিমুর মা আসমানী নওয়ান এর হাত থেকে একটি ব্যাগ বের করে একটি গহনার বাক্স বের করে। তার কাছে যা গহনা ছিল তার অর্ধেকটা শিমুর জন্য রেখে বাকি অর্ধেক টা সন্ধ্যার জন্য এনেছে।
বাক্সের ভেতর থেকে একটি সোনার চেইন বের করে সন্ধ্যাকে পরিয়ে দেয়। এরপর কানের দুল পরিয়ে দিতে চাইলে দেখল সন্ধ্যার কানে সোনার রিং। তাই দুল দু’টো রেখে দিল। এরপর একটি ছোট্ট স্টোনের নাকফুল বের করে সন্ধ্যার নাকে দৃষ্টি দিলে দেখল নাকফুটো নেই। ভদ্রমহিলা মৃদুস্বরে বলে,
– তুই নাক ফুটো করিস নি?

সন্ধ্যা বোঝায়, – করেছিল। কিন্তু নাকে কিছু না দেয়ায় ফুটো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শিমুর মা মৃদু হেসে বলে,
– আচ্ছা কালকে তোকে পার্লারে নিয়ে গিয়ে নাক ফুরিয়ে আনবো।
সন্ধ্যার চোখেমুখে ভীতি। এতো বড় হয়ে নাকফুটো করলে তো অনেক ব্য’থা পাবে। আসমানী নওয়ান সন্ধ্যার মনের কথা ধরতে পেরে হেসে বলে,
– আরে ভ’য় পাইতাছস ক্যান? এইডা এহন খুব সোজা।
শিমুর মা সন্ধ্যার গালে হাত দিয়ে মৃদু হেসে বলে,
– মেশিন দিয়ে চোখের পলকে করে দিবে বুঝলি? একটুও লাগবে না।
শিমু কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
– খালা তুমি গ্রাম্য ভাষায় কথা বলো, তাহলে আমার আম্মু এতো শুদ্ধ করে কথা বলে কেন?
আসমানী নওয়ান মুখ বাঁকিয়ে বলে,
– সে তোর মায় শহরে আইসা শুদ্ধ শিইখা গেছে। আমিও শিখছি। কিন্তু আমার এই ভাষা কইতেই ভাল্লাগে।
সন্ধ্যা মৃদু হাসলো। আসমানী নওয়ানের এই ব্যাপারটা তার ভালো লাগে। শিমুর মা হেসে বলে,
– আপা আমি তোমার লাহান করে কথা কইবার পারি। খালি কই না দেইখা।
শিমুর মায়ের কথা শুনে সবাই সব্দ করে হেসে ফেলে।

ধরণীতে দুপুরের কড়া তেজ নেমে শীতল আবহাওয়া বিরাজ করছে।
সৌম্য ইরার বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। আগামী কয়েকদিন শিমু পড়বেনা বলে ছুটি চেয়েছে। তাই সৌম্য এই সময়টাতে ফাঁকা পেয়ে চলে এসেছে। মুখটা মলিন। ভালো লাগছে না কিছু। সে একবার ইরাকে দেখতে চায়। কতদিন হয়ে গেল তার ইরাবতীর মুখটা ভালো করে দেখে না। দু’দিন আগে সাইড থেকে একটুখানি দেখল, সাথে ছিল তার জন্য উপহার। এখন-ও মনে পড়লে বুকটা চিনচিন করে ওঠে।
সৌম্য বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে দৃষ্টি ইরাদের পাঁচতলা আলিশান বাড়ির দিকে রাখে। এই আলিশান বাড়ির মেয়ে ইরা। তার সাথে ইরাকে একটুও মানায় না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন পকেট থেকে বের করে ইরার নাম্বারে কল করলে নাম্বার বন্ধ পায়। হতাশার শ্বাস ফেলে ইরার মায়ের ফোনে কল করলে ওপাশ থেকে সাথে সাথে রিসিভ হয়। ভদ্রমহিলা ভীত কণ্ঠে বলে,

– সৌম্য বাবা তুমি এখানে কেন এসেছ?
সৌম্য ইরার মাকে সালাম দিয়ে বলে,
– আন্টি ইরাকে একবার নিচে আসতে বলবেন প্লিজ! একবার দেখা করেই চলে যাবো। প্লিজ আন্টি!
দোতলায় বেলকনিতে দাঁড়ানো ইরার মা সৌম্য’র দিকে তাকিয়ে শক্ত করে কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পারলো না। ছেলেটা কত অসহায় মুখে আবদার করছে, ভদ্রমহিলা তবুও কিছুটা শক্ত কণ্ঠে বলে,
– এইখান থেকে তুমি যাও। বলছি তো ইরা ভালো আছে। তুনি ওর আশেপাশে আর আসবে না।
সৌম্য কিছু বলতে চায়, তার আগেই কল কেটে যায়। সৌম্য’র বোধয় এতো অসহায় লাগেনি কখনো নিজেকে। এতোটা পর হয়ে গেল সে? একটাবার দেখা করা যায় না তার সাথে?

ইরা তার ঘরের জানালার পাশে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
তার বাবা তার থেকে ফোন কেড়ে নিয়েছে। বলতে গেলে এই ঘরে বন্দী করে রেখেছে। এক সেকেন্ড এর জন্য-ও এই ঘর থেকে তাকে বের হতে দেয় না। মাঝে মাঝে তার সাথে বিয়ে ঠিক করে রাখা রিয়াদ আসলে তাকে বাইরে পাঠায় লোকটার সাথে। ইরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দৃষ্টি নিচে নামিয়ে উল্টো ঘুরতে গিয়েও দাঁড়িয়ে যায় রাস্তার পাশে সৌম্য কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। সাথে সাথে চোখজোড়া ভিজে যায়। চেঁচিয়ে ডাকে,

– সৌম্য?
কিন্তু তার গলার আওয়াজ বাইরে যায় না। ইরা দৌড়ে ঘরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দরজায় থা’প্প’ড় দিতে দিতে কান্নামাখা গলায় বলে,
– আম্মু দরজা খোলো। আম্মু?
দরজার ওপাশ থেকে কোনো সাড়া পায় না। ইরা থেমে যায় না। গলার আওয়াজ বাড়িয়ে সমানে ডাকে,
– আম্মু দয়া করে দরজাটা খোলো। তোমাদের পায়ে পড়ি। আম্মু?
হঠাৎ-ই দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ইরা দু’পা পিছিয়ে যায়। দরজা খুলে কেউ ভেতরে প্রবেশ করলে ইরা চোখ তুলে রিয়াদকে দেখে বিরক্ত হলো। রিয়াদের পাশ কাটিয়ে বাইরে যেতে নিলে রিয়াদ ইরার হাত টেনে ধরে। ইরা প্রচণ্ড রে’গে হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে চিৎকার করে বলে,

– লম্পট আমাকে ছুঁবি না তুই।
রিয়াদ বাঁকা হেসে বলে,
– ইরাবতী ডাকার মালিককে দেখে সব ভুলে গেলে সুন্দরী?
ইরা ঢোক গিলল। রিয়াদ শ’য়’তা’নি হাসি দিয়ে বলে,
– রেডি হয়ে নাও সুন্দরী। আমরা শপিং-এ যাবো।
ইরা রে’গে বলে,
– আমি তোর সাথে কোথাও যাবো না। একদিন গিয়েছি বলে ভেবেছিস আকাশের চাঁদ পেয়ে গিয়েছিস?
রিয়াদ গা দুলিয়ে হেসে বলে,
– হবু বউয়ের মুখে তুই শুনতে ভালোই লাগে। তা সুন্দরী, তোমার সৌম্য কে কি এখনি উপরে পাঠাবো? আাহারে, বেচারা জীবন দিতে নিজেই পায়ে হেঁটে চলে এসেছে।
কথাটা বলতে বলতে পকেট থেকে ফোন বের করে। ইরা ঢোক গিলল। অতঃপর চোখ বুজে শক্ত গলায় বলে,

– চলুন।
রিয়াদ শব্দ করে হেসে বলে,
– বাহ! এক লাইনে পুরো তুই থেকে আপনি! ভালো ভালো!
রিয়াদ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ইরা দৌড়ে জানালার কাছে এসে দাঁড়ায়। সৌম্যকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইরার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। নিজেকে সামলে তার ড্রয়ার থেকে একটি ছোট্ট চাকু বের করে। যেটি এক হাতের মুঠোয় এঁটে যায়। যে জামা পরেছিল ওভাবেই ইরা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রিয়াদ ইরাকে দেখে সামনের দিকে এগোলে ইরা পিছু পিছু যায়। রিয়াদ হাসতে হাসতে বলে,
– তোমার সৌম্য’র সাথে ভুলেও কথা বলতে যেও না সুন্দরী। তোমার বাবার নজর কিন্তু খুব নিখুঁত।
ইরা চুপ থাকলো। বাইরে বেরিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ালে সৌম্য ইরাকে দেখে দ্রুতপায়ে এগিয়ে আসে ইরার দিকে। ইরার মাথা নিচু। রিয়াদ হেসে বলে,

– আমার বউয়ের কাছে কি বাবু?
সৌম্য অবাক হয়ে তাকায় ইরার পাশে দাঁড়ানো ছেলেটির দিকে। গত দু’দিন আগের সেই ছেলেটি। সৌম্য ঢোক গিলল। মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করে,
– আপনাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে?
ইরা কিছু বলার আগেই রিয়াদ হেসে বলে,
– হানিমুনের টিকিট কাটা-ও শেষ।
ইরার চোখ থেকে টুপ করে দু’ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। সৌম্য’র গলা শুকিয়ে আসলো। সে ইরার সাথে দু’মিনিট কথা বলতে চাইছিল। কিন্তু এখন কেন যেন আর ইচ্ছে করছে না। সৌম্য রিয়াদের দিকে তাকিয়ে রইল। ছেলেটির গায়ের রঙ ইরার মতোই ফর্সা। মনে মনে নিজের উপর বিদ্রুপ হাসলো। মাথা নিচু করে তার হাতের দিকে একবার তাকালো। গায়ের রঙটা তার বেশ ভালোই চাপা। ইরার পাশে সে সবদিক থেকেই বেমানান। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বহুকষ্টে উচ্চারণ করল,

– আপনাদের খুব সুন্দর মানিয়েছে।
রিয়াদ হেসে বলে,
– থ্যাঙ্কিউ সো মাচ।
সৌম্য আর দাঁড়ালো না। দু’পা পিছিয়ে গেল। মাথা নিচু করে রাখা ইরার দিকে একবার তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিল। এরপর মৃদুস্বরে বলে,
– ভালো থাকিস ইরাবতী।
কথাটা বলে সাথে সাথে উল্টো ঘুরে বড় বড় পা ফেলে হাঁটতে শুরু করে সৌম্য। চোখদু’টো ভীষণ ঝাপসা ঠেকে।
ভাঙা গলায় বিড়বিড় করে,

– হৃদয়ের সুপ্ত অনুভূতি বুঝলাম। যে অনুভূতি শুধুই তোকে ঘিরে। অপ্রকাশিত এই অনুভূতির বুক ফেটে প্রকাশ হওয়ার তীব্র আকাঙ্খা হলো,
কিন্তু?
নাহ, বের হতে পারলনা
পুনরায় সেগুলো বুকের ভিতরেই দাফন হলো।
কথাগুলো বলে শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছল সৌম্য। সারাজীবনে একটুখানি সুখ ভুল করে-ও তার দুয়ারে আসল না। আহ! কি জীবন তার!

গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে ইরা নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে। রিয়াদ একটা গান চালিয়ে দেয়, যেন তার খুব আনন্দের দিন। ইরা নিজেকে সামনে নিল। হাতের মুঠোয় ধরে রাখা ছোট্ট চাকু মেলে ধরল। বা হাতে চোখজোড়া মুছে আড়চোখে রিয়াদের দিকে তাকালো। রিয়াদ রাস্তার পাশে গাড়ি সাইড করে। ইরার দিকে ফিরতে নেয়, তার আগেই ইরা তার হাতের চাকু এগিয়ে নিয়ে রিয়াদের ঘাড়ে বসিয়ে দেয়। জায়গা মতোই দিয়েছে। রিয়াদ চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরাকে সরিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু পারলো না। ইরা ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,
– ইশতিয়াক আহমেদ এর র’ক্ত আমি। আমার বাবা যে ডালে চলে, আমি সবসময় তার উপরের ডালে চলি। ইশতিয়াক আহমেদ এর সাথে হাত মিলিয়েছিস, তো তার র’ক্তের ঝাঁঝ কেমন দেখবি না?

রিয়াদ নিভু নিভু চোখে তাকায় ইরার দিকে। ইরা রিয়াদকে ছেড়ে তার জায়গায় বসে আঙুল উঁচিয়ে বলে,
– খুব শখ না আমার স্বামী হওয়ার? সৌম্য শেখ ছাড়া আর কারো ইরাবতীর স্বামী হওয়ার অধিকার নেই, বুঝলি? আমার সৌম্য কে মা’র’বি বলেছিলি না? ইরাবতী থাকতে সৌম্য’র গায়ে আঁচ-ও লাগবে না। প্রুভ দিয়ে দিলাম।
রিয়াদ চোখ বন্ধ করে নেয়। ইরা কথাগুলো বলে তার গলায় পেঁচানো ওড়না দিয়ে নাকমুখ ঢেকে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আশেপাশে তাকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে একটি ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ায়। সৌম্য’র কথা মনে আসতেই চোখজোড়া ভিজে ওঠে। সৌম্য’র অসহায়ত্বে ঘেরা কণ্ঠ কানে বাজে। ইরা দু’হাতের মাঝে মুখ লুকিয়ে ফোঁপানো কণ্ঠে বিড়বিড় করে,
– তুই কিভাবে ভাবলি সৌম্য আমি অন্যকাউকে বিয়ে করব? তুই আমাকে কখনোই বুঝলি না! ভীষণ ভালোবাসি সৌম্য।

ঘড়ির কাটা জানান দেয়, রাত ৮ টা।
শিমু ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে সবকাজ শেষে সন্ধ্যাকে নিয়ে ডায়নিং রুমের সোফায় এসে বসেছে। সন্ধ্যার সাথে গল্প করছে। সন্ধ্যা ইশারায় বোঝায়, শিমুর বুঝতে একটু সময় লাগে তবে শিমুর এতেই বেশ ভালো লাগছে। শিমুর কাছে সন্ধ্যাকে তার মতোই লাগছে। চঞ্চল টাইপ। এজন্য বেশি ভালো লাগছে।
শিমু সন্ধ্যাকে তার কোচিং এর একটি কাহিনি শোনাতে চায়। শিমু তখন ক্লাস সেভেনে পড়তো। সন্ধ্যা আগ্রহী চোখে চেয়ে। শিমু বলতেই পারছে না। বলার আগেই হাসতে হাসতে ঢলে পড়ছে। সন্ধ্যা বোকাচোখে চেয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ পেরোলেও শিমুর অবস্থা একইরকম দেখে সন্ধ্যা হতাশ হয়। বিরক্ত হয়ে শিমুর হাত ধরে টেনে তোলে শিমুকে। বাইরের দিকে টেনে নিয়ে য়েতে নিলে শিমু কোনো রকমে হাসি আটকে থেমে থেমে বলে,

– আরে ভাবি কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?
সন্ধ্যা পিছু ফিরে ডান হাতের আঙুল দ্বারা মাথা দেখায়, এরপর হাতের ইশারায় বোঝায়, – তোমাকে মেন্টাল হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি। এসো।
সন্ধ্যার কথা শুনে শিমুর মুখ ভোতা হয়ে যায়। মেকি রা’গ দেখিয়ে বলে,
– ধ্যাত! তুমি তো আচ্ছা মজা নাও ভাবি। কাহিনী টা প্রচুর হাস্যকর। তোমাকে বললে তুমি হাসতে হাসতে পড়ে যাবে।
সন্ধ্যা হেসে বোঝায়,
– তাহলে বলো।
ডান দিকে হেলে পড়ার ভঙ্গি করে বলে,
– আমি-ও একটু পড়ে যাই!
শিমু হেসে ফেলল সন্ধ্যার কান্ডে। আসমানী নওয়ান অবাক হয়ে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে আছে। মেয়েটি এই কয়দিন কত শান্ত হয়ে থাকতো। অথচ তার বয়সী একটি মেয়েকে পেয়ে যেন ভেতরের সব চঞ্চলতা উগলে দিচ্ছে সন্ধ্যা। শিমুর মা বলে ওঠে,

– আপা সন্ধ্যাকে আমার সাথে নিয়ে যাই? ও শিমুর সাথে থাকলে সবসময় হাসবে।
আসমানী নওয়ান মৃদুস্বরে বলে,
– নিয়া যাস। ওয় ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকি।
শিমুর মা হেসে বলে,
– আমাদের জান্নাতের মুখে কত মায়া তাই না আপা?
দু’বোনের চোখের কোণে-ই পানি।
শিমু সন্ধ্যার হাত ধরে সোফায় বসায়। এরপর বলতে শুরু করে,
– ক্লাস সেভেনে যে কোচিং করতাম, সেই কোচিং-এ কয়েকজন পড়তাম। এই ধরো দশজনের মতো। স্যার এর নাম রাজিব ছিল। তো রাজিব স্যার তখন বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে ম্যাথ করাচ্ছিল। আমরা খাতায় উঠিয়ে নিচ্ছিলাম। স্যারের ম্যাথ করা শেষ হলে সে চেয়ারে এসে বসে। আমরা সবাই মনোযোগ দিয়ে লিখছিলাম। হঠাৎ-ই কেমন যেন প্যা,পু আওয়াজ শুনতে পাই সবাই। আমি লেখা থামিয়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে বললাম,

– স্যার আপনার মনে হয় ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে।
স্যার কিছু বলল না। দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাইরে যেতে নিলে ভোটাস করে একটা শব্দ হয়।
কথাটা বলে শিমু শব্দ করে হেসে দেয়। সাথে সন্ধ্যা। শিমু কোনোরকমে হাসি আটকে বলে,
– তারপর বুঝলাম আসলে আমি যা ফোনের ভাইব্রেট ভাবছিলাম, সেটা আসলে৷ রাজিব স্যারের বায়ু দূষণ।
সন্ধ্যা হাসতে হাসতে সোফায় আধশোয়া হয়ে পড়েছে। কোনোদিন এতো হেসেছে কি-না মনে পড়ে না। শিমু দাঁত কেলিয়ে হাসে। সন্ধ্যার হাসতে হাসতে নাজেহাল অবস্থা।
আকাশ মাত্র বাড়ি ফিরেছে। ডায়নিং রুম দিয়ে পাস করে যাওয়ার সময় হাসির শব্দে বামদিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকায়। সন্ধ্যাকে এমন পা’গ’লের মতো হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে যায় তার। পাশে শিমুকে হাসতে দেখে বুঝল, এই কোনো কাজ করেছে। আকাশ এগিয়ে এসে সন্ধ্যার সামনে দাঁড়ায়। সন্ধ্যার চোখ বন্ধ। আকাশ শীতল দৃষ্টিতে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে আছে।
দু’হাত আড়াআড়িভাবে গুঁজে শিমুর উদ্দেশ্য আকাশ বলে,

– এখনে কি হচ্ছে?
আকাশের কণ্ঠ পেয়ে সন্ধ্যা দ্রুত সোজা হয়ে বসে। ডান হাতে মুখ চেপে ধরে হাসি আটকায়।
শিমু আকাশকে দেখে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,
– আকাশ ভাইয়া তোমার বউ হা’গ’তে হা’গ’তে পা’গ’ল হয়ে গেছে।
আকাশ বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
– মানে?
সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায়। হায় আল্লাহ! এমনিতেই আকাশের সামনে এমন সিচুয়েশনে পড়ে তার অবস্থা খারাপ। সেখানে এই শিমু তার মানসম্মান খেয়ে দিল। সন্ধ্যা শিমুর পিছে দাঁড়িয়ে শিমুর পিঠে চিমটি কাটে। শিমু পিছনে হাত বুলিয়ে আহ আওয়াজ করে বলে ওঠে,
– মিস্টেক আকাশ ভাইয়া। ওটা হাসতে হাসতে হবে।
আকাশ কিছু বলল না। সন্ধ্যা শিমুর পিছনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,

– সামনে থেকে সর।
শিমু ভ্রু কুঁচকে বলে,
– কেন?
আকাশ রে’গে তাকায়। শিমু দ্রুত বলে,
– সরছি সরছি।
বলেই আকাশের সামনে থেকে সরে যায়।
আকাশ সন্ধ্যার দিকে এগিয়ে এসে মৃদুস্বরে বলে,
– হাসছিলে কেন?
পাশ থেকে শিমু বলে,
– অনেক হাস্যকর কাহিনি। আমি তোমাকে বলছি আকাশ ভা….
আকাশের শক্ত চাহনী দেখে শিমুর কথা থেমে যায়। মেকি হেসে বলে,
– ভাবির হয়ে হেল্প করে দিচ্ছিলাম আর কি!
আকাশ রে’গে বলে,

– বলেছি আমি হেল্প করতে?
শিমু মাথা নেড়ে বলে,
– না মানে। আমি একটু…
আকাশ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
– এখান থেকে যা। বিরক্ত করিস না।
শিমু মুখ ফুলিয়ে বলে,
– আমি তোমাদের বাড়ির মেহমান।
আকাশ সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
– যা শরবত বানিয়ে আন। ক্লান্ত লাগছে।
শিমু কোমরে হাত দিয়ে বলে,
– আমি?
আকাশ বিরক্ত হয়ে বলে,

– না, তোর বে’য়া’দ’ব ভার্সন শিমু।
আকাশের কথা শুনে সন্ধ্যা হেসে ফেলে। শিমু মুখ গোমড়া করে তার খালার ঘরের দিকে যায়। তার ছেলের নামে বিচার দিবে। তাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে। পৃথিবীতে সব ভাইয়েরাই মনে হয় এমন। বোনকে দিয়ে শুধু কাজ করানোর ধান্দায় থাকে। সন্ধ্যা আকাশের পাশ কাটিয়ে শিমুর পিছু যেতে নিলে আকাশ সন্ধ্যার সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলে,

– তোমাকে যেতে বলিনি।
সন্ধ্যা আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ সন্ধ্যার পানে চেয়ে একটু এগিয়ে এলে সন্ধ্যা পিছু সরে যায়। মেয়েটি ঢোক গিলে। আকাশ ডান হাতের বুড়ো আঙুল সন্ধ্যার গালের টোল সৃষ্ট হওয়া জায়গাটিতে রেখে মৃদুস্বরে বলে,
– আবার হাসো।
সন্ধ্যা ঢোক গিলল। জীবনে প্রথম কোনো পুরুষের এমন একটি আঙুলের স্পর্শ পেয়ে-ই সন্ধ্যার পুরো শরীর কেঁপে ওঠে। আকাশ সন্ধ্যার দিকে আরও এক পা এগিয়ে এসে বলে,
– হাসো।

সন্ধ্যা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে। আকাশ আবারও সন্ধ্যার দিকে এক পা এগিয়ে আসলে সন্ধ্যা দু’পা পিছিয়ে যায়, ফলে সোফার সাথে বেঁধে ঠাস করে সোফার উপর পড়ে যায় সন্ধ্যা।
আকাশ বিরক্ত চোখে তাকায় সন্ধ্যার দিকে। ডান পা ভাঁজ করে সোফার উপর রেখে বা পা মেঝেতে রেখে সন্ধ্যার দিকে ফিরে বসে আকাশ। সন্ধ্যা বুঝতে পেরে দ্রুত সোফা থেকে উঠতে নিলে আকাশ বা হাতে সন্ধ্যার ডান হাত ধরে সন্ধ্যাকে টেনে তার দিকে ফিরিয়ে রে’গে বলে,
– পালাচ্ছ কেন? এসব আমি পছন্দ করি না।
সন্ধ্যা ঢোক গিলল। এই লোকটার কি হয়েছে? তার সাথে এমন অদ্ভুদ বিহেভ করছে কেন? আকাশ আবারও বলে,
– হাসো।

অন্তঃদহন পর্ব ৬

সন্ধ্যা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। আকাশকে তার কাছে আপাতত এক অদ্ভুদ প্রাণী লাগছে। হুট করেই আকাশের এরকম বিহেবে সন্ধ্যার মাথা ঘুরছে।
আকাশ সন্ধ্যাকে চুপ দেখে ডান হাতে সন্ধ্যার গাল চেপে তার দিকে ফিরিয়ে, শক্ত গলায় বলে,
– হাসো, ইডিয়ট।
সন্ধ্যার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। এই লোকটা কি পা’গ’ল? তাকে ধমকিয়ে বলছে, হাসতে। এমন পরিস্থিতিতে তার কান্না পাচ্ছে। সে হাসবে কি করে?

অন্তঃদহন পর্ব ৮