মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫৪

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫৪
মির্জা সূচনা

মিনিট পাঁচ বাদে আইসক্রিম হাতে দৌড়ে এসে হাজির হয় শান্ত।
বিয়ে বাড়িতে ফুচকা,বেলপুরি, পানিপুরি, কুলফি ও আইসক্রিমের স্ট্রলের ব্যবস্থা করা আছে।তাই আইসক্রিম আনতে বেশি বেগ পহাতে হয়নি শান্ত কে।প্রবলেম তো ওখানে না
কিন্তু মূল কথা হলো—
‘যার জন্য এত কিছু’, সেই চুমকি কোথায়?
শান্ত চারপাশে তাকায়, খোঁজে, হাঁটে…
চুমকির তো দূরের কথা, তার টিকিটিও নেই।
ঠিক তখনই হাজির হয় লাবিব।
শান্তকে‘কেবলার’ মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লাবিব জিজ্ঞেস করে,

— কি ব্যাপার ব্রো? Any problem?
শান্ত হাসে, চাপা গলায় বলে,
— না না, তেমন কিছু না।
চুমকিকে এখানেই রেখে গিয়েছিলাম…
কিন্ত এসে আর পেলাম না!ওকেই খুঁজছিলাম আর কী।
শান্তর হাতে আইসক্রিম দেখে লাবিব সেটা নিয়ে খেতে খেতে বলে,
— শুধু গার্লফ্রেন্ডকে খাওয়াবি নাকি, বস?
আমাদের দিকেও তো একটু দেখো!
শান্ত হাসে, বলে,
— অবশ্যই!
ঠিক তখনই রাকিব এসে হাজির।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— কিরে শালা, তুই এখানে?
রিদের জুতো কোথায়?
শান্ত হতচকিত হয়ে বলে,
— চুমকির কাছে…
এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে
লাবিবের হাত থেকে আইসক্রিম পড়ে যায়।
রাকিব কপালে চাপড় মারে।
শান্ত একদম বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকে—কিছুই বুঝতে পারছে না সে।
রাকিব রেগে বলে,
— আরেররর আমার ভেড়ার বা*ল!
তোর সব জায়গাতেই পিরিত না দেখালে চলে না?
জুতো দিলি কেন?
শান্ত সব কিছু খুলে বলে, পুরো ঘটনা ব্যাখ্যা করে।
লাবিব আর রাকিব একে অপরের দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে,

— Ohhhhhh SHIT!
শান্ত অবাক হয়ে বলে,
— কি হইছে?
শান্ত হঠাৎ নিজেই কিছু একটা বুঝতে পেরে
চোখ বড় বড় করে বলে,
— তার মানে…
জুতো নিয়ে পালিয়েছে?
রাকিব শান্তর মাথায় একটা গাট্টা মারে,
— এতক্ষণে বুঝলি বলদ!
শান্ত মাথা চুলকে বলে,
— সরি রে… আমি বুঝতেই পারি নাই!
লাবিব হেসে ফেলে।
আর রাকিব মুখ ভেংচিয়ে বলে,
— রাজ ব্রো তার বউয়ের নাচে পিছলে গিয়ে গেটে হেরে গেলো!
আর এখন তুই আমার ভেড়ার বা*ল প্রেম দেখানোর চক্করে
জুতো দিয়ে দিলে!!

আমরা আবারও বিবাহ যুদ্ধের পিছে পড়ে গেলাম রে ভাই!
তিন জন তখন মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে দাঁড়িয়ে থাকে—
অন্যদিকে চুমকি জুতো হাতে ফেরে বীর যোদ্ধার মত। তার চোখে মুখে এত উৎফুল্ল তাকে দেখেযে কেউ বলবে সে জুতো চুরি না কোন যুদ্ধ জয় করে ফিরেছে।
চুমকি সবাইকে অবাক করে জুতো তুলে দেয় মেহরিনের হাতে।
আর তাতেই চারপাশে এক অদ্ভুত হাসির রোল পরে যায়!
কারও হাসি মুখে, কারও চোখে পানি… আর কারও গলায় মেশানো প্রশান্তি।
আর সেই মুহূর্তেই…
রাহি এগিয়ে আসে।
ওদের হাতে রিদের জুতো দেখে হেসে বলে,

—আমি জানতাম, ওরা এটা রাখতে পারবে না!
মেহরিন এক পা এগিয়ে রাহির কাঁধে হাত রাখে।
মিষ্টি গলায় বলে,
— তোর ভাইরা যদি চলে ‘ডালে ডালে’,
তাহলে আমরাও যাবো ‘পাতায় পাতায়’বুঝলি রাহি?
রাহি মাথা নাড়ে।
চোখে-মুখে খুশির ছায়া।
আর তখনই মেহরিন একটু উঁচু স্বরে বলে,
সবার উদ্দেশ্যে,
— পৌরুষ মানেই কি শুধু গর্জন করা?
পুরুষ মানুষ যতই নিজেকে বাঘ ভাবুক না কেন,
বউয়ের কাছে সে স্রেফ একটা… বিড়াল!
তারপরেই চোখ টিপে বলে,
— একটা গান শুনিসনি?
‘আমার ঘরে আমি মেম্বার,
আমার বউ চেয়ারম্যান!’
এই কথা শুনে যে হাসির ঝংকার ওঠে,
তা যেনো গেট থেকে ঘর পযর্ন্ত কাঁপিয়ে দেয়।
সব মেয়ে হেসে লুটোপুটি,
আর ছেলেরা—মুখ ভুতা বসে থাকে।
কারও মুখে ‘আমি কিছু বলিনি’ ভাব,
আর কারও মুখে—

এই মেয়েদের সাথে পাঙ্গা নেওয়া মানে নিজের কবর নিজে খোঁড়া!
দুপুর পার হয়ে গেছে।
সময় থেমে আছে সন্ধ্যার এক রাজকীয় দিগন্তে।
খাওয়া-দাওয়া, আচার অনুষ্ঠান—সবই প্রায় শেষ।
এখন শুধু বিয়ে পড়ানোর পালা।
রেজিস্ট্রি তো আগেই হয়ে গেছে।
এখন শুধুই আত্মীয়-স্বজন আর সমাজের সামনে বিয়ের স্বীকৃতি।
আর তার চেয়েও বড় ব্যাপার—
মির্জা বাড়ির মেয়ের বিয়ে লুকিয়ে-চুরিয়ে হবে—এটা কল্পনাতেও নেই!
বর-কনে দু’জন দুই জায়গায়।
কনের স্টেজ ভেতরে, আর বরেরটা বাড়ির বাগানে সাজানো হয়েছে।
ওখানেই বিয়ে পড়ানো হবে।
এখন সময়—কনে আসার।
সবাই অপেক্ষায়।
ফিরোজ মির্জা ডাকেন মেহরিনকে।

—মেহু, মেহেরকে নিয়ে আয় মা।
মেহরিন মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।
সাথে যায় বাকিরাও—চুমকি, জেরী, লামিয়া, আরফা, আর মেহবুবা।
অন্যদিকে রিদ একটু অস্থির।
একবার সামনের দিকে তাকায়, আবার সোজা হয়ে বসে।
রাজ তা দেখে হাসে পাশে বসে বলে,
— রে ব্যাটা! অত ছটফট করিস কেন? আসবে তো এখনই!
তোর বউকে নিয়ে কেউ পালাবে না বাপ।চিন্তা করিস না তোর বউ তোর কাছে আসবে।
রিদ মুখ শক্ত করে, কিন্তু চোখে লজ্জা-মাখানো উত্তেজনা।
বলেই ফেলে,

—কী করবো বল?তাকে একবার চোখের দেখা না দেখা পর্যন্ত মনটা যে মানছে না। তাকে এক নজর দেখার তৃষ্ণা যে আমায় বড়ই বেসামাল করে তুলছে।
রাজ হাসে।
_তুই মরেছিস ভাই! প্রেমে মরেছিস! বউকে বেশি প্রেম দেখাস না ভাই, তাহলে মাথায় উঠে নৃত্য করবে।
ঠিক তখনই বক্সে গান বাজে—
‘Meri Saiyya Superstar’
সবাই তাকায় সে দিকে।
দেখতে পায় নাচতে নাচতে এন্ট্রি নেয় মেহের।
তবে তার মুখ ঢাকা।
সাথে চমকদার সেই টিম—মেহরিন, চুমকি, জেরী, লামিয়া, আর মেহবুবা।
রিদ চোখ মেলে তাকায়।
তার বুকের বাঁ পাশে যেনো কেউ ধাক্কা দেয়—
মেহেরকে দেখে তার হৃদয় ছুটে চলেছে।
রাজ হেসে বলে,

—তোর হৃদপিণ্ডটা যদি এখন মাইকে বাজে,
সবাই শুনবে—‘Meher… Meher… Meher!’
নাচ শেষ হলে,
মেহরিন আর মেহবুবা মেহেরকে এনে বসায় রিদের একদম সামনে।
তবে মাঝখানে ফুলের দেয়াল—
তাতে দু’পাশের আলাদা দুনিয়া।
কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান।
আর সে যেনো একটা মিষ্টি, শান্ত নদীর মত শেষ হয়।
এখন সেই মুহূর্ত—
যখন বর প্রথমবার কনেকে আয়নায় দেখবে।
মেহেরকে রিদের পাশে বসানো হয়।
গা ঢাকা, মুখ ঢাকা, লাজে পাতা পাতা হয়ে বসে সে।
রিদ আশপাশ করছে তার নববধূর মুখ খানা দেখার জন্য। তার অস্থিরতা বুঝতে পেরে মেহেরিন মৃদু হাসে। সুর তুলে ধরে এক গান সাথে গলা মিলায় বাকি মেয়েরা।

আইসে জামাই সাহেব হইয়া..!
বইছে মুখে রুমাল দিয়া..!
ঘোমটা খোলার আগে তোমায়,
করি গো সাবধান…!
চান্দের আলো দেইখা তুমি
হয়ো না অজ্ঞান..!
দামান হইল রাজার ব্যাটা,
সুনু আছে আঠা আঠা…!
আলতার মধ্যে গঙ্গার পানি,
পায়ে লাগে না..!
এত সস্তায় আসমানীরে
পাওয়া যাবে না..!

একে তো মেহেরকে দেখতে পাচ্ছে না তার উপর মেহরিনের গান শুনে অতিরিক্ত উত্তেজনায় রিদ তার ক্রেডিট কার্ড ওয়ালেট সব মেহেরিনের হাতে তুলে দেয়। আর হাতজোড় করে বলে বইন আমার বউরে আমারে দেখতে দে..!
রিদের কথা শুনে মেহের ঘুমটার ভিতরেই লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে।
রিদের কাণ্ডে রাজ, লাবিব, শান্ত, রাকিব, আরশ , রাহি, সাথী,ও মৌ সবাই একসাথে কপাল চাপড়ায়। আর উপস্থিত সবাই হা হা করে হেসে ওঠে।
মেহরিন হাসতে হাসতে বলে,
হয়েছে দুলাভাই, অনেক হয়েছে আপনি যে আমার বোনকে দেখার জন্য কাউরা বাওরা হচ্ছেন সেটা বুঝতে পারছি।আপনার অপেক্ষার অবসান এখনই ঘটাচ্ছে।
মেহরিন একটি বড় আয়না এনে সামনে ধরে।
সব মেয়েরা একসাথে বলে ওঠে,

— কি দেখছেন, দুলাভাই?
রিদ আয়নায় চোখ রাখে।
আর সেই আয়নায় দেখতে পায়…
এক জোড়া চোখ,
যে চোখ জোড়া তার চোখের দিকে তাকাতেই রিদ যেনো নিঃশ্বাস নিতেও ভুলে যায়।
মেহেরও তাকায়… কিন্তু বেশিক্ষণ রাখতে পারে না চোখ,
লাজে মুখ নিচু করে ফেলে।
রিদকে চুপ করে থাকতে দেখে, মেয়েরা আবার বলে,

—কি দেখছেন, দুলাভাই???
রিদ একহাতে বুকের বাঁ পাশটা চেপে ধরে বলে,
— আমার ঘরের চাঁদ,
যার চোখে আমি দেখি আমার সর্বনাশ..!
সাথে সাথে সবাই চিৎকার করে ওঠে,
— আহারে!!
তারপর সবাই আবার চিৎকার করে একসাথে বলে ওঠে,
জিতছেন দুলাভাই, আপনি দিচ্ছেন!!
মেহরিন মেহেরের ঘোমটা সরিয়ে দেয়।
আর রিদ?
লোক-লজ্জা ভুলে, নিজেই বলে ওঠে—
— হায়… মাসাল্লাহ!
আরেকদফা হাসির রোল পড়ে।
তারপরেই শুরু হয় আনন্দ-উল্লাস,
হঠাৎ করে ঢুকে পড়ে—
শান্ত, রাকিব, লাবিব, রাহি আর লামিয়া।
নাচতে নাচতে গান গায়,

বধূ সেজে থেকো গো লক্ষ্মী ভাবী..!
তুমি হলে ভাইয়ার সুখের চাবি..!
নাচ শেষ।
আবেগে ভরপুর প্রতিটা ক্ষণ।
সবাই একটু একটু করে সরে পড়ে স্টেজ থেকে।
তখনই এন্ট্রি নেয়—
মেহরিন আর মাহির!
দুই ভাই-বোন একসাথে নাচে মাতিয়ে তোলে মঞ্চ।
(নাচো নাচো) গানে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স।
নাচ শেষে, রাজ দৌড়ে আসে, হাতে পানির গ্লাস।
গ্লাসটা মেহরিনের দিকে বাড়িয়ে বলে—
— বউ, এইটা খাইয়া নাও।
যেভাবে কোমর দুলাইলাও তোমার কমরের নাট বল্টু না খুললেও, আমার হৃদয়ের নাট খুলে গেসিলো একটুর জন্য।
আর একটু হলেই হসপিটালে যাইতাম!
মেহরিন চোখ গরম করে তাকায়।
রাজ হেসে বলে,

—তুমি তো আমার বিয়াইন তাই না, তাই একটু মজা করলাম আর কী!!
মেহরিন হালকা বাঁকা হাসি দিয়ে গান ধরে,
সারা জীবন পরছো লুঙ্গি
প্যান্ট পরো নাই,
আমায় দেখে বলদা বিয়াই
গলায় লাগাই টাই..!
রাজের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম, কিছু বলার আগেই
লাবিব এসে মেহরিনকে টেনে নিয়ে যায়।
সাথে জোটে— আরশ।
আরশ বলে,

—আজ আমি তোদের ভাই না,
আমি তোর দেবর, সো চল ভাবি,
দেবর মিলেই একটা হয়ে যাক।
মেহরিন হেসে দুইজনের হাত ধরে স্টেজে উঠে যায়।
শুরু হয়—”ভাবি-দেবর” মিলে হিন্দি গানের ধামাকা!
গান শেষে, মেহরিন মাঝখানে, এক পাশে লাবিব, এক পাশে আরশ।
ওরা গায়—
ও ভাবি,
বিয়া করাই দাও না…
ও ভাবি,
বিয়া করাই দাও না..
ও ভাবি ভাবি রে…..!!
মন তো নয় মানে আরে
বিয়া করাই দাও না
মেহরিন হাসে,

আর তারপর সে নিজেও এক গান গায়—
“হাতে লাগে ব্যথা রে…
আরে হাতে লাগে ব্যথা রে,
হাত ছাইড়া দাও…
সোনার দেওরা রে…”
ঠিক তখনই, হুট করে আসে রাজ।
আরশ আর লাবিবকে সরিয়ে সে নিজেই জায়গা নেয় মেহরিনের পাশে।
কাঁধ দিয়ে এক ধাক্কা দিয়ে শুরু করে—
‘ঝুমকা গিরা রে…’
তারপর শুরু হয়—জামাই-বউয়ের ধামাকা নাচ।

কিন্তু আনন্দ আর বেশি সময় টেকে না।
নাচ শেষ হতেই, এক ব্যক্তি রাজের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বলে—
— You are under arrest, Mr. Shikdar.
সবার মুখে হাসি মিলিয়ে যায়।
আনন্দে ভরপুর জায়গাটা হঠাৎ বিষণ্নতায় ভরে ওঠে।
আকরাম চৌধুরী আর ফিরোজ মির্জা এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করেন—
— কি সমস্যা, ইনস্পেক্টর?
ওনি বলেন,
— মি. শিকদারকে গ্রেফতার করতে এসেছি।
লাবিব সঙ্গে সঙ্গে ছুটে চলে যায় কোথাও।
আর মেহরিন দাঁত চেপে জিজ্ঞাসা করে—

— কিসের ভিত্তিতে?
অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট কই?
ইনস্পেক্টর চুপ।
রাজকে টানতে চায়।
রাজ কিছু বলে না।
শুধু চোখে সেই গভীর, গম্ভীর দৃষ্টি।
তার লোকেরা এগিয়ে আসতে চাইলেও, রাজ ইশারায় থামিয়ে দেয়।
দ্বিতীয়বারের মত ইনস্পেক্টর টান দেয়ার চেষ্টা করলে,
মেহরিন গর্জে ওঠে—
— আর একবার আমার স্বামীর গায়ে হাত দিলে অথবা তাকে টানা টানি করার চেষ্টা করলে, সেই হাত ভেঙে ফেলতে আমি মেহরিন শিকদার দুই মিনিটও নেবো না!
ইনস্পেক্টরও গর্জে ওঠে—

— সীমার মধ্যে থাকুন!
ঠিক তখনই রাজ বজ্রস্বরে বলে ওঠে—
— এইইইই আওয়াজ নিচে!
আমার সাথে যা ইচ্ছে কর, আমি কিছু বলবো না। কিন্তু আমার ওয়াইফের সাথে উঁচু গলায় কথা বললে,
আমি রাজ শিকদার তোর কণ্ঠনালী ও জিব্বা একসাথে উপড়ে ফেলবো।যেন তা ব্যবহার করে আর কখনো কথাই না বলতে পারিস।
**ইনস্পেক্টর একটু ভয় পেলেও চুপ করে না।
বলে—

—সম্মান দিয়ে কথা বলুন। আমি আইন অনুযায়ী কাজ করছি।
মেহরিন এবার চিৎকার করে বলে—
— তাহলে আইন যা বলে, সেটা করুন।
Show me the arrest warrant—right now!
ইনস্পেক্টর রুঢ়ভাবে বলে—
— আমি বাধ্য নই আপনাকে ওয়ারেন্ট দেখাতে।
বলেই রাজকে আবার টান দিতে যায়।
**সেই মুহূর্তে,
**মেহরিন তাঁর হাত থেকে বন্দুক কেরে নিয়ে
ডাইরেক্ট গুলি চালিয়ে দেয়,
তাঁর হাত থেকে।
রাজের মুখে ফুটে ওঠে—বিশ্বজয়ের হাসি।
আর মেহরিনের চোখে—আগুন।
চিৎকার করে বলে—
—তোকে বলেছিলাম,
আমার হাজব্যান্ডকে না টানতে…
তবুও টানলি?
গ্রেফতার করতে চাস?

ওয়ারেন্ট দেখাতে বললে এত জ্বলে কেন?তুই আইনের লোক মানলাম! তাই বলে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট না দেখে আমার হাসবেন্ডকে আমার চোখের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাবি আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখব? রাস্কেল কোথাকার..!
ইনস্পেক্টর হাত ধরে বসে পড়ে,
ভয়ে, বিস্ময়ে, বাকরুদ্ধ।
ঠিক তখনই হাজির হয় লাবিব।
পুরো ঘটনা দেখে, সে মুখ চেপে হাসে…
লাবিব একপাশে বসে বক্রহাসিতে বলে—
— আরে আরে ইনস্পেক্টর সাহেব, পরে গেলেন কিভাবে! উঠুন, উঠুন!
তারপর আবার বলে,
— থাক, উঠতে হবে না। বসেই থাকুন।আর ভাবি নিশ্চয়ই আপনাকে বসিয়েছে।আমি আবার ভাবি ভক্ত বুঝলেন তো! ভাবি যা করে আমি সেইসবের পক্ষে। তাই আপনাকে আর কষ্ট করে উঠতে হবে না বসে থাকুন।
বলেই সে নিজেও নিচে বসে পড়ে।

— আমি Mr. Shikdar-এর পার্সোনাল ল’ইয়ার।
এখন বলুন দেখি, কি অপরাধে আমার মক্কেলকে ধরতে এসেছেন?
ইনস্পেক্টরের গলা শুকিয়ে যায়।
ঘামছেন তিনি।
কাঁপা কণ্ঠে বলেন—
—আমি একজন আইন-শৃঙ্খলার লোক, আমার গায়ে গুলি করার ফল ভোগ করতে হবে আপনাদের!
এই কথা শোনার সাথে সাথে মেহরিন তেড়ে আসে।
একটা সজোরে থাপ্পড় মারে!
— এইটা থাপ্পড়ও মারলাম! এখন তোর কোন বাপ আমার কি করতে পারিস কর আমিও দেখি!
লোকটা উঠতে চায়, গলা শক্ত করে বলে—
— খুব খারাপ হবে!
মেহরিন আর এক ধাক্কায় ঠেলে সরিয়ে দেয়—
— তোকে তো ! দারা??
রাজ এসে মেহরিনকে পিছন থেকে জাপ্টে ধরে।

— বউ, শান্ত হও। বাকি সব আমি দেখবো।
রাজের জড়িয়ে ধরা সত্ত্বেও, মেহরিন এক পায়ে লাথি মারে লোকটার গায়ে।
লোকটা কোনরকমে পালাতে চায়।
কিন্তু লাবিব তার সামনে দাঁড়িয়ে যায়—
— আপনার থানার নাম বলুন?
ইনস্পেক্টর থতমত খেয়ে যায়। ঘামতে থাকে।
একদিকে হাত গুলিবিদ্ধ, অন্যদিকে লাবিবের জেরা!
— আপনার কমিশনারের নাম্বার দিন।
ইনস্পেক্টর বলে—
—আমি বাধ্য নই কাউকে কিছু জানাতে!
আপনারা একজন আইনের লোকের গায়ে হাত দিয়েছেন।
আমি সবাইকে জেলের ভাত খাওয়াবো।
লাবিব এবার জ্বলে ওঠে—

— ধুর! তখন থেকে বা*লের পেঁচাল শুরু করেছে।
এই বা*লের ব্যাটা, আইনের লোক বলা ছাড়া আর কিছু কি তোর মুখ দিয়ে বের হয় না? শালা তুই যতবার আইনের লোক নিজেকে দাবি করলে..!শেখ হাসিনাও তো মনে হয় অতবার নিজেকে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেনি।
লাবিব গর্জে ওঠে—
—জানিস আমি আইনজীবী?
আর পাশা পাশি কসাইও!
তোর গলা চিরে ফেলবো এখনি!জানিস তোকে পিস পিস করে দিতে বড় জোর আমার ১৩ মিনিট লাগবে।
মেহবুবা হঠাৎ জিজ্ঞেস করে,
_ ১৩ মিনিট কেন ?
লাবিব বলে,
লাগবে তো ১২ মিনিটই। কিন্ত আমি জানতাম এই প্রশ্নটা করে তুমি আমার এক মিনিট খেয়ে দিবে।তাই এক্সট্রা এক মিনিট ধরে রাখছি।
মেহবুবা মুখ ঝামটা দেয়।
এ কথা বলেই চিৎকার করে—

— এই! কে আছে, দা নিয়ে আয়!
রাজের এক লোক ছোটে, একটা দা এনে দেয়।
লাবিব সেই দা লোকটার গলায় ঠেকিয়ে বলে—
— কে পাঠিয়েছে তোকে?
নাটক বন্ধ কর—বল, তুই কে?
শোন ভাই!!দয়া করে নিজেকে আইনের লোক বলে আইনের সম্মানের উপর কেরাসিন ঢালিস না ভাই? তোকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়া পাবলিক..!তো এখন নাটক বন্ধ করে বল কে তুই?? আর কে তোকে পাঠিয়েছি ??
মেহরিন রাজের দিকে ফিরে গর্জে ওঠে—

— ছাড়ুন আমাকে।
রাজ শান্তভাবে বলে—
— বউ, cool… আমি আছি তো।
মেহরিন তাকে সরিয়ে দেয়।
আর বলে—
— “লাবিব!”
লাবিব মাথা নাড়ে, সরে যায়।
মেহরিন একজনকে ইশারা করে।
রাজের লোকেরা লোকটাকে ধরে ফেলে।
মেহরিনের জন্য আনা হয় একটা চেয়ার।
সে পায়ের ওপর পা তুলে বসে।
— কে পাঠিয়েছে তোকে?
Mr. Talukdar?
লোকটা ঢোঁক গিলে চুপ করে থাকে।

— মেহবুবা! লবণ নিয়ে আয়!
সবাই থ মেরে যায়।
লবণ? এখন এটা দিয়ে কি করবে মেহরিন?
মেহবুবা ছুটে যায়, লবণ নিয়ে আসে।
মেহরিন হাতে নেয়,
তারপর রাজের লোকদের বলে—
— একটা ছুরি আনো।
ছুরিও আনা হয়।
মেহরিন চুড়ান্ত শয়তানি হাসি দিয়ে বলে—
— তুই না বলছিলি, জেলের ভাত খাওয়াবি?
চল, আগে ‘লবণ-মাখা ’ খাই।
বলেই ছুরির ২-৩ টা পোস দেয় লোকটার শরীরে,
আর সেই জায়গায় চাপ দেয় লবণ।
লোকটা গগনবিদারী চিৎকারে উঠলো—
“আআআআআআআআআআআআআআআআআআআআ!”

সবাই হতবাক।
রাজ ঘোষণা দেয়—
— আশা করি, এখন আপনারা বুঝেছেন
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ।
আপনারা সবাই এখন আসতে পারেন।
সবাই তখন আতঙ্কে-স্তব্ধ।
একটাও কথা না বলে,
ধীরে ধীরে বেরিয়ে যেতে থাকে…
সবাই বেরিয়ে গেলে রাজ, বাড়ির বড়দের ভিতরে পাঠিয়ে দেয়।
অন্যদিকে রিদ, মেহের, শান্ত, রাকিব, রাহি, লামিয়া, চুমকি, জেরি, মেহবুবা, সাথী, মৌ,আরফা,আরশ, মাহির—
সবাই মেহরিনের দিকে তাকিয়ে থাকে।
মেহরিন গর্জে ওঠে,
—কি বলছি? কথা কানে যায় না তোর?
তার চিৎকারে সবাই চমকে উঠে।
রাজ চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে,
— আজ আমার রানির মাথা একটু বেশিই গরম হয়ে গেছে।
মুখে বলে,

— ছেড়ে দাও বউ, ছোঁছো মেরে হাত নোংরা করার দরকার নেই। এই, একে নিয়ে যা।
রাজের লোকেরা একটানে সেই লোকটাকে নিয়ে চলে যায়।
মেহের এসে মেহরিনকে বলে,
— মেহু, মাথা ঠান্ডা কর। বি হ্যাপি। আমার বিদায়ের সময় মাথা গরম রাখিস না।
মেহরিন চোখ বন্ধ করে গভীর নিঃশ্বাস নেয়।
তারপর উঠে দাঁড়ায়।
হাসিমুখে বলে,

— ওকে, ডান।
মেহবুবা বলে,
—আমি সবাইকে ডেকে আনি।
সবাই মাথা নাড়ে।
মেহবুবা চলে যায় সবাইকে ডাকতে।
শান্ত আর রাকিব রাজের কাছে গিয়ে বলে,
—ভাই, আমরা আগে চলে যাই, ওদের রুমে।
রাজ বকে বলে,
—সেটা নিয়ে ভাবো না, সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। তোমরা চিল করো।
শান্ত আর রাকিব হেসে ওঠে।
শান্ত রাকিব কে বলে দেখলি?
একটা মানুষ কিন্তু সব দিকে নজর রাখে। রাকিব মাথা নারে।
এতক্ষণে সবাই এসে গেছে।
মেহেরকে বিদায় দেওয়ার মুহূর্ত চলছে।
এই মুহূর্তটা খুব কষ্টের—

বাবা-মায়ের কাছে নিজের সন্তানকে চিরদিনের জন্য অন্য ঘরে পাঠানো।
এই ‘বিদায়’ নামক শব্দটাই তো বাড়ির মেয়েকে করে তোলে সেই বাড়ির অতিথি।
যে বাড়িতে ছোট থেকে বড় হয় হাসিখুশি আনন্দ কত মধুর স্মৃতি সবকিছু জড়িয়ে থাকে সেই বাড়িটরি একদিন মেহমান হয়ে যায় বাড়ির সেই মেয়েটা।
কিন্তু কাহিনী এখানেই শেষ নয়। যাকে ঘিরে এত কিছু। যার বিদায় নিয়ে সবার মন খারাপ। সে???
মালিহা মির্জা আর ফাইজা চৌধুরীর চোখে টলমল করছে জল।
আর যাকে ঘিরে এত কিছু—
সে দিব্যি হাসছে!
মেহরিন কপাল চাপড়ে বলে,

— বোন, একটু কান্না কর!বিদায় বেলায় মেয়েরা যদি কানা না করে? তাহলে লোকজন কি বলবে?? বলবে বাবা মার জন্য এই মেয়ের কোন মায়া দয়া নেই।
মেহের ভ্রু কুঁচকে বলে,
— এক লাখ টাকা দিয়ে মেকআপ করছি, একটু কান্না করতে গিয়ে নষ্ট করবো? না ভাই, সরি।আর আমি আমার বাবা মাকে ভালোবাসি কিনা!! তাদের জন্য দয়া মায়া আছে কিনা? সেটা আমরা জানলেই হল।
লোকের কাজ মানুষের নামে গীবত করা। ওটা আমি ভালো করবে খারাপ হলেও করবে। তাই তারা করুক তাদের কাজ। মোট কথা হলো আমি কান্না করব না মানে করবোই না।
তার কথায় সবাই হেসে ওঠে।
রিদ, রাজের দিকে তাকায়।
রাজ ফিসফিস করে বলে,
— কান্না তো তুই করবি, তাই ও করতে চাচ্ছে না। ভাই, সাবধানে থাকিস। আর আজ রাতে হলটা নিজের হাতে নিস।
রিদ ঢোক গিলে।

মালিহা মির্জা বলেন,
—তুই এত বেয়াদব হলি কবে থেকে রে মেহের!
মেহের “ডোন্ট কেয়ার” ভাব নিয়ে বলে,
— যা বলো, আমি পারবো না কান্না করতে। আমি এখনো একটা সেলফি তুলিনি।একটু কান্না করার জন্য আমি আমার ১ লাখ টাকার লস করতে পারবো না।
সবাই জানে, মেহের একরোখা টাইপের মানুষ একবার যা বলে তাই করে।
ফিরোজ মির্জা, রিদের হাত ধরে কিছু বলতে যাবে—
তখনই রাজ বলে,
— বাবা, এখন আপনি সেই ডায়ালগগুলো কপি করবেন, তাই তো? ওয়েট করতে হবে না, আমি বলেই দিচ্ছি।
রাজ রিদের হাত ধরে বলে,
—বাবা, নিজের খেয়াল রেখো। আমার মেয়ে যা বলবে, তা শুনে চলবা। আর নিজের হাড়গোড় গুলো সুন্দর করে আমার মেয়ের হাতে তুলে দিবা—
যাতে ও ভাঙতে পারে।
আর আজ থেকে মার খাওয়ার অভ্যাস করে নাও বাবা। কারণ আমার মেয়েকে তো তুমি চেনোই অনেক মার খেতে হতে পারে।

সব কথা শেষে রাজ একটা লম্বা নিঃশ্বাস নেয়।
রিদ কান্নাভেজা মুখে তাকিয়ে থাকে শ্বশুরের দিকে।
ফিরোজ মির্জা গর্বিত হাসি দিয়ে বলে,
— ধন্যবাদ, আমার কথাগুলো বলে দেওয়ার জন্য।
রিদ, একেবারে অবুঝ বাচ্চার মতো ডেকে ওঠে,
— “শ্বশুর মশাই…”
ফিরোজ মির্জা বলে,
—আমাকে তোমরা কোনো দোষ দিতে পারবে না। তোমরাই নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মেরেছো!
রিদ ঢোক গিলে বলে,
—পানি খাবো…
রাজ হেসে বলে,
— ভাই, যখন আমাকে ওই ডায়ালগ গুলো দিয়েছিলো শ্বশুর আব্বা, আমার কেমন লেগেছিলো। জাস্ট একবার ভাব, তোকে সতর্ক করার জন্য আমি আছি। কিন্তু আমার বেলায় কে ছিল নারে ভাই।
রিদ বলে,

— ভাই!
রাজ বলে,
—চিন্তা করিস না। তাদের মন জুগিয়ে চলতে পারলে তুই রাজা, আর তোর উপর যদি হয় তোর নারীর রুষ্ট তবে পাবি সাজা।
তারপর রাজ আবার বলে,
— তো শালিকা বলো এবার। কিসে করে যেতে চাও? হেলিকপ্টার, কার, না বাইকে?
মেহের বলে,
— উফ ভাইয়া! আমি আমারটা বুঝে নেব। তুমি বরং তোমার বন্ধু কে নিয়ে ভাবো—
ওকে কীসে করে পাঠাবে।
মেহেরের কথায় সবাই মেহেরের দিকে তাকায়
প্রশ্নবোধক চোখে।

মেহরিন অবাক হয়ে বলে,
— মানে কী বলছিস এসব? তোরা কি আলাদা যাবি নাকি?
মেহের চোখে চশমা পড়ে বলে,
— হুম, অবশ্যই..
সবার মুখে একসাথে,
— “কীইই!!”
মেহের গম্ভীর চোখে বলে,
— সবাই বর নিয়ে যায়, আমি ভাবলাম— আমিও যদি তাই করি, তবে আমার আর তাদের পার্থক্য কোথায় থাকবে? আমি কি সবার মতো বিয়ে করেছি নাকি? বিয়ে করেছি মন মতো, তাই যাবোও মন মতো।
মালিহা বেগম কিছু বলতেই যাচ্ছিলেন—
কিন্তু কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মেহের মেহরিনের হাত ধরে দৌড়াতে দৌড়াতে বলে,
বায় বায় দোয়া ও মে ইয়াদ রাখনা।
মেহরিনকে বলে,

— আমি রাস্তা চিনি না, তাই তুই আমার সঙ্গে চল!
বলে হেসে হেসে দৌড়াই।
রাজ চিত্কার দিয়ে বলে,
— এই! হেল্প হেল্প! আমার বউ নিয়ে গেল! পুলিশ পুলিশ!আমার বউ???????
লাবিব হেসে গড়িয়ে পড়ে,
—ভাই, আমার ফ্ল্যাটেই যাচ্ছে ভাবী গণ! চলো আমরাও যাই।
সবাই হতবাক—
মেহেরের এই কান্ডে।
রাজ, রিদ, রাকিব, শান্ত, লাবিব আর রাহি সবাই বিদায় নিয়ে বের হয়।
সাথী আর মৌ নিজেদের বাড়িতে ফিরে যায়।
অন্যদিকে,

মেহের— বউ হয়েও বাইক চালাচ্ছে!
আর পেছনে বসে আছে তার বোন মেহরিন।
দুই বোন হাসতে হাসতে চলেছে।
মেহরিন বললো,
— এটা কী করলি তুই! বিয়েতে এক কাহিনী, এখন বিদায়ে কী না— তুই বর ছাড়াই চলে আসলি?
মেহের হাসে,
— দেখ, সবাই তো বর নিয়েই যায়, আমি না হয় বোন নিয়েই এলাম! কি বলিস!
দুই বোন হাসতে হাসতে রাস্তা ধরে এগোতে থাকে।
হঠাৎ রাস্তার পাশে ফুসকার দোকান দেখে
মেহরিন বলে,

— সাইড কর! ফুসকা খাবো!
মেহের বাইক থামায়।
ফুসকার দোকানে গিয়ে মেহের বলে,
— মামা, ঝটপট দুই প্লেট ফুসকা দেন! ঝাল ঝাল করে!
ফুসকা ওয়ালা চমকে দুই বোনের দিকে তাকায়।
একবার তাকায় মেহরিনের দিকে,
আরেকবার মেহেরের দিকে।
মেহরিন হেসে বলে,
— মামা, আমরা জমজ বোন! আপনি ফুসকা দিন।
ফুসকা ওয়ালা মুগ্ধ হয়ে হেসে বলে,
— আপনারা অনেক সুন্দর দেখতে আম্মাজানরা!
মেহরিন আর মেহের হাসে।
ফুসকা বানাতে বানাতে ফুসকা ওয়ালা নানা গল্প শুরু করে দুই বোনকে নিয়ে।
আর এদিকে…

শান্ত, রাকিব, লাবিব, আরোশ আর রাহি— সবাই ফ্ল্যাটে চলে গেছে।
রিদ আর রাজ
একটা টং দোকানে বসে চা খাচ্ছে।
রাজ তার বিয়ের অভিজ্ঞতা বলছে আর হা হা করে হাসে,
রিদ ঘাম মোছে।
রাজ বলে,
—চল ম‍্যাডামদের খুঁজি। আমার যতদূর মনে হয়, ম‍্যাডামরা আশেপাশেই আছে… দুই পাখি আকাশে উড়ছে!
রিদ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
— তাহলে চল, ভালোবাসার খাঁচায় বন্দী করি!
রাজ হেসে ফেলে।
তারপর…
বাইক স্টার্ট হয়।

তারা দুইজন ভালোবাসার মানুষদের খুঁজতে রওনা দেয়—
নতুন এক গল্পের নতুন অধ্যায় শুরুর পথে।
রাজ আর রিদকে বেশি দূর যেতে হয় না—
ঠিক কিছুটা সামনে ফুটপাতের পাশে দাঁড়িয়ে দেখতে পায়,
দুই বোন মন দিয়ে, চোখ বন্ধ করে, প্রেম দিয়ে ফুসকা খাচ্ছে!
রাজ নিচু গলায় বলে,
—আমাদের মাথা খেয়ে, ওদের কিছু হয় না রে… দ্যাখ কীভাবে ফুসকা খাচ্ছে, যেন প্রেমের কাহিনি নয়, ফুসকার উপন্যাস লিখছে! যেন ওটা ফুচকা না অমৃত।
রিদ মুচকি হেসে বলে,
— সাহস আছে! এই কথা মেহুর সামনে বলার?
রাজ অসহায় মুখে বলে,
— থাক গভীরে যাওয়ার দরকার নেই ভাই… তাহলে ওনার রাগের ঝঙ্কারে আমি পুরে ছাই হয়ে যাব। অত না বকে চল।

দুজনই ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়।
ওদিকে—
মেহরিন আর মেহের ফুসকা খেতে খেতে হেসে গল্প করছে,
রাজ আর রিদ পাশে এসে দাঁড়ায়।
রাজ হাসিমুখে বলে,
— বেশি খাইও না, পেটব্যথা হবে।
মেহরিন বলে,
—হক! ওষুধ খেয়ে নেবো!
রাজ আর কিছু বলে না—
শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে যতক্ষণ না ওদের খাওয়া শেষ হয়।
খাওয়া শেষ হতেই—
দুই বোন আবার একসাথে বাইকে উঠতে যায়।
রাজ হাত তুলে বলে,
— এই! বউ এখন আমার সাথে চলো, একসাথে বাসায় যাই। নবদম্পতিরা আলাদা আলাদা গেলে লোকের কথা উঠবে!
মেহরিন মাথা নাড়ে,
রাজের বাইকে উঠে বসে।
ওদিকে রিদ কিছু বলার আগেই মেহের বলে,

— বাইক উঠুন!
রিদ বলে,
— আমি ড্রাইভ করি?
মেহের বলে,
—আপনি বরং হেঁটে হেঁটে আসেন আমি যাই।
রিদ দাঁত বের করে হেসে বলে,
—না না, কোনো দরকার নাই। বউয়ের পেছনে বাসার সৌভাগ্য জনের হয় বলো? কবি বলেছে
‘বউয়ের পেছনে বসে যে
সে- ভাগ্যবান!’
ফিসফিস করে যোগ করে,
— কোন সালার কবি যে এটা বলছে, হাতের কাছে পেলে মাথার উপর তুলে একটা আছার মারতাম।
মেহের থমকে বলে,
— কি বললেন?
রিদ দাঁত বের করে বলে,

—না না কিছু না, আমি তো ভাগ্যবান হতে চাই! চলো যায়..
বলেই মেহেরের বাইকে উঠে পড়ে।
মিনিট দশের মধ্যে
দুই জোড়া নবদম্পতি পৌঁছে যায় লাবিবের ফ্ল্যাটে।
কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলে দেয় রাহি।
হাসিমুখে বলে,
— ভাবি…টুকি!
মেহেরও হাসে,
— “টুকি!”
সবাই হেসে ওঠে।
মেহরিন ভেতরে ঢুকে রাহিকে বলে,
—সব রেডি?
রাহি মাথা নেড়ে।
মেহরিন বলে,
— গুড!

বলেই কিচেনে গিয়ে মিষ্টি আর পানি নিয়ে আসে।
মেহের আর রিদকে বরন করে,মিষ্টিমুখ করে মেহের কে ঢুকতে বলে।
মেহের ঢুকতেই শুরু হয় পুষ্পবৃষ্টি!মেহের ঢুকা মাত্রই বাড়ির সব লাইট অফ করে দেওয়া হয়। অন্ধকার হয়না সুন্দর কারন ফুল দিয়ে রাস্তা বানানোরর সময় সেখানে লাইট ব্যবহার করা হয়েছে। তাই আলো বন্ধ করার সাথে সাথে সেই লাইট গুলো জলে ওঠে।
মেহের মুগ্ধ হয়ে তাকায়— ফুলের গন্ধ, রঙিন আলোয় ভরা পথ।
সেই পথ মুগ্ধ চোখে হাঁটতে হাঁটতে মেহের পৌঁছে যায় সেই ঘরের সামনে…
যেখানে রিদ থাকে।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সে ঢুকতে পারে না!
কারণ, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক “আরেকটা দরজা” —
মানে, দাঁড়িয়ে আছে
রাকিব, শান্ত, লাবিব, আরশ, রাহি, আর মেহরিন।
মেহের ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
শান্ত বলে রিদকে উদ্দেশ্য করে,

—তাড়াতাড়ি মালপানি দে, আমরা কেটে পড়ি। যত দেরি করবি, ততই লস!
মেহের কিছু বলে না, চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
রিদ বোঝে এইসব প্ল্যানড ব্যাচেলর প্রটোকল…
রিদ কপাল চুলকে বলে,
— আমার তো ক্রেডিট কার্ড, ওয়ালেট সব মেহুর কাছেই… ওর কাছ থেকে নিয়ে নিস।
মেহরিন বলে,
—না না! তা হবে না। ওটা তো আমাদের পাওনা ছিল! সেটার হিসেব আলাদা!এখন দিতে হবে।
রিদ রাজের দিকে তাকায়।
রাজ চোখ গোল করে বলে,
— আমি দিচ্ছি! চল আসো সবাই!
রাহি বলে,
— না ভাইয়া, টাকা দাদাভাই দিবে।
রিদ কপাল চাপড়ায়।
মনেই মনে বলে,

এই একটা রাতের জন্য কত কাল অপেক্ষা করেছি। অবশেষে সেই রাত এলো। কিন্তু এই হারামি গুলো আমার স্পেসাল রাত টাকা টাকা করে খেয়ে দিচ্ছে বা*ল।
রাজ টাকা দেয়, রিদের হাতে গুঁজে দেয়।
আর রিদ টাকা দেয় মেহরিনপর কাছে।মেহরিন টাকা নিয়ে,
রাস্তাটা ছেড়ে দেয় সবাই।
আর তখনই…
মেহের এক ধাক্কায় রিদকে রুমে ঠেলে ঢুকিয়ে
মেহরিনের হাত থেকে টাকার ছো মেরে নিয়ে নেয় আর..!
বুমমমমম!
দরজা লক।
সবাই হতবাক!
কি হলো??
কিছুক্ষণ পর যখন সবাই বুঝতে পারে আসলে কী হয়েছে,
তখন বাইরে থেকে রাকিব, শান্ত, লাবিব, আরশ, রাহি সবাই দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে:

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫৩

—এই! আমাদের পাওনা দে!
— দেনা মিটিয়ে যা! বিয়ের বিল বাকি রেখেছিস!
— গান-বাজনার চার্জ এখনও বাকি!
— ফুল দিয়ে সাজানোর খরচও তো দিলি না!
আর ভেতরে?

মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫৫