এলিজা পর্ব ৭০+৭১+৭২
Dayna
অপূর্ব গুপ্তঘরের দরজাটি খোলার চেষ্টা করলো।দরজাটি তালাবদ্ধ। অপূর্ব অঝরে ঘামছে।বুকের ভেতর চিন চিন করছে। অপূর্বর পিস্তলে সাইলেন্সার লাগানো। অপূর্ব তালা বরাবর সুট করে।দরজাটি খুলে যায়। অপূর্ব দেখলো পরবর্তী আর একটি সিড়ি।সিড়িটি অনেক টা পাতালে গিয়ে পৌঁছেছে। অপূর্বর ভয় ও হচ্ছে।জীবনে এমন একটি পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে, না পারছে পেছনে যেতে না পারছে সামনে এগোতে।সামনে যাওয়ার পথ যে,কঠিন-ও থেকে কঠিন। অপূর্ব সাহস করে নিচে নামে। অন্ধকার সরুপথ। অপূর্ব হাতে টর্চ নিয়ে নিচে নামতে থাকে।বুক ধরফর করতে থাকে।হাটার শক্তি নিমিষেই ফুরিয়ে যাচ্ছে। অপূর্ব হাঁটতে হাঁটতে নিচে নেমে দেখলো আরকেটি দরজা। দরজাটির সামনে লেখা’ আমার মৃত্যু খেলা ”’অপূর্ব ঢেক গিলতে থাকে। অপূর্ব সুট করে তালা বরাবর।দরজাটি খুলে যায়।
অপূর্ব পা রাখে – অন্ধকার জগতে। অপূর্বর সমস্ত শরীর কেঁপে উঠছে।অপূর্ব দেখলো, চারদিকে বিভিন্ন ধরনের বাল্ব জ্বলছে। গোলাকার ৫ টি ঘর। চারদিক উপরের ঘরের মতই চিকচিক করছে।এটা পাতাল ঘর মনেই হচ্ছে না।মনে হচ্ছে এটাও একটা বাবররাজ্য।৫ ঘরের সামনে কিছু না কিছু লেখা।১নং ঘরের সামনে লেখা ‘রক্ত খেলা’তার উপরে লেখা ২৭ বছর বয়স’। অপূর্ব হতভম্ব হয়ে যায়। ২নং ঘরের সামনে লেখা” কন্যাধর্ষন”। ৩নং মাঝ বরাবর ঘর সেটা একদম ভিন্ন। অনেক বড় আকারের সাদা রঙের দরজা-অর্থাৎ রুপার তৈরি দরজা। তার উপরে লেখা’ হিং,স্র ‘ শব্দটির নিচে লেখা’ মালাইকা সিকদারিনী। অপূর্ব শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।কালো ধোঁয়া ধেয়ে আসছে।কি হচ্ছে এসব।৪নং ঘরের উপর লেখা’সূর্য’ অর্থাৎ এটায় হয়তো সূর্য থাকে।৫নং ঘরের উপর লেখা ‘ হিসাব-পাচার। অপূর্বর সব কিছু গুলিয়ে ফেলছে।এসবের মানে কি। কেন করছে এসব।কিসের জন্য এই পাপের খেলা হচ্ছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এসব ভাবতেই,অপূর্ব প্রথম ঘরটার দরজায় সুট করে।দরজা খুলে যায়। অপূর্ব যা দেখলো, সম্পুর্ন ভাবে কেঁপে উঠে। ভেতরে অনেক গুলো ছেলেদের কে বেডের উপর সুইয়ে রেখেছে।ঘরটা আয়তনে অনেক বড়।মেডিক্যালি সবকিছু এখানে আছে। অপূর্ব কাছে এগোয়।সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা। মুখমণ্ডল দেখা যাচ্ছে। অপূর্ব একটা ছেলের শরীরের উপর থেকে কাপড় টা সরিয়ে ফেলে। অপূর্ব দেখলো,এদের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। তারমানে এদের অজ্ঞান করে রাখা হয়েছে। অপূর্ব ভাবলো এদের যদি বাঁচাতে পারতাম। কিন্তু কিভাবে। অপূর্ব ঘরটা থেকে বের হয়।২নং ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। এখানেও ঠিক একই ভাবে মেয়েদের সুইয়ে রেখেছে।
৫ টা মেয়ে তবে এদের প্রত্যেকের পরনে লাল বেনারশী। এদের কেও অজ্ঞান করে রাখা হয়েছে। অপূর্ব ঘর টা থেকে বের হয়। অপূর্বর পিস্তলে মাত্র একটা বুলেট আছে। এখন ও তিনটে ঘর বাকি। অপূর্ব ভাবতে থাকে কোন ঘরটায় যাবে। অপূর্ব ভাবলো , সূর্য যে ঘরটায় এটায় যাওয়া যাক।হয়তো ওকে এখানেই পেয়ে যাবো। অপূর্ব সূর্যর ঘরের দরজার লক বরাবর সুট করে দরজা খুলে যায়। অপূর্ব চোখ বড় বড় করে করে দেখছে। অনেক বড় ঘর। সবকিছু সোনার-মত চিকচিক করছে। সোনালী রঙের দেয়াল। চারদিকে নৃত্য শিল্পীর ছবি।অন্যকোন নৃত্য শিল্পী নয়। সমস্ত ছবি রঞ্জনার। সূর্য আর ডাঃ ইব্রাহিম মুখোমুখি বসে কথা বলছে। আশেপাশে ৬জন চালা।তবে তারা কেউ দেশী নাগরিক নয়। বিদেশি। শরীরের রঙ সাদা ধবধবে। চুলগুলো লাল। অপূর্ব কে দেখা মাত্রই চালা গুলো ঝাঁপিয়ে পরবে,ঠিক তখনি সূর্য বাঁধা দেয়।ডাঃ ইব্রাহিম হকচকিয়ে উঠে।চশমাটা ঠিক মত পরে।টিসু দিয়ে ঘাম মুছে পানি খায়।
সূর্য চালাদের দূরে সরিয়ে দেয়। অপূর্ব সূর্য কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।রাগে আক্রসে,ঘৃনার ভঙ্গিতে বললো, মিথ্যাবাদী খু, নি। বেইমান,হিং,স্র শেষ করে দেবো তোকে আজ। সূর্য কে অপূর্ব এলোপাথাড়ি ভাবে মারতে থাকে।একটা ঘুষি লাগে সূর্যর ঠোঁটে। সূর্যর ঠোট বেয়ে রক্ত পরছে।ডাঃ ইব্রাহিম এক কোনে চাপসে বসে আছে। অপূর্ব ক্রোধের স্বরে বললো,কেন করছিস এসব?নিরীহ মানুষদের প্রান নিয়ে খেলছিস কেন?কি দোষ করেছে ওরা?মেয়েরা মায়ের জাত ওদের ও ছারলি না।কি করেছে ওরা? জবাব দে। সূর্য অপূর্বর হাত সরিয়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে বললো, সবকিছুর জন্য তুই দায়ী।তুই দায়ী,তোর গোটা পরিবার দায়ী। অপূর্ব পেছনে টপকে দিয়ে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খায়।কি বলছে সূর্য এসব,আমি দায়ী মানে,কি বলছে এসব, আমার পরিবার কি করেছে,। অপূর্ব নিস্তব্দ হয়ে যাচ্ছে সূর্যর কথা শুনে। আমি সবকিছুর জন্য দায়ী!কি বলছে সূর্য!
সূর্য ঠোঁট কুঁচকে হেসে দেয়। সূর্য এদিক ওদিক ঘার ঘুরিয়ে নেয়। কতটা অদ্ভুত দেখাচ্ছে সূর্য কে।কানে দুল,গলায় চেন,ভ্রু কাটা। অদ্ভুত রুপের সাথে ভয়ং,কর আচরণ অপূর্ব কে নিশ্চুপ করিয়ে দিচ্ছে।ডাঃ ইব্রাহিম অপূর্ব কে দেখার পর থেকে বার বার পানি খাচ্ছে।আর টিসু দিয়ে ঘাম মুছছে। সূর্য হাতের উল্টো দিক ঠোটের রক্ত মুছে।পা দিয়ে একটা টুল অপূর্বর দিকে এগিয়ে দেয়।বললো,বোস। অপূর্ব থম মেরে বসে পরে। সূর্যর নকের আচে, অপূর্বর কপাল আচরে যায়। সূর্য কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে বললো,তোর থেকে যা কিছু লুকিয়েছে সবটা জানার আজ সময় হয়ে গেছে।
তুই আমাকে মিথ্যা বাদি বলেছিস,প্রতারক বলেছিস, বেইমান বলেছিস। এগুলো আমি তোদের বলতে পারি।তোর গোটা পরিবার নিকৃষ্ট।তোর গোটা পরিবার বেইমান ছিল,স্বার্থপর ছিলো। অপূর্ব সূর্য কে জ্বলজ্বল চোখে দেখছে।যে বন্ধু চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতো না,যদি কোন কথায় কষ্ট পাই এই ভেবে।আর আজ সে আঙুল দেখিয়ে কথা বলছে, আমি খারাপ,আমরা নিকৃষ্ট।কি বলছে এসব!
সূর্য নিঃশ্বাস ফেলে। অপূর্ব সূর্যর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।
সূর্য কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,তোর বাবার জন্য আজ সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। সূর্য ঘৃনা জড়িত কন্ঠে বললো,পাষান তোর বাবা, নিকৃষ্ট তোর পরিবার,লোভি।
অপূর্ব কিছু বলতে পারছে না।বলার মত শক্তি অপূর্বর নেই। অপূর্ব ভাঙা গলায় বললো,কি করেছেন আমার বাবা!কি করেছে আমার পরিবার?আমাকে কেন তুই দায়ী বলছিস?
সূর্য কর্কট স্বরে বলল, তোদের বেইমনীর জন্য,লোভের জন্য,আজ এই পূরো বাবর রাজ্য টা শ্মশানে পরিণত হয়েছে।সুখ শান্তি তে আলোরনে ভরপুর ছিল এই রাজ্য,আজ সব মাটি হয়ে গেছে। অপূর্ব সূর্যর দিকে দেখে, সূর্যর কথা শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছে। চারদিক ভারী হয়ে যাচ্ছে।আকাশ টা ভেঙ্গে পরেছে। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয়, একজন নার্স। সূর্য কে উদ্যেশ্য করে বললো, ছেলেদের দ্বিতীয় ডোস দিয়ে দিয়েছি। সূর্য ডাঃ ইব্রাহিম কে ইশারা করলো।ডাঃ ইব্রাহিম বসা থেকে উঠে যেতেই , সূর্য বললো, তার অনুমতি নিয়ে তবেই কাজ শুরু করবেন। সাথে চীপস ডুপিয়ালি কে নিবেন। অপূর্ব নার্স টিকে দেখার চেষ্টা করলে দেখতে পায়,এই সেই মেয়েটি যে হাসপাতালে আমাকে বোকা বানিয়েছে। অপূর্বর ইচ্ছা করছে এখানেই শেষ করে দেই। কিন্তু কিছু বললো না। অপূর্ব সূর্যের একটা কথা শুনে হতভম্ব হয়, সূর্য একটু আগে বললো, যে,সে যদি অনুমতি দেয় তবেই কাজ শুরু হবে। তারমানে এদের সবার উপর অন্য কেউ আছে।
সূর্য অপূর্বর দিকে পরোক্ষ করে বললো,কি অবাক হচ্ছিস নার্স কে দেখে। সূর্য চোখ দুটো বড় করে ,ভয়ান,ক স্বরে বলল, সে নার্স নয় , একজন খু,নি।
অপূর্ব অধির আগ্রহে বসে আছে, সূর্য কি বলতে চাইছে।
সূর্য বলতে শুরু করলো,
বাবর সিকদার যে ছিলেন একজন গন্যমান্য ব্যক্তি।যিনি ছিলেন একজন প্রতাবশালী।ছিলোনা তার কোন কিছুর কমতি।সে ছিল একজন সৎ সাহসী ব্যাক্তি।তার প্রান প্রিয় একমাত্র বন্ধু,তিনিও ছিলেন একজন প্রতাবশালী।তার ও ছিলো তার নগরে নাম-ডাক।তিনি ছিলেন তিলকনগর এর ভরসার স্থল।তার নাম জাহাঙ্গীর চৌধুরী।
বাবর সিকদার এবং জাহাঙ্গীর চৌধুরী তাদের বন্ধুত্ব ছিল অটুট। তাদের বন্ধনে আবদ্ধ ছিলো শক্তি,ভরসা,রক্ষা,একে অপরের প্রতি মায়া টান সব কিছু। সময়ের সাথে সাথে বাবর সিকদার তার নিজ কর্মে নিযুক্ত হতে থাকে। সময়ের সাথে সাথে জাহাঙ্গীর চৌধুরী তার নিজ কর্মে নিযুক্ত হতে থাকে। বাবরের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় অন্তিম। জাহাঙ্গীর চৌধুরী তার বন্ধুর ছেলের জন্য কয়েকশ’ভরী স্বর্ন দিয়ে তৈরি করে সোনার দোলনা উপহার দেয়
বাবরের ছেলে অন্তিমকে।দুই বন্ধু নেচে গেয়ে আনন্দ করতে থাকে। নতুন মেহমানের আগমনে খুশি হয় বাবররাজ্য।
তখন জাহাঙ্গীর চৌধুরীর কোন সন্তান ছিল না।তার স্ত্রী জয়ার সমস্যা থাকায় জাহাঙ্গীর দ্বির্ঘ একটা সময় বাবা ডাক না শুনেই ছিল।তবুও তার স্ত্রীর প্রতি ছিল না কোন আক্ষেপ।
এভাবে ই চলে যায় কয়েকটি বছর। জাহাঙ্গীর চৌধুরী ও বাবর সিকদার এর বন্ধুত্ব অন্যরা দেখে হিংসা করতো।
ঠিক তার কিছুদিন পরই খবর আসে জাহাঙ্গীর চৌধুরী বাবা হতে চলেছে। সমস্ত তিলকনগর খুশিতে আপ্লুত হয়ে ওঠে। আনন্দিত হয় বাবররাজ্য।বাবর সেদিন জাহাঙ্গীর কে বলেছিল।তোর যদি মেয়ে হয় তবে আমার ছেলের বউ করবো।তখন জাহাঙ্গীর বলছিলো আর যদি ছেলে হয়। তখন বাবর বলেছিলো
এখন আমার কন্যা সন্তান নেই। কিন্তু যদি সৃষ্টিকর্তা দেন। তাহলে তোর ছেলেকে আমার জামাই করবো।
জাহাঙ্গীর চৌধুরীর ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় তার একমাত্র সন্তান অপূর্ব।যে এই মুহূর্তে আমার চোখের সামনে বসে আছে। অপূর্ব হকচকিয়ে উঠে। অপূর্ব সূর্যর কথা গুলো ধ্যান দিয়ে শুনছে।
সূর্য বলতে শুরু করে, জাহাঙ্গীর চৌধুরী খুশিতে আপ্লুত হয়ে ওঠে। সমস্ত তিলকনগর খুশিতে আপ্লুত হয়।খুশি হয় বাবররাজ্য।বাবর ছুটে আসে তিলকনগর।তার বন্ধু সদ্য বাবা হয়েছে। বাবর সিকদার নিজেই তার বন্ধুর ছেলের নাম ঠিক করেছিলো।সেই নামেই নাম রাখা জাহাঙ্গীর চৌধুরীর একমাত্র ছেলে অপূর্ব চৌধুরী।কারন অপূর্ব ছিল সু-দর্শন।
এভাবে আনন্দে ভরপুর ছিল বাবররাজ্য। আনন্দে ভরপুর ছিল তিলকনগর।কেটে যায় দির্ঘ একটি সময়। কিছুদিন পর জন্ম নেয় বাবরের দুই রাজকন্যা।সেদিন একসাথে জমজ জন্ম নিয়েছিল রঞ্জনা ও মালাইকা।
অপূর্ব ভাঙা গলায় বললো, তুই এত কিছু আমার থেকে বন্ধু হয়েও লুকিয়েছিস? কত মিথ্যে বললি। সূর্য বললো,তোকে আমি অনেক কিছু ই মিথ্যা বলেছি ।তবে বাধ্য হয়ে।তবে আজ সত্যিটা জানার সময় হয়ে গেছে।
অপূর্ব জ্বলজ্বল চোখে জিজ্ঞাসা করলো, তারপর কি হয়েছিল?
সূর্য বললো, রঞ্জনা মালাইকা দুইজন ই হয়েছিল ভুবনমোহিনী সুন্দরী। জাহাঙ্গীর ছুটে আসে বাবররাজ্য। জাহাঙ্গীর চৌধুরী খুশিতে আপ্লুত হয়ে, প্রথমেই তার কোলে নিয়েছিল,মালাইকা কে। এবং তখন বলেছিল, মালাইকাই হবে আমার ছেলের বউ।বাবর খুশি হয়।সে রাজি হয়।ধিরে ধিরে বড় হতে লাগে মালাইকা অপূর্ব।
অপূর্ব কে নিয়ে জাহাঙ্গীর বেড়াতে আসতো এই বাবররাজ্য। মালাইকা অপূর্ব সারাদিন বাবররাজ্য ঘোরাফেরা করতো,খেলা করতো।ওরা তখন খুবই ছোট। ওরা যত বড় হয় বাবর আর জাহাঙ্গীর এর মধ্যে তত দূরুত্ব হয়।বাবর সবসময় দয়াময় মানুষ ছিলেন। জাহাঙ্গীর ও কম ছিল না। বাবরের সমস্ত জমিতে গরিব অসহায় মানুষ চাষাবাদ করে খেতো। বাবররাজ্য যত মানুষ ছিলো,তার থেকে তিলকনগর কম ছিলো।
একবার বাবররাজ্য কিছু কৃষক ভূমিহীন হয়ে যায়। বাবররাজ্য যত জমি ছিলো তাতে সবাই কর্মরত ছিলো। নতুন করে যারা জমি চায় তাদের আর বাবর জমি দিতে পারলো না।বাবর চিন্তায় পরে যায়।কি করবে তখন বাবর তিলকনগর জাহাঙ্গীর এর কাছে আসে। তিলকনগর লোক সংখ্যা কম। বাবর আর জাহাঙ্গীর এর মধ্যে কথোপকথন হয়, বাবররাজ্য ও তিলকনগর দুই গ্রামের মধ্যখান সীমানায় বসে। বাবর বললো তোর জমি থেকে আমাদের কিছু জমি দে। আমার আসহায় কৃষকরা চাষাবাদ করে খাক। জাহাঙ্গীর এটা শুনে মুখ কালো করে ফেলে। জাহাঙ্গীর কোন মতেই রাজি হলো না। এভাবে বাবর অনেকক্ষন বলার পর ও জাহাঙ্গীর রাজি হয়না। তখন বাবর বললো ,তুই আমার কিসের বন্ধু যে আমার প্রয়জনেই তোকে পেলাম না। জাহাঙ্গীর ও কর্কট মেজাজে বললো, আমার কোন বন্ধুর দরকার নেই।বাবর রাগ করে জাহাঙ্গীর এর কলারে হাত দেয়। জাহাঙ্গীর ধাক্কা মেরে বাবর কে ফেলে দেয়।
এই দেখে বাবরের সাথে থাকা লোক জাহাঙ্গীর কে পেটাতে শুরু করে।সেদিন জাহাঙ্গীর একাই ছিলো।বাবর বাধা দিলেও তার লোকেরা জাহাঙ্গীর কে আঘাত করে।এক পর্যায় বাবর আটকাতে পারলো। জাহাঙ্গীর সেদিন ক্রোথের সরে বলেছিলো ,তোর আর আমার বন্ধুত্ব এখানেই শেষ। কিন্তু তোকে আমি দেখে নিবো।
সেদিন থেকে বাবর আর জাহাঙ্গীর এর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। জাহাঙ্গীর এক পর্যায় সিদ্ধান্ত নেয়, তিলকনগর ছেড়ে ঢাকাতে চলে যাবে। জাহাঙ্গীর তাই করলো নিজের জমি জমা সব বিক্রি করে ঢাকাতে চলে যায়। তিলকনগর গ্রামের মানুষ অসহায় হয়ে পরে।হায়হায় করতে থাকে। কোথায় যাবে কি করবে।তখন বাবর সিকদার তিলকনগরে শাসনকার্য চালায়।
বড় হতে লাগে রঞ্জনা,মালাইকা।অন্তিম সবার বড় ছিলো।তোর থেকেও বড় ছিলো।তবে রঞ্জনা আর মালাইকা এক ভ্রুনে জন্ম নিলেও তাদের আচার আচরণ, সবকিছু ভিন্ন ছিলো। কিন্তু দেখতে এক রকম ছিলো। রঞ্জনা ছিলো সাহসী।মালাইকা ছলো ভিতূ।
তোর বাবা তোকে ঢাকা স্কুলে পড়া শুনা করায়।
তখন জাহাঙ্গীর এর ঘর আলোকিত করে আসে অর্পা।বাবরের ঘর আলোকিত করে আসে প্রিয়া।
বাবরের জিবন আনন্দেই কাটছিলো। কিন্তু জাহাঙ্গীর এর রাগ ,ক্রোধ ধিরে ধিরে বাড়তে থাকে। তিলকনগর ও বাবররাজ্যর সীমানায় বসে যে, জাহাঙ্গীর এর গায়ে হাত তোলা হয় , জাহাঙ্গীর সেই অপমান সহ্য করতে পারলো না। জাহাঙ্গীর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো উনি এর প্রতিশোধ নিবেন।
স্বাবলম্বী হয় বাবরের দুই কন্যা। রঞ্জনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুযোগ পায়।
সূর্য কথা থামিয়ে দেয়। অপূর্ব ঘার সোজা করে। সূর্য থম মেরে অপূর্বর দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বললো ،এই পর্যন্ত সমস্ত ঘটনা অন্যর মুখ থেকে শুনেছি।
অপূর্ব আহত কন্ঠে বললো,কার কাছ থেকে শুনেছিস?
সূর্য চোখের ইশারায় অপূর্বর পেছন দিক থেকে দেখিয়ে দেয়। অপূর্ব আগ্রহ নিয়ে পেছনে ঘার ঘুরিয়ে দেখে,এক বয়স্ক বৃদ্ধা মহিলা।পরনে সাদা কাপর।গায়ের রং ফর্সা।চুল গুলো একদম ধবধবে সাদা।হাতে লাঠি।একা একা হাঁটতে কষ্ট হয় , বলে দুজন দাসী দুপাশ থেকে ধরে রেখেছে। অপূর্ব হকচকিয়ে উঠে। সূর্য বৃদ্ধা মহিলাকে ধরে ঘরের ভেতর নিয়ে এসে, সূর্যর খাটের উপর বসিয়ে দেয়। বৃদ্ধা মহিলাটি সূর্যর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সূর্য চেয়ারে বসে পরে। অপূর্ব একবার ঢেক গিললো। আগ্রহ স্বরে বললো, ইনি কে?
সূর্য ঠোঁট কুঁচকে হেসে বলল,ইনি জয়গুন বিবি। রঞ্জনার দাদি।
অপূর্ব বললো,তুই তো বলেছিলি ইনি মারা গেছেন।
সূর্য বললো, মিথ্যা বলেছিলাম।এই পর্যন্ত তুই যা শুনেছিস তা আমি সব কিছু দাদুর কাছ থেকেই শুনেছি। অপূর্ব দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।
সূর্য বললো,তার পরে যে ঘটনা গুলো ঘটেছে, এবং সমস্ত মৃ,ত্যু খেলায় আমিও ছিলাম।তাই আমি ই পরবর্তী সত্যি গুলো তোকে বলছি।যা আমার সামনে ই ঘটেছে।
সূর্য বলতে শুরু করলো,
রঞ্জনার সাথে আমার প্রথম দেখা কিভাবে হয় তা সবকিছু তুই জানিস। আমাদের প্রেম কাহিনী ভালো ই চলতে ছিলো। কিন্তু হঠাৎ নেমে আসে কালো ধোঁয়া। রঞ্জনা আমাকে বিয়ে করার কথা বলে আমি রাজি হয়। কিন্তু তা রঞ্জনার পরিবার জানতো না। কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ওর পরিবার কে জানাবো।ঠিক তাই করলাম ।আমি একদিন রঞ্জনা কে না জানিয়ে বাবররাজ্য আসি।বাবর এবং অন্তিম এর সাথে দেখা করতে। আমার সেদিন ভয় ও হচ্ছিল।ভয়কে উপেক্ষা করে, বাবর সিকদার এর সাথে আমার আর রঞ্জনার সম্পর্কের কথা বলি। এবং আমি এটাও বলি যে, রঞ্জনা আমাকে একা বিয়ে করতে চায়। কিন্তু আমি তা চাই না।আমি চাই সবাইকে জানিয়ে সবকিছু হোক।
তাই আমি রঞ্জনা কে না জানিয়ে আপনাদের সাথে দেখা করতে আসি।চাইলে আমি একাই ওকে বিয়ে করতে পারতাম কিন্তু আমি চাইনা আপনাদের অমতে কিছু হোক।
সেদিন আমার কথায় বাবর সিকদার খুশি হন। উনি বলেছিলেন যে,চাইলেই তুমি আমার মেয়েকে একা বিয়ে করতে পারতে কিন্তু তুমি তা করোনি। নিশ্চয়ই তোমার পরিবার তোমায় ভালো শিক্ষা দিয়েছে।আমি সেদিন খুব খুশি হই।আমি রঞ্জনার বিয়ের ইচ্ছা নিয়ে বাবর কে বলি,যে রঞ্জনা চায় ওর বিয়ে সমুদ্রের তীরে হোক।বাবর বললো,আমরা সবাই মিলে যমুনা নদীর তীরে রঞ্জনার বিয়ের আয়োজন করবো। কিন্তু রঞ্জনা এসব যেন না জানে।আমরা সবাই সেখানে উপস্থিত থাকবো। রঞ্জনা কে চমকে দেয়ার জন্য। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু করা হয়। কিন্তু হায়,না গুলো রঞ্জনা কে বাঁচতে দিলো না।বাবর রঞ্জনার মৃত্যু মেনে নিতে পারেনি।অন্তিম রঞ্জনার মৃ,ত দেহ থেকে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।
ঢাকা পুলিশ স্টেশনে আমরা সবাই গিয়েছিলাম কেস ফাইল করতে। সেখানে উপস্থিত ছিলো, সৈকতের বাবা। আমাদের ডিসি সাহেব।উনি কেস ফাইল করেন।
সকলে ফিরে আসে বাবররাজ্য।আর রঞ্জনার লা,শ দাফন করা হয় তিলকনগর।কারন বাবর সিকদার এর মত সাহসী,সৎ একজন মানুষ এর কন্যাকে ,কেউ ধর্ষ,ন করে হ,ত্যা করেছে এটা গ্রামবাসীরা মেনে নিতে পারতো না।সবাই বাবরের দিকে আঙুল তুলবে বলে।
সবাই হতাশ ছিল।দু-দিন পরে পুলিশ উপস্থিত হয় বাবররাজ্য। এবং ওনারা যা জানান তার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না।ডিসি সাহেব জানায়, রঞ্জনার একাধিক পুরুষের সাথে সম্পর্ক ছিল, এবং রঞ্জনা নিজেই একাধিক পুরুষের সাথে পাপাচারে লিপ্ত হয়। এবং রঞ্জনার মৃত্যু,র জন্য রঞ্জনা নিজেই দায়ী।ডিসি সাহেব সমস্ত বাবররাজ্য সবাইকে বলে দিয়েছিলো যে, বাবর সিকদার এর মেয়ে রঞ্জনা একজন দুশ্চরিত্রা। সেদিন বাবরের কান কাটা যায়। আমি জানতাম রঞ্জনা কখনো ই এমন নয়। রঞ্জনা কোন দুশ্চরিত্রা ছিল না।এর পেছনে লুকিয়ে আছে গভীর রহস্য। আমি খোঁজ নেই। এবং জানতে পারি এসবের পেছনে কারা ছিলো। দূর্জয় ও তার বন্ধুরা। এবং ডিসি সাহেব এর ছেলে সৈকত। ডিসি এসব জানতে পেরে কেসটা ধামাচাপা দিয়ে দেয়। এবং রঞ্জনার দিকে মিথ্যা বদনাম ছেড়ে দেয়।
ঠিক তখনি হঠাৎ করে অসুস্থ হয় অন্তিম।বাবর তার ছেলের অসুস্থতায় ভেঙে পরে। অন্তিম কে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা পিজি হাসপাতালে।
সেই সময় একই সাথে অসুস্থ ছিলিস তুই।তুই ও তখন বিদেশ থেকে ফিরে এসেছিলিস। কিন্তু তোর অসুস্থতার কথা আমি জানতাম না।অন্তিম কে ভর্তি করানো হয় ঢাকা পিজি হাসপাতাল। এবং তোকেও ভর্তি করানো ঢাকা পিজি হাসপাতাল।
ডাঃ ইব্রাহিম তোর চিকিৎসা করে জানায় তোর হার্টে ছোট করে ৪ টা ছিদ্র হয়ে গেছে। আগামী ৭২ ঘন্টার ভেতর যদি তোর হার্ট পরিবর্তন না করা হয় তবে তোকে বাঁচানো সম্ভব নয়।
তৎকালীন তোর বাবার চোখ পরে বাবরের দিকে। বাবর এই হাসপাতালে কি করছে। জাহাঙ্গীর দেখলো ডাঃ ইব্রাহিম এর সাথে বাবর কথা বলছে। জাহাঙ্গীর আগ্রহ নিয়ে ডাঃ ইব্রাহিম কে জিজ্ঞেস করে,উনি এখানে কেন এসেছে।ডাঃ ইব্রাহিম বললো,তেমন কিছু না অতিরিক্ত চিন্তার চাপে ওনার ছেলের হার্ট দুর্বল হয়।এখন সুস্থ আছে। তখনই তোর বাবা এক জঘন্য পরিকল্পনা আটে। তোর বাবা সেদিন বললো, বাবরের ছেলের হার্ট অপা,রেশন করে আমার ছেলের শরীরে স্থাপন করো।যত টাকা লাগে আমি দেবো।ডাঃ ইব্রাহিম আপত্তি জানায় এরকম অন্যায় কাজ সে করবে না। তাছাড়া অপূর্বর জন্য হার্ট কোন হাসপাতালে পাওয়া যায়নি। জাহাঙ্গীর ডাঃ ইব্রাহিম কে বললো, আপনাকে আমি ৫ কোটি টাকা দেবো।এর পরিবর্তে এটা করতে হবে। ডাঃ ইব্রাহিম লোভে পরে রাজি হয়। এবং ঠিক সেই মুহূর্তে জাহাঙ্গীর ও তার ছোট ভাই অর্থাৎ তোর ছোট চাচা আরো একটি পরিকল্পনা আটে। জাহাঙ্গীর ভাবলো এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাবরের সমস্ত সম্পত্তি আমাদের আয়ত্তে করে নেবো।
তৎক্ষণাৎ জাহাঙ্গীর ইব্রাহিম কে বললো, তোমাকে আরো একটি কাজ করতে হবে।ডাঃ ইব্রাহিম জানতে চায় কি কাজ ।তখন জাহাঙ্গীর বললো, তুমি বাবর কে বলবে আপনার ছেলের হার্ট পরিবর্তন করতে হবে। এবং তারজন্য মোটা অংকের টাকা দরকার। এবং এই হার্ট বিদেশ থেকে আনতে হবে।
ডাঃ ইব্রাহিম জাহাঙ্গীর এর পরিকল্পনা মত কাজ করে।অন্তিম কে অজ্ঞান করার ইনজেকশন দেয়। এবং বাবর কে জানায়, আপনার ছেলের হার্ট ব্লক হয়ে গেছে জরুরি পরিবর্তন করতে হবে। এবং তারজন্য ডাঃ ইব্রাহিম মোটা অংকের টাকা চায়।যে পরিমানে টাকা চেয়েছিল তার পরিমাণ ছিল,সমস্ত বাবররাজ্যর জমি ও বাবরের বাড়ির ন্যায়। যে টাকা দরকার তারজন্য বাবররাজ্যর জমি বিক্রি করতে হবে।তোর বাবাই ডাঃ ইব্রাহিম কে টাকার পরিমান বলে দেয়।
সেদিন বাবর সিকদার বেঁচে থেকে ই মৃ,ত্যুর স্বাদ পায়। মেয়ে হারায় এখন ছেলের এই অবস্থা তার উপর এত টাকা।কল্যানি বললো, গ্রামের সমস্ত জমি জমা বিক্রি করে দাও এবং আমাদের ছেলেকে বাঁচাও।
বাবর তাই করে বাবররাজ্যর সমস্ত জমি ও বাড়ি বিক্রি করে দেয়। সেদিন বাবররাজ্য সমস্ত মানুষ হায়হায় করেছিল।কারন সবার আশ্রয় স্থল ছিলো বাবররাজ্য।আজ সেই সবকিছু বিক্রি করে দেয়। গ্রামের অনেক মানুষ বাবরের বাড়ির সামনে এসে নিজের শরীরে আগু,ন দেয়।কারন তাদের বেঁচে থাকার আর কোন আশাভরসা নেই। রোজগার এর মাধ্যমে যে আর নেই।
বাবর সেদিন সম্পুর্ন ভাবে ভেঙে পরে। বাবর সবকিছু বিক্রি করে সেই টাকা ডাঃ ইব্রাহিম এর হাতে দেয়। ডাঃ ইব্রাহিম সেই টাকা তোর বাবা অর্থাৎ জাহাঙ্গীর কে দেয়। জাহাঙ্গীর আর তার ভাই অর্থাৎ শ্রাবনের বাবা এই টাকা ভাগাভাগি করে নেয়। শ্রাবনের বাবা বিদেশ এই টাকা দিয়ে ব্যাবসা শুরু করেন।আর তোর বাবা ঢাকার সহর ১৮ টি বাড়ি কিনে। যে বাড়ির কথা তুই ও জানিস না।সেই সমস্ত বাড়ি তোর নামে করা।
ডাঃ ইব্রাহিম অন্তিম এর অপারেশন করে। ডাঃ ইব্রাহিম বাবরকে জানায় অপারেশন করতে দেরি হয়ে গেছে। আপনার টাকা নিয়ে আসতে দেরি হয়ে যাওয়াতে অন্তিম মারা যায়।তখন অন্তিম এর বয়স ছিল ২৭।ডাঃ ইব্রাহিম অন্তিম এর হার্ট তোর শরীরে স্থাপন করে।যদিও তোর বয়স অন্তিম এর থেকে কম ছিলো। এবং তুই কিছুদিন এর মধ্যে ই সুস্থ হয়ে যাস।
কিন্তু অন্ধকার হয়ে যায় বাবররাজ্য। নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিল বাবর।তার সম্রাজ্য চলে গেলো।তার সাথে মেয়ে তার সাথে তার ছেলে। গ্রামের সবাই বাবরকে লাথি উষ্ঠা মারতো।
বাবর যাদের কাছে বাড়ি বিক্রি করে তারা বাবরকে ১২ ঘন্টা সময় দিয়েছিল তার বাড়ি ছাড়ার জন্য।তখন জয়গুন অর্থাৎ আমাদের দাদি সে ছিলো তার বাবা বাড়ি। বাবর সবকিছু হারানোর বেদনা সহ্য করতে পারলো না। গ্রামের সবাই রঞ্জনা কে তুলে বে”শ্যা উপাদি দিতো।বাবর এসব সহ্য করতে না পেরে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়।যেদিন বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেয় সেদিন রাতে বাবর ও তার স্ত্রী আ,ত্মহত্যা,করার সিদ্ধান্ত নেয়। আত্মহ,ত্যা করার আগে বাবর মালাইকাকে বলে তুই আর প্রিয়া এখান থেকে পালিয়ে যা।মালাইকা ভয়ে চাপসে ছিলো। সমস্ত শরীরে ছিলো তার কাঁপুনি।বাবর বললো,তোর ছোট বোন প্রিয়াকে নিয়ে তুই এই গ্রাম ছেড়ে চলে যা।আর হ্যা কখনো কোথাও আমার পরিচয় দিবি না তোরা।মালাইকা যেতে রাজি হলো না।বাবর জোড় করলো।বাবর মালাইকা আর প্রিয়াকে ঘর থেকে বের করে দরজা বন্ধ করে দেয়।মালাইকা প্রিয়াকে কোলে জড়িয়ে জানালা দিয়ে উঁকি মেরে যা দেখলো,মালাইকা পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে যায়।পূরো শরীর মালাইকার কাঁপুনি উঠে গিয়েছিল সেদিন।বাবর তার স্ত্রীকে বি,ষ পান করায় এবং একই সাথে নিজেও বি,ষ পান করে।মালাইকার চোখের সামনে তার মা বাবা মৃত্যু বরন করে।
শেষ হয়ে গিয়েছিল বাবররাজ্য। অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল বাবররাজ্য। ধ্বং,স হয়ে গিয়েছিল বাবররাজ্য।
এদিকে জাহাঙ্গীর ও তার পরিবার ছিল আনন্দে। তাদের হয় সুখের রাজ্যে, কিন্তু পাপকে ধামাচাপা দিয়ে সুখ কিনে ছিলো জাহাঙ্গীর। জাহাঙ্গির তার শরীরের আঘাতের প্রতিশোধ নেয়।একই সাথে বাবরের ছেলের জীবনের পরিবর্তে নিজের ছেলের জীবন বাচায়।
এলিজা পর্ব ৬৮+৬৯
কিন্তু সবকিছু এখানেই শেষ হয়নি।
অপূর্ব ভাঙা গলায় বললো, আমার বাবা কি এসবের সাথে জড়িত??
সূর্য ঠোঁট কুঁচকে হেসে বললো, নিকৃষ্ট মানুষটার জঘন্য কাজটা হাসপাতালেই শেষ হয়ে যায়। এসবের পেছনে ওনার হাত নেই কিন্তু ওনার নিকৃষ্ট কাজের জন্য ই আজকে এই মৃত্যু খেলা শুরু হয়।