মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৬০
মির্জা সূচনা
রাত ১১টা বা তার একটু এদিক-ওদিক হবে হয়তো।
রাজ পাগলের মতো দৌড়াচ্ছে রাস্তা দিয়ে।
তার পেছনে আছে লাবিব, রিদ আর সাব্বির।
রাজ দৌড়াচ্ছে…
রাজ বাড়ি থেকে বেরিয়েই প্রথমে গিয়েছিল অফিসে।
সাব্বির কল দিয়ে বলেছিল, “কিছু পেয়েছি।”
সাব্বির—একজন বুদ্ধিসম্পন্ন, বিচক্ষণ মানুষ। সব সময় সে থাকে শান্ত।
রাজ ফোন করতেই লোক লাগায়।
খোঁজ নেয় মেহরিনকে যারা নিয়ে গেছে তাদের কোন ক্লু পাওয়া যায কিনা?
আশে পাশে থাকা সব CCTV ভেঙে দিয়েছে ওরা,কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে একটা ক্যামেরা তারা খেয়াল করেনি।
সেই ক্যামেরার মাধ্যমে গাড়ির নাম্বার প্লেট দেখে বের করে কোথায় সেই গাড়ি তার বর্তমান লোকেশন ট্র্যাকিং করে।
রাজকে সব বুঝিয়ে বলে সাব্বির।
সব শুনে রাজ বলে—
লোকেশন কোথায় দেখাচ্ছে?
সাব্বির গম্ভীর মুখে বলে—
বস, উত্তরের জঙ্গলের দিকে দেখাচ্ছে।
রাজ আর নিজের মধ্যে থাকে না।
এই কথা শুনেই সে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়,
রাস্তা ধরে ছুটে যায়,
আর বলতে থাকে—
Moonbem… তুমি চিন্তা কোরো না…
আমি আসছি… তোমার কিছু হবে না…
আমি কিছু হতে দেবো না… একদমই না!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অতি প্রিয়জন বিপদে থাকলে মানুষ ভেঙে পরে, তখন আর বিবেগ বা বুদ্ধি কিছু কাজ করে না। রাজের বেলাও তায় হয়েছে, রাজ যে বড় বড় প্রব্লেম এক তুরিতে সামলে নেয়। সেই মানুষ আজ বিবেগ বুদ্ধিহীন কাজ করছে। প্রানপ্রিয় স্ত্রী ও সন্তান কে হারানোর ভয়ে, তার সব চতুরর্তা ভুলে গেছে সে।
রিদ এসে ধরে রাজকে।
রাজ রিদকে সরাতে চায়—
আমাকে ছাড়!
আমাকে… আমি ওদের কাছে যাবো…
ওরা আমাকে খুঁজছে…ওদের আমাকে দরকার।
রিদ ঝাঁকিয়ে বলে—
রাজ! কী করছিস?
পাগল হয়ে গেছিস?
তুই কি এভাবে মেহুকে খুঁজে পাবি?
রাজ পাগলের মতো বলতে থাকে—
আমার বাচ্চা… আমার বউ…
ওরা… ওরা আমাকে খুঁজছে…
আমাকে যেতে হবে…ভাই প্লিজ..
লাবিব, সাব্বির আর রিদ বোঝাচ্ছে রাজকে…
আর ওদিকে,
মেহরিন হাঁটা হাঁটি করছে…
অনেকক্ষণ বসে থাকার কারনে শরীরটা কেমন যেনো লাগছে,
একটু হাঁটাহাঁটি করে এখন ভালো লাগছে।
কিন্তু খুব খিদে পেয়েছে।
দুঃখের সময়ে মানুষের সবচেয়ে মিষ্টি স্মৃতিগুলো যেনো সামনে ভেসে ওঠে…
ঠিক তেমন করেই মেহরিনের চোখে ভেসে উঠছে রাজের সাথে কিছু মুষ্টি মধুর স্মৃতি।
মেহরিনের এখন খিদে পাচ্ছে কিন্তু খাবার নেয়! অথচ, রাজ খাওয়াতে খাওয়াতে অতিষ্ঠ করে ফেলত।
এই খাওয়া নিয়ে কত রাগারাগি করতো!
কত স্মৃতি…
চোখে জল চলে আসে মেহরিনের।
হঠাৎ কারো পায়ের শব্দে সে আবার দ্রুত গিয়ে বসে পড়ে সেই চেয়ারে,
দড়ি দিয়ে নিজের শরীর পেঁচিয়ে নেয়, যেনো বাধা অবস্থাতেই আছে।
চোখ বন্ধ করে নেয়।
দরজা খোলার শব্দ…
মেহরিন কিঞ্চিৎ চোখে চায়…
কাসেম এসেছে।
কাসেমকে দেখে মেহরিন চোখ মেলে চায়।
কাসেম মেহরিনকে এমন অভিনয় করতে দেখে হেসে বলে—
বোন, তুই তো দেখি সেই ড্রামাবাজ!
মেহরিন ফিক করে হেসে দেয়।
কাসেমও হেসে ওঠে।
হঠাৎ কাসেম মেহরিনের সামনে এসে বলে—
সেই কখন আসছিস এখানে!
কিছু তো পেটে পড়েনি।
নে, হা কর…
কোনো কথা বলবি না…
চুপচাপ খাবি কেমন।
বেশি সময় নেই…
তোর খাওয়া শেষ হলে পরে গিয়ে তোর বরকে ফোন করবো।
মেহরিন কিছু বলে না, চুপচাপ শুনে।
চোখ দুটি ভরে উঠে নোনাজলে।
কাসেম তাড়া দেয়—
তাড়াতাড়ি হা কর খেয়ে নে বোন, সময় নেই।
আমি বাকিদের ওদিকটাই খেতে বসিয়ে দিয়েছি,
কেউ যাতে না আসে… তুই খেয়ে নে তাড়াতাড়ি।
মেহরিন কিছু না বলে চুপচাপ খায়।
খাওয়া শেষ হলে, কাসেম হাত দিয়ে মেহরিনের মুখ মুছে দেয়।
মা যেমন সন্তানকে খাওয়ানোর পর মুখ মুছে দেয়, তেমনি…
মেহরিন হাসে।
কাসেম বলে—
হাসছিস কেন?
মেহরিন বলে—
আমার আম্মুও এমন করতো…
কাসেম বলে—
আমি তো বোনকে রোজ খাইয়ে দিতাম।
অনেকদিন পর সেই অনুভূতিটা পেলাম।
আচ্ছা শোন, তুই একটু বসে রেস্ট নে।
তোর জন্য বেশি কিছু করতে পারছিনা…
তাই ভাইটাকে মাফ করে দিস…
মেহরিন বলে—
এভাবে বলো না ভাই…
কাসেম বলে—
আচ্ছা শোন, আমি যাচ্ছি…
তুই চিন্তা করিস না…
আমি কাউকে ওদিকে আসতে দেবো না…
মেহরিন হেসে মাথা নাড়ে।
আর মনে মনে ভাবে—
কে বলে ভালো মানুষ পাওয়া যায় না এই যুগে?
আজকাল রক্তের মানুষও স্বার্থ ছাড়া পাশে দাঁড়ায় না…
কিন্তু এই লোকটা?
কোনো স্বার্থ ছাড়াই একজন অচেনা মেয়ের জন্য
এত কিছু করছে…
হয়তো আমি এতক্ষণে মরে যেতাম…
আল্লাহর দয়া আর এই ভালো মানুষের কারণে
আমি আর আমার সন্তান এখনো সুস্থ। এটা কি সবাই পারে? না পারে না এমন মন মানসিকতা শুধু ভালো মানুষদের ধারায় সম্ভব।
ওদিকে রাজকে জোর করেই রাস্তার ধারে বসিয়ে রেখেছে রিদ।
পাশে লাবিব, সাব্বির আর রাজের লোকেরা।
রিদ বলে,
ভাই, প্লিজ শান্ত হও…
এভাবে কিছু হবে না! তুই একবার ভাব এভাবে কী আদৌও কিছু সম্ভব?
রাজ রিদকে জড়িয়ে ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে—
ভাই… আমার বউ… আমার বাচ্চা…
আমার কাছে নিয়ে আয় ভাই প্লিজ… ওদের এনে দে ভাই..
আমি মরে যাবো… আমার বউ… আমার বাচ্চা…!
বলেই একটা চিৎকার দেয় রাজ।
লাবিব ভাইয়ের এমন আর্তনাদ দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না।
সে বসে পড়ে রাজের পায়ের কাছে, বলে—
Bro, প্লিজ তুমি শান্ত হও…
আমরা ঠিক ভাবিকে খুঁজে পাবো। তুমি একটু শান্ত হও প্লিজ।
রাজ লাবিবকে ধরে বলে—
লাবিব… লাবিব.. আমি তোকে আর বকবো না…
আর কিছু বলবো না…
তুই এনে দে… এনে দে আমার বউকে… আমার বাচ্চাকে…এনে দে লাবিব এনে দে..
লাবিব কেঁদে ফেলে, কাঁদতে কাঁদতে বলে—
এনে দিবো bro… এনে দিবো… তুমি একটু নিজেকে সামলাও প্লিজ।
ঠিক তখনই রাজের ফোন বেজে ওঠে।
সবাই সতর্ক হয়ে যায়।
রাজ সবার মুখের দিকে চায়।
রিদ বলে—
কলটা ধর।
লাবিব বলে—
এখন ফোন ধরার সময় নয়,
আগে ওদের খুঁজতে হবে।
কলটা বাজতে বাজতেই কেটে যায়।
পরমুহূর্তে আবার বেজে ওঠে।
রিদ বলে—
রাজ, কলটা ধর।
এমনও হতে পারে আমরা মেহুর কোনো খবর পেতে পারি।
মেহরিনের নাম শোনামাত্রই রাজের মন কেমন করে ওঠে।
সে কলটা ধরে।
রিদ রাজের কাছে থেকে ফোনটা নিয়ে লাউড দেয়।
রাজ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে—
“Hello…”
ওপাশ থেকে কাসেম বলে—
ভাই, আপনি আমাকে চিনবেন না।
বোন কোথায়, সেটা আমি আপনাকে বলছি।
জলদি চলে আসুন আপনি।
রাজ বলে—
বোন? কোন বোন?
কাসেম বলে—
“মেহরিন।”
মেহরিনের নাম শোনামাত্র যেনো সবার শরীরে প্রাণ ফিরে আসে।
রাজের পাগলামি বেড়ে যায়।
কোথায়? কোথায় আমার বউ, বাচ্চা…
তারা কোথায়! ওরা ঠিক আছে তো?
রাজের এই আহাজারি শুনে কাসেম হেসে ফেলে।
রিদ ফোনটা নিয়ে বলে—
“Bro, plz tell me!
ওরা কোথায়?
মেহু ঠিক আছে তো?
কাসেম বলে—
হ্যাঁ, ওরা ঠিক আছে।
আমি ঠিকানা দিচ্ছি।
আপনারা চলে আসেন।
ঠিক তখনই সাব্বির বলে—
Sir, ফোনটা আমাকে দিন।
রিদ ফোন দেয়।
সাব্বির বলে—
ওখানে মোট কতজন লোক আছে বলতে পারবেন?
কাসেম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে—
৭০-৮০ জন মতো।
সাব্বির বলে—
Good.
মেন রাস্তা ছাড়া ওখানে ঢোকার অন্য কোনো পথ আছে?
কাসেম একটু ভেবে বলে—
হ্যাঁ, আছে। তবে!!
সাব্বির বলে—
তবে কী?!
কাসেম বলে—
আচ্ছা, সমস্যা নেই।
আমি আপনাদের ঢোকার ব্যবস্থা করে দিবো।
সাব্বির বলে—
তার দরকার নেই।
আপনি শুধু ম্যামকে সেভ রাখার চেষ্টা করুন।
পারবেন তো?
কাসেম হেসে বলে—
অবশ্যই।
আপনারা যা করার করুন।
আমি বোনকে আপনারা আসার আগ পর্যন্ত সেভ রাখবো।
সাব্বির বলে—
ধন্যবাদ।
ঠিকানা পাঠিয়ে দিন।
কাসেম বলে—
আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
কল কেটে যায়।
রাজকে জড়িয়ে ধরে লাবিব, রিদ আর সাব্বির।
রাজ কাঁদতে কাঁদতে হেসে ফেলে—
আমার বউ… বাচ্চা… ঠিক আছে… কিছু হয়নি…
হঠাৎ রাজ মুখ গম্ভীর করে বলে—
সাব্বির।
সাব্বির বলে—
“Yes boss?”
রাজ বাঁকা হেসে বলে—
সবাই ডাকো… হেলিকপ্টার ডাকো…
ছেলেদের সবাইকে এক করো…
অন্য পথে না, সরাসরি মেন পথ দিয়েই যাবো! ওদের ও তো বুঝা উচিৎ কার কলিজায় হাত বাড়িয়েছে।
সাব্বির হাসে।
লাবিব আর রিদও।
রাজ হঠাৎ উঠে দাঁড়ায়।
আর-মোরা ভেগে বল,
বুঝলি তো রিদ?
অনেক দিন হলো ব্যায়াম করিনি…
আজ করবো, একদম ব্যাপক!
রিদ রাজকে কাঁধ চাপড়ে বলে—
“অবশ্যই!”আমায় তোর সঙ্গে নিস…
একটু অ্যাডভেঞ্চার হয়ে যাবে! সাথে লাইভ ফাইটিং।
লাবিব দুই হাত সামনে এনে, আঙুল ফোটায়,
তার সাথে ঘার ফুঁটিয়ে বলে—
অনেকদিন নিশানা লাগানো হয়নি মামুর… শেখানো নিশানা ঠিক আছে কিনা দেখে নিতে হবে।
লাবিবের কথায় সবাই হেসে ওঠে।
ঠিক ১০ মিনিটের ভেতরেই ২টা হেলিকপ্টার,
২৫-২৬টা গাড়ি এসে দাঁড়ায়, রাজদের সামনে।
রাজ-রিদ উঠে একটা হেলিকপ্টারে,
আরেকটায় লাবিব-সাব্বির।
এতক্ষণে কাসেম লোকেশন পাঠিয়ে দিয়েছে,
তার সাথে কোন দিক দিয়ে কয়জন কোথায়, সব কিছু ভিডিও করে পাঠিয়েছে।
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই উত্তরের জঙ্গলের দিকে পৌঁছায় রাজ, রিদ, লাবিব, সাব্বির আর রাজের ২৫-২৬টা গাড়ি আর ২টি হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টার একটু নিচে নামতেই রাজ ঝাঁপিয়ে নেমে পরে।
চারদিক গর্জে উঠে।
হেলিকপ্টার আর গাড়ির শব্দে গোটা এলাকা যেনো কেঁপে ওঠে।
ওদিকে কাসেম মেহরিনকে এসে বলে—
তোর বর আসছে খুব তাড়াতাড়ি বোন!
মেহরিন হেসে মাথা নাড়ে।
কাসেম সাব্বিরের কথামতো মেহরিনের সুরক্ষায় পাশে থেকে যায়।
এদিকে রাজ চোখ দুদিকে ঘোরায়, ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে।
লাবিব আর সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে বলে,
চলো… খেলা শুরু করি…
অনেক দিন খেলা হয় না আজ জমপেস খেলা হবে।
কথা শেষে চারজন একসাথে এগিয়ে চলে।
রাজ, রিদ,লাবিব ও সাব্বির।
পিছনে রাজের ৭০-৮০ জনের বাহিনী।
একদম রাজার মতো এগিয়ে চলে তারা।
মাটির যেনো কাঁপন উঠে।
ওদের পদচারণায় পুরো এলাকা থরথর করে।
হঠাৎ দূরে ১২-১৪ জন লোক এসে দাঁড়ায়।
রাজ হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে—
উফফ… কতদিন পর!
সাব্বির হেসে রাজকে একটা বন্দুক ছুঁড়ে দেয়।
রাজ সেটা ধরে এক চোখ বন্ধ করে নিশানা করে…একজনের কপালে…
ধপ করে পড়ে যায় লোকটা।
লাবিব বলে—
ওরে বাস্স! কী নিশানা মামু যা শিখিয়েছে না জিও।
রাজের লোকেরা উচ্ছ্বাসে সবাই একসাথে বলে—
“1 ”
রাজ বন্দুক ছুঁড়ে দেয় লাবিবকে।
লাবিব নিশানা করে একজনের চোখ বরাবর গুলি করে…আর অমনি লোকটা ধপাস। লাবিব নিজেই বলে উঠে,
উফফ, জস্!
রাজের লোকেরা ফের বলে—
“2”
লাবিব এবার ছুঁড়ে দেয় রিদের দিকে।
রিদ বলে—
আমার নিশানা তোদের মতো না, but I try my best…
বলেই রিদ গুলি করে, একজনের বুকে ঠাস করে লেগে যায়।
রাজ বলে—
“Well done!”
সবাই বলে—
“3”
সাব্বির নিশানা করে, কিন্তু রাজ হেসে বলে—
না না, আবার আমি!
সাব্বির আর রিদ মিলে দুটো বন্দুক ছুঁড়ে দেয়।
রাজ দুই হাতে ধরে…
দুটো গুলি ছোঁড়ে একসাথে!
তিনজন ছুটে আসা লোক গুলিতে লুটিয়ে পড়ে।
রাজের লোকেরা গুনে যেতে থাকে—
“4… 5… 6… 7… 8… 9… 10… 11… 12!”
আর মাত্র দুইজন বাকি।
সাব্বির বাচ্চার মতো বলে—
Boss, প্লিজ এবার আমি…
রাজ হেসে দুই বন্দুক ছুঁড়ে দেয়,
কিন্তু তা সাব্বির ধরার আগেই উল্টো ঘুরে নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়ে আবার তুলে নেয় হাতে…
বন্দুক দুটো নিয়ে দুটো আবার গুলি ছুঁড়ে—
শেষ দুইজনও মাটিতে।
সাব্বির একটু অভিমানী কন্ঠে বলে—
এটা ঠিক না, boss!
রাজ হেসে বলে—
আজ সব সিকার আমার,My boy!
সাব্বির বাঁকা হেসে চুপ করে যায়।
চারদিক জুড়ে রাজের বাহিনীর গর্জন—
হু হু হু!
গুলির শব্দ নেই, কারণ বন্দুক গুলোই সাইলেন্সার লাগানো।
কিন্তু এত মানুষের আওয়াজে চারদিক কাঁপছে। তার সাথে কিছু চিৎকার।
ভিতরে থাকা কিছু লোকজন বাইরের বেরিয়ে আসে।
রাজ হাসে— ওদের দেখে।
আবার মজা হবে!
তারপর গলা তুলে চিৎকার করে—
“My boys”জাও শিকার এবার তোমাদের।
রাজের এই কথাটার’ই যেনো সবাই অপেক্ষায় ছিল।
একেক জনের ঠোঁটের কোণায় ফোটে উঠে আনন্দের হাসি…
চোখে যুদ্ধের আলো…
সবাই একসাথে বলে—
“MEM, WE ARE COMING!!”
তারপর তারা ছুড়ে দেয় গুলি—না এগুলো ঠিক গুলি নয়,ঠিক যেনো বৃষ্টি হয়ে নামে আগুনের ফোঁটা। বৃষ্টির ফোঁটা যেমন করে পরে ঠিক তেমন করেই গুলি ছুটছে রাজের লোকেরা।
সাব্বির গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে—
“YESSS BOYS!!!”
লাবিব বলে—
দূর এরা সব, চুনো পুঁটি…
এদের মেরে মজা নাই…
একেকটা বয়লার মুরগি!
রাজ হেসে বলে—
চিন্তা করিস না…
ধমাকাধার সুযোগ দিবো।
যারা এমন করেছে…
তাদের এক একটা কে খুজে বের করে একদম টেনে ছিঁড়ে ফেলবো!
লুকাক, সুযোগ দিচ্ছি আপাতত… কিন্তু লুকাবে কোথায়? আকাশে লুকালে মেঘ সরিয়ে হলেও ওদের খুঁজে বের করব। পাতালে লুকাবে লুকাক সেখান থেকে ও টেনে বের করে আনবো। ওরা যদি ইঁদুরের গর্তেও লুকায় সেখান থেকেও আমি তাদের খুঁজে বের করব আর একেকটা কে কুকুরের মতন পিটিয়ে পিটিয়ে মারবো। এটা রাজ শিকদারের ওয়াদা।
সব দানবদের জাহান্নামের দরজায় পাঠিয়ে রাজের লোকেরা একসাথে চিৎকার করে উঠলো—
“ALL OVER, BOSS!”
রাজ হেসে বলে,
“Well done, my boys!”
সবার চোখে মুখে হাসি, বিজয়ের দীপ্তি।
রাজ বললো—
“Let’s go.”
তারপরই সবাই একসাথে সেদিকে পা বাড়ায়,
যেখানে আটকে রাখা হয়েছে মেহরিনকে। রাস্তা চিনতে ভুল হয় না কারণ! কাসেমের দেওয়া ভিডিওতে স্পষ্ট দেখানো হয়েছে কোন দিক দিয়ে মেহেরিনের কাছে যেতে হবে। সেই দেখানো পথ অনুযায়ী সবাই এগোচ্ছে ।
এগোতে এগোতেই ভিতর থেকে আসে আরও কিছু মানুষ। তারা সামনে আশার সাথে সাথেই শুরু হয় সামনে থাকা লোকেদের গোঙানি, আর্তনাদ, ও চিৎকার।
কারন রাজ কিছু বলার আগেই তার লোকেরা একে একে সবাইকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয়।
কাসেম যেভাবে ভিডিও করে পথ দেখিয়েছে, সেই পথ ধরেই এগোয় রাজ, রিদ, লাবিব, সাব্বির আর বাকিরা।
ঘরের দরজার সামনে কিছু লোক বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে।
রাজ বাঁকা হেসে বলে—
My boys, তুমরা না! তোমাদের boss একটু ব্যায়াম করবে।
সবাই হেসে ওঠে।
তাদের হাসির গর্জনে থরথর করে ওঠে বন্দুকধারীরা। যদিও তারা ভয়ে জড়সড়,
তবুও তারা বন্দুক তুলে রাখে।
রাজ ধীরে বলে—
তোরা? ইশ্… তোদের মেরে ব্যায়াম তো দূরের কথা ব্যায়ামের ‘ব’ ও হবে না, ‘ব্যা’ বলার আগেই তো মাটিতে পড়বি!
একজন গুলি চালাতে যায়…
রাজ হেসে এক পলকে তার বন্দুক কেড়ে নেয়…
আর কায়দা মতে সাই সাই করে সব গুলি ছুঁড়ে দেয়!
সবাই লুটিয়ে পড়ে।
ঘরের ভিতরে থাকা মেহরিনের ঠোঁটে ফুটে ওঠে সেই চেনা আত্মবিশ্বাসী হাসি।
কাসেম তাকিয়ে বলে—
বাইরে গুলির শব্দ হচ্ছে, আর তুই হাসছিস?
মেহরিন আয়েশ করে বসে বলে—
হাসবো না? তোমার ভগ্নিপতি যে চলে এসেছে ভাইজান। বলেই,
হেসে চোখ টিপে মেহরিন।
কাসেম হাসে—
পাগলি বোন আমার।
মেহরিন হেসে বলে—
তুমি বলছিলে না, আমার বর আমাকে ভালোবাসে কিনা?
কাসেম মাথা নাড়ে।
মেহরিন সামনের দিকে ইশারা করে বলে—
“Just wait and see.”
ঠিক তখনই এক লাথিতে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে রাজ, রিদ, লাবিব আর সাব্বির।
রাজ ঘরে ঢুকেই দেখে মেহরিন সুস্থ, হাসছে।
একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে এক ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।
জড়িয়ে ধরে বলে—
তুমি ঠিক আছো তো? তুমি ঠিক আছো?
আর সারা মুখে একের পর এক চুমু দিতে থাকে।
কাসেম এতটা আবেগে হতবাক!
সাব্বির নিচু হয়ে হেসে ফেলে।
রিদ আর লাবিব একে অন্যের দিকে তাকিয়ে বলে—হেসে ফেলে। রিদ বলে,
‘ভাইরে, প্রেম জিনিসটা বর ভয়ংকর কখনো কাঁদায় তো কখনো হাসায়!’
মেহরিন রাজের বাহুতে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে—
কি করছো? সবাই দেখছে তো!
রাজ বলে—
দেখুক! আমার কি? আমি আমার বউকে চুমু খাচ্ছি। ১০০ বার খাবো। কার বাপের কী?
সবাই হেসে ওঠে।
মেহরিন মুচকি হেসে বলে— কারো বাপের কিছু না হলেও! আপনার বাচ্চার মা’র অনেক কিছু বুঝলেন?
সবার হাসি দ্বিগুণ হয়।
হঠাৎ রাজ মেহরিনের ঠোঁটের পাশে কাটার দাগ দেখে রেগে গিয়ে বলে—
তোমার গায়ে কোন কুত্তার বাচ্চা হাত তুলেছে?
মেহরিন ধমক দিয়ে বলে—
চুপ! মুখের ভাষা এমন কেনো হ্যাঁ?
রাজ বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বলে—
“বউ!”
মেহরিন চোখ রাঙিয়ে বলে—
“চুপ!”
সবাই হেসে ফেলে।
মেহরিন কাসেমের দিকে তাকিয়ে বলে—
ভাই, এইটা তোমার ভগ্নিপতি!
সবাই এবার তাকায় কাসেমের দিকে।
রাজ একহাতে মেহরিনকে জড়িয়ে ধরে কাসেমের দিকে তাকিয়ে বলে—
ভাইয়া, অসংখ্য ধন্যবাদ আমার স্ত্রী আর সন্তানের সুরক্ষার জন্য।
কাসেম হেসে বলে—
ভাই, বোনের জন্য এটুকু করতেই হয়। ধন্যবাদ দিতে হবে না।
তবে, এখান থেকে যতদ্রুত সম্ভব চলে যান।
আরো ২০০ জন লোক রওনা দিয়ে দিয়েছে। এখানে আসতে তারা যেকোনো সময় চলে আসতে পারে।
রাজ কিছু বলার আগেই মেহরিন বলে ওঠে—
এই খবরদার! আপনার গ্যাংস্টারগিরি বাদ দেন, চলেন এখান থেকে। শরীর ভালো লাগছে না।
সবাই একটু চমকে যায়।
রাজ দুই হাতে মেহরিনের মুখ ধরে বলে—
কি হয়েছে? ব্যথা করছে? বলো কী হয়েছে?কোথায় কষ্ট হচ্ছে?
রিদ বলে—
ভাই, আগে এখান থেকে চল। ওকে একটা সেফ প্লেসে নিতে হবে।
কাসেম সায় দেয়—
হ্যাঁ, এখান থেকে বের হওয়া দরকার।
রাজ মেহরিনের দিকে তাকায়।
মেহরিন মাথা নাড়ে।
রাজ কিছু না বলে মেহরিনকে কোলে তুলে নেয়।
মেহরিন বলে—
আরে নামান আমাকে! আমি আগের মতো নেই, অনেক মোটা হয়ে গেছি! আপনার কষ্ট হবে নামান আমি হেঁটে যেতে পারবো।
রাজ কিছু বলে না শুধু রেগে তাকায়,
তা দেখে মেহরিন আর কোনো কথা বলে না। বরং ঠোঁটে আঙুল রাখে। আর তা দেখে
সবাই হেসে ওঠে।
মেহরিনের সপ্নরঙ পর্ব ৫৯
হাসতে হাসতে, উল্লাস করতে করতে বেরিয়ে আসে তারা।
রাজ আর মেহরিন এক হেলিকপ্টারে উঠে বসে।
সাব্বির, লাবিব আর রিদ আরেকটায়।
কাসেম চলে যায় রাজের লোকদের সাথে।
উত্তরের জঙ্গলে আজ আগুন নেই—
আছে ফিরে পাওয়ার শান্তি, ভালোবাসার আলো,
আর এক যুদ্ধশেষের নিঃশব্দ কৃতজ্ঞতা।