প্রেমঘোর পর্ব ৯৩+৯৪

প্রেমঘোর পর্ব ৯৩+৯৪
নার্গিস সুলতানা রিপা

“কি হবে এখন??”
ভেবে কুল পাচ্ছে না নিপা।
“প…প….প রশ!!!!”
নিপার মুখে পরশের নাম শুনে সামনে তাঁকায় রিদি।
চোখ আটকে যায় দরজায়।
পরশ খুব শান্ত গলায় বলে,
“ভাবী…..আমার একটু ওর সাথে কথা আছে।আপনি যদি একটু……”
নিপা বুঝতে পেরে চলে যায়।
পরশ দরজা লাগিয়ে দিলো।

পরশ কিছু বলতে যাবে এমন সময়,বাইরে থেকে হাউ মাউ কান্নার আসতে শুরু করে।
রিদির মায়ের গলা টা ই বেশি শোনা যাচ্ছে।
পরশ দ্রুত বেরিয়ে আসে এমন হাহাকারের কান্না শোনে।
রিদিও সব ভুলে দৌঁড়ে বাইরে আসে।
কিন্তু কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
হাউমাউয়ের আওয়াজ আসছে রিদির বাবা-মা যে রোমে ছিলো সেখান থেকে।
সাদ রিদি আর পরশের সামনে দিয়ে দ্রুত নিঁচে নেমে আসে ঐ ঘর থেকে।
পরশও ছোটে যায় রিদির বাবার রোমে।সাথে রিদিও।
থমকে যায় রিদি……

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ওর বাবার নিথর দেহ টা পরে আছে ফ্লোরে……….
প্রাপ্তির বাবা আর রাফসা ধরে তুলার চেষ্ঠা করছে।
পরশ এগিয়ে যায়,রাফসাকে সরিয়ে প্রাপ্তির বাবার সাথে মিলে বিছানায় উঠায় মানুষটাকে।
“ডেডডডডড…….!!!!!”
চিৎকার করে রিদি ছুটে যায় ওর বাবার কাছে।
মেসিভ এট্যার্ক করেছে ওর বাবা।
নিতে পারে নি,শেষ বয়সে নিজের একমাত্র মেয়ের কাজ টা।শুনতে পারে নি আর,নিজের প্রাণপ্রিয় কন্যার সম্পর্কে বাজে বাজে সব কর্থাবার্তা;যেসব বলছিলো বিয়ে বাড়ীতে আসা আত্মীয়-স্বজনেরা।
ছিঃ করছিলো সবাই।
মানতে পারে নি।
সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে ওনার;হৃৎপিন্ড টাও সায় দেয় নি সাথে-রক্ত সঞ্চালণের ক্ষমতাটাও কমিয়ে আনলো শেষ সময়ে এসে।

“ডেড,প্লিজ….. ও ডেড…..আম সরি ডেড……প্লিজ কথা বলো আমার সাথে……ডেডডড……”
কান্নায় ভেঙে পড়ে রিদি বাবার বুকের উপরে।
ওয়ালিদ এতক্ষণ বাইরে ছিলো,হসপিটালে ফোন করছিলো।আর সাদ,এম্বুলেন্সের জন্য।
ওয়ালিদ রোমে ডুকে রিদিকে এক ঝটকায় সরিয়ে আনে রিদিকে।
“এই,তুই এখানে কেনো???আমার ডেড…..আর ইউ আন্ডারস্যান্ড….এই লোক টা শুধু আমার ডেড…..সো তোর ন্যাকা কান্না তোর কাছেই রাখ…….”

পাশে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো রিদিকে।
এম্বুলেন্স এসে গেছে।
ধরাধরি করে নিয়ে চলে গেলো রিদির বাবাকে।
পেছনে ছুটতে যায় রিদি,ওয়ালিদ বাঁধা দেয়।
বুক টা ফেঁটে যাচ্ছে রিদির।
এই পৃথিবীতে সব চেয়ে ভালো তো এই মানুষটাকেই বেসেছে।
কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে রিদির।
বাবার কলিজা তাঁর মেয়ে।
ভালোবাসার একমাত্র মেয়ের জন্য এতো বড় অপমান মানতে পারে নি।
তাই তো এই পরিণতি……
এম্বুলেন্স ছাড়ার শব্দে দৌঁড়ে গেইটের বাইরে আসে…কিন্তু না চলে গেলো গাড়ি টা।
থামে নি…..
রিদিও থেমে নেই….

কারও কোনো কথা শোনছে না,সবাই বাজে বাজে কথা বলছে ওকে নিয়ে সেসব কানে যাচ্ছে না ওর।আবারও ছোটে যায় বাড়ির ভেতরে,চাবি নিয়ে আসে নিজের গাড়ির।
পরশ শুধু দেখছে রিদিকে।
বড্ড এলোমেলো লাগছে আজ মেয়েটাকে…………..
পরশ কিছু বুঝার আগেই রিদি নিজের গাড়ি টা সর্বোচ্চ বেগে দিয়ে বেরিয়ে যায়।
পিছু নেয়,বাবা বাহী গাড়ীটার।
হসপিটালে এডমিট করতেই,ওয়ালিদের চোখ যায় রিদির দিকে।
“আপনি এখানে কি করছেন??”
“ভাইয়া….ডেডডডড……”

কান্না করছে রিদি।জানতে চায় ওর বাবা কেমন আছে…….কিন্তু পারে না জানতে।
“কে আপনার ডেড??আর কে আপনার ভাইয়া???”
“আমি যাবো ডেডের কাছে….”
“মিস.রিদি….আমার বাবার একটাই সন্তান আজ থেকে।আমি…না আমার কোনো ভাই আছে না আমার কোনো বোন আছে…সো আপনি যেতে পারেন….”
“ওয়ালিদ,কি বলছো তুমি এসব…..”
“নিপা!!!!তুমি কি করতে চাইছো আমি বুঝতে পারছি না…….আমার কাজ আমাকে করতে দাও…..”
“ভাইয়া…..আমি দেখবো ডেড কে প্লিজ ভাইয়া….পায়ে পড়ি তোমার প্লিজ…..যেতে দাও না আমায়……”
জীবনে প্রথম রিদি নামের মেয়ে টা কারও পা জড়িয়ে আছে।চিৎকার করে আঁকুতি জানাচ্ছে……
ওয়ালিদ পা ঝাটকা দিয়ে সরে আসে।
ওরও যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।

ওরও তো বাবা!!!ওর ই তো বোন…..সহ্য করতে পারছে না আর।না পারছে কাঁদতে না পারছে লুকাতে।
ওঠে দাঁড়ায় রিদি,চোখ মুছে নেয় নিজের……..
পেছন থেকে ডাকে ওয়ালিদকে…….
“দাঁড়াও ভাইয়া,তুমি না যেতে দেওয়ার কে হ্যাঁ??তুমি কে???আমার ডেড কে দেখার সম্পূণ রাইট আমার আছে…….আমি কেনো তোমার বারণ শোনবো???আমিও ওনার মেয়ে,ওনাকে দেখতে যাওয়ার অধিকার আমারও আছে…..আ….”
আর কিছু বলার সুযোগ পায় নি সে।তার আগেই ওয়ালিদ আরও একটা থাপ্পারের চিহ্ন এঁকে দেয়।
আরও একটা বসাতে যাবে,এমন সময় হাত টা কেউ ধরে ফেলে।
পাশে তাঁকিয়ে ভাই-বোন দুজনেই পরশকে দেখতে পায়।

“ভাইয়া,রিদি আমার ওয়াইফ….আপনি ওকে বারবার এভাবে মারলে আমার খারাপ লাগা টা স্বাভাবিক…..”
সবাই অবাক হয়ে যায়।
সবাই তো ভেবেছে,পরশ রিদিকে মানবেই না।কিন্তু,পরশ!!!!!!
চমকে যায় সবাই ওর কথায়।
এমন কি রিদি নিজেও……..
পরশ রিদির হাত ধরে সামনে এগিয়ে যায়।ওয়ালিদ বাঁধা দিলো না আর।
ডক্টরা দেখছে রিদির বাবাকে।
আর রিদি বাইরে থেকে প্রাণ প্রিয় বাবার বন্ধ করা চোখের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
অনবরত চোখ দিয়ে পানি পড়ছে রিদির।
একটা বিশাল অপরাধ বোধ কাজ করছে।
ওর জন্য আজকে ওর বাবার এই অবস্থা।

রাত অনেক হয়ে গেছে।রিদির বাবাকে নীবিড় পরিযর্যায় রাখা হয়েছে।এখন ওনি বিপদ মুক্ত।
তবে সব সময় ওনাকে মানসিক ভাবে প্রশান্তি দেওয়ার কথা বলেছেন ডক্টর।
এখনো জ্ঞান আসে নি রিদির বাবার।
তাই ওয়েটিং রোমে বসে আছে সবাই।
তুবা নাকি ঘুম ভাঙার পর ওর মা কে না পেয়ে কান্না কাটি করছে।তাই ওয়ালিদ আর সাদ জোর করে ওকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।ওয়ালিদ কোনো কথা বলছে না পরশের সাথে।
কি বলবে??কোন মুখে বলবে???

ওর বোন যে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার আগের দিন রাতে অন্য জনের বুকে শুয়েছিলো।
তারপরও কি কোনো ভাইয়ের মুখ দিয়ে কথা আসে??
লজ্জায় মুখ দেখানোর উপায় থাকে নাকি তখন???
পরশ আর রিদিও চুপচাপ আছে।কেউ কোনো কথা বলছে না।তবে পরশকে দেখে মনে হচ্ছে,ঝড়ে ভেঙে যাওয়া একটা গাছ।আর রিদি সে ও মরার মতো বসে আছে।
হঠাৎ করেই ওয়ালিদ,সাদের দুহাত চেপে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে।
এতক্ষণ তো সবাই কাঁদছিলো কিন্তু সে শক্ত ছিলো।
কিন্তু এখন আর পাড়ছে না।

বুকের ভেতরে কষ্টগুলো দানা বেঁধে মেঘ জড়ো করে ফেলেছে।যা বৃষ্টি রূপে বয়ে পড়ছে এখন।
“ওয়ালিদ,শান্ত হও ভাই।আঙ্কেল ভালো আছে এখন..”
“ভাইয়া,আমি সরি….আমাকে মাফ করবেন আপনারা…….”
“ওয়ালিদ,কি সব বলছো তুমি??”
চোখের পানি আটকাতে পারছে না ওয়ালিদ।
যতটা না কষ্টের তার চেয়ে বেশি লজ্জায়।কি ভাবে মুখ দেখাবে শশুড় বাড়ির সবাইকে।সমোন্ধি,শালা,শালিকা বিশেষ করে নৌশিনকে কি জবাব দিবে সে???
সে ই তো বোন কে রেখেছিলো এই বাড়িতে আর সে বোন তো!!!

“ওয়ালিদ,ভাই থামো……”
“আমি সত্যিই অপরাধী ভাইয়া,আমাকে ক্ষমা করবেন আপনারা।আমি আপনাদের সংসারে এতো বড় একটা….”
“আরে,চুপ একদম চুপ।এখানপ তোমার তো কোনো দোষ নেই…..আর কখনো এমন কথা বলবে না…….”
রিদি ওর ভাইয়ের চোখে পানি দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না আর।উঠে চলে আসে সেখান থেকে।

সাদাদ,নৌশিনের বাবা-মা,ভাই,রাফসা,প্রাপ্তির বাবা সবাই নৌশিনের কেবিনের সামনে বসে।
রাফসা আর প্রাপ্তির বাবা সবার সামনে সবটা তুলে ধরে।তবুও নৌশিনের ভাই যথেষ্ঠ রেগে আছে।সাদাদ কেনো আগে ওর বোনকে বললো না??
সাদাদের বাড়ির লোক সব যেনেও কেনো রিদিকে এই বাড়িতে এলাও করেছে দিনের পর দিন??
আর রিদির উপর তো ওনার রাগ টা আরও বেশি,ঐ মেয়ের জন্য আজকে ওর বোনের এই অবস্থা…পা পুড়ে যাওয়ার কারণ ও যে রিদি ছিলো সেটাও জেনে গেছে সবাই।
নৌশিনের ভাই শুধু অপেক্ষা করছে,বোনের জ্ঞান ফিরার জন্য।
আর সাদাদ তো নৌশিনের চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
প্রথমত নৌশিনের কষ্ট।
আর দ্বিতীয়ত নৌশিন তাঁকে বিশ্বাস করবে তো??
তবে সবকিছুর চেয়ে বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে নৌশিনের শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে গা শিউরে ওঠছে ওর।

সময় পাড় হয়ে যাচ্ছে।
কমশ্র লাল আভা বাড়াচ্ছে সূর্য।দুটো হসপিটালে থাকা সব ছেলেরা নামায পড়ে আসে মসজিদ থেকে।বাড়ির প্রতিটা মানুষ স্তব্ধ হয়ে গেছে।
কত সুখের মাঝে কি হয়ে গেলো!!!!
মেয়েরাও নামায পড়ে নিয়েছে হসপিটালের নামায কক্ষে।
!
সবাই অপেক্ষা করছে কখন নৌশিনের জ্ঞান ফিরবে…….
অপেক্ষার অবসান ঘটে সবার…………….
ঘড়ির কাঁটায় যখন সকাল আট টা বারো…..

সাদাদ ছুটে যায় নৌশিনের কেবিনে।
চোখে পানি ছিলো না এতক্ষণ ছেলেটার।
প্রিয়তমার শুকনো মুখখানি দেখে ধরে রাখতে পারে নি নিজেকে আর।
নৌশিনের হাতে স্যালাইন পুশ করা।
সাদাদ নৌশিনের দুগালে হাত রেখে ডুকরে কাঁদছে।
সাদাদের চোখে পানি দেখে নৌশিনের চোখে পানি এসে যায়।সে ও কাঁদছে।
সাদাদ নৌশিনের চোখের পানি মুছে দিয়ে পুরো মুখে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে।
সাদাদের ভালোবাসায় নৌশিনের আবারও কাল রাতের দৃশ্য টার কথা মনে পড়ে যায়।
ভেতর টা চৌঁচির হয়ে যাচ্ছে তাঁর।

“আই লাভ ইউ….আই লাভ ইউ সো মাচ বউ…….”
সাদাদ কাঁন্নাস্বরে বলছে নৌশিনকে।কিন্তু নৌশিন কোনো উত্তর দিতে পারছে না।
“থাক,তোর কোনো এন্সার দিতে হবে না….কষ্ট হচ্ছে তো তাই না??”
নৌশিন অপলক চেয়ে আছে সাদাদের দিকে।
“এত ভালোবাসে যে মানুষটা সে মানুষ টা কি রে???
না কখনোই সম্ভব না।

আমার ভালোবাসা আমাকে কখনো ঠকাতে পারে না।সাদাদ আই লাভ ইউ সো মাচ….আই লাভ এ লট….খুব খুব ভালোবাসি তোমায়….তুমি শুধু একবার বলো কাল রাতে কি হয়েছিলো??সব বলো আমায়??আমার যে কষ্ট হচ্ছে খুব….মাথা ধরছে খুব….একবার বলো তুমি শুধু আমাকেই হ্যাঁ শুধু আমাকেই ভালোবাসো…”
এসব ভাবতে গিয়ে আবারও জ্ঞান হারায় নৌশিন।
বাসার সবার হাইহুতাস বেড়ে যায়।
ভয় পাচ্ছে সবাই খারাপ কিছু হবে না তো??
সাদাদের বারবার নৌশিনের বলা একটা কথাই মনে পড়ছে,
“সাদাদ!!!অন্যকে ভালোবাসা তো দূরের কথা যদি কোনো দিন কারও সাথে উল্টা-পাল্টা অবস্থায় দেখি না তাহলে হারিয়ে যাবো কিন্তু…..”

হ্যাঁ,নৌশিন দু-তিন বার সাদাদকে এই কথাটা বলেছিলো।
আজ নৌশিনের বলা এই কথাটাই সাদাদকে সব চেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে।
কারণ ডাক্তার যে বলে গেলো এখনও নৌশিন খুব একটা ভালো নেই।
মানসিক চাপে প্রিডিমন্যাশিয়ার চাপ শুরু হয়েছে ওর।
সাদাদ হাসপাতালের নামায কক্ষে ছুটে যায়।
নফল নামায আদায় করবে ওর প্রিয়তমার জন্য।

দুপুরের দিকে পরশের কথায় রিদিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
কারণ আজ যে বিয়ে….
পুরো বিয়ে বাড়ি মরার বাড়িতে পরিণত হয়েছে।
কারও মুখে কোনো হাঁসি নেই।আত্মীয়-স্বজন পাড়া পরশী সবাই ওয়েডিং এ উপস্থিত।ছিঃ ছিঃ করছে সবাই।পরশের কথা মতো রিদিকে পার্লারের লোক এসে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে যায়।
বিকালের দিকে রিদিকে হোটেলে নিয়ে আসা হয়।
যেখানে ওর বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে।
শুধু প্রাপ্তির মা,সাদাদের মা,বাচ্চা দুটো আর সাদ এসেছে রিদির পক্ষ থেকে।
আর কেউ উপস্থিত নেই কনে বাড়ির পক্ষ থেকে।
গেস্ট রা সবাই অনেকে অনেক কিছু জানে না।
অফিস কলিগদের সাদ সামাল দিচ্ছে,সবাই কে বলছে রিদির বাবার এট্যার্কের কথা।
লুকাচ্ছে আসল কথাটা।
কি করবে??

প্রয়োজনে যে অনেক সময় সত্য গোপন করতে হয়।
পরশের বাবা আসলেও ওর মা আসে নি।
জেঠি এসেছে পরশের,দাদুও এসেছে।
কিন্তু দেখে বুঝা যাচ্ছে মন থেকে আসে নি।
পরশের মা পরশকে বিয়ে করতে না জানায় সব শোনার পর।
পরশ শোনে নি মায়ের কথা,রিদিকে বিয়ে করতে এসেছে।
কষ্ট পেয়েছে মা,একমাত্র সন্তানকে কোন মা এসব শোনার পর এমন কারও সাথে জোড়তে চায়।
পরশেরর গাড়ি টা ভেতরে ডুকতে গেলে কয়েক টা লোক সামনে দাঁড়ায়।
থমকে যায় সবাই,কারণ লোক গুলো একটু গোন্ডা টাইপ।
কোনো কথা ছাড়াই লোক গুলো পরশের গাড়ি ভাঙচুড় করতে শুরু করে।
সাদ দ্রুত গেইটে আসে।
বুঝে যায় কাজ টা কার….

নৌশিনের ভাই যে এসব করছে,সময় লাগে নি বুঝতে সাদের।
সাদ ফোন করে নৌশিনের বাবাকে।আর তো কোনো উপায় নেই,নিজেদের সম্মান বাঁচাতে আর একটা মেয়ের শেষ রক্ষার্থে একটু আকুতি-মিনতি তো করতেই হবে।
নৌশিনের বাবা সব শোনে রেগে যায়।
ততক্ষণে নৌশিনের ভাই বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির হয়।
রিদিকে সবার সামনে হাত ধরে নামিয়ে আনে স্টেজ থেকে।
পরশ গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ছিলো।নৌশিনের ভাই রিদিকে টেনে নামাচ্ছে দেখে ছুটে যায় সেখানে।
“দোস্ত কি করছিস??”

“চুপ,একদম চুপ…..আমার বোন এই নষ্টা মেয়ে টার জন্য মরতে চলেছে..আর এই মেয়েকে তুই বিয়ে করছিস??”
“সাবধানে কথা বল……ওকে স্লিপ করবি না…. ”
“হা হা হা….স্লিপ করবো না তো কি করবো হ্যাঁ????আমার কলিজার টুকরা বোন টা দিনে দু বার জ্ঞান হারিয়ে আজ….বিকাল থেকে পেট ব্যথায় কাঁতরাচ্ছে….তুই জানিস,ডাক্তার একটু আগে বললো,”বাচ্চা টা নষ্ট করে দিতে,না হলে আমার বোন বাকী সাত সাত টা মাস এতো কষ্ট সহ্য করতে পারবে না,বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে ওর লাইফ রিস্ক বেড়ে যাবে”….”
নৌশিনের ভাইয়ের মুখে এসব শোনে সাদাদের মায়ের বুক টা হাহাকার করে উঠে।কারণ ওনি তো জানেন,নৌশিন যে সবটা দিয়ে এই বাচ্চা টাকে চেয়েছে।
আবারও বলা শুরু করে নৌশিনের ভাই,

“আমার বোনের কত ভালোবাসার সন্তান…জানিস তুই??
আমার বোনের কোনো চাওয়া কোনো দিন অর্পূণ রাখি নি,সাদাদের সাথে বিয়েও দিয়েছি,শুধু বোনের হাঁসি মুখ টা দেখবো বলে,না হলে এই বাড়ির চেয়ে হাজার গুণ ভালো বাড়ির বউ হতো আমার বোন টা…..শুধু ভালোবাসে সাদাদকে তাই করেছিলাম এসব….আর এই সস্তা মেয়ের জন্য আমার বোনের সব চেয়ে বড় চাওয়া টা ওর বাচ্চা পাওয়ার আগেই হারিয়ে যাবে???আরে আমার বোন প্রিডেমন্যাশিয়ার রোগী,এই কথা টা শোনলে ও তো এমনিতেই মরে যাবে……”
বিয়ে বাড়ির সবাই অবাক।যারা জানে তারা এতক্ষণে রিদির কুকর্ম যারা জানে না সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে।
সবাই নৌশিনের জন্য চিন্তা করছে।ওরা যে দেখেছিলো নৌশিনকে।সাদাদ আর নৌশিনের বিয়েতে এসেছিলো যে সবাই।
কতটা এডজাস্ট ওদের মধ্যে জানে তো সবাই।

“শোন,আমার বোন কে যে কাঁদিয়েছে ওকে তো আমি….”
আর কথা না বাড়িয়ে,ঠাঁটিয়ো রিদিকে থাপ্পর লাগায়।
হুড়মুড়িয়ে পড়ে যায় রিদি।
সাদ আর পরশ আটকানোর আগেই,অন্য কেউ এসে বাঁধা দেয় বাঘ টা কে।
আর সে হচ্ছে,নৌশিনেরর বাবা।
“বাবা,তুমি এখানে কেনো??”
দৃঢ় গলায় বলে উঠে নৌশিনের বাবা,
“কি করছো??এই সব শিক্ষা পেয়েছো তুমি??
আমার শিক্ষার এই মূল্য দিচ্ছো???”
“বাবা,ওর জন্য আমার বোন…..”

“তোমার বোন,আমার মেয়ে।আমার কম কষ্ট হচ্ছে না।তোমার বোন কি বলে সবসময়??ক্ষমা করতে বলে না মানুষকে???
সে বোনের ভাই হয়ে কি করে তুমি একটা মেয়ের বিয়ের কাজে বাঁধা দিতে পারো??তোমার বোনন এসব শোনলে কষ্ট পাবে না??”
কিছু করার নেই আর।
নৌশিনের ভাই বোনের আদর্শ মাথায় আনে।
ওর বোন টা যে ভালো স্ত্রী,ভালো বোনের চেয়ে ভালো একটা মানুষও।
নৌশিনের বাবা পরশের গাড়িটা ঠিক করার জন্য পাঁঠিয়ে দেয়,পরশ না নেওয়ার জন্য জোরাজোরি করায় নৌশিনের বাবা জবাব দেয়,
“আমার ছেলের জন্য নষ্ট হয়েছে,আমার উচিত ঠিক করে দেওয়া……আমি আমার ছেলে মেয়েকে তাই বুঝিয়েছি…….নো নিড এনি সিমপ্যাথি….সেটা অসহায় কাউকে (রিদিকে উদদ্শ্য করে বলেন) দেখাও……”

সাদাদের মা চলে আসে হসপিটালে,নৌশিনের বাবা-ভাইয়ের সাথে।
আল্লাহর রহমতে নৌশিনের ব্যথা কমে এসেছে এতক্ষণে।
তবে ডাক্তার রা বলছে বাচ্চা টার পজিশন ভালো না যেহেতু তাই বাচ্চা টা এখনো সময় আছে নষ্ট করে দেওয়ার,না হলে নৌশিনের ক্ষতি হবে সামনে।
সাদাদ ভাবতে পারছে না কি করবে।

প্রেমঘোর পর্ব ৯১+৯২

ওর নৌশিনকে না জানিয়েয়ে এসব করলে,নৌশিন কোনো দিন কাউকে ক্ষমা করবে না।
নৌশিনের বাবাও এই কথা ভাবছে।আর যাই হোক ওনারা যদি নৌশিন কে না জানিয়ে বাচ্চাটার কোনো ক্ষতি করে দেয়,তাহলে নৌশিন সারা জীবনেও কাউকে ক্ষমা করবে না।
কিন্তু কি করবে ওরা??
নৌশিনকে জানালেও তো সে কখনো রাজি হবে না….

প্রেমঘোর পর্ব ৯৫+৯৬