প্রেমঘোর পর্ব ৯৫+৯৬
নার্গিস সুলতানা রিপা
রিদির বিয়ে টা হয়ে গেলো পরশের সাথে।
প্রাণহীন একটা বিয়ে হলো আজ।
রিদির ভেতরে যে কতটা কষ্ট হচ্ছে কেউ বুজতে পারছে না।জীবনের এরকম একটা দিনে বাবা,মা,ভাই,ভাবী কেউ পাশে নেই।আত্মীয়রা থাকলেও শুধু ধিক্কার দিচ্ছে।
চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে রিদির।
ভেতরে আগুন জ্বলছে।
কি হওয়ার কথা ছিলো আর কি হলো।
এই তো সে দিন ওরর বাবা বলছিলো,”আমার রাজকন্যার বিয়ের দিন আমি রাজকন্যার শশুড় বাড়ি পর্যন্ত যাবো…..”
রিদির মা কথা টা শোনে বলেছিলো,
“হ্যাঁ….মেয়ে তো তোমার একার আছে।আর কারো নেই।এই জগতে শুনেছে কখনো মেয়ের বিয়ের দিন মেয়ের বাবা মেয়ের শশুড় বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসে??”
জবাবে ওর ভাইয়া বলে উঠে,
“মম,আমার বোন সব চেয়ে আলাদা,তাই ওর বিয়েতে আমরা অবশ্যই আলাদা কিছু করবো……আমিও ডেডের সাথের একমত….”
সে দিনের কথা ভাবতেই রিদির চোখে অশ্রু ভীর করে।
“আলাদা কিছু??
এই ছিলো আলাদা আয়োজন??
কেনো হলো ভাইয়া এরকম??আমি তো যাওয়ার আগে তোমাদের মুখটাও দেখতে পারবো না ভাইয়া…কবুল বলার সময় পাশ থেকে তুমি বা ডেড কেউ তো জোর করলে না….তোমাকে,ভাবীকে,মম-ডেড কাউকে জড়িয়ে ধরে তো কাঁদা হবে না আমার??এতটাই আলাদা করে হলো তোমার বোনের বিয়ে??সত্যিই সবার চেয়ে আলাদা নিয়মে হলো…..”
নিজেকে হাজারো প্রশ্ন করে কোনো উত্তর খুঁজে পায় না রিদি।মনের ভেতরের সমস্ত জোর হারিয়ে ফেলেছে।
শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি পাচ্ছে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আর এদিকে,নৌশিন শুনে ফেলেছে ওর বাচ্চা নষ্ট করার কথা।
নার্স রা ভেবেছিলো নৌশিন ঘুমাচ্ছে,তাই দু জন মিলে বলাবলি করছিলো,
“দেখ,মেয়ে টা কি মিষ্টি দেখতে।আর কতটা অসুস্থ…..”
“হ্যাঁ…..ওর হাসবেন্ড টাও তো সেই…কি ভালোবাসে বউকে…..এতো সুন্দর মেয়েটার কী অবস্থা হয়েছে পড়ে গিয়ে….”
“হ্যাঁ…রে বয়স আর কত হবে??মন হয় একুশ-বাইশ….আমাদের কত ছোট!!এই বয়সে বাচ্চা নিলো……ওর শাশুড়ি কি ভাবে কাঁদছে….বলছে,ওনার বউ মায়ের কত আশার বাচ্চা….এই বাচ্চা টা কি রে নষ্ট করবে??বল তো….”
“আরে,পড়ে গেছিলো না মেয়ে টা….সেজন্য বাচ্চার পজিশন উপরে চলে গেছে…বাচ্চা দিন দিনন বড় হবে আর আরও উপরে চাপ দিবে….তাহলে তো মেয়ে টার ফুসফুস হার্ট সব জায়গায় চাপ লাগবে…বাঁচবে নাকি তখন……এজন্যই স্যার বলেছে,”বাচ্চা টা নষ্ট করে দিলেই ভালো……মেয়ে টার বাঁচা টা কনর্ফাম হবে……গাছ বাঁচলে ফল হবেই…..”
নৌশিন তো ঘুমাচ্ছিলো না।
ক্লান্ত থাকায় চোখ বন্ধ করেছিলো।
নৌশিনের ভেতরে তোলপাড় হচ্ছে।
বাচ্চা ও কিছুতেই নষ্ট করবে না সে।
কিন্তু এই পৃথিবীতে সব চেয়ে বড় বিষয় সাদাদ।সাদাদ ছাড়া ওর জীবন টাই তো মূল্যহীন।
নৌশিন ছাড়া সাদাদের জীবন নৌশিন ভাবতে পারছে না।
নার্স রা চলে গেলে।
নৌশিন আস্তে আস্তে উঠার চেষ্ঠা করছে।মাথায় ব্যথা করছে সাথে পেটও তবুও উঠতে হবে।সাদাদের সাথে কথা বলতে হবে তো??
তখন তো কথা বলতে পারে নি।এখন বলতেই হবে,শুধু সাদাদের মুখের একটা কথা শোনেই ওর সব প্রশ্নের উত্তর সে পেয়ে যাবে।সাদাদ শুধু একবার বলবে,”কাল রাতে নৌশিন যা ভেবে ভয় পেয়েছে সব মিথ্যা।সাদাদ শুধু একবার বলবে শুধু আমাকেই ভালোবাসে আমাকে ও।সে তো কোনো দিন বলে নি ওর কোনো অতীত আছে,তাহলে!!নিশ্চয় রিদি আপুও কিচ্ছু না ওর জীবনে……..”
নৌশিন দরজা খুলে বের হতেই ওর বাবা,মা,ভাই,শাশুড়ি,রাফসা সবাই দৌঁড়ে আসে।
ভালো করে হাঁটতে পারছে না মেয়েটা।
“মা,তুই!!!উঠেছিস কেনো??”
কোনো উত্তর দিলো না শাশুড়ীর কথায়,উল্টো জিঙ্গাসা করলো,
“মা,সাদাদ কোথায়??”
“মা,ও নামায পড়ছে…..তোর জন্য রে মা…..”
“কোথায় ও,মসজিদে???”
“হসপিটালের নামায ঘরে…..”
হাঁটা শুরু করে নৌশিন।
এই হসপিটালে আরও এসেছিলো সে।পরিবারের কারও কিছু হলে এখানেই আনা হয়।তাই সব জায়গা ভালো করেই চেনা।
“বোন,কোথায় যাচ্ছিস??”
“ভাইয়া,ছাড়ো….আমি সাদাদের কাছে যাবো…..”
“আচ্ছা,আমি ডেকে আনছি….সিড়ি ভেঙে নিঁচে নামতে পারবি না তুই…..আমি যাচ্ছি…….”
“ভাইয়া,আমি যেতে পারবো…..”
“বোন,কথা শোন আমার…..”
“না,ভাইয়া,এক তলা ই তো পাড়ি দিবো……”
নৌশিন কারও কথা না শোনে,সিড়ি দিকে এগিয়ে যায়।আর ঠিক তখনি,সাদাদ দ্রুত গতিতে উপরে উঠছে।
চোখ পড়ে নৌশিন সিড়ি দিয়ে নামার জন্য পা বাড়াচ্ছে।
বেগ আরও বাড়ায়।
নৌশিনকে আটকে নিয়ে,উতকন্ঠে বলে,
“কোথায় যাচ্ছো তুমি??”
সাদাদকে দেখা মাত্র ই নৌশিনের চোখে পানি এসে যায়।
ভালোবাসা আসলেই অদ্ভুত।
বড্ড মায়াবী….বড্ড প্রেমময়!!
সাদাদ নৌশিনকে জোর করে কেবিনে নিয়ে যায়…..নৌশিন বারবার কথা বলতে চাচ্ছিলো,কিন্তু সাদাদ দেয় নি।
বলছিলো,
“আগে বসবে তারপর যা বলবে শোনবো আমি…”
কেবিনে এনে বসিয়ে দিলো বিছানার উপর……..
সাদাদ নৌশিনের হাত দুটো নিজের দু হাতের মধ্যে নিয়ে বললো,
“কি বলবে,এবার বলো…..”
“আ…আ…..ম…..”
বলতে পারছে না নৌশিন।ডুকরে কেঁদে উঠে।
“ঐ পাগলী,মাইর খাবা কিন্তু…কাঁদবে না কিন্তু…..”
“ভালো….বা…সো??”
“কি???”
“আমা…..ক…কে না??”
“এই,তোমার কি মনে হয়???হুম??”
“কি হয়েছিলো???আমা ম…মা….কে বলা যায় না??”
“জান,তুমি অসুস্থ,পরে বলবো সব….সব বলবো তোমায়…..তোমাকে আগেই সব বলা উচিত ছিলো আমার….আমাকে মাফ করো তুমি….তুমি ই তো সব আমার…..”
“আমি সু…সুস্থ হবো তো….তুমি বললে…..”
“খবরদার…আর এক ফোঁটা চোখের পানি যেনো না পড়ে….”
নার্স এসে সাদাদকে জানায়,ডক্টর তাঁর সাথে বলা বলতে চায়।
নৌশিন আন্দাজ করতে পারছে নিশ্চয় ডাক্তার নৌশিনের বাচ্চার ব্যাপারে বলবে।তাই সাদাদ ওঠা মাত্র ই নৌশিন চেঁচিয়ে ওঠে,
“আমার বাচ্চা কিছুতেই মারতে দিবো না আমি,দরকার হলে আমি মরতেও পারবো আমার বাচ্চার জন্য…..”
থমকে যায় সাদাদ।
নৌশিন কি করে জানলো!!!
সাদাদ ফিরে আসে নৌশিনের কাছে……সাদাদ নৌশিনের গালে হাত রেখে বলছে,
“জান,আমরা আবার বেবী নিবো….আগে তো তুমি তাই না??”
নৌশিন সাদাদের হাত দুটো ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিলো।
“নাআআআআআ………”
“জান,প্লিজ….আমার কি কম কষ্ট হবে বলো??আমি তো বাচ্চার বাবা তাই না……শোনো বাচ্চা টা বড় হলে তোমার খুব কষ্ট হবে….এমনকি….”
“কি এমনকি হ্যাঁ…কি বলো???মারা যাবো আমি তাই তো???
মরা গেলে যাবো….তুমি কি করতে থাকবে হ্যাঁ???বিয়ে করবে আবার??আমার বাচ্চাকে সৎ মায়ের জ্বালা দেওয়ার জন্য??নাকি আমার বাচ্চাকে এতিম খানায় দিয়ে আসবে???কোনটা হ্যাঁ??কোনটা করবে তুমি??”
যে নৌশিন কোনো দিন কখনো জোরে আওয়াজ করে কথা বলে নি।আজ সে নৌশিনের আওয়াজে ছুট আসে সবাই।
“মা,কি হয়েছে তোর???”
“না কেউ আসবে না আমার কাছে???তোমার বাচ্চার দাম আছে আমার বাচ্চার দাম নেই???তাই না???যদি তোমার বাচ্চার দাম থাকে তাহলে আমার বাচ্চারও দাম আছে।যদি বুঝাতে আসো আমাকে তাহলে তোমার বাচ্চাও বাঁচবে না কিন্তু।আমি মরে যাবো তখন দেখবে তোমার কেমন লাগে….”
“বোন,শান্ত হ…..”
“কিসের শান্ত হবো আমি??হ্যাঁ???শোনো…আমি তো কোনোদিন আমার বাচ্চাকে মারতে দিবো না….সাদাদেরর অনুমতি পেলে তো ডাক্তার এই কাজ টা করে ফেলতে পারে….যদি তোমরা বা সাদাদ কেউ আমাকে না জানিয়ে এই কাজ টা করো…তাহলে সারা জীবনের জন্য আমার মুখ টা আমি তোমাদের দেখাবো না…..কখনো ক্ষমা করবো না….আর মা-বাবা-ভাইয়া তোমরা তো জানো,আমি কতটা লুকিয়ে রাখতে পারি নিজেকে…..আমার বাচ্চা নিয়ে আর কেউ যদি কোনো কথা বলো তাহলে আমি আর আমার বাচ্চা একসাথে মরবো…..ইহকালে মহাপাপ টা করতে হবে তোমাদের জন্য…..কিসের পাপের কথা বলছি আমি???মা হয়ে বাচ্চা হত্যা করা তো মহাপাপের চেয়েও ভয়ংকর…….”
কেউ কোনো কথা বলছে না।
ডক্টর মাথা নিঁচু করে কেবিন থেকে বেরিয়ে যান।নার্স দুজন ছিলো,ওরাও চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে যায়।
নৌশিন ফুসফুস করছে,চোখ দিয়ে আগুন-পানি গড়িয়ে পড়ছে………
বেড থেকে নেমে নৌশিন সরাসরি সাদাদের কাছে ছুটে যায়….কলার চেঁপে ধরে,
“এই,তুই…তোর বাচ্চাকে মারতে চাস তাই না???মায়া লাগে না তোর হারামি??কুত্তা…..আমি মরে গেলে বিয়ে করবি না তুই??বিয়ে করে সৎ মায়ের জ্বালা দিবি তুই না….আমি মরলে তুই দেখবি হারামি….আমি পেট থেকে বের করে যদি বিদায় নিই তাহলে তোর সব সুখ ত্যাগ করবি তুই…..আমার বাচ্চা সামলাবি তুই….ন্যাপকিন থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া সব দেখবি……যত্ন কম করবি না…..যদি করিস,তাহলে…তাহলে….আমি মরার আগেই তোকে ত….ত……”
আর কিছু বলতে পারলো না নৌশিন।সাদাদের বুকে লুটিয়ে পড়লো।বেশি উত্তেজিত হওয়ার নিউরনে চাপ লেগে এমনটা হয়েছে।
“নৌশিন!!!!!!”
সাদাদ পাঁজা কোলে তুলে বেডে শুইয়ে দিলো নৌশিনকে।
“ঐ….চোখ খুলো না…..নৌশিন!!!এই জান……প্লিজ…..”
কান্নায় ভেঙে পড়ছে সাদাদ।
রাফসা ডাক্তার ডাকে কেবিনে।
নৌশিনকে দেখে ডাক্তার শেষ একটা ডিসিশনে পৌঁছায়,
“দেখুন,আমার মন হচ্ছে ওনার বাচ্চা টা নষ্ট করলে ওনি এমনিতেই শেষ হয়ে যাবেন…ওনার যা নিউরণগত চাপ ওনি কিছুতেই এই আঘাত নিতে পারবেন না।আর ওনার আচরণে আমি এতক্ষণ যা বুঝলাম,ওনি যে কোনো কারণে মি.সাদাদ মানে ওনার হাসবেন্ডকে খুব বেশি বিশ্বাস করেন,এমনকি ওনার মা-বাবা এর চেয়েও এই বিষয়টাতে ওনি ওনার হাসবেন্ডের উপর বেশি ভরসা করছেন।আর তাই বাচ্চা টা থাকলে রোগীর যে কষ্ট হবে তা তো আর কমানো যাবে না,তবে বাচ্চা না থাকলে ওনাকে কোনো ভাবে বাঁচানো যাবে না।তাই বাচ্চা বাদ দিচ্ছি না আমরা।।।তবে মিসেস.নৌশিনের মতো আমরাও ওনার হাসবেন্ডের উপর টোটালি ভরসা রাখছি………….
আর হ্যাঁ,কোনো মেডিসিন লাগবে না আশা করছি পাঁচ-দশ মিনিট পর এমনিতে ওনার জ্ঞান ফিরবে……..”
বেরিয়ে যান ডক্টর।
নৌশিনের মা হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠে।
সাদাদের কাছে দাঁড়িয়ে সাদাদ হাত দুটো ধরে বলল,
“বাবা,আমার মেয়ে টাকে বাঁচাও বাবা….আমার মেয়ে টা কে বাঁচাও….”
কারও চোখের বাঁধ মানছে না।
সবাই আবেগময়ী হয়ে গেছে।
এমন সময় কেবিনে আসে পরশ আর রিদি………..
রিদির মুখটা দেখামাত্র ই সাদাদের মাথায় রক্ত উঠে যায়..
সাদাদ,ওর শাশুড়িকে এক হাতে মায়ের মততার শ্রদ্ধা,ভালোবাসার সম্মান জানিয়ে আগলে নেয়।
“মা,আমি তো আপনার মেয়েকে আপনাদের থেকে ভালোবেসে চেয়ে নিছিলাম মা।ওর কিছু হলে আমিও তো বাঁচতে পারবো না মা….”
এবার সাদাদ আবারও নজর আনে,রিদির দিকে।
রিদি আর পরশ বিয়ের সাজে উপস্থিত হয়েছে এখানে।
সাদাদ দৃঢ় গলায় প্রশ্ন করে,
“পরশ,আপনি এখানে????”
“রিদি নৌশিনের কাছে আসতে চাইছিলো……”
“ও তার মানে বাসায় যান নি,এখনো??”
“কেনো সাদাদ আসতে পারি না আমি??”
প্রশ্ন করে রিদি।
“হা হা হা….এখনো গলায় বেশ জোর আছে তোমার??
পারো তুমি রিদি…..আমার এতো বড় সর্বনাস করে আবার দেখতে আসছো??
তুমি তো কোনো দিন আমার নৌশিনের যোগ্য হতে পারবে না…..আজ মনে হচ্ছে কি নৌশিনের সাথে তোমার সাথে একটু তুলনা করাটাও পাপ হবে…..”
“সাদাদ….”
“মি.পরশ,আমি কথা আপনার সাথে বলছি না।আপনার ওয়াইফের সাথে কথাটা শেষ করি??”
পরশ সামলে নিলো নিজেকে।যে ছেলে কখনো কারও কাছে মাথা নত করে নি,আজ নিজের বউয়ের কুকর্মের জন্য সবার কাছে মাথা নত হয়েছে ওর।
“ও হ্যাঁ…যা বলছিলাম তোমাকে রিদি।শোনো,আমার নৌশিন আমাকে বলে কি জানো,”যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাবান,তারা নাকি প্রতিশোধ নেই না-তারা ক্ষমা করতে জানে…..”
তো তুমি যে পাপ করেছো না সেটার কোনো ক্ষমা হয় না।তোমাকে পুলিশে দেওয়ার অনেক কারণ আছে,তোমাকে ঘৃণা করা যে কারও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।কিন্তু আমার নৌশিন তো সব চেয়ে আলাদা,মহান,ক্ষমতাবান তাই এক কাজ করো ক্ষমা চাও ওর কাছে দেখবে বিনা শর্তে ক্ষমা করে দিবে তোমাকে।না না ভয় পেয়ো না পা ধরতে হবে না,নৌশিন ওর পা ধরতে দেয় না,ভদ্র মেয়ে তো,বড় রা ওর পায়ে হাত দিবে সেটা মানবে না ও।জাস্ট মুখে শুধু একবার বলে দেখো,তুমি ভুল করেছো,তাতেই ক্ষমা পেয়ে যাবে।যদিও এমনিতে ক্ষমা করে দিবে তোমাকে,তবুও নতুন জীবন শুরু করছো তো আজ থেকে,আমার নৌশিনের কাছে কিছু চেয়ে দেখতে পারো,অনেক ভালো কিছু পাবে নিশ্চয়….”
রিদি নীর্বাক হয়ে কাঁদছে।
আজ যে ওর বলার কিছু নেই।
মানুষ যখন নিজের ভুল টা বুঝতে পারে,তখন তার মনে যে কি অনুসূচনা কাজ করে সেটা বাইরে থেকে আমাদের বুঝার উপায় থাকে না।কষ্ট টা তাকে তার মনটাকে দুমড়ে মুচড়ে ভাঙা ক্যানের মতো করে আনে।
“মা রে,তোকে তো কোনো দিন আমার নিপা,প্রাপ্তির চেয়ে আলাদা করে দেখি নি।আজ কেনো করতে গেলি এসব??আমার এতো সুখের সংসারে কি সব হয়ে গেলো??আমার এতো বড় সর্বনাস করতে পারলি তুই???আমরা তো সবাই জানি কি হয়েছে;কিন্তু নৌশিন মা তো আমার সাদাদের বউ,ওর মনে তো প্রশ্ন জাগতেই পারে;তাহলে কি হবে আমার সংসার টার??আমার বউ মায়ের কতটা কষ্ট হচ্ছে….আমার দাদুভাই টারও কি হবে কে জানে…..কেনো করলি এমন???কোন দিক থেকে তোকে আপন করে নিই নি তোকে????বল??”
সাদাদের মায়ের আবেগময়ী কথাগুলো হৃদয়টা ছেদ করে দিচ্ছে রিদির।
প্রায় মিনিট দশেক পর জ্ঞান আসে নৌশিনের।
সবাই কথা শোনাচ্ছে রিদিকে বুঝতে সময় লাগলা না নৌশিনের।
নৌশিন কোনো কথা না বলে,পরশ আর রিদিকে দেখছে।
দুজনকেই বেশ সুন্দর লাগছে।
বউ সাজে রিদি রূপটাই পাল্টে গেছে।
“রিদি আপু…..”
নৌশিনের ডাকে নৌশিনের দিকে তাঁকায় সবাই।সাদাদ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।সে দেখতে চায়,নৌশিন রিদিকে দেখে ঠিক কি রিয়েকশন করে।
নৌশিন উঠার চেষ্ঠা করছে,সাদাদের মা নৌশিনের কাছে যেতে চাইলে বাঁধা দেয় সাদাদ;নৌশিনের মাকেও কাছে ঘেষতে দেয় নি।
নৌশিনের ভাই পারছে না তো রিদিকে খুন করতে,তা না হলে!
নৌশিন ওঠে দাঁড়ায়,
সাদাদের দিকে একবার তাঁকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নেয় রিদির দিকে।
এই মুহুর্তে সবটা জানতে চায় সে।তার সাদাদকে যে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে ও,সাদাদও তো তাই।সে বিশ্বাস থেকেই সবকিছুর উর্ধে গিয়ে প্রশ্ন করে,
“আম…..আমার সাদা দ কে ভা লোবা সো???”
চোখ বাঁধা মানছে না রিদির।
সব সময় রিদি আলাদা একটা সার্পোট নিয়ে চলে নিজের মাঝে।কিন্তু,আজ!!!!
নৌশিনের মতো ছোট্ট একটা মেয়ের সামনে কথা বলার শক্তি টুকু পাচ্ছে না।
রিদির জবাব না পেয়ে,নৌশিন আবারও প্রশ্ন করে রিদিকে,
“বলো না….আ মা র সাদাদ কে ভালোবাসো তু তু তুমি????”
রিদি পরশ আর সাদাদে দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।কারও কাছ থেকে কোনো ইশারা পর্যন্ত পায় নি।বুঝে গেছিলো,আজ সে জীবনের মরুপ্রান্তে দাঁড়ানো।যে প্রান্তের শেষ টায় নৌশিন দাঁড়িয়ে।ভালোবাসার বিশ্বাস থেকে প্রশ্ন ছুড়েছে আজ একজন স্ত্রী,না কেনো প্রমিকা নয়;পবিত্র বন্ধনে সৃষ্ট স্বীকত ভালোবাসা আজ প্রতিপক্ষের বাণী নিতে চায়।
রিদি খোলাসা করতে চায় আজ সবটা,সে ও তো মানুষ।
সে ও যে আর পারছে না।
বুক টা ফেঁটে যাচ্ছে।
নৌশিন অধীর আগ্রহে রিদির মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে,ওর যে জবাব চাই।
বড্ড ভালোবাসে যে ওর স্বামীকে,খুব করে পাশে চায় সারা জীবনের জন্য।
শেষ মেষ উত্তর টা পেয়েও যায় সে,
“ভালোবাসাতাম রে তোর সাদাদকে……….”
ভেতর থেকে একটা গভীর নিশ্বাস নেয় নৌশিন।
না শোকের না সুখের।
কারণ ও তো এটাই শোনতে চাইছিলো,রিদি যেনো এই উত্তর টা দেয়।
ভালোবাসে রিদি সেটা তো ঐ রাতেই বুঝেছিলো নৌশিন।
কিন্তু আজ পরশের পাশে থেকেও ভালোটা তার সাদাদকে বাসে কি না,সেটাই জানার ছিলো নৌশিনের।
নৌশিনের রিদির কাছে জানার আর কিচ্ছু নেই।
এবার শুধু ওর সাদাদের কাছে জানতে চাইবে।
সাদাদের কথা এই মেয়েটার কাছে মহাসত্য।
সাদাদের একটা স্বীকারউক্তি ই জানতে চায় সে।
প্রশ্ন করে,
“রিদি আপু কে তোমার জীবনে??”
সাদাদ নৌশিনের দু গালে হাত রাখে,চোখে রেখে বলে,
“রিদি,আমার জীবনের একটা ক্ষুদ্র অংশ জুড়ে বিরাজ করে,তবে মূল্যবান।তুই ই তো শিখিয়েছিলি,”কোনো ক্ষুদ্র জিনিস ই কম মূল্যবান না”…তাই না??তাই রিদিও কম মূল্যবান না আমার জীবনে….ও যে আমার বোনের পরিবারের অংশ….ও সুখে থাকলে আমার বোনের সুখ বাড়বে,ওর কষ্ট হলে তার প্রভাব আমার বোনের জীবনে পড়বে……ব্যাস এইটুকু ই।
আর বাকী টা মানবিকতা….।
আর তুই,আমার জীবনের সব চেয়ে মূল্যবান জিনিস….বিধাতার দেওয়া সেরা উপহার।তোর জন্য আমার ভালোবাসার সবটা….আমার অতীত,বর্তমান আর ভবিষ্যৎ এর ভালোবাসা তুই।হ্যাঁ শুধু তুই….শুধু তুই….আর কেউ না।।।।।বুঝতে পরেছিস???সাদাদ নান বাট লাভস নৌশিন……আর ইউ আন্ডারস্যান্ড?????”
নৌশিনের চোখে বন্যা বইছে।
বুকের মাঝে উথাল পাথাল সুখ দোল খাচ্ছে।
এই কথাটাই জানতে চাইছিলো সে।শুধু নৌশিন!!!হ্যাঁ,শুধু শব্দ টা আশা করছিলো নৌশিন।
অতীত তো থাকতেই পারতো।
কিন্তু ওর সাদাদ যে আগেই বলেছে অতীতে কিছু ছিলো না।
তাই সে দিন রাতে ভয় পেয়েছিলো খুব।
আজ সে ভয় কাঁটিয়ে দিয়েছে সাদাদ।সাদাদের একটা মাত্র কথা বুকে জমে থাকা সমস্ত কষ্ট গলিয় দিয়েছে।
বাষ্প করে দিয়েছে।
ঘনীভূত করেছে তবে দূঃখ নয় মহাসুখ।
নৌশিন সবার সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার চিরচেনা আবাসস্থলে।
শরীর সমস্ত শক্তি দিয়ে ঝাঁপটে ধরে সাদাদকে।
“আমি জানতাম তো……..বিশ্বাস করেছিলাম তো সব টা দিয়ে…..বিশ্বাস ছিলো ভালোবাসার উপর…..কিন্তু কাল না ভয় পেয়েছিলাম,যদি কিছু লোকাও!!……আমি না সরি…..খুব সরি…….ক্ষমা করো আমায়….আর কক্ষণো না আর কক্ষণো এমন মিথ্যা ভয় পাবো না………প্রমিস……এন্ড আই লাভ ইউ……ইয়েস নৌশিন অনলি লাভস হার হাসবেন্ড,সি কান্ট লিভ উইথ আউট হিম…….”
সবাই তাঁকিয়ে আছে সাদাদ-নৌশিনের দিকে।
নৌশিনের মা-বাবা,ভাই মেয়ে আর মেয়ে জামাইয়ের ভালোবাসার জোড় দেখে সুখের সীমনা পাড় করে ফেলেছে।হয়তো তাই মা-বাবার সাথে সাথেও কঠোর রাগী ভাইটারও চোখে পানি এসে গেছে।
সাদাদ-নৌশিন দুজন দুজনকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে।
সাদাদ নৌশিনের মুখ টা তাঁর বুক থেকে তুলে,দুগালে শক্ত করে হাত রেখে বলছে,
“সরি কেনো হুম???তুই ই তো সব আমার।আর বিশ্বাস কি ছিলো ই শুধু আজ বিশ্বাস নেই??”
“আছে তো,তা না হলে কি বুকপ আসতাম??”
“ওরে,রানী আমার…..আমাককে কি ক্ষমা করা যায় না??”
“কিহ????”
“হ্যাঁ???”
“খবরদার এমন কথা বলবা না কখনো,আমার তো ক্ষমা চাওয়া উচিত তোমার কাছে।আমি যে তোমাকে নিয়ে মিথ্যা ভয় পাচ্ছিলাম…..তবে আমি না অবিশ্বাস করি নি।।আমি ভেবেছিলাম তোমার অনেক আগের কোনো অতীত যা তুমি আমাকে বলো নি…..আম সরি।।।।হ্যাঁ???করবে না আমায় ক্ষমা????”
“পাগলী…..”বলেই সাদাদ ডুকরে কেঁদে উঠে।
এমন স্ত্রী কজন পুরুষের ভাগ্যে জুটে!!!!
“সাদাদ,আমি না খুব ভালোবাসি।খুব…..আমার বেঁচে থাকতে হলে তোমাকে লাগলেই………না হলে তো….”
“চুপ…..একদম চুপ….কিচ্ছু হবে না তোর…….আর রিদির কথাটা তোকে না জানানোর জন্য আমি সত্যিই….. ”
নৌশিন সাদাদের মুখ আটকে ফেলে হাত দিয়ে।
“না,কোনো সরি না….আমি বলেছি না,আমাকে তুমি জীবনেও সরি বলবে না……কখনো না….আমি তোমার মুখে এই শব্দ টা তো শোনতে চাই না……”
সাদাদ নৌশিনের চোখের পানি মুছে,নিজেরও টাও মুছে নিলো।নৌশিনের কানের দুপাশে হাত রেখে সবার সামনে কপালে গভীর ভাবে চুমু দেয়।
আবারও সুখ আবেশে চোখে পানি চলে আসে নৌশিনের।
মুঁচকি হাসছে সবাই।
রিদিও………
রাফসা দুষ্টুমি স্বরে একটা কাঁশি দিয়ে দিলো……
হোশ আসে সাদাদ আর নৌশিনের।ওদের বাবা-মা যে সামনে,খেয়াল ই ছিলো না ওদের।নৌশিন বেশ লজ্জা পেয়েছে,শেষে কি না বাবা-ভাইয়ের সামনে কিস!!!!!
সাদাদের মা,নৌশিনের মা-বাবা মু্ঁচকি হেঁসে বেরিয়ে যান কেবিন থেকে।
নৌশিনের ভাইও বোনের লজ্জা মাখা মুখ টা দেখে মুঁচকি হেঁসে কাছে যায় ওদের।
সাদাদের হাতে নিজের বোনের হাতটা তুলে দিয়ে বলে,
“সরি রে ভাই।বুঝতে পারি নি,আমার বোন টার ভালোবাসা মিথ্যা হতে পারে না।জোর আছে খুব;বুঝতে পারি নি সেটা।এই জোরেই বেঁধে রেখো আমার বোনটাকে সারা জীবন…..আর কালের খরাপ ব্যবহারের জন্য…….”
“না ভাইয়া।কোনো খারাপ ব্যবহার হয় নি।আপনার জায়গায় যে কেউ থাকলে….বরং আরও বেশি কিছ করতো…..”
“দেখো রেখো আমার বোনটাকে।তোমার হাতেই তো বাবা সর্পদান করেছিলো।আজ আমিও আবার দায়িত্ব দিচ্ছি।ভালোবাসার দায়িত্ব।আমার বোনটাকে ভালো রাখতে তোমাকে কষ্ট করতে হবে না,কোটি কোটি টাকা দিতেও হবে।ও যে পরিবেশে বড় হয়েছে,সেটা দিতে হবে না।দামী জামা লাগে না ওর,দামী খবারও না,ব্যয়বহুল না আমার বোনটা…..আমাদের ঘরের বরকত….তোমার ঘরেও বরকত হয়ে গেছে,আল্লাহর রহমতে…..দু বেলা ভাতেই হয় ওর…..।ভালোবাসা দিও ও বাকীটা নিজেই করতে পারবে,বাকী ভালোবাসা টা ও তোমাকে বাসবে….ঠকাবে না তোমায় কখনো।ভালো থাকবে এইটুকুতেই….আর আমার বিশ্বাস তোমাকেও ভালো রাখবে ইনশাল্লাহ্…..।”
নৌশিন জড়িয়ে ধরে ভাইকে…
“ভাইয়া…..”
বোনকে আগলে নিয়ে,মাথায় চুমু দিয়ে বললো,
“এইভাবেই ভালোবাসিস….দোয়া করি সুখে থাক তোর সাদাদকে নিয়ে।সারা জীবন…….”
“আই লাভ ইউ ভাইয়া….”
“আই লাভ ইউ সো মাচ….”
বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে,বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে প্রাণপ্রিয় ভাইটা।
পরশও বেরিয়ে আসে।
নিজের ভালোবাসার মানুষটার মনের হিসাব সে আজও মিলাতে পারছে না।
নিজের মনের কাছেই হাজারো প্রশ্নও ঘুরঘুর করছে।অসহায়াত্ব ভীর করছে মনের কোণায়।আর নিজের অগোচরেই অভ্যাসবসত জেদের সৃষ্টি হচ্ছে।
যার ঝাজ রিদিকে সইতে হবে……….
মানুষ যতই বদলাক না কেনো।তার ভেতরের গঠন;কঠোরতা বা সরলতা কখনো পাল্টায় না।
পরশ তো সব সময় গরম মেজাজের মানুষ….রিদির এতোকিছুর পরও কি সে কোনো রিয়েক্ট করবে না???
পরশ তো বারবার ই একজন ভালো মানুষ,ভালো মন আছে তার।কিন্তু লোক টা যে বড্ড শক্ত………হ্যাঁ এটা ঠিক কঠোর লোকটাই খুব ভালোবাসে তার বউকে।বাসুক না একটু ভালো নিজের মতো করে,কঠোর করে।
নৌশিন আর তার ভাইয়াকে দেখে-রিদির বুক টা নিজের ভাইয়ের জন্য ছেদ করে উঠে।
ও তো আজকে নতুন জীবন শুরু করলো ওর ভাইয়ের বুকে পড়ে কান্না করার ভাগ্য টা হলো না তাঁর।
ভাবলো না আর,নিজের পাপের শাস্তি বলে মাথা পেতে নিলো।
চোখে মুছে,রিদি আবারও বলা শুরু করে,
“এখন অন্য কাউকে বাসতে শুরু করেছি,তোর মতো করে।পবিত্র ভাবে রে বোন…..আমার পরশকে……সাদাদ আমার ইগো,আবেগ ছিলো….ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার চত্বরে পৌঁছে গেয়েছিলো….পাগলামো করতাম তাঁকে নিয়ে,কিন্তু বিশ্বাস কর বোন তোর সাদাদ সব সময় তোকে ভালোবেসে এসেছে…..আমাকে কখনো বাসে নি,আমাকে তো চেয়েও দেখে নি….আর সে দিন রাতে আমিও কোনো খারাপ মত নিয়ে যায় নি,যা হয়েছে সব একটা ভুল..হ্যাঁ,দোষ টা আমার ছিলো,আমি সাদাদের কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু কোনো খারাপ বাসনা নিয়ে যায় নি।সাদাদ ঘুমের ঘোরে তোকে ভেবে আমাকে আগলপ নিয়েছিলো….আর আমি সাথে সাথে সরে আসার চেষ্ঠা চালাই কিন্তু ঠিক তখনি তোরা……”
নৌশিন রিদির কাছে এসে,রিদির হাত দুটো চেঁপে ধরে……
“আপু,না আর কিছু বলো না।আমার আর কিচ্ছু জানার নেই।আমি শুধু চাই ভালো থাকো তুমি।আর বিশ্বাস করি,থাকবেও…কারণ তুমিই তো একটু আগে বললে,সাদাদ তোমার অতীত।ওকে তুমি ভালোবাসতে….ভালোবাসো না।ভালোবাসো তোমার পরশকে…..তাহলে??”
রিদি চেয়ে দেখছে শুধু নৌশিনকে।
একটা মানুষ কি করে এতটা মহান হতে পারে।
কি করে এতো ভালোবাসা আর বিশ্বাস পোষণ করতে পারে নিজের মনে!!!!!
রিদি জড়িয়ে ধরে নৌশিনকে।
কাঁদতে থাকে।
আজকে নৌশিনকে বড্ড আপন মনে হচ্ছে।
রিদির মনে হচ্ছে-একটা শীতলতা ছেঁয়ে আছে ওর চারদিকে।
“আপু,সবার ই তো মন আছে।তোমারও মন আছে….সেটাতে কোনো আবেশ আসতেই পারে।হ্যাঁ কোনো আবেশ খারাপ হয় আর কোনো আবেশ ভালো।তোমার টা যদিও আমার সব কিছুর প্রতিকূলে ছিলো তবুও তো তুমি বুঝতে পেরেছো,এটাই তো সব চেয়ে বড় কথা।সেটাই তো আসল আপু…….আর এখন তো তুমি সঠিক মানুষকে ভালোবাসছো তাহলে কিসের কষ্ট আর???এখন সব কিছু নতুন করে শুরু করো আল্লাহর নাম নিয়ে…..বিশ্বাস করো আমার মনে কোনো খোব নেই……..আমি সর্বোচ্চ দোয়া করি তোমার জন্য….ভালো থাকো……”
“বোন নেই আমার….কিন্তু আজ মনে হচ্ছে তুই আমার মায়ের পেটের বোন……”
“তো ডাকো না বোন বলে…..”
“নৌশিন……”
জড়িয়ে ধরলো আবারও….
“আপুুুউউউ……”
নৌশিন রিদিকে সামলে নিয়ে দাঁড় করিয়ে বললো,
“আপু,অনেক হয়েছে আর না।
এবার যাও,পরশ ভাইয়া ওয়েট করছে তো…….”
“হ্যাঁ….যাচ্ছি!!কিন্তু সাদাদ ও কি ক্ষমা করবে আমায়??….”
সাদাদের দিকে তাঁকিয়ে আছ রিদি……..
পলক ফেলে বললো,
“সাদাদ,পারলে ক্ষমা করো…..”
সাদাদকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চট করে বেরিয়ে আসে রিদি।
সাদাদের বাবা-মায়ের কাছেও ক্ষমা চায়।
ওরাও যে মেয়ের মতো করে মানুষ করেছে।তাই ক্ষমা করে দিয়েছে….বুকে জড়িয়ে দোয়া করেছে আগামী দিনের জন্য।
রাফসাও পরশকে বুঝিয়েছে।
রিদির বাবার কাছে যেতে চেয়েছিলো সে,কিন্তু রাফসা না জানায়।
ওরা এই মুহুর্তে রিদিকে মানবে না সবাই জানে।আর হার্টের পেসেন্ট,ওনাকে কোনো উত্তেজনা দেওয়া ঠিক হবে না….তাই রাফসা নিষেধ জানায়।
চলে আসে রিদি।
পরশের সাথে পা রাখে নতুন জীবনমাত্রায়।
পা ফেলে সঠিক ঠিকানায়….
অল্প সময়ের মাঝেই রিদি আর পরশ তাদের বাসায় পৌঁছে যায়।
সারা বাড়ী রঙীন রূপ ধারণ করেছে…কিন্তু নতুন বউ যে এসেছে-তাঁর কোনো আমেজ পাওয়া যাচ্ছে না।
বুক টা অজানা কোনো ভয়ে ধুক করে উঠে রিদির।
গাড়ি থেকে নেমে পরশ রিদির পাশের দরজ টাও খুলে দেয়,
নেমে আসে রিদি।
ভাইবোনেরা ছোট খাটো একটা জটলা করছে,নতুন বউয়ের পাশে।
পরশ রিদির হাতটা ধরে এগিয়ে যাচ্ছে,এক পা দু পা করে……..
মনের সমস্ত ভয় ঢেকে রিদিও পা বাড়ায় জীবনের নতুন আঙীনায়…………….
প্রেমঘোর পর্ব ৯৩+৯৪
আর অন্য দিকে নৌশিন তো হসপিটালের কেবিনেই সাদাদের বুকে হামলা শুরু করেছে।
সবাই চলে আসার পর,সাদাদের বুকে ইচ্ছা মতো কিল,ঘুষি দিয়েছে।
যদিও সব ফুলের টোকার মতো!!!!
কারণ নৌশিনের যা শক্তি,,,,,