এলিজা পর্ব ৭৯+৮০

এলিজা পর্ব ৭৯+৮০
Dayna

এলিজা অপূর্ব কে দেখে হকচকিয়ে উঠে।এত রাতে ঝোপঝাড় এ অপূর্ব কি করছে।সে কি করতে চাইছে‌।এলিজা নিচে চলে আসে।এলিজা নিচে এসে দেখলো,দরজা আগে থেকেই খোলা।এলিজা অপেক্ষা করছে। তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় অপূর্ব।এলিজাকে উপেক্ষা করে যেতেই,এলিজা ভাঙা গলায় বললো , ঝোপঝাড় এ কি করছিলেন? অপূর্ব আর চোখে এলিজা কে দেখে ঘরে চলে যায়।এলিজা পেছন পেছন গেলো। অপূর্ব হাত মুখ ধুতে বাথরুমে প্রবেশ করে।এলিজা অপেক্ষা করছে। অপূর্বর অদ্ভুত আচরন এলিজাকে শেষ করে দিচ্ছে।এলিজা ঘরের ভেতর পায়চারি করতে থাকে। অপূর্ব বের হয়।এলিজা শান্ত হলো,সান্ত স্বরে বলল,কি করছিলেন ঝোপঝাড়ে?তিনতলার , পূরোনো স্টোর ঘরে কি করছিলেন? অপূর্ব এলিজার বা হাতের কব্জি শক্ত করে ধরে বললো,সেই কৈফিয়ত আমি তোমাকে দেবো না। আমার আশেপাশে সারাদিন ঘুরঘুর করছো কেন! আমার চোখের সামনে এসো না!

অপূর্বর জোড় ভ্রুর,রক্ত মাখা চোখে মায়ার স্থান ছিলো। কিন্তু আজ সেখানে ঘৃনা দেখতে পাচ্ছে। অপূর্ব এলিজা কে ছিটকে দূরে সরিয়ে দেয়। অপূর্ব বিছানায় শুয়ে পরে। ভেজা তোয়ালে টা বিছানার উপর রাখা।এলিজা ভেজা তোয়ালে টা বারান্দার দড়িতে রাখে। অপূর্ব উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে সুয়ে আছে।এলিজা ভাঙা গলায় বললো , রাতে খাবেন না? অপূর্ব বললো,খিদে নেই।
এলিজা ভাবছে,
আপনাকে এরকম অবস্থায় দেখতে আমার ভালো লাগছে না।ভেতরটা দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে। নিজের যত্ন নিতেও ভুলে যাচ্ছেন আপনি।কি করে বোঝাবো ,আপনিহীন আমি যে নিঃস্ব।
হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখের পানি মুছে এলিজা। অপূর্বর পাশে সুয়ে পরে। অপূর্বর বা দিকের, উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে সোয়। অপূর্বর ঘৃণিত চাহনি,কর্কট মেজাজ , অদ্ভুত কাজ কর্ম এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে এলিজার মাথা বেথা শুরু হয়। রাত বেড়ে চলেছে।এলিজার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।শরীরের যন্ত্রণায় ঘুম নেই চোখে।
অপূর্ব ঘুমাচ্ছে না।ঘার ঘুরিয়ে এলিজাকে একবার পরোখ করলো।এলিজা কাঁপছে। অপূর্ব উঠে বসে।এলিজার মাথায় হাত দিয়ে তাপমাত্রা পর্যবেক্ষন করলে দেখে,এলিজার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। অপূর্ব হকচকিয়ে উঠে।কি করবে বুঝতে পারলো না।এলিজার ক্লান্তি মুখ,দেখে অপূর্বর ভেতরে জ্বলছে। অপূর্ব ঘুম থেকে উঠে নিচে যায়।একটা বাটিতে পানি নেয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এলিজার ডান পাশে বসে,এলিজার মাথায় জ্বলপট্টি দিয়ে দেয়। এলিজা ঘুমোয়নি, অপূর্বর কার্যক্রম অনুভব করছে।এলিজা শান্তি অনুভব করলো।মনে মনে ভাবলো,ঘৃনা জন্মেছে ঠিক’তবে ভালোবাসা টা কমে যায়নি।তবে কেন, আমার না বলা কথা গুলো শুনছে না। অপূর্ব জলপট্টি দেয়া শেষ করে।এলিজার গাঁয়ে চাঁদর দিয়ে দেয়। অপূর্ব বেশ কিছুক্ষণ এলিজা কে পরোখ করে উঠে দাড়ায়। টেবিলে রাখা ‘দ্যা মার্ডা,র’ বইটি হাতে নেয়।মনে মনে বইটি পরতে থাকে। এলিজা পরোখ করলো।কি আছে ঐ বইতে,কি করবে ঐ বই দিয়ে,কি করতে চাইছে সে,এসব ভাবতে ভাবতে এলিজা ঘুমিয়ে পরে।
সকাল ৮ টা নাগাদ।

শ্রাবন পাখির কাছে বসে আছে।পাখি ঘুমোচ্ছে।শ্রাবনের বুকের ভেতর কুহ ডাকছে। চারদিক নিশ্চুপ হয়ে আসছে।কোথাও কিছু একটা হবে। আশঙ্কা পাওয়া যাচ্ছে। সবকিছু অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে ‌। এরকম অনুভুতি হওয়াতে শ্রাবন বসা থেকে উঠে দাড়ায়।পাখির দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বাহিরে বের হয়।ভরা জ্যাম,কাকের আনাগোনা,গরমের কিছুটা আহভাস হয়েছে।শ্রাবনের দৃষ্টি অস্থির। এরকম অনুভুতির ব্যাখ্যা শ্রাবন পাচ্ছে না। শ্রাবন আশেপাশে পরোখ করলে চোখ পরে রাস্তার উল্টো পাশে। শ্রাবন ভ্রু কুঁচকে দেয়। শ্রাবন দেখলো সূর্য কে। একজন পুলিশ অফিসার এর সাথে কথা বলছে।তবে পুলিশ অফিসার টা উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে।কে সে বোঝা যাচ্ছে না ‌।কি বলছে সূর্য! শ্রাবন রাস্তার ওপার যাওয়ার মনস্থির করলো। কিন্তু ভরা জানজটের আশরে যেতে পারলো না। শ্রাবন দেখলো, সূর্য এবং অফিসার টা কথা বলতে বলতে দক্ষিন দিকে চলে যায়।

শ্রাবন বেশ অনেকক্ষন পরোখ করলো।শ্রাবনের খটকা লাগলো। শ্রাবন ভাবনা উপেক্ষা করে, হাসপাতালের ভেতরে চলে আসে। শ্রাবন হাঁটতে হাঁটতে এদিক সেদিক পরোক্ষ করলো। ডাঃ ইব্রাহিম কে দেখতে পায়,তার চেম্বারে বসে আছে।তবে সে গভির চিন্তায় আহরন করছে। শ্রাবন বুঝতে পারলো ,তার মনের ভেতর অস্থিরতা। শ্রাবন পাখির কাছে চলে আসে।পাখি ঘুম থেকে উঠে বসে আছে।পাশে বসা নার্স। শ্রাবন কে দেখে নার্স চলে যায়। শ্রাবন পাখির চোখ মুখ পরিষ্কার করে দেয়।পাখি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।পাখি ভাঙা গলায় বললো,একটা কথা বলবো! শ্রাবন মৃদু হেসে বললো,একটা কেন হাজার টা বলো।আমায় কিছু বলার জন্য অনুমতি নিতে হবে না।

পাখি ভেজা কন্ঠে বললো,আমি ৬ মাস বেঁচে থাকবো এটা জেনেও কেন আমায় বিয়ে করলেন!
শ্রাবন কাট গলায় বললো, ভালোবাসা সময়কেও হার মানায়’ মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয়ে সারাজীবন না পূড়ে’সত্যিকারের ভালোবাসার ৬ মাস’পরবর্তী জিবন টাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।
পাখি অপলকে শ্রাবন কে দেখছে।
শ্রাবন ভাবছে,আমি হয়তো, তুমিহীনা বেঁচে থাকতে পারবো না ।

এলিজা ঘুম থেকে উঠে। শরীর খুব একটা ভালো নয়। আশেপাশে অপূর্ব নেই।এলিজা আগ্রহ নিয়ে বইটি দেখে।বইটি হাতে নিয়ে পরোখ করতে থাকে। এলিজা দেখলো , এগুলো সেই বই যা,বড় বড় কি,লারদের দরকার পরে।এই বই চিপস ডুপিয়ালির কাছে দেখেছে।এই বই দিয়ে উনি কি করছেন।এলিজা ভাবনা উপেক্ষা করে।হাত মুখ ধুয়ে নেয়।রান্না ঘরে চলে আসে। তৎক্ষণাৎ মনজুরা বললো,বউমনি আপনাকে বড়দাদা বাবু চা নিয়ে যেতে বলেছেন। এলিজা মৃদু হেসে হ্যা সুচক মাথা নাড়ে।চা নিয়ে যায় জাহাঙ্গীর এর ঘরে। জাহাঙ্গীর বারান্দায় উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। জাহাঙ্গীর এর চোখ মুখে অনুশোচনা।

এলিজা নরম গলায় বললো, আপনার চা। জাহাঙ্গীর এলিজার দিকে হালকা ঘার ঘুরালো। এলিজা ঘর থেকে চলে আসতেই , জাহাঙ্গীর নরম গলায় বললো, মালাইকা!এলিজা থমকে দাড়ায়। গম্ভীর মুখে জাহাঙ্গীর এর দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে। জাহাঙ্গীর অনুশোচনা মূলক কন্ঠে বললো,আমি জানি আমি যা পাপ করেছি এর কোন ক্ষমা নেই।আমি একটা পরিবার কে ধ্বংস করে দিয়েছি‌। নিজের বন্ধুকে ঠকিয়েছি। জাহাঙ্গীর এর চোখে পানি। এলিজা থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। জাহাঙ্গীর ভেজা কন্ঠে বললো,পারলে আমায় ক্ষমা কর। না,হয় তোর অভিশাপ থেকে আমাকে মুক্ত দে‌।আমি যে, পাপের দগ্ধে পূরে যাচ্ছি।আমি জানি তোর অভিশাপে,আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি।মন থেকে হয় ক্ষমা কর,না হয় আইনের হাতে আমাকে তুলে দে‌।তারা আমায় যা খুশি শাস্তি দিক।আমি তোর কাছেই, আমার মৃত্যু চাইতাম, কিন্তু যে হাত দিয়ে তোর অবুঝ দেহখানী বুকে জড়িয়েছি,সেই বুকে তোর আঘাত লাগলে যে, মৃত্যুর যন্ত্রনার থেকেও বেশি কষ্ট হবে।

এলিজা কাঁপা কন্ঠে বললো,আমি আপনাকে সেদিন ই ক্ষমা করে দিয়েছি,যেদিন থেকে আপনার ছেলেকে ভালবেসে ফেলেছি। আমার আপনার উপর কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু আজ আপনার ভুলের জন্য,আমি যে মৃত্যু খেলা বেঁচে নিয়েছি,তা হয়তো কখনো বন্ধ হবে না। জাহাঙ্গীর এলিজার কথায় ঘৃনা দেখতে পেলো। ক্ষমা করেছি,এটা শুধু শব্দ মাত্র। কিন্তু মন থেকে এলিজা ক্ষমা করতে পারেনি।
এলিজা জাহাঙ্গীর এর ঘর থেকে বের হয়ে আসে।মনোরা বললো,বউমনি মেহমানদের খাবার তৈরি করবেন না?
এলিজা মৃদু হেসে বললো,এখনি করবো। আপনি সব কেটে,ধুয়ে গুছিয়ে দেন।এলিজার হঠাৎ মনে পরলো অপূর্বর কথা। এলিজা চিন্তিত ভঙিতে মনোরাকে উদ্যেশ্য করে বললো, তোমার ছোট দাদাবাবু কোথায় গেছে! দেখেছো!বা বলেছিলো কিছু!

মনোরা শাক কাটতে কাটতে বললো, সকালে থানা থেকে ফোন আসে। তারপর ই বেড়িয়ে যান‌।তবে তার চোখ মুখে চিন্তার ছাপ ছিল।
মনোরার মুখে এই কথা শুনে এলিজা চিন্তায় পরে যায়।
সমস্ত ডিপার্টমেন্ট থেকে অফিসার- রা এসেছে।ঢাকা হাইকোর্ট এ মিটিং হবে। সেখানে থাকবে কমিশনার,সহ সমস্ত অফিসার। উপস্থিত থাকবে সি আইডি টিম।প্রধান অতিথি থাকবে, আইনমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। অপূর্ব কিছুটা অবাক হয়,এত জরুরি কিসের মিটিং।সবাইকে ডাকা হয়েছে।কোন গুরুত্বপূর্ণ কেস নয়তো।
সবাই মিটিং এ উপস্থিত হয়। অপূর্ব ডিসি সাহেব কে বললো,স্যার মিটিং টা ঠিক কি নিয়ে হচ্ছে?

ডিসি সাহেব বললো,আমরাও ঠিক জানি না। আইনমন্ত্রী তোফায়েল শুনেছি কিছু বলবেন,কোন কেস নিয়ে। তৎক্ষণাৎ আইনজীবী তোফায়েল আহমেদ হাতে মাইক্রোফোন -ট নেয়।বেশ কিছুক্ষণ বিভিন্ন কেস নিয়ে কথা বলে, এবং কিভাবে কোন কেস সমাধান করেছে,কতটা সময় লেগেছে সে সব কিছু বলছে। তৎক্ষণাৎ তোফায়েল আহমেদ বলে উঠলো, বর্তমানে একটা কেসে আমরা পিছিয়ে আছি।তা হলো, যুবক ছেলেদের কিড,ন্যাপ করে ওদের হ,ত্যা করা।আমরা এখন পর্যন্ত এই কি,লার কে ধরতে পারছি না।তবে,এই কিলা,র কে যে,বা যারা ধরতে পারবে তাকে,৫ কোটি টাকা দেয়া হবে। অপূর্ব এই কথা শুনে, হকচকিয়ে উঠে। মেরুদন্ড সোজা করে বসে। তৎক্ষণাৎ আবার শান্ত হয়ে মনে মনে বললো, আপনা,র চৌদ্দ গুষ্টি খুঁজলেও পাবে না।কারন সে যে, মালাইকা সিকদারিনী ‌।

মিটিং শেষে সবাই বেড়িয়ে পরে। ডিসি সাহেব বললো, অপূর্ব তুমি ইদানীং এই কেসটাকে কোন গুরুত্ব দিচ্ছ না কেন! তুমি কি হাল ছেড়ে দিয়েছো! অপূর্ব মৃদু হেসে বললো, যাকে এত বছরেও পাওয়া যায়নি তাকে এখন ও পাওয়া যাবে না। আমার তো মনে হয়,যে এসব করছে সে কোন বাংলাদেশী নাগরিক নয়।
এবং অনেক দিন থেকেই দেখছি,এই মৃত্যু খেলা কম হচ্ছে। আশাকরি আর হয়তো করবেও না।ডিসি সাহেব কৌতুহল নিয়ে বললো,এত নিশ্চিত কি করে হচ্ছো,যে আর হবে না? অপূর্ব অন্যদিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বললো, আমার ধারনা কখনো ভুল হয়না স্যার। আজকের আইনমন্ত্রীর ভাষন ,কিলা,দের মধ্যে কেউ না কেউ তো শুনেছে‌।এটা শোনার পর হয়তো নিজেকে গুটিয়ে নিবে।

।ডিসি সাহেব অপূর্বর কথায় সহমত জানায়। অপূর্ব মনে মনে বললো, যার কোমল হাতের ছোঁয়া, আমার প্রতিদিনের অভ্যাস’ তার হাতে হাতকড়া কখনো ই পরাতে পারবো না।তবে এই মৃত্যু খেলা আমি বন্ধ করবো।
রাত প্রাই ৯ টা– অপূর্ব বাসায় ফিরতে না ফিরতেই ফোন আসে, কনস্টেবল এর। অপূর্ব ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে কনস্টেবল বলে উঠলো,স্যার ডিসি সাহেব কে, আজকে কেউ বাহারতলা গলি থেকে জোর পূর্বক গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গেছে।গাড়ির রং টা কালো ছিল। অপূর্ব সম্পূর্ণ ভাবে হতভম্ব হয়ে যায়। অপূর্ব তৎক্ষণাৎ সন্দেহ করলো এলিজাকে।দ্রুত পায়ে এলিজার কাছে যায়। অপূর্ব দেখলো এলিজা ঘরে বসে অর্পার সাথে কথা বলছে। অপূর্ব আহত দৃষ্টিতে তাকায় এলিজাকে পরোখ করে বললো,বাহিরে এসো কথা আছে‌।এলিজা হকচকিয়ে উঠে। এলিজা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,কি হয়েছে আপনার চোখ মুখে চিন্তার ছাপ কেন? অপূর্ব অর্পাকে উপেক্ষা করে বললো,ডিসি সাহেব কোথায়? এলিজা ভ্রু কুঁচকে বললো,কোন ডিসি সাহেব? অপূর্ব রক্ত মাখা চোখে বললো,আবরাম হোসেন, সৈকতের বাবা। আমাদের ডিসি সাহেব! কোথায় উনি?

এলিজা অবাক ভঙ্গিতে বললো,আমি কি করে জানবো?সে কোথায় আমি জানি না। অপূর্ব কর্কট মেজাজে বললো,সত্যি বল!
এলিজা কিছুটা কর্কট স্বরে বলল, সত্যিই আমি কিছু জানি না।
অপূর্ব তৎক্ষণাৎ উচ্চ স্বরে ঘৃনিত কন্ঠে বলল, মিথ্যা বাদি, ছলনাময়ী,আর কত মিথ্যে বলবি!বলেই ঠাস করে এক থাপ্পর দিয়ে এলিজাকে মেঝেতে ফেলে দেয়।এলিজার চিকচিক করা ফর্সা গাল নিমিষেই লাল হয়ে যায়। এলিজা উপর হয়ে পরে যায়। চুলের বেনুনিটা ,মুখের সামনে চলে আসে।পরনে লাল শাড়ির সাথে, চিকচিক করা গাল নিমিষেই লাল হয়ে যায়।
অপূর্ব পুলিশ পোষাক পরিধান অবস্থায় ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।অর্পা হতভম্ব হয়ে যায়।ভয়ে চাপসে গেছে অর্পা।

এলিজা গালে হাত দিয়ে অঝরে কাঁদছে।নিয়তি আজ কোথা থেকে কোথায় নিয়ে এসেছে, কেউ আমার শরীরে আঘাত করলে , তাকে এফোঁড়ওফোঁড় করে দিতে যার বাদ্ধ না।সে কি না ,আজ আমাকে ভুল বুঝে আমাকে মারলো।
অর্পা এলিজার কাছে যায়। এলিজার ফর্সা গালে রক্ত উঠে যায়।অর্পা তার ভাইয়ের এরকম রুপ দেখে অবাক হয়ে যায়।
অপূর্ব গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে সূর্যর উদ্দেশ্যে। অপূর্ব নিশ্চিত যে সূর্য ই ডিসি সাহেব কে কিড,ন্যাপ করেছে। অপূর্ব দ্রত গতিতে গাড়ি চালায়।গাড়ি থামে সূর্যেদের বাড়ির সামনে। অপূর্ব দ্রুত পায়ে ভেতরে প্রবেশ করে। অপূর্ব এদিক সেদিক পরোক্ষ করে দেখলো কোথাও কেউ নেই। তৎক্ষণাৎ আওয়াজ আসে, উপরের ঘর থেকে, অপূর্ব দ্রুত পায়ে উপরে উঠে। অপূর্ব দেখলো , সূর্যের ঘরের সামনে একাধিক জুতো ।ঘরের দরজা খোলা, অপূর্ব ভেতরে প্রবেশ করে দেখলো, সূর্য, হিমেল, এবং সূর্যের বাসার সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে ‌‌।ডিসি সাহেব কে, লুকিং রেখে এখানে বসে ফুর্তি করা হচ্ছে,কর্কট মেজাজে এসব ভাবতেই, অপূর্ব সূর্যের কলার চেপে ধরে।সবাই হঠাৎ অপূর্বর উপস্থিতিতে হকচকিয়ে উঠে।সবাই বসা থেকে দাড়িয়ে যায়। সূর্য আর চোখে বললো,কি করছিস তুই? কি হয়েছে বলবি তো!

অপূর্ব রক্ত মাখা চোখে বললো,ডিসি সাহেব কোথায়? সূর্য ভ্রু কুঁচকে বললো, মানে? সে কোথায় আমি জানবো কিভাবে!
অপূর্ব মেজাজের স্বরে বলল,ডিসি সাহেব কে,কেউ অপহরণ করেছে,আর আমি নিশ্চিত এটা তুই অথবা তোরা ছাড়া কেউ করেনি।মানছি সে, একসময় অপরাধ করেছে।তাই বলে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারিস না।আর,এই নির্মম খেলা খেলিস না। সূর্য অপূর্বর হাত চটকে সরিয়ে বললো,কখন থেকে উল্টো পাল্টা বকছিস।আমরা তাকে অপহরণ করিনি।তোর বিশ্বাস না হলে,এইতো মা আছে,মাকে জিজ্ঞেস কর।আজ সারাদিন আমরা ঘরেই ছিলাম। অপূর্ব বিষিন্নত হয়ে যায়। বুকের ভেতর ধুকবুকানি বেড়ে যায়। সূর্য অপূর্বর কানের কাছে এসে বললো,, বিশ্বাস না হলে আমাদের দুটো আস্তানার দুই জায়গায় খুঁজে দেখতে পারিস। অপূর্ব সূর্যের কথা বিশ্বাস করলো।কারন, সূর্য সারাদিন বাসায় না থাকলে, এখন ওর মা বলে দিতো‌।

অপূর্ব স্থান ত্যাগ করে। বাড়িতে চলে আসে। অপূর্ব সমস্ত ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেয়। ইউনিফর্ম পরেই,বসে পরে বৈঠকখানায়।শার্টের বোতাম খুলে, মাথা পেছনে সোফার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। রাত ১১:৩০। অপূর্ব অনুভব করলো এলিজা আসছে। অপূর্ব চোখ বড় করে তাকায়। এলিজা অপূর্ব কে উপেক্ষা করে রান্না ঘরে চলে যায়।জগে করে পানি নেয়। অপূর্ব এলিজার দিকে পরোখ করছে।লাল শাড়ি,চুল গুলো বেনুনি, লম্বা টে শরীর,ভি-কার ধুতনি,মায়াবী চোখ মিলিয়ে বড্ড সুন্দরী দেখাচ্ছে। এলিজা পানির জগ টা হাতে নিয়ে অপূর্বর কাছে আসে,কাপা ঠোঁটে বললো,আমি টেবিলে খাবার দিয়ে দিয়েছি।খেয়ে নিবেন।এলিজার দৃষ্টি সংযত। অপূর্ব একবার এলিজার দিকে পরোক্ষ করলো।এলিজার বা গাল লাল হয়ে আছে। অপূর্ব দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। এলিজা উপরে চলে যায়। এলিজা ভেতরে ভেতরে মরে যাচ্ছে। অপূর্বর দেয়া শরীরের আঘাতের চেয়ে,ঘৃনিত চোখের চাহনির দর্পন দ্বিগুণ বেদনাদায়ক। এলিজা ভাবলো, একবার জিজ্ঞেস ও করলো না আমি আমার লেগেছিল কিনা। এলিজা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।পানির জগ টা টেবিলে রেখে।খাটের এক কোণে বসে কাঁদছে।

অপূর্ব ঘরে আসে। এলিজা কে উপেক্ষা করে আলমারি থেকে পাঞ্জাবি, পাজামা বের করে। বাথরুমে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পর গোসল করে বের হয়। কাঁদে তাওয়াল টা বিছানার উপরে ফেলে দেয়।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুল গুলো হাত দিয়ে উপরে দর্পন করছে।পরনে সাদা পাঞ্জাবি,সাদা পাজামা, জোর ভ্রু,ফর্সা দেহ খানি। এলিজা আর চোখে অপূর্ব কে দেখছে। অপূর্ব ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। এলিজা অপূর্বর যাওয়ার পানে দেখে। এলিজা মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে।অঝরে কাঁদতে শুরু করে। এলিজা ভাঙা গলায় বললো,কি করে বোঝাবো আমার ভেতরের অনুভূতি গুলো।কি করে বোঝাবো,যে আমি তাকে সত্যিই ভালোবাসি। এলিজা চোখ মুছে উঠে দাড়ায়।মনস্থির করলো, অপূর্বর সঙ্গে আজ কথা বলবেই,সে কি চায় তা আজ তাকে বলতেই হবে‌। এলিজা ঘর থেকে বের হয়। নিচে আসে কিন্তু ,অপূর্ব নিচে নেই।এলিজা এদিক সেদিক পরোক্ষ করে, কোথাও নেই‌। এলিজা দেখলো, ঘরের দরজা খোলা ‌‌।

এলিজা বাহিরে বের হয়। চারদিক নিশ্চুপ ‌‌।দূরে দু একটা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। হালকা শীতল হাওয়া বইছে। চাঁদনির আলোয় উদ্ভাসিত চারদিক ‌। আশেপাশে এলিজা পরোক্ষ করলো, কোথাও অপূর্ব নেই ‌। এলিজা বাড়ির গেট অতিক্রম করে এগিয়ে যায়। কোথাও নেই ‌‌। হঠাৎ এলিজার চোখ পরে জয়ার কবরের দিকে ‌। এলিজা দেখলো অপূর্ব জয়ার কবরের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।, এলিজা ধির পায়ে অপূর্বর কাছে এগোয় ‌। অপূর্ব উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে ‌। এলিজা খেয়াল করলো, অপূর্বর ডান হাত থেকে রক্ত পরছে ‌। ধবধবে সাদা হাত,র’ক্তে লাল হয়ে আছে। এলিজা বুঝতে পেরেছে এলিজা কে আঘাত করে অপূর্ব নিজেই এলিজার থেকে বেশি আঘাত পেয়েছে ‌। এলিজা নরম গলায় বললো,আমায় আঘাত করে নিজেকেই নিজে কষ্ট দিয়েছেন ! অপূর্ব চুপ করে আছে। অপূর্বর চুপ করে থাকা এলিজার সহ্য হচ্ছে না।

এলিজা জ্বলজ্বল চোখে কাঁপা কন্ঠে আওয়াজ করে বলল, কি চাইছেন আপনি?কেন এরকম করছেন!! আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আপনার সাথে হতো, তবে আপনি কি করতেন?কেন আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন? আমার বুকের ভেতর টা দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে! আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ‌!আমি ভুল করেছি! আমি অন্যায় করেছি! একটা প্রানের বিনিময়ে হাজার টা প্রান নিয়েছি! এলিজা অঝরে কাঁদছে।এলিজার কান্নায় চারদিক থমকে যাচ্ছে। প্রকৃতি ও হা,হাকার করছে। কোথাও থেকে কালো ধোঁয়া ধেয়ে আসছে ‌। এলিজা কাঁপা গলায় বলল,” আমার দিক থেকে থেকে মুখ ঘুরিয়ে না থেকে ‘ আপনি নিজের হাতে আমাকে শেষ করে দিন’। আপনি বললে,ছু,রি দিয়ে আমি আমার হ্রদয় টাকে নিজের হাতে,আপনাকে দিয়ে দিতে পারবো।সেই কষ্ট ও আমার সহ্য হবে ‘কিন্তু আপনার কর্কট মেজাজ, অবহেলা আমাকে শেষ করে দিচ্ছে। আমি পাপি,আমি অপরাধী। আপনি নিজের হাতে আমায় শেষ করে দিন‌।

যদি আমার বুকে ছু,রি চালাতে আপনার কষ্ট হয়।তবে আপনি একবার বলুন,আমি নিজেকে আইনের হাতে তুলে দিচ্ছি।তারা আমাকে শাস্তি দিক‌।
কথা গুলো শেষ করতে না করতেই, অপূর্ব দ্রুত পায়েএলিজার দিকে ঘুরে এলিজাকে আঝাপটা দিয়ে জড়িয়ে ধরে। এলিজার হৃদয় কেঁপে উঠে। অপূর্ব ভাঙা গলায় কান্না জড়িত কন্ঠে বললো,আমি তোমাকে আঘাত করে নিজেই মরে গেছি।যেই হাত দিয়ে তোমায় আঘাত করেছি সেই হাত পুড়ে যাক”! আমি তোমাকে ভালোবাসি। নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি।তোমাকে ছাড়া আমার থাকতে বড্ড কষ্ট হয়। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো ও না। অপূর্ব শক্ত করে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলো এলিজাকে ।এলিজা শান্তি অনুভব করলো‌। অপূর্বর বুকে কতদিন পরে,তার মোহময়,শান্তিময় স্থানে মাথা রাখতে পেরেছে ‌‌। এলিজা শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। অপূর্ব কাঁপা ঠোঁটে বললো, তুমি অপরাধী ‘তুমি পাপি’তুমি পাপের রানি’হৃদয়হরন -কারি’তুমি যত বড়ই পাপী হওনা কেন’আমার যে তোমাকেই লাগবে। অপূর্ব এলিজাকে জড়িয়ে ধরে অঝরে কাঁদছে ‌।এলিজার বুকের ভেতর ধুকবুকানি বেড়ে গেছে। অপূর্বর কান্নায়, চারদিক নিশ্চুপ হয়ে গেছে।আকাশটা কালো মেঘে ঢেকে গেছে‌‌।

অপূর্ব এলিজার দুই গাল আলতো করে ধরলো‌।,এলিজা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। অপূর্ব কাঁপা ঠোঁটে এলিজার গালে চুমু খেয়ে বললো,আমি এই পাপিটাকে নিয়েই সারাজীবন থাকতে চাই। অপূর্ব হাটুঘেরে বসে এলিজার পা জড়িয়ে ধরে বুক ফাটা কান্না স্বর নিয়ে বললো,হেরে গেছি আমি, আজকে আমার আইনের কাছে হেরে গেছে,আমি পারলাম না তোমার হাতে হাতকড়া পরাতে! আমার দায়িত্ব আজকে হেরে গেছে। আমার আইন ,হেরে গেছে, ভালোবাসার আদালতের কাছে‌।অপূর্ব দ্রুত উঠে দাড়ায়।দু হাত দিয়ে চোখ মুছে অস্থির কন্ঠে বললো, তুমি তোমার এই পাপের খেলা , মৃত্যু খেলা,পাপের সম্রাজ্য, সবকিছু ছেড়ে দাও।আমরা অনেক দূরে চলে যাবো।যেখানে থাকবে না কোন পাপ,যেখানে থাকবে না কোন মৃত্যু খেলা,যেখানে আমাদের কেউ পাবে না। তুমি আমায় কথা দাও, অপূর্ব এলিজার হাত নিজের মাথার উপর রেখে, কাঁপা গলায় বলল, এই আমাকে ছুয়ে কথা দাও, তুমি সবকিছু ছেড়ে দিবে। নিজকে আমার জন্য গুটিয়ে নেবে, কথা দাও কোনদিন আমাকে ছেড়ে যাবে না,কথা দাও। এলিজা অপূর্ব কে জড়িয়ে ধরে বললো,আমি কথা দিচ্ছি আমি আজ থেকে পাপের খেলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম। আমি আর মৃত্যু খেলা খেলবো না। আমি আপনাকে ভালোবাসি, কোনদিন আপনাকে ছেড়ে যাবো না।যতদিন পর্যন্ত আমার দেহে প্রান আছে, ততদিন পর্যন্ত আপনার বুকে মাথা রেখে থাকতে চাই। আপনার সাথে চাঁদনী রাতে পাশাপাশি সারাজীবন হাঁটতে চাই।

দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে। এলিজা আজ খুব শান্তি পাচ্ছে। কতদিন পর,তার প্রান প্রিয় স্বামির শরীরের স্নিগ্ধ, শোভন, তৃপ্তিময় গন্ধ পাচ্ছে।
রাত ১২ টা নাগাদ —
অপূর্ব এলিজা কে শান্ত স্বরে বললো,ক্ষমা করে দাও, অনেক টা অবহেলা করেছি। কিন্তু তোমাকে অবহেলা করে,নিজেই নিজের সুখের কাছে অবহেলিত হয়েগেছি।
এলিজা শান্তিময় হাসি দিয়ে বলল, আপনার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী ‌। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। অনেক অন্যায় অবিচার করেছি।
অপূর্ব এলিজার কপালে চুমু খায়। মৃদু হেসে বললো, চাঁদনীর আলোয় চারদিক আলোকিত।এই ঝলকে,আমরা পাশাপাশি হাটবো। চলো –
এলিজা চোখ মুছে বললো, কোথায়? অপূর্ব বললো অজানা পথে‌।এলিজার গাল অপূর্বর হাতের রক্ত লেগে লাল হয়ে আছে। অপূর্ব গাল মুছে দিয়ে বললো,তোমাকে আঘাত করার পর, তোমার রক্ত মাখা গাল দেখে,দেয়ালের সাথে ঘুষি মেরে নিজের হাতে ,নিজেই আঘাত করেছি। নিজের হাত নিজেই রক্তা,ক্ত করেছি।এলিজা কাঁপা ঠোঁটে অপূর্বর হাতে চুমু খায়।

এলিজা অপূর্ব দুজনে মিলে অজানা পথে হাঁটছে। দুজন দুজনার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে । দু’জনে মিলে উপভোগ করেছে চাঁদনী রাত।
অপূর্ব এলিজার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে,মনে মনে ভাবলো, তুমি কি সত্যিই আমায় ভালোবাসো! তুমি কি সত্যিই তোমার পাপের সম্রাজ্য ছেড়ে দিতে পারবে‌‌। আমার যে ভয় হয়,যদি না তুমি পাল্টে যাও।এই ভালোবাসা কি সত্যি নাকি ক্ষনিকের অভিনয়। অপূর্ব এসব ভাবতে ভাবতে এলিজাকে শক্ত করে ধরে। অপূর্ব মনে মনে বললো, তোমাকে হারানোর ভয় হয় যে…
শ্রাবন বসে আছে পাখির কাছে। পাখি ঘুমোচ্ছে। শ্রাবন পাখির কাছে বসে বসে ফোপাচ্ছে,পাখিকে হারানোর ভয় প্রতিদিন উৎফুলিত হয়।
শ্রাবন বিরবির করে বললো, তোমাকে হারানোর ভয় হয় যে।

সূর্য রঞ্জনার কবরের কাছে বসে আছে।বিরবির করে বলছে,কেন ছেড়ে গেলে আমায়,কেন এভাবে পোড়ালে‌,আজ বেঁচে থেকেও মরে যাচ্ছি। আমি যে ব্যার্থ,তোমাকে পেয়েও পায়নি।
মিরা বসে আছে সায়ানের কবরের কাছে।সায়ানের ছবিটি নিয়ে। এলোমেলো চুল।মাটি মাখা দেহ। ভাঙা গলায় ফিসফিস করে বলল,কেন ভালোবাসলে না আমায়।আমায় ভালোবাসলে কি হতো!

এলিজা পর্ব ৭৭+৭৮

নিয়তি আজ কোথা থেকে কোথায় নিয়ে এসেছে।কেউ পেয়েও হারানোর ভয় করছে।কেউ না পাওয়ার বেদনায় ছটফট করছে।কারো, পূর্নতার কাছ থেকেও বিচ্ছেদ হয়েছে।কেউ তার কর্মের জন্য তার প্রিয় মানুষ টিকে হারাচ্ছে।
নিয়তি আবার এক করেছে।
কিন্তু এখানেই কি সবকিছু শেষ!নাকি অপেক্ষা করছে নির্মম পরিহাস,নাকি অপেক্ষা করছে সুখের উৎচাস।
কি হবে এর শেষ পরিনতি…..

এলিজা পর্ব ৮১+৮২