প্রেমঘোর পর্ব ১০৯+১১০
নার্গিস সুলতানা রিপা
সাদাদ-নৌশিনের ছোট্ট রাজকন্যা একটু একটু হাঁটতে শুরু করছে।
গুটিগুটি পায়ে রোমের মধ্যে পায়চারী করতে পারে আজকাল।
প্রাপ্তি রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেলো এবার।
মাসে দু-বার ছোটে আসে এই পিচ্চির জন্য।
সাদাদ তো তাঁর রাজকন্যা বলতে পাগল।নৌশিনেরও একই অবস্থা।মেয়ে চোখের আড়াল হলেই প্রাণ যায় যায় অবস্থা।
বলতে গেলে পুরো বাড়ির প্রাণ ভোমড়া ‘রাইসা বিনতে সাদাদ’।
আধোআধো বুলিতে এক বছরের ছোট্ট পুতুল টা সবাইকে জাদু করে রেখেছে।
সবাইকে অনুকরণ করে।
যে যা করে তাই সে করতে চায়।অরূপের পড়ার সময় পাশে বসলে খাতা কলম হাতে নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে।মানানো যায় না।বাধ্য হয়ে অরূপ মাঝে মাঝে এমন সুন্দর নাদুস-নুদুস গালে দেয় থুথনী।
আর এমনি জেমম্মা জেমম্মা বলে কাঁন্না শুরু করে রাইসা।
সাদাদ সেফ করছে পাশে বসে রাইসা খুব সুন্দর করে দেখছে।দাঁড়ি তো কাঁটে না সাদাদ শুধু গোঁফ।
তাই তাঁর মেয়ে আরোপ্ত করছে।
নৌশিন রোমে ডোকে বাপ বেটির কান্ড দেখে মোটামোটি রেগে গেলো।
বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“সাদাদ!!!তোমাকে কতবার না বলেছি,ওর সামনে সেফ করো না।বাথরোমে করলে কি হয়??ও দেখো আরেক দিন নিজে নিজে সেফ করবে……তখন গাল-টাল কেঁটে গেলে দেখবো কেমন হয়!!!……”
“আমমমম……আমমমমম……”
আম্মু ঠিকঠাক বলতে পারে না রাইসা।জেমম্মা,বাবাই আর দাদা এই তিনটা শব্দ খুব স্পষ্ট বলতে পারে ও।
“আমমমম…..আমমম….”
হাত দুটো উপরে তুলে নৌশিনের দিকে এগিয়ে আসতে চাইছে।
নৌশিন খুশিতে গদগদ হয়ে এগিয়ে গিয়ে কোলে তুলে নিলো রাইসাকে।
“আম্মুটা আমার…….”
“আমমম….আমমমম…….”
“কি আমম??কি হয়েছে সোনাটার??”
রাইসা আঙ্গুল দিয়ে বিছানা দেখিয়ে দিলো নৌশিনকে।
শুবে ও এখন।নৌশিন বুঝতে পেরে মেয়েকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
নৌশিন জানে এই মুহুর্তে রাইসার কি চাই।
তবুও সে দেখতে চাইছে কি করে ওর মেয়ে।
রাইসা খুব পাকনী হয়েছে।
মায়ের শাড়ির নিঁচ হাত ডুকাচ্ছে একবার তো আবার বের করছে।এমন করতে করতে নৌশিনের পেট থেকে শাড়ি সরিয়ে ফেলেছে ওর মেয়ে।অনেক চেষ্ঠা করছে ব্লাউজের ভেতর দিয়ে হাত ডুকানোর জন্য কিন্তু পারছে না।
“আমমমমম…….আমমম…..”
মেয়ের কান্ড দেখে নৌশিন মিটমিটি হাঁসছে।
বাচ্চাটার সত্যিই খুব ক্ষুদা পেয়েছে।তাই কাঁদোকাঁদো হয়ে বিনয়ীসুরে ওর মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমমমম….দুতু দুতু…..দুতু…..আমমমম…..”
নৌশিন রাজকুমারীর মুখে বেশখানেকটা আদর করে দুধ দিলো তাঁকে।
কি একটা স্বভাব নৌশিনের মেয়েটার একটা দুধ তো খাবেই সাথে অন্য দুধও সে হাত দিয়ে ধরে রাখবে।
তা না করতে দিলে চিৎকার করে একাকার অবস্থা করবে।
“বাবু,খুব বাজে অভ্যাস।ছাড়ো…..ব্যথা লাগে তো আম্মুর……”
দুধ খেতে খেতেই রাইসা খিলখিলিয়ে হেঁসে উঠে।
তারপর নিজেই ওর মায়ের বুকের উপর শুয়ে অন্য দুধে মুখ গুছে।
দশ-পনেরো মিনিট নয় এই বাচ্চা পাক্কা এক ঘন্টার মতো মায়ের বুকের সাথে লেগে থাকে।এতক্ষণ দুধ চুষতেই থাকে।আর তো কিছু মুখে তুলে না।দুধের উপরেই টিকে আছে।নৌশিন কত চেষ্ঠা করে হালকা ডিম,কলা,খিঁচুড়ি খাওয়ানোর জন্য।কিন্তু এ বাচ্চা নাছড়….টানা এক ঘন্টা দুধ একটু একটু করে খাবে আর কিচ্ছু মুখে তুলবে না।
যার জন্য নৌশিনকে সাদাদ ডাবল খাওয়ায় এখন।
বাচ্চার খাবার সহ নিজেরটাও জোর করে খাওয়ায় সাদাদ।
বলে,
“তুমি বেবী টা খাও।বেবী তোমার দুধ খেয়ে পুষিয়ে নিবে….”
নৌশিন আর কি বলবে বাচ্চার কথা ভেবে জোর করে নিজেই খায়।
এ তো যায় দিনের বেলা….কিছুক্ষণ পর পর এই কাহিনী করে রাইসা।।
রাতের বেলা তো!!!
বলতেই হয় না!!!
সারা রাত মুখে দুধ গুজে রাখে রাইসা।
পাশ ফিরতে পারে না নৌশিন।
টের পেলেই হাউমাউ কান্না শুরু করে।
এইজন্য বাচ্চা এখনো নাদুস-নুদুস।তা না হলে বাচ্চার যে কি হতো!!!!
“দেখি,অনেক হয়েছে।উঠো এবার……”
খাওয়া শেষ রাইসার তবুও বুকের উপর শুয়ে আছে এখন।
আর শাড়ির পুঁতিগুলো নিয়ে খেলছে।
“রাইসামনি,উঠো…..পেট ভরে গেছে না তোমার??”
“হুমমমম।।।।।”
“তাহলে??উঠো…..খেলবে না…..”
“বাবাই…..”
“কি বাবাই???বাবাই ওয়াশরোমে তোমার….”
“দুতু…….বাবাই……..”
“এ মা।কি পঁচা।রাইসা মনি না ভালো???”
“আআআআদদদদ……”
“আদর করবো??”
“হুমমমমম……”
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো রাইসা।
নৌশিন মেয়েকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বেশ খানিকখন শুয়ে থাকলো।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো এই ফাঁকে ঘুমিয়ে গেছে রাইসা।
প্রায় দিন ই এমন সকাল নয়টা-দশটায় ঘুমিয়ে যায় মেয়েটা।
সাদাদ ওয়াশরোম থেকে বেরিয়ে দেখে নৌশিন রাইসাকে ঠিক করে শুইয়ে মশরী দিয়ে দিচ্ছে।
এই সুযোগ।রাইসা জেগে থাকলে পাশে পায় না নৌশিনকে সাদাদ।
তাই এই মুহুর্তে এই সুযোগ টা হাত ছাড়া করতে চাইছে না সে।
নৌশিন রাইসার মশারী ঠিক করে গুঁজে দিচ্ছিলো আর এই সময় পেছন থেকে সাদাদ নৌশিনকে জড়িয়ে ধরলো।
সদ্য ভেজা শরীর সাদাদের।
নৌশিনের ভেতরে অন্য রকম এক অনুভুতি হলো।
“আরে কি করছো???”
“হুসসসস…….”
“মশারী টা তো ঠিক করি ভালেভাবে…….”
“করতে হবে না।মশা নেই……”
“অফিস যাবে তো।ছাড়ো…..”
“আজকাল একদম কাছে পাই না।শুধু মেয়েকে সময় দিচ্ছো।রাতেও শুধু পাশে পাই মাত্র।আদর করতে পারি না মন ভরে……”
“ইশশশশ।করোই না বুঝি!!!মেয়ের অপজিটে থেকে ঠিক ই তো ঘাড়ে মুখ গুঁজে রাখো…..ঠোঁটেও সুযোগ পেলে ছাড়ো না……”
সাদাদ নৌশিনকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো।সাদাদ শুধু টাওয়েল পড়ে বের হয়েছিলো।এখনো সে ভাবেই আছে।নৌশিনের উপর শুয়ে পড়লো সে ও।
“কি করছো সাদাদ!!!রাইসা জেগে যাবে……”
“যাবে না।তুমিই বলো ঘাড়ে মুখ গুজলে কি সাধ মিটে???তোমার হয়???আমার তো হয় না??”
“আচ্ছা!!!এখন না। এখন সরো…..পরে…..”
সাদাদ নৌশিনের শাড়ির আঁচল টা সরিয়ে বলল,
“এখন প্লিজ।রাইসা তো অনেকখন খেলো।আমি একটু……”
বলেই বুকের শাড়ি সরাচ্ছিলো সাদাদ।বাঁধা দিলো নৌশিন।
“কি হচ্ছে সাদাদ!!!তোমার মেয়ে এতক্ষণ জ্বালালো এবার তুমি আসছো…….”
সাদাদ কি না শোনার পাত্র নাকি ঠিক ই নিজের টা আদায় করে নিতে জানে।
নৌশিনের ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো সাদাদ।
নৌশিন প্রথমে না না বললেও পরে ঠিকই সাদাদের সাথে তাল মিলাতে শুরু করে।
সাদাদ আরও আদর করতে চাইছে।নৌশিন শাড়ির আঁচল টা ঠিক করে বলল,
“আর না প্লিজ।রাজকুমারী সত্যিই ডির্স্টাব ফিল করবে।
বাকী টা আমি পরে পুষিয়ে দিবো।পালিয়ে তো যাচ্ছি না।।।। ”
সাদাদ উঠে মাথার চুলগুলো ঝাকিয়ে বলল,
“রাজকুমারী কিন্তু টের পেতো না……”
নৌশিন সাদাদের ড্রেস বের করতে করতে বলল,
“বলছে তোমায়?তোমার যা মেয়ে।টু শব্দ হলেই টের পেয়ে যায়।”
“অনেক তাড়াতাড়ি ই বড় হচ্ছে তাই না??”
“হুমমমম।তা তো হবেই……
আর শোনো তোমাকে একটা কথা কবে থেকে বলছি…..”
“কি??”
“রিদি আপুর মেয়ে হলো এক মাস হয়ে গেলো।গিয়ে দেখে আসি না??”
“তুমি গিয়ে কি করবে??বাবা-মা তো গেছিলো ই…..”
“তবুও….ভাবী নাকি যাবে।আমার জন্য ই ডেট চেন্স করছে শুধু।তুমি ই তো পারমিশন দিচ্ছো না…..”
“তো যাও….রাইসা যেনো না যায়…..”
“সাদাদ!!!এটা কোন ধরনের পারমিশন দিলে তুমি আমায়।আমি রাইসাকে রেখে যাবো??”
“মেয়ে দেখতে যাচ্ছো তো আমার মেয়ে নিয়ে গিয়ে কি করবে??”
“সাদাদ!!!তুমি না আসলেই…..লাগবে না দেখা আমার বাচ্চা।তবুও আমার রাজকুমারী আমার কাছেই থাক।ভাবীকে আজ সোজা না করে দিবো,যে আমি যাবো না।ওরা যেনো একাই চলে যায়…..”
“তাহলে তো আরোও ভালো……”
“ধ্যাত।যতসব…….”
নৌশিন রোম থেকে বেরিয়ে এলো রাগে।কতদিন ধরে ঘ্যানঘ্যান করছে রিদির বাচ্চাটাকে দেখবে বলে কিন্তু সাদাদ কিছুতেই যেতে দিবে না।আজ যদিও বললো বলে কি না রাইসা যেনো না যায়।
সেটা আবার সম্ভব নাকি!!!!
সাদাদের খাবার বেড়ে দিয়ে নৌশিন আবার উপরে চলে এলো।রাফসার উপর থেকে কেস তুলে নেওয়ায় সে আবার হসপিটাল জয়েন করেছে।
তাই আজকাল বাড়ির কাজকর্ম রাফসা না থাকাকালীন সময়ে নৌশিন ই করে।আর রাফসা বাসায় থাকলে সব সে নিজে করে।
নৌশিনকে কোনো কিছুতে হাত লাগাতে দেয় না।
“কি হলো??উপরে চলে এলে খাবে না??”
“আমার খিদে নেই।তুমি খেয়ে চলে যাও…..”
“নৌশিন কেনো জেদ করছো??কি করবে তুমি রিদি দের বাসায় গিয়ে??”
“ওরা আমার রাইসাকে দেখতে আসে নি??রাইসাকে দেখতে এসে আপু কত্ত সুন্দর একটা সোনার চেইন দিয়ে গেলো।আমাদেরও তো উচিত ওর বেবীকে দেখে কিছু একটা দেওয়া।”
“ভাবী তো যাচ্ছেই…..”
“সাথে আমি গেলে কি হয়??তোমাকে তো যেতে বলছি না।যে চলো…..আমিই তো যাবো।ভাবী চেইন গড়িয়ে এনেছে মেয়ের জন্য আমি ভাবছি রিং নিবো। ”
“সোনা??”
“বাচ্চা মেয়ের রিং চার পাঁচ হাজারেই হয়ে যাবে সোনা দিলে।তাই ভাবছি ডায়মন্ড দিবো।কাল একটা ম্যাগাজিনে দেখেছি ছোট্ট অনেক সুন্দর।
আঠারো হাজার টাকা দাম।দুটো কিনবো। একটা আমার রাইসার জন্য আর একটা আপুর মেয়ের জন্য……”
“কার্ড রেখে গেলাম এই যে…..ভাবীকে সাথে করে নিয়ে যেও…..”
“রাগ করে দিচ্ছো??”
“না…..”
“আমার তো তাই মনে হচ্ছে।”
“চলো নিচে।খাবো….লেইট হয়ে যাচ্ছে……”
“কার্ড নিয়ে যাও।আমি রিং এর পিক তুলে তোমাকে পাঠাবো আর দোকানের ঠিকানাও দেওয়া আছে সেখানে।তুমি রাতে ফেরার সময় নিয়ে আসবে।এই গরমে বাবুকে নিয়ে বের হবো না আমি।রিদি আপুর বাসায় জাস্ট যাবো যেনো আপু খুশি হয়।”
“ওক্কে ম্যাডাম।এবার চলুন।না হলে পড়ে রাজকুমারী উঠে পড়বে……”
“হুম…চলো……”।
সাদাদের সাথে সকালের খাবার খেয়ে মেয়ের জন্য একটু খিঁচুরি করছে নৌশিন।
যদি খাওয়াতে পারে!!সেই আশায়।
কলিজা,আলু,শিম,বেগুন,বরবটি,চাল,ডাল সব একসাথে করে একটু করে ঝাল দিয়ে অল্প একটু রান্না করেছে।
পরিপূরক খাদ্য তো দরকার।
শুধু বুকের দুধে তো বাচ্চার সব চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।
সেটা তো হতো ছয় মাস পর্যন্ত। এখন বাচ্চার এক বছর এক মাস।একটু বাড়তি খাবার তো দেওয়া দরকার।
রাইসা ঘুম থেকে উঠার পর নৌশিন জোর করে বেশ খানিক টা খিঁচুরি ওকে খাইয়ে দিয়েছে।
সে কি কান্না!!!
তবুও নৌশিন থামে নি।
বাচ্চার ভালোর জন্য এতোটুকু জোর করাই যায়।
অরূপ স্কুল থেকে এসেছে ওর খাবার টাও নৌশিন ওকে খাইয়ে দিয়েছে।
রাফসা দুটো সময় ফিরে এসেছে।তারপর থেকে নৌশিনের ছুটি।
সব কাজ রাফসা ই করছে।
রাতে সাদাদ ফিরার সময় রিং দুটো নিয়েই ফিরেছে।
একবার যেহেতু নৌশিন যেতে চেয়েছে তো যাক।
আগের কোনো কাহিনী মনে রেখে শুধু শুধু একনকার আনন্দ টা মাটি করার কোনো দরকার হয় না।
সাদাদ এসে দেখে নৌশিন রাইসাকে নিয়ে খেলছে।
রাইসা ওর মায়ের সাথে দুষ্টুমি করতে করতে খিলখিল করে হাঁসছে।
সাদাদ এসেছে দেখেই পিচ্চি মেয়েটা হাত দুটো উড়িয়ে দিয়ে ডাকা শুরু করল,
“বাবাই,বাবাই…….আমমমম,বাবাই……”
সাদাদও ওমনি।চেন্স না করেই বাচ্চাটাকে কোলে তুলে আদর করা শুরু করল।
“শুরু হলো বাপ-বেটির কারিশমা।”
“আপপপববববব……”
কি একটা আওয়াজ করলো রাইসা।
হয়তো ওর মায়ের কথার প্রেক্ষিতে কোনো কিছু বলতে চাইলো।
কতক্ষণ মেয়ে নিয়ে নানা কায়দা করার পর সাদাদ রাইসাকে নৌশিনের কোলে দিয়ে বলল,
“নাও ওকে…..ফ্রেস হয়ে আসি।”
“আচ্ছা।।।”
কিন্তু রাইসা ওর বাবাই এর কোল থেকে আম্মুর কোলে আসতে চাইছে না।
“ও রে আমার পাকনী রে।বাবাই পেয়ে আম্মুকে ভুলে যাও একদম……”
মেয়েটা ঠোঁট ভেঙে কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে বলল,
“বাবাবাবাইইই……”
সাদাদ ওমনি মেয়ের মুখে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিলো।
বলল,
“আমার রাজকুমারী এখন একটু রানীর কাছে থাকুক।রাজা ফ্রেস হয়ে এসে তাঁকে আবার নিবে কেমন!!!”
কি জানি কি বুঝলো এই পিচ্চি মেয়ে???
খিলখিল করে হেঁসে নৌশিনের কোলে চড়ে গেলো।গলাটা জড়িয়ে ধরে মায়ের ঘাড়ে খুব আদুরী ভঙ্গিতে মুখ গুজলো।
রাতে খাওয়ার পর মেয়েকে মাঝখানে শুইয়ে সাদাদ নৌশিন টুকটাক কথা বলছিলো।
সাদাদ রিং দুটো বের করে নৌশিনকে দেখলো।
দুটো রিং সেইম।রিদির বেবীর একমাস ওর হাতের আঙ্গুলের মাপের রিং পাওয়া যায় না।
তাই দুটো এক মাপের।
একদম এক ডিজাইন আনিয়েছে নৌশিন।
রাইসা রিং দুটো দেখেই সে কি হাঁসি।
নৌশিনের চুল ধরে টানছে হয়তো বুঝাতে চাইছে ও রিং টা পড়বে।
নৌশিন একটা রিং নিয়ে রাইসার আঙ্গুলে পড়িয়ে দিলো।একটু বড় হচ্ছে রাইসার আঙ্গুলে।
তা একটু হবেই এত ছোট্ট বাচ্চার ডায়মন্ড রিং!!!
বারবার রিং টা আঙ্গুল থেকে পড়ে যাচ্ছে তাই রাইসা ঠোঁট উল্টিয়ে একবার ওর বাবাইয়ের দিকে তো একবার ওর আম্মুর দিকে তাঁকাচ্ছে।
“কাঁদে না সোনা।আম্মু এখনি ঠিক করে দিচ্ছে…….”
নৌশিন সাদা সুতো দিয়ে রিং টা কে পেঁচিয়ে নিলো।
তারপর মেয়ের আঙ্গুলে একদম ফিট করে পড়িয়ে দিলো।
“বাবাই…….”
সাদাদকে দেখাচ্ছে ওদের মেয়ে। সাদাদ-নৌশিন দুজনেই মেয়ের কান্ড দেখে হো হো করে হাঁসছে।
এতো ছোট মেয়ে গয়না পেয়ে কত খুশি!!!
পরের দিন বিকালে রিদির মেয়েকে দেখতে যায় রাফসা আর নৌশিন।
রিদি বেশ খুশি ওদের দেখতে পেয়ে।
“বাব্বাহ,কি মিষ্টি হয়েছে রাইসামনিটা!!….”
“বাবাই……”
“ওরে মেয়ে!!শুধু বাবাই তাই না??বলো খালা মনি,খালা মনি…..বলো….”
“খখখখ……”
“ও মা!!!!নৌশিন!!!কি মেয়ে তোমার??হ্যাঁ…যা শোনে তাই বলতে চায়…..বাব্বাহ….”
“বাব্বা….”(রাইসা)
হো হো করে হেঁসে উঠে সবাই রাইসার কান্ডে।
“তোমার মেয়েও এমন মিষ্টি হবে দেখো…..”
“তোমাদের দোয়ায়…..”
“পরশ কই রে রিদি??”(রাফসা)
“ও তো দেশেই নেই ভাবী।জরুরী কাজে দুই দিনের জন্য কানাডা গেলো…..”
“ও….তারমানে বাড়িতে তুমি একা??”
“না আমার শশুড় শাশুড়ী গ্রামে গেলেন আজকে সকালে।চলে এলো বলে….”
“ও আচ্ছা……”
রিদি খুব সাংসারিক হয়ে উঠেছে।একা হাতে বাচ্চা সামলে ঠিকই নৌশিনদের জন্য অনেক রকম রান্না বান্না করেছে।কাজের লোক থাকলেই না ওনি তো শুধু কাঁটাকুটি করেছেন আর বাকী সব রিদি একা হাতে করেছে।
খাওয়া দাওয়ার পর আরোও বেশ কিছুক্ষণ গল্প গুঁজুব করে তারপর বাড়ী ফিরে ওরা।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
রাইসা টা গাড়িতেই ঘুমিয়ে গেছে।ঘুমাবে না??
রিদির বাচ্চাটাকে পেয়ে কি দুষ্টুমি ই না করলো!!!
আর সে কি হাঁসি!!
শরীর তো এমনিতেই নেঁতিয়ে গেছে।
নৌশিন কোলে করে রোমে নিয়ে গিয়ে দেখলো সাদাদ রোমে।
মনে মনে এই ভয় টাই পাচ্ছিলো নৌশিন।
আর ঠিক তাই হলো।
রাইসা কে ঠিক করে শুইয়ে দিলো নৌশিন।
তারপর সাদাদের দিকে ফিরে বিনয়ী সুরে বলল,
“আসলে অনেক দিন পর দেখা তো গল্প করতে করতে….”
“অনেক দিন পর দেখা তো থেকে গেলেই পাড়তে……”
লেপটপে চোখ রেখেই সাদাদ জবাব টা দিলো।
“না আসলে…..”
“মেয়ে বাইরে থেকে ঘুমিয়ে এসেছে।বাইরের পোশাকেই ঘুমাচ্ছে।তুমিও বাইরের পোশাকেই থাকবে??”
“কি রে ওকে চেন্স করাবো??তাহলে তো ওর ঘুম ভেঙে যাবে…..”
“নৌশিন!!!!”
নৌশিনের দিকে ফিরে তাঁকায় সাদাদ।রাগে চোখ কটমট করছে।
নৌশিনের আত্মার পানি শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা।
নৌশিন তাঁর চিরপ্রচলিত নিয়ম টা মনে করে দৌঁড়ে গেলো সাদাদের কাছে।
ঝাপটে ধরলো সাদাদকে।
সর্বশক্তি দিয়ে সাদাদকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আর হবে না।কখনো বাবুকে নিয়ে সন্ধ্যার পর বাসায় আসবো না।আর লেইট হবে না……লাভ ইউ না???”
সাদাদ নৌশিনের ভর্য়াত কন্ঠ শুনে ফিক করে হেঁসে ফেললো।
নৌশিন তবুও ভয়ে সাদাদের বুকে মুখ লুকিয়ে রেখেছে।
“আরে পাগলী!!!বিয়ের এতোদিন পরেও এতো ভয়??”
“আগে বলো আর রাগ নেই???”
“থাকলেই বা কাকে দেখাবো??দেখানোর আগেই তো ঘায়েল করে নিয়েছো…”
“লাভ ইউ…..”
“আমিও খুব ভালোবাসি আমার রাজকুমারীর মা টা কে…..”
নৌশিন সাদাদের বুক থেকে মাথা তুলে চোখে চোখ রেখে বলল,
“ইচ্ছা করেই আজকে আগেভাগেই বাড়ি ফিরেছো তুমি।তোমাকে আমি চিনি না??”
হাঁসলো সাদাদ। সে যে আসলেই এমনটা করেছে।
দেখার জন্য যে নৌশিন রিদির বাড়ী থেকে কখন ফিরে।
“তোমাদের বাড়ী গেলে কিন্তু আমি এমনটা করতাম না…..”
“রিদি আপু কি করলো তোমায়??ওর বাসায় কি তোমার রাণী আর রাজকন্যার যত্ন কম হচ্ছিলো??”
“বিশ্বাস নেই ঔ মেয়েকে….”
“সাদাদ!!প্লিজ।আপু পুরো পাল্টে গেছে….”
“বাদ দিই আমরা বিষয়টা……”
“হুমমম….”
“এখন তুমি চেন্স করবে নাকি আমি করাবো???”
“হইইই যাও তো…..”
বলেই সাদাদকে ধাক্কা দিয়ে চলে এলো নৌশিন।
“পালালে কিন্তু ধরা দিতেই হবে…..”
নৌশিন কার্বাড থেকে জামা বের করতে করতে জবাব দিলো,
“সেটা পড়ে দেখা যাবে।আপনি কাজ করুন আগে…..”
জামা নিয়ে পেছন ফিরতেই সাদাদ খপ করে ধরে ফেললো নৌশিনকে।
কমড়ের দুই সাইডে হাত রেখপ নিজের কাছে নিয়ে এলো।
“কি করছো??চেন্স করবো তো…..”
“কি দরকার??”
“মানে??”
“আরোও সুন্দর হয়ে যাচ্ছো দিনকে দিন…..”
“আচ্ছা??”
“হুম।রূপের মহিমা বেড়েই চলেছে…..বার বার প্রেমে পড়ি…..”
সাদাদ মুখ গুজলো নৌশিনের গলায়।
নৌশিন সাদাদের চুলগুলো আঁকড়ে ধরলো।
মনের কথা এড়িয়ে শুধু বলার জন্য বলল,
“সাদাদ!ছাড়ো……”
সাদাদ একটা হাত নৌশিনের কমড়ে রেখে অন্য আরেকটা হাত নৌশিনের চুলের ভেতরে গুজে দিলো।
গলায় একের পর এক চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে।তারপর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।
নৌশিনের হাত থেকে জামাগুলো পড়ে গেলো।
দুহাতে সাদাদের ঘাড় আর চুল আকড়ে ধরে সারা দিতে লাগলো।
“আমমম……..আমমম……আমমম……..”
রাইসার কান্নার শব্দে রীতিমতো চমকে যায় সাদাদ নৌশিন।
দুজনেই স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়।
সাদাদের মুখ টা পুরো বাংলার পাঁচ হয়ে গেছে।
সেটা দেখে নৌশিনের হাঁসি শুরু।
“আমম আমমম আমমম…..”
রাইসা কান্না করছে তাই নৌশিন বেঁচে গেলো।
তা না হলে এই হাঁসির শাস্তি ওকে সাদাদ দিয়েই ছাড়তো।
নৌশিন সাদাদের পেটে একটা গুতো দিয়ে হেঁসে চলে গেলো বিছানায়।
মেয়ে ঘুমের মধ্যেই কান্না করছে।পাশে হাত দিয়ে ওর আম্মুকে পায় নি বোধহয় তাই ‘আমম,আমম করছে’।
নৌশিন দুধ খাওয়াচ্ছে রাইসাকে।
সাদাদ অপর পাশে শুয়ে রাইসার গালে একটা চুমু খেয়ে বলল,
“রাজকুমারীর জন্য রাজা-রাণীর রোমান্স নষ্ট হচ্ছে…..রাজকুমারী একটু বেশিই দুষ্টু……”
নৌশিন সাদাদের গালে এক হাত রেখে বলল,
“একদম রাজার মতো দুষ্টু আমার রাজকুমারী টা….”
সাদাদ নৌশিনের হাত টা ধরে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে যাচ্ছে।আর প্রতিটা চুমুর পর পর বলছে,
প্রেমঘোর পর্ব ১০৭+১০৮
“ভালোবাসি….ভালোবাসি…ভালোবাসি….ভালোবাসি…..ভালোবাসি…ভালোবাসি….ভালোবাসি……ভালোবাসি…ভালোবাসি…….”
পাগলের মতো একটানা কাজটা করেই চলেছে সাদাদ।
সাদাদের কান্ডে নৌশিন হাঁসতে হাঁসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।