অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৬৪
নুসাইবা ইভানা
ঠোঁটের স্বাদ নিতে খুবই মজা আর বিয়ে করার কথা আসলেই ভেজা বেড়াল! সায়নার কথা শুনে।
“অনিকেত অসহায় দৃষ্টিতে সায়নার দিকে তাকিয়ে আছে৷
” সায়না চোখ পাকিয়ে বলে কিস যখন করেছেন তাও নিজের ইচ্ছেতে সো এক্ষুনি কাজিকে কল করুন।
“অনিকেত ফোন নিয়ে নাহিদকে কল করলো৷
” সব শুনে নাহিদ জোড়ে জোড়ে হাসতে হাসতে বলে,অবশেষে আমাদের পবিত্র ডাক্তার বাবু কিস করে কট খেয়ে বিয়ে করতে যাচ্ছে। ডাক্তার অনিকেত মাহমুদ উইদ কট ম্যারেজ। অপেক্ষা করো চান্দু আমি কাজি নিয়ে আসছি৷
“নাহিদের বৌটার সন্দেহ করার রোগ আছে৷ সে কটমট চোখে তাকিয়ে বলে এই রাতে বন্ধুর বাহানায় কোন মেয়ের কাছে যাচ্ছো?
” বৌ তুমি ভিডিও কল করো আমাকে৷ যতক্ষণ পর্যন্ত ফিরে না আসবো তুমি ঘুমাবে না৷ দুই চোখ মেলে তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে৷ আমার ফোনে ফুলচার্জ আছে তোমার চার্জ না থাকলে চার্জে লাগিয়ে হলে তাকিয়ে থাকো৷ নাহিদ শার্ট-প্যান্ট পরে বের হয়ে গেলো।
“সয়না পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। গুন গুন করে গান গাইছে।
” অনিকেত আড়চোখে সায়নার দিকে তাকিয়ে বলে,সুন্দরী মেয়েরা ভয়ংকর। এদের ছলনায় পরা মানেই কট। নিজেই ঠোঁট বাড়িয়ে দিলো এতো সুন্দর ঠোঁট কি করে উপেক্ষা করতাম! এই কিস করার অপরাধে বিয়ে করতে হবে!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন? আমি জানি আমি সুন্দরী এতো দেখার কিছু নেই। সারাজীবন আপনিই দেখবেন৷
” তোমার পরিবারকে কি বলবে?
“আচ্ছা আমি কোন ক্লাসে পড়ি?
” অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।
“আমার বয়স কত?
” ঊনিশ কুড়িতো হবেই।
“তো মিস্টার অনিকেত মাহমুদ। একটা একৃশ বছরের এডাল্ট মেয়ে নিজের ইচ্ছেতে নিজের পছন্দে বিয়ে করতে পারে না?
” কিন্তু আমার তো তোমাকে বিয়ে করার যোগ্যতা নেই?
“বাংলাদেশ এতো বড় একটা হসপিটালের ডাক্তার আপনি তাও যেমন তেমন ডাক্তার না সুনামধন্য কার্ডিওলজিস্ট। আপনি নিজেকে অযোগ্য বলার আগে কচু গাছের সাথে গলায় দ’ড়ি দিলেন না কেন!
” আমি এতিম। বাবা মায়ের কোন খোঁজ নেই। পরিবার পরিজন বলতে দুই তিনজন বন্ধু।
“তো আমি কি সংসার আপনার দাদার সাথে করতাম?নাকি আপনার চৌদ্দগুষ্টির সাথে? আমি বিয়ে আপনাকে করবো৷ সংসার আপনার সাথে করবো। সো এসব লেইম এক্সকিউজ দেয়া বন্ধ করুন। আর হ্যাঁ সুন্দর একটা পাঞ্জাবি পরে আসুন৷ আচ্ছা আপনার বাসায় কোন আংটি বা চেইন আছে?
” অনিকেত সায়নার দিকে তাকিয়ে বলে,এই মেয়েকে বোঝানোর চেয়ে নিজের মাথায় বাড়ি দেয়া ভালো৷
“কবুল বলে মাথায় বারিটারি যা দেয়ার দিয়েন। কবুল বলার আগ পর্যন্ত সুস্থ থাকতে হবে আপনাকে?
” ডেঞ্জারাস মেয়ে।
“আপনার বৌ ডেঞ্জারাস ডাক্তার বাবু।
নয়না চেয়ারে বসে আছে মোবাইল হাতে নিয়ে জিয়ানকে নিজেন তোলা পিক সেন্ট করলো৷
” মেসেজ ডেলিভারি হয়েছে কিন্তু রিপ্লাই আসলো না৷
নয়না আরেকটা টেক্সট লিখলো, আপনি কি জানেন আমি জিতে গেছি। ভেবেছিলাম হেরে যাবো। অথচ আমি জিতে গেছি!
“নয়না মোবাইল রেখে সামনের মঞ্চে মনোযোগ দিলো,একদল ছেলে মেয়ে নাচচ্ছে। সবাই হাত তালি দিচ্ছে।
” তুষি কনুই দিয়ে নয়নাকে গুঁতো দিয়ে বলে,ওই যে বা’পাশের ছেলেটাকে দেখ কি হ্যান্ডাসম তাই না?
“তুষির বাচ্চা এখানে প্রেম করতে এসেছিস!
” শোন সিঙ্গেল মানুষ একটু আধটু ক্রাশ খেয়েই থাকে।
“চুপচাপ বসে থাক৷
“নয়না নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো হটাৎ সামনে তাকাতেই দেখে জাহিন গিটারে সুর তুলছে।
” নয়না উঠে যেতে চাইলো৷ তুষি নয়নার হাত ধরে বলে,বসে থাক তুই ওভার রিয়েক্ট কেন করিস! মনে কর সামনে তোর দেবর না আমার হবু বর দাঁড়িয়ে আছে। তাও মনে করতে না চাইলে শুধু এই গানটাতে ফোকাস কর৷ কি সুন্দর গান গাইছে!
Tera sang yeara
Khush rang bahara
Tu raat deewani
Main zart sitara
O karam khudaya hai
Tujhe mujhesa milaya hai
Tujhpa marka hi toh
Mujha jeena aaya hai
Oh tera sang yeara khush rag bahara
Tu raat deewani
Main zart sitara
Kahin kisi bih gali me jaaun main
Tare Khushbu se takraaun main
Har rat jo aata ha mujh who khwaab tu
Tera mara milna tastoor hai
Tera hona se mujh me noor hai
Main hoon soona sa ak aasman mehtab tu
O karam khudaya hai
Tujhe mujhese milaya hai
Tujhpa marka hi to
Mujha jeena aaya hai
“নয়না একবারও উপরের দিকে তাকালো না৷
” অন্তর খেয়াল করলো জাহিনের দৃষ্টি ঘুরে ফিরে নয়নার উপর এসে পরছে!
“গান শেষ হতেই কড়া তালিতে মুখরিত হলো কলেজ প্রাঙ্গণ।
” জাহিন স্টেজ থেকে নামার পর নয়না উপরের দিকে তাকিয়ে বলে চল বাসায় চলে যাবো৷
“তোর মাথা ঠিক আছে? এতোক্ষণ থেকে বিরিয়ানির প্যাকেট না নিয়ে চলে যাবো?
“নয়না দাঁত কামড়ে বলল,তুই বাহিরে চল তো বিরিয়ানি খাওয়াচ্ছি৷
” নয়না বাহিরে এসে দেখে গাড়ি তাদের জন্য দাঁড়িয়ে আছে৷ ড্রাইভার গাড়ির দরজা খুলে দিলো। নয়না আর তুষি উঠে বসলো।
“ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে এরমধ্যেই গাড়ি চলতে লাগলো। নয়না তখনো সামনে খেয়াল করেনি৷ সে বলল,আঙ্কেল সুবর্ণ রেস্তোরায় যাবো৷ নয়না হঠাৎ সামনে তাকিয়ে বলে আপনি!
” চকমে গেলে নাকি! আরেহহ আমি আর অন্তর বের হয়ে দেখি আমাদের গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে। ওটা ড্রাইভারের দ্বায়িত্ব দিয়ে আসলাম। গন্তব্য যখন এক তখন আর সমস্যা কি?
“অন্তর বলল,আসসালামু আলাইকুম ভাবি৷ আমি অন্তর আপনার ছোট ভাইয়ের মত।
” নয়না উত্তর দেয়ার আগেই তুষি বলে,আপনি তো সেই বেয়াদব লোকটা! আসছে ভদ্র সাজতে।
“নয়না নিজেকে সংযাত করে বলল,ভাইয়া আমাকে একটু তালুকদার ম্যানশনে নামিয়ে দিয়ে আসুন৷ মাত্র দেখলাম আম্মু টেক্সট করেছে দ্রুত বাসায় যেতে বলেছে। আর হ্যা বাসায় যেয়ে আম্মাকে বলে দিয়েন আমি বাসায় এসেছি৷
” অন্তর গভীর ভাবে জাহিনকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো৷ হুট করে তার পাশে বসে থাকা মানুষটাকে অপরচিত লাগছে।
“জাহিন শান্ত কন্ঠে বলল,রেস্টুরেন্ট থেকে লাঞ্চ সেরে তারপর ড্রপ করে আসবো।
” নয়না বলল,না আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে৷ আপনার কাজ থাকলে আমাকে এখানে নামিয়ে দিন তুষির সাথে চলে যাবো রিকশা করে।
নীলাঞ্জনার চারমাস চলে, শরীর দূর্বল, রক্ত সল্পতা, আবার মস্তিষ্ক জুড়ে নানা ধরেন টেনশন৷ এই সমাজে সিঙ্গেল মাদার হওয়া তো সহজ কথা না। তার উপর বিয়েটা করেছিলো পালিয়ে। অনেকে জানেওনা। এই বিয়ের কথা। মানুষ বলে ভুল শুধরে নিতে, ভুল থেকে শিক্ষা নিতে৷ কিন্তু জীবনে এমন কিছু ভুল থাকে,যে ভুলের শাস্তি সারাজীবন পেতে হয়৷ তার ভুলের জন্য এই অনাগত সন্তান পিতৃহারা। তার ভুলের জন্য সমাজে বড় হয়েও এই সন্তান থাকবে কোনঠাসা৷ এসব আজকাল ভাবতে পারে না নীলাঞ্জনা৷ তার মাথা ধরে যায়। এই সময় মেয়েদের সবচেয়ে ভরসার স্থান তার মা৷ অথচ তার নিজের মা তার দিকে মুখ তুলেও তাকায় না৷ জাহানারা বেগম নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে নীলাঞ্জনার খেয়াল রাখেন৷ কিন্তু নীলাঞ্জনার মা নীলাঞ্জনার চারপাশে ঘেঁষে না। চোখের জল মুছে সামনে থাকা জুসের গ্লাসটা হাতে পান করলো৷ জুসের গ্লাস রেখে শুয়ে পরলো,বেডে৷ নিজের জীবন নিজের হাতে নষ্ট করেছে। অভিযোগ বা অভিমান করার মতও কোন স্থান নেই।
🌿জিয়ার রেডি হয়ে নয়নাকে কল করার জন্য মোবাইল হাতে নিলে৷ নয়নার টেক্সট দেখে। উত্তর লিখলো তা ম্যাডাম আপনি কি করে জিতে গেলেন?
“নয়নার তখন মেজাজ তুঙ্গে৷ নয়না রিপ্লাই করলো ছাতারমাথা জিতেছি।
” জিয়ান হাহা ইমোজি দিয়ে লিখলো৷ ব্যাঙের ছাতা?
“নয়না রাগী ইমোজি দিয়ে লিখলো আপনার মাথা।
অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৬৩
” কি করলো আমার মাথা?
“নয়না রিপ্লাই না করে ডাটা অফ করে দিলো৷
” জিয়ান মনে মনে হাসলো। মেয়েদের মন বোঝার মত কঠিন কাজ আর নেই।