অনুভবে তুমি পর্ব ২৩
লিজা মনি
সুমু রেস্টুরেন্টে ফোনকৃত ব্যক্তিটির বরাদ্দ করা একটি সিটে বসে অপেক্ষা করছে। কিন্তু ব্যক্তিটি এখনো আসে নি। আশ্চর্যের বিষয় হলো এত বড় ফাইভ স্টারে এই তালায় কেউ নেই। পুরু রুম ফাকা। পুরো তালায় কাঁচা ফুল দিয়ে ডেকোরেশন করা। সিটের চারপাশে কেন্ডেল দিয়ে সাজানো। সুমু কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ে। তার চিন্তার প্রহর ঘটে কারোর সুমুধুর কন্ঠে,,,,
*তোমার আমার প্রেম আমি আজ ও বুঝিনি…
*এই চোখের চাওয়াতে প্রেম আজ ও দেখিনি….
*দুরে তবোও দুরে কেনো থাকতে পারে নি, আমি আজ ও বুঝিনি…..
*কাছে এসে কেনো কাছে আসতে পারে নি আমি আজও বুঝিনি…..
*তোমার আমার প্রেম আমি আজও বুঝিনি…..
গান গেয়ে গেয়ে লোকটা সুমুর সামনে এসে হাটু গেরে এক গুচ্ছ ফুলের তোরা নিয়ে বসে । সুমু শুধু আশ্চর্য হয়ে হা করে তাকিয়ে থাকে ছেলেটার দিকে । অবাক হয়ে বলে।,,,,,
“”” রায়ান আপনি? “”
রায়ান একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,
“” হুম আমি। “”
সুমু রায়ানকে ফুল নিয়ে হাটু ঘেরে বসে থাকতে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে বলে,,,,,
“” কিন্তু রায়ান এইসব কি? আমি একজনের সাথে দেখা করতে এসেছি। “””
রায়ান সুমুর চোখে চোখ রেখে বলে,,,,
“” আমার কন্ঠস্বর কি তুমি আজ ও অনুধাবন করতে পারো না সুমু। আজ ও বুঝে উঠনি আমার আবেগ মিশ্রিত কথা? “”
সুমু কপাল কুচকে বলে,,,,
“” অর্থাৎ! ফোনের ওইপাশের ব্যক্তিটি আপনি ছিলেন? আবার ও প্রতারনা?”” সুমুর গলা কাপছে। কথা বলতে পারছে না বার বার অধর ভিজাচ্ছে।
রায়ান অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে বলে,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“”” আমি তোমার সাথে প্রতারনা করতে চাই নি। কিন্তু কি করবো তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারতাম না। তোমার কন্ঠস্বর শোনার জন্য আমার হৃদয় তৃষ্নার্তদের মতো ছটফট করতো। ভালোবাসি আমি তোমায় খুব ভালোভাসি। ঠিক ততটা ভালোবাসি যতটা ভালোবাসলে একজন আরেকজনের জন্য প্রান দিতে পারে। তুমি হবে কি আমার বাচ্চার মা? হবে কি আমার রাজ্যের রানী? হবে কি আমাদের বাচ্চার ছেলেমেয়েদের দাদি- নানি।”””” বলেই রায়ান মিনতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
কিন্তু সুমু ছিলো নিরব। সেতো চায় নি কেউ তার মায়ায় পড়ুক। সে তো ভালো মেয়ে নয়। রায়ানের মতো একজন ভালো মানুষ ওকে ডিসার্ব করে না। অন্ধকার জীবনকে দুরে ঠেলে দিয়ে ও আবার নতুন করে বাঁচতে শুরু করেছিলো। কিন্তু সেই অন্ধকার কেনো আজও ওর পিছু ছারছে না। না এটা হতে পারে না। আমি একটা ছেলের জীবন নষ্ট করতে পারি না। সুমুর ভাবনার প্রহর ঘটে রায়ানের কাপাকাপা কন্ঠ শুনে,,,
“” বলো না সুমু , ভালোবাসো আমায়? আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। তৃষ্নার্তদের মতো গলা শুকিয়ে আসছে বার বার। অপেক্ষা জিনিসটা যে বড্ড কষ্টদায়ক সুমু।””””
সুমু রায়ানের দিকে একনজর তাকিয়ে নিজের মনকে শক্ত করে নেয়। যা কিছু হোক রায়ানের পাগলামো কে সায় দেওয়া যাবে না। তারপর শক্ত গলায় বলে,,,,
“” এইসব কি রায়ান? একবার ও দেখেছেন আপনার প্রতি আমার কোনো অনুভব? আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা না করেই এইসব করা আপনার একদম ঠিক হয় নি। আমি আপনাকে বন্ধু ভাবতাম আর আপনি কি না আমাকে নিয়ে এইসব ভাবেন। আসলে আপনি তো অগ্নি চৌধুরি ওই প্রান প্রিয় বন্ধু। “””
রায়ান সুমুর এই উত্তরটা একদম আশা করে নি। ওতো ভেবেছিলো সুমু ও ওকে ভালোবাসে। তাইতো আজ বিয়ের প্রপোজাল করেছিলো। রায়ানের চোখ ছলছল করছে। এই বুঝি চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরবে। রায়ান কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে,,,,
“” সুমু! কেনো ভালোবাসা যায় না আমাকে? আমি কি খুব খারাপ? বলো তোমাকে যদি কোনো কষ্ট দিয়ে থাকি আমি মাফ চেয়ে নিবো”””
রায়ানের এই কাপাকাপা কন্ঠ সুমুর ভিতরটা শেষ করে দিচ্ছে। কপাকাপা হাতে রায়ানকে বসা থেকে দুই বাহু ধরে দাড় করায়। তারপর মিথ্যে হাসি দিয়ে বলে,,,,
“”” আপনি খারাপ নন রায়ান। আপনি খুব ভালো একজন ব্যক্তি। স্রদ্ধা করি আমি আপনাকে। কিন্তু আমাকে আপনি ডিসার্ব করেন না। আমি ভালো মেয়ে নয়। খুব খারাপ আমি এতটা খারাপ যে আমি আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না। আমার অতীত আপনি জানেন না। আপনি আমার থেকে আরো ভালো মেয়ে ডিসার্ব করেন রায়ান । “””””
সুমুর লাস্ট কথা গুলো বলতে গিয়ে গলা কাপছিলো। প্রচুর কান্না আসছে। চিৎ কার করে বলতে ইচ্ছে করছে হ্যা রায়ান আমি ও আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। খুব খুব ভালোবাসি আমি আপনাকে। কখন কিভাবে ভালোবেসে ফেলেছি নিজের ও জানা নেই। কিন্তু আমি নিরুপায়। আমার মতো মেয়ে আপনার জীবনসঙ্গী হওয়া প্রাপ্য নয়। আপনি অনেক অনেক ভালো মেয়ে পাবেন। কিন্তু কথাগুলো মানেই থেকে গেলো। প্রকাশিত হলো না রায়ানের কাছে। সুমু ঠোট চেপে নিজের কান্না নিয়ন্ত্রন রাখছে।
রায়ান সুমুর হাত দুটি নিজের হাতে আবদ্ধ করে বলে,,,,
“” না সুমু তোমার চেয়ে ভালো মেয়ে আমার জন্য আর কেউ নেই। জানতে চাই না তোমার অতীত। কি ছিলে তুমি, কেমন ছিলে। কিন্তু আমি বর্তমান দেখতে পারছি সুমু। খুব ভালোবাসি আমি তোমায়। তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না “””
সুমু রায়ানের আবদ্ধ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে,,,,,
“” একজন কলঙ্কিত মেয়েকে বিয়ে করবেন আপনি রায়ান। যার শরীরে অন্য পুরুষের ছোয়া লেগে আছে।””
রায়ান অবিশ্বস্য নিজরে তাকিয়ে বলে,,,
“”” মানে? কি বলতে চাইছো তুমি?””
সুমু এইবার কান্না করতে করতে বলে,,,
“” মানে আমি কলঙ্কিত রায়ান। আপনি কি বুঝতে পারছেন না আমার শরিরে অন্য পুরুষের ছোয়া লেগে আছে। কোনো ছেলে একজন কলঙ্কিত মেয়েকে বিয়ে করতে চাই না। আর আপনি ও নিশ্চয় চাইবেন না। তাই প্লিজ আমাকে আর কোনো প্রশ্ন করবেন না। আসি ভালো থাকবেন””””
তারপর সুমু চোখের পানি মুছতে মুছতে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়। একবার যদি পিছনে তাকাতো তাহলে বুঝতে পারতো কেউ একজন ছলছল কান্না মিশ্রিত চোখে তার পানে চেয়ে আছে।
রাত এগারোটা ছুই ছুঁই। ঠিক তখনি দরজা খোলার শব্দে ইয়ানা নেত্র মেলে তাকায়। দেখে আহান এলোমেলোভাবে রুমে ডুকছে। ইয়ানা এক পলক তাকাতে চোখাচোখি হয়। কিন্তু আহানের চোখগুলো ছিলো ভীষন লাল। ইয়ানা নাক মুখ কুচকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। তারপর বিছানা থেকে নেমে নিচে যাওয়ার জন্য উদ্ধত হয় খাবার আনতে। কিন্তু দরজার কাছে যেতেই কারোর হেচকা টানে সরে আসে। আহান ইয়ানাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বড় বড় শ্বাস টানে। ইয়ানা আহান কে পরখ করে বুঝতে পারে খুব ক্লান্ত। তারপর বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,
“”” কি হচ্ছে টা কি? কাল তো বাড়ি আসেন নি। আর আজ এসে এইভাবে হেচড়া হেচড়ি করছেন কেনো “””””
আহান এক ভ্রু উঠিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” মিস করছিলে বুঝি হুম?
ইসস লোকটাকে মুচকি হাসি দিলে কি অপূর্ব লাগে। কিন্তু লোকটা সারাক্ষন কেমন গম্ভির হয়ে থাকে। একটু হাসলে কি হয়। ইয়ানা নিজের চিন্তাভাবনা নিয়ে নিজে বিরক্ত হয়। কি ভবছিলো এইসব। এই দানবের হাসি নাকি সুন্দর ওয়াক।
তারপর আহানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“”” ও হ্যালো মি, মিস করবো তাও আপনাকে ভাবলেন কিভাবে। আজেবাজে চিন্তা থেকে দুরে থাকুন ভাই।”””
“” what! ভাই কে তোমার ভাই হুম? আর তুমি আমাকেই মিস করবে। আরেকটা কথা তোমার ফ্রেন্ডের জন্য যদি আমার রায়ানের কিছু হয় আমি কিন্তু ছেড়ে দিবো না।””
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,
“” মানে কোন ফ্রেন্ড “”
আহানের সোজাসাপ্টা উত্তর,,,
“” সুমু , আজ রায়ান ওকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো। কিন্তু ও রিজেক্ট করে দিয়েছে।””
ইয়ানা অবাক হয়ে বিরবির করে বলে ,,,,
“” রায়ান ভাইয়া আমাদের সুমুকে প্রপোজ করেছে? ওহ নো! আজ সুমুকে কে সামলাবে? কি করছে কে জানে মেয়েটা।
তারপর আহানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” হয়তো ভালোবাসে না তাই রিজেক্ট করে দিয়েছে। তাহলে আপনি এত কালসাপের মতো ফুস্ফুস করছেন কেনো। সুমু রায়ান ভাইয়াকে চাই না তাই রিজেক্ট করেছ”””
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,,,,
“” চুপ যাও ইয়ানা। তোমার ধারনা ও নেই রায়ানের কি অবস্থা হয়েছিলো। আমি আর ইউভি দুপুর থেকে খুজেছি কিন্তু পাচ্ছিলাম না। তারপর যানো কোথায় পেয়েছি?””
ইয়ানা কাপাকাপ কন্ঠে বলে,,,,
“” কোথায়?””
আহান চোখ বন্ধ করে বলে,,,,,
“”” এক্সিডেন্টে রক্তাক্ত অবস্থায় গাড়িতে পেয়েছি। যেই ছেলে কোনো দিন আ্যলকোহল নেই না। আমাকে হাজারবার বারন করতো। কিন্তু আজ সে বারে গিয়ে আ্যলকোহল সেবন করে এসেছে। “”””
ইয়ানা ভীত কন্ঠে বলে,,,
“” আ্যাক্সিডেন্ট! কেমন আছে এখন রায়ান ভাইয়া। ঠিক আছে তো। ”
আহান :: হসপিটালে আছে এখন। ইউভি আছে সাথে। আর তোমার বান্ধুবিকে বলে দিও রায়ানের যদি কিছু হয় আমি কিন্তু কাউকে ছেড়ে দিবো না।
তারপর আহান ওয়াশরুমে শাওয়ার নিতে চলে যায়।
ইয়ানা শুধু ভাবছে কি হচ্ছে এইসব। কেনো হচ্ছে? জীবন গুলাতো এমন না হলে ও পারতো। হঠাৎ করে টেবিলের উপর আহানের ফোনের উপর চোখ যায়। যে করেই হোক আম্মুর সাথে কথা বলে সুমুর ব্যাপারে জানতে হবে।
ইয়ানা একবার ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে কাপাকাপা হাতে ফোন তোলে। কিন্তু ফোনে পাসওয়ার্ড দেওয়া। ইয়ানা বিরক্তি নিয়ে বলে,,,
“” সিট “”
তারপর একের পর এক পাসওয়ার্ড দিতে থাকে। ভুলভাল পাসওয়ার্ড দেওয়ার জন্য সেকেন্ড চলে আসে। ইয়ানা ভয়ে ভয়ে ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে সেকেন্ড শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছে। সেকেন্ড শেষ হতেই ইয়ানা ভাবতে থাকে,,,,
“” এইভাবে পাসওয়ার্ড দিলে হবে না। ভাবতে হবে কি দিতে পারে “”” তারপর মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। ওইটা প্রয়োগ করা মাত্রই সাথে সাথে খুলে যায়।
“” অনুভবের সেহজাদি “” কারন আহান ইয়ানাকে বেশিরভাগ সময় এই সম্মোধন করে। ইয়ানা একটুও দেরি না করে সেলিনা হোসেনের নাম্বারে ডায়েল করেন।
কিছুক্ষন রিং হওয়ার পরে রিসিভ হওয়ার সাথে সাথে ইয়ানা কাপাকাপা কন্ঠে বলে,,,,
“”” হ.. হ্যালো””
ওইপাশ থেকে,,,
“” জি কে বলছেন ‘”
ইয়ানা :: রুই আমি ইয়ানা।
রুয়ানা কান্না করে বলে,,,,
“” আপুইইইই তুমি! আপু কেমন আছো তুমি? মা বাবা খুব চিন্তা করে তোমায় নিয়ে। কোনো সমস্যা হচ্চে নাতো তোমার । কবে বাসায় আসবে তুমি? “””
ইয়ানা :: আমি সব দিক দিয়ে ঠিক আছি। ইনশাআল্লাহ বাসায় ও ফিরবো খুব তারাতারি। এইসব কথা রাখ আগে বল সুমু কেমন আছে?
রুয়ানা : কি হয়েছে আপু তুমার কন্ঠ এমন শুনেচ্ছে কেনো। সুমু আপুকে ও দেখলাম কেমন অন্যমনস্ক। দুপুর থেকে দরজা লাগিয়ে বসে ছিলো। তারপর আম্মু জোর করে খাইয়ে দিয়েছে। এখন ঘুমোচ্ছে।
ইয়ানা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। তারপর বলে,,,
“” আব্বু আম্মু কেমন আছেরে “””
রুয়ানা :: তারা খুব একটা ভালো নেই আপু। আব্বু আগের মতো আমার সাথে দুষ্টামি করে না। খাওয়া দাওয়া করে না ঠিক মতো। তুমি ছাড়া আমাদের পরিবার শান্ত হয়ে গেছে আপু।
ইয়ানার বুকটা হাহাকার করছে। আজ ওর কারনে ওর পরিবারের মানুষগুলো ভালো নেই। ইয়ানা নিজের চোখের পানি মুছে রুয়ানাকে আস্বাশ দিয়ে বলে,,,
“” রুই আমি একদম ঠিক আছি। বাবা মাকে বলবি একদম চিন্তা না করতে। আর তুই তো সবসময় বলতি তুই আমার থেকে অনেক ভালো দায়িত্ব পালন করতে পারবি। তাহলে আজ আমার বড় বোন হয়ে দেখাতো। আজ থেকে বাবা মায়ের সব খেয়াল তুই রাখবি। কি পারবি না? “”
রুয়ানা কান্ন করতে করতে বলে,,,,,
“” আপুইই এইগুলো তো মজা করে বলতাম। তুমি নিজেই তো আমাকে দেখে রাখতে। “””
ইয়ানা আর কোনো কথা বাড়ায় না যে কোনো সময় আহান চলে আসতে পারে। তারপর রুয়ানার উদ্দেশ্যে বলে,,,,,
“” ঠিক আছে রুই আমি তোর সাথে পরে কথা বলছি। সবার খেয়াল রাখিস। আল্লাহ হাফেজ।
রুয়ানাকে কিছু বলতে না দিয়ে ইয়ানা ফোন কেটে দেয়।
তারপর পিছনে ফিরে কারোর বলিষ্ঠ বুকে ধাক্কা খেয়ে “আহহ “করে উঠে।
আহান কপাল কুচকে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে থাকে। আহানকে দেখে ইয়ান একটা শুষ্ক ঢুক গিলে। আল্লাহ এই সাইকো কখন আসলো। তারপর নিজের ওষ্ঠজোরা ভিজিয়ে বলে,,,,
“”” আ.. আপনি “””
আহান ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে বলে,,,
“” হুম আমি। কেনো কোনো সমস্যা?
ইয়ানা হাসার অভিনয় করে বলে,,,,
“”” কি যা তা বলছেন। স.. সমস্যা হবে কেনো?
আহান ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” আমার ফোন তোমার হাতে কি করছে? ”
ইয়ানা ফোনটা তারাতারি করে আহানের হাতে দিয়ে বলে,,,
“” অনেকদিন ধরে নিজের প্রানপ্রিয় ফোনটাকে দেখিনাতো তাই আপনার ফোনটাকে হাতে নিয়ে তৃপ্তি মিটাচ্ছিলাম “””
তারপর আহানকে পাশ কেটে চলে যায়।
আহান ফোনের দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বিরবির করে বলে,,,,
“” ভালোই মিথ্যে বলতে শিখে গেছো অনুভবের সেহজাদি। অগ্নি চৌধুরির চোখে চোখ রেখে মিথ্যে বলা। আজকাল দেখি আমাকে খেয়াল করা শুরু করেছো। পাসওয়ার্ড জেনে গেলে বাহহ।
তারপর আহান একটা বাকা হাসি দেয়।
রাতের অন্ধকার কে দুরে ঠেলে আলোর সন্ধান মেলে।
আহান জগিং করে এসে শাওয়ার নেওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ডুকতে যায়। কিন্তু ওয়াশরুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা। তারপর দরজার বাহির থেকে ঠান্ডা গলায় বলে,,,,
“” ইয়ানা বেবি শাওয়ার নেওয়া হলে তারাতারি বের হও। আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।”””
ইয়ানা বের হতে নিবে এমন সময় ওর মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসে। ওর জন্য আজ বাবা মার থেকে আলাদা। আজ আমি ও দেখি কিভাবে শাওয়ার নেয়। তারপর গলা ঝেরে বলে,,,
“” সরি আমার শাওয়ার নেওয়া এখনো শেষ হয় নি। আপনি এখন আসতে পারেন “”
আহান একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে,,,
“” ঠিক আছে তারাতারি শেষ করো।
তারপর কিছু একটা ভেবে কপাল কুচকে বলে,,,
“” ওয়েট ওয়েট তুমি তো শাওয়ার নিচ্ছো তাহলে আমার ট্রায়াল রুম থেকে কন্ঠ আসছে কেনো? ওইখানে কি করছো তুমি?
ইয়ানা চোখ বড় বড় করে ফেলে,,,
“” এইরে এই সাইকো বুঝে ফেললো নাকি।
তারপর জোরে জোরে বলে,,,
“” পর্যবেক্ষন করছিলাম। ভাবছিলাম এইখানে আজ থেকে সংসার করা শুরু করবো। এইটা ওয়াশরুম নাকি অলিম্পিকের মাঠ।”””
আহান দাতে দাত চেপে বলে,,,,,
“” আমি শাওয়ার নেওয়ার পরে তুমি সারাদিন বসে থেকে ওয়াশরুমে। কিন্তু এখন বের হও। অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ইয়ানা ভাবলেশহীন ভাবে বলে,,,,
“” সরি মি,, চৌধুরি আমি এখন বের হতে পারবো না। আপনি অন্য ওয়াশরুমে যেতে পারেন। আপনার এত বড় রাজপ্রাসাদে তো আর একটা ওয়াশরুম না তাই না। আরো আছে নিশ্চয়, ওইখানে যান।
আহানের রগে মাথা ছিড়ে যাচ্ছে। সামনে পেলে থাপরিয়ে গাল লাল করে ফেলতো বেয়াদপ মেয়ে।
তারপর চিৎকার দিয়ে বলে,,,,,
“” ইয়ানার বাচ্চা তোকে বের হতে বলেছি আমি। ঘার ত্যারামি করলে জান খেয়ে ফেলবো।””
ইয়ানা ও বাঘীনির ন্যায় ক্ষেপে বলে,,,
“” খুলব না কি করবি তুই?””
আহান দাতে দাত চেপে বলে,,,
“” তোর সাহস তো কম না আমাকে তুই সম্মোধন করছিস। সাহস থাকলে দরজা খুলে ত্যারামি কর। “”
ইয়ানা আমতা আমতা করে বলে।,,,,
“” তুমি করতে পারলে আমি করতে পারবো না কেনো শুনি। আ.. আর দ. দরজা খুলে ও কথা বলতে পারি। আপনি আমাকে ভয় দেখান। আপনি জানেন আমি কার বউ।””
আহান কপাল কুচকে বলে,,,,
অনুভবে তুমি পর্ব ২২
“” কার বউ তুমি? আমি তো জানতাম না?
ইয়ানা একটা বড় শ্বাস নিয়ে বলে,,,
“” আ..আমি শয়তান, এনাকন্ডা, বাদর, মহিষ, লুচ্ছা, বিশ্বাসঘাতক, ভন্ড মি, অগ্নি চৌধুরি ওরফে ভন্ডা আহান চৌধুরির একমাত্র বউ। তাই আমাকে ভয় দেখাবেন না। আমার স্বামীর মহিষের মতো শক্তি।”””
আহান তব্দা লেগে আছে। কি বললো এইসব। সুনাম করলো নাকি দুর্নাম।এই মেয়ে আমাকে পাগল করে দিবে।
অনেক্ষন পর্যন্ত আহানের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে ইয়ানা ভেবেছে আহান হয়তো চলে গেছে। এর পর আসতে আসতে করে দরজা খুলে উকি দেয়। উকি দিতেই…..