প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ১৮

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ১৮
Zannat Xhowdury

রাতের মাঝামাঝি ঘুমন্ত দুজন মানুষের মাঝে নেই বিন্দু পরিমাণ ফাঁক ফোকর । একজন আরেকজনকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে
ঘুমের রাজ্যে ঘোর পাক খাচ্ছে । এত বছরের অপেক্ষার যেন সমাপ্তি ঘটলো আজ ।
বালিশের নিচে ভাইব্রেশন মোডে থাকা ফোন টা যেন বার বার কেপে কেপে । এতো শান্তির ঘুমে হঠাৎ বেঘাত ঘটতেই বিরক্তে চোখ মুখ কুঁচকে নিলো রোজা । ঘুম ঘুম ভাবেই খুজতে লাগলো কোথায় বাজছে বেহায়া ফোন টা ।

খুঁজে না পেয়েই বেশ রাগ লাগলো রোজার । তবে
এই রাগে এক বালতি পানি দিয়ে কাঁপতে থাকা ফোন টি শান্ত হয়ে গেলো ।‌হয়তো কল কেটে গিয়েছে । আবারো ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়ে নিলো সে । তবে এবারো, তার শান্তিকে ভেংচি কেটে আবারো বেজে উঠলো হ্যালো কিটি কাভারে মোড়ানো ফোন টি ।
এবার আর আশেপাশের কোথাও না খুঁজে বালিশের নিচে হাত দিতেই পেয়ে গেলো কাঙ্ক্ষিত জিনিস টি । ফোনের স্ক্রিনে পরিচিত নম্বর চোখে পড়তেই ডান হাতে একবার চোখ কচলে নিলো রোজা।
ফোন হাতে নিয়েই পাশে পড়ে থাকা নির্ণয়ের সাদা রঙের গেঞ্জি পড়তে পড়তে বিছানা থেকে নেমে এগিয়ে গেলো বেলকোনির দিকে । চেহারায় বেশ গাম্ভীর্য এনে ফোন রিসিভ করলো
হ্যালো

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সব রেডি করুন আমি আসছি বাংলাদেশে ।
…………..
কথা শেষ হতেই ফোন কেটে দিলো রোজা । দৃষ্টি দিলো তারা জ্বলতে থাকা পরিষ্কার আকাশের পানে । কোথাও নেই কোন মেঘ , তবে মেঘ জমেছে কারো মনে , চোখের কোন যে চিক চিক করছে তার । আচ্ছা রোজা কি কাঁদছে , হয়তো কাঁদছে
আকাশ বিলাস শেষে ঘরে প্রবেশ করতেই চোখ জোড়া থমকে গেলো ঘুমন্ত নির্ণয়ের পানে । ইশ কি অসম্ভব সুন্দর লাগছে মানুষটিকে । এই মানুষটিকে আপন করে পাবার তৃষ্ণায় এত কাল বেকুল হয়ে ছিলো সে , এই মানুষটিকে তা জানে ? ধীর পায়ে এগিয়ে এসে হাটু গেরে বসে নির্ণয়ের ঘুমন্ত মুখের পানে বেশ কিছু ক্ষণ তাকিয়ে র‌ইলো রোজা । নির্ণয়ের কপালে একে দিলো ভালোবাসার পরশ । চোখ উপচে যেন পানি পড়ছে তার । কেন এতো কষ্ট হচ্ছে তার , এই কষ্টের মাঝে যে সে বিলীন হতে চায় না।
তাকে যেতে হবে । তার দায়িত্ব সে ফেলতে পারবে না ।
আমায় মাফ করবেন নির্ণয় ভাই ।

আমার বাংলাদেশে যাওয়াটা অনেক বেশি দরকার । যে দায়িত্ব আমি স ইচ্ছে নিজের করে নিয়েছি তা থেকে বেরুনোর উপায় আমার জানা নেই।
কিছু সময় থেমে বড় একটা নিঃশ্বাস নিলো রোজা । নির্ণয়ের কপালে আবারো একে দিলো ভালোবাসার পরশ ।
ভালোবাসি নির্ণয় ভাই ।
ভেজা চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো রোজা বেড সাইড থেকে টাওয়াল নিয়ে ঢুকে গেলো ওয়াস রুমে ।
বেশ লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এলো রোজা । পড়নেয়সাদা রঙের টাওয়াল । গায়ের বেশকিছু জায়গা উন্মুক্ত । টাওয়াল জড়িয়ে ভেনেটির পাশে গিয়ে দাড়ালো রোজা । হেয়ার ড্রায়ারের সাহায্যে বেশ যত্ন করেই চুল গুলো শুকিয়ে নিলো সে লাগেজ থেকে নিজের পছন্দ স‌ই ফুল স্লিভের একটা টি শার্ট আর বেগি বের করে পড়ে নিলো সে । প্রয়োজনীয় সব জীনিস লাগজে রয়েছে।

লাগেজে লুকনো পাসপোর্ট এর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো সে !
তারপর সযত্নে পকেটে পুরে নিলো । বেডের কাছ থেকে ফোন হাতে নিতেই চোখ গিয়ে পড়লো অবুঝ শিশুর মতো ঘুমিয়ে থাকা নির্ণয়ের পানে । পা যেনো এগোতে চাইছে না তার ।
আমি কি খুব স্বার্থপর হয়ে গেলাম নির্ণয় ভাই ‌?
কাঁদো কাঁদো স্বরের কথাগুলো বলে নিরবে চোখের জল ফেললো রোজা ।
তুমি আমাকে খুজো না নির্ণয় ভাই । আমি নিজেই ফিরবো তোমার কাছে ।
জানো নির্ণয় ভাই , ফিরে যাওয়ার আগে খুব করে ইচ্ছে করছে তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরতে । তবে সে আর সম্ভব ন…..
কথা শেষ করার আগেই হাতের মুঠোয় থাকা ফোন টা আবারো কেঁপে কেঁপে উঠছে খেয়াল হতেই দূত পায়ে ঘর ত্যাগ করলো রোজা ।

স্যার ম্যাম কি আসবে ?
ওহ মিস্টার ইরফাজ , আপনি বড্ড বেশি কথা বলেন ।
তা কখন বললাম ! আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করলাম ।
মেহরিন জান্নাত চৌধুরী নিজের কোথায় অনর তা হয়তো আপনি জানেন না। আজ পর্যন্ত কোন মিশনে সে ফেল করে নি ‌ । মেয়েরা ছলাকলা , ছলচাতুরি জানে এইটা নিশ্চয়ই ভুলে যান নি আপনি । তার জলন্ত প্রমাণ এই মেহরিন এই মিশন তাকে ছাড়া কখনো পুরন হবেনা
আপনি কি তাহলে ম্যাম কে ছলনাময়ী বললেন ।
তা কখন বললাম । ইডিয়েট!
সরি স্যার !

ইরফাজ সাহেব । আপনি আগমী ৪মাস কোন ছুটি পাবেন না এটাই আপনার শাস্তি ।
সে আর বলতে । কিছু হলেই তো আমার ছুটির পিছনে পড়েন আপনি । নিজের তো ব‌উ নে আমার দুঃখ কিভাবে বুঝবেন ।
কথাগুলো মনে মনে বলেই নিজেকে শান্তনা দিলো ইরফাজ ।
আমাকে কে কিছু বললে ইরফাজ ।
ইয়ে মানে স্যার , একটা প্রশ্ন মাথায় ঘোর পাক খাচ্ছে ,যদি অনুমতি দেন তাহলে প্রকাশ করতাম ।
নিজের ভ্রু জোড়ায় হালকা ভাজ এনে ইরফাজের দিকে তাকালো প্রেম ‌। তা দেখে শুষ্ক ঢোক গিলে নিলো ইরফাজ
ইয়ে মানে স্যার মন টা খচ খচ করছিল আপনি নিষেধ করলে থাক।
কি প্রশ্ন ? ঝেড়ে কাশতো শুনি ।

স্যার আমার তো এখন কাশি পাচ্ছে না । আপনি যখন বলছেন একটু চেষ্টা করতে পারি ।
খুক খুক করে কাশার ট্রাই করলো ইরফাজ ।
তোমার মতো তোমার কাশিও বাজে ।
এখন বলো কি প্রশ্ন করতে চাও ।
ম্যাম এতো অল্প বয়সে ডিপার্টমেন্টে যোগ করলো কিভাবে আর একজন মেয়ের উপর ডিপার্টমেন্টে সকলের এতো ভরসা কেন ।
তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা , শুটিং স্কেল সব কিছুই ওকে আলাদা করে করে তুলেছে ‌। তাই ওকে স্পেশাল ভাবেই ট্রিট করা হয়ে থাকে।
আজ পর্যন্ত কোনো মিশনেই ফেল করে নি সে । দেশের পরিস্থিতির কথা চিন্তা করেই ডিপার্টমেন্টে স্পেশাল ভাবে তাকে ডাকা হয়েছে। সিরিয়াস ইশু ছাড়া তো তার টিকি টিও দেখা যায় না ।
আপনার কি মন হয় স্যার ম্যাম পারবে ..
দেখা যাক ।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রায় আধাঘণ্টা ধরে অপেক্ষা কারো জন্য অপেক্ষা করছে ইরফাজ আর প্রেম । এর মধ্যে বেশ কয়েকবার শাস্তি ও পেতে হয়েছে ইরাফাজের
আচ্ছা স্যার ম্যাম দেখতে কেমন বলুন তো ?
আগুন সুন্দরী !
মানে ?
ইয়ে মানে কিছু না !

তোমার বাসায় ব‌উ আছে ইরফাজ ম্যাম কে নিয়ে কৌতুহল ছেড়ে দাও । এদিক টা আমি সামলে নিচ্ছি।
যাহ বাবা ! আমি এমন কি বললাম ।
সরি স্যার একটু অপেক্ষা করতে হলো । ফিমেল ভয়েস এর মিষ্টি কন্ঠস্বর কানে ভেসে আসতেই শরীরে যেন শীতল হ‌ওয়া বয়ে গেলো প্রেমের ।
ফুল স্লিভের সাদা টিশার্ট সাথে ব্যাগি হাটু ছুঁই ছুঁই চুল গুলো উচু করে ঝুটি করা । মুখে কালো মাস্ক ! চোখ জোড়া হালকা কালো দেওয়া অসম্ভব সুন্দরী ।
স্যার , ও স্যার ।

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ১৭

ইরফাজের ডাকে ধ্যান থেকে বেরিয়ে এলো প্রেম । হুস ফিরতেই খেয়াল করলো রোজা ঘট ঘট করে তাদের পেরিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ।
এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস বোকাচোদা তোর ম্যাম তো চলে যাচ্ছে।
আপনাকে ডাকতেই তো দেরি হলো তাই ম্যাম কে গাড়ি দেখিয়ে পানে নিতে এলাম ।
এবার তো চল ।

প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ১৯