Violent love part 34 (2)
Mariam akter juthi
“চারিদিকে হইচই, এর আওয়াজে জুথি আর ঘরে বসে থাকতে পারলো না, আরিশ গেছে প্রায় দেড় ঘন্টা হতে চলল, সেই তখন থেকে ঘর বন্দী হয়ে আছে। আর কতক্ষণ থাকা যায়? এখন নিচ থেকে সাউন্ডবক্সের, উরাধুরা লিরিক্স গান শুনে বুঝতে বাকি থাকে না নিচে কাজিনমহলরা নাচ গান শুরু করে দিয়েছে। এখন সেখানে না গেলে সবকিছু মিস করবে,তাই আর নিজেকে রুম বন্দি না রেখে, আর একবার আয়নার সামনে নিজেকে দেখে, দরজাটা খুলে দ্রুত পায়ে হেঁটে সিঁড়ি বরাবর আসতে থামতে হয় সানজিদা খানের পিছু ডাকে।
‘মৌ!
‘জি বড় আম্মু!
‘তোমার সাথে কথা ছিল, আমার সাথে আসো।
জুথি সানজিদা খানের কথায় একবার নিচে তাকালো, দেখে সবাই স্টেজের সামনে যাচ্ছে। অতঃপর তপ্ত নিশ্বাস ফেলে বাধ্য মেয়ের মত ওনার পায়ের সাথে পা মিলিয়ে রুমে আসতে, সানজিদা খান ওকে বসতে বলে আলমারির কাছে গিয়ে দুটো বক্স বের করে, জুথির পাশে বসে বক্সগুলো খুলে ওখান থেকে এক জোড়া, মোটা দু বড়ি স্বর্ণের প্লাস হীরার পাথর মিশ্রিত সেপ ডিজাইনের রুলি বের করে ওর হাতটা তুলে দুহাতে পরিয়ে বললেন,
‘এগুলো তোমার, কখনো খুলবে না।
‘এগুলো তো অনেক ভারী।
‘সামলাতে শেখো!
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
সানজিদা খানের কথায় জুথি সেদিনের আরিশের পরানো বালাটার দিকে তাকিয়ে নম্র কন্ঠে বললো,
‘কিন্তু উনি তো এই বালাটা আমাকে সেদিন পরিয়ে খুলতে নিষেধ করেছিলেন, এখন,,, — ওর কথার মধ্য সানজিদা খান ওর পা দুটো ওনার কোলের মধ্যে নিয়ে দুটো স্বর্ণের ডায়মন্ড পাথর দিয়ে ডিজাইন করা একজোড়া নুপুর পরিয়ে দিতে দিতে বললেন,
‘কিছু বললে, বলবে আমি খুলে দিয়ে এটা পরিয়ে দিয়েছি।
তৎক্ষণে জুথি সানজিদা খানের কোল থেকে পাটা সরিয়ে আনতে চেয়ে বললো,
‘কি করছো বড় আম্মু? আমার পা তোমার কো, – ওকে সম্পূর্ণ শেষ করতে না দিয়ে সানজিদা খান দৃঢ় কন্ঠে শুধালেন,
‘আমাকে বড় আম্মু বলে ডাকবে না।
জুথির মুখটা তৎক্ষণে ছোট হয় আসে, তার বড় আম্মু বলছে, তাকে বড় আম্মু বলে না ডাকতে? কি দোষ তার? জুথি কে মাথা নিচু করতে দেখে সানজিদা খান নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
‘আজ থেকে মা ডাকবে! পারবে না?
জুথি নিচু মাথাটা তুলে সানজিদা খানের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললো,
‘মা ডাকবো?
‘হুম। — বলে গোল মাঝারি বক্স থেকে ছোট ডায়মন্ড পাথরের স্বর্ণের নাকফুল বের করে জুথি কে তারা দিয়ে বললেন,
‘নাকের ওটা খোলো, এটা পরিয়ে দিচ্ছি।
জুথি সানজিদা খানের কথায় ওনার হাতের দিক তাকাতে দেখে, বেশ মোটামুটি বিবাহিত নারীদের মতো ডায়মন্ড স্বর্ণের নাকের তা জলজল করছে। এটা পরলে নিশ্চিত ওকে বিবাহিত লাগবে, তাই কন্ঠটা চাপিয়ে বললো,
‘এটাই তো ঠিক আছে, ওটা পড়লে কেমন বুড়ো টাইপের লাগবে না?
‘যেটা বললাম, সেটা করো না।
“ব্যাচারির কি আর করার? যেহেতু সানজিদা খান বলেছেন এখন না চাইলেও পড়তে হবে। তাই নাকের ছোট নাক পিনটা খুলে রাখতে সানজিদা খান নিজেই পরিয়ে দিলেন। অতঃপর ওকে দাঁড়া করিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখতে দেখতে বললেন,
‘নাও,পারফেক্ট আছে।
জুথি ছোট ছোট পায়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াতে দেখে আজ ওকে একদম ওর মা চাচীদের মত লাগছে। উনারাও এমন মোটা মোটা ভারী গহনা পড়ে থাকেন। অতঃপর নিজেকে সম্পূর্ণ দেখে আনমনেই বিড়বিড় করে বললো, —‘আমাকে তো পুরো বউদের মত লাগছে, কেমন বুড়ো টাইপের লোকেদের মত সাজিয়ে দিল। এসব নিজের মনে বিড়বিড় করে ঘুরে সানজিদা খানের দিক তাকিয়ে বললো,
‘আমি নিচে যাই?
‘হুম। – উনার হুম বলার সাথে সাথে জুথি দরজা পর্যন্ত যেতে উনি আবারও ডেকে বললেন,
‘মৌ শোন!
‘হ্যাঁ বড় আম্ম, বলতে নিয়েও থেমে বললো –‘ মা বলো?
‘সন্ধ্যার পরে তো কিছু খাওয়া হয়নি, দুপুরেও খেতে যাওনি, টেবিলে খাবার রাখা আছে, আগে খাবে তারপর স্টেজের ওখানে যাবে। ওয়াডার দেওয়ার মতো করে কথাটা বললেন।
জুথি যেতে নিয়েও দৌড়ে এসে সানজিরা খানের গলা জড়িয়ে বললো,
‘মা তোমায় একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
‘হুম।
‘তুমি কি বকা দিবে?
‘বলো!
‘আমি তো ওনাকে ভালবাসতাম, উনার জন্য সবকিছু সহ্য করে নিতাম। কিন্তু বিগত কিছুদিন ধরে উনার প্রতি অতিরিক্ত দুর্বল অনুভব হয়, ওনার প্রতি অন্তর থেকে কেমন অদ্ভুত টান অনুভব করি। উনি ছাড়া প্রতিটা মুহূর্ত কেমন খালি খালি লাগে, কেন এমনটা হয় মা?
জুথির কথায় সানজিদা খান মুচকি হেসে ওর মাথায় চুমু খেয়ে,বললেন,
‘এটাতো হওয়ারই কথা, প্রণয়নের টান যে! সেটা আল্লাহর তরফ থেকে স্বামী স্ত্রী দুজনের হৃদয় তৈরি করে দেন।
জুথি চমকালো অবিশ্বাস্য চোখে মাথাটা একটু উঁচু করে সানজিদা খানের মুখটা দেখল, সত্যি কি ওর বড় আম্মু ওকে চুমু খেলো? জুথি কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি বললেন,
‘একজন মেয়ে, মা ব্যতীত আর কাকে মা বলে ডাকে? আর কেনই বা ডাকে?
জুথি সরু চোখে তাকিয়ে নম্র স্বরে বললো,
‘ওই ব্যক্তির ছেলের সাথে যখন মেয়েটার বিয়ে হয়!
‘এগজ্যাক্টলি! বিয়ে’ বিয়ের পর একটা মেয়ের হৃদয়ে আল্লাহ তায়ালা অদৃশ্য যাদুর মত এক মায়া সৃষ্টি করে দেন স্বামীর প্রতি। আর তোমারও এজন্যই আরিশের প্রতি এমন অনুভূতি হয়।
‘মানে?
‘সেদিন রাতের কথা মনে আছে? ঐদিন তোমাদের বিয়ে হয়েছে।
জুথির মুখে খুশির ঝলক দিয়ে উঠলো সানজিদা খানের কথায়, তাহলে তার ধারণাই ঠিক, সেদিন সত্যি তার বিয়ে হয়েছিল? আরিশ ভাই তার স্বামী? স্বামী কথাটা মনে হতেই কয়েকবার বিড়বিড় করে আওড়ালো অতঃপর উনাকে আবারও জড়িয়ে ধরে লজ্জা লজ্জা ভাব টেনে বললো,
‘শাশুড়ি আম্মু!
‘হুম।
‘উনি যে আমার স্বামী উনার প্রতি ভালোবাসা থাকলেও উনার প্রতি ভয় জিনিসটা কমে না কেন আমার?
‘সময়ের ব্যবধানে ঠিক হয়ে যাবে!
“চারদিক লাইটিং এর স্বচ্ছ আলোয়, হলুদ শাড়িতে uk সাজ ফর্সা মুখোনিতে তানিশাকে যেন দোকানে সাজিয়ে রাখা পুতুল গুলোর মত লাগছিল, আয়ান বার কয়েক তানিশাকে পর্যবেক্ষণ করে, নিজেকে আর স্থির রাখতে পারল না। সাউন্ড বক্সের দায়িত্ব ওখানে থাকা একটা ছেলেকে দিয়ে, উঠে দাঁড়ালো প্রিয়সির নিকট যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তানিশার হঠাৎ স্টেজের সামনে চোখ পরতে দেখে আয়ান ঘোর লাগা দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে কেমন করে এগিয়ে আসছে। এটা দেখে তাড়াহুড়ায় চেয়ার থেকে উঠে, দৌড়ে চলে যেতে নিলে আয়ান খপ করে পিছন থেকে হাতটা ধরে একটানে বুকের উপর ফেলে হিসহিশিয়ে বললো,
‘সেজেছো ভালো কথা, আমার সামনেই কেন বাচ্চাদের মত কাচুমাচু করতে থাকো? বোঝো না আমি ঠিক থাকতে পারি না?
‘দেখুন স্টেজ জুরে অনেক মানুষ আছে, এভাবে দেখলে মানুষ খারাপ ভাব,,
‘বুঝতে পেরেছি, অনেক শখ তোমার’ তোমার সবকিছু আমাকে দেখানোর, চিন্তা করো না বেশি দিন অপেক্ষা করাবো না তার আগে,, ততক্ষণে তানিশা দুহাত দ্বারা পা দুটো উঁচু করে আয়ানের মুখ চেপে ধরে বললো,
‘চুপ করুন, এত নির্লজ্জ কেন আপনি?
তৎক্ষণে গমগম কন্ঠে চেপে রাখা হাতের নিচ থেকে শোনা গেল,
‘বউ যদি সারাদিন সামনে ঘুরঘুর করে, তাহলে কি স্বামী নিজেকে ঠিক রাখতে পারে?
তানিশা বুঝলো, এই লোকটার সাথে পেরে ওঠা সম্ভব না। তাই মুখের চেপে রাখা হাতটা সরিয়ে আবার চলে আসতে নিলে আয়ান তাৎক্ষণে ওকে হুট করে কোলে তুলে স্টেজের সামনে যেতে যেতে একটু ঝুঁকে ওর নাকে নাক ঘষে বললো,
‘পালাই পালাই করা অভ্যাসটা বন্ধ কর, এখন আমরা কপাল নাচ করবো!
‘আল্লাহ, লজ্জা লাগছে! আমাকে নামান প্লিজ।
‘সবাইকে দেখাতে হবে তো, খান বাড়ির ছোট ছেলের বউকে? – বলে লিরিক্সের থাকা ছেলেটির দিক তাকিয়ে রোমান্টিক গান ছাড়তে বললে,
Hum teri mohabbat mein..
yun pagal rahte hain…
Deewane bhi ab humko
deewana kehte hain…
ছেলেটা গান চালু করতে আয়ান তানিশার দিক করা চোখে তাকিয়ে বললো,
‘এখন যদি ঠিক মত নাচ না করো, তো স্টেজে সবার সামনে চুমু খাব!
কি আর করার? এমন হুমকি দিয়েছে, এখন না চাইলেও নাচতে হবে তার সাথে। তাই গানের সাথে তাল মিলিয়ে দুজনে নাচার মধ্য বেশ ঘনিষ্ঠ হয়েছে কয়েকবার, ওদেরকে এভাবে কপাল নাচতে দেখে কাজিন মহল প্লাস সমবয়সী ছেলেমেয়েরা সবাই একটু জোরেই চেঁচিয়ে উঠলো, জিও জিও বলে। সবার এমন উৎসাহ পেয়ে আয়ান মুচকি হেসে, আরেকটু তানিশার কাছে ঘিষতে তানিশা লজ্জায়, ওর শাড়ি খামছে ধরল। এর আগে মনে হয়, এমন বিব্রস্থ অবস্থায় আর কখনোই পড়েনি ও।
ওদেরকে কাপল নাচ করতে দেখে লুসিয়ান মুচকি হেসে ফারির কাছে এগিয়ে ওর হাত চেপে স্টেজে উঠলো। যদিও লুসিয়ান সেভাবে নাচতে পারেনা, আর ফারি সেও তানিশের মত লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে গেল। লুসিয়ান সে ওকে কিছু না বলেই এভাবে ডাইরেক্ট স্টেজে নিয়ে আসবে ভাবেনি, কিন্তু এখন স্টেজে উঠে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে মান সম্মান সব পাঞ্জা হয়ে যাবে। তাই যেটুকু পারলো দুজনে মিলে, মিলিয়ে নাচার চেষ্টা করল।
“তখন জুথি সানজিদা খানের সাথে কথা শেষ করে আসার সময় উনি আবারও খেতে বললে, ও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে, আর কোন রূপ কথা না বলে হেঁটে চলে আসে খাবার টেবিলে। খিদে সংবরণের জন্য যতটুকু প্রয়োজন সেটুকু খেয়ে ডানে বামে না চেয়ে সোজা দৌড়ে স্টেজের কাছে যেতে দেখে। আয়ান তানিশা, লুসিয়ান ফারি কাপল ডান্স করছে। কি সুন্দর লাগছে দুই জুটিকে, জুথি অবাক চোখে তাকিয়ে থাকার মধ্য ওদের ডান্স শেষ হয়। আর ওদের নাচ শেষ হতে জুথির মুখ থেকে আফসোসের সুরে বেরিয়ে আসে,
‘ইস মিস করলাম!
ওদের ডান্স শেষ হতে মাইশা, মনি দৌড়ে গিয়ে,
Ishqam dilbar didi na, didi na.. গানটা ছাড়তে বলে উরাধুরা নাচতে শুরু করলো। ওদের তিন মিনিটের নাচ শেষ হতে পাশ থেকে, আয়ান কালো চশমা পড়ে জামা কাপড়ের উপরে লুঙ্গি পেঁচিয়ে অন্য হাতে লুসিয়ানের দিক লুঙ্গি ক্যাচ করতে সেও ডান হাতে, লুঙ্গিটা কেচিং করে হাটু পর্যন্ত প্যান্টের উপর পড়ে নিয়ে লুঙ্গি ড্যান্স গানটায় স্টেজে উঠে লুঙ্গি জাগিয়ে নাচ দিতে সবাই হু হু করে হেসে দিল। যদিও লুসিয়ান শুধু লুঙ্গিটা উপর নিচ করছে, কারণ তার নাচার কোন অভ্যাস নাই। ওদের এমন ডিজে নাচ দেওয়ার মধ্যে কোত্থেকে আরিশ ও ওদের মত লুঙ্গি পেঁচিয়ে উরাধুরা নাচ দিতে জুথি অবিশ্বাসে চোখে হা করে তাকিয়ে দৌড়ে গেল, স্টেজের উপর। জুথি গিয়েছে তো ভালো কথা, গিয়ে আয়ানের পরনের লুঙ্গিটা টেনে খুলতে নিলে, আইয়ান হঠাৎ এমনটা হওয়ার দরুন ঠাস করে চিৎ হয়ে পরে লুঙ্গি চেপে সামনের দিক তাকিয়ে জুথি কে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,
‘কি করছিস বনু? আমার মান ইজ্জত!
কে শুনে কার কথা? জুথি আয়ানের পরনের লুঙ্গি টেনে খুলে ওদের মতো শাড়ির উপর পেঁচিয়ে বললো,
‘তুমি অনেক নাচ করেছো আয়ান ভাই! এখন আমি তোমার ভাইয়ের সাথে নাচবো তুমি বরং দেখো, — বলে আরিশের সামনে গিয়ে সুন্দর একটা হাসি উপহার দিয়ে, আরিশের মত লুঙ্গি জাগিয়ে জাগিয়ে মুখে লুঙ্গি ড্যান্স গানটা বিড়বিড় করে নাচতে লাগলো। ওদের লুঙ্গি ড্যান্স শেষ হতে কাজিন মহলের সব স্টেজে উঠে ‘চিকনে চামিলি চুপকে রাঙ্গলি, দুয়া খেলোসে আইয়ি.. সাড়ে তিন মিনিটের গানটায় একসাথে নাচ শেষ করে সবগুলো ক্লান্ত হয়ে একেকটা চেয়ারে এসে বসলো। এইবার বুড়ো বুড়িদের পালা!
উনাদের নাচতে বলায় প্রথমে ওনারা নাচতে না চাইলেও ওদের জোরাজুরিতে জুথির নানা-নানী, ফারির নানী, রাদিফের নানা-নানী সবাই স্টেজে উঠে এমন নাচ দিল যা দেখে ছোট থেকে শুরু করে বুড়োরা না হেসে পারলো না। বিশেষ করে জুথির নানীর নাচ দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার পালা। কি ভৌতিক স্টাইল নাচ। আরিশের নানা নানী কেউ বেঁচে নেই, ওর মামারা আর খালারা এসেছেন বিয়েতে। ওনাদের বিখ্যাত নাচ শেষ হতে জুথিদের নাটকের পালা এল, তাই ওরা ক্যাটাগরী অনুযায়ী যে যার সাজ দিতে মাঝ পথে বাধা হয়ে দাঁড়ালো আরিশ। আরিশ কে দেখে জুথি কিছু বলবে তার আগেই আরিশ বললো,
‘মৌ কোন জামাই সাজবে না! ও তোদের নাটকের বউ হবে।
আরিশের এমন কথায় সবাই সবার দিকে তাকিয়ে, ফারি ভ্রু কুঁচকে বললো,
‘ও না হলে জামাই হবে কে?
‘কেন আমি!
‘তুমি? – চোখ দুটো বড় বড় করে।
আরিশ আর দাঁড়ালো না জুথির হাত ধরে স্টেজের দিক যেতে যেতে বললো,
‘জামাই বউ, আমি আর মৌ! তোরা কে কি সাজবি, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়, গো।
কি আর করার? আরিশ ভাই তাদের সাথে অভিনয় করবে এটা ভাবতেই কেমন লাগছে। তবে ছেলের বাড়ি যেতে দেরি হয়ে যাবে বলে, ওদিকে যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি করে, ফারি মাদবর চাচা সাজল, ওর আব্বুর পাজামা পাঞ্জাবি পরে। সূচি সাফওয়ান খানের ফতুয়া লুঙ্গি পরে ঘটক সাজলো। তানিশা শালী, এভাবে পাট অনুযায়ী একেকজন একেকটা পরে চলে এলো আবারও স্টেজে। ওদের এমন সাজ দেখে চোখ কোঠায় উঠে গেল, সাফওয়ান খান, সাইফুল খানের, সাথে উনাদের কর্তীরা তো আছেন নি। ওনারা মুচকি হাসলেন, উনাদের ছেলে মেয়েরা যে এতটা আনন্দ করতে জানে, বিয়ের অনুষ্ঠান না পাতলে হয়তো জানাই হতো না।
ওরা রেডি হয়ে আসতে, জুথি আরিশের কাছে একটু ঘিঁষে ফিসফিসিয়ে বললো,
‘আপনি যে চলে এলেন অভিনয় করতে? জামাই এর অভিনয় পারবেন?
‘জানিনা!
জুথি আরিশের মুখে জানিনা শুনে, নিঃশ্বাস ছেড়ে আয়ানের আনা তখনকার একটা লুঙ্গি এনে ওর হাতে দিয়ে বললো,
‘নিন এটা পড়ুন, আর শার্টটা খুলুন!
‘কেন?
‘এটাই জামাই পড়া থাকবে!
‘আমি পারবো না!
‘তাহলে আমি আপনার বউ হব না!
‘বউ তোকে আমারই হতে হবে। গম্ভীর কন্ঠে।
‘তাহলে লুঙ্গি পরেন, শার্টটা খুলেন!
আরিশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে দেখে, জুথি লুঙ্গিটা নিজেই আরিশকে কোনরকম পরিয়ে, গায়ের শার্ট টা টেনে খুলে ভিতরের সেন্ডেল গেঞ্জিটা টেনেটুনে ছিড়ে দম নিয়ে বললো,
‘এইবার পারফেক্ট!
জুথি আরিশের নতুন গেঞ্জিটা ছিড়ে ফেলতে, আরিশ রাগি চোখে তাকিয়ে দাঁত দাঁতের উপর চেপে বললো,
‘এটা কি করলি?
জুথি একটু বেশিই আবেগি হয়ে গিয়েছিল, সন্ধ্যা বেলার সানজিদা খানের কথায়, ও আরিশের এমন ডিপলি নরম ব্যবহারে। ওর মনেই ছিল না,আরিশ কতটা ডেস্পারেট গম্ভীর রাগী মানুষ। সেখানে ও কিনা আরিশের গেঞ্জিটা ছিঁড়ে দিল?
জুথি কে কাচুমাচু করতে দেখে, আরিশ বিরক্তির নিশ্বাস ফেলে ওর হাতটা টেনে কাছে এনে বললো,
‘একদম ঢং করবি না, বিরক্তি লাগে আমার।
তৎক্ষণে ফারি মাদবর চাচা নাটকটা প্লে করে, আরিশ কে তারা দিয়ে বললো, – ‘ভাই শুরু হয়ে গেছে, ব্যাস কথার তালে তাল মিলিয়ে সবগুলো অভিনয় শুরু করল।
‘আপনি চেইতেন মাদবর চাচা! চুপ কইরা বন.. আপনি চাইতেন না মাদবর চাচা। আর ওদের অভিনয়তে গড়াগড়ি করে হাসতে শুরু করলো বড়রা সবাই। শেষ পর্যায়ে এসে, যখন ফারি লুঙ্গি জাকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, – ‘ আবে তুই শালায় মানুষ খারাপ লাঠির বাড়ি খা, বলে সবাই আরিশের পিঠে মারতে শুরু করলে জুথি দৌড়ে এসে কান্নার অভিনয় করে ফারির হাত ধরে বললো,
Violent love part 34
‘মারবেন না, মারবেন না,মাদবর গো, ও মাদবর মারবেন না মোর স্বামী রে, শোনেন মাদবর গো। আমাগোরে মাফ কইরা দেন। বলে নিচ থেকে আরিশ কে তুলে বাড়ি চলো বলে যেতে নিলে, আরিশ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের ব্যক্তিত্বে ফিরে এসে স্টেজে বসেই জুথি কে কোলে তুলে সবার উদ্দেশ্যে একটু চেচিয়ে বললো,
‘দুনিয়া এক দিক, বউ এক দিক, বউয়ের খুশির জন্য মাঝে মাঝে নিজের খোলস ছেড়ে এমনটা হওয়া যায়। কারণ সবার ঊর্ধ্বে বউ, তাই আমি আমার মৌ কে নিয়ে গেলাম। – বলে কারো দিকে আর না তাকিয়ে, রাফ পায়ে হেঁটে ভিতরে চলে গেল।