তরঙ্গে তোমার ছোঁয়া পর্ব ৪০
ফারহানা নিঝুম
আকাশ যেন হঠাৎ করেই সমস্ত অবরুদ্ধ ক্রোধ উগরে দিচ্ছে। মুহূর্মুহু ঝড়ো হাওয়ায় গাছপালা কেঁপে উঠছে, আর প্রলয়ের মতো বৃষ্টি নেমে এসেছে মাটির বুকে। প্রতিটি ফোঁটা যেন পাহাড়ি ঢলের জেদ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে পৃথিবীর বুকে। চারপাশে শুধু জল, কাদার ছাপ, আর তুমুল শব্দে নেমে আসা শ্রাবণের জবাবহীনতা।
রাস্তা ঘাট সব যেন একেকটা ক্ষতবিক্ষত চিত্রকল্প গর্তে জমে থাকা পানিতে আর কাদা মাখা পথ যেন কোনো যুদ্ধবিধ্ব’স্ত শহর। পথচারীদের কষ্ট চোখে পড়ার মতো পা ডুবিয়ে পা ফেলে সামনে যাওয়া যেন একেকটা পরীক্ষার চূড়ান্ত অধ্যায়। যানবাহন গুলোর চাকা কাদা ও পানিতে আটকে যায় বারবার, আর চারপাশে শুধু একটানা ঝাপসা হয়ে আছে।
বৃষ্টিতে ভিজে জুবুথুব অবস্থা ঝুমুরের। রাস্তা একটা মানুষ তো দূরে থাকা কাকপক্ষি পর্যন্ত নেই,অথচ নবীন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
“কি করছো এটা চলো ভিজে গেছি আমরা!”
নবীন এখনো দাঁড়িয়ে আছে নড়ছে না, ঝুমুর বিরক্ত হয়ে বলল,
“থাকো তুমি, গেলাম আমি।”
ঝুমুর যেতেই নেবে আকস্মিক হাতে টান পড়ে তার।পুরুষ্ট বক্ষে এসে পড়লো সে। পিটপিট চোখ করে তাকানোর চেষ্টা করছে সে,চোখের পাতা ছুঁয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির ফোঁটা।চোখ মেলে তাকানোর পূর্বেই পুরুষ্ট ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে যায় তার কপাল। অনাঙ্ক্ষিত চুম্বনে ক্ষীণ কেঁপে উঠলো ঝুমুরের অন্তঃস্থল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“শোনো হুট করে ভালোবেসে ফেলছি। এখন তুমি মেনে নাও বা না মেনে নাও কিছু করার নেই।”
এরকম প্রেমের প্রস্তাবে ঝুমুর হাসবে না কাঁদবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না।চুপ রইল ক্ষণকাল। অতঃপর বলল,
“কি বললে আবার বলো?”
খুব যত্নে হাতটি ছেড়ে দিল নবীন,চোখে মাদকতা মেশানো, রাস্তার মাঝখানে হাঁটু গেড়ে বসে সে।পকেট থেকে বের করে আনে খুবই স্নিগ্ধ একটি জিনিস।বেলী ফুলের মালা।
“অনেকেই তো গোলাপ ফুল রিং দিয়ে প্রপোজ করে,আমি না হয় ভালোবেসে বেলী ফুলের মালা দিলাম। তুমি কি তা সদানন্দে গ্রহণ করবে?”
ফিচলে হাসে ঝুমুর, এবার কি বলা উচিত?না করা উচিত?উহু মোটেও নয়। এরকম প্রেম নিবেদন কজন করেছে তাকে? সবাই তো বহু কথা বলে,এন করবে তেন করবে! কিন্তু কজন ভালোবেসে বলে সদানন্দে গ্রহণ করবে?
“গ্রহণ করতে পারি তবে আমার একটা শর্ত আছে!”
ক্ষণিকের জন্য থমকে যায়, দ্বিধা নিয়ে শুধোয়,
“কি শর্ত?”
“আমাকে কি দিতে পারবেন?”
ফাঁকা ঢোক গিললো সে। দেওয়ার মতো তো তার কাছে কিছুই নেই!
“ঝুমুর আমার কাছে আমি ছাড়া তোমাকে দেওয়ার মতো কিচ্ছু নেই।যদি চাও তাহলে বুক ভরা ভালোবাসা দিতে পারি। সারা জীবন পাশে থাকব কথা দিতে পারি। খুব বেশি না হলেও যতটুকু ভালো রাখা যায় ততটুকু চেষ্টা করতেই পারি।”
ডান হাতটা বাড়িয়ে দিল ঝুমুর।
“তাহলে পড়িয়ে দাও।”
“শর্ত?”
“আমার দাবী কিছু চাওয়ার ছিলো, কিন্তু তুমি যা দিচ্ছো সেগুলো প্রায় বিলুপ্ত! কেউ কাউকে মন থেকে ভালোবাসে না এখন! সেখানে ফ্রিতে যদি ভালোবাসা সাথে জীবন সঙ্গী পাই তাহলে কেন মানা করব?”
নবীন এক পলক দেখে নিল ঝুমুরের স্নিগ্ধ মুখ খানা। অতঃপর অপেক্ষা না করে পড়িয়ে দিল বেলী ফুলের মালা টা।এই বুঝি প্রেম নিবেদন! দু’জনের আনন্দের চাপ মুখাবয়ব জুড়ে স্পষ্ট।
দুপুর বেলা, আকাশ টা ম্লান হয়ে আছে।এই যে কাল থেকে বৃষ্টি হয়েছে তাই আজকেও আকাশ টা মাঝে মধ্যে ঘন কালো মেঘে ঢাকা পড়ে আবার একটু পরেই মেঘ উড়ে যায়। ফারাহ টেবিলে বসে আছে।ঠিক মতো খায়নি সে,এদিকে সবার খাওয়া প্রায় শেষ। ফারাহ কে জোরপূর্বক খেতে বসিয়েছেন রুবেনা শেখ। প্লেটে চামচ নাড়াচ্ছে সে। মনে মনে ভীষণ রাগ লাগছে লেফটেন্যান্ট সাহেবের উপর।গেলো তো গেলো আজকে দুইদিন। একটা বার কল পর্যন্ত করলো না। মাঝে মাঝে ফারাহর মনে হয় বেডা বাইরে গেলেই ভুলে যায় সে বিয়াইত্তা! রাগে ফুঁসছে ফারাহ। অনুভব করলো আরো একটা অস্তিত্ব। যষ্ট ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিক তাকালো ফারাহ। হলুদ রঙা শার্ট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে সাইফুল শেখ। হয়তো হবে বাইরে থেকে ফিরেছে। ফারাহ কিছু বললো না, সাইফুল এগিয়ে এসে ঠিক তার পাশের চেয়ারে বসলো। কিঞ্চিৎ অবাক হলো ফারাহ,লোকটা যেনো গা ঘেঁষে বসেছে তার। ফাঁকা ঢোক গিলে সে উঠে গেল। সেদিনের কথা স্মরণে এলো তার।বিয়ের আগের দিন কেমন করে তাকে জড়িয়ে ধরেছিল এই লোকটা! খুবই বিশ্রী একটা অনূভুতি! ফারাহ দাঁড়াতে চাইলো না, চুপচাপ হাঁটতে লাগল। অকস্মাৎ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল সাইফুল।
“আরে কোথায় যাচ্ছো ফারাহ!”
পা জোড়া থামে ফারাহর।পিছন ফিরে তাকাতে ইচ্ছে করলো না, কিন্তু উপায় নেই সে ফিরে তাকালো।
“কিচেনে যাচ্ছি ভাইয়া। আপনি কি কিছু বলবেন?”
“না বলছিলাম এখানে এসে বসো একটু, সারাদিন তো কাজ করো।”
প্রস্তাব পছন্দ হলো না ফারাহর। সে কেনো তার সাথে বসতে যাবে? ফারাহ অনুভব করেছে আরিয়ান বা নিহাল দুজনেই তো তাশফিনের বন্ধু।তাদের সাথে যতটা সহজ হতে পারে ততটা সাইফুলের সাথে হতে পারে না। লোকটার চাহনি বিশ্রী!তার আচরণ সব কিছুতে গা গুলিয়ে উঠে তার। ফারাহ আপত্তি জানিয়ে বলল,
“আমার তো সামনে এক্সাম ভাইয়া আম্মু বলেছেন খাওয়া শেষে একটু পড়তে। আমি আপনি বরং বসুন আমি আসছি।”
ফারাহ সাইফুলের উত্তরের অপেক্ষা করলো না, চুপচাপ নিজের রুমের দিকে চলে গেল।
রুমটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার। মিনিট দশেক পর টুং টুং শব্দ করে মুঠোফোন টা বেজে উঠলো। বালিশের নিচেই রাখা, উচ্চ শব্দ শুনে ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এসে ফোন টা রিসিভ করে ফারাহ।আরিফা আহমেদ কল করেছেন। মায়ের ফোন পেয়ে আনন্দে আ’ত্মহা’রা ফারাহ।
“হ্যালো আম্মু কেমন আছো?”
আরিফা আহমেদ রান্না করেছিলেন,এক ফাঁকে ভাবলেন মেয়েটার সাথে একটু কথা বলা প্রয়োজন। শুনেছে তাশফিন চলে গেছে, মেয়েটা নিশ্চয়ই একা আছে।তবে ও বাড়ির সবাই যে তার কে ভালোবাসে তাতে কোনো সন্দেহ নেই উনার।
“আমি ভালো আছি, তুই কেমন আছিস?”
“আমিও ভালো আছি আম্মু। আব্বু কোথায়?”
“তোর আব্বু বাইরে বারান্দায় আছে, ভাইজানের সাথে কি সব আলোচনা করছে।”
ফারাহ ছোট্ট করে জবাব দিলো,
“ওহ্।”
আরিফা আহমেদ চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন,
“শোন চাচীর সাথে কথা বল, তোর সাথে কথা বলবে বলছে কাল থেকে!”
“আচ্ছা দাও।”
শায়লা আহমেদ দোতলায় ছিলেন,আরিফা আহমেদের গ্যাসের আগুন কমিয়ে দিয়ে ফোন নিয়ে দোতলায় গেলেন। মানুষটা কিছু দিন যাবত বড্ড অসুস্থ!স্নেহার সাথে ওরকম অবস্থা হয়েছিলো তারপর হুট করে বিয়েও হয়ে গেল!সব মিলিয়ে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি!
ঘরের এক কোণে চুপচাপ বসে আছেন তিনি,আগমণ ঘটে আরিফা আহমেদের।
“আপা ফারাহর সাথে কথা বলো ফোনে আছে ও।”
শায়লা আহমেদ ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে এসে ফোন টা হাতে নিলেন।
“কেমন আছিস ফারাহ মা?”
“আমি ভালো আছি, কিন্তু তুমি কি করছো নিজের অবস্থা?এত অসুস্থ হলে চলবে?”
চোখ দুটো খিঁচিয়ে বুঁজে নিলেন শায়লা আহমেদ, কান্না টুকু আটকে নিয়ে স্বভাবিক স্বরে বলেন,
“আমার স্নেহা টা কেমন আছে রে?”
ফারাহ হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলল,
“স্নেহা যে ঠিক কতটা ভালো আছে তুমি স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করবে না। আরিয়ান ভাইয়া স্নেহা কে খুব ভালো রেখেছে।”
মেয়েটা ভালো আছে কথাটা জানতে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেললেন শায়লা আহমেদ। ফারাহ এবং স্নেহা দু’জনেই ছোট। ফারাহ কে সামলে নেওয়ার জন্য তাশফিন ছিলো, কিন্তু স্নেহার জন্য যে কেউ ছিলো না? যাক অবশেষে তারো কেউ হয়েছে।
ফোনের টুং শব্দে ফোন তুলে নিল নিহাল।সেই নামটি আবারো দেখে খানিকটা রাগ হলো তার।
“কি সমস্যা পৃথা? বারবার কল করছো কেন?”
অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা অষ্টাদশী কন্যা পৃথা তীব্র অভিমান নিয়ে বলল।
“স্যার আপনি কেন আমার সাথে কথা বলছেন না? কেন দেখা করছেন না?”
ক্ষুধিত হলো নিহাল।
“তুমি কি চাও পৃথা? আমি এখন তোমার পিছু পিছু ঘুরঘুর করব? ফর গড সেইক পৃথা এই পাগলামো গুলো থামাও।”
অশ্রু কণায় ভরে উঠে আঁখি জোড়া অষ্টাদশীর ।
“আপনি এভাবে কেন বলছেন স্যার? আমি তো আপনাকে…
“হুঁশ একদম চুপ? এসব কথা বলবে না পৃথা।”
ফোন সপাটে রেখে দিলো নিহাল। জানালার কাছে বসে থাকা অষ্টাদশী আকাশ পানে দৃষ্টি ফেলল। ভঙ্গুর হৃদয় আর্তনাদ করে বলতে চাইলো।
❝কারো ভাগ্যে লেখা থাকে কারো বুকের আশ্রয়,
আর কারো কপালে জোটে শুধু চোখের জল আর নিরব অপেক্ষা।
সব কিছুই যেন পূর্বলিখিত প্রেমও, অপূর্ণতাও। ❞
বড়সড় একটি সমুদ্রের ধারে আজকের দিনটি এক বিশেষ নজরদারি আর উত্তেজনার সাক্ষী হতে যাচ্ছে। লেফটেন্যান্টের জাহাজটি শান্তিপূর্ণ, কিন্তু দৃঢ় গতিতে সমুদ্রের উপর ভেসে চলছে, এর পালের ছায়া দীর্ঘ হতে হতে বিস্তৃত আকাশের সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি জাহাজের ঢেউ ভেঙে সাগরের জল ফেনায়িত হয়ে উঠছে, তবে লেফটেন্যান্টের জাহাজের নীরব অগ্রযাত্রা যেন সতর্কতার সঙ্গে এ সমস্তকিছু উপেক্ষা করে এক একরকম লক্ষ্যস্থির।গোপন সূত্রে জানা গেছে, আজকের দিনটি আরো গুরুত্বপূর্ণ। কিছুটা দূরে, গোপন পথে সমুদ্রের অন্ধকারে আরেকটি বিশাল জাহাজ চলতে থাকে, যার উদ্দেশ্য কিছু নিষিদ্ধ এবং অবৈধ মালপত্র পৌঁছে দেওয়া। সেই জাহাজে থাকতে পারে মাদক, অস্ত্র, কিংবা চোরাচালানী দামী রত্ন সব কিছুই যেগুলো একদিকে তো দেশের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে, অন্যদিকে সাগরের অনিরাপদ পথে এগিয়ে চলে চো’রাকারবারিরা।
লেফটেন্যান্টের জাহাজ এখন গভীরভাবে টহল দিচ্ছে, যেন একটি ঘূর্ণিঝড়ের চোখে আটকে গেছে তার সমস্ত মনোযোগ। তার চোখে পড়ছে না শুধু সমুদ্রের বিশালতা, বরং সেই অবৈধ জাহাজের গতিপথ, যা শত্রুর মতো সমুদ্রের বুকে পা ফেলে রেখে চলে।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার তাশফিন শেখ খুবই সতর্ক ভঙ্গিতে তার সহকর্মীদের দিকে ইশারা করলেন। তার চোখে ছিল এক দৃঢ় অভিব্যক্তি, যেন সমুদ্রের বিশালতার মধ্যে যে এক অদৃশ্য শত্রু ঘুরে বেড়াচ্ছে, তা এখন তাদের কপালে ঝুলছে। তার দৃষ্টি যেন সুঁচালো হয়ে উঠেছে, এমনকি একটি ক্ষুদ্রতম ইশারাও যেন প্রয়োজনীয় তার জন্য। দূরে, সাগরের গভীরতার মধ্যে এক রহস্যময় জাহাজের সিলুয়েট স্পষ্ট হতে শুরু করেছিল।
“নাইম, ওই দেখো!”
তাশফিনের কণ্ঠে তীব্র সতর্কতা, তার গলা গভীর হয়ে উঠেছে,গোপন সংকেত।
নাইম ইসলাম, লেফটেন্যান্টের নির্দেশে দ্রুত চোখ মেলল। দূরের অন্ধকারে জাহাজটির সিলুয়েট যেন আরো পরিষ্কার হয়ে উঠছে বড় এবং ভয়ংকর। তার চোখে অসীম সতর্কতা, কারণ সে জানে এখানে আর কোনো ভুলের অবকাশ নেই।
“কমান্ড সবাই সতর্ক হও!”
তাশফিনের নির্দেশ যেন এক গভীর নিঃশ্বাসের মতো হাওয়ায় ভেসে যায়। এক মুহূর্তের জন্য পুরো জাহাজে নীরবতা, যেন অদৃশ্য কোনো শক্তি তাদের উপস্থিতি অনুভব করেছে। কিন্তু তাশফিন এবং তার দল জানে এটা আর কোনও সাধারণ টহল নয়। আজকের এই রাতটি এক অন্যরকম।যতই জাহাজটি কাছে আসতে থাকে, ততই তার সংকেত পরিষ্কার হয় এটি কোনো সাধারণ বাণিজ্যিক জাহাজ নয়, বরং চো’রাচালানী। মুহূর্তের মধ্যে, এক দারুণ রণকৌশলে তারা প্রস্তুত হয়ে যায়।হঠাৎ, সাগরের নিরবতা ভেঙে ওঠে গোলাগুলি শুরু হয়! শব্দের তীব্রতা যেন আকাশের মধ্যে ঢেউ তুলেছিল, এবং সমুদ্রের জল মেঘের মতো কাঁপতে থাকে। লেফটেন্যান্ট তাশফিন শেখের নিঃশব্দ আদেশে তারা অন্ধকারে নিজেদের অস্তিত্ব স্পষ্ট করে তোলে, যেন এক অসীম যুদ্ধে একে অপরের মুখোমুখি।পাচারকারীরা বুঝতে পেরেছিল যে তাদের পালানোর কোনো পথ নেই।
তাদের জাহাজ সমুদ্রের গভীরে আছড়ে পড়ছিল, কিন্তু তাশফিন ও তার দলের রণকৌশল সুনির্দিষ্ট এবং নিখুঁত। গোলাগুলির শব্দ মিশে গিয়েছিল জাহাজের কপালে বাজানো স্রোতের সাথে, কিন্তু পাচারকারীরা বুঝতে পারছিল এটা আর পালানোর সুযোগ নয়।অফিসার নাইম ইসলাম এক নিঃশ্বাসে শীতলভাবে জাহাজটি লক্ষ্য করল, তার হাতে থাকা রাইফেল প্রস্তুত। সোজা এক নজর দেখে নেয়ার পর সে বুঝে গেল, এটার একমাত্র সমাধান গোলাগুলি থামিয়ে সমুদ্রের ঐ বিশালত্বে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।পাচারকারীরা নিজেদের হাল ছেড়ে দেয়। তাদের ইঞ্জিন থেমে যায়, আর জাহাজটি একেবারে নিরুৎসাহিত হয়ে সমুদ্রের বুকে থেমে যায়। তাশফিন শেখ এবং তার দল তাদের শিকারকে ধরেছে। পাচারকারীরা যুদ্ধের সব পালা হারিয়েছে।
তরঙ্গে তোমার ছোঁয়া পর্ব ৩৯
বুকের ভেতর অজানা ভয় কু ডাকছে ফারাহর, কিছু একটা হতে চলেছে। কেমন জানি অস্থির লাগছে তার।তার লেফটেন্যান্ট সাহেব ঠিক আছে তো? কিছু হয়নি তো তার? চিন্তায় চিন্তায় হাঁসফাঁস করছে ফারাহ।তার জানা নেই সে কেমন আছে!