অনুভবে তুমি পর্ব ২৭

অনুভবে তুমি পর্ব ২৭
লিজা মনি

রাত দশটা বেজে ছাব্বিশ মিনিট। অনেক্ষন যাবৎ সুমুর ফোনে কল বেজেই চলছে। নিচ থেকে এসে দেখে ফোনের ফ্লাশ জলছে। তারাতারি করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে পরিচিত নাম্বার দেখেতে পেয়ে রিসিভ করে বলে,,,,,
“” আসসালামু আলাইকুম।””
— ওয়া আলাইকুম আসসালাম। যাক অবশেষে দয়া হলো ফোনটা ধরার।
সুমাইয়া :: আসলে আমি ফোনের কাছে ছিলাম না। নিচে ছিলাম এতক্ষন তাই ধরতে পারি নি।
— হুম পরেরবার থেকে যেনো দেরি না হয়। আমি ফোন দিলে সাথে সাথে রিসিভ করবে ওকে।
সুমাইয়া ছোট করে বলে,,,

‘” হুম চেষ্টা করবো। খাবার খেয়েছেন রায়ান। ”
— হুম তুমি?
সুমু:: হে এইমাত্র খেয়ে আসলাম।
রায়ান :: ঠিক আছে নিশ্চয় এখন ক্লান্ত তুমি। তাহলে আর রাত জাগিও না। ঘুমিও পড়ো কাল ভার্সিটিতে দেখা করবো ওকে।
সামনে এক্সাম তাই পড়ার প্রচুর চাপ। সুমু সত্যিই খুব ক্লান্ত ছিলো। লোকটা কথার মাধ্যমেই কিভাবে যেনো বুঝে যায়।
সুমু :: হুম।
রায়ান :: গুড নাইট সোনা।
সুমু — গুড নাইট।
রায়ান :: আর কিছু বলবা না?
সুমু না বুঝার অভিনয় করে বলে,,,
— আর কি বলবো?
রায়ান ::: আমি গুড নাইটের পড়ে যা বলেছি তা রিপিট করতে। থাক আর বলা লাগবে না।
বলেই রায়ান ফোন কেটে দেয়। সুমু ও একটা মুচকি হাসি দিয়ে গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে পারি জমায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আহান অফিস থেকে এসে দেখে ইয়ানা খাটে আধশুয়া হয়ে সুয়ে আছে। আহান ইয়ানার দিকে এক পলক তাকিয়ে তার শার্ট পরে নাচানাচির কথা মনে পড়তেই অজান্তেই হেসে ফেলে। ইয়ানার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। মেয়েটা আজ কেনো এত মোহনীয় লাগছে। মেয়েটার এই ঘুমন্ত চেহারা দেখে হৃদয়টা বেসামাল হয়ে পড়ছে। এই মেয়ে নির্ঘাত মেরে ফেলবে।আহান নিজের মনটাকে শান্ত করে ওয়াশরুমে চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে সোজা বেলকনিতে চলে যায়।

প্রায় অনেক্ষন পর ইয়ানার হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে যায়। আধশুয়া হয়ে শুয়ে থাকার কারনে ঘারটা হালকা ব্যথা করছে। চারদিকে চোখ বুলিয়ে রুমটাকে পরখ করে নেয়। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে দরজা ভিতর থেকে লাগানো তার মানে ওনি চলে এসেছে। ইয়ানা বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে উকি দেয়। না ওয়াশরুম পুরো ফাকা। তারপর কিছু একটা ভেবে বেলকনিতে যায়। বেলকনিতে আহানের অবয়ব দেখে পিছন থেকে এগিয়ে যায়। কাছে যেতেই ইয়ানা কেশে উঠে। বিরক্তি নিয়ে আহানের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় চোখ বন্ধ করে সিগারেটের ধোঁয়া উরাচ্ছে। ছিহহহ ওনি সিগারেট ও খায়। ইয়ানা রেগে আহানের হাত থেকে সিগারেট নিয়ে নিচে ফেলে পা দিয়ে পিশে দেয়। হঠাৎ আক্রমনে আহান ভরকে যায়। যখন বুঝতে পারে কাজটা কার রাগটা মাথায় আবার চেপে বসে। চেয়ার থেকে উঠে ইয়ানার হাত পিছন থেকে মুচর দিয়ে হুংকার দিয়ে বলে,,,,

“” সাহস কি করে হয় তোমার বিয়াদপ মেয়ে আমার হাত থেকে সিগারেট ফেলে দেওয়ার। ইউ আর স্টুপিড গার্ল।”
আহান ইয়ানার হাত অতিরিক্ত চেপে ধরায় মনে হচ্ছে হাতের হার গুলো ভেঙ্গে যাবে। ইয়ানার চোখ দিয়ে পানি চলে আসে। নাক মুখ খিচে ইয়ানা বলে উঠে,,,,,
“” হাত ছাড়ুন ব্যাথা পাচ্ছি।”
আহান ইয়ানার হাত ছেড়ে দিয়ে দাতে দাত চেপে বলে,,,,
“” কখনো যাতে এইরকম করতে না দেখি। আমার ব্যক্তিগত জিনিসি নাক গলানো আমি পছন্দ করি না।
ইয়ানার এইভার ভীষন রাগ হচ্ছে। ইয়ানা রেগে বলে,,,
“” আমার ও সখ নেই আপনার মতো এলিয়েনের ব্যক্তিগত জিনিসে নাক গলাতে । আমি যেহেতু এই রুমে থাকি তাই ফেলে দিয়েছি। সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারি না আমি। আপনার মতো এমন একজনকে উপদেশ দেওয়ার মতো বোকা আমি নয়। ”

ইয়ানা আর এক মুহূর্ত ও দারায় নি। প্রচুর রাগ আর কান্না পাচ্ছে। লোকটাকি কখনো ঠিক হবে না। সাধারন একটা সিগারেট ফেলে দিয়েছি বলে এমন করবে। ইশ জায়গাটা ব্যথা হয়ে গেছে। অসভ্য, শয়তান, মাফিয়া, সাইকো, একটা।
ইয়ানা চলে যেতেই আহানের মোবাইলে ফোন আসে। আহান ফোন রিসিভ করতেই ওই পাশ থেকে বিশ্রি একটা হাসির শব্দ ভেসে আসে। আহান রাগে হাত মুষ্ঠবদ্ধ করে নেয়।
ওইপাশ থেক — অগ্নি চৌধুরি ও ভয় পাই। খুব ইন্টারেস্টিং ব্যাপার কিন্তু। এইটা কি জনগন জানে?
সামান্য একটু কথা শুনে ভয় পেয়ে সে এতটা ডেম্পারেট হয়ে পড়েছে। যখন তর বউকে সত্যি সত্যি কিছু করে ফেলবো তখন তো তুই পাগলা কুকুর হয়ে যাবি।
আহান একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,

“” জীবনে কখনো দেখিছিস কুকুরকে দেখে বাঘ ভয় পেতে। তুই রায়হানের বাপের সাথে হাত মিলিয়ে আমার কলিজায় আঘাত দিতে চেয়েছিলি। তোকে ভয় পেয়েছি এইসব ফালতো জোকস কোথা থেকে শুনেছিস তুই। তোর মতো এমন হাজারটা চিনেপুটিকে মৃত্যুর চেয়ে ও ভয়ানক নরক যন্ত্রনা দিয়ে দেহ দেহ থেকে রুহ আলাদা করেছি। আর তোর মতো সাহিল মির্জাকে ভয় পাবে অগ্নি চৌধুরি। বিনোদন ভালোই দিতে পারিস। “”
এইদিকে সাহিল রেগে পাগলা কুকুরের মতো হয়ে আছে। রেগে বলে,,,,
“” দেখে নিবো আমি তোকে অগ্নি চৌধুরি। তোর রাজত্যের পতন আমি সাহিল মির্জা করবো। আমার দৃষ্ট সবসময় তোর উপর থাকবে। “”

আহানের ইচ্ছে করছে সাহিলকে শেষ করে দিতে তবুও শান্ত স্বরে বলে,,,
” ঠিক আছে সবসময় আমার উপর দৃষ্টি রাখিস। একটু পর বউয়ের সাথে বাসর করবো ওইটা ও দৃষ্টি ফেলে দেখে নিস। ভবিষ্যতে তোর কাজে লাগবে। ওহ নো ভবিষ্যতে কাজে লাগবে কিভাবে সেই সুজোগ তো পাবি না। তার আগেই চু চু টাটা বাই বাই। “”
সাহিল চিৎকার দিয়ে বলে,,,
“” অগ্নি চৌধুরি তোকে মেরে আমি কুকুর দিয়ে খাওয়াবো “”
আহান দাতে দাত চেপে বলে,,,

“” গলা নামিয়ে। তোর চিৎকার করাটা মনে হচ্ছে কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করছিস। সাহস থাকলে সামনে এসে অগ্নি চৌধুরির মুখোমুখি হ। কাপুরুষের মতো পিছন থেকে এইভাবে কুকুরের মতো চেচাচ্ছিস কেনো? ছেহহ তোর ঘেউ ঘেউ করাতে আমার কান শেষ হয়ে যাচ্ছে। কাপুরুষ হয়ে বীরপুরুষ সাজতে আসিস না। আমার জীবন বরবাদ করতে এসেছিলি আমার কলিজাকে বিয়ে করে। কিন্তু কি হলো শেষ পর্যন্ত পিছনের দরজা থেকে পালিয়ে গেলি। দম থাকলে ওইসময় আমার কাছ থেকে নিয়ে বিয়ে করতি। আমি ও দেখতাম কিভাবে তুই বিয়ে করিস। বেশি কিছু করতাম না তোর কলিজা টা কে কেটে আগে মেপে দেখতাম তারপর আমার টর্চারসেলের কুকুরগুলোকে খাওয়াতাম। আর রায়হানের বাপকে বলে দিস। ওর ছেলেকে যেই নরক মৃত্যু দিয়েছি তাকে আর ও দিগুন দিব”
বলেই আহান ফোন কেটে দিয়ে রাগে মোবাইলটাকে সজোড়ে আছাড় মারে। রাগে পুরো শরীর রি রি করছে। ইচ্ছে করছে সবকিছু ধ্বংস করে দিতে। এখন একটু মানসিক শান্তির প্র‍য়োজন। আর তার মানসিক শান্তি শুধু একজন ওই। আহান আর কিছু না ভেবে বারান্দা থেকে রুমে প্রবেশ করে। রুমে প্রবেশ করতেই দেখে ইয়ানা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আহান গিয়ে ইয়ানার কাছে বসতেই ইয়ানা দুরে সরে যায়। আহান কপাল কুচকে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,

“” কি হয়েছে দুরে সরলে কেনো? ”
ইয়ানা নিশ্চুপ। আহানের এমনিতেই মাথা গরম হয়ে আছে তার উপর ইয়ানার নিরবতা আরো রাগিয়ে দিচ্ছে। তারপর ও নিজেকে কন্ট্রোল করে বলে,,,
“” তোমার নিরবতা আমার একদম পছন্দ নয় ইয়ানা। তোমার নিরবতা আমার হৃদয়কে ছাড়খাড় করে দেয়। যদি রাগ হয় তাহলে আমাকে আঘাত করবে কিন্তু নিরব থাকা যাবে না। যদি কথা বলতে ভালো না লাগে তবু ও আমার সাথে কথা বলতে হবে। যদি কিছুই ভালো না লাগে তবুও আমি আহানকে শুধু মনে করবে। কিন্তু আমাকে ইগ্নোর করতে পারবে না। কারন তোমার ইগ্নোর করাটা আমি সহ্য করতে পারি না। ”
ইয়ানা আহানের কথা শুনে এতক্ষনে থাকা চাপা কষ্টটাকে চোখের পানি দিয়ে বের করে ফেলে। আহান ইয়ানার চোখের পানি দেখে বলে,,,

“” আরে কিরে বাবা বলবে তো কি হয়েছে? কি বিয়ে করলাম ভাই কিছু বললেই বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করে। থাপ্পর দিলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ছেহহ শেষ পর্যন্ত নিজের ব্যক্তিত্য ভুলে যাচ্ছি।”
ইয়ানা এইবার কিছু না বলে বিছানা থেকে নেমে সামনে অগ্রসর হতে নেয়। কিন্তু তার আগেই আহান হেচকা টানে নিজের উড়ুর উপর বসিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ধমক দিয়ে বলে,,,
” সমস্যা কি তোমার এইভাবে ইগ্নোর করছো কেনো। কথা বলছি কানে যায় না। সাহস কি দিন দিন বেড়ে চলছে। ”
ইয়ানা নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,,,
“” কি বলবো আপনাকে হ্যা? কিছু বললেই তো বলবেন আমার ব্যক্তিত্য নিয়ে কিছু বলা আমি পছন্দ করি না। তাহলে কেনো আমি কিছু বলবো? ”

আহান এইবার বুঝতে পারে কেনো রাগ করেছে। আহান ইয়ানার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,,,
“” রাগ জেদ সব আমার সাথে করবা ঠিক আছে। কিন্ত নেক্সট টাইমে আমাকে এড়িয়ে চলার দুঃসাহস দেখাবে না। কারন এইটা আমার জন্য খুব কষ্টদায়ক। আমার মনটা অশান্ত হয়ে আছে ইয়ানা একটু প্রশান্তি চায়। প্লিজ এইভাবে কিছুক্ষন থাকো। যাস্ট দশ মিনিট একটু তোমার কোলে মাথা রেখে শুতে চাই। “”
ইয়ানার কাছে লোকটাকে আজ অন্যরকম লাগছে। এমনভাবে কখনো কথা বলতে দেখে নি। ওনি কি কিছু নিয়ে খুব চিন্তিত। ইয়ানা ও আর কথা বাড়ায় না। খাটে সুন্দর করে বসে আহানকে শুয়ার জন্য জায়গা করে দেয়।
আহান ও ইয়ানার কোলে মাথা রেখে সুয়ে পড়ে। হঠাৎ করে ইয়ানার পেটের দিকে মুখ গুজে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ইয়ানার যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে। শ্বাস ক্রমশ উঠানামা করছে। নিজেকে মৃগী রোগিদের কাতারে দাড় করাতে ইচ্ছে করছে। ইয়ানা কাপাকাপা কন্ঠে বলে,,,

“” কি.. কি করছেন কি? এইভাবে শুয়েছেন কেনো। ওইদিকে ফিরুন।
আহান ইয়ানার দিকে মুখ গুজে বলে,,,
“” ওহুম এখন এই ঠিক আছি। নড়াচড়া করবে না। বেশি না দশ মিনিট থাকবো একটু প্রশান্তি চায়। মাথাটা একটু টিপে দাও। ”
ইয়ানা — হ্যা ঘুমান মানা তো করি নি কিন্তু এইভাবে শুয়েছেন কেনো। ওইদিকে ফিরে শুয়ে থাকুন না। আমার কেমন জানি করছে?
আহান ইয়ানাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

“” কেমন করছে? ”
ইয়ানা আর কি বলবে ওর শ্বাস একটু পরে এমনি বন্ধ হয়ে যাবে। কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাবেই তার আগেই আহান ধমকের সুরে বলে,,,,
“” আর একটা ও কথা নয়। বেশি কথা বললে নিজেকে আটকাতে পারবো না বাকি কাজটা ও সেরে ফেলবো। তাই চুপচাপ থাকো আর আমকে ও চুপচাপ থাকতে দাও”
আহানের ঠান্ডা হুমকিতে ইয়ানা চুপসে যায়। এই লোকটাকে নিয়ে বিশ্বাস নেয় যা খুশি করতে পারে। ইয়ানা আর কিছু না বলে আহানের মাথায় হাত বুলাতে থকে। আহান কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমের দেশে পাড়ি জামায়। এইরম শান্তির ঘুম আহান চার বছর বয়স থেকেই হারিয়েছে কারোর নষ্টামির শিকার হয়ে। ইয়ানা আহানের কোনো রেসপন্স না পেয়ে হালকা ধাক্কা দেয়। বুঝতে পারে আহান ঘুমিয়ে গিয়েছে। ইয়ানা ও আর আহানকে ডাকে নি। লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব ক্লান্ত। ইয়ানা আহানকে নিয়ে আধশুয়া হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালের সূর্যি মামার আলো পড়তেই ইয়ানা চোখ মেলে তাকায়। বুঝতে পারে ধরনিতে আলোর সান্ধান মেলেছে।
ইয়ানা বিছানার দিকে তাকাতে দেখে আহান পাশে নেয়। একটু পর আহান ওয়াশরুম থেকে থ্রি কোয়াটার পেন্ট আর টি শার্ট পড়ে বের হয়ে। সদ্য শাওয়ার নেওয়ার কারনে চুলগুলো থেকে টিপটিপ পানি ঝরছে। পায়ের লোম গুলো ভিজে লেপ্টে আছে। বার বার অবাধ্য চোখগুলো ওইদিকে যেতে চাচ্ছে। ইয়ানা মনে মনে,,,
“” ইয়ানা তুই এত লুচ্চা কবে হলি বইন। নিজের চোখগুলোকে হেফাজতে রাখ। তোর ওইতো স্বামী কেউতো আর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে না। ”
ইয়ানা বিছানা থেকে উঠতে যাবে কিন্তু পায়ের ব্যথায় নাক মুখ কুচকে আহহ করে উঠে। আহান ইয়ানার শব্দ পেতেই বিছানার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ইয়ানার কাছে এসে বলে,,,

“” কি হয়েছে? বলো আমাকে? ব্যথা পেয়েছো? ”
ইয়ানা আহানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” একটা আলাদিনের দৈত্য যদি আমার মতো একটা সাধারন বান্দার উপর সারারাত শুয়ে থাকে তাহলে ওর কি অবস্থা হবে। ও যে বেঁচে আছে এইটা নিয়ে সুক্রিয়া করোন। ইসস আমার পা পুরোটা ব্যথা হয়ে গেলো। “”
আহান ইয়ানার কথা শুনে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,
“” তোমার বাবা তোমায় ছোট বেলায় কি তুলা খাওয়াতো। না এমন নরম শরীর কিভাবে হয়? থাপ্পর দিলে জ্বর চলে আসে। কিছু করলে পুরো শরীর ব্যথা হয়ে যায় লাইক সিরিয়াসলি।
ইয়ানা কপাটা রাগ দেখিয়ে বলে,,,
” একদম বাজে কথা বলবেন না। নিজের দানব আকৃতির শরীরের দিকে তাকিয়েছেন একবার। আলদিনের দৈত্য পুরোটা। থাপ্পর দিলে চাপা সহ লড়ে যায়। আসছে নিজেকে সাধু প্রমান করতে।
আহান ইয়ানার দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকায়। ইয়ানা আহানের তাকানো দেখে ভরকে যায়। বেডা আবার রেগে গেলো নাকি। ইয়ানা আমতা আমতা করে বলে,,,,
“” কি হলো চুরের মতো এইভাবে তকিয়ে আছেন কেনো? ”
আহান ভাবলেশহীনভাবে উত্তর দেয়,,,

“” ভাবছি কোনো দিন বাবা ডাক শুনতে পারবো কি না। মাশ আল্লাহ বউ পেয়েছি আমি। কিছু বলতে গেলেই কান্না শুরু করে দেয়। যে সামান্য মাথার ওজন সহ্য করতে পারে নি সে পুরো শরিরের ভর কিভবে সহ্য করবে”
ইয়ানার কান থেকে ধোয়া বের হচ্ছে। কোন ভুতে ধরেছিলো যে এই লোকের সাথে কথা বলতে গিয়েছে।
সবসময় উল্টাপাল্টা কথা না বললে এই লোকের পেটের ভাত হজম হয় না। ইয়ানা আর কিছু বলে না পরে দেখা যাবে কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে যায়। এই লোকের লজ্জা না থাকতে পারে কিন্তু আমার তো আছে।
ইয়ানা রুম থেকে বের হয়ে যায়। আহান ও আর কথা বাড়ায় না। নিজের ল্যাপটপ নিয়ে ভিবানে বসে পড়ে। হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই ইয়ানাকে ডাক দেয়। ইয়ানা আহানের ডাক শুনে ভড়কে যায়। এই মাত্র ওইতো ওপর থেকে আসলো। বাড়ির লোকজনের সামনে কিভাবে ডাকছে দেখো নির্লজ্জ লোক একটা। সাজিদ চৌধুরি চা খাচ্চিলো। আহানের ডাক শুনে ইয়ানাকে বলে,,,,

” যাও মা আহান হয়তো কোনো কাজের জন্য ডাকছে। ”
— কিন্তু বাবা আমি এইমাত্র তো রুম থেকে আসলাম। আর তাছাড়া ওনার কোনো জিনিসে আমায় হাত লাগাতে দেয় না। তাহলে কিসের জন্য ডাকছে।
এর মধ্যাই আহান হুংকার ছেড়ে বলে,,,,
“” ইয়ানা দুই মিনিটির মধ্যে যদি তুমি উপরে না আসো তাহলে তোমার খবর আছে। ধারনা ও নেই আমি কি করবো। ”
আহানের ধমক শুনে আহিয়া মজার ছলে বলে,,,,

“” আরে বউ মনি তুমি যাওতো। বাকি রান্না স্টাফ দেখে নিবে। স্টাফ থাকতে ও রান্না করতে এসেছো। আর এইদিকে আমার ভাইটা তোমার জন্য দেওয়ানা হয়ে আছে। আরে যাও যাও তারাতারি যাও।”
বলেই আহিয়া ফিক করে হেসে দেয়। ইয়ানা মনে মনে ভাবে দুই ভাই বোনের মাথায় স্ক্রু ডিলা। রান্না মাত্র বসিয়েছে এখন এই অর্ধেক রান্না ফেলে কিভাবে যাবে।
ইয়ানা খুব ভালো করেই জানে লোকটা ওকে জালানোর জন্য ডাকছে কোনো কাজের জন্য না।
ইয়ানা স্টাফের হাতে রান্নাটা দিয়ে উপরে চলে যায়। দরজার সামনে গিয়েই তব্দা খায়। আহান কাচের গ্লাসটাকে জোরে চেপে ধরে রেখেছে। ফলে আগের কাটা স্থান থেকে গড়্গড় করে রক্ত পড়ছে। ইয়ানা দ্রুত আহানের কাছে এসে বলে,,,,,

“” পাগল হয়ে গেছেন। কি করছেন এইগুলো? ”
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
“” এতবার ডেকেছি আসছিলে না কেনো? রাগ হচ্ছিলো প্রচুর কি করবো? তোমাকে তো আঘাত করতে পারবো না তাতে আরো বেশি কষ্ট হয়। তাই নিজেকে আঘাত করেছি। “”
ইয়ানার ইচ্ছে করছে দেয়ালে মাথা ঠেকাতে। মানুষ এতটা ডেম্পারেট কিভাবে হয়। সামান্য একটু দেরি হওয়ার কারনে কেউ নিজের এই অবস্থা করে। ইয়ানা আহানের দিকে কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,,,,,,
“” আজ আপনাকে আর অফিসে যেতে হবে না। ঢাকা থেকে সোজা পাবনা চলে যাবো। আপনাকে পাবনা থেকে চিকিৎসা করিয়ে আনবো। নিশ্চয় আপনার মাথায় সমস্যা আছে। “”
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,

“” তুমি কি কোনোভাবে আমাকে পাগল বলতে চাচ্ছো?
ইয়ানা হাতে বেন্ডাজ করতে করতে বলে,,,,
“” কোনো সন্দেহ আছে? আপনি সত্যি একটা পাগল””
আহান বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,,,
“” তোমার ফোনটা দাও। কাল থেকে ভার্সিটিতে যাবে। এতদিন ভার্সিটি মিস দেওয়ার কারনে যা যা গেফ গেছে সব স্যারদের কাছ থেকে নিয়ে নিবে। তুমি শুধু তাদের সামনে গেলেই চলবে তারা এমনি সব নোট দিবে। আমার কথা হয়েছে তাই এই নিয়ে প্যারা নিও না।””
ইয়ানার তো মনে মনে লাড্ডু ফুটছে। কতদিন পড়ে আবার আগের মতো চলাফেরা করতে পারবে।আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,

“” ভার্সিটিতে যাচ্ছো ভালো কথা অপরিচিত কারোর সাথে যাতে কথা বলতে না দেখি। যথাসম্ভব ছেলেদের থেকে দুরত্ব বজায় রাখবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হলো তোমার হাতের আংটি এইটা যাতে কখনো খুলতে না দেখি। এই আংটির কারনে তুমি আজ আমার কাছে আছো। “”
ইয়ানা আহানের দিকে সন্দেহ দৃষ্টি ফেলে বলে,,,,

“” আপনার কাছে এই আংটি এত গুরুত্বপূর্ন কেনো বলোনতো? মনে হচ্ছে এইটায় আপনার প্রান ভোমরা রয়েছে। আর আংটির জন্য আমাকে পেয়েছেন মানে? সত্যি করে বলোন এইটায় কি আছে। “”
ইয়ানার প্রশ্নে আহান থমথমে খেয়ে যায়। কিছুতেই বলা যাবে না এইটায় কেমেরা ফিট করে দেওয়া হয়েছে। ইয়ানা চট্টগ্রামে যখন গিয়েছিলো তখন আহান এই আংটির মাধ্যমেই লোকেশন জানতে পারে। সঠিক সময় গিয়ে ইয়ানাকে বিয়ে করে নিয়ে আসে। আড়ালে ইয়ানাকে রক্ষা করে সত্রুদের সাথে মোকাবেলা করে। অনেকবার ইয়ানার উপর হামলা করতে চেয়েছিলো। আহান ইয়ানার পিছনে বডিগার্ড লাগিয়ে দিয়েছিলো। ফলে সত্রুরা কিছু করতে পারে নি।
আহানের ভাবনার মাঝে ইয়ানা ফের প্রশ্ন করে,,,,

“” কি হলো উত্তর দিন? কি আছে এই আংটির মধ্যে? “”
আহান ইয়ানাকে ধমক দিয়ে বলে,,,,
“” এত প্রশ্ন করতে কে বলেছে তোমায়? যা বলেছি তা চুপচাপ পালন করো। তোমার মোবাইলটা একটু দাও। আমার নাম্বার নিশ্চয় সেইভ করোনি। “”
ইয়ানা ভয়ে ভয়ে বলে,,,,
“” সত্যি সেইভ করেছি। আর দেখতে হবে না “”
আহান ইয়ানার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি ফেলে বলে,,,,
“” সেইভ করেছো ভালো কথা এইভাবে ভয় পাচ্ছো কেনো তাহলে? মোবাইলটা দাও আমি দেখবো। ”
ইয়ানা একটা শুষ্ক ঢুক গিলে বলে,,,,
“” দিতে হবে, না দিলে হয় না?”
আহানের এইবার রাগ হচ্ছে আশ্চর্য মোবাইলে কিছু না থাকলে এত ভয় পাওয়ার কি আছে।ইয়ানার দিকে দাতে দাত চেপে বলে,,,

“” তোমাকে দিতে বলেছি দিবে নাকি থাপ্পর খাবে। পরে জ্বর আসলে আমাকে দোষ দিতে পারবে না”
ইয়ানা আহানের ধমক খেয়ে সুরসুর করে দিয়ে দেয়।
আহান নাম্বার চেক করতে গিয়ে ইয়ানার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকায়। দাতে দাত চেপে বলে,,,,
“” এইসব কি নামে নম্বর সেইভ করেছো ইডিয়েট। সাইকো, জল্লাদ, অসভ্য লুচ্ছা মাফিয়া, আলাদিনের দৈত্য লাইক সিরিয়াসলি ইয়ানা। তুমি ভালোবেসে আর কি কি নামে আমায় ডাকো বলো তো। আর ও আছে শুনবে জান, প্রান সোনা বাবু, কলিজা সুইট হার্ট এইগুলো ও ডাকতে পারো আমি মাইন্ড করবে না।
ইয়ানা আহানের দিকে না তাকিয়ে বলে,,

অনুভবে তুমি পর্ব ২৬

“” দাদি ডাকছে আমি যায়। আপনি তৈরি হয়ে আসোন।”
ইয়ানাকে আর পাই কে এক দৌরে রুম ত্যাগ করে। এখানে থাকলে নিশ্চয় এই লোক কিছু না কিছু করবে। হঠাৎ দৌড়ে আহান হতভম্ব হয়ে যায়। যখন বুঝতে পারে তখন আহান চেচিয়ে বলে উঠে,,,,
“” ইয়ানা স্টপ। ধীরে যাও নয়তো ব্যথা পেলে থাপরিয়ে আবার অজ্ঞান করে ফেলবো বিয়াদপ মেয়ে।

অনুভবে তুমি পর্ব ২৮