প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৮

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৮
অলকানন্দা ঐন্দ্রি

রাহার উষ্ণ জ্বর আর শরীর জুড়ে উত্তপ্ততা নিয়েই এক রাতে হুট করে অনাকাঙ্খিত একটা ঘটনা ঘটল। একটা উত্তপ্ত চুম্বন, একটা উম্মাদময় ওষ্ঠ স্পর্শ! সেদিন অবশ্য রোহানকে দেখাল বেশ অগোছাল। চুলগুলো কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কেমন যেন। শার্টের উপরের বোতাম দুয়েকও খোলা আছে। রাহার তখন শরীর জুড়ে অল্প অল্প জ্বর।মাথা ব্যাথা, সাথে চোখ জ্বালা ও করছে। সে সেভাবে বসেই সরু চাহনিতে পরখ করছিল অফিস থেকে ফেরা রোহানকে। অতঃপর হুট করেই যেন চোখ গেল রোহানের হাতে বাঁধা একটা কাপড়ে। কারোর কাপড় বা ওড়নার অংশ বোধহয়। রোহান বোধহয় ব্যাথা পেয়ে এই নিয়ে যখন সে প্রশ্ন ছুড়বে তখনই দেখা গেল রোহান একটা গিফ্ট বক্স ও পাশে রাখল। রাহা বুঝে উঠে না। ভ্রু কুঁচকে ফের তাকাতেই চোখে পড়ে সাদা শার্টটার একপাশে লিপস্টিক জাতীং কিছুর দাগ। লালচে! বোধহয় প্রেমিকার চিহ্ন! রাহা ভ্রু কুঁচকায়। ভালো লাগল না বিষয়টা তার। তবুও সে হেসে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল,

“ কি ব্যাপার? মিঃ রোহান ফারাবীকে আজ হঠাৎ কেমন কেমন দেখাচ্ছে যেন? ”
রোহান ভ্রু কুঁচকায়। হাতের নতুন দামী ঘড়িটা খুলে রাখতে রাখতেই রাহার দিকে চেয়ে বলে,
“ কেমন কেমন? ”
রাহা মুখ টিপে হেসে শুধাল,
“ কোন বিশেষ নারীর সাথে মিট করেছেন নাকি? নতুন নতুন প্রেমে পড়েছেন? ”
রোহান কপাল কুঁচকায়। নতুন নতুন প্রেমে পড়েছে তা ঠিক কিন্তু তা রাহা কিভাবে জানে? রাহার উপরই তো প্রেম জম্মেছে। এখনও তো প্রকাশ করেনি রাহাকে। রোহান ভ্রু কুঁচকেই শুধাল,
“ কি দেখে মনে হলো নতুন নতুন প্রেমে পড়েছি? ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ নতুন শার্ট, শার্টের উপরে দুটো বোতাম খোলা। চুলগুলো এলোমেলো। হাতে একটা নতুন ঘড়িও। মুখচোখ একটু টানটান। সুন্দর দেখাচ্ছে, যেন উম্মাদ প্রেমিক। মনে হচ্ছে কারোর সাথে দেখা করে এসেছেন। ”
রোহান হাসল কেমন করে যেন। বাহ! তার এতকিছু খেয়াল করে মেয়েটা? আচ্ছা, তার প্রতিও কি নবনীর কোন না কোন অনুভূতি আছে? নিশ্চয় আছে? ক্রুর হেসে শুধাল,
“মানুষ কি দ্বিতীয়বার প্রেমে পড়ে? যদি পড়ে তাহলে আমি ও পড়েছি নাহয়৷ সমস্যা কি?”
রাহার উত্তরটা একদমই পছন্দ হলো না। দ্বিতীয়বার প্রেমেই যদি পড়ে অন্য কারোর উপর কেন? তার উপর পড়া যেত না? মুখে বলল,

” অবশ্যই পড়ে। আমি খুশি হয়েছি আপনি আপুকে ভুলে অন্য কারোর প্রেমে পড়েছেন নতুন করে। এবার তো আমায় সরতে হবে যা বুঝা যাচ্ছে। কি বলুন? ”
রোহানের হাতের শার্টের বোতামে। একের পর এক বোতাম গুলো খুলতে খুলতে যখন রাহার কথাটা কানে গেল তখনই সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। দুই পা বাড়িয়ে নিতে নিতে বলল,
“ এত সরে যাওয়ার ইচ্ছে কেন? থেকে যাওয়ার ইচ্ছের কথা তো কখনো বলো না নবনী? ”
রাহা হেসে শুধাল,

“ থেকে যাওয়ার ইচ্ছের কথা বলার অধিকার নেই আমার।যায় হোক, নতুন প্রেমিকা ডার্ক রেড কালারের লিপস্টিক দিয়ে দেখা করেছিল? আর পোশাকটা ব্ল্যাক কালারের?”
আচমকা কথাগুলো শুনে সে বুঝে গেল রাহা কার কথা বলতে চাইছে। যার সাথে তার এখানে আসার আগেই দেখা হয়েছে। সাদিয়া!একটু গায়ে পড়া ধরণের মেয়েটাকে রোহান সহ্য করতে পারে না। আজও ফাইল নিয়ে আলোচনা করতে করতে দুয়েকবার তার গায়ে ঢলে পড়ার চেষ্টা চালিয়েছে। রোহান বিরক্ত হয়। বিজন্যাসের খাতিরে তবুও দেখা হতেই হয়। যদিও রোহান অপমান করতে পিছু পা হয় না৷ রোহান এসব ভেবে দাঁতে দাঁত চাপে। শুধায়,

“ তুমি কি করে জানলে? ”
রাহা হেসে বলল,
“ আপনার হোয়াইট কালারের শার্টটায় লিপস্টিকের দাগ বসে আছে জনাব, আর হাতটায় কাল রং এর কাপড় বাঁধা। ”
রোহান দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত স্বরে শুধায়,
“ ও নতুন প্রেমিকা নয়। ”
তাচ্ছিল্যমাখা উত্তর আসল,
“ তাহলে? পার্টটাইম প্রেমিকা নাকি? এত প্রেমিকা আপনার? বলেন নি তো এতদিন। ”
রোহান মুখচোখ শক্ত করে তাকায়। নির্ঘাত এই মেয়ের জ্বর, নয়তো রোহান এতক্ষনে ডপাং করে চড় মেরে দিত৷ বলল,

“ আমি চরিত্রহীন নই। ঘরে বউ রেখে বাইরে মেয়ে নিয়ে ঘোরার ইচ্ছে নেই। ”
“শুনে খুশি হলাম। কিন্তু বউ এর জন্য এত স্যাক্রিফাইস করে তো লাভ নেই৷ আপনার জীবন যৌবন তো পড়ে আছে বলুন? আপনার অধিকার আছে অন্য মেয়েদের থেকে নিজের সুখ খোঁজার।”
রোহাস ভ্রু বাঁকায়। আপনাআপনিই ঠোঁট বাঁকা হয়ে এল। অতঃপর একটা বাঁকা হাসি উপহার দিয়ে শুধাল,
“তুমি আমার জীবন যৌবন নিয়ে খুব চিন্তিত দেখছি? ”
“ একটু আধটু। ”
“ এদিকে এসো তাহলে। ”
রাহা চোখ বড় বড় করে তাকায়। এই লোকের গলার টোন তো সুবিধার শোনাচ্ছে না। দৃষ্টিও স্বাভাবিক লাগছে না। আবার ঠোঁটে ঝুলছে মারাত্মক এক বাঁকা হাসি৷ রাহা মুহুর্তেই শুধাল,

“ কেন? ”
রোহান উত্তর করে না এবার৷ নিঃশব্দে ওভাবেই হাসি বিদ্যমান রেখে এগিয়ে গেল৷ রাহা এগোল না তবে পিছিয়ে যেতেও পারল না। তার আগেই রোহান ঝুঁকে গেল। দুইহাতে পরম আদুরে ভাবে রাহার উষ্ণ নরম মুখটা আগলে নিল। অতঃপর মুখ নামাল। এক হাত মুখ থেকে ঘাড় যেতেই তার ওষ্ঠদ্বয় অবস্থান নিল রাহার পাতলা মিহি ঠোঁটজোড়ায়। রাহা আকস্মিক এই উম্মাদময় আক্রমন সইতে পারে না। পুরুষালি উত্তপ্ত চুম্বনে সে কেবল বিস্ময় নিয়ে বুঝে উঠার চেষ্টা করল কি হচ্ছে? আসলেই কি হচ্ছে তা বুঝতে তার একটু সময় লাগল। তারপরই সরে যাওয়ার ক্রমাগত চেষ্টক চালাল অথচ পুরুষালি বন্ধনের জোরে পারল না সে। একপাক্ষিক ওষ্ঠ সংঘর্ষে রোহান কতোটা কি সুখ খুঁজতে পারল জানা নেই তবে রাহা স্তব্ধ৷ যখন রোহান ছাড়ল তখন সে হাঁপানি রোগীর মতোই হাঁপাল। নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাল। আর রোহান তখন হেসে তার গালে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

“ জীবন যৌবনের সামান্যতম চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করলাম। আশা করি তুমি পরেরবার থেকে আমায় বেটার হেল্প করবো?”
রাহা তখনও হাঁপাচ্ছে। যখন মোটামুটি রকমের স্বাভাবিক হলো তখন হাঁপাতে হাঁপাতেই রেগে বলে উঠল,
“ এটা কি হলো? ”
রোহান হাসে বিনিময়ে। বলল,
“ যা তুমি চাইছিলে? জীবন যৌবনের সাধ মেটানো উচিত তো তাই না?”
রাহা মুহুর্তেই দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
“ আমি এটা চাইনি, মোটেই চাইনি। অন্য এক মেয়ের প্রেমিক, অন্য এক মেয়ের সাথে কি না কি করে এসে এখন আমাকে চুমু খাচ্ছে। ইয়াক থু!”
রোহান এবারে কটমট করে চাইল যেন। শাসিয়েই একপ্রকার বলল,
“ মেজাজ খারাপ করলে আরো অনেক কিছু করব। আজেবাজে বকবে না, অন্য মেয়ের সাথে কিছু করার মতো মেন্টালিটি থাকলে আমি লাইফে কখনো বিয়ে করে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতাম না৷ ”
.
মাঝখানে বেশ কয়েকটা দিন পার হয়েছে। সিয়ারা আরো দুয়েকজন মেয়েসহ বাসাটায় উঠেছে যেটা সাদদের বাসার ঠিক উপরেই৷ সিয়া সকাল বিকাল সন্ধ্যা নিয়ম করেই জানালার ধারে বসে থাকে। তারপর কখন সাদ আসে, কখন সাদ যায় সবটা পরখ করে দেখে। চোখের শান্তি। মানুষটাকে নিজের করে না পাক তবুও দেখতে তো পাচ্ছে? চোখে তৃষ্টা মিটছে। সিয়া ছোটশ্বাস ফেলে। তারপর ব্যাগপত্র নিয়ে হুট করেই বাসা ছেড়ে বের হলো। উদ্দেশ্য দিকবিদিক একা একা হাঁটা। আজকাল সিয়া প্রায়সই এমন করে। আজও করবে। সেই উদ্দেশ্যেই বের হওয়া। অথচ পথে বেখেয়ালি ভাবে চলার কারণে কেউ একজনের সাথে ধাক্কা খেল। সিয়া মাথা তুলে দেখল কেউ একজনটা হলো সাদের সেই রুমম্যাটটাই। বিদ্ঘুটে হাসি। সিয়া কপাল কুঁচকায়। ততক্ষনে দেখা মিলল সাদেরও। তবে কিছু বলল না। তার রুমম্যাটই বলে উঠল,

“ কি ম্যাম? কোথায় এমন অমনোযোগী হয়ে চলে যাচ্ছেন? চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।”
ছেলেটা হাসল কথাটা বলে। অথচ সিয়ার কাছে হাসিটা সুন্দর লাগল না। ছেলেটাকেই সুন্দর লাগল না। কেন লাগল না তার জানা নেই, তবে ছেলেটা লম্বা চওড়া৷ সাধারণ দৃষ্টিতে সুন্দরই। সিয়া ছোটশ্বাস ফেলে। হুট করেই সাদের দিকে তাকিয়ে তার কি হলো কিজানি। বলল,
“ চলুন। ”
ছেলেটার চোখ চকচক করে যেন। অবিশ্বাস্য স্বরে বলে,

“ সত্যিই? এতদিন তো পাত্তা দিলে না মেয়ে!আজ কি হলো হঠাৎ? ”
সিয়া নিরব চাহনি ফেলে একবার সাদকে দেখে নিয়ে উত্তর করল,
“ মনে হলো আপনাকে না করাটা আজ আর উচিত হচ্ছে না। চলুন দুই কাপ কফি নিই। ”
ছেলেটা যেন খুবই খুশি হলো এতে। যাক! মেয়েটা তাকে অনুমতি দিচ্ছে। আস্তে আস্তে মনে জায়গাও করে নিবে নাহয়৷ খুশিতে গদগদ হয়ে সাদকে ফিসফিস করে বলল,
“ স্বপ্ন না তো এটা দোস্ত? ”
সাদের রাগ লাগছে৷ সিয়াকে ইচ্ছে হচ্ছে একটা থাপ্পড় দিতে। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে সে থাপ্পড়টা সে দিতে পারল না৷ শুধাল,

”বাস্তবই। যা, ওর সাথে ঘুরে আয়। ”
ছেলেটা মুহৃর্তেই প্রশ্ন ছুড়ল,
“তুই? তুই যাবি না? ”
সিয়া তা শুনে হাসল। মুহুর্তেই বলে উঠল,
“ উনি তো প্রায়সই ব্যস্ত থাকেন । হয়তো সময় হবে না উনার। আপনিই চলুন ভাইয়া।”
এটুকু বলে পা বাড়াল সে। পিছু পিছু বত্রিশ টি দাঁত বের করে হেসে এগিয়ে গেল সাদের সেই রুমম্যাটও৷ সিয়া তা দেখে। কয়েক পা বাড়িয়ে যখন মোটামুটি সাদের চোখের আড়াল হলো ঠিক তখনই সিয়া একটা রিক্সা ডাকল। অতঃপর চুপচাপ ছেলেটার সামনে দিয়ে রিক্সায় উঠে বসে ছেলেটাকে শুধাল,

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৭

“ আমি আসলে বাসায় যাচ্ছি ভাইয়া। আমি রিক্সা নিয়ে চলে যাচ্ছি। আপনি বরং সাবধানে বাসায় চলে যান। ধন্যবাদ এইটুকু এগিয়ে দেওয়ার জন্য। ”
ছেলেটা বড্ড হতাশ হলো। নিরস সরে বলল,
“ শুধু এইটুকু পথ? ”

প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৯