অনুভবে তুমি পর্ব ৩১
লিজা মনি
আবার ও নতুন সকালের সূচনা হলো। ইয়ানা ঘুম থেকে উঠতে নিবে কিন্ত মনে হচ্ছে কোনো বলিষ্ঠ কিছুর সাথে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ভালোভাবে চোখ খুলতেই বুঝতে পারে আহান ওকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। ইয়ানা নিজেকে ছড়িয়ে এক দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইসস কি সুদর্শন। ঘুমের মধ্যে কি কোমল আর শিশুসুলভ দেখাচ্ছে কিন্তু ঘুম ভেঙ্গে গেলেই সমস্ত কোমলতা শেষ। হঠাৎ আহানের ঘার আর হতের ট্যাটুর দিকে চোখ যায়। ইয়ানা বিরক্তি নিয়ে নাক মুখ কুচকে ফেলে। উনি যানে না ট্যাটু করা হারাম। তারপর কিছু একটা ভেবে আহানের মুখে ছুতে যায় কিন্তু হঠাৎ কেউ ইয়ানার হাত আটকে দেয়। ইয়ানা ভরকে যায়। আমতা আমতা করে বলে,,,
“” আপনি! আপনি তো ঘুমিয়েছিলেন? ”
আহান — কে বলেছে আমি ঘুমিয়েছিলাম? আমি তো প্রথম থেকেই তোমার কার্য দেখছিলাম। এই সত্যি করে বলো তুমি আমার ঘুমের সুযোগ নিচ্ছেলে নাতো?
ইয়ানা বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,
“” বাজে কথা বন্ধ করুন।
এই বলে ইয়ানা ফ্রেশ হতে চলে যায়। আহান একটা মেকি হাসি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে যায়।
ইয়ানা অনেক্ষন পর ওয়াশরুম ফ্রেশ হয়ে বের হয়। আজকে মনটা খুব ফুরুফুরা লাগছে। অনেকদিন পর ভার্সিটিতে যাবো আবার আগের মতো সবার সাথে কথা বলতে পারবো। ভাবতেই যেনো মনটা খুশি খুশি লাগছে।
ইয়ানা আহানকে বিছানায় দেখতে না পেয়ে বুঝতে পারে দানবের মতো শরীর বানাতে জগিংএ গেছে।
ইয়ানা নিচে নেমে দেখে কেউ নেই। কাল মিসেস নাফিসার সাথে শুধু কথা হয়েছিলো। আর ওনার ছেলে মেয়েদের সাথে পরিচিত হতে পারে নি। মিসেস নাফিসা আসার অনেক্ষন পর মনে হয় তারা এসেছিলো তাই আর দেখা করতে পারে নি। আজ তাহলে তাদের সাথে পরিচতি হওয়া যাবে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইয়ানা রান্নাঘরে গিয়ে দেখে স্টাফরা রান্নার কাজে লেগে পড়েছে। ওর আর কাজ কি একটু কফি বানায়। ইয়ানা কফির মগ হাতে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হতেই কাউকে দেখেই অস্ফূর্ত ভাষায় বলে,,,,
“” নাউযুবিল্লাহ? “” ইয়ানা বুঝতে বাকি নেই এইটা তাহলে ঝর্না। দাদুমনি বলেছিলো কানাডায় বড় হয়েছে তাই বলে ড্রেস আপের এই অবস্থা ছিহহহ। ড্রেস পড়ার কি প্রয়োজন ছিলো পুরো পা দেখা যাচ্ছে না পড়লেই হতো। ”
ইয়ানার ভাবনার মাঝেই কারোর ডাক শুনতেই পায়। সামনের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারে ঝর্না ডাকছে। ইয়ানা সামনে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঝর্না বলে “””
“” এই শুন আমার জন্য এক কাপ ব্ল্যাক কফি আনোতো। কফির মধ্যে একদম চিনি কম দিবে। যাও তারাতারি নিয়ে আসো “”
ইয়ানা আর কিছু বলে না ঝর্নার আদেশ মতো কফি বানাতে চলে যাই। তারাতো বাড়ির অথিতি বানিয়ে খাওয়াতেই পারে। ইয়ানা কিছুক্ষনের মধ্যে কফি বানিয়ে ঝর্নার সামনে রাখে। ঝর্না কফি মুখেই দিয়েই পুরোটা কফি ইয়ানার উপর ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলে,,,,,
“” ইউ স্টুপিড গার্ল বলেছিলাম না যাতে মিষ্টি কম হয়। কানে কি শুনতে পাস নি। কাজের লোক কাজের লোকের মতো থাকবি। মালিক যা বলবে তা একটু এদিক সেদিক হলে ঘাড় ধ্বাক্কা দিয়ে বের করে দিবো? ”
ইয়ানা রাগে হাত দুটি মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। কিছুতেই নিজের রাগ কন্ট্রোলে রাখা যাচ্ছে না। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে থাপরিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিতে। কিন্তু এরা দাদুমনির অথিতি তাই এখনো চুপচাপ সহ্য করছে।
ইয়ানার ভাবনার মাঝেই বিকট শব্দে দুইজনে ভড়কে যায়। সামনের দিকে তাকাতেই ইয়ানার অন্তরাত্না কেঁপে উঠে। আহান খাবার টেবিলটাকে হস্টিক দিয়ে বাড়ি মেরে খন্ড বিখন্ড করে ফেলেছে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। কাচ ভাঙ্গার শব্দে সবাই উপর থেকে নিচে নেমে আসে। ইয়ানা অবস্থা বেগতিক দেখে তারাতারি করে আহানের কাছে গিয়ে বলে,,,,
“” আহান প্লিজ শান্ত হন। ও আমাকে চিনতে পারে নি তাই এমন করেছে। তারা দাদুমনির অথিতি কয়েকদিনের জন্য এসেছে মাত্র। খারাপ ব্যবহার করবেন না প্লিজ।
আমি সবটা সামলে নিবো। “”
ঝর্না ইয়ানাকে আহানের কাছে যেতে দেখে রেগে তেতে উঠে বলে,,,,,
“” এই অসভ্য বেহায়া মেয়ে তুমি আমার আহানের কাছে গিয়ে কি ফিসফিস করছো? বড়লোক ছেলে দেখলেই ঢলে পড়তে ইচ্ছে করে ছোটলোক কোথাকার। “”
আহান ইয়ানাকে নিজের থেকে ছড়িয়ে ঝর্নার সামনে গিয়ে সজোরে কয়েকটা থাপ্পর লাগায়। ঝর্না টাল সামলাতে না পেয়ে ছিটকে পড়ে। রেশব আহানের কাছে এসে বলে,,,,
“” হেই ব্রো শান্ত হও এইভাবে হাইপার হচ্ছো কেনো? ”
আহান রেশবের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলে,,,
“” মরতে না চাইলে দুরে থাক ”
রেশব আর কিছু বলে না। আহান ঝর্নাকে ফ্লোর থেকে তুলে রেগে বলে,,,,
“” হুম আবার বল কি যেনো বলছিলি ওকে। ছোটলোক, অসভ্য, বেহায়া, আর হ্যা কাজের লোক। সাহস কি করে হয় আমার বউকে এইসব বলার। ও অগ্নি চৌধুরির সেহজাদী আমার রাজ্যের রানী ও। তোর মতো নষ্টা মেয়ে ওকে কাজের লোক বলছিস। বলেই আহান ঝর্নাকে আরেকটা থাপ্পর দেয়।
মিসেস নাফিসা আর রেশব অগ্নি চৌধুরির নাম শুনে অবাক হয়। তাহলে আহান চৌধুরি আর অগ্নি চৌধুরি এক ব্যক্তি।
ঝর্না গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে বলে,,,,,
“” অগ্নি চৌধুরি মানে? গোল্ডেন অফ মাফিয়া লিডার অগ্নি চৌধুরি! আর এই মেয়ে তোমার বউ মানে কি? তুমি বিয়ে করেছো? ”
আহান ইয়ানার দিকে বাকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” রিনা খালা আমাকে এক মগ গরম পানি দিনতো? ”
গরম পানির কথা শুনে সবার বুকটা ধুক করে উঠে। ইয়ানা আহানের কাছে এসে মিনতি সুরে বলে,,,,
“” প্লিজ আহান শান্ত হন। অনেক হয়েছে আর নয়। প্লিজ রুমে চলুন আপনার অফিসের সময় হয়ে যাচ্ছে আর আমার ভার্সিটীতে ও যেতে হবে। “”
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে অধৈর্য গলায় বলে,,,,
“” ব্যথা পেয়েছো তুমি? কোথায় লেগেছে দেখাও আমাকে”
ইয়ানা — আমার কিছু হয় নি আমি একদম ঠিক আছি। প্লিজ আর অশান্তি বাড়াবেন না।
আহান ইয়ানার কথা না শুনেই রিনা খালা বলে,,,,
“” তারাতারি নিয়ে আসুন “”
রিনা খালা তারাতারি করে গরম পানি এনে আহানের হাতে দেয়। আহান মগের দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দেয়।
সবাই আহানের কাছে মিনতি করছে যাতে কিছু না করে।
আহান ঝর্নার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” ঝর্না তোমার কোমল হাতখানা একটু দাও তো দেখি।তোমাকে ও গরম পানির সন্ধান করায়। আমার বউ কেনো একা ভোগ করবে। “”
ঝর্না নিজেকে সিটিয়ে নেয়। আহান জোর করে ঝর্নার হাতটা ধরে ফোটন্ত গরম পানিতে ডুবিয়ে দেয়।
সাথে সাথে ঝর্না চিৎকার দিয়ে উঠে। আহান ও ঝর্নার চিৎকার দেওয়া মাত্র ছেড়ে দেয়। তারপর ইয়ানার দিকে
গম্ভির দৃষ্ট নিক্ষেপ করে বলে,,,
“” পাঁচ মিনিট সময় দিলাম তারাতারি রেডি হয়ে আসো কুইক। “”
ইয়ানা আহানের দিকে না তাকিয়ে উপরে চলে যায়। মানুষ কতটা উন্মাদ হলে এইসব করে। ইসস মেয়েটা কতটুকু ব্যাথা পেয়েছে জিজ্ঞাসা ও করতে পারলাম না। মেয়েটার কাছে গেলেই পড়ে আমার উপর ঘূর্নিঝড় যাবে।
আহান ও অফিস ফর্মে ছিলো। আজ সে জগিংএ যায় নি কোনো এক কাজে গিয়েছিলো আধ ঘন্টার জন্য। যখন ঝর্না ইয়ানাকে আদেশ করেছিলো কফি আনতে তখন সে বাড়িতে প্রবেশ করতে গিয়ে এইসবের সম্মুখীন হয়। আহান ভেবেছিলো ইয়ানা প্রতিবাদ করবে কিন্ত যখন ইয়ানার শরীরে গরম কফির ঢালা হয় তখন নিজের রাগটা কণ্ট্রোল হারিয়ে ফেলে। সাহস কি করে হয় ওই মেয়ের অগ্নি চৌধুরির বউয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করার। আহান গড়ির কাছে গিয়ে নিজের রাগটাকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করছে। ইচ্ছে করছে ঝর্নার জান খেয়ে ফেলতে।
ইয়ানা রেডি হয়ে নিচে নামে। পিন্ক কালারের লং টপ্স, হুয়াইট কালারের লেগিন্স আর মাথায় হুয়াইট কালারের হিজাব। ইয়ানা ঝর্নার কাছে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন আহিয়া বলে,,,,
“” বউমনি তুমি এখন যাও। দেরী হলে আবার তোমার উপর চেঁচামেচি করবে। “”
ইয়ানাও দাদুমনির থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। দাদুমনি আর সাজিদ চৌধুরিকে ইয়ানা আগেই জানিয়ে রেখেছিলো ও ভার্সিটিতে যাবে। সবাই ওর কথায় সম্মতি জানিয়েছে।
মেয়েটার জন্য খুব খারাপ লাগছে। কি অবস্থা করেছে মেয়েটার ইসস।
ইয়ানা গাড়ির সামনে এসে দেখে আহান ড্রাইভিং সিটে বসে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। ইয়ানা একটা ভেংচি কেটে গাড়ির ভিতর ডুকে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। দরজার বিকট শব্দ পেয়ে আহান কপাল থেকে হাত সরিয়ে ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে তাকায়। ইয়ানাকে উপর থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করে ঠোটের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” ঠোঁটের লিপস্টিক মুছো। দেখতে কেমন বিশ্রি লাগছে।”
ইয়ানা — আমাকে দেখতে তো বিশ্রি লাগবেই। ঘরের বউকে দেখেছেন কোনো পুরুষ সুন্দর বলতে। তাদের কাছে ঘরের জিনিসের থেকে বাহিরের জিনিস অধিক সুন্দর।এরপর ঠোঁট থেকে লিপস্টিক মুছে ফেলে।বলা যায় না কখন কি করে বসে।
আহান — আমি কখন বললাম বাদরের মতো লাগছে।
ইয়ানা — সুন্দর যে লাগছে তাও তো বলেন নি।
আহান ইয়ানার কথা শুনে আড়ালে মুচকি হাসি দেয়। যাকে দেখলে অগ্নি চৌধুরির বুকে ঘূর্নিঝর শুরু হয় তার রুপের বর্ননা কি মুখে বলতে হয় নাকি। আহান আর ইয়ানার মাঝে আর কোনো কথা হয় নি। দেখতে দেখতে ভার্সিটির সামনে চলে আসে।
ইয়ানা নেমে যেতে নিবে তখন আহান আটকে দিয়ে বলে,,,,,
“” যা যা বলেছি সব যাতে মনে থাকে। অপরিচিত কারোর সাথে কথা বলবে না। আর ভুলে ও যাতে আংটি খুলা না হয়। মোবাইল সাথে রাখবে যাতে ফোন দেওয়ার সাথে সাথে পায়। নিজের বাদর দল ছাড়া কারোর সাথে কোথাও যাবে না। “”
ইয়ানা আহানের কথা শুনে তেতে উঠে বলে,,,,
“” আপনি বাদরের দল কাকে বললেন? ”
আহান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,
“” ভেবে দেখো। “”
এরপর ইয়ানার সামনে দিয়ে চলে যায় নিজের গন্তব্যে।
আহান চলে যেতেই ইয়ানা নিজের ভার্সিটির ভিতর প্রবেশ করে। ইসস কতদিন পর নিজের ভার্সিটিটাকে দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু হল্লা পার্টির দল কোথায়। ইয়ানার ভাবনার মাঝেই কেউ এসে তাকে জরিয়ে ধরে বলে,,,,
“” ইনু বেবিইইইইইইইইইইইই “”
ইয়ানা কানে হাত দিয়ে বলে,,,,
“” আস্তে বইন আস্তে। কোন দেশের হারবাল খেয়ে এমন গলা বানিয়েছিস?”
ইয়ানার কথা শুনে আকাশ বলে,,,
“”কোন হারবাল আবার, গোয়ান্দা অফিসার রায়ানের হারবাল খেয়ে তাইনারে সুমু সোনা? ”
সুমু লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। তা দেখে ইয়ানা ঠাট্টা করে বলে,,,,
“” এই আকাশ চুপ আমাদের লাজুকের মহারানী লজ্জা পেয়েছে। “”
সুমাইয়া ইয়ানার দিকে কটমট চোখে তাকায়। যার অর্থ সে ও অনেক কিছু বলতে পারে।
ইয়ানা এইবার কথা পালটিয়ে বলে,,,
“” যাই হোক কতদিন পর তোদের দেখেছি মনে আলাদা একটা শান্তি লাগছে। খুব মিস করেছিলাম তোদের। “”
আয়াত — হুম আজ মনে হচ্ছে হল্লাপার্টতে শান্তি ফিরে এসেছে। আমাদের গ্রুপটা আবার আগের মতো হয়ে গিয়েছে। খুব মিস করেছিলাম এই সময়টাকে।
তারা অনেক্ষন কথা বলার পর ইয়ানা আকাশের উদ্দেশ্যে বলে,,,,
“” তোর আর অবনির কি খবর সেটা বল। বিয়ে কবে করছিস? ”
ইয়ানার কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে যায়। ইয়ানা সবার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” তোরা সবাই মুখটাকে এমন হুতুম পেচার মতো করেছিস কেনো? আমি তো সিম্পল একটা প্রশ্ন করেছি। কি হয়েছে বলতো? ”
আকাশ ইয়ানার দিকে তকিয়ে আমতা আমতা করে বলে,,,,
“” একটা কথা বলি মারবি না প্রমিস কর। ”
ইয়ানা — এখানে প্রমিস করার কি আছে। যা মারবো না বল।
আকাশ আরুরার দিকে তাকিয়ে বলে ,,,,
“” ভেবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেনো? তুই বলতে পারছিস না। দেখছিস না আমার ভয় করছে।”
আরুরা হঠাৎ আকাশের কথায় ভড়কে যায়। তারপর বিরক্তি নিয়ে বলে,,,
“” তর পুরুষ্যত্ব নিয়ে আমার মাজে মজে সন্দেহ হয়। ইনু শোন আমি বলছি? এই ডাইনোসর বিয়ে করে নিয়েছে। ”
ইয়ানা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,,,
“” বিয়ে করে নিয়েছে মানে? অবনি আর ওর বিয়ে কথা তো চলছিলো তাহলে ও আবার কাকে বিয়ে করেছে? ”
আরু — অবনিকেই বিয়ে করেছে। ডাইনোসরের বিয়ের ভুত মাথায় চাপছিলো। পরে সেই ভুতে দৌড়ানি দিছে বিয়ে করার জন্য তাই কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে। অবনির সাথে বলে কোন ছেলেকে দেখেছে আমাদের হিরো আলম আর সেখানেই ওনি রেগে যায়। তারপর দুইদিনের মধ্যে অবনিকে বিয়ে করে। বিয়েটা আচমকা হয়। বিয়ের মধ্যে শুধু অবনির বাবা মা আর আকাশের বাবা মানে আঙ্কেল আন্টি ছিলো। আর হ্যা বিয়েটা রাতে হয়েছে। যাতে বর বেশে ডাইনোসরের রুপ দেখে কেউ ক্রাশ না খায়। শয়তান পোলা আমাদের ও জানাই নি। পরে ভার্সিটিতে এসে জানিয়েছে। এখন অবনির বাবা মা বলে দিয়েছে আকাশ যতদিন না নিজের বাবার ব্যবসা ধরবে ততদিন ওনি ওনাদের মেয়েকে দিবে না। আগে পড়াশুনা শেষ করবে তারপর হিরো আলম মানে আকশের সাথে সাক্ষাত করাবে।”
ইয়ানা অবাক হয়ে আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ ইনোসেন্ট ফেইস নিয়ে ইয়ানার পানে চায়।
আয়াত আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” একদম ইনোসেন্ট সাজার চেষ্টা করবি না। এই ইনোসেন্ট ফেইস দেখিয়ে আমাদেরকে কন্ট্রোলে নিয়ে নিয়েছিস। এত বড় একটা কান্ড ঘটালি আর আমরা কিছুই বলতে পারলাম না “””
ইয়ানা —- ওরে আমার রমিও রেএএএএএ। কবে থেকে এমন হলি তুই আকাশ। একটা ছেলেকে সাথে দেখে এত জেলাসি তাই একদম বিয়ে করে নিয়েছিস হুম।
রুহান — আহান ভাইয়ার শির্ষ।
ইয়ানা হাসতে হাসতে বলে,,,,
“” তাইতো দেখছি।
তারা অনেক্ষন আড্ডা দেওয়ার পর ক্লাসের সময় হয়ে পড়ে। তারপর নিজের ক্লাসে চলে যায়। কতদিন পর এইভাবে আবার আগের মতো মজা করেছে।
ভার্সিটি শেষে তারা গেইডের সামনে যেতেই গাড়ি দেখতে পায়। কেউ না চিনলে ও ইয়ানা ঠিক চিনেছে এইটা কার গাড়ি হতে পাড়ে। ইয়ানা গাড়ির সামনে যেতেই আহান ইয়ানার দিকে তাকায়। চোখ দিয়ে ইশারা করে গাড়িতে বসতে। ইয়ানা ও চোখ দিয়ে ইশারা করে সুমু তাদেরকে দেখায়। আহান ইয়ানার ইশারা বুঝতে পেরে ইচ্ছা না থাকা সত্তে ও প্রেয়সীর মন রাখতে গাড়ি থেকে নামে হল্লা পার্টর দিকে এগিয়ে যায়।
অগ্নি চৌধুরিকে দেখে সবাই একটু ভয় পেলে ও নিজেকে সামলে নেয়। বিয়ের ঘটনা তাদের আজও মনে গেথে রয়েছে। কতটা হিংস্র আর উন্মাদ লেগেছিলো আহানকে।
আহান তাদের সামিনে গিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” হেই কেমন আছো তোমরা? “”
আয়াত — জি.. জি আলহামদুলিল্লাহ। আমরা সবাই ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
আহান — আলহামদুলিল্লাহ। পরাশুনা কেমন চলছে তোমাদের?
সুমাইয়া — জি ভাইয়া ভালো।
আহান — ওকে তাহলে বাসায় জাও। আর চৌধুরি ভিলায় তোমাদের জন্য দরজা সবসময় খোলা। আগে যেইভাবে ইয়ানার সাথে গিয়ে আড্ডা দিতে সেইভাবে নিজেদের বাড়ি মনে করে দিতে পারো। ভয় নেই তোমাদের দল আমি আলাদা করবো না।
তারপর বিদায় জানিয়ে যার যার মতো চলে যাই।
ইয়ানা গাড়ির মধ্যে আশ্চর্য হয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আহান কপাল কুচকে জিজ্ঞাসা করে,,,,
“” কি হয়েছে “”
ইয়ানা চোখ সরিয়ে নিয়ে মাথা দুই পাশে নারিয়ে বলে,,,
“” নাথিং ”
ইয়ানার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। যে বাড়ির লোকদের সাথে ভালোভাবে কথা বলে না। আজ তার বন্ধুদের সাথে এত ভালোভাবে কথা বলেছে। ইয়ানা খুশিতে গদগদ করে উঠে।
আহান ইয়ানার হাসি মুখ খান দেখে মুচকি একটা হাসি দেয়। আহান বুঝতে পারছে সে ইয়ানার ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলেছে বলে খুব খুশি।
দেখতে দেখতে গাড়িয় গিয়ে চৌধুরি ভিলায় থামে। ইয়ানা গাড়ি থেকে নামতেই আহান কোনো শব্দ ব্যয় না করে আবার নিজের গন্তব্যে অগ্রসর হয়। ইয়ানা ভেবাচেকা খেয়ে যায়। এইভাবে চলে যাওয়ার মানে কি বুঝলাম না।
ইয়ানা আর কিছু না ভেবে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।ভিতরে গিয়েই দেখতে পায় নিচে শুধু ঝর্না বসে আছে। ইয়ানার নিজেকে নিজে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।
ইয়ানা আস্তে করে ঝর্ণার সামনে গিয়ে বলে,,,,
“” আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার জন্য সব হয়েছে প্লিজ কিছু মনে করো না””
ঝর্না ইয়ানার কন্ঠ পেয়ে তেতে উঠে। ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” কি করেছো তুমি আহানের উপর। সে তো কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারতো না। আর সে তোমার জন্য আমাকে আঘাত করেছে। কি দিয়ে বশ করেছো ওকে বলো আমায়। সৌন্দর্য দেখিয়ে তো ওকে পাবে না কারন কানাডায় অনেক মেয়ে ওর জন্য পাগল ছিলো। ওরা তোমার থেকে হাজার গুন সুন্দরী। ওদের দিকে ফিরে ও তাকায় নি। আর তুমি কি এমন করলে যে আহান তোমার দিকে এতটা আকৃষ্ট হয়েছে। কিভাবে সিডিউস করেছো ওকে? তোমার মধ্যে না আছে স্মার্টনেস আর না আছে স্টাইল। পোশাক দেখলেই আগে যুগের খালাম্মাদের মতো লাগে। এত বড় ঘুমটা টেনে রাখো।
ইয়ানা এইবার প্রচুর রাগ হচ্ছে। ঝর্নার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” স্মার্টনেস শুধু তোমার মতো অর্ধ নগ্ন পোশাক পড়লেই আসে না। স্মার্টনেস তার চলা ফেরা আর আচার ব্যবহারে আসে। যা তোমার মতো উগ্রপন্থি মেয়েরা বুঝবে না। নিজের শরীরকে হেফাজত করো। নয়তো শরীরটাকে মিষ্ট ভেবে মাছি বসবে। আর হচ্ছে সিডিউসের কথা তাহলে তুমি একটু আহান চৌধুরিকে জিজ্ঞাসা করে নিও আমি কিভাবে মিসেস আহান চৌধুরি হয়েছি? কিভাবে ওনি আমাকে বিয়ে করেছেন?
ঝর্না রেগে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” আমি আহানকে ভালোবাসি। এখন থেকে নয় একদম ছোট থেকে। “”
ইয়ানা — আর আমি ওনার স্ত্রী। এইটা সেই সম্পর্ক যা আল্লাহ নিজে জোড়া লাগিয়েছেন। কালেমা আর কবুল বলে আমাদের বিয়ে হয়েছে। তোমার ভালোবাসা থেকে আমার স্ত্রীরুপের শক্তি বেশি। একজন স্ত্রীর কাছে তার স্বমী তার লাছে অহংকার আর অলঙ্কার। তোমার ভালোবাসাকে আমি সম্মান জানায়। কিন্তু এইটা আর তোমার নেই। নিজের ভগ্যকে যদি বিশ্বাস করে থাকো তাহলে নিয়তি ভেবে মেনে নাও। মহান রবের কাছে আরজি জানায় যাতে তোমার ভাগ্যে খুব ভালো একটা ছেলে আসে।
এরপর ইয়ানা নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হয়। ঠিক তখন আবার ঝর্নার কন্ঠ ভেসে আসে,,,,,
অনুভবে তুমি পর্ব ৩০
“” ভাগ্য যাই হোক আমি আমার আহানকে চাই। তোমার মতো মেয়ে আহানের যোগ্য নয়। তাই আমি আমার আহানকে নিজের করেই ছাড়ব।
ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” চেষ্টা করে দেখতে পারো। আমি ও দেখতে চাই একজন স্ত্রীর শক্তি বেশি নাকি একজন পর নারীর””
এরপর ইয়ানা নিজের রুমে চলে যায়। এইদিকে ঝর্না ইয়ানার যাওয়ার পানে তাকিয়ে হিংসা আর রাগে ফেটে পড়ছে। তার মাথায় একটাই কথা চলছে যে করেই হোক আহানকে চাই ব্যাস।