অনুভবে তুমি পর্ব ৩৮

অনুভবে তুমি পর্ব ৩৮
লিজা মনি

আহানের কথা শুনে ইয়ানা ভেবাচেকা খেয়ে যায়। নিজের কথায় নিজে আবার ও ফেসে গেলো এইভাবে। সে আহানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
“” চা টা খেয়ে নিন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। “”
আহান বাকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” কেনো আমার লুঙ্গি খুলবে না? ”
ইয়ানা —– এই সরুন তো আপনার লুঙ্গি খুলতে যাব কেনো? আমি একটা ভালো মেয়ে তাই আপাযত আপনার লজ্জাহরন করব না। আজকের জন্য আপনাকে ছেড়ে দিলাম।
আহান ইয়ানার দিকে একটু ঝুকে বলে,,,,,

“” কিন্তু আমি তো চাই বেইবি আমারটা খুলো। কিন্তু লজ্জা আমার হরন হবে না, হবে তোমার।””
ইয়ানা মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” শুধু শুধু একজন আরেকজনের লজ্জা হরন করে লাভ আছে বলোন, আমরা আমরাইতো।
ইয়ানার কথা শুনে আহান একটা মুচকি হাসি দেয়। ইয়ানা আহানকে ছোট ছোট চোখে পরখ করছে।
এরপর আহান বিছানায় শুয়ে গেলে ইয়ানা আদর্শ বউদের মতো মাথায় জলপট্টি দিয়ে দেয়।
ইয়ানা —- আপনি যখন বৃষ্টিতে ভিজতে পারেন না তাহলে কেনো ভিজেছিলেন শুনি।
আহান —- কেনো ভিজেছিলাম ভুলে গেলে নাকি সকাল হতেই।
ইয়ানা আর কিছু বলে না। এই লোকের মাথায় এইসব ছাড়া আর কিছু নেই।
হঠাৎ আহান শুয়া থেকে উঠে পড়ে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইয়ানা —- আরে উঠলেন কেনো?
আহান —- অফিসে যেতে হবে।
ইয়ানা — কিহহহ। পগল হয়ে গিয়েছেন আপনি এই জ্বর নিয়ে অফিসে যাবেন।
আহান — জ্বর হয়েছে তো কি হয়েছে মরে তো আর যাব না। আর আমি শশুর বাড়ির জামাই আপ্যায়ন খেতে আসি নি। যার জন্য এসেছিলাম তাকে দেখা হয়ে গেছে। তাহলে আর থেকে কি করব। তুমি কয়েকদিন থাক আমি আর আসতে পারব না।
ইয়ানা —- আসবেন না মানে? আমি ও তাহলে চলে যাচ্ছি। আর এখন না খেয়ে আপনি অফিসে যেতে পারবেন না।
আহান ডেবিল হাসি দিয়ে বলে,,,,,

“” আমি না আসলে তো তুমি খুশি হওয়ার কথা। আমি আসলে তুমি ক্ষতবিক্ষত হও।
ইয়ানা — একদম মজা নিবেন না। আপনি খাওয়া দাওয়া না করে যেতে পারবেন না। আর এই জ্বর নিয়ে আমি ও যেতে দিব না।
আহান ইয়ানার কপালে চুমু দিয়ে বলে,,,,,,
“” কেনো বাচ্চামো করছো। আমার খুব গুরুত্বপূর্ন কাজ আছে।
এরপর আহান বাকা হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” আমি যদি এখানে থাকি তাহলে তুমি ঠিক থাকবে না। আগে শরীরের এই দাগ গুলো ভালো হোক তারপর না….
আহানকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ইয়ানা আহানের মুখ চেপে ধরে বলে।,,,,,,
“” চুপ অসভ্য ”

আহান নিজের পরনে লুঙ্গি ছেড়ে দিয়ে পেন্ট পড়ে নেই।
এতক্ষনে পেন্ট হালকা শুকিয়ে গেছে।
ইয়ানা আহানের দিকে তাকিয়ে কাতর কন্ঠে বলে,,,,
“” প্লিজ আহান অন্তত কিছু খেয়ে যান। আম্মু খুব ভালোবেসে আপনার জন্য খাবার বানিয়েছে। আপনি যদি না খান তাহলে আম্মু খুব কষ্ট পাবে। আমার আম্মু ওতো আপনার আম্মুর মতোই তাই না।””
মায়ের কথা মনে পড়তেই আহানের বুকটা ধুক উঠে। চোখ গুলো জ্বরের কারনে একটু লাল হয়ে ছিলো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ফুলকি বের হবে। কিন্তু আহান কি রাগ করেছে নাকি মায়ের কথা শুনে নিজের চোখের পানি সংবরন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

ইয়ানা আহানের অবস্থা দেখে ঘাবরে যায়।
ইয়ানা — সরি আমি কথায় কথায় আপনার আম্মুর সাথে তুলনা করে ফেলেছিলাম। আচ্ছা আপনার খেয়ে যেতে হবে না তবুও রাগ করবেন না প্লিজ।
আহান নিজেকে শান্ত করে বলে,,,,
“” হুম খেয়ে যাব “”
ইয়ানা আহানের কথা শুনে চিৎকার দিয়ে বলে,,,,
“” সত্যি! ”
আহান গম্ভির কন্ঠে বলে,,,,,
“” হুম। তবে এই দুইদিন আমি আসতে পারব না। তাই এই দুইদিনেরটা এখন একটু পুষিয়ে দাও। “”
ইয়ানা অবুঝের মত বলে,,,,
“” কি দিব? ”
আহান নিজের ঠোঁটের দিকে ইসারা করে বলে,,,,
” ভালোবাসার পরশ “”

ইয়ানা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। সে কখনো আহানকে আলিঙ্গন করেনি। এখন হঠাৎ করে কিভাবে করবে,,,,
আহান —– কি হলো দাও নয়তো আমি কিন্তু খেয়ে যাব না।
ইয়ানা পরেছে মহা বিপদে। আহানের সামনে দাঁড়িয়ে হাসফাস করছে।
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,, ,
“” ঠিক আছে দিতে হবে না আমি চলে যাচ্ছি। “”
আহান দরজার কাছে যেতেই ইয়ানা পিছন থেকে বলে,,,,
“” ঠিক আছে দিচ্ছি দিচ্ছি।”

আহান ইয়ানার সামনে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু ইয়ানা তো আহানের বক্ষ পর্যন্ত ও কিভাবে আহানের ঠোঁট ছুবে। ছয় ফুট ছেলের কাছে পাঁচ ফুট মেয়েতো চিনেপুটি। ইয়ানা মাথা উচু করে আহান আর ও টান টান হয়ে দাঁড়ায়। ইয়ানা আহানের দিকে দাতে দাত চেপে তাকায়। যার অর্থ আজ সে আহানকে চুমু খেয়েই ছাড়বে। এরপর ইয়ানা একটা চেয়ার এনে তার উপর দাঁড়ায়। আহান ইয়ানার কান্ড দেখে মিটিমিটি হাসছে। নিজের থেকে খাটো বউ হলে যা হয় আরকি। ইয়ানা আহানের হাসি দেখে মাথায় জেদ চেপে বসে। যে করেই হোক চুমু খেয়ে দেখিয়ে দিবে ইয়ানা খাটো হতে পারে কিন্তু কোনো অংশে কম না। এরপর ইয়ানা আহানের সামনে দাঁড়িয়ে টুপ করে একটা চুমু খায়। চুমু খেয়ে সরে আসতে যাবে তার আগেই আহান ইয়ানার মাথার পিছন অংশ চেপে ধরে নিজের ঠোঁটের সাথে ইয়ানার ঠোঁট দখল করে নেই। ইয়ানা আহানের বুকে ঘুসি দিতে থাকে। কত বড় বজ্জাত আমাকে বলছে দিতে আর এখন এইটার ফাইদা তুলছে। ইয়ানা ছটফট করার কারনে আহান ইয়ানার হাত জোড়া নিজের এক হাত দিয়ে আবদ্ধ করে ফেলে।
প্রায় দশ মিনিট পর আহান ইয়ানাকে ছেড়ে দেয়। ইয়ানা রাগে ফুসফুস করতে থাকে। আহান একটা বাকা হাসি দিয়ে নিচে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয়। ইয়ানা ও আহানের পিছু পিছু আসে।

খাবার টেবিলে হরেক রকম খাবার। এত খাবার দেখে ইয়ানার চোখ চরক গাছে।আম্মু এইসব কখন রান্না করলো। পুরো টেবিল জোড়ে বাহারি রকম খাবার।
আহান টেবিলে তো বসেছে কিন্তু খেতে পারছে না। কিভাবে খাবে সে এইসব তৈলাক্ত খাবার। সেতো এইসব খাবার খায় না। আহানকে খেতে না দেখে সেলিনা হোসেন আহানের প্লেটে সরষে ইলিশ দিয়ে বলে,,,,
“” এই নাও বাবা তোমার পছন্দের খাবার? “”
আহান — এইটা আমার পছন্দের খাবার আপনাকে কে বলেছে??
সেলিনা হোসেন হাসি দিয়ে বলে।,,,,,

‘” ইয়ানা বলেছে তুমি নাকি সরষে ইলিশ আর গরুর মাংস খুব পছন্দ কর। তাই ইয়ানার আব্বুকে দিয়ে বাজার থেকে টাটকা ইলিশ আনিয়েছি। “”
আহান ইয়ানার দিকে কটমট চোখে তাকায়। যেখানে আহান মাছ খেতে পারে না কাটার জন্য সেখানে সে ইলিশ খাবে কিভাবে? আর গরুর মাংস ত সে কোনোদিন ছুয়ে ও দেখেনা সেটা নাকি ওর পছন্দের খাবার। ইয়ানা আহানের তাকানো দেখে একটা শুকনো ঢুক গিলে। আল্লাহ এখন যদি রেগে ঘূর্নিঝর শুরু করে আব্বু আম্মুর সামনে। আহানের ইচ্ছে করছিলো এইসব খাবার না খেয়ে ইয়ানাকে কাচা চিবিয়ে খেতে। ইয়ানা সবার আড়ালে কানে ধরে ঠৌট উলটে আসতে করে বলে।,,,,,
“” সরি “”

এরপর চোখ দিয়ে ইশারা করে এখন যাতে কিছু না বলে আব্বু আম্মু আছে।
আহান ইয়ানা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অনেক কষ্টে খাবার শেষ করে।
খাওয়া শেষে আহান নিজের গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হয়।
আহান চলে যেতেই ইয়ানা একটা শ্বাস ফেলে। ভুলভাল খাবারের নাম বলার জন্য নির্ঘাত ওর কপালে মাইর আছে। কিন্ত তার আগে আব্বু আর আম্মুর সাথে সুমুর বিষয়ে কথা বলতে হবে।
ইয়ানা একরাশ সাহস সঞ্চয় করে নিয়ে আসাদ হোসেনের সামনে বসে। এরপর সুমুকে ইশারা করে যাতে ভয় না পায়
কিন্তু কে শুনে কার কথা সুমুর এতক্ষনে কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে।
ইয়ানা আসাদ হোসেনকে বলে,,,,,

“” আব্বু তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো? “”
আসাদ হোসেন — কি কথা বল।
ইয়ানা —– আচ্ছা আব্বু তোমার রায়ান ভাইয়াকে কেমন লাগে?
আসাদ হোসেন — হঠাৎ এই প্রশ্ন?
ইয়ানা — তুমি বলো না কেমন লাগে? মানে ওনার চরিত্র শিষ্ঠাচার এবরিথিং কেমন লাগে।
আসাদ হোসেন হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” ছেলেটাকে আমার খুব ভালো লাগে। কত সুন্দর ভদ্র, নম্র একটা ছেলে এই যুগে পাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার।
আহান চৌধুরির বন্ধু হলেও ওর মত উগ্র, অভদ্র না।
ইয়ানা আসাদ হোসেনের কথায় সম্মতি জানিয়ে বলে,,,,,

“” ঠিক বলেছো আব্বু আহান একদম ভালো ছেলে না। কিন্তু রায়ান ভাইয়া খুব ভালো। আহান হচ্ছে উগ্র, ডেবিল আর কত কি কিন্তু রায়ান ভাইয়া খুব ভালো। তুমি দেখলে না কিভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো যখন তুমি হসপিটালে ভর্ত হয়েছিলো।””
সুমু আহাম্মকের মতো ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে। কিভাবে বদনাম করছে আহানের নামে। কাল ওইত বলল আহান খুব ভালো কিন্তু কোনো এক কারনে সে এমন হয়ে গিয়েছে।।কিন্তু আজ অনায়াসে বাজে কথা বলে যাচ্ছে। কিন্তু ইয়ানাতো রায়ানকে উপরে উঠানোর জন্য এইসব বলছে যাতে আঙ্কেলের মন নরম হয়। হায় ইয়ানা কি বুদ্ধি তোর মাথায় নিজের স্বামীকে ছোট করে অন্য কে বিয়ে দিতে চাইছিস বলদ একটা।
ইয়ানার কথা শুনে আসাদ হোসেন বলে।,,,,

“” আহান এত খারাপ তোর কোনো ক্ষতি করে নিতো? তোর মা আর রুয়ানা বলেছে আহান নাকি তোকে খুব যত্নে রাখছে তাহলে খারাপ বলছিস কেনো? “”
ইয়ানা ভেবাচেকা খেয়ে যায়। মনে মনে বিরবির করে বলে।,,,,
“” বেশি বলে ফেললাম নাকি। একটু কম বলতে পারতি ইয়ানা এখন কি বলব আমি? “”
ইয়ানা মিথ্যে হাসি দিয়ে বলে।,,,,,,
“” আরে ছাড়তো আব্বু। ওনি আমার সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করে না। এমন কি জীবনে একটা ধমক ও দেয় না। তবে আজ আমি তোমার সাথে রায়ান ভাইয়ার সম্পর্কে একটা কথা বলতে এসেছি। “”
আসাদ হোসেন —- কি বলবি?

ইয়ানা একটা শ্বাস ছেড়ে বলতে যাবে তার আগেই কিছুর শব্দ পেয়ে রান্না ঘরের দিকে তাকায়। দেখে সুমুর হাত থেকে পানির গ্লাস পড়ে গিয়েছে। মাইয়া ভয়ে কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছে গাধি।
ইয়ানা ওইদিকে পাত্তা না দিয়ে বলে,,,,,,,
“” আব্বু আ.. আসলে হয়েছেটা কি?””
আসাদ হোসেন — কি হয়েছে বল।
ইয়ানা —- আসলে রায়ান ভাইয়া সুমুকে পছন্দ করে এখন ওনি তাকে বিয়ে করতে চাই।
ইয়ানা এক শ্বাসে চোখ বন্ধ করে নেয়। এখন আব্বু রেগে গিয়ে দাঁড়িয়ে বাংলা সিনেমার ভিলেন বাবাদের কতো বলবে,,,,

“” এই বিয়ে হতে পারে না। আমি বেঁচে থাকতে আমি এই বিয়ে জীবনে ও মানব না।
ইয়ানার ভাবনার মাঝে আসাদ হোসেনের হাসি মিশ্রিত কথা কানে ভেসে আসে।
আসাদ হোসেন —- সত্যি কথা নাকি। আমি তো আর ও ভেবে ছিলাম রায়ানের সাথে সুমুর বিয়ের কথা বলব। কিন্তু ওরা তো আগে থেকেই পছন্দ করে রেখেছে। তাহলে আমার কষ্টটা একটু হালকা হলো “”
ইয়ানা আসাদ হোসেনকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,
“” থ্যাঙ্ক ইউ আব্বু মেনে নেওয়ার জন্য। তুমি এখন কষ্ট করে নিজের রিনা খান বউকে মানিয়ে নিও।
এরপর ইয়ানা চলে যায় সুমুর কাছে। কিন্তু রান্নাঘরে সুমু নেই। ইয়ানা কয়েকবার ডাক দেওয়ার পর সুমু টেবিলের নিচে থেকে বেরিয়ে আসে।
ইয়ানা সুমুকে টেবিল নিচ থেকে বের হতে দেখে অবাক হয়ে বলদ,,,,,
“” চুরের মত টেবিলের নিচে গিয়ে লুকিয়েছিস কেনো? নাকি ওইখানে বসে রায়ান ভাইয়ার সাথে রুমান্স করছিলি? “”

সুমু ভয়ে ভয়ে বলে,,,,,,
“” বাজে কথা বন্ধ কর আর বল আঙ্কেল কি বলেছে।””
ইয়ানা কান্নার অভিনয় করে বলে,,,,,,
“” দেখ সুমু আমি আব্বুকে অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু….
ইয়ানার কথা শেষ না হতেই সুমু আহত সুরে বলে,,,,,
“” বুঝেছি আর বলতে হবে না। আঙ্কেল রাজি হয় নি তাইতো। কি আর করার করলাম না বিয়ে।
ইয়ানা সুমুর মুখের অবস্থা দেখে হু হু করে হেসে উঠে।
সুমু ইয়ানার হাসি দেখে কপাল কুচকে বলে,,,,,,
“” এইভাবে পাগলের মতো হাসছিস কেনো? “”
ইয়ানা নিজের হাসিটাকে থামিয়ে বলে,,,,,
“” সুমু বেবি আব্বু রাজি হয়েছে। ওনি আগের থেকেই রায়ান ভাইয়াকে পছন্দ করত আর তোর বিষয় ভেবে রেখেছিলো”
সুমু আলহামদুলিল্লাহ বলে নিজের চোখ বন্ধ করে নেই।
এরপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে ,,,,,

“” দেখছিলাম যখন জানবি আব্বু মেনে নেই নি তখন তোর মুখটা কেমন লাগবে।যাস্ট দেখার মতো ছিলো🤣।
সুমু ইয়ানাকে থাপ্পর দিতে দিতে বলে,,,,,
“” শয়তান মাইয়া তুই জানিস আমার জীবন বের হয়ে যাচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো আমার পৃথিবী থমকে গেছে। “”
ইয়ানা —- ohho এত ভালোবাসিস তুই রায়ান ভাইয়াকে আমাদের শান্তির রানী।
সুমু — হুম। তবে তোকে একটা চুম্মা দেওয়ার দরকার।
ইয়ানা —- নো আমি চুম্মা চাই না তুই আমাদের পুরো হল্লা পার্টিকে ট্রিট দিবি।
সুমু —- বড়লোক বেডার বউ হয়ে ট্রিট চাস কেমনে বইন।
ইয়ানা ভেংচি মেরে বলে,,,,
“” বড়লোক না কচু। জীবনে একদিন বাহিরে নিয়ে যায় নি। ঘুরার জন্য তো বাদ দে বইন একদিন শখ করে ও বলেনি ইয়ানা চলো চন্দ্রবিলাস করি। অগ্নি চৌধুরির মতো কিপ্টা ঢাকা শহরে আর একটা ও নেই।””
সুমু ইয়ানার কথা শুনে উচ্চস্বরে হেসে উঠে।

গভীর জঙ্গলে অগ্রসর হচ্ছে দুইজন যুবক। তারা সামনে এগোচ্ছে আর শুকনো পাতার মচমচ শব্দে পুরো জঙ্গল আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। কিছু দুর যাতেই কেউ একজন তাদের সামনে মুখ থুবরে পরে। লোকটি পড়ে যেতেই সামনে থাকা ব্যক্তিটা একটা বাকা হাসি দেয়।এরপর লোকটি ধীরে ধীরে পিছাতে থাকে আর সামনে থাকা লোকটি এগোতে থাকে।
লোকটি আতঙ্ক নিয়ে বলে,,,,,,,
“” ছে..ছেড়ে দিন আমায়। আমি কিছু জানি না, জানি না কিছু। “”
সামনে থাকা ব্যক্তিটি ঠান্ডা কন্ঠে বলে,,,,,,
“” মি. শেখ কোথায়? কোন গুহায় লোকিয়ে আছে বল?
লোকটি,,,,

“” বিশ্বাস করুন স্যার আমি জানি না। মি,, শেখের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।””
এরপর সামনে থাকা লোকটি মাটিতে পড়ে থাকা দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তারপর বাকা হাসি দিয়ে সাথে সাথে লোকটির দেহ থেকে মাথা আলাদা করে ফেলে। লোকটির শরীরের রক্ত সামনে থাকা ব্যক্তিটির মুখে গিয়ে ছিটকে পড়ে।
ব্যক্তিটি বিরবির করে বলে,,,,,
“” বি*চ অগ্নি চৌধুরির সাথে মিথ্যাে বলছে। “”
এরপর লোকটার শার্টের ভিতর থেকে একটা হিডেন কেমেরা হাতে নেই।ক্যামেরা হাতে নিয়ে চোখের সামনে নিয়ে দাতে দাত চেপে বলে।,,,,
“” আমাকে ধরার জন্য ক্যামেরা ফিট করেছিস শেখ। কিন্তু অগ্নি চৌধুরি এত কাচা খেলোয়ার না। তুই কিছু শুনার আগেই ক্যামেরা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। পারলে আমার সামনাসামনি আয়। এইভাবে চুরের মত লোকিয়ে তথ্য নিতে লোক পাঠিয়েছিস বাহহ।
এরপর আরিফের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,

“” এই লাশটাকে উঠিয়ে টর্চার সেলে নিয়ে যাহহ।””
আরিফ ভয়ে ভয়ে বলে,,,,,,
“” ভা.. ভাই একবার যদি পুলিশ এইসব জানতে পারে তাহলে জেল নিশ্চিত। সাধারন জনগন আপনার উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যাবে””
আহান একিটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
“” চাপ নিস না পুলিশ কখনো জানতে পারবে না। অগ্নি চৌধুরি যা কিছুই করে তার কোনো প্রমান সাথে রাখে না”

রাত শেষে সকালের আকাশে সূর্য উদিত হয়। সূর্যের আলো চোখে পরতেই ইয়ানা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। বিছানা থেকে উঠে বসে মোবাইল হাতে নেই সময় দেখার জন্য। মোবাইল ডাটা খুলতেই ইয়ানার চোখ কপালে উঠে যাওয়ার উপক্রম। আহানের ৩০+ মিসকল।ইয়ানা তুই আজ শেষ। আহান তোকে আজ জানে মেরে ফেলবে। “ইন্না নিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”” আল্লাহ গো আমি এত তারাতারি মরতে চাই না। আল্লাহ এইবারের মতো বাঁচিয়ে দাও। ইয়ানা ভয়ে ভয়ে আহানের নাম্বারে ফোন দেই। ফোন ডুকে ঠিক কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। ইয়ানা একাধারে দিতেই থাকে আজ সে ও দেখবে কিভাবে না ধরে থাকে। অনেক্ষন ফোন দেওয়ার পর ও আহান যখন ফোন ধরে না তখন ইয়ানা রায়ানের মোবাইলে ফোন দেই। ফোন দেওয়ার সাথে সাথে রিসিভ হয়।
ইয়ানা তারাহুরা গলায় বলে,,,,,

“” ভাইয়া আপনার বন্ধু কোথায়? আমার ফোন রিসিভ করছে না কেনো?
রায়ান — তাহলে তুমি এতক্ষন ফোন দিচ্ছিলে। আমি ওতো বলি কার এত বড় সাহস যে আহানকে বিরক্ত করছে। একবার ফোন না ধরা সত্তে ও।
আহান রায়ানের দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে বলে,,,,,
“” কে ফোন দিয়েছে? “”
রায়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইয়ানা বলে,,,,,
“” ভাইয়া আপনার বন্ধুকে বলে দিন আমার ফোন না ধরলে কিন্তু খবর আছে। রাগ কিন্তু আমি ও করতে পারি”
আহান রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” এই অসভ্য আর ঘার ত্যারা মেয়ের ফোন কাট রায়ান
নাহলে তোকে আমি কেটে টুকরো টুকরো করব। ”

ইয়ানা —- না ভাইয়া একদম ফোন কাটবেন না। তাহলে আমিও ভুলে যাব আপনি আমার ভাই হন। আগে ওনাকে বলেন ফোন রিসিভ করতে। আমি সত্যি খুব দুঃখিত ফোন ধরতে পারি নি বলে।
আহান — রায়ান ওকে বলে দে অগ্নি চৌধুরি যে কারোর সাথে কথা বলে না। আর ওর মত মেয়ের মত তো না ওই। অসভ্য মেয়ে স্বামীর খুজ খবর নেই না। আবার ফোন দিলে রিসিভ করার সময় পাই না।
আহানের কথা শুনে ইয়ানার চোখে পানি চলে আসে। অগ্নি চৌধুরি যে কারোর সাথে কথা বলে না মানে কি বুঝাতে চেয়েছে। আমি অন্যকেউ ওনার কিছু হয় না।
ইয়ানা কান্নামিশ্রিত গলায় বলে,,,,,

“” ভাইয়া ওনাকে বলে দিন আমি তো যে কেউ তাহলে কেনো ফোন দিব। আর ফোন ধরতে দেরি হয়েছে ডাটা অফ ছিল তার উপর ফোনে চার্য ছিলো না। তাই আমি ফোন বুঝতে পারে নি। আমি ওনাকে একবার মেসেজ করে জিজ্ঞাসা করেছিলাম জ্বর কমেছে কি না তখন ওনি রিপ্লাই দিয়েছে জ্বর কমেছে। তাই আমি ও চিন্তা মুক্ত ছিলাম। আমি ওনাকে ফোন দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু রাত হওয়ায় ডিস্টার্ব করতে চাই না। হয়তো কাজ শেষে ক্লান্ত হয়ে রেস্ট নিচ্ছে। তাই বিরক্ত করতে চাই নি। আমি কি জানতাম নাকি ওনি ফোন দিবে কই একদিন ওতো দেই নি। “”
আহান —- রায়ান এই মেয়েকে ফেঁচফেঁচ করে কান্না করতে বারন কর। সামনে আসলে থাপরাবো যদি আর একবার ও কান্নার শব্দ আসে। যাকে এক নিজর দেখার জন্য হৃদয় ছটফট করে তার ফোনে বিরক্ত বোধ করব লাইক সিরিয়াসলি। এই মেয়ে কখনো আমাকে বুঝে নি আর বুঝবে ও না।

রায়ান একবার আহানের দিকে তাকাচ্ছে। যে এই মুহূর্তে রাগে ফুসফুস করছে। আর একবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে যেখান থেকে নাক টানার শব্দ আসছে মানে ওনি কান্না করছে। রায়ান মনে মনে ভাবে,,,
“” যখন তরা নিজেরাই কথা বলছিস তখন বলছিস কেনো রায়ান এইটা বল ভাইয়া ওইটা বলুন। “”
ইয়ানা নাক টেনে বলে,,,,,
“” সব সময় আমার সাথে এত রাগ দেখান কেনো? কথা বলবো না আর আপনার সাথে হৃদয়হীন লোক। “”
এইবলে ইয়ানা ফোন কেটে দেয়। আহান ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“”কেটে দিয়েছে? কিন্তু আমার তো কথা ছিলো? “”
রায়ান আহানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,

“” শা*লা তোকে বুঝা সত্যি অনেক বড় ব্যাপার। মেয়েটা ফোন দিয়েছিলো নিজের দোষ স্বীকার করেছে। তার পর ও এত ধমকাধমকি করেছিস। আর এখন বলছিস কথা ছিলো। তর স্বভাব ভাই কুকুরের লেজের মতো কখনো ঠিক হবে না। অন্তত নিজের বউয়ের সাথে তো মিষ্টি সুরে কথা বলতে পারিস। দিলিতো মেয়েটাকে এখন কাঁদিয়ে””
আহান দাতে দাত চেপে বলে,,,,,,

অনুভবে তুমি পর্ব ৩৭

“” গোয়েন্দা অফিসার ভালো কথা আসামীদের গালি আমার উপর প্রয়োগ করছিস কেনো? আর আমি মিষ্টি সুরে কথা বলি নাকি কর্কশ সুরে কথা বলি তুই আমার রুমে গিয়ে শুনেছিস? চুপ থাক তুই এমনি সব ঠিক হয়ে যাবে। “”
রায়ান আর কিছু বলে না। সে একটা বললে ও হাজার টা বলবে। পরে দেখা গেলো ওর গালে থাপ্পর লাগানো শুরু করছে। এর চেয়ে ভালো চুপ থাকা।

অনুভবে তুমি পর্ব ৩৯