অনুভবে তুমি পর্ব ৩৯
লিজা মনি
সময় কারোর জন্য অপেক্ষা না করে নিজের আপন গতিতে চলতে থাকে।যে সময় হারিয়ে গেছে তাকে ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। কিন্তু তুমি চাইলে যে সময় সামনে আছে তাকে সুন্দর করতে পারো।প্রতিটি মুহূর্তের মূল্য দেখতে পাওয়া হলো সময়ের ব্যবস্থা পনার চাবিকাঠি। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে কেউ শুখের সাথে সাক্ষাত করে আবার কারোর জীবন এক ধাপ পিছিয়ে যায়।
ওইদিনকার ফোনের পর কেটে যায় অনেকগুলো দিন। না একদিন আহান ইয়ানাকে ফোন দিয়েছে আর না ইয়ানা আহানকে ফোন দিয়েছে। ইয়ানা প্রতিদিন একরাশ অভিমান নিয়ে পার করছে সময়গুলোকে। অনেকদিন পর আজ ইয়ানা চৌধুরি ভিলায় আসে।চৌধুরি ভিলায় পা রাখতে মনের মধ্যে এক অদ্ভুত শিহরন বয়ে যায়। মেয়েদের জীবন কি আজব হাজার কষ্ট আর অভিমানের পরও সেই স্বামীর ঘরটাকে ধরে আকড়ে ধরতে হয়। ইয়ানা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই আহিয়া এসে জাপটে ধরে।
আহিয়া — ওহহ বৌমনি কেমন আছো তুমি?
ইয়ানা হাসি মুখে বলে,,,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“” এই তো ননদীনি আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো? বাবা আর দাদুমনি কোথায়?””
— এইতো নাতবউ আমি এখানে।
ইয়ানা পরিচিত কন্ঠস্বর পেয়ে সে দিকে হাসিমুখে তাকায়।
ইয়ানা দাদুমনিকে দুই হাত ধারা আলিঙ্গন করে বলে।,,,,,
“” কেমন আছো তুমি দাদুমনি? ঔষধ ঠিকমতো খেয়েছো তো। “”
দাদুমনি — হ্যা হ্যা খেয়েছি। যেভাবে বলে গিয়েছিস না খেয়ে উপায় আছে।
এরপর দাদুমনি ইয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” কিন্তু তুই এইভাবে শুকিয়েছিস কেনো? চোখের নিচে কালো হয়ে গিয়েছে মনে হচ্ছে ঘুমাস নি।জামাই দেশে নেই সেজন্য সারারাত চিন্তা করছিলি বুঝি হুম। “”
দাদুমনির কথা শুনে ইয়ানা অবাক হয়ে তাকায়। আহান দেশে নেই মানে কি? আহান কি তবে দেশের বাহিরে গেছে? দেশের বাহিরে গেছে ভালো কথা একবার ওকি জানানোর প্রয়োজন বোধ করল না। এতটাই পর হয়ে গিয়েছি আমি। ইয়ানা নিজের কান্না নিয়ন্ত্রনে রেখে দাদুমনিকে জিজ্ঞাসা করে,,,,
“” ওনি দেশের বাহিরে মানে ওনি কি বাংলাদেশে নেই।””
দাদুমনি অবাক হয়ে বলে,,,,,
“” সে কি তোকে বলে যাই নি। অবশ্য ও কখনো কোনো জায়গায় গেলে বলে যায় না। আহিয়া জিজ্ঞাস করাতে বলেছিলো। কিন্ত তুই তো ওর বউ। এই ছেলে জীবনে ওও ঠিক হবে না। আহান তো এক সপ্তাহের মতো দেশের বাহিরে ছিলো কাল রাতে মনে হয় দেশে এসেছে। এখনো বাড়িতে আসেনি। “”
ইয়ানা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে” ওহহ” বলে উপরে চলে।যায়। প্রচুর কান্না পাচ্ছে। কিন্তু দাদুমনি আর আহিয়ার সামনে তো আর কান্না করা যাবে না।ইয়ানা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে চলে যায়। আর আকাশ পানে তাকিয়ে নিজের কষ্টকে প্রকাশ করছে।
“” কেনো আহান এমন করছেন? আপনি তো বলতেন আমার সাথে এক মুহূর্ত কথা না বললে আপনার হৃদয় ছটফট করে। আমাকে একনজর দেখার জন্য আপনি তৃষ্নার্ত চাতক ন্যায় হয়ে পড়েন। আমার অনুপস্তিতি আপনার হৃদয় হাহাকার করে। তাহলে আজ আপনার সেই হাহাকার কোথায় গেলো আহান। একবার ও কি মনে পড়ে নি আমার কথা। একবার ও কি আপনার অনুভবের সেহজাদীর সাথে কথা বলার ইচ্ছে জাগে নি। এতটাই পর হয়ে গিয়েছি আমি। নাকি ভুলে গেছেন আমাকে। এখন আর অনুভব করেন না আপনার হৃদয়হরনীকে। যদি এমন ওই হয় তাহলে আমাদের রাস্তা এত দুর কেনো করলেন। আপনাকে তো আমি ভালোবাসতে চাই নি। আমার হৃদয়ে ভালোবাসার বীজ আপনি বপন করেছেন। আপনি আমার সাথে অনেক অন্যায় করেছেন কিন্তু আমি সব কিছু ভুলে আপনার সাথে বাঁচতে চেয়েছিলাম।
আমি কখনো অন্যায়কে পশ্রয় দিতাম না কিন্তু আপনি হাজার অন্যায় করার পর ও আমার সুপ্ত হৃদয়ে আপনাকে জায়গা দিয়েছিলাম। ভালোবেসে ফেলেছিলাম আপনাকে তাই তো আপনি আমার সাথে হাজার অন্যায় করার পর ও ছেড়ে চলে যেতে পারি নি। আপনি আমার প্রথম সত্তিকারের ভালোবাসা। আপনি সেই প্রথম পুরুষ যে আমার সত্তার সাথে মিশে গিয়েছিলো। আপনি আমার জীবনের সেই প্রথম পুরুষ যাকে আমি আমার ভালোবাসার চাদারে মুরাতে চেয়েছিলাম। শুনেছি ভালোবাসা আর বিশ্বাস ধারা মরুভুমিতে ফুল ফুটাতেও সম্ভব। কিন্তু আপনি তো আমাকে মাঝ রাস্তায় রেখে চলে গিয়েছেন। চলেই যদি যাবেন তাহলে এসেছিলেন কেনো? ভুলেই যদি যাবেন তবে আমার অনুভবে মিশলেন কেনো? হ্যা এসেছি আমি বেহায়ার মতো আপনার বাড়িতে। আপনি আমাকে অবহেলা করতে পারেন কিন্ত আমাদের জন্য আমি আমার আব্বু আম্মুকে কষ্ট দিতে পারব না। ওদের কে বুঝাতে দিতে পারি না আমি কষ্টে আছি। আপনি হীনা শুন্যতা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
ইয়ানার কান্না করতে করতে হেচকি উঠে গিয়েছে। ওই বাড়িতে কান্না করতে পারে নি বাবা মা দেখবে বলে,, হাজার টা প্রশ্ন করবে বলে,, কিন্ত এখন তো আর ধরা বাধা নেই। অনেক্ষন নিরবে কান্নার ফলে মাথায় প্রচুর পেইন হওয়া শুরু করে। ইয়ানা নিজের চোখ বুলিয়ে চারপাশে তাকায় দেখে রাত হয়ে গিয়েছে। ওহহ নো এখন তো রাত হয়ে গিয়েছে। ইয়ানা তারাতারি করে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দেয়। এরপর নিচে চলে যায়। ইয়ানা দাদুমনি পাশে বসে নিচে মাথা রেখে বলে।,,,,,
“” দাদুমনি ঝর্না তারা কি চলে গিয়েছে? তাদেরকে দেখতে পেলাম না যে?
দাদুমনি—– হ্যা ওরা কাল চলে গিয়েছে। এখন থেকে তারা বাংলাদেশে থাকবে। বাংলাদেশে তাদের যে ব্যবসা আছে ওইটা দেখাশুনা করবে আরকি।
ইয়ানা — ওহহ তাই বলো।
এরপর সবাই মিলে রতের খাবার খেয়ে যার যার রুমে চলে যায়। ইয়ানার মাথা ব্যাথা করায় তেমন কিছু খায় নি। নিজের জন্য একটু আধা দেওয়া চা বানিয়ে উপরে চলে যায়। রুমে গিয়ে মাথা থেকে ঘোমটা টা ফেলে দিয়ে একটা বড় নিশ্বাস নেয়। বাজ্ঞিস আহিয়া আর দাদুমনি মুখের দিকে ভালোভাবে তাকায় নি নয়তো হাজারটা প্রশ্ন করত।
ইয়ানা নিজের তৈরি করা চা খানা খেয়ে শুয়ে পড়ে। মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।
রায়ান —- ভাই এই রাতে তাদের গ্যাংটা ধরা অসম্ভব। তারা যে সময় আসে সেটা হলো সন্ধ্যার দিকে ভিবিন্ন ছদ্নবেশ ধরে আসে। ওই সময় যদি আমরা আমাদের চোখ কান খুলা রাখি তাহলে ধরতে পারব। আর আমি আমার সব গোয়ান্দা টিমকে পাঠিয়ে দিব। ভাই প্লিজ তুই অন্তত এইটার মধ্যে জড়াস না। আমি তোর বন্ধু কম ভাই। তাই আমি তোর ভালোর জন্য বলছি।কানাডা থেকে কাল দেশে এসেছিস। এখনো বাড়িতে যাস নি। ইয়ানার সাথে ও দেখা করিস নি পর্যন্ত। মেয়েটা নিশ্চয় তর জন্য চিন্তা করছে। তাই প্লিজ এখন বাড়িতে যা আমি সবটা সামলে নিব।
আহান রায়ানের কথা কানে না ডুকিয়ে রায়ানকে ফের প্রশ্ন করে,,,,,
“” শরিফ আমিনের যে টিম ছিলো ওইটা কি এখন মি.শেখের সাথে হাত মিলিয়েছে?
রায়ান একটা তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। এতক্ষন কি বুঝালো এই ছেলেকে কিন্তু ওতো কিছু কানেই তুলে নি।
রায়ান বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,
“” তোকে বলেছি এখন বাড়িতে যেতে আর তুই এখন ও মি. শেখ নিয়ে পড়ে আছিস। আগে ইয়ানার সাথে সাক্ষাত করে আয়।নিজে তো বউয়ের শুখে দেবদাস হয়ে আছিস সাথে আমাকেও বানাচ্ছিস।
আহান রায়ানের কথা কপাল কুচকে বলে।,,,,,,
“” আমার বউয়ের সাথে দেখা করার ইচ্ছে দেখি আমার থেকে তোর বেশি। নিজের বউয়ের দিকে নজর দে যার সাথে পরের সপ্তাহ তোর বিয়ে। আর ওকে আমি তো প্রতিদিন ওই দেখি। কোথায় যায়, কি করে সব আমি যানি। ওর পুরো মুহূর্ত আমার জানা। “””
রায়ান অবাক হয়ে বলে।,,,,,
“” আমি দেখা করব কখন বললাম। বলেছি তুই গিয়ে দেখা করতে। বাড়িতে বউ থাকতে কোনো ভদ্র ছেলে বাড়ির বাহিরে থাকতে দেখেছিস। যাহহ গিয়ে বউয়ের সাথে একটু সময় কাটা। বাসর তো নিশ্চয় করে ফেলেছিস ওইটা আর বলব না। যদি ইচ্ছে হয় আবার করতে পারিস কিন্তু এইটা কয় নম্বর বাসর হবে আমি তো বলতে পারি না। এইটা তোর কয় নম্বর হবে ভাই?
আহান রায়ানের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলে,,,,,
“”” থাপ্পর চিনিস? থাপরাবো ধরে নির্লজ্জ ছেলে। আর একটা কথা বলবি আমার বন্ধুকের যতটা গুলি আছে সব তোর খোলা মস্তিষ্কে ডুকাব। “”
আহানের থ্রেড শুনে রায়ান ও চুপ হয়ে যায়। এই রাতের অন্ধকারে যদি সত্যি মেরে দেয় তাহলে লাশটা ও কেউ খুজে পাবে না। নিজের বউয়ের সাথে বাসর করতে পারে আর বললেই দোষ। আর এই ছেলের এত লজ্জা হলো কবে থেমে ভাব্বার বিষয়।
রয়ান কে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আহান রায়ানের পাশ দিয়ে শুট করে। ফলে রায়ান ভয়ে ধরফরিয়ে উঠে চিৎকার দিয়ে বলে,,,,,
“” ক..কে কার এত বড় সাহস আমাকে শুট করে?
এরপর চোখের সামনে আহানকে বন্ধুক নিয়ে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুঝে যায় কাজটা কে করেছে। রায়ান একটা শুকনো ঢুক গিলে মিন মিনিয়ে বলে,,,,,
“” এইভাবে একটা বাচ্চা ছেলেকে ভয় দেখাস না ভাই। বিয়ে করার আগেই কলিজায় স্ট্রোক করে মরে যাব। তখন আমার না হওয়া বউয়ের সাথে বাসরটা করবে কে?””
আহান —- কলিজায় স্ট্রোক মানে? আর তুই মরে গেলেও সমস্যা নেই। তোর বাসর নিয়ে চিন্তা করতে হবে না তোর বউয়ের সাথে বাসর করবে কে? তুই মরার সাথে সাথে আমার এক ফ্রেন্ড আছে ওর সাথে বিয়ে দিয়ে দিব। কাহিনী খতম।
রায়ান গাড়ির ভিতর বসতে বসতে বিরবির করে বলে,,,,
“” সালা জীবনে ও তোর বাসর হবে না অভিশাপ দিলাম।””
আহান — হয়ে গিয়েছে। তোর অভিশাপ কাজে লাগে নি। বকবক না করে গাড়ি চালাতে মনযোগ দে।
আহান নিজের হাতের ডুপ্লেক্স চাবি দিয়ে দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে। রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকা রুমনীকে দেখে থমকে যায়। ডিমলাইটের আলোয় রুমনীর অস্তিত্বকে আর ও অপরুপ লাগছে। কতদিন পর এই মেয়েটাকে সে সামনাসামনি দেখেছে। কিন্তু মেয়েটা এখন তীব্র অভিমানী হয়ে আছে সেটা আহানের অজানা নয়।
আহান ওয়াশরুমে গিয়ে হট শাওয়ার নিয়ে অনেক্ষন পর বেরিয়ে আসে। এরপর ইয়ানার কাছে গিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। কিন্ত পরক্ষনে খেয়াল করে ইয়ানার মুখটা মলিন দেখাচ্ছে।শরীরটা ও আগের থেকে হালকা শুকিয়ে গেছে।চুলগুলো এলোমেলো। আহান বিরক্তি নিয়ে বিরবির করে বলে,,,,
“” সবসময় ত্যারামি। নির্ঘাত ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে নি। নিজের যত্ন নেই নি তাই শরীরের এই হাল হয়েছে।
এরপর আহান ইয়ানার কপালে একটা চুমু খায়। আজ সে নিজের অনুভবের সাজজাদীকে দেখে রাত পার করবে। কত দিন ধরে এই মেয়েকে সামনে থেকে দেখতে পায় না। হঠাৎ ইয়ানার চুলে টান পড়ায় ইয়ানা আহহ করে উঠে। ইয়ানা চোখ মেলে আহান কে দেখে ভড়কে যায়। আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকায় দেখে তার হাত ইয়ানার চুলের উপর। আহানের হাতের রোলেক্স ঘড়িতে চুল পেচিয়ে গিয়েছে। তাই চুলে বাজেভাবে টান পড়ে।
আহান নিজের ঘড়ি থেকে চুল ছাড়িয়ে ইয়ানার পাশ থেকে উঠে পড়ে। ইয়ানা একটা ঘোরের মধ্যে আছে তাহলে উনি বাড়িতে এসেছেন। আমার পাশে বসে কি করছিলেন উনি?
ইয়ানা আহানের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় আহান ল্যাপটপ নিয়ে ভিবানে বসেছে। ওর দিকে একবার ফিরে ও তাকাচ্ছে না। ইয়ানার কান্নার শব্দ আহানের কানে আসতেই আহান ইয়ানার দিকে একপলক তাকায়। ইয়ানার দিকে তাকাতেই আহানের বুকটা ধুক করে উঠে। ইয়ানা কান্নামিশ্রিত নয়নে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে।কি আছে এই অশ্রুভেজা দৃষ্টিতে? এই ধ্বংসাত্বক চাহনি। এই দৃষ্টিতে রয়েছে একরাশ প্রশ্ন আর অভিমান। আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটার চোখে নিচে হালকা কালি পড়ে গিয়েছে। আহান ল্যাপটপ রেখে ইয়ানার কাছে এসে ইয়ানাকে ধরতে গেলেই ইয়ানা সরে যায়।
আহানের দিকে তাকিয়ে বলে।,,,,,,
” একদম মায়া দেখাতে আসবেন না হৃদয়হীন লোক। প্রয়োজন নেই আপনার ভালোবাসার যে নিজের স্ত্রীর খুজ নেই না। একবারের জন্য ও জিজ্ঞাসা করে না সে কেমন আছে? তাকে না জানিয়ে বিদেশ চলে যায়। কি সুন্দর অর্থহীন ভালোবাসা আপনার। প্রয়োজন নেই আপনার এই ভালোবাসার।””
আহান বুঝতে পারে ইয়ানা তার সাথে মাত্রাধিক অভিমান করেছে। যেটা ওর মন থেকে সরাতে খুব ধৈর্য ধরতে হবে রেগে গেলে চলবে না।
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে বলে,,,,,
“” তোমার কথা গুলো ভেবে বলছতো? আমার ভালোবাসার প্রয়োজন নেই তো তোমার। “”
ইয়ানা নিজের চোখের পানি মুছে বলে,,,,,
“”না প্রয়োজন নেই “””
আহান —- ঠিক আছে বউ যখন বলছে তার কাছে তার স্বামীর ভালোবাসার প্রয়োজন নেই তখন আর কি করার ।তাহলে আমি বাহিরে চলে যাচ্ছি। বউ এখন আর ভালোবাসে না তাই রুমে থাকা ঠিক হবে না “””
ইয়ানা —- হ্যা যাবেন ওইতো। ঘরের বউতো এখন পুরনো হয়ে গেছে। কয়েক মাসেই সব ইন্টারেস্ট উঠে গিয়েছে। সব কিছুর উর্ধে গিয়ে জোর করে বিয়ে করে এখন সব ভালো লাগা উঠে গিয়েছে। উঠার ওই কথা ঘরের এক জিনিস আর কতদিন ভালো লাগে। অফিসে সুন্দরী স্টাফ আছে, বাড়িতে সুন্দরী প্রেমিকা আছে যে তাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে ওহহ ছোট বেলা থেকে ভালোবাসে। যখন জন্ম নিয়েছিলো ঠিক তখন থেকে। আল্লাহ জন্মের পর ওই ওনাকে ভালোবাসার ক্ষমতা মনে হয় দিয়ে দিয়েছিলো। আর বিদেশে তো অনেক সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে আছে যারা আপনার জন্য খুব দেওয়ানা । সেখানে মি, অগ্নি চৌধুরির মতো একজন বড় মাপের মানুষ আমার মতো একটা সাধারন মেয়েকে ভালোবাসতে যাবে কেনো? তাকে ছাড়া বাহিরে থাকলে ও সমস্যা নেই। পুরুষ মানুষ সব ছলনাময়ী। ঘরের বউ থাকতে অন্য জনের দিকে নজর দিবে এইটা ওই স্বাভাবিক।
ইয়ানা কান্না করতে করতে হেচকি উঠে গিয়েছে। আহান তো ইয়ানার কথা এখন ও বোধগাম্য হচ্ছে না। কি বলল এতক্ষন এই মেয়ে। আমি তো যাস্ট মজা করে বলেছিলাম বাহিরে চলে যাচ্ছি কিন্তু এই মেয়ে দেশের যত কথা আছে সব আমার উপর ঢেলে দিলো।
ইয়ানা আহানের দিকে না তাকিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। ফ্লোরে পা রাখতেই মাথা ঘুরিয়ে পরে যেতে নেই কিন্তু তার আগেই আহান নিজের বক্ষে যাপ্টে ধরে।
অধৈর্য কন্ঠে বলে,,,,
“” ঠিক আছো তুমি? কিছু হয়নি তো তোমার। দেখেছো না খাওয়ার ফলে এখন কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছো।এখন মাথা ঘুরিয়ে পরে যেতে। “”
ইয়ানা আহানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে,,,,,,,,
“” ছাড়ুন আমায়। ছাড়ুন বলছি এখন আসছে নেকামো করতে। এতদিন কোথায় ছিলো সেই ভালোবাসা। দরকার নেই আমার আপনার আলগা পিরিত। ছাড়ুন বলছি।
ইয়ানার মুচরামুচরিতে আহান ধমক দিয়ে বলে,,,,,,
“” শান্তিতে দাড়াতে পারো না এইভাবে সাপের মতো মুচরামুচরি করছো কেনো? চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।
ইয়ানা — শুধু এই ধমকটাই দিতে পারেন আমাকে। এইটার জন্য ওইতো এতদিন পর আমার সাথে দেখা করতে আসলেন। ওহহ সরি আমার সাথে দেখা করতে কখন আসলেন। আপনি তো নিজের বাড়িতে এসেছেন কিন্তু ভুলবসত আমাকে পেয়ে গেলেন।
আহান ইয়ানাকে আর ও জোড়ে নিজের সাথে চেপে ধরে বলে ,,,,,
“” থাপ্পর চিনো? এত অভিমান আর কান্না কোথায় থেকে আসে। নাকি শুধু আমার সামনেই ছোট বাচ্চা হয়ে যাও। ”
ইয়ানা আর কিছু বলে না। নিরবে চোখের পানি ফেলতে থাকে।
আহান ইয়ানার নিরবতা দেখে মাথায় আলতো করে চুমু খায়। এরপর ইয়ানার উদ্দেশ্যে বলে,,,,,
“” আমি কারোর অভিমান ভাঙ্গাতে পারি না। তবে বুঝতে পারি আমার একান্ত রমনী আমার থেকে তীব্র অভিমান জন্মেছে। যদি তুমি আমার হিংস্রতা দেখে ভালোবাসতে যাও তাহলে কখনো আমাকে ভালোবাসার সময় পাবে না। আমাকে ভালোবাসতে হলে আমার গভীরে মিশতে হবে। আমার প্রতিটি চরিত্রকে তোমার আয়ত্তে আনতে হবে। আমাকে বুঝার মত তো আর কেউ নেই তুমি ছাড়া। যে আমাকে নিজের অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভালোবাসবে। আমি তো শুধু তোমাকে আমার অভাব বুঝাতে চেয়েছিলাম। কারন আমার অভাব যদি তুমি বুঝতে না পার তাহলে আমাদের বন্ধন কখনো দৃঢ় হবে না। আমাকে তোমায় বুঝতে হবে ইয়ানা খুব ভিতর থেকে বুঝতে হবে। “””
ইয়ানা নিজের নাক টেনে বলে,,,,,,,
“” আমি আপনাকে বুঝতে পেরেছি বলেই মেনে নিয়েছিলাম। পালিয়ে যাওয়ার কোনো প্রয়াস চালাই নি। ছেড়ে চলে যেতে চাই নি আপনাকে। কিন্তু আপনি তো আমাকে বার বার কষ্ট দেন। আয়না ভাঙ্গার শব্দ সবাই শুনতে ও পায়,, দেখতে পায় ভাঙ্গা কাচের টুকরোগুলো। কিন্তু মন ভাঙ্গার শব্দ শুধু সৃষ্টকর্তা ছাড়া কেউ দেখতে পাই না।এতদিন কত নীরবে কান্না করেছি আপনার ধারনা আছে। কিন্ত চিৎকার করে কাঁদতে পারি নি লোকে শুনবে বলে।
ইয়ানার কান্না আহানের ভিতর থেকে নাড়িয়ে তুলে। মেয়েটাকে কি ও বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।
আহান ইয়ানাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,,,,,,
“” কান্না থামাও ইয়ানা। বাচ্চাদের মতো কখন থেকে কান্না করছো। আরে বাবা আমি তো চলে যাই নি কোথা ও। কিন্তু তুমি যে আমার জন্য এত ডেম্পারেট এইটা তো আগে জানা ছিলো না। যাক এক অবস্থায় তো জেনেছি। বউ আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না। ইয়ানা একটা কথা মনে রাখবে তুমি আমাকে ভালোবাসো তার সাথে আমার সব চরিত্রকে ও ভালোবাসতে হবে। ভালোবাসা একটা যুদ্ধের মতো যা শুরু করা সহজ কিন্তু শেষ করা খুব কঠিন। “”
হঠাৎ ইয়ানা আহান থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিজের হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে ওয়াশরুমে যায়।
ইয়ানার এমন ব্যবহারে আহান চিন্তিত হয়ে পড়ে। আহান ওয়াশরুমের বাহির থেকে বলে।,,,,,
“” ইয়ানা তুমি ঠিক আছো? দরজা খুলো বলছি। বিয়াদপ মেয়ে দরজা লাগিয়েছো কেনো?
একটু পর ইয়ানা ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হয়ে আসে। আহান ইয়ানাকে ঝাপটে ধরে মুখে অনেক গুলো চুমু খেয়ে বলে,,,,
“” ঠিক আছো তুমি? কিছু হয় নিতো তোমার? দাড়াও আমি এক্ষনি মিসেস অঞ্জিকে ফোন করছি।””
ইয়ানা আহানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” দরকার নেই তেমন কিছু হয় নি হালকা বমি হয়েছে। হয়তো দুর্বলতা থেকে এমন হয়েছে। আমি একটু রেস্ট নিব সব ঠিক হয়ে যাবে। এমন অনেক সময় হয়েছে আমার। তাই এত ঘাবরানোর কিছু নেই।””
আহান ইয়ানাকে সযত্নে বিছানায় শুইয়ে দেয়। এরপর সে নিজে ও ইয়ানার পাশে শুইয়ে এক দৃষ্টিতে ইয়ানার ক্লান্ত মুখশ্রির দিকে তাকিয়ে থাকে।
ফজরের আজান পরতেই ইয়ানা ঘুম থেকে উঠে পরে। নিজের পাশে তাকাতেই দেখতে পায় আহান অর্ধা অর্ধি ভাবে শুয়ে আছে। ওনি সারারাত এইভাবে শুয়ে ছিলো নাকি। এরপর ইয়ানা আহানকে ডাক দিয়ে বলে।,,,,
“” আহান ঠিক ভাবে শুয়ে পড়ুন নয়তো আমার সাথে ফজরের সালাত আদায় করুন। কিন্তু কার কথা কে শুনে আহান ঘভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। “”
ইয়ানা একটা শ্বাস ছেড়ে নামাজ পরে নিচে চলে যায়। দেখতে দেখতে সকালের সূর্য ও উদিত হয়।
ইয়ানা সকালের নাস্তা টেবিলে দিয়ে উপরের দিকে তাকায়। আহান যদি এখন আসতো তাহলে জোর করে হলেও সবার সাথে বসিয়ে নাস্তা করাতো। ইয়ানার ভাবনার মাঝে আহান সিড়ি বেয়ে নিচে নামে। পড়নে জগিংড্রেস। পায়ে রেড কালারের সু। প্রত্যেকবারের মতো চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা। মনে হচ্ছে জগিং করতে যাবে। জগিং করতে যাবে ভালো কথা এইভাবে সেজে যাওয়ার কি প্রয়োজন। নিজের জামাইর দিকে তাকিয়ে নিজেই একশ বার ক্রাশ খায়।
আহান দরজার বাহিরে যেতে নিলে ইয়ানা দুই হাত প্রসারিত করে বলে।,,,,,
“” দেখুন মি. অগ্নি চৌধুরি কোনো এক বিজ্ঞানি বলেছেন,, সকাল সকাল বউয়ের হাতের রান্না না খেলে তার অমঙ্গল হয়। কিন্তু আমি তো এত বড় একটা সর্বনাশ হতে দিতে পারি না। আমি সব সময় মানুষের ভালো চেয়ে এসেছি। এখন আপনার খারাপ কি করে চাই বলুন। আমি বেঁচে থাকতে এত বড় অনর্থ হতে দিতে পারি না “”
আহান ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” মাথায় কি ভুত চেপেছে। সকাল সকাল পাগলের মতো এইসব কি বলছো? কিসব বলছো নিজে বুঝতে পারছো তো? সামনে থেকে সর আর আমাকে যেতে দাও। “”
ইয়ানা আরও ভালোভাবে দরজা আটকে দিয়ে বলে।,,,,,
“” না আপনি নাস্তা না করে যেতে পারবেন না। আগে আমার হাতের রান্না করা খাবার খাবেন তারপর বাহিরে পা রাখতে পারবেন। “”
আহিয়া দাদুমনির দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে বলে।,,,
“” দাদুমনি এখন কি আমাদের বাড়িতে ভুমিকম্প শুরু হবে। আমি কি টেবিলের নিচে লোকাব। স্কুলে পড়েছিলাম ভুমিকম্প হলে শক্ত কোনো জিনিসের নিচে লোকাতে হয়। কিন্তু আমাদের টেবিল তো কাচের তাহলে কোথায় আশ্রয় নিব?”
দাদুমনি — ভয় পাস না ইয়ানা সাহস করে না গেলে আমরা জীবনে ও পারতাম না। দেখি এখন কি হয়। ইয়ানাকে কিছু না করলেই হবে।
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে।,,,,,
“” সবকিছুর মাঝে এত অবাধ্যতা কেনো তোমার। শুনতে পাও নি আমি এখন জগিং এ যাব। রাস্তা এইভাবে আটকে রেখেছো কেনো?
ইয়ানা — প্লিজ প্লিজ প্লিজ খেয়ে যান। যা খুশি বলোন তবুও খেয়ে যান।
আহান ইয়ানার দিকে দাতে দাত চেপে তাকায়। এরপর ইয়ানাকে এড়িয়ে দরজার বাহিরে চলে যায়। ইয়ানা ও মন খারাপ করে সামনে এগুতে নেই তখন মাথা ঘুরিয়ে নিচে পড়ে যায়। আহিয়া বউ মনি বলে চিৎকার করে ইয়ানার কাছে যায়। এরপর আহানকে ডাক দিয়ে বলে।,,,,,
“” দাদাভাই বউমনি সেন্সলেস হয়ে পড়েছে।””
আহান ভাবলেশহীন ভাবে বলে।,,,,,
“” নাটক করতে বন্ধ করতে বল। আমাকে আটকানোর জন্য রোগ নিয়ে নাটক করছে। বলে দে আমি কাছে আসলে ধরে থাপরাব।
আহিয়া কান্নামিশ্রিত গলায় বলে ,,,,,
“” বউমনি নাটক করছে না দাদাভাই। বউমনি সত্তিই সেন্সলেস হয়ে পড়েছে। “”
আহিয়ার কান্নামশ্রিত কথা শুনে আহান হাঁটা থেকে থমকে দাঁড়ায়। তাহলে কি সত্যি সত্যি সেন্সলেস হয়ে পড়েছে। আহান আর একমুহূর্ত ও দেরি না করে দৌড়ে ইয়ানার কাছে আসে। ইয়ানাকে পরে থাকতে দেখে আহানের মনে হচ্ছে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আহান ইয়ানাকে পাজা কোলে নিয়ে মিসেস অঞ্জলিকে ফোন দেয়। এরপর ইয়ানাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ডাক দেয়,,,,,
অনুভবে তুমি পর্ব ৩৮
“” ইয়ানা চোখ খুলো? এরপর দাদুমনির দিকে
তাকিয়ে আহত শুরে বলে,,,,,
“” আমি ওকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি। “”
আহান ইয়ানাকে উঠাতে যাবে তখন দাদুমনি আশ্বাস দিয়ে বলে,,,,,
“” কিছু হয় নি তুই শান্ত হ। তেমন কিছু হয় নি সেন্সলেস হয়ে পড়েছে। দেখি আমার সন্দেহ সঠিক হয় কি না।””
একটু পর মিসেস অঞ্জলি তাদের রুমে প্রবেশ করে। ইয়ানাকে ভালোভাবে চেক করে সবার দিকে তাকিয়ে,,,,,,,