প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৩১
Zannat Xhowdury
পাশে ‘ধপ’ করে কিছু পড়ার শব্দে, ধ্যান ভাঙ্গে রোজার। হালকা ঘুরতেই দেখে নির্ণয় তার পাশেই এসে বসছে।
তবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই নির্ণয় বসতে বসতেই ‘খপ’ করে রোজার হাত থেকে টিভির রিমোট কেড়ে নেয় । রোজার চেহারা মুহূর্তে হতভম্ব হয়ে যায় ,চেঁচিয়ে উঠে সে
আহহহহহ, নির্ণয় ভাই, “প্লিজ চ্যানেল চেঞ্জ করোনা!”
তুই এই বাজে ইঁদুর বিড়ালের ধরাধরি কিভাবে এতো আগ্রহ নিয়ে দেখিস রোজ।
তা আপনার না জানলেও চলবে । রিমোট দিন বলছি ?
No
নির্ণয় ভাই ভালো হচ্ছে না বলে দিলাম !
ওহ রিয়েলি , পারলে নিয়ে দেখা আমি ছেড়ে দিবো ।
ও দাদু !
নির্ণয় আগমনেই আবারো ম্যাগাজিন মুখ লুকিয়েছিলো রায়হান চৌধুরী , তবে এতখন দুজনের ঝগড়ায় মিটমিটিয়ে হাসছিলেন ম্যাগাজিনের আড়ালে ।এবার রোজার ডাক কানে আসতেই ম্যাগাজিন থেকে মুখ সড়িয়ে নেন তিনি হাসি হাসি ভাব টাও অর নেই
আহ দাদুভাই , ছোট মানুষ রিমোট টা দিয়ে দেও।
দাদুভাই পার্সোনাল মেটার তুমি আপাতত গিয়ে দাদিন কে সামালাও আমাকে আমার জিনিস বুঝতে দাও !
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় রোজা ,পুরোথ হয়ে গিয়েছে সে । মুখটা হঠাৎ সাদা পড়ে গেছে যেন। একচুলও নড়ে না সে। ঘরের মধ্যে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা নেমে আসে। রিমোটটা নির্ণয়ের হাতে, চোখে ঝাঁঝালো বিজয়।
রায়হান গলা খাঁকারি দিয়ে কিছু একটা বলতে যায়, কিন্তু রোজার চোখের দিকে তাকিয়ে আর শব্দ বের হয় না। তিনি লজ্জায় দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন
রোজার চোখে এখনো বিস্ময় একটা লোক কতটা নির্লজ্জ হলে ঠিক এভাবেই দাদুর সামনে বলে
ও নির্ণয় ভাই , নির্ণয় ভাই !
কি সমস্যা ?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দেও না প্লীজ।
আমিও তো দিতেই চাই ,তবে দিতে গেলেই তো কিছু ইউনিক সাউন্ড কানে আসে , যা আমাকে আরো উন্মাদ করে তোলে
Believe me জান
ওরা আমাকে ডাকছে ,
পাগলের মত চিৎকার করছে।
বার বার বলছে
Zara zara, touch me touch me !
সন্দিহান চোখে তাকায় রোজা চোখে অবিশ্বাসের ছাপ। কৌতুহলী দৃষ্টি ছুড়ে নির্ণয়ের দিকে
কারা ডাকছে তোমায় , ওয়েট ওয়েট পরি টরি আবার ধরেনি তো তোমাকে ,হায় আল্লাহ ।কে আছো মুন্সি ডাকো ঝাড়ু আনো। নির্ণয় ভাইরে পরি ধরছে আমার সতিন এসেছে ।
এই মেয়ে চুপ !
রাগে ফুটছে নির্ণয়, কণ্ঠে ঝড় তোলা ধমক।চোখদুটো জ্বলে উঠেছে বিদ্যুতের মত,এক ধমকে চুপ কড়িয়ে দেয় রোজার মুখ
রোজার চোখে বিস্ময় আর একফোঁটা ভয়,কিন্তু ঠোঁটের কোণে এক চিলতে ঠাট্টা, যেন চুপ করেও সে জিতে গেলো।
এতোক্ষণের পুরো ঘটনাটা যেন আগুন ধরিয়ে ছাড়াছে কারো মনে। ইতোমধ্যে ফুলতে শুরু করছে কপালের রগ। দাঁতে দাত খিচে ধরে রেহান। তবে কন্ঠ নম্রতা এনে শান্ত ভঙ্গিতে তে বলে।
কি দেওয়া নেওয়ার কথা চলছে এখানে ?
রেহানের কথায় যেন একরাশ বিরক্তি এসে ভর করে দু’জনের মাঝে । রোজা চোখে চোখ রাখে রেহানের বেক্কল এক হাসি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয় টিভির দিকে।
কটমটিয়ে উঠে নির্ণয় একরাশ ক্ষোভ নিতে দাঁত খিচে বলে
কাবাবে হাড্ডি আমার একদম পছন্দ না। আরো যদি হয় তোর মতো শক্ত হাড্ডি তা তো আরো পছন্দ না। তাই আমি ছুরে ফেলার আগেই নিজে কেটে পড় নয়তো কুত্তার পেটে গিয়ে খিচুড়ি হবি।
বেশ অপমানিত বোধ করে রেহান , রাগিব চোখে তাকায় নির্ণয়ের চোখ তবে নির্ণয়ে সেদিকে খেয়াল নেই সে তো টিভিতে রোজার মতো টম ,জেরির ধরাধরি দেখতে ব্যস্ত । পাশে রোজা ,তার সামনে বিন্দু মাত্র ঝামেলা চাইছে না সে মনে মনে কিছু একটা ভেবেই জায়গা ত্যাগ করে রেহান।
রেহান যেতে দুষ্টুমিতে মেতে ওঠে নির্ণয় । ঠোঁটে লুকানো একটা মিষ্টি হাসি, যেন কোনও মজার ষড়যন্ত্রের আগাম ইঙ্গিত।
একটু একটু করে রোজা দিকে এগোতে থাকে সে ,মুখে খেলছে শয়তানি হাসি,চোখে লুকানো উন্মাদনা মনে হচ্ছে এই মেয়ের কাছে এসে নিজের ইচ্ছাগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সে।
শরীরের প্রতিটি স্নায়ু জোরে সচল,কিন্তু মনের গভীরে এক অজানা ভয় ঘেঁষে বেড়াচ্ছে।তবুও সে থেমে নেই,এক ধীরে ধীরে, অদ্ভুত টান নিয়ে সে কাছে আসছে।
রোজার চোখ পড়ল নির্ণয়ের সেই হাসিতে,মনের একটা অংশ সচেতন ঘরের বাতাস হঠাৎ ভারী হয়ে গেলো,এক অদ্ভুত সুর ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে যেমন একটা অদৃশ্য যুদ্ধে দুই প্রাণের টানাপোড়েন।
জান
হঠাৎ নির্ণয়ের গলায় নেশালো সেই ডাক,যা অন্তর আত্মার গভীরে দোঁহা দিয়ে যায়।রোজার বুক যেন এক মুহূর্তের জন্য থেমে যায়,
মন কেঁপে ওঠে অবচেতনে একটা অদ্ভুত আকর্ষণ, যেমন নরম এক মায়াবী ছোঁয়া,যা ছুঁয়ে যায় প্রতিটি স্পন্দন।
Can I …
কথার মাঝে হঠাৎ থেমে যায় নির্ণয়, তার কপালে জমেছে ঘামের ছোট ছোট বিন্দু যেন অদৃশ্য কোনো বৃষ্টি স্পর্শ করছে।
চোখে এক অদ্ভুত আশঙ্কা আর যুদ্ধের ছাপ,যা বলে দিচ্ছে, ভেতরটা কতটা ঠিক কতটা তুমূল অস্থির ।
মন যেন ঝড়ো সমুদ্রের মতো বহু তরঙ্গ আছড়ে পড়ছে,তবু সে চেষ্টা করছে নিজেদের মধ্যে লড়াই চালিয়ে যেতে।
শ্বাস কাঁপে, ঠোঁটের কোণে হালকা কাঁপুনি,পাশের বাতাসও যেন থেমে গেছে, শুধু তার এই অস্থিরতা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে,
এক ফাঁকে যেন অন্তরাল থেকে কেউ চিৎকার করছে—
কি কি হ হয়েছে নির্ণয় ভাই ?
আ আ আপনি এ এমন করছেন কেন ?
রোজ মেরি বাচ্চা , আমার অক্সিজেন চাই।
নির্ণয় ধীরে ধীরে একদম কাছে চলে আসে রোজার। তার নিঃশ্বাস আচরে পড়ছে রোজার মুখে ।দুই হাতে আলতো করে চেপে ধরে রোজার দুগাল। নির্ণয়ের চোখ গভীর
রোজার বুকের স্পন্দন দ্রুত চলছে , কেঁপে কেঁপে উঠতে সারা শরীর
নির্ণয় ধীরে ধীরে মুখ ঘেঁষে নিলো রোজার গালে,
তার নিশ্বাস ছুঁয়ে গেলো,
রোজার হৃদয় যেন একটি নরম ঢেউয়ের মতো লয়ে উঠল,
মুখ থেকে নিঃশ্বাস ছুটে গেলো—
জান প্লিজ ,
ক কি ?
একটু অক্সিজেন দে , দেখ মরে যাচ্ছি।
নির্ণয় ভা…..
হুসসস!
“কোনো কথা নয়।
আমার তোকে এখন খুব প্রয়োজন রোজ… প্লিজ একটু…
নির্ণয়ের কণ্ঠ একেবারে নরম ,গলার স্বর যেন তার ভেতরের তৃষ্ণা প্রকাশ করছে ,নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে তার ।
“ধুর… সরুন তো!
আপনার রোমান্সের খেতা পুরি।”
নির্ণয় থমকে যায়।চোখে অবিশ্বাসএ যেন কেউ তার হৃদয় থেকে জল ঢেলে দিয়েছে।
প্রনয়ের প্রথম পুরুষ পর্ব ৩০
“সবসময় আপনার মাথায় কী এইসব চলে?
রোজার মুখ ঝামটা খেয়ে কিছুটা পিছিয়ে আসে নির্ণয় সোফায় মাথা এলিয়ে ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে সে। দুহাতে মাথা চেপে ধরে বসে থাকে কিছুক্ষণ