তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬২

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬২
তানিশা সুলতানা

সকালটা কারো জন্য সুন্দর হয় তো কারো জন্য অসুন্দর। নতুন সূর্য কারো জীবন রাঙিয়ে দেয় আবার কারো জীবন ধ্বংস করে। দিনের চকচকে আলো কারো কাছে মিষ্টি লাগে তো কারো কাছে তেঁতো।
আদ্রিতার সকালটা শুরু হয় এক রাশ ভালো লাগা এবং পূর্ণতা নিয়ে। চোখ খুলতেই হাজার খানা বেলুন এবং গোলাপের সুগন্ধে নাকে লাগে। তার সাথে মিশেছে সমুখ পারফিউম এর ঘ্রাণ। একদম নাকে লাগছে। মনে হচ্ছে আবরার তাসনিন নামক মানুষটা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছে তাকে।
অবশ্য জড়িয়েই রেখেছে কেনোনা আবরারের শার্ট খানা আদ্রিতার গায়ে।

“প্রিয় পুরুষ
আমার সকালটা রাঙিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
বিরবির করে আওড়ায় আদ্রিতা। পরপরই আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। গোটা কক্ষে নজর বুলায়। নাহহ কোথাও জনাব নেই। অবশ্য থাকার কথা না। আবরার তাসনিন সকাল বেলা বিছানায় থাকবে? আদ্রিতা ঘুম থেকে উঠে তার মুখ খানা দেখবে? ওহহ মাই গড এটা তো হাতে চাঁদ পাওয়ার থেকেও বড় ব্যাপার।
” আদ্রিতা
আদ্রিতা
জলদি আয় মা। কতো রান্না করতে হবে। আবরার এখুনি বাসায় ফিরবে।
আদ্রিতা বেগম এর কন্ঠস্বর ভেসে আসছে। বড়ই ব্যস্ত গলা তার। আদ্রিতা আর স্বপ্নে বিভোর থাকে না। চটজলদি বিছানা ছেড়ে নেমে পড়ে। চপ্পল জোড়া পায়ে চাপিয়ে রুম গোছানোর কাজে লেগে পড়ে। ফুল গুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে কক্ষের এক কোণায় রেখে দেয়। ক্যান্ডেল জ্বালানোর জায়গা গুলোও মুছে ফেলে দ্রুত। তারপর কালো রংয়ের একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকে।
আজকে আবরার তাসনিন নামক বেপরোয়া পুরুষের জন্য শাড়ি পড়া যাক। দেখি জনাব এর কেমন রিয়াকশন হয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এই তো ভোর বেলা। ফজরের আজানের পরপরই আবরার আতিয়া বেগম এর কক্ষে ঢোকে। আতিয়া তখন নামাজ পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। এমন মুহুর্তে আবরারকে দেখে ভীষণ অবাক হন তিনি। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে আবরার কখনোই তার রুমে আসে নি৷ তার কাছে তো নয়ই।
আবরার আতিয়া বেগম এর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। শুকনো ঢোক গিলে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। তারপর মাথা নিচু করে
“আম্মু
আতিয়া বেগম এর কলিজা কেঁপে ওঠে। আম্মু ডাকটা একদম কলিজায় গিয়ে লেগেছে। শেষ কবে আম্মু ডেকেছিলো আবরার? তার বাবার মৃত্যুর দিকে। মৃত বাবার মুখ পানে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠেছিলো “আম্মু তুমি আমার আব্বুকে মেরে ফেলেছো”

ব্যাসস তারপর আর কখনো সৌভাগ্য হয় নি এই ডাক খানা শোনার।
মাকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে আবরার নিজের হাত ঘড়ির পানে তাকায়৷ সময় দেখে পূণরায় বলে
“আম্মু এ’ম স্যরি। তোমায় অনেক কষ্ট দিয়েছি। মাফ করে দিও আমায় প্লিজজ
আতিয়া বেগম বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে কেঁদে ওঠে। দুই হাত বাড়িয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আবরারকে। আবরারের বুকে মাথা রেখে বলে
” তুই আমাকে ছেড়ে যাস না আবরার। আমি তোর সাথে থাকতে চাই আব্বা। তোকে দেখেই মরতে চাই। ছেড়ে যাসস না বাপ
আবরার মায়ের মাথায় হাত বুলায়৷ কিন্তু কিছু বলতে পারে না। ছেলের থেকে জবাব না পেয়ে পূণরায় আতিয়া বেগম বলে

“আমায় দূরে সরিয়ে দিস না আব্বা৷ আমি বাঁচবো না।
এবার আবরার থেমে থেমে বলে
” আ…আমি আছি।
ছেলের বুকে মাথা রেখে কতক্ষণ কেঁদেছে আতিয়া বেগম জানা নেই। তবে যখনই আবরার আম্মু বলে ডেকে ওঠে তখন তার হুশ ফেরে। আবরারকে ছেড়ে আঁচলে চোখ মুখে নেয়
আবরার একটু হাসার চেষ্টা করে বলে
“আম্মু যাচ্ছি আমি।
” আচ্ছা যা। জলদি আসবি কিন্তু। আমি তোর পছন্দের সব খাবার রান্না করবো আজকে।
আবরার মাথা নারিয়ে বেরিয়ে যেতে নেয় কক্ষ থেকে। কয়েক পা এগিয়ে আবারও পেছন ফিরে তাকায়।
“আম্মু আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু প্রকাশ করতে পারি না।
আতিয়া বেগম হাসে।
” আমি জানি সোনা।
“আসছি হ্যাঁ
আসছি আমি।
এবার আর পেছন ফিরে তাকায় না আবরার। বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যায়। যেতে যেতে আতিয়া বেগম এর চোখের আড়াল হয়ে যায়৷ আর দেখা যায়।

দুজন নারী তাদের ভালোবাসার মানুষের জন্য রান্না করছে। মানুষটা একজনই।
ইলিশ মাছের লেজ ভর্তা, পাতলা ডাল, করলা ভাজা, গরুর মাংস, গরুর মগজ ভুনা, কলিজা ভুনা, লুচি, পায়েস, পোলাও, সেমাই, আর রসমালাই। সবই আবরারের পছন্দের।
আতিয়া এবং আদ্রিতার রান্না শেষ হতে হতে এগারোটা বেজে যায়। কিন্তু এখনো আবরারের আসার নাম নেই।
পায়েস এর বাটি টেবিলে রেখে আতিয়া বেগম বলে ওঠে
” আদ্রিতা একটা কল করে দেখ তো। এখনো আসছে না কেনো?
জলদি আসবে বলেছিলো।

আদ্রিতা মাথা নারিয়ে নিজের ফোন খানা হাতে নেয়৷ জল্লাদ হাতি লেখা নাম্বার খানায় কল করে। কিন্তু ওপাশ থেকে ভেসে আসে এক নারীর কন্ঠস্বর। সে ভীষণ সুন্দর করে বলছে “আপনার কাঙ্ক্ষিত নাম্বার টিকে এই মুহুর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরে আবার চেষ্টা করুন”
আদ্রিতার কপালে ভাজ পড়ে। যদিও আজকে প্রথম সে আবরারের নাম্বারে কল করলো।
কিন্তু বন্ধ কেনো বলছে? এবার সিয়ামের নাম্বারের কল করে। ওই একই অবস্থা। এটাও বন্ধ।
আদ্রিতা ভয় পায়। বুকের ভেতরটা টিপটিপ করতে থাকে। মন কু ডাকছে। আবরার চলে যায় নি তো?
তাকে ছেড়ে মাকে ছেড়ে চলে গেলো সে?
গলা শুকিয়ে আসে আদ্রিতার। হাত পা কাঁপতে শুরু করে। নিজের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারছে না। মাথায় চক্কর দিয়ে ওঠে। এখুনি বোধহয় পড়ে যাবে। হলোও তাই। আঁখি পল্লব বন্ধ করে ঠাসস করে পড়ে যায়। সামনে টি-টেবিল ছিলো। সেটার ওপরে মাথা পড়ে।
অবচেতন আদ্রিতার ঠোঁট নারিয়ে বিরবির করে বলে
“আবরার আমাকে রেখে যাইয়েন না প্লিজজ। আমি মরে যাবো।

আরিফ এর মুখোমুখি বসে আছে আবরার। দুজনের মাঝখানে একটা টেবিল। সেই টেবিলের ওপরে রয়েছে কিছু পেপার। টনি এবং ইমাকেও এখানে আসতে বলা হয়েছে। আসছেও তারা।
মূলত তাদের অপেক্ষায় আবরার বসে আছে। আসলেই কথা শুরু করবে।
সিয়াম আমান আহাদ ইভান আবরারের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।
” তুমি ঠিক করছো না আবরার। ভুল করছো।
আবরার এক খানা সিগারেট ঠোঁটের ফাঁকে গুঁজে নিয়ে লাইট এর সাহায্যে আগুন জ্বালাতে জ্বালাতে বলে
“ইয়েসসস
এন্ড এবং ভুল আমি বার বার করতে চাই।
তখুনি টনি এবং ইমা চলে আসে। টনি এগিয়ে এসে আবরারকে কিছু বলতে যায়। আবরার ঠোঁটের ফাঁকে থাকা জলন্ত সিগারেট ঠেসে ধরে টনির কপালে।
চিৎকার করে ওঠে সে। ইমা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়। আরিফকে কাচুমাচু হয়ে বসে।
আবরার দাঁতে দাঁত চেপে বলে

” রাস্কেল আবরার তাসনিন যখন কথা বলবে চুপচাপ শুনতে হবে। সাইলেন্স থাকতে হবে। ক্লিয়ার?
টনি অনবরত মাথা নেরে সম্মতি জানায়৷
আবরার ছেড়ে দেয়৷ গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করতে থাকে টনি। পড়ে যায় ফ্লোরে। তবে আওয়াজ করে না।
আবরার নিজের জায়গায় বসে। পেপারের দিকে ইশারা করে বলে
“আদ্রিতার সব প্রপার্টি এতিম খানায় দান করে দেওয়া হয়েছে।
জাস্ট আপনার একটা সাইন লাগবে।
আরিফ কপাল কুঁচকে বলে

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬১

” আমি সাই
বাকিটা বলার আগেই আবরার বলে
“শালা তুই সাইন না দিলে আঙুল কেটে কুকুরকে খাওয়াবো আমি।
এবার টনির পানে তাকিয়ে বলে
” সিয়াম এই জানোয়ার আমার কোম্পানি জ্বালিয়েছে না?
এর টু*ন*টু*নি কেটে দে।
গোটাটা কাটবি না।
বেঁচে থাকে যেনো।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬৩