প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৯
অলকানন্দা ঐন্দ্রি
একটা আদুরে প্রভাত। নরম শীতল বাতাসের ছোঁয়া। বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টির অল্প অল্প ফোঁটা পড়ছে। রাহা তখনএ ঘুমে। তবে রোহানের ঘুম ভেঙ্গেছে মিনিট কয়েক হয়েছে। রাহাকে ওভাবে চোখ বুঝে থেকে গুঁটিশুঁটি হয়ে বাচ্চার মতো ঘুমাতে দেখে হাসে রোহান। এক হাতের উপর মাথা রেখে রাহার দিকে ফিরে শুঁয়ে অন্য হাত দিয়ে রাহার চোখমুখে হাত বুলাতে বুলাতে ফিসফিস স্বরে বলে,
“ নবনী? আমি জানি না আমি সুহাকে কতোটা ভালোবেসেছিলাম। সুহার প্রতি আমার কতোটা অনুভূতি ছিল তাও জানা নেই। তবে এটা টের পাচ্ছি আমি তোমার মাঝে ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছি, অস্তিত্ব হারাচ্ছি। আমি তোমাক৷ ছাড়া আমার জীবন কাঁটাতে চাইছি না এইটুকুই তো এনাফ তোমার প্রতি আমার কি তৈরি হয়েছে তা বুঝার জন্য। তবে তুমি কেন বুঝতে পারছো না মেয়ে? ”
কথাগুলে বিড়বিড় করে বলতে বলতেই বৃদ্ধাআঙ্গুলি বুলিয়ে নিল রাহার চোখের পাতায়, ঠোঁটে, নাকে, গালে। রাহা তখন নড়চড় করে উঠে। চোখ কুঁচকে নেয় কেমন করে।রোহান বুঝে উঠে যে রাহা এক্ষুনিই চোখ খুলবে। তৎক্ষনাৎ বুঝে উঠে সে হাত সরাল। একইভাবে থেকেই চোখ বুঝে নিল ঘুমানোর ভান করে। রাহা তার পরমুহুর্তে চোখ খুলল। পাশ ফিরে রোহানকে এভাবে ঘুমোতে দেখে সে ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। মুহুর্তেই মনে পড়ে কাল রাতে উত্তপ্ত চুমুর স্মৃতি! রাহা মুহুর্তেই লজ্জায় কেমন লাল হয়ে এল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আবার পরমুহুর্তেই যখন রোহানের শার্টে সে লালচে লিপস্টিকের দাগের কথা মনে পড়ল তখন মুখ চুপসে এল তার। উঠে কতক্ষন থম মেরে বসে থাকল সে। তারপর হুট করেই উঠে দাঁড়িয়ে হাতে নিল রোহানের সেই শার্টটা। রাহা কতক্ষন যে সাদা শার্টটা হাতে নিয়ে সেই লিপস্টিকের দাগটা দেখে গেল। ঠিক ঠোঁটের চাপ নয় তবে লিপস্টিকের দাগ যে তা স্পষ্ট! রাহার দুঃখ হয় কেন জানি না। কেন অন্য একটা মেয়েকে রোহান প্রেমিকা বানাল? কেন? তাকে কি দ্বিতীবার ভালেবাসার স্বীকৃতি হিসেবে সে গ্রহণ করতে পারত না? রাহা এসব ভেবে সরু চাহনিতে চেয়ে চেয়ে যখন শার্টটা দেখতে লাগল তখন সরু চোখ মেলে চাইল রোহানও৷ রাহাকে এত মনোযোগ দিয়ে তা দেখতে দেখে বলল,
“ ওটা আমার কোন লুকানো প্রেমিকার নয়, এক বিজন্যাস পার্টনারের মেয়ের কার্যকলাপ এটা। উল্টোপাল্টা ভাববে না বলে দিলাম। ”
বাহ! বিজন্যাস পার্টনারের মেয়ে হলে কি যা তা করবে? রাহাকে কি বোকা পেয়েছে সে? রাহা ত্যাড়া স্বরে বলল,
“ বিজন্যাস পার্টনারের মেয়ে বিজন্যাস না বুঝে কি প্রেম বুঝতে এসেছিল আপনার কাছে? বোকা পেয়েছেন আমায়? ”
রোহান এবার কেমন হাসল রাহার রাগ দেখে। শুধাল,
“ তোমাকে সত্যিই সত্যিই বউ বউ লাগছে নবনী। টিপিক্যাল বউদের মতো সন্দেহ করছো ! ”
“ আমি মোটেই আপনার বউ নয় জাস্ট একটা বন্ধনে আবদ্ধ আমরা। তাও লাইফে কোন একবার বিয়েটা তো করতেই হবে এই ভেবে আপনাকে বিয়ে করেছিলাম। টক্সিক লাগা শুরু করলে যে কোন সময় এই বন্ধন ভেঙ্গে দিয়ে চলেও যেতে পারি৷ ”
রোহান ভ্রু বাঁকায়। শুধায়,
“ তাই নাকি? গিয়ে দেখাও তবে। ”
রাহা স্পষ্ট স্বরে বলল,
“ যাওয়া কি এখনই প্রয়োজন ? তাহলে সত্যিই ভাবতে হচ্ছে।”
রোহান উঠে বসে। রাহাকে আরোটু জ্বালাতে শুধাল,
“ হ্যাঁ, এখনই প্রয়োজন নবনী! তৈরি হও। ”
রাহার চোখে বিস্ময়। বাহ! এত তাড়া! বলল,
“ কেন? ডিভোর্স দেওয়াতে নিয়ে যাবেন? ”
রোহান মনে মনে হাসে। বাইরে গম্ভীর স্বরে বলে,
“ হ্যাঁ”
রাহার চোখেমুখে বিস্ময় এবার কেঁটে আসল। গম্ভীর গলায় বলল,
“ ওকে! ”
এটুকু বলেই রাহা জামা নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে গেল। খুব দ্রুত তৈরিও হলো। অতঃপর ফিরে আসতেই রোহান তাকিয়ে দেখে বলে,
“ বাহ! অনেক উৎসাহ তোমার! একদম জটফট তৈরি হয়ে গেছো। ”
রাহার তখন মনে প্রাণে অদৃশ্য জেদ চিড়বিড় করছিল। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ অবশ্যই। এমন একটা পুরুষের সাথে কখনোই থাকা যাবে না। বাইরে আরেক মেয়ের সাথে কি কি করে আসবে, তারপর ঐ মেয়েকে মনে পড়লে আমার সাথে কি না কি করে বসবে বলা তো যায় না। আমি রিস্ক নিতে চাই না। ”
রোহান হাসল এবারে। দুই পা বাড়িয়ে রাহার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে মাথা নোয়াল। কানের কাছে ফিসফিস স্বরে বলে উঠল,
“ তুমি রিস্ক নিয়ে ফেলেছো নবনী। এখন ভেবে লাভ নেই।ফেরার পথও বন্ধ! রোহান ফারাবীর বউ যখন হয়েছো তখন ছাড়াছাড়ির বিষয়ে আর না ভাবাটাই তোমার জন্য ভালো। মাইন্ড ইট। ”
.
খুব অদ্ভুতভাবেই আজকাল সিয়া সাদকে কম কম গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছে। আগে যেমন কথা বলার ছটফট করত? বারবার কল দিত? এখন দেয় না। আগে যেমন দেখা করতে চাইত? এখন আর চায় না। সাদ এই বিষয়টা গত কয়েকদিনই ভাবছে। কেন ভাবছে বোধহয় সে নিজেও জানে না। তবে সে এইটুকুই তো চেয়েছিল। যেন সিয়া তাকে ভুলে যায়৷ সাদ যখন এসব ভেবে ভেবে সরু শ্বাস টানল তখনই ফোনে কল এল। সাদ ভ্রু কুঁচকাল। কলটা তার রুমম্যাট নিলয়ের। সাদ কলটা রিসিভড করতেই সে জানাল,
“ দোস্ত!সিয়া কি পছন্দ করে সবচেয়ে বেশি? চকলেট পছন্দ করে ও? আচ্ছা, ওর কোন ফুল বেশি পছন্দ? ”
সাদ বুঝে উঠে না। কপাল কুঁচকে বলে,
“ হু? ”
ওপাশ থেকে ফের উত্তর আসে,
“ সিয়া শাড়ি পড়েছে। কি সুন্দর দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। আমার কলিজা ছটফট করছে। ওকে প্রোপোজ করতে চাইছিলাম মামা। ”
সাদের কেন জানি রাগ লাগে। তবুও গম্ভীর গলায় জানাল সে,
“ গুড। ভালো সিদ্ধান্ত! ”
নিলয় ফের বলে,
“ও এত সুন্দর কেন দোস্ত? এত সুন্দর না হলেও তো পারত বল? ”
“ হু। ”
সাদের এত সংক্ষিপ্ত উত্তর পেয়ে নিলয় মুহুর্তেই জানায়
“তুই কি ওর টিউটর হিসেবে রাগ করছিস ? ”
“ না। ”
“, ও যদি রিজেক্ট করে আজ তাহলে পরবর্তীতে তুই আমায় হেল্প করবি। ”
সাদ দ্রুত কল রাখতে চাইণল। তাই দ্রুত বলল,
“ দেখব। ”
এটুকু কাটকাট স্বরে বলেই সে কল রাখল। তার একটু পরই আবার কল এল। নিলয় জানাল সে প্রোপজ করেছে। কিন্তু সিয়া কোন উত্তর না দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গিয়েছে। সাদ ছোটশ্বাস পেলে যখনই বুঝল সিয়া বাসায় ফিরছে তখনই দ্রুত সব কাজ গুঁছিয়ে গিয়ে গেইটের সামনে দাঁড়াল। উদ্দেশ্য সিয়া যাওয়ার সময় দেখা হবে। হলোও তাই। সিয়া সাদকে ওভাবে অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
“ একি সাদ ভাই? এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন যে? কাউকে খুঁজছেন? ”
সাদ তাকাল। সিয়াকে আসলেই সুন্দর দেখাচ্ছে শাড়িতে। নিলয় যে মিথ্যে বলেনি তা বুঝে উঠে সাদ ছোটশ্বাস টানে। গম্ভীর গলায় উত্তর করে,
“ না। ”
সিয়া উত্তরটা শুনে আর কিছু বলার মতো পেল না। পা বাড়াতে নিল। ঠিক তখনই আবার সাদ বলল,
“ সিয়া? ”
সিয়া তাকায়। হেসে বলল,
“ হ্যাঁ, কেমন আছেন সাদ ভাই? ”
সাদ উত্তর দেয় না। বরং মুখচোখ শক্ত রেখে শোনায়
“ এখানে বাসা নিয়েছো আসলে কেন? কি উদ্দেশ্যে? ”
উত্তর আসে,
“ কোন উদ্দেশ্য নেই। ”
“ তাহলে ফিরে যাও। আজেবাজে আড্ডায় না মিশে জীবনটা গুঁছিয়ে নাও।”
সিয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ আমি আজেবাজে আড্ডায় মিশছি? আর আপনি? আপনি যাদের সাথে ঘুরেন তারা বুঝি খুব ভালো? ”
“ রুমম্যাটদের মধ্যে নিলয় বাদে বাকি সবাই ব্যাক্তিত্ববান ব্যাক্তি। ”
“ নিলয় কে? ”
“ যে তোমায় প্রোপোজ করেছে একটু আগে”
সিয়া এবারে ভ্রু বাঁকিয়ে শুধায়,
“ ওহ এইজন্যই বদনাম করছেন তার নামে।”
সাদ শক্ত চাহনিতে তাকায়। জানায়,
“ বদনাম না, সাবধান করছি। বদনাম করে তো আমার লাভ নেই৷ ”
সিয়া হেসে বলল,
প্রেমের সমর সিজন ২ পর্ব ২৮
“ থাকতেও পারে। আমি আপনাকে পছন্দ করতাম, এখন তাকে পছন্দ করছি বিষয়টা হয়তো আপনি মানতে পারছেন না। ”
সাদ নিরব চাহনিতে তাকায়। বড্ড শান্ত স্বরে শুধায়,
“ তুমি অন্য কাউকে পছন্দ করলে আমার কিচ্ছু এসে যায় না সিয়া। আমি নিজেও চাই তুমি অন্য কাউকে পছন্দ করো।সুখী থাকো। আমাকে ভুলে। তবে নিলয়কে পছন্দ করলে তুমি সুখী হতে পারবে না। আমি শিওর সে তোমায় একটা সময় পর চিট করবে। ”