প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৭০ (২)
আদ্রিতা নিশি
রাতের অবসানে উদিত হয়েছে সকাল।কিন্তু তার ঔজ্জ্বল্যে কোনো স্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় না। অম্বর আচ্ছন্ন মেঘে। সূর্যের মুখ তামসিক পর্দায় আবৃত। বাতাস স্তব্ধ হয়ে আছে। গাছপালার পাতার নড়চড় নেই। না আছে কোনো পাখপাখালির ডাক।নিস্পন্দ এক অদ্ভুত পরিবেশ বিরাজমান চারিপাশে। প্রকৃতি যেন কোনো অজানা আশঙ্কায় থমকে দাঁড়িয়ে আছে। চারপাশে গুমোট আবহ ঘনীভূত নিস্তব্ধতা যেন অদৃশ্য ভাবে বোঝাতে চাইছে নতুন কিছুর সূচনা বা সমাপ্তি।এটা প্রকৃতপক্ষে মনোজগতে বিরুপ প্রভাব ফেলছে। সময়ের প্রবাহেও একরকম ধীরতা এবং রহস্যময় স্থবিরতা ছায়াপাত করছে! তবে কি পুরনো কেউ বা তিক্ত অতীত ফিরে আসার বার্তা প্রদান করছে?
ভোর থেকে চৌধুরী বাড়িতে হুলুস্থুল অবস্থা শুরু হয়েছে। গতকাল রাতে সারহান রাতের খাবার খাওয়ার সময় ডাইনিং রুমে সবার সামনে ঘুরতে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। হঠাৎ পরিবারসহ ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে সবাই এক প্রকার অবাক হয়েছিল। পরক্ষণে বেশ খুশি হয়েছিল। কিন্তু আজমল সাহেব কোনো কারণবশত ঘুরতে যাওয়া নিয়ে দ্বিমত করেন। এতে আরশাদ সাহেব এবং সাথী বেগম বিরক্তবোধ করেন। পরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে লিভিং রুমে এ নিয়ে প্রায় দু’ঘন্টা আলোচনা হয়। তবে আরশাদ সাহেব ও আজমল সাহেব পরবর্তীত যেতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন! কারণ এ সময়ে অফিসে কাজের চাপ বেড়েছে। যদি কাজ বাদ দিয়ে ঘুরতে যান তাহলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। স্বামীরা যেহেতু যাবে না তাই তানিয়া বেগম ও সাথী বেগম না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অরিনের সামনে পরীক্ষা তাই যাবে না বলে জানিয়েছে। বউ যাবে না এবং পার্টি অফিসে কাজ থাকায় আবিরও না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সারহানকে বলেছে পার্টি অফিসের কাজ সামলে হঠাৎ করে চলে যাবে। ছয়জন বাদে বাকীরা সবাই যাবে। ইরফান কাজের বাহানা দেখিয়ে থেকে যেতে চেয়েছিল কিন্তু সারহান বলায় রাজি হয়েছে। সাদাত ও ইশারার ঘুরতে যাওয়া নিয়ে কোনো উচ্ছসিত ভাব ছিল না। তবুও যাবে বলে জানিয়েছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক দশটা ত্রিশ। অরিত্রিকা লাগেজ গুছিয়ে নিচ্ছে। আজ বিকেল চারটার পর বেরোবে তারা। রাজশাহী থেকে নাটোরের দীঘাপতিয়া যেতে খুব বেশি সময় লাগে না তাই সারহান বলেছে বিকেলের দিকেই বেরোবে।অরিত্রিকার ভীষণ ভালো লাগছে। অনেকদিন পর সে তার দাদার পিতৃভিটায় যাচ্ছে। ছোটবেলায় আজমল সাহেবের কাছে সে অনেক গল্প শুনেছে সে বাড়ি নিয়ে। তার দাদার নাম ছিল আত্তাব চৌধুরী। তার দাদার বাবা মা*রা যাওয়ার পর সেখানকার চাষযোগ্য জমি বিক্রি করে স্ত্রী আর দুই ছোট সন্তানকে নিয়ে রাজশাহীতে চলে আসেন। জমি বিক্রির টাকা দিয়ে শহরে জমি কিনে একটা বাড়ি করেন আর ব্যবসা শুরু করেন।তবে, সব জমি বিক্রি করলেও বাবার ভিটেটা তিনি বিক্রি করেননি। সেটাই ছিল তাদের পূর্বপুরুষদের শেষ স্মৃতি।অরিত্রিকা এতদিনে বড় হয়েছে কিন্তু দীঘাপতিয়া কখনও যায়নি। আসলে বলা যায় তাকে কেউ নিয়ে যায়নি। তবে সারহান ভাই অনেকবার গিয়েছে। সেখানকার মানুষদের সঙ্গে তার ভালোই পরিচয় আছে।আজ অবশেষে অরিত্রিকারও যাওয়ার সুযোগ হলো। মনে মনে বেশ উত্তেজনা কাজ করছে—কেমন হবে সেই ভিটেবাড়ি যেটার গল্প সে এতবার শুনেছে!
“বান্ধবী আমাকে না জানিয়ে ঘুরতে যাচ্ছিস? এতো স্বার্থপর তুই?”
রাহার বিষন্ন কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই অরিত্রিকার ভাবনার জাল ছিন হলো। জামা কাপড় লাগেজে না রেখে চকিত নয়নে তাকাল দরজার দিকে। সামনে তাকাতেই ওষ্ঠদ্বয় কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল। চক্ষুদ্বয় রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে গেল। এটা কে? আদৌও কি রাহা? মেয়েটা এমন সাজে কোথায় থেকে টপকালো? রাহা ছোট্ট লাগেজটা টানতে টানতে নিয়ে এসে রাখল। ক্লান্ত ভঙ্গিমায় বিছানায় ঠাস করে বসল। অরিত্রিকার দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে শুধালো ;
“এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন? ভূত দেখেছিস নাকি?”
অরিত্রিকার হাত থেকে জামাটা পড়ে গেল। সে নেত্রপল্লব ঝাপটে দৌড়ে এসে রাহার সামনে দাঁড়াল। গোল গোল চক্ষুদ্বয় দিয়ে পরখ করতে লাগল। রাহা মেরুন রঙের একটা শাড়ি পড়েছে। মুখশ্রীতে হালকা সাজ। পরনে হালকা স্বর্ণের গহনা? দেখে মনে হচ্ছে বিয়ের কনে। তবে কি ওই লোকটার সাথে বিয়ে হাওয়ার কথা ছিল? রাহা কি বিয়ে করবে না বলে পালিয়েছে? তার উত্তেজনায় বুক কাঁপল। অস্ফুটস্বরে বলে উঠল;
“তুই বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছিস?”
রাহার ক্লান্তি ভাব উড়ে গেল। বান্ধবীটা বোধ হয় বিয়ের পর একটু বুদ্ধিমতী হয়েছে। এমপি সাহেবের হাওয়া লেগেছে তাই হওয়ারই কথা। সে ফিক করে হেসে দিল। ভাবলেশহীন কন্ঠে বলল;
“ওই বদ লোকের সাথে এনগেজমেন্ট ছিল আমার। বিয়ে করব না তাই পালিয়ে এসেছি।”
“এনগেজমেন্ট?”
“হুমম। গতকাল রাতে হঠাৎ করে আম্মু এসে বলল ওই লোকের বাড়ি থেকে আমায় দেখতে আসবে। তারপর আমার এক কাজিনদের থেকে গোপনসূত্রে খবর পেলাম দেখতে আসার নাম করে এনগেজমেন্ট করিয়ে রাখবে। এটা জানার পর সারারাত ভেবে পালানোর সিদ্ধান্ত নেই। তোর ফুপাতো ভাইটার জন্য কতো কি সহ্য করছি রে।”
“পালিয়ে এসে ঠিক করিসনি।”
“তাহলে কি করতাম? ওই শয়তান লোকের সাথে এনগেজমেন্ট করে নিতাম? শোন জানু, এক মনে দুইজনকে জায়গা দিতে পারব না আমি।”
রাহা গমগমে কন্ঠে বলল। অরিত্রিকা হতবাক হয়ে গেল। এক মনে দুজনকে জায়গা দেওয়ার কথাটা দ্বারা কি বোঝালো? সে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকাল। প্রশ্নাত্মক কন্ঠে বলল ;
“এক মনে দুজনকে জায়গা দেওয়া কথাটা দিয়ে কি বোঝাতে চাইছিস? তোর মন কেউ একজন আগে থেকে দখল করে নিয়েছে?”
রাহা মাথা দুলিয়ে লাজুক হেসে বলল;
“হুম জানু। উনার কথা ভেবেই পালিয়েছি।”
“কে ওই মানুষটা?”
“ইরফান শেখ। তোর ভাসুর এবং ফুপাতো ভাই। তোর ভাইটার জন্য নিজের মান সম্মানের কথা ভেবে পালিয়ে এসেছি অথচ মানুষটা বুঝবে না। আহ! কতো কষ্ট।”
“তুই এটা কি বললি? নিজেও ফাঁসবি সাথে আমাকে ও ফাঁসাবি। এখন আমি কি করব? ইরফান ভাই যদি জানতে পারে এক কথা তখন কি হবে আর আংকেল আন্টি আমাদের বাড়িতে খুঁজতে আসে তখন কি করবি? আমাকে কোন গেড়াকলে ফেললি তুই? তলে তলে এসব চলছে তোর মনে অথচ আমি কিছুই জানিনা।”
“তোর চিন্তা করতে হবে না জানু। আমি সব ব্যবস্থা করে এসেছি। তবে যদি খুঁজতে আসে তাহলেও খুঁজে পাবে না আর একদম প্যানিক করবি না।”
রাহা দাঁত কেলিয়ে বলল। অরিত্রিকা হতবাক হয়ে দেখল চিন্তা ভাবনা বিহীন বান্ধবীর মুখখানা। এতো বড় কান্ড ঘটিয়েছে অথচ কেমন বত্রিশ পাটি দাঁত বের হাসছে। সে হতাশ হলো। মুখ গম্ভীর করে বলল;
“কেন খুঁজে পাবে না?”
রাহা চোখ টিপ মে*রে বলল;
“সিক্রেট।”
অরিত্রিকা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বুঝতে পারল রাহা এখন বলবে না। সে আর কথা না বাড়িয়ে লাগেজের কাছে গিয়ে জামা কাপড় গুছিয়ে রাখতে লাগল। তখনি কোথাও থেকে ইশরা দৌড়ে আসল। হাঁপাতে হাঁপাতে এসে রাহাকে বলল;
“রাহা তুমি নাকি এনগেজমেন্ট করবে না তাই পালিয়ে এসেছো?”
রাহা অপ্রস্তুত হলো। সহালকা হেসে বলল;
“হুমম। তোমায় কে বলল?”
“তোমার বাবা আর সারহান ভাইকে কথা বলতে শুনলাম। মনে হয় তোমার খোঁজে এসেছিল।”
“ভাইয়া বাবাকে কি বলল?”
“বলেছে তুমি আমাদের বাসায় আসোনি। সারহান ভাই মিথ্যা কেন বলল?”
“জিও জিজু! দোস্ত তোর নেতাসাহেব কত্তো ভালো রে। আমাকে বাঁচিয়েছে। ভাইয়ার সাথে দেখা হলে ইয়া বড় একটা ধন্যবাদ দিতে হবে।”
রাহা আমোদিত কন্ঠে বলে উঠল। অরিত্রিকা ও ইশরা হতবিহ্বল হয়ে গেল। আসল কাহিনী বুঝতে পারল না। রাহা পুনরায় বলল;
“আব্বু চলে গেছে?”
ইশরা অদ্ভুত চাহনিতে তাকিয়ে ছোট্ট করে প্রতিত্তোর করল;
“হুমম।”
“শোনো আমিও তোমাদের সাথে দিঘাপতিয়া যাব। ভাইয়ার সাথে একটু আগে লিভিং রুমে কথা হয়েছে আমার।”
“সারহান ভাই নিয়ে যেতে রাজি হয়ে গেল?”
অরিত্রিকা ও ইশরা একযোগে উচ্চস্বরে বলে উঠল। রাহা থতমত খেয়ে বলল;
“শালিকার কান্না দেখে মানা করে পারেনি আর কি। ননদীনি থুক্কু ইশরা তোমার ভাই যাবে?”
ইশরা দু পা এগিয়ে এলো। সন্দিগ্ধ কন্ঠে বলল;
“এই তুমি আমাকে ননদীনি কেন বললে?”
“মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। আসলে পালিয়ে এসেছি তাই মাথা একটু গেছে। এবার বলো তোমার ভাই যাবে?”
“হু যাবে।আমার ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করছো কেন?”
“এমনি।”
রাহা নিস্পাপ কন্ঠে বলল। অরিত্রিকা চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠল;
“ইশরা ওর কথা একদম বিশ্বাস করবি না।”
ইশরা ও রাহা দুজনেই অরিত্রিকার দিকে তাকাল। তাদের দুজনের দৃষ্টি পড়ল অরিত্রিকার হাতে থাকা শুভ্র শার্টের দিকে। তখনি দুজনে একসাথে চিৎকার করে বলে উঠল;
“এই তুই কার শার্ট লাগেজে ঢুকাচ্ছিস?”
অরিত্রিকা চমকে গেল। দ্রুত শার্টটা লাগেজে পুড়ে চাপা স্বরে ধমকে বলল;
“এটা কার শার্ট মানে? এটা সারহান ভাইয়ের শার্ট।”
ইশরা অবাক হয়ে বলল ;
“সারহান ভাইয়ের শার্ট তুই কোথায় পেলি?”
অরিত্রিকা অবলীলায় বলল;
“চু*রি করেছি।”
ইশরা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। রাহা বিস্মিত কন্ঠে বলল;
“হাসবেন্ডের শার্ট কে চু*রি করে?”
অরিত্রিকা একটু ভাব নিয়ে বলল;
“আমি করি।”
“শার্ট নিয়ে গিয়ে কি করবি?”
“পড়ব।”
অরিত্রিকা ভেংচি কেটে বলল। রাহা ও ইশরা অবুঝের ন্যায় একে অপরের দিকে তাকাল। বিয়ের পর বুঝি মেয়েরা স্বামী পাগল হয়ে যায়? হয়তো হয়।
“তুমি কোথাও যাবে? এ অসময়ে ব্যাগ কেন গোছাচ্ছো? ”
মেয়েলী কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই জামা কাপড়ের ব্যাগটা আঁটকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকাল ব্যক্তিটি। চোখ দুটো রাগে র*ক্তাভ বর্ণ ধারণ করল। মুখাবয়ব মুহুর্তে শক্ত হয়ে উঠল। মেয়েটি সেই দৃশ্য দেখে ভয় পেল। ভীতিগ্রস্ত ভঙ্গিমায় এসে রুমের রাখা ডিভানে বসল। সাহস সঞ্চার করে ক্ষীণ স্বরে বলল;
“কোথায় যাবে বলো। আমিও যেতে চাই।”
ব্যক্তিটির রাগ বাড়ল। দাঁতে দাঁত চেপে রাগ সংবরণ করে বলল;
“খু*ন করতে যাচ্ছি যাবে আমার সাথে?”
“ইশতিয়াক দয়া করে খু*নের কথা বলো না। আমার ভীষণ ভয় করে।”
“ইশতিয়াক নামে ডাকবে না আমায়। আমার নাম ইশতিয়াক না। আমার অন্য পরিচয় আছে তুমি সেটা ভুলে যাচ্ছো।”
“আমি ভুলিনি। কিন্তু তোমার সাথে আমার যখন পরিচয় হয়েছিল তখন এই নামটাই বলেছিলে।”
“কারণ আমি আমার পরিচয় লুকাতে চেয়েছি ও তখন আমি একটা গোপন মিশনে ছিলাম।”
ব্যক্তিটি রুঢ় কন্ঠে বলে উঠল। মেয়েটা হঠাৎ হেসে বলল;
“মিশনটা কি? সারহানকে জনসভায় শুট করে মে*রে ফেলা, কোনো মেয়ের মন নিয়ে খেলা, চৌধুরী বাড়ির সদস্য্যদের সম্পর্কে ফাটল নাকি কারো ভালোবাসাকে কেড়ে নেওয়া?”
ব্যক্তিটি বজ্রকন্ঠে হুংকার ছেড়ে বলল;
“আর একটা কথা বললে তোমার গলায় ছু*রি চালিয়ে দেব।”
“আমার গলায় ছু*রি চালিয়ে দিবে? কথাটা বলতে এক বারও বুক কাঁপল না।”
“ভালোবাসার মানুষকে নিজ হাতে মা*রতে এক ফোটা বুক কাঁপেনি আর তুই তো সামান্য একজন।”
“একদম ঠিক বলেছো। তোমার জীবনে আমি সামান্য একজন। শোনো তোমার ওই গলা দিয়ে ভালোবাসার মানুষ শব্দটা বের করো না। কেমন যেন শরীরটা ঘিনঘিন করে।”
মেয়েটি খিলখিলিয়ে হেসে বলে উঠল। ব্যক্তিটি রক্ষিতা নিয়ে রাগান্বিত ভঙ্গিতে বলল;
“তুমি কিন্তু বেশী কথা বলছো। আমায় এই মুহুর্তে রাগিও না। মাথা বিগড়ে গেলে তুমি বাঁচতে পারবে না।”
মেয়েটি হাসি বজায় রেখে বলল;
“ম*রলাম। বেঁচে থেকেও তো এক প্রকার ম*রেই গেছি। বাদ দাও ওসব কথা। একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে?তুমি ওই মেয়েটিকে এখনো ভালোবাসো?”
“ওই মেয়ে কি? ওর নাম আছে ভুলে গেছো? ওর নাম তাজ। আমার তাজিয়া। আমি ওকে ভীষণ ভালোবাসি।”
ব্যক্তিটি বিছানায় বসে উদভ্রান্তের মতো চুল দুই হাত দিয়ে খামচে ধরে গর্জে উঠে বলল। মেয়েটি তাচ্ছিল্য হেসে বলল;
“ভালোবাসো! তাহলে মা*রলে কেন?”
“সারহান ইদায়াত চৌধুরীর জন্য আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছি। ওর জন্য আমি তাজকে নিজ হাতে ওকে খু*ন করেছি। তাজ কেন ভালোবাসলো সারহানকে? ও কেন আমায় ভালোবাসলো না? আমার ভেতর কি কমতি ছিল? মেয়েটা কেন বুঝতে পারল না আমার ভালোবাসা?”
“এই সামান্য কারণে তাজকে মে*রেছো? নাকি ভালোবাসার দোহাই দিয়ে কারণটা লুকাচ্ছো? আচ্ছা, তোমাদের শত্রুতা আসলে কি ঘিরে? তাজ, রাজনীতি, ব্যক্তিগত শত্রুতা নাকি অন্যকিছু?”
“তিনটাই।”
“তুমি কি ভুলে যাচ্ছো সারহান তোমার বন্ধু ছিল?”
মেয়েটি হতবাক হয়ে বলে। ব্যক্তিটি আচানক উদভ্রান্তের মতো হাসে;
“বন্ধু? বন্ধু থেকে শত্রু হতে ছোট্ট একটা কথাই যথেষ্ট।”
মেয়েটি পূর্বের ন্যায় বলে;
“তাজকে খু*ন করলে অথচ নয়ন তালুকার কিছু জানতে পারল না?”
“তুমিও পাগলের মতো কথা বলো। নয়ন তালুকদার তাজিয়াকে খুন করার সময় সেখানেই ছিল। উনি শক্ত করে তাজের হাত দুটো ধরেছি আর আমি গলা দ*ড়ি দিয়ে ফাঁ*স দিয়েছি।ওর সেই অশ্রুত চোখ দুটো যেন এখনো চক্ষু পটে ভাসে।”
“তুমি একটা সাইকো।”
“তাজকে ভালোবেসে সাইকো হয়ে গেছি। তুমি জানো, ও সারাক্ষণ আমার সামনে সারহানকে নিয়ে কথা বলতো। ভার্সিটিতে সারহানের সাথে কখন দেখা হয়েছে, কি কথা হয়েছে সব বলতো। এমনকি সারহানের ছবি লুকিয়ে তুলে এনে দেখতো। আরও কতো পাগলামি করতো!তখন আমি নিজেকে অতি কষ্টে সামলাতাম।”
“তুমি আসলেই বোকা। সারহান কিন্তু তাজকে ভালোবাসেনি। তোমার বোকামির জন্য ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছো অথচ সারহান এতো কিছু হয়ে যাওয়ার পরেও ওর ভালোবাসার মানুষকে পেয়েছে। শুনেছো নিশ্চয়ই অরিত্রিকাকে বিয়ে করেছে সারহান?”
মেয়েটি ম্লান হেসে বলল। ব্যক্তিটি মেয়েটির দিকে তাকাল। শক্ত কন্ঠে বলল;
“যার জন্য আমার ভালোবাসা হারিয়েছি তাকে কিভাবে এতো সহজে ছেড়ে দিই।”
মেয়েটি ডিভানে হেলান দিয়ে বসে বলল;
“এখনো সময় আছে শুধরে যাও ইশতিয়াক।”
“আমায় এই নামে ডাকবে না।”
“আচ্ছা ডাকবো না। এবার বলো কোথায় যাচ্ছো?”
“দিঘাপতিয়া।”
“ওখানে কেন যাচ্ছো?”
মেয়েটি প্রশ্ন করল। ব্যক্তিটি ফিচেল হেসে বলল ;
“প্রতিশোধ নিতে।”
মেয়েটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল;
“প্রতিশোধে মত্ত হয়ে নিজের জীবনটা শেষ করে দিও না।”
“আমার আবার জীবন? আমার জীবন তো তিনবছর আগেই শেষ হয়ে গেছে।”
“তুমি ভুল করেছিলে।”
“নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে একটা ভুল করেছিলাম।”
“তোমাকে শোধরানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তুমি না শুধরে উল্টোপাল্টা কাজ করতে লাগলে।”
কথাটি বলে মেয়েটি ডিভান থেকে উঠে ধপাধপ পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ব্যক্তিটি হাত পা এলিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। অদ্ভুত হাসল;
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৭০
“বউ নিয়ে ঘুরতে যাওয়া হচ্ছে? যাহ ঘুরে আয়। বিয়ের পরে নতুন বউকে না নিয়ে ঘুরলে চলে? তুই বড্ড চালাক সারহান। সুযোগ বুঝে বিয়েটা সেরে নিলি? বন্ধুকে বলার প্রয়োজনবোধ করলি না? কষ্ট পেয়েছি। অনেক কষ্ট পেয়েছি। বলিসনি তাতে খারাপ লেগেছে। কিন্তু বন্ধু হিসেবে বিয়ের গিফট দেওয়াই যায়। কি গিফট দিব? কারো মৃ*ত্যু নাকি কারো কলঙ্কিত অতীত?”